দ্যা স্লিপিং কিং (৪র্থ পর্ব)

oputanvir
4.8
(31)

আরিয়ানা ঘরটির চারিদিকে ভাল করে তাকাল । এভাবে তারা নিজেদের বাসার ভেতরেই যে ওরা আটকে পড়বে সেটা তারা ভাবে নি কোন দিন। এই রকম ঘটনা গত কয়েক বছরে ঘটেছে কিনা সেটা আরিয়ানার জানা নেই । ভ্যাম্পায়াররা চার্চের উপর হামলা করার সাহস করে নি কখনই । এমন কি সেটা রাতের বেলা হলেও তারা হামলা করতে পারে নি । কারণ একটা ঘর কিংবা চার্চে ভ্যাম্পায়াররা কখনই ঢুকতে পারত না যত সময় না তাদের ভেতর থেকে কেউ ভেতরে ঢোকার আমন্ত্রন না জানায় । আর দিনের বেলা তো কোন কথাই নেই । সেই হিসাবে আজকে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটছে । ঢাকার অদুরে মাওয়া যাওয়ার পথে ওদের একটা হেড কোয়াটার আছে । সেখানেই ওরা এসেছিল আজকে সামনে কী করবে সেটা নিয়ে আলোচনা করতে । এমন সময়ই একজন গার্ড দৌড় এল । তাদেরকে জানালো যে একদল লোকজন এগিয়ে আসছে । তাদের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে যে তারা ভ্যাম্পায়ার । 

কিছু সময় যুদ্ধ চলল । যুদ্ধ বলতে আরিয়ানারা তাদের দিকে বন্দুকের গুলি চালাল । তবে এক সময়ে বুঝতে পারলো যে এতে আসলে কোন কাজ হবে না । ভ্যাম্পায়ারদের গতি অনেক বেশি । তাই তাদের শরীরে গুলি লাগানো অনেক বেশি কঠিন । যদিও বা একটা দুইটা লাগে সেটা সেরে উঠতে খুব বেশি সময় লাগে না । ওদের হিলিং পাওয়ার অনেক বেশি এবং যে কোন ক্ষত থেকে ওরা খুব বেশি দ্রুত সেরে ওঠে । এক সময়ে আরিয়ানা বুঝতে পারল যে ওদের গোলাবারুদ শেষ হয়ে যাচ্ছে । 

আসলে এই হেডকোয়ার্টারে খুব এম্যুনেশন ছিলও না । ইউরোপের ভ্যাম্পায়ার গুলোর ভেতরে এখনও কিছুটা ভায়োলেন্স রয়ে গেছে । মাঝে মাঝে সেখানে ভ্যাম্পায়ার হান্টে যেতে হয় তবে এশিয়ায় এই ব্যাপারটা একেবারেই কমে গেছে । এই অঞ্চলের ভ্যাম্পায়াররা একটা নিরব চুক্তি করেছে । ওরা আর কোন মানুষকে হত্যা করে না । ওদের রক্তের যোগান ওরা ব্লাড ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করে । নিজেদের মত থাকে । সাধারণ মানুষের ক্ষতি না আস্তে আস্তে চার্চেরও ওদের দিক থেকে নজর সরে এল। এই ধীরে ধীরে আস্ত্রের যোগানও কমে এল । এখন নাম মাত্র কিছু ছিল । তা প্রায় শেষের দিকে । 

আরিয়ানা ঘরটার মাঝে এসে দাড়ালো । এখন এখানে অপেক্ষা করাই ভাল । তবে একটা বিপদ এখানে আছে । আগে যখন ভ্যাম্পায়াররা কোন হেডকোয়ার্টারে হামলা করতো, তখন ভেতরে তো ঢুকতে পারতো না যত সময় কেউ না তাদের আহবান জানাচ্ছে । তাই তারা পুরো বিল্ডিংয়ের গায়ে আগুণ ধরিয়ে দিত । তখন বাধ্য হয়ে বাইরে যেতে হবে । এই সমস্যা সমাধানের জন্য চার্চের নিচের একটা বেজমেন্ট তৈরি করা হয় যাতে আগুন ধরিয়ে দিলেও তারা সেখানে গিয়ে হাজির হতে পারে । এই হেডকোয়ার্টারের নিচেও এমন কিছু আছে । কিন্তু সেটা কত শত বছর ধরে খোলা হয় নি কে জানে । আগুন ধরিয়ে দিলে তাদের সেখানেই যেতে হবে । এছাড়া আপাতত কোন উপায় নেই । 

তবে আরিয়ানা বুঝতে পারছে না হঠাৎ এতো সাহস হল কিভাবে ওদের !

অবশ্য মিমি নামের ঐ মেয়েটাকে ওরা হামলা করে মেরে ফেলতে চেয়েছিল । সকল ভ্যাম্পায়ার জানে যে ঐ মেয়ের মাঝেই এমন এক শক্তি আছে যা ওদের ঘুমন্ত রাজা রায়ানকে জাগিয়ে তুলতে পারে । যদি সেই রায়ান আবার জেগে উঠে তাহলে পৃথিবীর ভারসাম্য আবার নষ্ট হবে । এটা কোন ভাবেই হতে দেওয়া যায় না । ঐ মেয়েটাকে মরতেই হবে। কোন ভাবেই ঐ মেয়েটাকে জীবিত রাখা যাবে না ! 

ঠিক সেই সময়ে দরজাতে টোকা পরলো ।  

সব গুলো বন্দুকের নল ঘুড়ে গেল দরজার দিকে  জ্যাকোব মাত্রই হাসপাতাল থেকে ফিরেছে । আরিয়ানা ওকে বলেছিল আরও কয়েকদিন ওকে বিশ্রাম নিতে তবে জ্যাকোব শুনে নি । আসলে আরিয়ানা জানে জ্যাকোব ঐ মেয়েটার কাছে ঐ ভাবে নাকানি জুবানী খাওয়ার পর থেকে শান্তি পাচ্ছে না । জ্যাকোবের একটা সুনাম রয়েছে । কত গুলো ভ্যাম্পায়ারের জীবন যে সে নিয়েছে তার কোন হিসাব নেই । আর সেই জ্যাকোবই কিনা একটা মেয়ের কাছে এভাবে নাস্তানাবুদ হল । এটা জ্যাকোবকে শান্তি দিচ্ছে না । 

জ্যাকোব এগিয়ে গেল দরজার দিকে কয়েক কদম । তখনই দরজার ওপাশ থেকে আওয়াজতা ভেসে এল !

‘আমি কোন ভায়োলেন্স চাই না !’

একটা মেয়ে কন্ঠ ! আরিয়ানা জ্যাকোবের দিকে তাকাল। তারপর বলল,  কী চাও তুমি ?

-তোমাদের এই বাড়িতে আমাদের একটা দরকারি জিনিস আছে । সেটা নিতে এসেছি । 

আরিয়ানা সত্যিই অবাক হল । এই বাসায় কী আছে ? কী থাকতে পারে?

-কী আছে?

-সেটা আপাতত বলা যাবে না । তবে আছে এখানেই । আমরা সেটা নিব তারপর চলে যাব । 

-আমাদের বোকা পেয়েছো?

-তোমাদের বোকা পাওয়ার কিছু নেই । তোমরা আসলেই বোকা ! 

-একটু অপেক্ষা কর, কিছু সময়ের ভেতরে আমাদের লোকজন চলে আসবে !

আরিয়ানা হাসির আওয়াজ শুনল। তারপর বলল, কেউ আসবে না । টেলিফোনের লাইন আমরা কেটে দিয়েছি। আর জ্যামার নিয়েই এসেছে । কোন মোবাইল থেকে কোথাও যোগাযোগ করতে পারবে না । কে আসবে শুনি?

আরিয়ানা জানে এটা সত্যি । সব ধরনের যোগাযোগ থেকে ওরা বিচ্ছিন্ন । এখানে ওরা আটেক আছে । সূর্য ওঠা পর্যন্ত ওদের নিজেদের টিকে থাকতে হবে । নয়তো আর কোন উপায় নেই । আশার কথা হচ্ছে ভ্যাম্পায়ারটা নিজ থেকে ভেতরে ঢুকতে পারবে না । কাউকে না কাউকে ওদের ভেতরে আহবান জানাতে হবে ভেতর থেকে । এই হিসাবে ওরা এখনও নিরাপদ । আর ওরা বলছে ওদের একতা জিনিস এখানে রয়েছে তার মানে বাইরে থেকে ওরা আগুন জ্বালাবে না । এই দিক দিয়েও ওরা নিরাপদ । 

এমনটা যখন ভাবল তখনই ঘটনা ঘটলো । সবার মনযোগ এবং পিস্তলের নল ছিল দরজার দিকে । ডান দিকের জানালা ভেঙ্গে একজন ভেতরে ঢুকে পড়ল । এবং এক লাফে চলে এল আরিয়ার কাছে । এতো দ্রুত ঘটনাটা ঘটলো যে কেউ একটু নড়ার চেষ্টাই করতে পারল না । আরিয়ানার যখন হুশ হল তখন দেখল যে মিমি নামের সেই মেয়েটা ওর সামনে । ওর হাত থেকে পিস্তল এক ঝটকাতে কেড়ে নিল । তারপর সেটা সোজাসুজি ওর কপাল বরাবর তাক করল। 

ঘরের অন্য সবার পিস্তল ঘুড়ে গেল মিমি আর আরিয়ানার দিকে । মিমি নিজেকে আরিয়ানার শরীরের আড়ালে নেওয়ার খুব একটা চেষ্টা করল না । তবে পিস্তলটা তাক করে রাখল ঠিকই । 

আরিয়ানা ভাবতেও পারে নি কেউ এভাবে ভেতরে লাফ দিয়ে ঢুকতে পারবে । তখনই বুঝতে পারল ব্যাপারটা । মিমি কোন ভ্যাম্পায়ার না । তার গলাতে ঐ কলারটা থাকার কারণে তার ভেতরে কেবল ভ্যাম্পায়ারের শক্তি চলে এসেছে । আর কিছু নয় । 

পেছন থেকে জ্যাকোব বলল, এবার তুমি পার পাবে না । তাকিয়ে দেখো তুমি এক আর আমরা সবার পিস্তল তোমার দিকে !

মিমি যেন একটু হাসল । তারপর বলল, আমি একা কে বলল? আমার পেছনে মোট ১৭ জন ভ্যাম্পায়ার বাইরে আছে । 

-ওতা বাইরে । ভেতরে ঢুকতে পারবে না !

-তাই?

আরিয়ানা আবারও ব্যাপারটা বুঝতে পারল । ভ্যাম্পায়াররা ভেতরে ঢুকতে পারবে না যত সময় না কেউ তাদের ভেতর থেকে ভেতরে ঢুকতে বলে । মিমি এখন ভেতরেই রয়েছে । 

‘ভেতরে এসো সবাই !’

লাইনটা কেবল বলা বাকি । মুহুর্তের ভেতরে দজার আর জানালা ভেঙ্গে ঢুকে পরলো সবাই । ঘরের ভেতরের ১১ জন মানুষকে কবজা করতে সমস্য লাগল না ওদের মোটেই । জ্যাকোব অবশ্য একটু বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করছিল তবে তাতে খুব একটা কাজ হল না ।

এই টানা হেচড়ায় জ্যাকোবের শরীর থেকে একটু রক্ত বের হয়ে গিয়েছিল । সেই রক্ত দেখেই একজন ভ্যাম্পায়ার ওর দিকে তেড়ে গেল । ওর গলাতে কামড় বসাবে । তবে ঠিক সময়ে মিমি জ্যাকোবের সামনে গিয়ে হাজির হল । তারপর বলা যাক এক ঝটকাতে ওকে সরিয়ে নিয়ে এল !

নো !

মিমি চিৎকার করে বলল, আই সেইড নো !

আরিয়ানা তখন একটা অবাক করা ব্যাপার খেয়াল করল । সেই ভ্যাম্পায়ার যেন একটা ধাক্কার মত খেল । তারপর একেবারে নির্জীব হয়ে গেল । এই ক্ষমতা মেয়েটা পেল কোথায় ?

মেয়েটার ভেতরে পুরো ভ্যাম্পায়ারদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা এসেছে ! এটা তো কেবল ঐ সেই রাজার ছিল । যেমনটা ওদেরকে জানানো হয়েছে। রায়ানের ভেতরে এই ক্ষমতা ছিল । ভ্যাম্পায়ারদের এই সম্মোধনের ক্ষমতা আছে । তারা চাইলে যে কোন মানুষের মনে উপর নিয়ন্ত্রণ বসাতে পারে । তবে একজন কিং কেবল মানুষই নয়, অন্য সব জীব জন্তুর উপর এমন কি নিজেদের ভ্যাম্পায়ারদের উপরেও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে !

মিমি নামের মেয়েটার উপরেও কি সেই ক্ষমতা এসেছে ?

মিমি এবার আরিয়ানার দিকে তাকাল । একটু হেসে বলল, আগেই বলেছি ইউ মিনস নো হার্ম ! 

-কী চাও তুমি?

মিমি হাসল । তারপর বলল, তোমরা হয়তো জানো না যে রায়ান এখানেই শুয়ে আছে ! ওর কফিন টা এই বাসাতেই যত্ন করে রাখা !

ঘরের সবাই কেবল তীব্র অবাক চোখে তাকিয়ে রইল । ওদের হেড কোয়ার্টারে ঘুমন্ত ভ্যাম্পায়ার রাজা কফিন রয়েছে এতো দিন ! এটা কী সম্ভব?  

আগের পর্বপরের পর্ব

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 31

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →