দ্যা স্লিপিং কিং (৪র্থ পর্ব)

oputanvir
4.8
(32)

আরিয়ানা ঘরটির চারিদিকে ভাল করে তাকাল । এভাবে তারা নিজেদের বাসার ভেতরেই যে ওরা আটকে পড়বে সেটা তারা ভাবে নি কোন দিন। এই রকম ঘটনা গত কয়েক বছরে ঘটেছে কিনা সেটা আরিয়ানার জানা নেই । ভ্যাম্পায়াররা চার্চের উপর হামলা করার সাহস করে নি কখনই । এমন কি সেটা রাতের বেলা হলেও তারা হামলা করতে পারে নি । কারণ একটা ঘর কিংবা চার্চে ভ্যাম্পায়াররা কখনই ঢুকতে পারত না যত সময় না তাদের ভেতর থেকে কেউ ভেতরে ঢোকার আমন্ত্রন না জানায় । আর দিনের বেলা তো কোন কথাই নেই । সেই হিসাবে আজকে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটছে । ঢাকার অদুরে মাওয়া যাওয়ার পথে ওদের একটা হেড কোয়াটার আছে । সেখানেই ওরা এসেছিল আজকে সামনে কী করবে সেটা নিয়ে আলোচনা করতে । এমন সময়ই একজন গার্ড দৌড় এল । তাদেরকে জানালো যে একদল লোকজন এগিয়ে আসছে । তাদের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে যে তারা ভ্যাম্পায়ার । 

কিছু সময় যুদ্ধ চলল । যুদ্ধ বলতে আরিয়ানারা তাদের দিকে বন্দুকের গুলি চালাল । তবে এক সময়ে বুঝতে পারলো যে এতে আসলে কোন কাজ হবে না । ভ্যাম্পায়ারদের গতি অনেক বেশি । তাই তাদের শরীরে গুলি লাগানো অনেক বেশি কঠিন । যদিও বা একটা দুইটা লাগে সেটা সেরে উঠতে খুব বেশি সময় লাগে না । ওদের হিলিং পাওয়ার অনেক বেশি এবং যে কোন ক্ষত থেকে ওরা খুব বেশি দ্রুত সেরে ওঠে । এক সময়ে আরিয়ানা বুঝতে পারল যে ওদের গোলাবারুদ শেষ হয়ে যাচ্ছে । 

আসলে এই হেডকোয়ার্টারে খুব এম্যুনেশন ছিলও না । ইউরোপের ভ্যাম্পায়ার গুলোর ভেতরে এখনও কিছুটা ভায়োলেন্স রয়ে গেছে । মাঝে মাঝে সেখানে ভ্যাম্পায়ার হান্টে যেতে হয় তবে এশিয়ায় এই ব্যাপারটা একেবারেই কমে গেছে । এই অঞ্চলের ভ্যাম্পায়াররা একটা নিরব চুক্তি করেছে । ওরা আর কোন মানুষকে হত্যা করে না । ওদের রক্তের যোগান ওরা ব্লাড ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করে । নিজেদের মত থাকে । সাধারণ মানুষের ক্ষতি না আস্তে আস্তে চার্চেরও ওদের দিক থেকে নজর সরে এল। এই ধীরে ধীরে আস্ত্রের যোগানও কমে এল । এখন নাম মাত্র কিছু ছিল । তা প্রায় শেষের দিকে । 

আরিয়ানা ঘরটার মাঝে এসে দাড়ালো । এখন এখানে অপেক্ষা করাই ভাল । তবে একটা বিপদ এখানে আছে । আগে যখন ভ্যাম্পায়াররা কোন হেডকোয়ার্টারে হামলা করতো, তখন ভেতরে তো ঢুকতে পারতো না যত সময় কেউ না তাদের আহবান জানাচ্ছে । তাই তারা পুরো বিল্ডিংয়ের গায়ে আগুণ ধরিয়ে দিত । তখন বাধ্য হয়ে বাইরে যেতে হবে । এই সমস্যা সমাধানের জন্য চার্চের নিচের একটা বেজমেন্ট তৈরি করা হয় যাতে আগুন ধরিয়ে দিলেও তারা সেখানে গিয়ে হাজির হতে পারে । এই হেডকোয়ার্টারের নিচেও এমন কিছু আছে । কিন্তু সেটা কত শত বছর ধরে খোলা হয় নি কে জানে । আগুন ধরিয়ে দিলে তাদের সেখানেই যেতে হবে । এছাড়া আপাতত কোন উপায় নেই । 

তবে আরিয়ানা বুঝতে পারছে না হঠাৎ এতো সাহস হল কিভাবে ওদের !

অবশ্য মিমি নামের ঐ মেয়েটাকে ওরা হামলা করে মেরে ফেলতে চেয়েছিল । সকল ভ্যাম্পায়ার জানে যে ঐ মেয়ের মাঝেই এমন এক শক্তি আছে যা ওদের ঘুমন্ত রাজা রায়ানকে জাগিয়ে তুলতে পারে । যদি সেই রায়ান আবার জেগে উঠে তাহলে পৃথিবীর ভারসাম্য আবার নষ্ট হবে । এটা কোন ভাবেই হতে দেওয়া যায় না । ঐ মেয়েটাকে মরতেই হবে। কোন ভাবেই ঐ মেয়েটাকে জীবিত রাখা যাবে না ! 

ঠিক সেই সময়ে দরজাতে টোকা পরলো ।  

সব গুলো বন্দুকের নল ঘুড়ে গেল দরজার দিকে  জ্যাকোব মাত্রই হাসপাতাল থেকে ফিরেছে । আরিয়ানা ওকে বলেছিল আরও কয়েকদিন ওকে বিশ্রাম নিতে তবে জ্যাকোব শুনে নি । আসলে আরিয়ানা জানে জ্যাকোব ঐ মেয়েটার কাছে ঐ ভাবে নাকানি জুবানী খাওয়ার পর থেকে শান্তি পাচ্ছে না । জ্যাকোবের একটা সুনাম রয়েছে । কত গুলো ভ্যাম্পায়ারের জীবন যে সে নিয়েছে তার কোন হিসাব নেই । আর সেই জ্যাকোবই কিনা একটা মেয়ের কাছে এভাবে নাস্তানাবুদ হল । এটা জ্যাকোবকে শান্তি দিচ্ছে না । 

জ্যাকোব এগিয়ে গেল দরজার দিকে কয়েক কদম । তখনই দরজার ওপাশ থেকে আওয়াজতা ভেসে এল !

‘আমি কোন ভায়োলেন্স চাই না !’

একটা মেয়ে কন্ঠ ! আরিয়ানা জ্যাকোবের দিকে তাকাল। তারপর বলল,  কী চাও তুমি ?

-তোমাদের এই বাড়িতে আমাদের একটা দরকারি জিনিস আছে । সেটা নিতে এসেছি । 

আরিয়ানা সত্যিই অবাক হল । এই বাসায় কী আছে ? কী থাকতে পারে?

-কী আছে?

-সেটা আপাতত বলা যাবে না । তবে আছে এখানেই । আমরা সেটা নিব তারপর চলে যাব । 

-আমাদের বোকা পেয়েছো?

-তোমাদের বোকা পাওয়ার কিছু নেই । তোমরা আসলেই বোকা ! 

-একটু অপেক্ষা কর, কিছু সময়ের ভেতরে আমাদের লোকজন চলে আসবে !

আরিয়ানা হাসির আওয়াজ শুনল। তারপর বলল, কেউ আসবে না । টেলিফোনের লাইন আমরা কেটে দিয়েছি। আর জ্যামার নিয়েই এসেছে । কোন মোবাইল থেকে কোথাও যোগাযোগ করতে পারবে না । কে আসবে শুনি?

আরিয়ানা জানে এটা সত্যি । সব ধরনের যোগাযোগ থেকে ওরা বিচ্ছিন্ন । এখানে ওরা আটেক আছে । সূর্য ওঠা পর্যন্ত ওদের নিজেদের টিকে থাকতে হবে । নয়তো আর কোন উপায় নেই । আশার কথা হচ্ছে ভ্যাম্পায়ারটা নিজ থেকে ভেতরে ঢুকতে পারবে না । কাউকে না কাউকে ওদের ভেতরে আহবান জানাতে হবে ভেতর থেকে । এই হিসাবে ওরা এখনও নিরাপদ । আর ওরা বলছে ওদের একতা জিনিস এখানে রয়েছে তার মানে বাইরে থেকে ওরা আগুন জ্বালাবে না । এই দিক দিয়েও ওরা নিরাপদ । 

এমনটা যখন ভাবল তখনই ঘটনা ঘটলো । সবার মনযোগ এবং পিস্তলের নল ছিল দরজার দিকে । ডান দিকের জানালা ভেঙ্গে একজন ভেতরে ঢুকে পড়ল । এবং এক লাফে চলে এল আরিয়ার কাছে । এতো দ্রুত ঘটনাটা ঘটলো যে কেউ একটু নড়ার চেষ্টাই করতে পারল না । আরিয়ানার যখন হুশ হল তখন দেখল যে মিমি নামের সেই মেয়েটা ওর সামনে । ওর হাত থেকে পিস্তল এক ঝটকাতে কেড়ে নিল । তারপর সেটা সোজাসুজি ওর কপাল বরাবর তাক করল। 

ঘরের অন্য সবার পিস্তল ঘুড়ে গেল মিমি আর আরিয়ানার দিকে । মিমি নিজেকে আরিয়ানার শরীরের আড়ালে নেওয়ার খুব একটা চেষ্টা করল না । তবে পিস্তলটা তাক করে রাখল ঠিকই । 

আরিয়ানা ভাবতেও পারে নি কেউ এভাবে ভেতরে লাফ দিয়ে ঢুকতে পারবে । তখনই বুঝতে পারল ব্যাপারটা । মিমি কোন ভ্যাম্পায়ার না । তার গলাতে ঐ কলারটা থাকার কারণে তার ভেতরে কেবল ভ্যাম্পায়ারের শক্তি চলে এসেছে । আর কিছু নয় । 

পেছন থেকে জ্যাকোব বলল, এবার তুমি পার পাবে না । তাকিয়ে দেখো তুমি এক আর আমরা সবার পিস্তল তোমার দিকে !

মিমি যেন একটু হাসল । তারপর বলল, আমি একা কে বলল? আমার পেছনে মোট ১৭ জন ভ্যাম্পায়ার বাইরে আছে । 

-ওতা বাইরে । ভেতরে ঢুকতে পারবে না !

-তাই?

আরিয়ানা আবারও ব্যাপারটা বুঝতে পারল । ভ্যাম্পায়াররা ভেতরে ঢুকতে পারবে না যত সময় না কেউ তাদের ভেতর থেকে ভেতরে ঢুকতে বলে । মিমি এখন ভেতরেই রয়েছে । 

‘ভেতরে এসো সবাই !’

লাইনটা কেবল বলা বাকি । মুহুর্তের ভেতরে দজার আর জানালা ভেঙ্গে ঢুকে পরলো সবাই । ঘরের ভেতরের ১১ জন মানুষকে কবজা করতে সমস্য লাগল না ওদের মোটেই । জ্যাকোব অবশ্য একটু বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করছিল তবে তাতে খুব একটা কাজ হল না ।

এই টানা হেচড়ায় জ্যাকোবের শরীর থেকে একটু রক্ত বের হয়ে গিয়েছিল । সেই রক্ত দেখেই একজন ভ্যাম্পায়ার ওর দিকে তেড়ে গেল । ওর গলাতে কামড় বসাবে । তবে ঠিক সময়ে মিমি জ্যাকোবের সামনে গিয়ে হাজির হল । তারপর বলা যাক এক ঝটকাতে ওকে সরিয়ে নিয়ে এল !

নো !

মিমি চিৎকার করে বলল, আই সেইড নো !

আরিয়ানা তখন একটা অবাক করা ব্যাপার খেয়াল করল । সেই ভ্যাম্পায়ার যেন একটা ধাক্কার মত খেল । তারপর একেবারে নির্জীব হয়ে গেল । এই ক্ষমতা মেয়েটা পেল কোথায় ?

মেয়েটার ভেতরে পুরো ভ্যাম্পায়ারদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা এসেছে ! এটা তো কেবল ঐ সেই রাজার ছিল । যেমনটা ওদেরকে জানানো হয়েছে। রায়ানের ভেতরে এই ক্ষমতা ছিল । ভ্যাম্পায়ারদের এই সম্মোধনের ক্ষমতা আছে । তারা চাইলে যে কোন মানুষের মনে উপর নিয়ন্ত্রণ বসাতে পারে । তবে একজন কিং কেবল মানুষই নয়, অন্য সব জীব জন্তুর উপর এমন কি নিজেদের ভ্যাম্পায়ারদের উপরেও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে !

মিমি নামের মেয়েটার উপরেও কি সেই ক্ষমতা এসেছে ?

মিমি এবার আরিয়ানার দিকে তাকাল । একটু হেসে বলল, আগেই বলেছি ইউ মিনস নো হার্ম ! 

-কী চাও তুমি?

মিমি হাসল । তারপর বলল, তোমরা হয়তো জানো না যে রায়ান এখানেই শুয়ে আছে ! ওর কফিন টা এই বাসাতেই যত্ন করে রাখা !

ঘরের সবাই কেবল তীব্র অবাক চোখে তাকিয়ে রইল । ওদের হেড কোয়ার্টারে ঘুমন্ত ভ্যাম্পায়ার রাজা কফিন রয়েছে এতো দিন ! এটা কী সম্ভব?  

আগের পর্বপরের পর্ব

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 32

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →