শিকার কে?

oputanvir
4.5
(38)

নিজের হাতঘড়ির দিকে নিশ্চুপ তাকিয়ে রয়েছে ফরসাল । গত চৌদ্দদিন সে নীতুর পিছু নিয়েছে । নীতু কোথায় যায় কার সাথে কথা বলে কী করে সব কিছুর একটা ছক হিসাব করেছে । কারণ নীতুকে অপহরণ করতে গেলে এটা খুবই জরুরী ছিল। আজকে কাজটা করবে সে । নীতুকে তুলে নিয়ে যাবে। সন্ধ্যার অন্ধকার আস্তে আস্তে গাঢ় হচ্ছে। একটু পরেই নীতু এই পথে দিয়েই যাবে। 

নীতুর উপরে সে প্রতিশোধ নিবে । এতো টুকু এক মেয়ের কারণে তাকে তীব্র অপমানিত হতে হয়েছে । এতোদিন ধরে ওর যে একটা ভদ্র ইমেজ যে ধরে রেখেছিল সেই ইমেজটা একেবারে নষ্ট করে দিয়েছে এই মেয়ে। এই মেয়ের উপরে একটা তীব্র প্রতিশোধ সে নিবে । এমন একটা শিক্ষা এই মেয়েটাকে সে দিবে যাতে এরপর আর কারো সাথে এই মেয়ে এমন কোন কাজ না করতে পারে!

কী এমন করেছিল সে?

সামান্য একটা মেসেজ পাঠিয়েছিল ফেসবুকে । অনেক দিন থেকে নীতুর ফ্রেন্ড লিস্টে রয়েছে সে । মেয়েটা গল্প টল্প লেখে ফেসবুকে । ফয়সাল নীতুকে একটা মেসেজ পাঠিয়েছিল । অনেক মেয়েকেই সে এমন মেসেজ পাঠিয়েছে । এটা খুবই সামান্য একটা একটা ব্যাপারে । আর এই মেয়ে কিনা সেই মেসেজের একতা স্ক্রিনশট প্রকাশ করে দিল ! নীতুর সাথে ওর বেশ কিছু মিউচ্যুয়াল ফ্রেন্ড ছিল । তারা সেই স্ক্রিনশট দেখে ফরসালকে আনফ্রেন্ড করে দিল । সেই সাথে ওর পরিচিত অনেকেই এই কুকর্মের কথা জানিয়ে দিল । এমন কি সেই কথা ওর বাসায় পর্যন্ত পৌছে গেল । ফয়সালের বাবা তো পারলে একেবারে ওকে বাসা থেকে বের করে দেয় । 

একটা রাগ তাই নীতুর উপর ফয়সালের জমে আছে । একটা শিক্ষা মেয়েটাকে দিতেই হবে । সেই চিন্তা থেকে ফয়সাল নীতুর পিছু নেওয়া শুরু করেছে । মোটামুটি ফয়সাল নীতুর সব রুটিন জানে। 

নীতুর জীবনে একেবারে সরল সোজা । প্রতিদিন সকালে ওর ক্লাস থাকে । সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্লাস চলে । এরপরে সপ্তাহে তিন দিন টিউশনি করে । বিকেল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত । হলে পৌছাতে পৌছাতে সাড়ে আটটা বাজে । বাকি চার দিনে বিকেল বেলা নীতু ক্যাম্পাসের নানান স্থানে ঘুড়ে বেড়ায় । বিকেল বেলা সাধারণ পুকুর পাড়ে বসে বই পড়ে । সন্ধ্যার সময় হলে বন্ধুদের সাথে চায়ের আড্ডা বসে । 

ফয়সাল যতদুর জানে এখনও তার কোন বয়ফ্রেন্ড বা বিশেষ কোন ছেলে বন্ধু নেই । মোটামুটি একটা ছক ফয়সাল তৈরি করে ফেলেছে । এখন কেবল একশানে যেতে হবে । এই কাজে ওকে সাহায্য করবে ওর এক বাল্য বন্ধু মেহেদি । এর আগেও সে এমন কাজ করেছে । দুজন মিলে নীতুকে তুলে নেওয়া মোটেই কষ্ট হবে না । নীতুর টিউশনি থেকে হলে পৌছানোর জন্য যে রাস্তাটা ব্যবহার করে সেই রাস্তাটাতেই কাজ হবে । একটা মাইক্রোবাস ভাড়া করা হয়েছে । নম্বর প্লেট ভুয়া । তাই কেউ যদি নম্বর টুকেও রাখে তাতেও খুব একটা সমস্যা হবে না । 

আজকে বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে । সময় যেন আর কাটছে না । ঘড়ির কাঁটা এখনও রাত আটটা ছোঁয় নি । হয়তো আজকে একটু দেরি করে বের হবে সে টিউশনি থেকে । একটা ব্যাপার অবশ্য ফরসালের কাছে একটু অন্যরকম লাগল । নীতু নামের মেয়েটার যে সাহস আছে সেটা বলতেই হবে। কারণ সন্ধ্যার পরে এই পথে মানুষজন সাধারণত কেউ আসে না । একটু ঘুর পথ হলেও সবাই প্রধান রাস্তা দিয়েই যায়। নীতু সর্টকাটে যাওয়ার জন্য এই রাস্তা ব্যবহার করে । তবে প্রথম দিন রাতের বেলাতেও নীতুকে এই পথ দিতে যেতে দেখে একটু অবাক হয়েছিল । তবে মনে মনে খুশিই হয়েছিল । 

রাত আটটা বেজে গেছে। এখনই নীতু বের হবে টিউশনি থেকে । এখানে আসতে বড়জোর মিনিট দশেক লাগবে । কিংবা আরও ৫ মিনিট বেশি লাগতে পারে । মেয়েদির দিকে তাকাল ফয়সাল । মুখের সিগারেটটা ফেলে দিতে বলল । আরও বলল যে হাতের ইশারা দিলেই যেন গাড়ি স্ট্যার্ট দেয় সে ।   

দেখতে দেখতে আটটা পনের বেজে গেল । নীতুর দেখা নেই । আজকে আসবে না ?

এমন কেন হবে? ফয়সাল একটু চিন্তায় পড়ল । আজকে না এলে আবারও দুইদিন অপেক্ষা করতে হবে । কাল শুক্রবার হওয়াতে পরের টিউশানি আবার রবিবার । আজকে কি আসবে না এই পথে?

ফয়সাল নীতুকে ঠিকই টিউশানিতে ঢুকতে দেখেছে । তাহলে বের হতে এতো দেরি কেন করছে !

মুখ দিয়ে একটা গালি বের হয়ে এল ! ঠিক সেই সময় সে নীতুকে দেখতে পেল । এই রাস্তার শেষ লাইট পোস্টটা পার হয়ে আসছে ধীরে ধীরে । গাড়িটা রাস্তার পাশেই রাখা । নীতু যখন পাশ দিয়ে যাবে তখনই ফয়সাল ওর উপরে হামলা করবে । ক্লোরোফর্মের রুমাল চেয়ে ধরবে । তারপর গাড়িতে তুলবে । শক্তিতে নীতুর কোন ভাবেই ফয়সালের সাথে পেড়ে ওঠার কথা না । সেই হিসাবে ফয়সাল একাই কাজটা করতে পারবে । তবে সমস্যা হলেই মেহেদি এগিয়ে আসবে । এখানে একটাই সমস্যা । এই সময়ের ভেতরে যদি কেউ এই রাস্তায় চলে আসে তাহলে ওরা বিপদে পড়ে যাবে । তবে আশার কথা যে এই রাস্তায় অন্ধকারের ভেতরে কেউ আসে না । 

ঘটনা ঘটলো খুবই দ্রুত । এবং একেবারেই সহজে । ফয়সাল যেমনটা ভেবেছিল তেমন কোন বাঁধাই দিতে পারলো না নীতু। নীতু কিছু বুঝে ওঠার আগেও ফয়সাল ওর পেছনে চলে গেল আর রুমালটা নীতুর নাকে চেপে ধরল । টু শব্দটা করতে পারল না সে । 

গাড়িটা চলতে শুরু করল । মেহেদি গাড়ি চালাচ্ছিল । তবে বারবার পেছনে ফিরে তাকাচ্ছিল । ফয়সালের মুখে একটা ক্রুড় হাসি । সে মনে মনে ঠিক করেই নিল যে মেয়েটার সাথে কী করবে। তবে আগেই চোখ বেঁধে নিবে যাতে নীতু কাউকে চিনতে না পারে । একবার অবশ্য ভেবেছিল যে একেবারেই জানে শেষ করে দিবে তবে সেটাতে বিপদে পড়বে । আসল কাজ করে ছেড়ে দিলে খুব একটা সমস্যা হবে না । এমনও হতে পারে যে নীতু হয়তো এই ব্যাপারটা কাউকে জানাবেই না । আমাদের দেশের মেয়েদের ভেতরে এই ব্যাপারটা খুব আছে । লোক লজ্জার ভয়ে তার এই সব ব্যাপার কাউকে বলে না । 

নীতু হাত পেছন দিক দিয়ে শক্ত করে বেঁধে ফেলল । চোখ বাঁধল ভাল করে যাতে কোন ভাবেই ওদেরকে চিনতে না পারে । চিনতে না পারলে কিছুই করতে পারবে না সে ।

প্রায় একঘন্টা একটানা মাইক্রোটা চলার পরে একটা নির্জন বাড়ির সামনে এসে থামল। বাড়িটা আগে থেকে ঠিক করা । মেহেদির কোন এক বড় ভাইয়ের । মাঝে মাঝে মৌজমাদতি করার জন্য এখানে আসে । নীতুকেও এখানে আনা হয়ে সেই কারণেই। নীতুর জ্ঞান এখনও ফেরে নি । তবে এখনও আর জ্ঞান ফিরলেও কোন সমস্যা নেই । চিৎকার করলেও কেউ শুনতে পাবে না । এবার আসল মজা শুরু হবে। 

নীতুকে কাধে তুলে নিয়েই ফয়সাল বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেল । একটা ঘরের ভেতরে আটকে রেখে বসার ঘরে এসে বসল । মেহেদিকে আসতে দেখল ওর পিছু পিছু । ওর দিকে তাকিয়ে বলল, চল শুরু করি !

ফয়সাল দেখল মেহেদির চোখে চুকচুক করছে । 

-আরে শ্লা দাড়া এতো তাড়াহুড়া কিসের ! আগে জ্ঞান ফিরুক । একটু চিৎকার করুক ! আমি আগে ওর ভয়ের চিৎকার শুনতে চাই । আর রাত তো পড়েই রয়েছে । আগে একটু মাল খাই !

মেহেদি বলল, এইরে !

-কী হল ! 

-মাল তো আনি নাই !

-সে কি ! কেন ? তোকে না বোতল দিলাম !

-ওটা তো ওখানে শেষ !

ফয়সাল কঠিন একটা গালি দিতে গিয়েও থেমে গেল । তারপর বলল, রাতে কী করবো আমরা শুনি? 

মেহেদি একটু মাথা নিচু করল । ফয়সাল বলল, চল আগে রাতের খাবার নিয়ে আসি ।

-আমি যাবো ?

-চল !

-মানে আমার পেটটা কেমন একটু গুড় গুড় করছে সেই কখন থেকে । আমি একটু টয়লেটে যাব । তুই যা । নিয়ে আয় । আর কারো তো থাকার দরজার । যদি জ্ঞান ফিরে আসে । পালিয়ে যেতে চায় !

ফয়সাল কিছু সময় কী যেন ভাবল । তারপর রাজি হয়ে গেল । বলল, তুই নিজেকে সামলে রাখ। আমি আগে আসি । খবরদার বললাম আগে থেকে কিছু করবি না । 

মেহেদি একটু খ্যাঁকখ্যাঁক করে হাসল । তারপর টিভি ছেড়ে দিল । ওর দিকে তাকিয়ে বলল, আরে শ্লা যা । কিছু করব না । তুই আগে আয় ! তারপর ! 

ঘন্টা খানেক পরে ফরসাল চার বোতল ফেন্সি আর চার প্যাকেট নিয়ে ফিরে আসল । তবে বাড়ির দরজা দিয়ে ঢুকতে গিয়েই ফয়সালের মনের ভেতরে কেমন যেন একটু কু ডেকে উঠল । বাড়িটাকে যেন একটু বেশি নির্জন মনে হল । যখন মেহেদিকে রেখে গিয়েছিল তখন মেহেদি টিভি ছেড়েছিল । সেইটা কী বন্ধ !

দরজা দিয়ে ঢুকতেই দেখল টিভিতা চলছে ঠিকই তবে সেটার সাউন্ড অফ করা । তখনই ফয়সালের চোখ গেল দরজাটার দিকে । সেটা খোলা !

মুখ দিয়ে একটা খারাপ গালি বের হয়ে এল ! শ্লা একটু অপেক্ষা করতে পারল না । 

বোতল আর খাবার প্লেটটা রেখে ফয়সাল দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকল । তখনই আবারও সেই অনুভূতিটা তার ভেতরে ফিরে এল ।   কিছু যেন অস্বাভাবিক । ঘরটা একেবারে অন্ধকার হয়ে আছে । সুইচ বোর্ডে আলো জ্বালানোর চেষ্টা করল বটে কিন্তু আলো জ্বলল না । 

এমন তো হওয়ার কথা না ! একটু আগে যখন নীতুকে সে এখানে রেখে গিয়েছিল তখন তো আলো ঠিকই জ্বলছিল । তাহলে এখন কী হল ? 

আরেকটু এগিয়ে যেতেই কিছুতে বেধে হুমড়ি খেয়ে পড়ল সে । একেবারে শেষ মুহুর্তে হাত দিয়ে ঠেকালো মেঝেতে উল্টে পড়া থেকে । যখন নিজেকে সামলে নিল । কিসে বেঁধে পড়েছে সেটাতে হাত দিল । 

একটা দেহ ! 

হাত দিয়ে দেহটা স্পর্শ করার পরেই বুঝতে কষ্ট হল না যে দেহটা কার !

মেহেদির !

নিথর হয়ে পড়ে আছে । প্রান নেই !

কেন এমনটা মনে হল সেটা ফয়সাল জানে না । তবে ওর মনে হল নিঃশ্বাস নিচ্ছে না সে । সে আর বেঁচে নেই।

বুকের ভেতরে ধক করে উঠল । কী হয়েছে এখানে ! মেহেদি কিভাবে মারা গেল?

কে মারল ওকে !

ফয়সালের মনে যখন এই প্রশ্ন এল তখনই ওর অনুভূত হল যে ঘরে ও একা নয়। পুরো অন্ধকার ঘরটা । তবে কিছু সময়ের ভেতরেই সেটা চোখে সয়ে গেল । সেই অন্ধকারের ভেতরে ফয়সাল আরও গাঢ় অন্ধকারের অয়োবয়টা দেখতে পেল । সিলিং থেকে ঝুলে আছে । লাল দুটো চোখ তার চিনতে অসুবিধা হল না ।  ফয়সালের মনে সেই অন্ধকারটা একটু যেন হেসে উঠল। একেবারে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে সে। ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে ! 

ফয়সাল যেন একেবারে জমে গেল । পা যেন একটুও নড়াতে পারছে না । 

কে ওটা ?

কী ওটা !

তখনই ফয়সালের মাথায় কিছু তথ্য এসে ধাক্কা দিল । নীতু নামের মেয়েটা ঐ নির্জন রাস্তা দিয়ে কেন যেত ! কোন স্বাভাবিক মেয়ের পক্ষে কি সম্ভব ? ওখানে মাঝে মাঝেই লাশ পাওয়া যায় বলে ফয়সাল শুনেছে । কে বা কারা সেগুলোকে মেরে ফেলে সেটার কোন হদিস কেউ জানে না । এমন একটা রাস্তা দিয়ে একটা ২২/২৩ বছরের মেয়ে কিভাবে যাওয়ার সাহস করে?

এর একটাই কারণ হতে পারে?

যদি না সেই ভয়ংকর কারণ মেয়েটি নিজে না হয় !

ফয়সালের তখন বুঝতে পারল যে নীতু নামের মেয়েটিকে এতো সহজে সে কিভাবে ধরে নিয়ে আসতে পারল ! মেয়েটা বিন্দু মাত্র বাঁধা দিলো না কেন? ক্লোরফর্ম কাজ করতেও একটু সময় নেয়। নীতু তো একটু বাঁধা দেওয়ার চেষ্টাও করে নি। কারণ কী হতে পারে? 

সে নিজ ইচ্ছেতেই আসতে চেয়েছে ! ফয়সাল এতো সময়ে ভেবেছে সে নীতুকে শিকার করে নিয়ে এসছে কিন্তু সে নিজেই মেয়েটির শিকারে পরিণত হয়েছে !

ফয়সাল দেখতে পেল আয়বয়টা মাটিতে নেমে এল । যেন হালকা একটা দেহ ! বাতাসে উঠে এল । তারপর একেবারে বিদ্যুৎ বেগে ওর সামনে চলে এল । ফয়সাল কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক চড় বসাল ওর গালে । ফয়সাল যেন একেবারে উড়ে গিয়ে পড়ল দরজার কাছে !

পুরো মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠল । এতো শক্তি ওটার গায়ে । ফয়সালের মনের ভয় এবার রূপ নিল আতঙ্কে ।  কোন মতে উঠে দাড়াল । হাতের কাছে পিতলের ফুলদানীটা ছুড়ে মারল অন্ধকারের দিকে । তারপর আর কিছু না ভেবেই দরজা দিয়ে দৌড়ে বের হয়ে গেল চিৎকার করতে করতে ! 

ফয়সাল যখন দৌড়াচ্ছিল তখন বারবার মনে হচ্ছিল যে ওর পেছন পেছন যেন কিছু দৌড়ে আসছে । এখনও ওর উপরে ঝাপিয়ে পড়বে ! ফয়সাল প্রাণপনে দৌড়াতে লাগল । 

দুই

-তো আপনি বলছেন মেয়েটা আপনার বন্ধুকে মেরে ফেলেছে !

-জ্বী !

-আর আপনি পালিয়ে এসেছেন ?

-জ্বী ! ওটা কোন মেয়ে না স্যার । কোন মেয়ে না । পিশাচ ! এই দেখেন আমার গালের কী করেছে !

এস আই রাজিব তাকাল ফয়সালের দিকে । কেউ ওকে চড় মেয়েছে সেটা বুঝতে কষ্ট হল না । যেই মারুক না কেন তার শরীরে প্রচন্ড শক্তি সেটা বলতেই হবে ! কিন্তু যে গল্প এই লোক বলছে সেটা মোটেই বিশ্বাস হওয়ার না ! একটা মেয়েকে তার কিডন্যাপ করেছে। তারপর যেখানে নিয়ে গেছে সেখানে নাকি সেই মেয়েটা তাদের একজনকে মেরে ফেলেছে । সে কোন মতে পালিয়ে এসেছে । 

যদিও ফয়সাল যখন পাগলের মত পালাচ্ছিল তখন পুলিশের টহল দল তাকে দেখতে পায় । কিছুটা শান্ত হলে তাকে জেরা করার পরে সব ঘটনা সে স্বীকার করে । রাজিব বলল, চলুন আপনার সেই বাসায় । দেখা যাক সেখানে কোন পিশাচ আছে কিনা ! 

পুলিশের একটা দল নিয়ে সেই বাড়িতে ঢুকল তারা । বসার ঘরের দরজাটা হাট করে খোলা । দরজা পার হতেই একজনের মৃত দেহ দেখতে পেল তারা ! রাজিব লাশের কাছে একটু পরীক্ষা করে দেখল।

মাথায় শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে । তারপর ফয়সালের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি না বললেম ঘরের ভেতরে লাশ। 

ফয়সাল নিজেও যেন অবাক হয়েছে । 

আমতা আমতা করে বলল ওটা তো ঘরের ভেতরেই ছিল। ঘর বলতেই সবার চোখ গেল সেদিকে । দরজাটা বন্ধ । 

রাজিব সেদিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ফয়সাল বলল, যাবে না ভেতরে ! যাবেন না ! 

রাজিব অবশ্য সেদিকে কান দিল না । তবে সাবধানতার জন্য পিস্তল বের করল । তারপর ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল । কোন অস্বাভাবিক কিছুই তার চোখে পড়ল না । একটা মেট্রেস রয়েছে । ঘরে আর কিছু নেই । মেট্রেসের উপরে একটা মেয়ে হাত আর চোখ বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে । রাজিব খুব সাবধানে এগিয়ে গেল মেয়েটার দিকে । 

মারা যায় নি । নিঃশ্বাস নিচ্ছে মেয়েটা তবে অজ্ঞান হয়ে আছে ! রাজিবের বুঝতে আর কিছু বাকি রইলো না। মেয়েটাকে ওরা কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছে। তারপর নিজেদের ভেতরে ঝামেলার করেছে । এই মারামারিতে একজন মারা গেছে । আর এখন নতুন গল্প ফেঁদেছে ! 

রাজিব বলল, এই বেটাকে হাত কড়া পরাও । আর এম্বুলেন্সে খবর দাও । সাথে মেডিকও খবর দাও !

আরও দুই ঘন্টা পরের ঘটনা । নীতু মাথা নিচু করে বসে রয়েছে একটা মেডিক্যাল ভ্যানের পেছনে । তার জ্ঞান ফিরেছে । সে অবাক হয়ে সবাইকে দেখছে । বিস্মিত চোখে চারিদিকে তাকাচ্ছে । 

এস আই রাজিব তাকে ধাতস্ত হতে কিছু সময় দিল । নীতু কিছুটা শান্ত হলে রাজিব তাকে বলল, আমাকে বলতে পারবেন কী হয়েছিল আপনার সাথে !

-আমি আসলে কিছুই জানি না । আমি টিউশানি থেকে বাসায় ফিরছিলাম। ঐ রাস্তাটা একটু নিরব তবে সর্টকাট হয় বলে ওটা দিয়েই আসি। আমি চুপচাপ আসছিলাম তখনই মনে হল কেউ যেন কিছু আমার মুখে চেপে ধরল । ব্যাস আর কিছু মনে নেই আমার। তারপর চোখ খুলে দেখলাম আপনারা !

-এমনই কিছু ভেবেছিলাম। বেটাকে আমি দেখছি !

নীতু বলল, আমাকে কি এসবের ভেতর থেকে বাইরে রাখা যায় ! আমি আসলে পুলিশি ঝামেলা থেকে দুরে থাকতে চাই । আমার তো কোন দোষ নেই । তাই না?

-হ্যা । আপনার কোন দোষ নেই । তবে আপনার সাক্ষি জরুরী । একটু কষ্ট দিব তবে আমি চেষ্টা করব যাতে আপনার নাম বাইরে না আসে ! ঠিক আছে ! 

-জ্বী ধন্যবাদ !

-আপনাকে আপনার হলে পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি । একটু বসুন ! 

পরিশিষ্ট

ফয়সালের কাছে সব কিছু কেমন যেন অবিশ্বাস মনে হচ্ছে । ওর সাথে কী হল এসব । পুলিশ ওকে হাতকড়া পরিয়ে গাড়িতে তুলছে । গাড়িতা ছাড়ার ঠিক আছে নীতুর সাথে ফয়সালের চোখাচোখি হল । সেই চোখের দৃষ্টি দেখে ফয়সালের মনে হল নীতু খানিকটা কৌতুকের চোখে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে । ওর মুখে একটা কৌতুক পূর্ণ হাসি ! তখনই ফয়সালের মনে হল নীতুই এই কাজটা করেছে । তবে ওর কথা কেউ বিশ্বাস করবে না । ঠান্ডা মাথায় শুনলে ওর নিজের কথা নিজেরও বিশ্বাস হবে না ! 

সবার কাছে ব্যাপারটা পরিস্কার হয়ে গেলেও কেউ একটা ব্যাপার খেয়াল করল না । মেহেদির ঘাড়ের কাছে দুটো সুক্ষ ফুটো রয়েছে। আর একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দেহে যে পরিমান রক্ষ থাকার কথা মেহেদির শরীরে সেই পরিমান রক্ত নেই । কেউ যেন সেটা শুষে নিয়েছে ওর দেহ থেকে । 

গল্পের লিংক সরাসরি পেতে হোয়াটসএপ গ্রুপ বা চ্যানেল বা টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন করুন।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.5 / 5. Vote count: 38

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →