শিকার কে?

oputanvir
4.5
(33)

নিজের হাতঘড়ির দিকে নিশ্চুপ তাকিয়ে রয়েছে ফরসাল । গত চৌদ্দদিন সে নীতুর পিছু নিয়েছে । নীতু কোথায় যায় কার সাথে কথা বলে কী করে সব কিছুর একটা ছক হিসাব করেছে । কারণ নীতুকে অপহরণ করতে গেলে এটা খুবই জরুরী ছিল। আজকে কাজটা করবে সে । নীতুকে তুলে নিয়ে যাবে। সন্ধ্যার অন্ধকার আস্তে আস্তে গাঢ় হচ্ছে। একটু পরেই নীতু এই পথে দিয়েই যাবে। 

নীতুর উপরে সে প্রতিশোধ নিবে । এতো টুকু এক মেয়ের কারণে তাকে তীব্র অপমানিত হতে হয়েছে । এতোদিন ধরে ওর যে একটা ভদ্র ইমেজ যে ধরে রেখেছিল সেই ইমেজটা একেবারে নষ্ট করে দিয়েছে এই মেয়ে। এই মেয়ের উপরে একটা তীব্র প্রতিশোধ সে নিবে । এমন একটা শিক্ষা এই মেয়েটাকে সে দিবে যাতে এরপর আর কারো সাথে এই মেয়ে এমন কোন কাজ না করতে পারে!

কী এমন করেছিল সে?

সামান্য একটা মেসেজ পাঠিয়েছিল ফেসবুকে । অনেক দিন থেকে নীতুর ফ্রেন্ড লিস্টে রয়েছে সে । মেয়েটা গল্প টল্প লেখে ফেসবুকে । ফয়সাল নীতুকে একটা মেসেজ পাঠিয়েছিল । অনেক মেয়েকেই সে এমন মেসেজ পাঠিয়েছে । এটা খুবই সামান্য একটা একটা ব্যাপারে । আর এই মেয়ে কিনা সেই মেসেজের একতা স্ক্রিনশট প্রকাশ করে দিল ! নীতুর সাথে ওর বেশ কিছু মিউচ্যুয়াল ফ্রেন্ড ছিল । তারা সেই স্ক্রিনশট দেখে ফরসালকে আনফ্রেন্ড করে দিল । সেই সাথে ওর পরিচিত অনেকেই এই কুকর্মের কথা জানিয়ে দিল । এমন কি সেই কথা ওর বাসায় পর্যন্ত পৌছে গেল । ফয়সালের বাবা তো পারলে একেবারে ওকে বাসা থেকে বের করে দেয় । 

একটা রাগ তাই নীতুর উপর ফয়সালের জমে আছে । একটা শিক্ষা মেয়েটাকে দিতেই হবে । সেই চিন্তা থেকে ফয়সাল নীতুর পিছু নেওয়া শুরু করেছে । মোটামুটি ফয়সাল নীতুর সব রুটিন জানে। 

নীতুর জীবনে একেবারে সরল সোজা । প্রতিদিন সকালে ওর ক্লাস থাকে । সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্লাস চলে । এরপরে সপ্তাহে তিন দিন টিউশনি করে । বিকেল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত । হলে পৌছাতে পৌছাতে সাড়ে আটটা বাজে । বাকি চার দিনে বিকেল বেলা নীতু ক্যাম্পাসের নানান স্থানে ঘুড়ে বেড়ায় । বিকেল বেলা সাধারণ পুকুর পাড়ে বসে বই পড়ে । সন্ধ্যার সময় হলে বন্ধুদের সাথে চায়ের আড্ডা বসে । 

ফয়সাল যতদুর জানে এখনও তার কোন বয়ফ্রেন্ড বা বিশেষ কোন ছেলে বন্ধু নেই । মোটামুটি একটা ছক ফয়সাল তৈরি করে ফেলেছে । এখন কেবল একশানে যেতে হবে । এই কাজে ওকে সাহায্য করবে ওর এক বাল্য বন্ধু মেহেদি । এর আগেও সে এমন কাজ করেছে । দুজন মিলে নীতুকে তুলে নেওয়া মোটেই কষ্ট হবে না । নীতুর টিউশনি থেকে হলে পৌছানোর জন্য যে রাস্তাটা ব্যবহার করে সেই রাস্তাটাতেই কাজ হবে । একটা মাইক্রোবাস ভাড়া করা হয়েছে । নম্বর প্লেট ভুয়া । তাই কেউ যদি নম্বর টুকেও রাখে তাতেও খুব একটা সমস্যা হবে না । 

আজকে বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে । সময় যেন আর কাটছে না । ঘড়ির কাঁটা এখনও রাত আটটা ছোঁয় নি । হয়তো আজকে একটু দেরি করে বের হবে সে টিউশনি থেকে । একটা ব্যাপার অবশ্য ফরসালের কাছে একটু অন্যরকম লাগল । নীতু নামের মেয়েটার যে সাহস আছে সেটা বলতেই হবে। কারণ সন্ধ্যার পরে এই পথে মানুষজন সাধারণত কেউ আসে না । একটু ঘুর পথ হলেও সবাই প্রধান রাস্তা দিয়েই যায়। নীতু সর্টকাটে যাওয়ার জন্য এই রাস্তা ব্যবহার করে । তবে প্রথম দিন রাতের বেলাতেও নীতুকে এই পথ দিতে যেতে দেখে একটু অবাক হয়েছিল । তবে মনে মনে খুশিই হয়েছিল । 

রাত আটটা বেজে গেছে। এখনই নীতু বের হবে টিউশনি থেকে । এখানে আসতে বড়জোর মিনিট দশেক লাগবে । কিংবা আরও ৫ মিনিট বেশি লাগতে পারে । মেয়েদির দিকে তাকাল ফয়সাল । মুখের সিগারেটটা ফেলে দিতে বলল । আরও বলল যে হাতের ইশারা দিলেই যেন গাড়ি স্ট্যার্ট দেয় সে ।   

দেখতে দেখতে আটটা পনের বেজে গেল । নীতুর দেখা নেই । আজকে আসবে না ?

এমন কেন হবে? ফয়সাল একটু চিন্তায় পড়ল । আজকে না এলে আবারও দুইদিন অপেক্ষা করতে হবে । কাল শুক্রবার হওয়াতে পরের টিউশানি আবার রবিবার । আজকে কি আসবে না এই পথে?

ফয়সাল নীতুকে ঠিকই টিউশানিতে ঢুকতে দেখেছে । তাহলে বের হতে এতো দেরি কেন করছে !

মুখ দিয়ে একটা গালি বের হয়ে এল ! ঠিক সেই সময় সে নীতুকে দেখতে পেল । এই রাস্তার শেষ লাইট পোস্টটা পার হয়ে আসছে ধীরে ধীরে । গাড়িটা রাস্তার পাশেই রাখা । নীতু যখন পাশ দিয়ে যাবে তখনই ফয়সাল ওর উপরে হামলা করবে । ক্লোরোফর্মের রুমাল চেয়ে ধরবে । তারপর গাড়িতে তুলবে । শক্তিতে নীতুর কোন ভাবেই ফয়সালের সাথে পেড়ে ওঠার কথা না । সেই হিসাবে ফয়সাল একাই কাজটা করতে পারবে । তবে সমস্যা হলেই মেহেদি এগিয়ে আসবে । এখানে একটাই সমস্যা । এই সময়ের ভেতরে যদি কেউ এই রাস্তায় চলে আসে তাহলে ওরা বিপদে পড়ে যাবে । তবে আশার কথা যে এই রাস্তায় অন্ধকারের ভেতরে কেউ আসে না । 

ঘটনা ঘটলো খুবই দ্রুত । এবং একেবারেই সহজে । ফয়সাল যেমনটা ভেবেছিল তেমন কোন বাঁধাই দিতে পারলো না নীতু। নীতু কিছু বুঝে ওঠার আগেও ফয়সাল ওর পেছনে চলে গেল আর রুমালটা নীতুর নাকে চেপে ধরল । টু শব্দটা করতে পারল না সে । 

গাড়িটা চলতে শুরু করল । মেহেদি গাড়ি চালাচ্ছিল । তবে বারবার পেছনে ফিরে তাকাচ্ছিল । ফয়সালের মুখে একটা ক্রুড় হাসি । সে মনে মনে ঠিক করেই নিল যে মেয়েটার সাথে কী করবে। তবে আগেই চোখ বেঁধে নিবে যাতে নীতু কাউকে চিনতে না পারে । একবার অবশ্য ভেবেছিল যে একেবারেই জানে শেষ করে দিবে তবে সেটাতে বিপদে পড়বে । আসল কাজ করে ছেড়ে দিলে খুব একটা সমস্যা হবে না । এমনও হতে পারে যে নীতু হয়তো এই ব্যাপারটা কাউকে জানাবেই না । আমাদের দেশের মেয়েদের ভেতরে এই ব্যাপারটা খুব আছে । লোক লজ্জার ভয়ে তার এই সব ব্যাপার কাউকে বলে না । 

নীতু হাত পেছন দিক দিয়ে শক্ত করে বেঁধে ফেলল । চোখ বাঁধল ভাল করে যাতে কোন ভাবেই ওদেরকে চিনতে না পারে । চিনতে না পারলে কিছুই করতে পারবে না সে ।

প্রায় একঘন্টা একটানা মাইক্রোটা চলার পরে একটা নির্জন বাড়ির সামনে এসে থামল। বাড়িটা আগে থেকে ঠিক করা । মেহেদির কোন এক বড় ভাইয়ের । মাঝে মাঝে মৌজমাদতি করার জন্য এখানে আসে । নীতুকেও এখানে আনা হয়ে সেই কারণেই। নীতুর জ্ঞান এখনও ফেরে নি । তবে এখনও আর জ্ঞান ফিরলেও কোন সমস্যা নেই । চিৎকার করলেও কেউ শুনতে পাবে না । এবার আসল মজা শুরু হবে। 

নীতুকে কাধে তুলে নিয়েই ফয়সাল বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেল । একটা ঘরের ভেতরে আটকে রেখে বসার ঘরে এসে বসল । মেহেদিকে আসতে দেখল ওর পিছু পিছু । ওর দিকে তাকিয়ে বলল, চল শুরু করি !

ফয়সাল দেখল মেহেদির চোখে চুকচুক করছে । 

-আরে শ্লা দাড়া এতো তাড়াহুড়া কিসের ! আগে জ্ঞান ফিরুক । একটু চিৎকার করুক ! আমি আগে ওর ভয়ের চিৎকার শুনতে চাই । আর রাত তো পড়েই রয়েছে । আগে একটু মাল খাই !

মেহেদি বলল, এইরে !

-কী হল ! 

-মাল তো আনি নাই !

-সে কি ! কেন ? তোকে না বোতল দিলাম !

-ওটা তো ওখানে শেষ !

ফয়সাল কঠিন একটা গালি দিতে গিয়েও থেমে গেল । তারপর বলল, রাতে কী করবো আমরা শুনি? 

মেহেদি একটু মাথা নিচু করল । ফয়সাল বলল, চল আগে রাতের খাবার নিয়ে আসি ।

-আমি যাবো ?

-চল !

-মানে আমার পেটটা কেমন একটু গুড় গুড় করছে সেই কখন থেকে । আমি একটু টয়লেটে যাব । তুই যা । নিয়ে আয় । আর কারো তো থাকার দরজার । যদি জ্ঞান ফিরে আসে । পালিয়ে যেতে চায় !

ফয়সাল কিছু সময় কী যেন ভাবল । তারপর রাজি হয়ে গেল । বলল, তুই নিজেকে সামলে রাখ। আমি আগে আসি । খবরদার বললাম আগে থেকে কিছু করবি না । 

মেহেদি একটু খ্যাঁকখ্যাঁক করে হাসল । তারপর টিভি ছেড়ে দিল । ওর দিকে তাকিয়ে বলল, আরে শ্লা যা । কিছু করব না । তুই আগে আয় ! তারপর ! 

ঘন্টা খানেক পরে ফরসাল চার বোতল ফেন্সি আর চার প্যাকেট নিয়ে ফিরে আসল । তবে বাড়ির দরজা দিয়ে ঢুকতে গিয়েই ফয়সালের মনের ভেতরে কেমন যেন একটু কু ডেকে উঠল । বাড়িটাকে যেন একটু বেশি নির্জন মনে হল । যখন মেহেদিকে রেখে গিয়েছিল তখন মেহেদি টিভি ছেড়েছিল । সেইটা কী বন্ধ !

দরজা দিয়ে ঢুকতেই দেখল টিভিতা চলছে ঠিকই তবে সেটার সাউন্ড অফ করা । তখনই ফয়সালের চোখ গেল দরজাটার দিকে । সেটা খোলা !

মুখ দিয়ে একটা খারাপ গালি বের হয়ে এল ! শ্লা একটু অপেক্ষা করতে পারল না । 

বোতল আর খাবার প্লেটটা রেখে ফয়সাল দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকল । তখনই আবারও সেই অনুভূতিটা তার ভেতরে ফিরে এল ।   কিছু যেন অস্বাভাবিক । ঘরটা একেবারে অন্ধকার হয়ে আছে । সুইচ বোর্ডে আলো জ্বালানোর চেষ্টা করল বটে কিন্তু আলো জ্বলল না । 

এমন তো হওয়ার কথা না ! একটু আগে যখন নীতুকে সে এখানে রেখে গিয়েছিল তখন তো আলো ঠিকই জ্বলছিল । তাহলে এখন কী হল ? 

আরেকটু এগিয়ে যেতেই কিছুতে বেধে হুমড়ি খেয়ে পড়ল সে । একেবারে শেষ মুহুর্তে হাত দিয়ে ঠেকালো মেঝেতে উল্টে পড়া থেকে । যখন নিজেকে সামলে নিল । কিসে বেঁধে পড়েছে সেটাতে হাত দিল । 

একটা দেহ ! 

হাত দিয়ে দেহটা স্পর্শ করার পরেই বুঝতে কষ্ট হল না যে দেহটা কার !

মেহেদির !

নিথর হয়ে পড়ে আছে । প্রান নেই !

কেন এমনটা মনে হল সেটা ফয়সাল জানে না । তবে ওর মনে হল নিঃশ্বাস নিচ্ছে না সে । সে আর বেঁচে নেই।

বুকের ভেতরে ধক করে উঠল । কী হয়েছে এখানে ! মেহেদি কিভাবে মারা গেল?

কে মারল ওকে !

ফয়সালের মনে যখন এই প্রশ্ন এল তখনই ওর অনুভূত হল যে ঘরে ও একা নয়। পুরো অন্ধকার ঘরটা । তবে কিছু সময়ের ভেতরেই সেটা চোখে সয়ে গেল । সেই অন্ধকারের ভেতরে ফয়সাল আরও গাঢ় অন্ধকারের অয়োবয়টা দেখতে পেল । সিলিং থেকে ঝুলে আছে । লাল দুটো চোখ তার চিনতে অসুবিধা হল না ।  ফয়সালের মনে সেই অন্ধকারটা একটু যেন হেসে উঠল। একেবারে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে সে। ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে ! 

ফয়সাল যেন একেবারে জমে গেল । পা যেন একটুও নড়াতে পারছে না । 

কে ওটা ?

কী ওটা !

তখনই ফয়সালের মাথায় কিছু তথ্য এসে ধাক্কা দিল । নীতু নামের মেয়েটা ঐ নির্জন রাস্তা দিয়ে কেন যেত ! কোন স্বাভাবিক মেয়ের পক্ষে কি সম্ভব ? ওখানে মাঝে মাঝেই লাশ পাওয়া যায় বলে ফয়সাল শুনেছে । কে বা কারা সেগুলোকে মেরে ফেলে সেটার কোন হদিস কেউ জানে না । এমন একটা রাস্তা দিয়ে একটা ২২/২৩ বছরের মেয়ে কিভাবে যাওয়ার সাহস করে?

এর একটাই কারণ হতে পারে?

যদি না সেই ভয়ংকর কারণ মেয়েটি নিজে না হয় !

ফয়সালের তখন বুঝতে পারল যে নীতু নামের মেয়েটিকে এতো সহজে সে কিভাবে ধরে নিয়ে আসতে পারল ! মেয়েটা বিন্দু মাত্র বাঁধা দিলো না কেন? ক্লোরফর্ম কাজ করতেও একটু সময় নেয়। নীতু তো একটু বাঁধা দেওয়ার চেষ্টাও করে নি। কারণ কী হতে পারে? 

সে নিজ ইচ্ছেতেই আসতে চেয়েছে ! ফয়সাল এতো সময়ে ভেবেছে সে নীতুকে শিকার করে নিয়ে এসছে কিন্তু সে নিজেই মেয়েটির শিকারে পরিণত হয়েছে !

ফয়সাল দেখতে পেল আয়বয়টা মাটিতে নেমে এল । যেন হালকা একটা দেহ ! বাতাসে উঠে এল । তারপর একেবারে বিদ্যুৎ বেগে ওর সামনে চলে এল । ফয়সাল কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক চড় বসাল ওর গালে । ফয়সাল যেন একেবারে উড়ে গিয়ে পড়ল দরজার কাছে !

পুরো মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠল । এতো শক্তি ওটার গায়ে । ফয়সালের মনের ভয় এবার রূপ নিল আতঙ্কে ।  কোন মতে উঠে দাড়াল । হাতের কাছে পিতলের ফুলদানীটা ছুড়ে মারল অন্ধকারের দিকে । তারপর আর কিছু না ভেবেই দরজা দিয়ে দৌড়ে বের হয়ে গেল চিৎকার করতে করতে ! 

ফয়সাল যখন দৌড়াচ্ছিল তখন বারবার মনে হচ্ছিল যে ওর পেছন পেছন যেন কিছু দৌড়ে আসছে । এখনও ওর উপরে ঝাপিয়ে পড়বে ! ফয়সাল প্রাণপনে দৌড়াতে লাগল । 

দুই

-তো আপনি বলছেন মেয়েটা আপনার বন্ধুকে মেরে ফেলেছে !

-জ্বী !

-আর আপনি পালিয়ে এসেছেন ?

-জ্বী ! ওটা কোন মেয়ে না স্যার । কোন মেয়ে না । পিশাচ ! এই দেখেন আমার গালের কী করেছে !

এস আই রাজিব তাকাল ফয়সালের দিকে । কেউ ওকে চড় মেয়েছে সেটা বুঝতে কষ্ট হল না । যেই মারুক না কেন তার শরীরে প্রচন্ড শক্তি সেটা বলতেই হবে ! কিন্তু যে গল্প এই লোক বলছে সেটা মোটেই বিশ্বাস হওয়ার না ! একটা মেয়েকে তার কিডন্যাপ করেছে। তারপর যেখানে নিয়ে গেছে সেখানে নাকি সেই মেয়েটা তাদের একজনকে মেরে ফেলেছে । সে কোন মতে পালিয়ে এসেছে । 

যদিও ফয়সাল যখন পাগলের মত পালাচ্ছিল তখন পুলিশের টহল দল তাকে দেখতে পায় । কিছুটা শান্ত হলে তাকে জেরা করার পরে সব ঘটনা সে স্বীকার করে । রাজিব বলল, চলুন আপনার সেই বাসায় । দেখা যাক সেখানে কোন পিশাচ আছে কিনা ! 

পুলিশের একটা দল নিয়ে সেই বাড়িতে ঢুকল তারা । বসার ঘরের দরজাটা হাট করে খোলা । দরজা পার হতেই একজনের মৃত দেহ দেখতে পেল তারা ! রাজিব লাশের কাছে একটু পরীক্ষা করে দেখল।

মাথায় শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে । তারপর ফয়সালের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি না বললেম ঘরের ভেতরে লাশ। 

ফয়সাল নিজেও যেন অবাক হয়েছে । 

আমতা আমতা করে বলল ওটা তো ঘরের ভেতরেই ছিল। ঘর বলতেই সবার চোখ গেল সেদিকে । দরজাটা বন্ধ । 

রাজিব সেদিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ফয়সাল বলল, যাবে না ভেতরে ! যাবেন না ! 

রাজিব অবশ্য সেদিকে কান দিল না । তবে সাবধানতার জন্য পিস্তল বের করল । তারপর ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল । কোন অস্বাভাবিক কিছুই তার চোখে পড়ল না । একটা মেট্রেস রয়েছে । ঘরে আর কিছু নেই । মেট্রেসের উপরে একটা মেয়ে হাত আর চোখ বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে । রাজিব খুব সাবধানে এগিয়ে গেল মেয়েটার দিকে । 

মারা যায় নি । নিঃশ্বাস নিচ্ছে মেয়েটা তবে অজ্ঞান হয়ে আছে ! রাজিবের বুঝতে আর কিছু বাকি রইলো না। মেয়েটাকে ওরা কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছে। তারপর নিজেদের ভেতরে ঝামেলার করেছে । এই মারামারিতে একজন মারা গেছে । আর এখন নতুন গল্প ফেঁদেছে ! 

রাজিব বলল, এই বেটাকে হাত কড়া পরাও । আর এম্বুলেন্সে খবর দাও । সাথে মেডিকও খবর দাও !

আরও দুই ঘন্টা পরের ঘটনা । নীতু মাথা নিচু করে বসে রয়েছে একটা মেডিক্যাল ভ্যানের পেছনে । তার জ্ঞান ফিরেছে । সে অবাক হয়ে সবাইকে দেখছে । বিস্মিত চোখে চারিদিকে তাকাচ্ছে । 

এস আই রাজিব তাকে ধাতস্ত হতে কিছু সময় দিল । নীতু কিছুটা শান্ত হলে রাজিব তাকে বলল, আমাকে বলতে পারবেন কী হয়েছিল আপনার সাথে !

-আমি আসলে কিছুই জানি না । আমি টিউশানি থেকে বাসায় ফিরছিলাম। ঐ রাস্তাটা একটু নিরব তবে সর্টকাট হয় বলে ওটা দিয়েই আসি। আমি চুপচাপ আসছিলাম তখনই মনে হল কেউ যেন কিছু আমার মুখে চেপে ধরল । ব্যাস আর কিছু মনে নেই আমার। তারপর চোখ খুলে দেখলাম আপনারা !

-এমনই কিছু ভেবেছিলাম। বেটাকে আমি দেখছি !

নীতু বলল, আমাকে কি এসবের ভেতর থেকে বাইরে রাখা যায় ! আমি আসলে পুলিশি ঝামেলা থেকে দুরে থাকতে চাই । আমার তো কোন দোষ নেই । তাই না?

-হ্যা । আপনার কোন দোষ নেই । তবে আপনার সাক্ষি জরুরী । একটু কষ্ট দিব তবে আমি চেষ্টা করব যাতে আপনার নাম বাইরে না আসে ! ঠিক আছে ! 

-জ্বী ধন্যবাদ !

-আপনাকে আপনার হলে পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি । একটু বসুন ! 

পরিশিষ্ট

ফয়সালের কাছে সব কিছু কেমন যেন অবিশ্বাস মনে হচ্ছে । ওর সাথে কী হল এসব । পুলিশ ওকে হাতকড়া পরিয়ে গাড়িতে তুলছে । গাড়িতা ছাড়ার ঠিক আছে নীতুর সাথে ফয়সালের চোখাচোখি হল । সেই চোখের দৃষ্টি দেখে ফয়সালের মনে হল নীতু খানিকটা কৌতুকের চোখে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে । ওর মুখে একটা কৌতুক পূর্ণ হাসি ! তখনই ফয়সালের মনে হল নীতুই এই কাজটা করেছে । তবে ওর কথা কেউ বিশ্বাস করবে না । ঠান্ডা মাথায় শুনলে ওর নিজের কথা নিজেরও বিশ্বাস হবে না ! 

সবার কাছে ব্যাপারটা পরিস্কার হয়ে গেলেও কেউ একটা ব্যাপার খেয়াল করল না । মেহেদির ঘাড়ের কাছে দুটো সুক্ষ ফুটো রয়েছে। আর একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দেহে যে পরিমান রক্ষ থাকার কথা মেহেদির শরীরে সেই পরিমান রক্ত নেই । কেউ যেন সেটা শুষে নিয়েছে ওর দেহ থেকে । 

গল্পের লিংক সরাসরি পেতে হোয়াটসএপ গ্রুপ বা চ্যানেল বা টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন করুন।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.5 / 5. Vote count: 33

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →