এই সব মিথ্যা গল্প (৪.১)

oputanvir
4.6
(51)

বিয়ের দিন সাতেক পরে রায়হান তার বউকে একটু ভাল করে দেখার সুযোগ পেল। যদিও রায়হানের বিয়েটা রায়হানের ঠিক ইচ্ছে মত হয় নি। রায়হানের বাবা মা ওকে অনেকটা জোর করেই বিয়ে দিয়ে দিয়েছে । এমন না যে রায়হানের অন্য কেউ পছন্দ ছিল কিংবা সে এখনই বিয়ে করতে চায় না । রায়হানের বিয়ের ইচ্ছে ছিল । তবে এতো তাড়াহুড়া করার ইচ্ছে ছিল না । কিন্তু রায়হানের বাবার এক কথা যে এখনই বিয়ে করতে হবে এবং তাদের পছন্দ করা মেয়েকেই বিয়ে করতে হবে। অন্য কোন কথা তারা শুনবেন না । চাইলেই রায়হান বিয়ে না করতে পারত । তবে বাবা মায়ের বাধ্য সন্তান হিসাবেই সে সারা জীবন পার করে এসেছে । তাই শেষ পর্যন্ত বাবা মায়ের অবাধ্য সে হয় নি । বিয়ে করেছে তাদের পছন্দ মত । তবে মনের ভেতরে একটা রাগ ঠিকই ছিল। কেন তার উপর এভাবে জোর করা হল ! সেই রাগটাই খানিকটা গিয়ে পড়েছিল তার নতুন বইয়ের উপরে ! 

বিয়ের কয়েকদিন কেটে গেল নানান আনুষ্ঠানিকতায় । আজকে রায়হানের ছুটি শেষ । সে অফিসে গিয়েছিল । অফিস থেকে ফিরে বাসায় এসে নিজের বউয়ের দিকে তাকাল । তার বউ জুই তখন সন্ধ্যার নাস্তা তৈরি করছিল । গতকালকে রায়হানের সাথে জুই তার এই সাভারের বাসায় এসে হাজির হয়েছে । সরকারি কোয়াটারে ছোট ছিমছাপ বাসা । জুইয়ের বাসাটা পছন্দ হয়েছে বেশ । 

যদিও ওর বাসার লোকজন এখনই রায়হানের সাথে আসতে দিতে চাচ্ছিল না । তাদের ইচ্ছে ছিল যে একেবারে অনুষ্ঠান করে উঠিয়ে নেওয়ার পরে একেবারে জুই যাবে রায়হানের সাথে । তবে জুই নিজের ইচ্ছেতেই রায়হানের সাথে এসেছে । এটা নিয়ে অবশ্য জুইয়ের কাজিনদের ভেতরে খানিকটা হাসাহাসি হয়েছে । তবে জুই এসব কিছু গায়ে মাখে নি। সে ঠিকই চলে এসেছে । 

রায়হান ফ্রেশ হয়ে যখন বসার ঘরে আসল তখনই মনে হল এক সপ্তাহের আগের অবস্থা আর নেই । এখন ও বিবাহিত । ওর ঘরে এখন আরেকটা মানুষ রয়েছে । যে মানুষটা কিনা ওর নিজের বউ । ব্যাপারটা ভাবতেও রায়হানের নিজের কাছেই কেমন যেন লাগছে । একটা মানুষের সাথে এভাবেই তাহলে জীবন যুক্ত হয়ে যায় । যদিও এখনও ওদের জীবন শুরু হয় নি !

রায়হান টিভির ঘরে বসে যখন টিভি দেখতে লাগল তখনই খেয়াল করল যে জুই খাবার টেবিলে কী যেন নিতে এলে । এবং তখনই রায়হানের চোখ গেল জুইয়ের উপরে ! এতো দিনে সে নিজের বউকে ভাল করে দেখতে পেল । এবং তখনই একটু অবাক হয়েই আবিস্কার করল যে জুই দেখতে বেশ সুন্দর । পাতলা ঠোঁট, কালো দিঘীর মত চোখ আর লম্বা চুল । একবার তাকালে আবারও জুইয়ের দিকে ফিরে যে কেউ ফিরে তাকাবে । 

রায়হান ওর দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি তো দেখতে বেশ সুন্দর ! 

জুই থেকে গেল । তারপর রায়হানের দিকে ফিরে তাকাল । একটু বিস্মিত চোখে সে রায়হানের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । রায়হান সম্ভবত এমন কিছু যে বলবে সেটা সে ভাবতেও পারে নি। তবে নিজেকে সামলে নিল কিছু সময় পরেই । রান্না ঘরে চলে গেল কিছু না বলেই । তবে ফিরে এল একটু পরেই । হাতে একটা প্লেট । সেটা রায়হানের সামনে রাখতে রাখতে বলল, এটা এতো দিন পরে দেখলেন ? আপনি তো আমাকে বিয়েই করতে চান নি । এমন কি এই কদিনে আমার সাথে ভাল করে কথাও বলেন নি !

রায়হান বলল, আসলে তুমি এই আমাকে অনেকটা জোর করেই বিয়ে দেওয়া হয়েছে ?

-আমি দিয়েছি বিয়ে?

-না তুমি না । আমার বাবা মা !

-দোষ করলো অন্য জন আর রাগ দেখানো হল অন্যের উপরে?

-রাগ দেখালাম কোথায়? 

-ঐ তো একই কথা ! আমাকে তো বিয়ে করতে চান নি ! 

রায়হান হাসল । তারপর বলল, বিয়ে করতে চায় নি কথাটা এই রকম না !

-তাহলে ?

রায়হান জুইয়ের হাতের প্লেটটা থেকে পিয়াজু ভাজার একটা তুলে নিল । সেটা মুখে দিতে দিতে বলল,

-আসলে আমি চেয়েছিলাম বিয়ের আগে আমাদের কিছু সময় দেখা সাক্ষাত হোক, কথা হোক তারপর ! আসলে আমাদের দেশে বিয়ের ব্যাপারে তাদের মত নেওয়া হয় না একবারেই । বিশেষ করে ছেলের যদি ভাল চাকরি থাকে তাহলে তো কথাই নেই । তাকে এক প্রকার জোর করেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় ! 

জুই কিছু সময় চুপ করে থেকে বসল রায়হানের পাশে । তারপর বলল, তো আপনার মনে হয়েছে যে আমাকে আমার বাবা মা আপনার সাথে জোর করে বিয়ে দিয়েছে?

রায়হান কোন জবাব দিল না । তবে সেও তাকিয়ে রইলো জুইয়ের দিকে । জুই একটু হেসে বলল, তেমন টা হয় নি !

-তাহলে?

-আপনাকে আমি নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছি ! 

রায়হান কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো । জুই বলল, আপনাকে আমি প্রথম দেখেছিলাম যেদিন আমরা আপনাদের ফ্লাটের উপরতলাতে ভাড়া আছি । আপনার হয়তো মনে নেই তবে আপনি সেদিন সম্ভবত বাসা গিয়েছিলেন । ছাদে উঠছিলেন । আমি নামছিলাম । সেদিন আপনাকে আমি সরাসরি দেখি । তারপর থেকে আপনি আর আমার মাথার ভেতর থেকে বেরই হোউন নি । মাস দুয়েক পরে আমি বুঝতে পারলাম যে আপনাকে আমার মাথা থেকে বের করা সম্ভব না । তাই লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে আমি মাকে আপনার কথা বললাম । বললাম যে আপনাকে আমি বিয়ে করতে চাই। 

রায়হান খানিকটা বিস্মিত কন্ঠে বলল, তারপর?

-তারপর আর কি ! মা বলল বাবা কে । বাবা তো শুনে খুব রাগ করল ।

-রাগ করবে কেন?

-আপনি ভুলে কেন যাচ্ছেন যে আমার বাবা একজন কলেজের শিক্ষক । তার মেয়ে পড়ালেখা বাদ দিয়ে বিয়ে করতে চাচ্ছে এটা কি তার পছন্দ হওয়ার কথা !

-তাহলে এর পরে?

-এরপরে আর কি ! বাবা মোটেই রাজি ছিলেন না । এমন কি আপনার চাকরি দেখেও না । তার ইচ্ছে ছিল আমি আগে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পাবো তারপর বিয়ে !

-তো শ্বশুর মশাই রাজি কিভাবে হল?

-আমার শ্বশুর মশাই তাকে রাজি করিয়েছে?

রায়হান ব্যাপারটা প্রথমে ঠিক বুঝতে পারল না । রায়হান কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল, তুমি আমার বাবাকে বলেছিলে তোমার পছন্দের কথা?

জুই হাসল । রায়হান দেখল ওর মুখটা একটু লাল হয়ে উঠেছে। জুই একটু লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিয়ে বলল, হ্যা । বাবা যখন কোন ভাবেই রাজি হচ্ছিল না তখন আমি একদিন ছাদে আপনার বাবা মানে আব্বুর সাথে কথা বলল। অকপটে আপনাকে পছন্দের কথা বলে দিলাম ! বললাম যে আমার পড়া লেখা কিছু হচ্ছে না । আপনাকে কোন ভাবেই মাথা থেকে বের করতে পারছি না । 

রায়হান বলল, এই জন্য বাবা আমাকে এইভাবে চাপ দিল বিয়ের জন্য !

জুই কিছু না বলে হাসল কেবল ! 

রায়হান কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল জুইয়ের দিকে । তাকে যে কেউ এভাবে পছন্দ করে সরাসরি ওর বাবাকে বলতে পারে সেটা রায়হানের মাথাতেই আসে নি । এভাবে যে কেউ ওকে ভালবাসতে পারে সেটা রায়হানের ধারণার বাইরে ছিল । তবে সে বিস্ময়ের অনুভূতিটা ভাল লাগার অনুভূতিতে রূপান্তরিত হতে সময় লাগল না । সামনে ওদের দুজনের জন্য যে চমৎকার সময় অপেক্ষা করছে সেটা ওদের দুজনের কাউকেই বলে দিতে হল না । ওদের ভালবাসার গল্প এখান থেকেই শুরু হল !  

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.6 / 5. Vote count: 51

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →