চুমু জ্বর

oputanvir
4.8
(29)

মানুষের অনেক রকম জ্বর হয়। বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর, সিজেন পরিবর্তণের জ্বর, মশার কাপড় খেয়ে জ্বর, স্যারর মাইর খেয়ে জ্বর আবার কেউ কেউ জ্বীন ভুতের ভয় পেয়ে জ্বর বাঁধায়। আর আমি জ্বর বাঁধিয়েছি চুমু খেয়ে। চুমু জ্বর। তবে আমাকে একেবারে দোষো দেওয়া যায় না। মিমিকে যে আমাকে এভাবে চুমু খেয়ে ফেলবে সেটা আমি কোনদিন ভাবতেও পারে নি। এই অপ্রত্যাশিত অনুভূতিই সম্ভবত আমার শরীরের ভেতরে কোন কেমিক্যাল ইমব্যাপালেন্স ঘটিয়েছে। যার কারণে আমার জ্বর এসেছে।
মিমি আর আমি একে অন্যকে যে পছন্দ করি, এই ব্যাপারটা আমরা দুইজনেই জানি। বিশেষ করে আমাদের দুইজনের আচরণই এই কথা বলে দেয়। মিমির সাথে আমার যতবার চোখাচোখি হয়েছে ততবারই আমার কেবল মনে হয়েছে যে এই মেয়েটা আমাকে অসম্ভব পছন্দ করে। বোধকরি আমার চোখের দৃষ্টিও মিমির মনে ঠিক একই কথা জাগে। মেয়েরা সহজেই এই ব্যাপারটা বুঝতে পারে। এতোদিন যা একটু মনে সন্দেহ ছিল এখন সেটা একদমই নেই।
আমাদের এই চোখাচোখি নিরব পছন্দের ব্যাপারটা আসলে এতোদিন এভাবেই চলছিল, আমরা কেবল দূর থেকেই একে অন্যের দিকে তাকাতাম। একে অন্যের কার্যক্রমের দিকে চোখ দিতাম। কিন্তু গতকাল ঘটলো সেই ঘটনা। আমাদের অফিসটা চার তলাতে হওয়ার কারণে আমি সব সময় সিড়ি দিয়েই ওঠা নামা করি। অনেকে অবশ্য আমার সিড়ি ব্যবহার নিয়ে হাসি মশকরা করে তবে এতে আমি খুব একটা গাঁ করি না। গতকাল লাঞ্চ শেষ করে উপরে উঠছিলাম। তখন খেয়াল করলাম যে খুব দ্রুত মিমি নিচে নামছে। নিশ্চিত কোন কাজে নামছে। এতো তাড়াহুড়া যে সে সম্ভবত লিফটের জন্য অপেক্ষাও করতে পারে নি। আমার তখনই মনে হল এইভাবে নামতে গেলে মেয়েটা পা পিছলে যেতে পারে। আমার মনের কথা মনেই রয়ে গেল। মিমি নামতে গিয়ে আমার দিকে তাকালো, ওর চোখে একটা পরিবর্তন দেখাল করলাম এবং তারপরই বুঝতে পারলাম যে ও পা পিছলে গেছে। তবে কপাল গুণে আমি একেবার ওর কাছেই ছিলামা আর ওকে ধরেও ফেললাম। আর ও আমাকে জড়িয়ে ধরেই নিজে পতন ঠেকাল। এই পর্যায়ে সে একেবারে আমার মুখের কাছে চলে এসেছিল। এতো কাছে যে আমাদের দুই ঠোঁটের মাঝে মাত্র কয়েক মিলিমিটারের পার্থক্য ছিল।
আমরা একে অন্যের দিকে কয়েক মুহুর্ত একভাবে তাকিয়ে রইলাম। আমাদের কাছে মনে হল যে সময় থমকে গেছে। আমি মিমির ঠোঁটের কাপন পরিস্কার দেখতে পাচ্ছিলাম। আমারও যে ওর ঠোঁটে চুমু খেতে ইচ্ছে হয় নি সেটা আমি বলব না। তীব্র ইচ্ছে হয়েছিল তবে নিজেকে আমি সামলে নিয়েছি। আমার মনে ঠিক যে ভাবনাটা এসেছিল মিমির মনেও ঠিক একই ভাবনা এসেছিল বলেই আমার মনে হল আর সে নিজেকে সামলাতে পারে নি কিংবা ইচ্ছে করেই সামলায় নি। ফলে যা হওয়ার তাই হল।
মিমি ঠিক কত সময় ধরে আমার ঠোঁটে নিজের ঠোট চেপে ধরেছিল সেটা আমার মনে নেই। আমাদের দুজনের কাছেই মনে হয়েছিল যে সময় আমাদের জন্য থমকে গেছে।
তারপর এক সময় দুজনের হুস ফিরল। দেখলাম মিমি আবারও এক দৌড়ে অফিসের দিকে চলে গেল। ওর সম্ভবত কোন কাজে নিচে যাওয়ার দরকার ছিল। সেটা সে ভুলে গেছে। আমি কিছু সময় বোকার মত সিড়িতেই দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর এক সময় ধীরে ধীরে অফিসের দিকে পা বাড়ালাম। আমি তখনও ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারছিলাম না।
অফিস থাকতে থাকতেই আমি টের পেলাম যে আমার জ্বর আসছে। নিজের শারীরিক অবস্থা দেখে নিজেই অবাক হলাম। অফিস থেকে একটু আগে আগেই বাসায় এলাম। শরীরটা আমার সত্যিই ভাল লাগছিল না। সন্ধ্যার পরপরই জ্বর এসে হাজির।
আমি ভেবেছিলাম সকালে বুঝি জ্বর কমে যাবে তবে সেরকম কোন লক্ষ্যণ দেখলাম না। জ্বর কমলো না। এমন কি পরেরদিনও না। অফিসে রফিক ভাইকে ফোন করে জ্বরের কথা বলে ছুটি নিয়ে নিলাম। আমি সারাদিন বাসা শুয়ে রইলাম নিজের ঘরে। এর মাঝে আব্বা গিয়ে একবার ডাক্তার ডেকে নিয়ে এসেছে। মা কয়েকবার আমার মাথায় পানি ঢেলেছে। তবে জ্বর কমার কোন লক্ষ্যণ নেই। কেন জ্বর এল সেটাও কেউ বুঝতে পারছিল না। কিভাবে কমবে সেটাও না।
তবে আমার অন্য আরও কিছু অপেক্ষা করছিল। আজকে অফিসের পরে বিকেলে আমার অফিস থেকে কয়েকজন কলিগ এসে হাজির বাসায়। আমি খুব একটা অসুখ বিসুখে পড়ি না। তাই আমার শশীর খারাপের ব্যাপারটা অফিসে নতুন। এছাড়া আমার বাসা অফিস থেকে খুব একটা দুরে না। হেটে যেতে মিনিট দশেক লাগে। তাই এখানে আশাটা সবার জন্য সহজ। যে কয়জন কলিগ এসে হাজির হল তাদের ভেতরে মিমি ছিল। আমার দিকে খানিকটা দুষ্টমি ভরা চোখে সে তাকিয়ে রইল।
সবাই আমার ঘরে এসে আমার সাথে আড্ডা দিতে লাগল। এই পুরো সময়ে মিমি আমার সাথে একবারও কথা বলে নি। কেবল দূর থেকেই আমার দিকে তাকিয়ে ছিল আর আমার ঘরের চারিদিকে তাকিয়ে দেখছিল। মা সবার জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করল। যাওয়ার সময়ে রফিক ভাই বললেন আরও একদিন ছুটি যেন আমি বাড়িয়ে নিই। আমার জ্বর নাকি এখনও কমে নি, কমার লক্ষ্যণও নেই।
ঘন্টা দুয়েক থাকার পরে ওরা সবাই বিদায় নিয়ে চলে গেল। আস্তে আস্তে সবাই আমার ঘরের দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল। বের হয়ে যাওয়ার সময়ে মিমি আরেকবার আমার দিকে তাকালো। তার চোখে তখনই সে দুষ্টুমির দৃষ্টি। আমি এই হাসির কারণ বুঝতে পারলাম ঠিক একটু পরেই। ত্রিশ সেকেন্ড পরে আবারও আমাদের বাড়ির কলিংবেল বেজে উঠল। দরজা খোলার শব্দ শুনলাম আর তারপর শুনতে পেলাম মিমির আওয়াজ। সে আমার আম্মুকে বলছে, আন্টি আমার ব্যাগটা ফেলে গেছি।
আমি তখনই আমার টেবিলের দিকে চোখ দিলাম। সেখানে আসলেই একটা শপিং ব্যাগ রয়েছে। আমার তখনই মনে হল যে মিমি ইচ্ছে করেই এই ব্যাগটা এখানে ফেলে গেছে। আমার ভাবনাটা সত্য করে দিতেই মিমিকে আমার দরজায় দেখতে পেলাম। সে দরজার কাছে এসে প্রথমে আমার দিকে তাকাল। তার চোখে আমি ব্যাগ খোজার কোন লক্ষ্যণ দেখতে পেলাম না। সে ব্যাগের দিকে গেলও না। সে খুব দ্রুত এল আমার দিকে। তারপর আমাকে তীব্র ভাবে বিস্মিত করে দিয়ে আমাকে চেপে ধরে আরেকবার আমার ঠোটে চুমু খেল। আজকে অবশ্য বেশি সময় ধরে থাকল না। চুমুটা ছিল একদম ছোট। অবশ্য একটা ভয়ও ছিল যে আমার আম্মু হয়তো পেছন পেছন চলে আসতে পারে।
আমাকে চুমু খেয়েই সে সেই ব্যাগটার কাছে গেল। সেটা হাতে নিয়ে আবার আমার কাছে এল। এবার অবশ্য আমার কপালে ছোট করে একটা চুমু খেল সে। তারপর বলল, জলদি অফিসে আসো।
তারপর আবার দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল। আমি স্থির হয়ে বসে রইলাম বিছানাতে হেলান দিয়ে। আমার বুঝতে মোটেই কষ্ট হজল না যে মিমি ইচ্ছে করেই তার এই ব্যাগ এখানে রেখে গেছে যাতে করে সে চলে আওয়ার পরে আবারও ফিরে আসতে আসতে পারে একা। এবং আমাকে সে চুমু খেতে পারে !
তবে সব থেকে অবাক করার ব্যাপার হচ্ছে, মিমির এক চুমুতে যেমন আমার জ্বর এসেছিল, ঠিক একই ভাবে ওর আরেক চুমুতে আমার জ্বর ছেড়ে গেল। রাত দশটার দিকেই অনুভব করলাম জ্বর একেবারে চলে গেছে।

পরিশিষ্টঃ
লাঞ্চ আওয়ার প্রায় শেষ হয়েছে। তবে এখনও সবাই অফিসে আসতে শুরু করে নি। আমি তিন তলার সিড়ির কাছে আসতেই মিমিকে দেখতে পেলাম। সে অফিস থেকে নামছে। আর আমি উঠছি। আজকে অবশ্য মিমি কোন তাড়াহুড়া করছে না। সে ধীর পায়ে নামছে। আমি উঠছি তার দিকে। আমরা সিড়ির মাঝে জায়গাতে এসে থামলাম। একে অন্যের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলাম। দুজনের কারো মাঝেই কোন তাড়াহুড়া নেই। ধীরে স্থির ভাবে তাকিয়ে রইলাম কিছু সময়।
অফিস আসার সময় মিমি ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়েই আসে তবে এখন সেটা সে মুছে ফেলেছে। লিপস্টিক দেওয়া থাকলে চুমু খাওয়ার পরে আমার ঠোঁটে লেগে যেতে পারে। তাই এখন সেটা সে মুছে ফেলেছে।
মিমি ধীর পায়ে এগিয়ে এসে আমার ঠোঁটে বেশ গাঢ় করে চুমু খেল। আমিও তাতে তাল মেলালাম। তারপর কিছুই হয় নি এমন একটা ভাব করে আমি অফিসের দিকে পা বাড়ালাম আর মিমি নিচে নেমে গেল।
সেদিনের পর থেকে ঠিক এভাবেই চলছে। অফিসে আমরা একে অন্যের সাথে দরকার না হলে কোন কথা বলি না। তবে অফিসের এই লাঞ্চ আওয়ারে এই একবার চুমু প্রতিদিনই চলে। জানি না কতদিন এটা লুকিয়ে রাখতে পারব তবে যতদিন পারি এভাবেই চলবে।

ফেসবুকের অর্গানিক রিচ কমে যাওয়ার কারনে অনেক পোস্ট সবার হোম পেইজে যাচ্ছে না। সরাসরি গল্পের লিংক পেতে আমার হোয়াটসএপ বা টেলিগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। এছাড়া যাদের এসব নেই তারা ফেসবুক ব্রডকাস্ট চ্যানেলেও জয়েন হতে পারেন।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 29

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →