অতৃপ্ত আলো

4.3
(22)

মোহনগঞ্জ আসার পরে রকিবের কাজের চাপ অনেকটাই কমে গেছে। ছোটখাটো চুরির ঘটনা ছাড়া তার রেঞ্জে খুব বড় কিছু হয় নি। গত ছয় মাসে সে বেশ শান্তিতেই আছে। আগে যখন জেলা সদরে ছিল তখন কাজের কোন শেষ ছিল না। একটা শেষ হতে না হতেই আরেকটা এসে হাজির হত। থানা ছেড়ে বাসায় যাওয়ার কোন সময় ছিল না। আর এখানে আসার পরে একেবারে দশ পাঁচটার অফিস শুরু হয়েছে। সময় করে অফিসে এসে হাজির আর পাঁচটার আগেই থানা থেকে বের হয়ে যায়। অবশ্য তার বাসা থানা থেকে খুব বেশি দূরে নয়। দরকার পড়লে সে হাজির হতে পারে যখন ইচ্ছে।
আজকে দুপুরের খাবার খেয়ে রকিবের মনে হল আজকে একবার মনে আর থানাতে গিয়ে লাভ নেই। বিছানাতে শুয়ে ছিল। মায়ের হাতের মুরগির ঝাল মাংসটা বেশ ভাল হয়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি ভাত খেয়ে ফেলেছে আজকে। তাই শরীরটা বিছানাতে দেওয়া মাত্রই ঘুম চলে এসেছিল। সেই ঘুম ভাঙ্গল বিকেলে, ফোনের রিংটোনে। একটু বিরক্ত হয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে তার থানার সেকেন্ড অফিসার ফোন দিয়েছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল পাঁচটা তখনও বাজে নি।
-হ্যা বলুন জামাল সাহেব।
-স্যার আজকে কি আসবেন এদিকে?
-দরকার কোনো?
-না, তেমন কোন কিছু না। একজন এসেছিল আপনার সাথে একটু দেখা করতে। আপনি বাসায় আছেন শুনে সম্ভবত আপনার বাসার দিকেই গেছে।
রকিব একটু অবাক হল। বাসায় কে আসবে এই সময়ে? থানাতে না পেয়ে একেবারে বাসায় এসে হাজির হবে?
-কে?
-স্যার সরকার কলেজের ম্যাডাম।
রকিব আবারও একটু অবাক হল। তবে একটা ধারণা করতে পারল যে কে হতে পারে।
-আচ্ছা, আমি দেখছি।
ফোনটা রাখার সাথে সাথেই কলিংবের বাজার শব্দ শুনতে পেল। একটু পরে দরজা খোলার আওয়াজ আর কাজের বুয়ার কন্ঠও শুনতে পেল সে। বুঝতে পারল সে যার আসার কথা ছিল সে চলে এসেছে।
রকিব ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বসার ঘরে আসতে আসতে দেখলো তার মা অতিথির সাথে বসে কথা বলছে। রকিব নীলিমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল। তারপর বলল, আরে আপনি? কী খবর? থানাতে গিয়েছিলেন শুনলাম।
প্রতিউত্তরে নীলিমা একটু হাসল। তারপর বলল, একটু কথা ছিল। আসলে থানাতে না পেয়ে ভালই হয়েছে আমার জন্য। কথাগুলো এখানে বললে ভাল হবে বেশি।
রকিবের মা একটু চুপ করে থেকে ওদের কথা বলার সুযোগ দিয়ে উঠে গেলেন। রকিব বসলো বাসের সোফাতে। নীলিমার দিকে তাকাল জিজ্ঞাসু চোখে। রকিবের অভিজ্ঞ চোখ বলছে নীলিমা এমন কিছু বলতে এসেছে যেটার ব্যাপারে সে নিজেই নিশ্চিত নয়। রকিব বলল, আপনি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারেন।
নীলিমা বলল, আপনি কি অলৌকিকে বিশ্বাস করেন?
-আসলে অলৌকিক বলতে আপনি ঠিক বোঝাতে চাইছেন? আমি যেহেতু মুসলিম তাই ধর্মে বিশ্বাস করি, সেই হিসাবেও জ্বীনেও আমার বিশ্বাস আছে তবে আমি এটা মোটেই বিশ্বাস করি না যে জ্বীন বা ভুত যাই বলেন না কেন এরা মানুষের উপরে এসে ভর করে। ওদের তো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই।
নীলিমা এবার একটু স্থির দৃষ্টিতে রকিবের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, আপনি কি বিশ্বাস করেন যে মানুষের ভেতরে কেউ অশরীরি কারো অস্তিত্ব টের পায়?
রকিব ঠিক বুঝতে পারলাম না যে নীলিমা ঠিক কী বোঝাতে চাইছে। আসলেই কি মানুষেরা অশরীরির সাথে দেখা করতে পারে? এ রকম কত গল্পই না আমাদের চারিপাশে প্রচলিত আছে কিন্তু সেই সব গল্পের সত্যতা যে কতটুকু সেটা নিয়ে রকিবের বেশ সন্দেহ আছে। সে এবার মনে মনে ঠিক করল যে বাড়তি কোনো প্রশ্ন না করে নীলিমাকেই সব কিছু বলতে দেবে। এই মেয়েটাকে সে কিছুদিন থেকেই চেনে।
এখানে পোস্টিং হয়ে আসার পরপরই সরকারি কলেজের একটা ঝামেলা হয়েছিল। সরকারি দলের দুই পক্ষে একটা মারামারি লেগেছিল। সেটার সমাধান করতে গিয়ে রকিবকে যেতে হয়েছিল কলেজে। সেখানেই সে প্রথম নীলিমার সাথে তার পরিচয় হয়। কলেজের জীব বিজ্ঞানের লেকচারার। সম্প্রতি বিসিএস দিয়ে ঢুকেছে। প্রথম পোস্টিং এই মোহনগঞ্জে। মেয়েটা বেশ চিন্তিত ছিল ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে। সম্ভবত এই রকম মারামারি মেয়েটা এই প্রথম দেখছে। রকিব তাকে অভয় দিয়ে বলেছিল যে চিন্তা না করতে। এসব ঝামেলা সমাধান হয়ে যাবে। বিকেলের ভেতরে সব সমাধানও হয়েছিল এবং সেখানে রকিবই মূখ্য ভূমিকা পালন করেছিল। পরে নীলিমা নিজে এসে রকিবকে ধন্যবাদ দিয়েছিল। তারপর থেকেই টুকটাক কথা হয়েছে তাদের ভেতরে।
নীলিমা এবার তার কথা বলতে শুরু করল। সে বলল, আমি জানি না আপনি আমার কথা ঠিক কতটুকু বিশ্বাস করবেন। আমি আমার খুব কাছের আর বিশ্বাসী মানুষ ছাড়া এই কথাগুলো কখনই কারো কাছে বলি নি। তারা এসব শুনলে হাসাহাসি করে।
রকিব কাছের এবং বিশ্বাসী শব্দ দুটো শুনে একটু প্রসন্নবোধ করল। তার মানে নীলিমা তাকে কাছের এবং বিশ্বাসী মানুষের দলে ফেলছে বা ফেলতে চাইছে।
-আমি ছোটবেলা থেকেই অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পাই। অস্বাভাবিক বলতে ভুত প্রেত ঠিক না, তবে মৃত আত্মা কিংবা এজাতীয় কিছু।
-আরেকটু খুলে বলুন।
-আরও ভাল করে বললে যে মানুষগুলো অস্বাভাবিক ভাবে মারা যায়, যাদের আত্মা শান্তি পায় না সেই মানুষের আত্মাগুলো আমি দেখতে পাই।
-কোথায় দেখতে পান?
-তারা যেখানে মারা যায় কিংবা তাদের দেহটা যেখানে মাটি চাপা দেওয়া হয়। কিন্তু একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে আমি তাদেরকে কখনই কবরস্থানে দেখতে পাই না। এই কারণটাও অবশ্য আমি বুঝতে পেরেছি। কবর স্থানে যাদের কবর দেওয়া হয় তাদের সবাইকে প্রোপার ওয়েতে কবস্থ করা হয়। গোসল, যানাজা ইত্যাদি। কিন্তু যাদের কপালে এসব জোটে না তাদেরকেই কেবল দেখতে পাই। আমি জানি ব্যাপারটা আপনার কাছে হাস্যকর মনে হচ্ছে তবে আমি সত্যিই এদের দেখতে পাই। ঠিক মানুষ নয় বরং একটা আলেয়ার আলোর মত দেখা যায়।
রকিব এবার বলল, এটা কি ছোট বেলা থেকেই? নাকি হঠাৎ করেই?
-ছোট থেকেই। আগে ঠিক বুঝতাম না। ছোট বেলায় মনে হত বুঝি সবাই দেখে কিন্তু একটু বড় হয়ে বুঝেছি যে এটা কেবল আমিই দেখি। কেন দেখি সেটা বুঝতে আরও একটু বড় হয়ে হয়েছে। প্রথম প্রথম ভয় পেলেও একটা সময় আমি বুঝতে পারি যে এরা আসলে আমার ক্ষতি কিংবা ভয় দেখানোর চেষ্টা করে না। আসলে এরা একই জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
নীলিমা এই কথাগুলো বলে এবার একটু থামল। রকিবের মনে একয়া প্রশ্ন উকি দিচ্ছিল। প্রশ্নটা সে করবে কিনা সেটা ভাবছে। নীলিমা তাকে হঠাৎ এই কথাটা কেন জানাল। যে তো আর হুজুর বা ওঝা না যে তাকে এই কথা বলতে কোন সমাধান চাইতে পারে। আর নীলিমা তো বলেছেই যে এরা ওর কোন সমস্যা করে না। এক জায়গায় কেবল দাঁড়িয়ে থাকে।
নীলিমা বলল, আপনি হয়তো ভাবছেন যে আমি এই কথা আপনাকে কেন জানালাম, তাই না? যেহেতু আমার কোন সমস্যা হচ্ছে না।
-হ্যা, এই প্রশ্নটা আমার মনে এসেছে সত্যি।
-এটা বলতেই এসেছি। দেখুন এরপর আমি যা বলব সেটা নিয়ে আপনি কী করবেন বা না করবেন সেটা একান্তই আপনার ব্যাপার। আমার কোন কিছুই বলার থাকবে না।
একটু দম নিল নীলিমা। তারপর বলল, আমি এখানকার কলেজে জয়েন করার পরে কিছু টিউশন শুরু করি। সবাই আমার বাসায় এসে পড়ত। তবে একজনের বাসায় গিয়ে আমাকে পড়াতে হয়। আসলে সেই মানুষটার অনুরোধ আমি ফেলতে পারি নি। এখানকার এমপি জায়েদুল হামিদকে তো ভাল ভাবেই চেনেন। তার ছোট মেয়ে পড়ে সরকারি কলেজে।
রকিব হামিদ এমপিকে খুব ভাল করেই চেনে। তাকে না চেনার কোন কারণ নেই। নীলিমা বলল, আমি সপ্তাহে দুইদিন লিলি মানে এমপি সাহেবের বাসায় যাই পড়াতে। কলেজ শেষ করে সরাসরি ওদের বাসায় যাই। বিকেলে ফিরে আসি বাসায়। কিন্তু সপ্তাহ খানেক আগে একদিন, ওদের বাসা থেকে বের হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। আমাকে সেদিন লিলি ওদের পেছনের বাগানে নিয়ে যায়। ওখানে বসে চা নাস্তা খেয়ে তারপর যেতে বলে। ওদের বাড়ির পেছনটা বেশ চমৎকার । পেছনটা দুইটা অংশে ভাগ করা। ঠিক পেছনের চমৎকার একটা বাগান। একটা বড় ছাউনি দেওয়া জায়গা আছে। সেখানে চেয়ার টেবিলে পাতা। এই বাগানের পরে আরও একটা বাগান শুরু হয়েছে। এখানে গাছপালা অনেকটা জঙ্গলের মত। আমি সেখানে বসে চা খেলাম আর …
নীলিমা চুপ করল। রকিব এবার একটু নড়েচড়ে বসল। সে ঠিক ঠিক বুঝতে পেরেছে যে নীলিমা ঠিক কী বলতে তার কাছে এসেছে এবং থানাতে না এসে বাড়িতে কেন এসেছে। সে বলল, ওখানে আপনি সেই আলো দেখতে পেলেন?
নীলিমা লম্বা একটা দম নিয়ে বলল, একটা নয়। কম করে হলেও ছয়টা। ঐ জংলা বাগানের বিভিন্ন জায়গাতে কম করে ছয়টা আলো আমার চোখে পড়েছে।
-ছয়টা?
-হ্যা, ছয়টা।
একটু থেমে নীলিমা আবার বলল, দেখুন আমি আপনাকে বলছি না যে সব বিশ্বাস করতে। এমন কি আপনি আমাকে সম্পূর্ণ ভাবে অবিশ্বাস করতে পারেন। আমি কিছু মনে করব না। তবে এমপি হামিদের ঐ পেছনের জংলায় কম করে হলেও ছয়টা ডেড বডি পুতে রাখা আছে। এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। আমি আসলে নিজের কাছে শান্তি পাচ্ছিলাম না। বারবার মনে হছিল যে এটা কাউকে জানানো দরকার।
রকিব এক ভাবে নীলিমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটা যে মিথ্যা বলছে না সেই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। এতোদিনের অভিজ্ঞতা থেকে রকিব এই ব্যাপারটা সে ভাল করেই জানে। অন্তত মেয়েটা নিজে বিশ্বাস করে যে সে সত্যি বলছে। আর নীলিমার কথা বিশ্বাস করার পেছনে আরেকটা কারণও তার আছে। তবে এখনই নীলিমাকে সে কিছু বলল না। সে বলল, আমি এই ব্যাপারটা নিয়ে একটু চিন্তা করি। আপনাকে যদি পরে ডাকি আপনি সাহায্য করবেন তো?
-সাহায্য বলতে? আদাতলে সাক্ষী টাইপের কিছু?
রকিব একটু হেসে বলল, আরে না, মাথা খারাপ নাকি? এই কথা জাজের সামনে বললে আমার চাকরি চলে যাবে। আমি সাহায্যের কথা বলছি যে আপনি আমাকে ডেডবডিগুলো খুজে বের করতে সাহায্য করতে পারবেন? ওদের অবস্থান?
-হ্যা এটা আমি পারবো। আশা করি।
আরও কিছু গল্পটল্প করে ঐদিন নীলিমা চলে গেল। রকিব একটু চিন্তায় পড়ল। নীলিমা যা বলছে তা বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই। এসব প্রমাণের কোন উপায় নেই। তার মত পুলিশ অফিসারের এসব বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই। রকিব বিশ্বাস করতো না যদি না তার মনে সেই ঘটনাটা উকি দিত। নীলিমার কথা বিশ্বাস করলে সেই ঘটনার একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায় চমৎকার ভাবে।
তখন সবে মাত্র রকিব এখানে পোস্টিং নিয়ে এসেছে। একদিন এক মাঝ বয়সী ভদ্রলোক তার থানায় এসে হাজির হলেন। লোকটা জানালেন তিনি ঢাকায় থাকেন। তিনি রকিবকে জানালেন যে তার ছেলে সপ্তাহ খানেক ধরে মিসিং। রকিব যখন জানতে চাইল যে ঢাকার বাসিন্দা হয়ে সে এখানে ছেলের খোজ কেন করছে তখন লোকটা বললেন যে তার ছেলে এখানে তার বন্ধুর সাথে দেখা করতে এসেছিল। তারপর থেকে তার আর কোন খোজ নেই। সেই বন্ধুর বাসায় সে গিয়েছিল তবে সেখান থেকে কোন সাহায্য করে নি। সেই বন্ধুটি আর কেউ নয়, হামিদ এমপির বড় মেয়ে মিলি। সে ঢাকায় তার ছেলের সাথে পড়াশোনা করে।
রকিব একটু নড়েচড়ে বসল। জিডি লিখে নিল। পরে একটু খোজ খবর করে সে সত্যিই জানতে পারল যে সজিব নামের ছেলেটা মোহনগঞ্জে এসেছিল। তবে তারপরে আর কোন খোজ পাওয়া যায় নি। রকিব জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হামিদ এমপির বাসায় গিয়ে হাজির হল কিন্তু সেখান থেকে পরিস্কার ভাবে জানিয়ে দেওয়া হল যে এখানে কেউ আসে নি। সজিব নামের কাউকে সে তার পরিবারের কেউ চেনেও না।
রকিব আরও কিছু করতে পারে নি। কারণ হামিদ এমপির বাসা থেকে থানায় আসার পথেই তার কাছে এসপি সাহেবের ফোন এসে হাজির। তাকে খানিকটা কড়া কন্ঠেই জানানো হল যে কোন প্রকার সাক্ষি প্রমাণ ছাড়া কোণ ভাবেই এমপির বাসায় যাওয়া যাবে না আর। তারপর থেকেই কেসটা ঐ ভাবেই পড়েছিল। রকিব আর কিছুই করতে পারে নি। তবে সজিব একটু খোজ খবর নিয়েছে। মিলি আর সজিব একই ডিপার্টমেন্টে পড়ে। তাদের ভেতরে একটা প্রণয়ের সম্পর্কে ছিল। কেসটা তার কাছে পরিস্কার ছিল কিন্তু কিছুই করার ছিল। কোণ প্রমাণ নেই। তবে আজকে নীলিমার কাছ থেকে এই তথ্য পেয়ে রকিবের মাথার ভেতরে একটা সম্ভবনা দেখা দিল। লাশটা যদি সত্যি পাওয়া যায়!
ব্যাপারটা একেবারে পানির মত পরিস্কার মনে হল রকিবের কাছে। সজিব ছেলেটার সাথে এমপির মেয়ের প্রেম ছিল। এমপি কোন জানতে পেরে মেয়েকে বাসায় নিয়ে আসে। সজিব যখন এমপির বাসায় গিয়ে হাজির হয় তখন সজিবকে খুন করে পেছনের জংলায় মাটি চাপা দেওয়া হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে বাকি ৫ জন কে?
রকিব যদি এমপির বাগান সার্চ করতে চায় তবে সেটার অনুমুতি পাওয়া যাবে না কোন ভাবেই। এটা যে খুব ভাল করেই জানে। এমন কোন কিছু খুজে বের করতে যাতে করে মাটি খোড়ার অনুমুতি দিতে জাজ বাধ্য হয়।
রকিব এবার আরও একটু খোজ খবর নিতে শুরু করল। বিশেষ করে পুরানো মিসিং কেস। সবগুলো হয়েছে তার এখানে আসার আগে। গত ৫ বছরে মোট ১৭টা মিসিং কেসে ঘটনা ঘটেছিল। তার ভেতরে সাতটার কোন খোজ খবর পাওয়া যায় নি। এর ভেতরে দুইটা কেস দেখে রকিবের একটু ভুরু কুচকে উঠল। একজন জেলার সাংবাদিক। সত্য নিষ্ঠ এই সাংবাদিক গুম হওয়ার সময় বেশ লেখালেখি হয়েছি। অনেক খোজ খবর নেওয়া হয়েছিল। সন্দেহের তীর সব ছিল হামির এমপির দিকে কিন্তু লাভ হয় নি। পরবর্তী জন ছিল হামিদ এমপির দলেরই মানুষ। খুব গুঞ্জন ছিল যে পরবর্তি নমিনেশন হামিদকে না দিয়ে সেই লোককে দেওয়া হবে। কিন্তু তারপর সেই লোক গায়েব হয়ে যায়।
কিন্তু রকিবের হাতে কিছুই আসছিল না। রকিব একটা ব্যাপার ঠিকই উপলব্ধি করতে পারছিল যে তার ডিপার্টমেন্টের কিছু মানুষ ঠিক মত সাহায্য করছে না। জামালের কাছে ব্যাপারটা জানতে চাইলে জামাল সাহেব বললেন যে পুরো হামিয় এমপির বিরুদ্ধে কিছু করার সাহস মোহনগঞ্জের কারো নেই। তার এই খোজ খবরের ব্যাপারটা এমপির কানে এরই ভেতরে চলে গেছে। সে
রকিবের যখন মনে হল যে সে আর কিছুই করতে পারবে না ঠিক তখনই তার কাছে একটা ইমেলে এসে হাজির হল। কে পাঠিয়েছে সেটা সে জানে না তবে সেখানে যে ভিডিওটা ছিল সেটা দেখে রকিব উত্তেজনায় কাঁপতে শুরু করল। এটা একটা সিসিটিভি ফুটেজ। ফুটেজটা হামিদ এমপির বাসার সামনের গেটের। ফুটেজে সেখানে দেখা গেল যে একজন লোককে কয়েকজন মিলে জোর করে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। লোকটার চেহারা একেবারে পরিস্কার ভাবেই ফুটে উঠেছিল। এবং এই লোকটা আর কেউ নয় জসিম মোল্লা, হামিদ এমপির রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তবে একই দলের। এই লোকটাই গায়েব হয়েছিল।
এইবার রকিব আর ভুল করল না। সে খুব ভাল করেই জানত যে যদি এই ফুটেজ নিয়ে সে এসপির কাছে যায় তবে এসপি এটাকে চেপে যেতে বলবে। এমন কিছু করতে হবে যাতে এসপি বাধ্য হয় এটা করতে। ইউটিউবে বেশ কিছু ভিডিও ক্রিয়েটর আছে যারা সরকারের সমালোচনা করে। এদেরকে ভিডিওটা পাঠালে এরা লুফে নেবে। রকিব ঠিক তাই করল। ভিভিও ভাইরাল হতে সময় লাগল না। আর এরপর আর খুব একটা বেগ পেতে হল না। যতই শক্তিশালী এমপি হোক না কেন এই রকম ভিডিও পরে প্রশাসন কোন না কোন পদক্ষেপ নিতেই হয়। এই সুযোগটাই রকিব নিল। একবার যদি সেখানে লাশ পাওয়া যায় তবে আর কোন শক্তিতেই কাজ হবে না।
সন্ধ্যার একটু আগে নীলিমাকে নিয়ে রকিব হাজির হল হামিদ এমপির বাসায়। মনের ভেতরে যে একটু সংশয় তার ছিল না সেটা রকিব অস্বীকার করবে না তবে কেন জানি মনে হচ্ছিল যে নীলিমা ঠিক ঠিক জায়গাগুলো দেখিয়ে দিবে, নয়তো পুরো জমিটাই খুড়তে হবে।
তবে তেমন কিছু হল না। নীলিমার দেখানো ছয়টা জায়গাতে ছয়টা লাশ পাওয়া গেল। এমপি হামিদকে ধরতে এরপর আর খুব বেশি বেগ পেতে হয় নি। কেস এখন কোর্টে।

পরিশিষ্ট
নীলিমা কলেজ থেকে বের হতেই দেখল রকিব গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ওর দিকে তাকিয়ে হাসল। এই কদিনে রকিবের সাথে নীলিমার সম্পর্কটা একটু উন্নতি হয়েছে। বিশেষ করে মাস চারেক আগের সেই ছয়টা লাশ খুজে দেওয়া পর থেকে রকিব নিজ থেকেই নীলিমার সাথে যোগাযোগ করছে। নীলিমা ভালু বুঝতে পারছে যে সেই ঘটনা ওদেরকে একটু কাছে নিয়ে এসেছে। নীলিমার এতে অবশ্য কোন আপত্তি নেই।

ফেসবুকের অর্গানিক রিচ কমে যাওয়ার কারনে অনেক পোস্ট সবার হোম পেইজে যাচ্ছে না। সরাসরি গল্পের লিংক পেতে আমার হোয়াটসএপ বা টেলিগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। এছাড়া যাদের এসব নেই তারা ফেসবুক ব্রডকাস্ট চ্যানেলেও জয়েন হতে পারেন।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.3 / 5. Vote count: 22

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →