এই সব মিথ্যে গল্প (৩.৯)

oputanvir
4.7
(81)

-কিন্তু তুমি তো বল নি যে তোমার দাদী …

লামিয়া আমার দিকে দিকে তীব্র চোখে তাকিয়ে রইলো । আমি হয়তো ভেবেছিলাম যে ও লাইনটা বলেই দিবে । তবে শেষ পর্যন্ত সে বলল না । আমি বললাম, থামলে কেন? বলে ফেলো । কারণ কথাটা তো মিথ্যে না ।

লামিয়া বলল, কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে বলল, দেখো আমার বাবার একটা সম্মান আছে ।

আর কোন কথা বললাম না । আমার আসলে আগেই বোঝা উচিৎ ছিল যে এমন কিছু আমার সামনে এই ব্যাপারটা কোন না কোন সময়ে আসবেই । মানসিক ভাবে এমন টা আমি যদিও একটা প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছিলাম । তবুও কেন জানি একটু কষ্টই হল । আমি আর কোন কথা না বলে উঠে চলে এলাম । বুঝতে পারছিলাম যে একই অফিসে আমার হয়তো আর চাকরি করা হবে । খুব দ্রুত চাকরি বদলাতে হবে ।

লামিয়ার সাথে আমার পরিচয় এই অফিসে এসেই । আমি আর লামিয়া একই সাথে এই অফিসে জয়েন করেছিলাম । আমাদের ডিপার্টমেন্ট একই ছিল এবং পাশাপাশি আমাদের ডেস্ক ছিল । তাই ভাব হতে সময় লাগে নি । যদিও সেটা প্রেম ছিল না । আমি কখনই নিজের গণ্ডি পার হই নি । তব্বে লামিয়া ঠিক বুঝত যে ওকে আমি পছন্দ করি । ওর আচরণও আমার কাছে মনে হয়েছিল যে সেও আমাকে পছন্দ করে । বছর দুয়েক পরে যখন মনে হল এবার বিয়ের কথাটা বলা যায় ওকে। প্রথমে লামিয়া রাজি হয়েও ছিল কিন্তু যখন ব্যাপারটা ওর বাবার কাছে গেল তখন ওর বাবা আমার ব্যাপারে খোজ খবর নিল । এবং তখনই খবরটা বের হয়ে এল ।

যুদ্ধের সময়ে আমার দাদা মারা যান । যুদ্ধের পরে আমার বাবা আর চাচাকে নিয়ে আমার দাদী বিপদে পড়েন । কারণ আয়ের কোন উৎস নেই, জমি জমাও নেই খুব একটা । গ্রামে কেবল বাড়ি টুকু রেখে গিয়েছিল দাদা । তারপর আমার দাদী মানুষের বাসায় কাজ শুরু করে । আমাদের এলাকার মুন্সি বাড়িতে কাজ শুরু করে । বাবা পড়াশোনায় ভাল ছিল । একটু বড় হলে সেই গ্রামের ছেলে মেয়েদের পড়ানো শুরু করে । এরপরে বিএপ পাশ করে হাই স্কুলের স্যার হয়ে যান । আমি ঢাকাতে পড়তে আসি । পড়াশোনা শেষ করে এই ব্যাংকে ঢুকি ।

পরের কয়েকটা দিন খুব মন খারাপ হয়েই থাকে । যদিও নিজেকে সামলে নিই । এছাড়া আমার আসলে আর কোন উপায় নেই । মেনে নিতেই হবে । তবে যখন লামিয়াকে আমাদের অফিসের অন্য একজনের সাথে ভাব জমাতে দেখি তখন নিজের কাছেই খুব খারাপ লাগে । মনে মনে ঠিক করে নিই যে নতুন একটা চাকরি এবার না খুজলেই না ।

অফিসে বসে এমন কিছুই ভাবছি এমন সময় আলভি ভাইয়ের ফোন । আলভি ভাই আমার থেকে কয়েক বছরের বড় । মুন্সি বাড়ির ছেলে । আমাকে বেশ আদর করেন । ঢাকাতে এসে আমি প্রথমে উনার কাছেই ছিলাম । আমার আব্বা উনার স্যার ছিলেন এক সময়ে । এছাড়া আমার যে কোণ বিপদে সব সময়ই আমাকে সাহায্য করেন । এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি ডাইরেক্টর ।

-জ্বী ভাইয়া । আসসালামু আলাইকুম । কেমন আছেন ভাইয়া?

-ভাল । শোন এই শুক্রবার কোথাও যাবি নাকি?

সামনের রবিবার সরকারি ছুটি । সেই হিসাবে তিন দিনের একটা ছুটি । অনেকেই ঢাকার বাইরে যাচ্ছে । আমি অবশ্য ঢাকাতেই থাকি । আমার এই রকম ছুটির দিন গুলো আমার নিজের বাসায় শুয়ে বসে কাটাতেই ভাল লাগে। আমি বললাম, না ভাইয়া কোথায় আর যাব!

-তাহলে এক কাজ কর মিতু গ্রামে যাবে । ওর সাথে একটু যা । আমি টিকেট কেটে দিয়েছিল আজকে রাত এগারোটায় ট্রেন । সমস্যা হবে?

-আরে না না । কোন সমস্যা নেই । আমি চলে আসবো ।

-একা একা যাবে রাতে বেলা তাই চিন্তা হচ্ছিল । তুই সাথে গেলে নিশ্চিন্ত হই !

-আচ্ছ ভাইয়া কোন চিন্তা নেই। আমিও যাই ঘুরে আসি একটু ।

আসলে আলফি ভাইকে মানা করা আমার উপায় নেই । সে এবং তার পরিবার আমাদের জন্য যা করেছে আমরা সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকবো । যে কোন ভাবে পারি তাদের একটু ঋণ যদি শোধ করা যায় তাতেই আমি খুশি । আর এই ঢাকাতে এখন যেন একটু দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল । একটু বাসা থেকে ঘুরে আসলে ভাল লাগবে ।

মিতুর সাথে আমার অনেক দিন দেখা হয় না ।

মিতু আলভি ভাইয়ের ছোট বোন । আমার ব্যাচের । আমরা একই সাথে স্কুল কলেজে পরেছি । বিশ্ব বিদ্যালয়ে এসে মিতু খুলনাতে পড়াশোনা করেছে । পড়াশোনা শেষ করে অবশ্য মিতু ঢাকাতে থাকে তবে আমার সাথে দেখা হয় না বললেই চলে ।

আমি অফিস থেকে আরও দুইদিনের ছুটি নিলাম । কয়েকদিন বাসা থেকে বেড়িয়ে আসি ।

সময় মত স্টেশনে হাজির হলাম । দেখলাম আলভি ভাইয়া নিজে এসেছেন মিতুকে পৌছে দিতে । আমি এগিয়ে গেলাম । মিতু তখন আমাকে যেন দেখেও দেখছে না । অবশ্য সব সময় একটু মুডি । কম কম কথা বলে । আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, কেমন আছো মিতু !

-ভাল ।

আমাকে জিজ্ঞেস করলো না আমি কেমন আছি । অবশ্য আমি খুব একটা চিন্তিত হলাম না । মিতুর আচরণ এমনই সব সময় ।

ট্রেন ছাড়ার আগে ভাইয়া চলে গেল । এসি বগির ডাবল সিট । মিতু জানলার দিকে বসল । আমি বসলাম ওর পাশে । মিতু কিছু সময় নিজের মোবাইলে নিয়ে ব্যস্ত থাকল । আমি যে ওর পাশে বসে আছি সেটা যেন ওর মনেই নেই ।

আগেই বলেছি মিতু আচরণ সব সময় এমনই । গ্রামের সবার সাথেই আগে এমন আচরণ । ওর বাবা যে গ্রামের মাথা সেটা সবাইকেই বুঝিয়ে দিত। আমরা সবাই ওকে সামঝেই চলতাম সব সময় ।

ট্রেন কিছু সময় চলার পরেই মিতু ফোন পকেটে রাখল । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার নাকি ব্রেক আপ হয়ে গেছে ?

আমি একটু অবাক হলাম । আমার যে ব্রেক আপ হয়েছে এটা মিতু কিভাবে জানল ? আমি কারো কাছে বলেছি?

বাসায় আমি লামিয়ার কথা বলেছিলাম মা কে । এবং মা কেই বলেছিলাম ব্যাপারটা । আর কারো কাছে তো বলি নি । তাহলে মিতু কিভাবে জানল ?

আমি বললাম, তুমি কিভাবে জানলে?

-যেভাবেই জানি । হয়েছে কিনা !

-আসলে লামিয়া ঠিক ঐ ভাবে আমার গার্লফ্রেন্ড না ঠিক । এক সাথে কাজ করি !

-এখনও চাকরি কর এক সাথে !!

মিতু এমন একটা ভাব করলো যেন এর থেকে অবাক হওয়ার কথা সে আর শুনেই নি । আমি বললাম, আরে চাইলেই কি চাকরি ছাড়া যায় নি । নতুন একটা চাকরি যোগার তো করতে হবে নাকি !

মিতু কিছু বলতে গিয়েও বলল না । কী যেন ভাবল । তারপর বলল, থাক চাকরি ছাড়তে হবে না । যখন বিয়ে করে বউ নিয়ে যাবে অফিসের সবার সাথে পরিচয় করাতে তখন বদ মেয়েটার মুখের অবস্থা কেমন হবে সেটা দেখার মত হবে !

এই বলেই মিতু খিলখিল করে হেসে উঠল । আমি খানিকটা বিস্ময় নিয়েই মিতুর হাসির দিকে তাকালাম । মিতুর আচরণ আমার কাছে কেমন যেন অদ্ভুত মনে হল । তবে মিতুকে ওভাবে হাসতে দেখে আমার কেন জানি ভাল লাগল ।

মিতু ব্যাগে করে খাবার নিয়ে এসেছিল । সে আমাকে সেই খাবার দিল । প্রথমে আমি খেতে না চাইলাম না । তবে আমাকে একটা ধমক দিল । স্কুলে থাকতেও যখন আমরা তার কোন কথা শুনতে চাইতাম না তখন সে এইভাবে ধমক দিতো । আমি চুপচাপ খেতে শুরু করলাম । বাসায় রান্না করা খাবার । রাতে বেলা মিতু নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে গেল । আমার চোখে অবশ্য ঘুম এল না । ঘুরে ফিরে আমার লামিয়ার কথা মনে আসতে লাগল । মেয়েটা এই কদিনেই এমন আচরণ করতে শুরু করেছে যে আমাকে সে একদম চেনেই না । আমার পাশ থেকে ওর ডেস্কটাও সরে গেছে । ও নিজেই নাকি সরিয়ে নিয়েছে । এই নিয়ে অফিসে খানিকটা কানাঘুসাও হয়েছে । ভাগ্য ভাল যে আমরা কখনই সবাইকে ব্যাপারটা বলি নি কখনই । বললে কী হত কে জানে !

ভোর বেলা ট্রেন আমাদের স্টেশনে ঢুকল । মিতুকে ডাক দিতেই ও উঠে পড়ল । এতো সময়ে সে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে ছিল । প্রথমে কিছু যেন বুঝতে পারল না যে কোথায় আছে । এমন অবশ্য হয় । ঘুম ভাঙ্গার পরে কোথায় আছে সেটা বুঝতে একটু সময় লাগে । মিতুর অবশ্য বেশি সময় লাগল না । নিজেকে গুছিয়ে নিল চট করেই ।

স্টেশনে নামার সময় আমি ওর ব্যাগ নিতে চাইলে ও সেটা দিল না । আমার দিকে চোখ পাকিয়ে বলল, আমি তোমার বউ না আমার জিনিস পত্র তোমাকে নিতে হবে ।

আমি হেসে ফেললাম । স্টেশনের বাইরে এসে দাড়ালাম । ট্রেনে থাকতে মিতুর বাবা একবার ফোন দিয়েছিলেন । মিতু তাকে বলেছিল টেনশন না করে ঘুমিয়ে যেতে আর সকালেও আমি ওকে পৌছে দিব তাই চিন্তার কোন কারণ নেই । তবে আমি এতো সকালে কোন ভ্যান রিক্সা পাবো কিনা সেটা নিয়ে একটু চিন্তিত ছিলাম । দেখলাম আসলেই কোন ভ্যান কিংবা রিক্সা নেই । এতো সকালে এখনও কেউ আসে নি । মিতুও ব্যাপারটা খেয়াল করল তবে ওর মুখে কোন চিন্তার ছাপ দেখলাম না । স্টেশন থেকে আর ও ঘন্টা খানেকের পথে আমাদের গ্রাম । এতো টা পথ হেটে যাওয়া সম্ভব না ।

-আসো চা খাই ।

মিতু হাতের ইশারায় একটা চায়ের দোকান দেখাল । আপাতত চা খাওয়া ছাড়া আসলেই কোণ কাজ নেই । আব্বা কে ফোন দিলে অবশ্য একটা ভ্যানের ব্যবস্থা করতে পারবেন । সেটা মিতুর বাবাও পারবেন। ওদের আসায় এখনও ঘোড়ার গাড়ি আছে । সেটাই অবশ্য চলে আসতে পারে ।

চায়ের কাপ হাতে নিয়ে একটা চুমুক দিতে দিতে অবশ্য ব্যবস্থা হয়ে গেল । চায়ের দোকানদার আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনে ছাবের মাস্টরের পোলা না?

-জ্বী!

-আফা মনি কি আপনার ইস্ত্রী?

আমার চোখ চট করে চলে গেল মিতুর দিকে । দেখলাম মিতুও আমার দিকে তাকিয়েছে । তবে ওকে রাগতে দেখলাম না । আমি বলল, না না ও রইস মুন্সি চাচা মেয়ে !

লোকটা কিছু সময় আমাদের দিকে তাকিয়ে রইলো । এখনও ঠিক যেন বুঝতে পারছে না । বিশেষ করে মিতু আমার সাথে একই সাথে ট্রেনে করে এসেছে এটা তাদের ঠিক মাথায় ঢুকছে না । তবে মিতু এমন একটা কাজ করলো আমি অবাক হয়ে গেলাম । মিতু চায়ের দোকানদারের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি ওর ইস্ত্রী । মুন্সী বাড়ির মেয়ে !

তারপর একটু হাসল । আমি সত্যিই বুঝতে পারলাম না মিতু এমন কথা কেন বলল । কোন কারণ ছিল কি !

-আমাদের একটা ভ্যান কিংবা রিক্সার ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন । অনেকটা পথে !

-জ্বী পারব । আমার পোলাই ভ্যান চালায় । দাড়ান এক্ষন ডাক্তেছি ।

লোকটা দেখলাম দোকান থেকে বের হয়ে পেছনের দিকে গেল ।

লোকটা যেতেই আমি মিতুর দিকে তাকিয়ে বললাম, কী হল এটা?

-কী হবে?

-ঐ কথা কেন বললে?

-এমনি । মনে হল একটু মজা করি !

-এতা গ্রাম । তুমি জানো না?

-এমন ভাবে কথা বলছো যেন আমি হাওয়া থেকে বড় হয়েছি । এখানে তো বড় হয়েছি । নাকি !

আমি কী বলব খুজে পেলাম না ।

চা খাওয়ার পরপরই দেখলাম ভ্যান চলে এল । আমরা ভ্যানে উঠলাম । পুরো ভ্যানে অবশ্য মিতু নিজের ফোন নিয়েই ব্যস্ত রইল। আমি যে এখানে আছি সেটা যেন ভুলেই গেছে । ঘন্টা খানেক পরে আমরা মিতুদের বাড়ির সামনে এসে হাজির হলাম । ওকে নামিয়ে দিয়ে বললাম, আমি তাহলে আসি ।

-কোথায় আসবে? ভেতরে এসো !

-আরে না না । এখন ভেতরে না আসি !

-এতো কথা বল না তো । ভেতরে আসতে বলছি আসো ।

আমি আরেকবার মানা করতে যাবো তখনই দেখলাম গেট দিয়ে মিতুর বাবা বের হয়ে এলেন । আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, এসো ভেতরে এসো । নাস্তা তৈরি হয়ে গেছে । নাস্তা করে যাও ।

মিতুর বাবার উপরে আর কথা চলে না । আমি বাড়ির ভেতরে ঢুকলাম । কলেজের পরে এই বাড়িতে ঢোকা হয় নি আর । এই আড়ির পেছনে একটা বাগান ছিল । আম কাঠাল পেয়ারা সহ আরও নানান ফলের গাছে ভর্তি । স্কুলে থাকতে প্রায়ই সেই বাগানে ঢুকতাম আমরা কয়েকজন । অবশ্যই ফল চুরি করতে । কয়েকবার অবশ্য ধরাও পড়েছিলাম তবে আলভি ভাই কিংবা মিতুর বাবা আমাদের কিছুই বলতেন না । মিতু অবশ্য খুব রাগারাগি করতো । পেয়ারা চোর বলে ডাকতো ।

আমি ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হলাম । তারপর ডাইনিং রুমে এলাম । টেবিলে খাবার পরিমান দেখে সত্যিই অবাক হলাম । সকালের নস্তার জন্য প্রচুর ব্যবস্থা করা হয়েছে । আটার রুটি সাথে পরোটা । এছাড়া মুরগি আর গরুর মাংসের ভূনা । সবজিও আছে । প্রতিদিনই কি এরা এভাবে খাওয়া দাওয়া করে নাকি ! নাকি কেবল আজকে মিতু এসেছে বলে !

খাবার সময় দেখলাম মিতু টেবিলে নেই । কেবল মিতুর বাবা রয়েছে । আমার খুবই অস্বস্তি লাগা শুরু করল । এভাবে সত্যিই আমি কোন দিন উনার সামনে বসে খাওয়া দাওয়া করি নি । মিতুর আব্বা বললেন, তোমার চাকরি কেমন চলছে?

-নীলাকে কে ঢাকা নিয়ে যাবে ?

নীলা আমার ছোট বোন । এইবার ইন্টার পরীক্ষা দিবে। তবে উনি নীলার কথাও যে জানে যেটা জেনে আমার বেশ ভাল লাগল । আমি বললাম, আমি তো নিয়ে যেতে চাই তবে ওর ইচ্ছে নেই । ও নাকি বাবা মাকে ছেড়ে থাকতে পারবে না । এখানেই নাকি পড়বে !

-এই কথা বললে কি হয়? মেয়েরা বড় হলে এক সময়ে না এক সময়ে বাবা মাকে ছেড়ে যাবেই ।

-জ্বী !

এরপর আমরা চুপচাপ কিছু সময় খেয়ে গেলাম । তারপর মিতুর বাবা বোম ফুড়লো । আমার দিকে তাকিয়ে বলল, মিতু কি তোমাকে কিছু বলেছে?

-মিতু?

আমার প্রতিক্রিয়া শুনে তিনি বুঝে নিলেন যে মিতু কিছু বলে নি । তিনি একটা বললেন, তুমি যে তোমাকে বিয়ে করতে চায় সেটা বলে নি ও? তোমার বাবা মায়ের সাথে আমি কথা বলেছি । তারাও রাজি !

আমার মনে হল আমি মনে হয় ভুল শুনলাম । আমি বললাম, জ্বী কী বললেন চাচা?

-বললাম যে মিতুর সাথে তোমার যে বিয়ে ঠিক হয়েছে সেটা তুমি জানো কিনা !

আমি কেওল চোখ বড় বড় তাকিয়ে রইলাম কেবল । এই লোক বলছে কী !

মানে কী এসবের !

মানে বুঝতে পারলাম আরও কিছু সময় পরেই যখন দেখলাম । ঘন্টা খানেক পরে আমার বাবা মা আর নীলা মিতুরদের বাসা এসে হাজির হল । সবার মুখ হাসিহাসি । মিতুর ইচ্ছেতে এসব হচ্ছে । ওর প্রবল জেদের কাছে ওর বাবার নতি স্বীকার করেছে । মায়ের কাছে জানতে পারলাম যে মিতু বছর দুয়েক আগে আমাদের বাসায় গিয়ে হাজির হয় । মিতু অবশ্য আমার বাবার কাছেই প্রাইভেট পড়তো তাই আমাদের বাসায় তার যাওয়া আসা ছিল । কিন্তু বছর দুয়েক আগে সে আমার মায়ের কাছে গিয়ে বলে যে আমাকে সে বিয়ে করতে চায় । আমাকে নাকি সে ঢাকাতে কোন মেয়ের সাথে ঘুরতে দেখেছিল । তখন সবে মাত্র আমি চাকরিতে ঢুকেছি। কার সাথে ঘুরতে দেখেছিল সেটা বুঝতে কষ্ট হল না ।

তারপর এতোদিন সে অপেক্ষা করেছে । আমাকে বলে নি কিছুই । তবে যখনই লামিয়ার সাথে আমার ঝামেলাটা শুরু হল এবং আমি মাকে ব্যাপারটা জানিয়েছিলাম তখনই মিতুর মনে হয়েছে অন্য কেউ আসার আগেই সে ঢুকবে আমার জীবনে !

আমি সতিই কোণ ভাবতেই পারি নি মিতু আমাকে পছন্দ করতে পারে । মানে এতো দিন আমাদের পরিচয় কিন্তু কোন দিন এমনটা আমার মনে হয় নি আর আমি নিজেও সেই সাহস দেখায় নি । কারণ আমি নিজের অবস্থান জানতাম ঠিকই । বামন হয়ে চাঁদের দিকে হাত বাড়ানোর উপায় আছে কী ! তবে এখানে দেখা যাচ্ছে চাঁদই এগিয়ে এসেছে আমার কাছে ।

মিতুদের বাসা থেকে আর বের হতে পারলাম না। সন্ধ্যার সময়ে আমাদের আংটি পরানো হবে । আপাতত এ হচ্ছে পরিকল্পনা । বিয়ে হবে সামনের ঈদে । কিন্তু বিকেল বেলা শুনতে পেলাম মিতু আজকেই বিয়ে করতে চায় । অনুষ্ঠান যত পরে হোক কোন সমস্যা নেই তবে বিয়ে আজই হতে হবে !

মেয়েটা এমন পাগল হয়ে উঠল কেন !

পরিশিষ্টঃ

সপ্তাহ খানেক পর। অফিস থেকে বের হব এখনই । মিতু আজকে সকাল বেলাই জানিয়েছিল যে আজকে সন্ধ্যায় মুভি দেখতে যাবে । আমাকে নিতে আসবে অফিসের সামনে । আমি ওকে ফোন দিতে যাব, তখনই দেখতে পেলাম ওকে ও সরাসরি আমার অফিসে ঢুকে পড়েছে । এবং ব্যাপারটা অনেকেই দেখল । জামাল ভাই এগিয়ে এল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কী ব্যাপার গার্লফ্রেন্ড !

আমার জবাব দেওয়ার আগেই মিতু বলল, না ভাইয়া আমি ওর ওয়াইফ !

ওয়াইফ শব্দটা সে বেশ জোর দিয়েই বলল যাতে অনেকেই শুনতে পারে !

জামাল ভাই বলল, বিয়ে করলে কবে ? এই যে ছুটি নিলে এর ভেতরে?

-জ্বী ভাইয়া ।

জামাল ভাই একেবারে চিৎকার চেচামিচি শুরু করে দিল । সবাইকে ডেকে বলতে লাগল যে আমি বিয়ে করেছি । ম্যানেজার সাহেব পর্যান্ত এসে আমাকে কংগ্রাচুলেট করল । মিতু সবাইকে বলল যে বিয়ের অনুষ্ঠান এই ঈদে হবে । সবাইকে আসতে হবে । সবার মাঝে এক জোড়া চোখ আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল আমি ঠিকই বুঝতে পারছিলাম । মিতু আসলে মুভি দেখার প্লান করে নি । একজনকে জ্বালানোর জন্য সে আজকে এখানে এসেছে । সেই সেদিন ট্রেনে করে যাওয়ার সময়ে সে এই কথাটা বলেছিল । আমি তখন বুঝতে পারি নি । এখন পরিস্কার হল সব কিছু ।

তবে আমার কেন জানি আনন্দই লাগছে । মনে হচ্ছে যে একটা ভাল কাজ হয়েছে। গুণে মানে সব দিক দিয়েই মিতু সেরা । আসলে সবাই ঠিকই বলে যে উপরওয়ালার পরিকল্পনা সত্যিই ভাল । আমরা হয়তো কিছু না পেয়ে মন খারাপ করি কিন্তু উপরওয়ালা আমাদের জন্য সেরাটাই নির্বাচন করে রাখেন।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 81

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →