“তোমরা সেক্স করেছো?”
নওরিন কখনোই ভাবেনি ফারাজের মা প্রথম কথাটাই এটা জিজ্ঞেস করবে। বুঝতে পারল ওর কান খানিকটা গরম হয়ে গেছে এরই মধ্যেই। লাইনটা শোনার সাথে সাথেই যেন লাল হতে শুরু করেছে। প্রেমিকের মা প্রথম সাক্ষাতেই কি এমন একটা প্রশ্ন করতে পারে!
নওরিন যেন একবারের জন্যও ফারাজের মায়ের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারছে না। ওর মনে হচ্ছে এখনই মাটির সাথে মিশে যেতে! নওরিনের মনের ভাব বুঝতে পেরেই ফারাজের মা যেন হেসে ফেলল। তারপর বলল, “অরে মেয়ে এত লজ্জা পাচ্ছো কেন? এখনকার জেনারেশনের কাছে এটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়নি? এখন তো প্রেম ভালোবাসা মানেই ওরা এই সেক্সকেই বোঝে! অন্য কিছু বোঝেই না। করেছো?”
নওরিন এবার মাথা সম্মতির সাথে ঝাকাল। তারা করেছে। সত্যি বলতে কি, স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশিই করেছে। নওরিন সব সময়ই খেয়াল করে এসেছে সে ফারাজের এই ব্যাপারে একটু আগ্রহ বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন থেকেই ওদের মেলামেশা শুরু হয়েছে। প্রথম প্রথম নওরিনের খুব খারাপ লাগত। ফারাজ যেন এটা ছাড়া অন্য কিছু বুঝতই না। ঢাকাতে ফারাজের জন্য ওর বাবা মা একটা আলাদা ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছিল তাই জায়গার অভাব ওদের ছিল না।
ফারাজের বাবা মা দুইজনেই আর্কিটেক্ট। দুইজনেই বর্তমানে নিউ জার্সিতে থাকে। সেখানে থেকেই নিজেদের কাজ আর ব্যবসা সামলায়। তবে শুরুতে তারা দেশেই ছিল। ফারাজের জন্ম দেশেই। দুজনেই এক অদ্ভুত কারণে ছেলে বিদেশ নিয়ে যাননি। দেশেই মানুষ করেছেন। ফারাজের বাইরে থাকার প্রতি আগ্রহ কম। কিছুটা পড়াশোনা সে আমেরিকাতে করেছে বটে তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সময় দেশে চলে এসেছে। এখানেই থেকে পড়াশোনা করছে।
পড়াশোনা শেষ করে দেশের একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি শুরু করেছে। নওরিনের পড়াশোনা এখনও শেষ হয়নি। এই বছরের নভেম্বরে শেষ হবে। তখনই ওদের বিয়ের কথা বার্তা শুরু হবে। আজকে নওরিন ফারাজের মায়ের সাথে দেখা করতে এসেছে। এসেই প্রথম এই প্রশ্নটা ফারাজের মা ওকে করেছে।
নওরিনের মাথা ঝাকানো দেখে ফারাজের মা হাসল। তারপর খানিকটা কাছে ডেকে বসাল তার পাশে। তারপর বলল, “আমাদের ওকে আমেরিকায় বড় না করার একটা কারণই ছিল যে ও যেন এই দিকে বেশি ঝুঁকে না পড়ে। আমি আর ওর বাবা সব সময় চেয়েছিল যাতে শুরুতে শারীরিক সম্পর্কই না, কারো সাথে আগে ওর মনে সম্পর্ক গড়ে উঠুক। তোমার কি মনে হয়েছে যে ফারাজ তোমার সাথে কেবল শারীরিক সম্পর্কের জন্যই আছে? তুমি দেখতে দারুণ। যে কোন ছেলেরই আকাঙ্খিত। এটা স্বাভাবিক!”
নওরিন একটু চুপ করে রইল। তারপর বলল, “আমার এক সময় মনে হত যে ও বুঝি শুধু আমার শরীরটাকেই পছন্দ করে।”
“তারপর? এখন কী মনে হয়?”
“এখন আর তেমন মনে হয় না। হ্যাঁ, একটু সে ওমন করে আমি জানি, তবে আমি সেটা মেনে নিয়েছি। কারণ আমার ছাড়া আর কারো কাছেই সে যায় না। সো ইটস ওকে!”
“তাই বুঝি? তা এমনটা কী থেকে মনে হল?”
নওরিন একটু থামল। সেদিনের কথা এখনও মনে আছে বেশ ভালো ভাবেই। কী তীব্র একটা দিন গিয়েছে। নওরিন এখনও ভাবে যে যদি সেদিন ফারাজ না থাকত তাহলে কী যে হত! নওরিন বলতে শুরু করল তার গল্প। “ঢাকাতে আমাদের খুব একটা আত্মীয় নেই। বলতে গেলে আমরা একাই থাকি। আমার বাবার সব আত্মীয় স্বজন সব কুমিল্লাতে থাকেন। মায়ের দিককার আত্মীয় তাই। বাবা এখানে ব্যাংকে চাকরি করেন। সেদিন রাতের বেলা বাবার শরীর হঠাৎ করে খারাপ হয়ে গেল। আমি তখন কী করব ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমাদের পাশের বাসার আঙ্কেল তখন গ্রামে গিয়েছেন। তাদেরকে যে ডাক দিব সেটারও উপায় নেই। আমি সত্যিই দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম। কী করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। এদিকে বাবার শরীর দ্রুত খারাপ হচ্ছে। কোন দিকে যাবো না বুঝতে পেরে ফারাজকে ফোন দিলাম। আমার তখনও বিশ্বাস ছিল না যে ও আসবে। মানে আমি তখন মনে করেছিলাম যে ও বুঝি কেবল আমার শারীরিক দিকটাই পছন্দ করে কেবল। তবুও মানুষ যখন ডুবে যায় তখন সব আকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চায়। আমিও তাই করেছিলাম। ফারাজ যে এতো দ্রুত চলে আসবে সেটা আমি ভাবিনি। তারপর আমি কেবল অবাক হয়েই দেখলাম যে আমার আর কিছু করার প্রয়োজন পড়ল না। একা হাতে ও সব কিছু সামাল দিল। হাসপাতালের পুরো তিনটা দিন ও আমার সাথে ছিল। আমার সব কাজ ও একাই সামাল দিয়েছে। একটা ব্যাপার কি জানেন আন্টি, মেয়েরা সব সময় দেখে আসে তাদের বাবা কীভাবে তাদেরকে সব কিছুর থেকে প্রোটেক্ট করে আসছে। তাদের সব ঝামেলা থেকে বাঁচিয়ে আসছে। তাই সব সময় তাদের মনে বাবার একটা প্রতিচ্ছবি ফুটে থাকে। তারা সব সময় নিজের প্রেমিকের মাঝে সেই প্রতিচ্ছবি খুঁজতে থাকে। সেদিন আমি ফারাজের ভেতরে সেই ব্যাপারটা দেখতে পেলাম। সেইদিনই উপলব্ধি হল। এতদিন আমার চোখে ফারাজের সেক্সের ব্যাপারটাই কেবল চোখে পড়েছে অথচ ও আমাকে শুরু থেকেই এভাবেই সব কিছু থেকেই প্রোটেক্ট করে আসছে। আমার কোন জিনিস দরকার, কোন জিনিসে আমার ভালো কোনটা আমার জন্য সহজ হবে সব কিছু আমার জন্য ও হাজির করে আসছে।”
ফারাজের মা হাসল। তারপর বলল, “ওর বাবাও এই রকম। সব দিক দিয়েই। এই যে এতগুলো বছর পার হয়েছে এক সাথে। এখনও আমার কোন জিনিসটা দরকার সেটা সে সবার আগে ঠিক করে। এমন কি যখন আমাদের ঝগড়া হয় তখনও। একবার কী হয়েছে তোমাকে বলি! একদিন রাতে আমাদের প্রচুর ঝগড়া হয়েছে। আমরা দুইজন আলাদা ঘরে বসে রয়েছি। তখনই আমার খেয়াল হল যে ও বাসার বাইরে বের হয়ে গেল। বাইরে তখন তুষার ঝড় হচ্ছে। যতই ঝগড়া হোক এই আবহাওয়াতে বের হল কেন সেটা আমার টেনশনের শেষ নেই। ঘণ্টা খানেক পরে ফিরে এল। আমি দেখলাম ওর হাতে একটা প্যাকেট। প্যাকেট দেখেই বুঝতে পারলাম যে ওটা ঔষধের। সাথে সাথে আমার রাগ একেবারে পানি হয়ে গেল। আমি ওকে একবার বলিও নাই যে আমার ঔষধ শেষ হয়ে গেছে। আমার সব ঔষধ পত্র আমাদের স্টাডিরুমে থাকে। ঝগড়ার পরে সে ওখানেই ছিল। খেয়াল করে দেখেছে যে আমার ঔষধ শেষ আর এই রাতের বেলা ও সেটা আনতে বের হয়েছে। এমন মানুষের উপর রাগ করে থাকা যায়!”
নওরিন মাথা ঝাকাল। ফারাজের মা আবার বলল, “আমি জানি ও একটু জ্বালাতন করবে তোমাকে তবে সেই একই সাথে আমি বলতে পারি যে আমার থেকে বেশি কেয়ারিং হাজবেন্ড তুমি আর কোথাও কোনদিন পাবে না। বুঝছো?”
“জ্বী!”
“গুড। যাই হোক আমি তোমার বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে চাই। সম্ভব হলে এই মাসেই তোমাদের এনগেজমেন্ট করে ফেলতে চাই। তোমার বাবা মায়ের সাথে তো ফারাজের পরিচয় হয়েছে, রাইট?”
“জ্বী! ঐ হাসপাতালের ঘটনার পরে ফারাজকে আমার বাবা মা খুব ভালো করে চেনে!”
কথা বলতে বলতেই ফারাজ দরজা ঠেলে বাসায় ঢুকল। ওদের দিকে তাকিয়ে বলল, “কী ব্যাপার এত কিসের কথা হচ্ছে দুজনের মধ্যে?”
নওরিন বলল, “সেটা তোমার না শুনলেও চলবে!”
“আচ্ছা শাশুড়ি আসতেই আমাকে ভুলে গেলে!”
শাশুড়ি শব্দটা কানে আসতেই নওরিনের মনে আবারও একটা লজ্জার অনুভূতি এসে হাজির হল। ফারাজের কথা বার্তার কোন লাইনঘাট নেই। যে কোন কিছু বলে ফেলতে পারে। হয়তো দেখা যাবে ওর মায়ের সামনেই ওকে চুমুও খেয়ে ফেলতে পারে। তখন লজ্জার সীমা থাকবে না। ওর এখন বাসার দিকে যাওয়া দরকার। এছাড়া রাতও হয়ে আসছে! বাসায় ফিরতে হবে!
“আন্টি আমি আজকে আসি! রাত হচ্ছে। বাবা আবার চিন্তা করবে!”
“এখনই চলে যাবে?”
“আজকে যাই। আজকে যাই। কাল আবার আসব।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
এরপর ফারাজের দিকে তাকিয়ে তার মা বলল, “যা ওকে বাসায় দিয়ে আয়!”
“না আন্টি দরকার নেই। আমি একাই যেতে পারব।”
“যেতে পারবে সেটা বুঝলাম। কিন্তু আমার এটা ভালো লাগবে না। যাও ফারাজের সাথে যাও।”
রিকশাতে উঠতেই ফারাজ হুড তুলে দিল। নওরিন খুব ভালো করেই জানে যে কেন ফারাজ হুড তুলে দিল। কিছু বলতে যাচ্ছিল তবে বলল না। বললেও ফারাজ কিছুতেই শুনবে না। অবশ্য আজকে সারা দিনে ফারাজকে একটা চুমুও সে খায়নি। ঐদিনের ঘটনার পর থেকে নওরিন নিজেও যে কতখানি ফারাজের দিকে আকর্ষিত হতে শুরু করেছে সেটা সে নিজেও জানে না। কবে ওদের বিয়ে হবে আর কবে সারাটা সময় এক সাথে থাকবে এটা ছাড়া নওরিনের মাথায় আর অন্য কোন চিন্তা কাজ করে না।
এই গল্প গুলো হয়তো পড়তেই সুন্দর কিন্তু বাস্তবতা অনেক কঠিন । প্রেম ভালোবাসার ক্ষেত্রে শারীরিক ব্যাপারগুলো না চাইলেও চলে আসবে। কিন্তু এই ব্যাপারগুলো কখনই গল্পের মত সুন্দর ভাবে শেষ হয় না বরং বড় খারাপ দিকেই যায় সব সময় । তাই এই ব্যাপারগুলোর দিকে আপনাদের আরো মনযোগ দেওয়া উচিৎ !
ফেসবুকের অর্গানিক রিচ কমে যাওয়ার কারনে অনেক পোস্ট সবার হোম পেইজে যাচ্ছে না। সরাসরি গল্পের লিংক পেতে আমার হোয়াটসএপ বা টেলিগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। এছাড়া যাদের এসব নেই তারা ফেসবুক ব্রডকাস্ট চ্যানেলেও জয়েন হতে পারেন।
Discover more from অপু তানভীর
Subscribe to get the latest posts sent to your email.