নীতুর অস্বস্তি লাগছে । নিজের বাসা ছাড়া নীতু অন্য কারো বাসায় যেতে একদমই পছন্দ করে না । এই কারণে সে তার কোন মামা খালাদের বাসাতেও কখনো যায় না। এটা নিয়ে নীতুর মায়ের অভিযোগের শেষ নেই । কিন্তু আজকে বাধ্য হয়েই নীতু এসেছে অন্যের বাসায় । নীতুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু সাবিহাদের বাসায় । দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের কোটাবিরোধী আন্দোলন চলছে। গত দুইদিন সে ক্যাম্পাসেই ছিল । তবে এখন পরিস্থিতি একদমই খারাপ । কর্তৃপক্ষ হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। প্রথমে তারা হলেই ছিল । ছাত্রলীগের সব সব কর্মীকে সব সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা মিলে সব হলগুলো থেকে জুতা পেটা করে তাড়িয়েছে । তবে স্বসস্ত্র পুলিশের সাথে সাধারণ ছাত্ররা পারবে না স্বাভাবিক। তারপরেও তারা টিকে ছিল বেশ কিছুটা সময় । তবে একটা সময়ে আর পারে নি । অনেকেই হল ছেড়ে দিয়েছে । নীতুও হল ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হয়েছে।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে নীতুর ঢাকাতে এমন আত্মীয় নেই যাদের বাসায় সে থাকতে পারবে। আর এই রাতের বেলা সে বাড়িতে কিভাবে যাবে সেটাও সে ঠিক বুঝতে পারল না । শুনতে পেল যে আন্দোলন নাকি সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। তাই বাস চলাচল বন্ধ । এখন সে বাসায় কিভাবে যাবে সেটা নিয়েই চিন্তা করতে লাগল । একবার মনে হয়েছিল যে আবার হলেই ফেরত যায় । এখনো সেখানে অনেক মেয়েরাই আছে। কী করবে না করবে এমন সিদ্ধান্ত যখন নিতে পারছে না তখন সাবিহার ফোন এসে হাজির । সাবিহা ওকে নিতে আসছে ।
নীতুর একবার মনে হল মানা করে দেয় তবে মানা করল না । এখন এর থেকে ভাল সমাধান আর কিছু নেই। সাবিহাদের গাড়িটা চিনতে পারল দূর থেকেই । তবে গাড়িটা যখন একদম কাছে এল তখন ড্রাইভারের সিটে বসে থাকা মানুষটাকে দেখে নীতু একটু উৎকন্ঠিত হল । সাবিহার বড় ভাই সাব্বির । এই মানুষটার কাছ থেকে নীতু সব সময় দুরে থাকতে চেয়েছে। আজকে একেবারে সামনে পড়ে গেল আবার । নীতুর সাব্বিরের চেহারার দিকে তাকিয়ে বুঝতে সে খানিকটা গম্ভীর হয়ে আছে । গম্ভীরতার কারণটা নীতু খুব ভাল করেই জানে। এই কারণেই ওর মনে অস্বস্তি একটু বেশি । সাব্বিরের মুখোমুখী সে হতে চা না। তবুও আজকে সাব্বিরের মুখোমুখী হতেই হবে। গাড়ি থামতেই সাবিহা গাড়ি থেকে নেমে পড়ল । তারপর নীতুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল । বলল, তোর জন্য এতো চিন্তা হচ্ছিল । কতবার ফোন দিলাম তোকে!
নীতু বলল, আমি ঠিক আছি।
-চল । এখানে থাকা খুব বেশি নিরাপদ না। বাসায় চল জলদি।
নীতুকে গাড়িতে তুলে নিয়ে ওরা আবার ধানমণ্ডির দিকে এগিয়ে চলল। সাবিহাদের বাসা্র দিকে ।
রাতের খাবার টেবিলে সাবিহার বাবা নানান কথা বার্তা জিজ্ঞেস করল নীতুকে । নীতুর প্রথম প্রথম একটু অস্বস্তি লাগছিল বটে তবে এক সময়ে সেটা স্বাভাবিক হয়ে এল । সাবিহার বাসায় সবাই যে নীতুর প্রতি আন্তরিক ছিল নীতু এই ব্যাপারটা বেশ ভাল ভাবেই টের পাচ্ছিল । নীতুর এই মানুষের বাসায় না যাওয়ার পেছনে এই আন্তরিকতা না থাকা অন্যতম একটা কারণ । নীতু ওর জীবনের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটা দেখেছে যে মানুষ যখন তাদের বাসায় আসে তখন তারা সেটা পছন্দ করে না। অন্যদের বলে লাভ নেই নীতু নিজেই এটা একদম পছন্দ করে না । বাসায় থাকতে যখন কেউ তাদের বেড়াতে আসত তখন নীতুর খুব মেজাজ গরম হত। সময়ের সাথে সে নিজেও বুঝতে পেরেছে যে অন্যেরা তার বাসায় আসলে যেমন তার মেজাজ গরম হয়, সে অন্যদের বাসায় গেলে তাদেরও তো মেজাজ গরম হতে পারে ! বরং হওয়াটাই তো স্বাভাবিক । এই কারণে নীতু সাধারণ অন্যদের বাসায় যেতে চায় না একদম । কিন্তু আজকে তো না এসে অন্য কোন উপায় ছিল না।
পরিস্থিতি কখন শান্ত হবে সেটা নীতু জানে না । তবে কাল পরশুর ভেতরেই সব ঠান্ডা হয়ে যাবে । বিশেষ করে আজকে শোনা যাচ্ছিল যে ওদের দাবী মেনে নেওয়ার কথা বার্তা চিন্তা করা হচ্ছে।
রাতে খাওয়ার পরে সাবিহার সাথে বসে আরও কিছু সময় গল্প করল । তারপরেই সাবিহা ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতে শুরু করল । নীতু বিছানায় শুয়ে রইল কেবল কিছুটা সময় । কী করবে বুঝতে পারল না। ঘুম আসছে না । নতুন জায়গায় নীতুর এতো জলদি ঘুম আসবে না। মোবাইলটা চোখের সামনে নিয়ে সময় দেখল। একটা বাজতে আর বেশি সময় বাকি নেই। নীতুর মনে হল আজকে রাতে হয়তো আর ঘুম আসবে না । এর থেকে ছাদ থেকে একটু ঘুরে আসলে ভাল হয় !
সাবিহাকে কথা বলেই সে ঘরের বাইরে পা বাড়াল । বেশ রাত হয়ে গেছে। সাবিহার বাবা মা দুই জনেই ঘুমিয়ে পড়েছে সম্ভবত । ড্রয়িং রুমে একটা মাত্র আলো জ্বলছে। এছাড়া পুরো বাড়িই অন্ধকার । এর আগে আরো দুইবার সাবিহাদের বাসায় সে এসেছে। এদের ভেতরে একদিন গিয়েছিল ছাদে।
সাবিহাদের বাড়িটা পুরানো আমলের দুই তলা বাড়ি । পুরো ধানমন্ডি এলাকাতে এই রকম বাড়ি হাতে গোনা কয়েকটা রয়েছে। সাবিহারা সেই পুরানো দিনের খানদানী বড়লোক । যদিও আগের মত আর সান শৌকাত নেই তবে এখন সেই বড়লোকী ভাবটা ঠিকই আছে। তবে সাবিহার ভেতরে এসব নেই । সে খুব স্বাভাবিক সাদাসিদা ভাবে চলে। এই জন্যই নীতুর সাথে ওর ভাব হয়েছে।
সিড়ি দিয়ে পা টিপে টিপে উপরে উঠল । সিড়ি ঘরেও আলো জ্বলছে। ছাদের কাছে এসে দেখল সিড়ির দরজাটা খোলা । একটু অবাক হল বটে । তালা না মারা থাকতে ভেতরে ভেতর থেকে সেটা লক তো করা থাকবে ! বাড়িতো মাত্র দুই তলা । চোর এই দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতে পারে সহজে। নিশ্চিত কেউ ভুল করে দরজাটা খোলা রেখে চলে গেছে।
নীতু দরজা ঠেলে ছাদে পা রাখতেই ওর বুকটা ধক করে উঠল । দেখতে পেল ছাদের ঠিক শেষ মাথায় কালো মত একটা আয়বয় দাঁড়িয়ে রয়েছে। অন্ধকারের ভেতরে কালো অন্ধকার আয়বয়টা নীতুর চোখ এড়ালো না।
নীতুর এখন কী করা দরকার?
নীতু অনুভব করল যে ভয়ের একটা চিৎকার ওর পেট থেকে আস্তে আস্তে উপরে উঠছে। এখনই সেটা গলা দিয়ে বের হয়ে আসবে । খুব প্রবল সম্ভবনা আছে নীতু চিৎকার দিয়ে এই দরজার কাছেই জ্ঞান হারিয়ে পড়বে । ঘুরে সিড়ি দিয়ে নামার শক্তি তার হবে না মোটেও ।
চিৎকারটা যখন গলা দিয়ে বের হয়ে আসবে ঠিক এই সময় আওয়াজটা শোনা গেল !
–চিৎকার দিও না। আমি !
গলাটা নীতুর পরিচিত । সাবিহার বড় ভাই সাব্বিরের ! কয়েকটা ব্যাপার তখনই পরিস্কার হয়ে গেল । এই সিড়িঘরের দরজাটা কেন এতো রাতের বেলা খোলা সেটা বুঝতে পারল । একেবারে শেষ মুহুর্তে নিজেকে আটকালো চিৎকার দেওয়া থেকে । তবে ভয়টা কেটে নিজেকে শান্ত করতে আরও কয়েক মুহুর্ত লাগল ।
এরই ফাঁকে সাব্বির এগিয়ে এল সামনে । ওর একেবারে সামনে এসে দাড়াল । একেবারে নীতুর মুখোমুখী। ভয় কেটে গিয়ে সুস্থির হতেই নীতুর মনে এবার একটা লজ্জার ভাব এসে জড় হল । এই রাতের বেলা ছাদে কেউ থাকবে না ভেবেই ঘর থেকে বের হওয়ার সময় ওড়নাটা পর্যন্ত আনে নি । টিশার্ট আর একটা থ্রিকোয়াটার লেগিংস পরেছিল। সেই অবস্থাতেই চলে এসেছে। এখন সাব্বিরকে দেখে একটা লজ্জার ভাব ফুটে উঠল মুখে । ইচ্ছে করল যে এখনই পালিয়ে যায় এখান থেকে । তবে নীতুর পা যেন আটকে গেছে ছাদের মেঝের সাথে।
সাব্বির আরেকটু কাছে এগিয়ে এল । নীতু যেন একেবারে কাঠ হয়ে গেল। এখন ওর কাছে মনে হচ্ছে যে সাব্বির না হয়ে সত্যিকারের ভুত হলেই বুঝি এখনকার পরস্থিতি আরও বেশি ভাল হত । সাব্বির এখন নীতুর একদম কাছে । ইঞ্চি খানেক দুরুত্বে দাঁড়িয়ে। সিড়ি ঘরের আলো এসে সাব্বিরের চেহারা পরিস্কার দেখা যাচ্ছে । জ্বলজ্বল করতে থাকা চোখে দৃষ্টি নীতুর কেন জানি সহ্য করতে পারল না । অন্য দিকে চোখে ঘুরিয়ে নিল ।
-কতবার তোমাকে ফোন দেওয়া হয়েছে?
আন্দোলন শুরুর পর থেকে সাবিহার ফোন থেকে কম করে হলেও বিশবার ফোন গিয়েছে নীতুর ফোনে। নীতু জানে ফোনটা সাবিহার কাছ থেকে আসলেও সেটা আসলে সাব্বিরের কাছ থেকেই আসছে । সাব্বির ওর নিরাপত্তা নিয়ে বেশ চিন্তিত। শেষে সাবিহাকে ফোন না দিয়ে তাকে মেসেজ পাঠিয়ে জানাল যে ওকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না । সে হলের ভেতরে আছে। বাইরে বের হয় নি । যদিও কথাটা সত্য ছিল না । সকাল থেকেই নীতু বাইরে ছিল ।
নীতু মাথা নিচু করল । সাব্বির যেন আরেকটু কাছে এগিয়ে এল । বিকেল বেলা সাব্বিরের বিরক্তির কারণ নীতু খুব ভাল করেই টের পেয়েছিল।
-আমাকে তুমি পছন্দ না কর দয়া করে আমাকে টেনশনে ফেল না । প্লিজ ! আই কান্ট টেক ইট !
নীতু এবার মুখ তুলে সাব্বিরের দিকে তাকাল । সেখানে সে তীব্র এক মিশ্র অনুভূতি দেখতে পাচ্ছে। ওর জন্য রাগ ভালবাসা অভিমান সব এক সাথে ।
-আমি আপনাকে পছন্দ করি না এই কথা আপনাকে কে বলেছে ?
-কে আর বলবে তুমি নিজেই বলছ ।
-আমি মোটেই বলি নি যে আমি আপনাকে পছন্দ করি না ।
-তাহলে কী বলেছ ?
-সেটা আপনি নিজেই ভেবে দেখুন। সেদিন আমি কী বলেছিলাম !
কয়েক মুহুর্ত কেউ কোন কথা বলল না। একে অন্যের দিকে তাকিয়ে রইলো কেবল । নীতুর মনে হল যে অন্তত কাল ওরা এভাবেই একে অন্যের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকেই সাবিহার সাথে নীতুর একটা ভাব হয়ে যায় । যদিও নীতু মানুষের বাসায় যাওয়া একেবারে পছন্দ করতো না তবে সাবিহা ওকে জোর করে ধরে বেঁধে নিয়ে আসত ওদের বাসায় । সেখানেই সাব্বিরের সাথে প্রথম দেখা হয় নীতুর । নীতুর সাথে যখন সাব্বিরের চোখাচোখী হয় প্রথম দিন সেদিনই নীতু টের পেয়েছিল যে ওকে সাব্বিরের পছন্দ হয়েছে। এই জন্য আরও বেশি সাবিহার সাথে ওদের বাসায় আসতে চাইতো না । কিন্তু সাবিহাকে কোন ভাবেই এড়ানো যেত না । ওকে কোন না কোন ভাবে ঠিকই নিয়ে আসত ।
একদিন সাব্বির নিজে ক্যাম্পাসে হাজির হল । একেবারে নীতুর হলের সামনে। ফোন করে ওকে হলের গেটে নামতে বলে । তারপর বলা চলে একেবারে সরাসরি ওকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় । নীতু সেটা সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করে। সাব্বির যখন কারণ জানতে চাইল তখন নীতু কেবল বলেছিল যে আমি বামন হয়ে চাঁদের দিকে হাত বাড়ানোর সাহস দেখাতে পারি না।
প্রত্যাখ্যাত হয়ে সাব্বির ফিরে গিয়েছিল বটে তবে সে কখনই নিজেকে নীতুর ভাবনা থেকে নিজেকে আলাদা করতে পারে নি । সাব্বির ভেবেছিল যে এক সময়ে হয়তো ওর কথা সে ভুলে যাবে । কিন্তু আজকে যখন ক্যাম্পাসে ঝামেলার কথা সাব্বিরের কানে এল তখন নিজেকে কেন জানি কোন ভাবেই নীতুর চিন্তা থেকে দূরে রাখতে পারে নি।
সাব্বির বলল, আমি কোন চাঁদ না । তুমি সেটা ভাল করেই জান।
-এখন আপনি আবেগ দিয়ে চিন্তা করছেন । এই জন্য অনেক কিছুই ভাবতে পারছেন না । যখন আবেগটা কেটে যাবে তখন এসব আর ভাল লাগবে না । আমি জানি এসব । নিজের চোখেই দেখেছি। আপনার আর আমার পরিবার অনেক অনেক আলাদা । অনেক বেশি।
সাব্বির নিজেও জানে কথাটা । তার বাবাকে সে চেনে খুব ভাল ভাবেই। কিন্তু তারপরেও সে কোন ভাবেই নিজেকে নীতুর থেকে দূরে রাখতে পারে নি। চেষ্টা করেছে কিন্তু পারে নি।
সাব্বির নীতুকে আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল তবে তার আগেই সাবিহার আওয়াজ শুনতে পেল । সাবিহা এগিয়ে আসছে। সাব্বির সরে গেল একটু দূরে । সাবির তারপরেই ছাদে উকি দিল । ওদের দিকে তাকিয়ে বলল, আরে ভাইয়া আছিস ! আমি তো ভাবলাম নীতু না আবার ভয় পায়। যাক আমি ঘুমাতে গেলাম।
নীতু দ্রুত বলে উঠল, আমিও যাব। দাড়া ।
এই বলে দ্রুত সাবিহার কাছে চলে এল। এখন কোন ভাবে এখান থেকে পালাতে পারলে বাঁচে ।
রাতে ঘুমানোর সময় সাবিহা ওকে খানিকটা জড়িয়ে ধরে বলল, তুই ভাইয়াকে হ্যা বলেও দিতে পারিস !
নীতু একটু অবাকই হল। এতোদিন নীতু ভেবেছিল ওর ভাইয়ের ব্যাপারটা সাবিহা জানে না। নীতু কিছু সময় চুপ থেকে বলল, তুই জানিস? তোকে বলেছে?
-না বলে নি। তবে তার ভাব দেখে আমার বুঝতে কষ্ট হয় নি । শুধু আমিই না মা টের পেয়েছে !
-সেকি ! কী লজ্জার ব্যাপার !
-তুই রাজি না কেন বলবি আমাকে?
নীতু চট করেই কিছু বলতে পারল না। এক সময় বলল, তোদের সাথে আমাদের পার্থক্য অনেক বেশি রে ! অনেক বেশি ! এতোটা যে আমি কোন ভাবেই এই পার্থক্য পূরণ করতে পারব না। তুই তো আমাকে চিনিস । চিনিস না?
-হুম । এই জন্যই বললাম । ভাইয়ার বউ হলে আমার কোন আপত্তি নেই । কিন্তু বাবা হয়তো …
-উনার দিক থেকে ভেবে দেখলে তাকে দোষ দেওয়া যায় না । আমি তোকে অসম্ভব পছন্দ করি সাবি, আমি কোন ভাবেই চাই না আমার কারণে তোদের পরিবারে কোন ঝামেলা হোক । বুঝেছিস !
-হুম বুঝলাম ! এখন ঘুমা । কাল কিন্তু তোর যাওয়া হবে না । কালকে সারা দিন অবরোধ ডেকেছে। তোর যাওয়া হবে না। বুঝলি ? কাল সবাই বাসায় থাকবে। ভাইয়া অফিস যাবে না । বাবাও না । কালকে আমরা বাগানে চড়ুই ভাত করব । ঠিক আছে?
পরের দিন সত্যিই নীতুর যাওয়া হল না। পরিস্থিতি ভাল তো দূরে থাকুক আরও খারাপের দিকে গেল। সরকার পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য পুরো ইন্টারনেট বন্ধ করে দিল। সাথে জারি করল কারফিউ। পুরো চারদিন নীতু সাবিহাদের বাসাতেই থাকল। প্রতিরাতে নিঃশব্দে উঠে যেত ছাদে । সেখানে সাব্বির আগে থেকেই দাঁড়িয়ে থাকত। ওরা যে খুব কথা বলত সেটাও না । পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকত ।
কারফিউ উঠলে সাব্বির ওকে বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে দিতে গেল । বাসে ওঠার আগ মুহুর্তে নীতু সাব্বিরকে বলল, আপনাদের বাসায় থাকা এই কটা দিন আমার জীবনের সব থেকে আনন্দময় সময়। এটা আমি আজীবন মনে রাখব।
বাসটা যখন ছেড়ে দিচ্ছিল সাব্বির বিষাদ চোখে কেবল তাকিয়ে রইল সেদিকে। নীতু কয়েকবার বাসের জানালা দিয়ে ওর দিকে ফিরে তাকিয়ে হাত নাড়ল । সাব্বির জানে নীতু ওকে অপছন্দ করে না মোটেই । হয়তো পছন্দও করে কিন্তু কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখী হয়ে মেয়েটা নিজের ভাল লাগাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে।
জীবন আসলেই এমন । কেবল ভালবাসা দিয়ে জীবনের সব কিছু চিন্তা করলে না । জীবন তো আর অপু তানভীরের গল্প নয় যে সব সময় ভালোবাসার জয় হবে । বাস্তবে জীবনে আসলে ভালোবাসার জয় হয় না । সত্যিই হয় না। কিছু গল্প সব সময় অসমাপ্তই রয়ে যায় !
ফেসবুকের অর্গানিক রিচ কমে যাওয়ার কারনে অনেক পোস্ট সবার হোম পেইজে যাচ্ছে না। সরাসরি গল্পের লিংক পেতে আমার হোয়াটসএপ বা টেলিগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। এছাড়া যাদের এসব নেই তারা ফেসবুক ব্রডকাস্ট চ্যানেলেও জয়েন হতে পারেন।
সরাসরি মেসেজ পাঠাতে চিঠি.মি এপ ব্যবহার করুন।
Discover more from অপু তানভীর
Subscribe to get the latest posts sent to your email.