দ্যা স্লিপিং কিং (পর্ব ৩য়)

oputanvir picture 1
4.7
(36)

বাক্সটার দিকে খানিকটা সময় তাকিয়ে রইলো । যদিও বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে না ভেতরে কী আছে তবে মিমি ঠিক ঠিক জানে যে বাক্সের ভেতরে কী আছে। এই বাইরে থেকেও জিনিসটার অস্তিত্ব সে ঠিক ঠিক অনুভব করতে পারছে । যেন সেটা ওকে আকর্ষিত করছে ।
বুকের ভেতরের ধুকধুকানি সে টের পেল ঠিক । মিমির এখন কী করা উচিৎ?

মনের ভেতরে একটা তীব্র আগ্রহ জন্মালো যে বাক্সটা খুলে কলার সে বের করে দেখে । একটু স্পর্শ করে সেটার অস্তিত্ব নিজের হাতে অনুভব করে। তবে নিজেকে সামলালো। কলারটা মারাত্বক রকমের এডিকটিভ। একেবারে ড্রাগসের মত। কত কষ্ট করে সে যে এটার উপর থেকে নিজের আকর্ষণ সরিয়েছে সেটা কেবল মিমি নিজেই জানে । বারবার ব্যবহারের ফলে নিজের ভেতরের মানুষ্যত্ব সে হারিয়ে ফেলছিলো । নিজের ভেতরেই সেটা বুঝতে পারছিলো খুব ভাল করেই। সেই যুবক ওকে বলেছিলো যে এটা যতই বেশি ব্যবহার করবে তত বেশি এটার উপর সে নির্ভরশীল হয়ে যাবে । আর খুলে ফেললেও দুই দিক থেকে বিপদে পড়বে। শারীরিক একটা একটা মারাত্বক ফল নাকি তখনই পাবে । হ্যা, সত্যি যে অভ্যাস হয়ে যাওয়ার পরে ও যখন প্রথমবারের মত কলারটা খুলে ফেলল তখন বেশ শারীরিক পীড়া আর ক্লান্তি অনুভব করেছিলো । তবে সেটা সে সামলে উঠেছিলো । একটা দিন পুরোটা সে ঘুমিয়েছে। তারপরই শরীরে আবারও আগের মত শক্তি ফিরে পেয়েছে। ঐ যুবকের কথা ঠিক হয় নি । প্রথমে একটু ভয় পেয়েছিলো বটে । তবে এখন ঠিক আছে । এখন এটা নিয়ে সে চিন্তা করতে চায় না । তবে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে এই জিনিস আর সে গলাতে পরবে না । এই জিনিস তাকে দুরে থাকতে হবে । তারপরেই কলারটা সে ডাস্টবিনের ভেতরে ফেলে এসেছিলো । কিন্তু আজকে আবার সেটা ওর সামনে এসে হাজির হয়েছে ।

মিমি কিছুতেই বুঝতে পারলো না যে এই রেস্টুরেন্টে এই টেবিলে বক্সটা কিভাবে এল ?
ওর বাসা কিংবা অফিসের টেবিলে আসলেও না হয় ব্যাপারটা বুঝতে পারতো কিন্তু এখানে?

ও যে এখানে দুপুরের লাঞ্চ করতে আসবে সেটা সে নিজেই জানতো না । অফিস থেকে বের হয়েছিলো একটা কাজে । সেটা শেষ করে এখানে এসেছে ! তাহলে কিভাবে বক্সটা এল !

মিমি ঠিক করলো বক্সটা সে হাত দিয়ে ছুঁয়েও দেখবে না । এখানেই পড়ে থাকুক । এখান থেকে কফি শেষ করবে এবং তারপর চলে যাবে । বাক্সটা যেই এখানে ফেলে রাখুক না কেন সে নিয়ে যাবে ।

যথা সময়ে কফি চলে এল । সাথে একটা বড় সাইজের বার্গার। মিমি খাবার সময় চেষ্টা করলো যাতে বক্সটার দিকে না তাকায় । কিন্তু বার কয়েক চলে যাচ্ছিলো চোখ আপনা আপনিই। যাক সেদিকে চোখ । মিমি ঠিক করলো যে কোন ভাবেই আর এই জিনিস নিজের জীবনের সাথে সে যুক্ত করবে না । যে কোন কিছুই আসক্তি মোটেই ভাল কিছু নেই ।

কফি শেষ করলো সে । বার্গারে এবার কামড় দিবে তখনই সে ব্যাপারটা খেয়াল করলো । এতো দ্রুত ঘটনা ঘটলো যে মিমি ঠিক মত প্রতিক্রিয়া দেখানোর সময় পেল না । লোকটা দেখতে নিজের কোমর থেকে পিস্তল বের করে সরাসরি ওর দিকে গুলি চালালো । যদিও সে খেয়াল করেছিলো তবে সময় পেল না সরে যাওয়ার । যতটুকুই সে সরতে তাকে গুলিটা বুকে না লেগে লাগলো ওর কাধে । গুলিটা ওকে ছুইয়ে চলে গেল । একটু মাংস ছিড়ে নিয়ে গেল ।

তীব্র একটা বিস্ময় কাজ করলো কেবল, ব্যাথাটা তখনও সে অনুভব করতে পারে নি। তবে মনের ভেতরে বাঁচার একটা তাগিত অনুভব করলো । লোকটা আবারও ওকে গুলি করবে । এইবার হয়তো আর মিস করবে না সে ।

তবে গুলির আওয়াজ শুনে পুরো রেস্টুরেন্টে চিৎকার চেঁচামিচি শুরু হল। সবাই যেন দরজা দিয়ে পালিয়ে যেতে চাইছে । এটার ফলে মিমি একটু লুকিয়ে পরার সুযোগ পেল । সে দ্রুতই চলে গেল বড় সোফাটার আড়ালে । ঠিক সেই সময়েই গুলির আওয়াজটা হল । মিমি অনুভব করলো যে সেটা এসে ঠিক ওর মাথার উপরের সোফাতে লাগলো । তারপর আরো কয়েকটা গুলির আওয়াজ হল । লোকটা গুলি করে চলেছে ।

মিমি কী করবে এখন?
ওর মাথায় কিছু আসছিলো না । একটু স্থির হতেই মিমির কাধের ব্যাথাটা সে টের পেল বেশ ভাল রকমের । এতো সময় বিস্ময় আর বেঁচে থাকার তাগিদে অনুভব করে নি। কিন্তু এখন অনুভব করছে । মাথা থেকে ব্যাথাটা বের করে দিয়ে সে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করার চেষ্টা করল।

লোকটা একেবারে দরজার কাছে দাড়িয়ে ছিল । কোন ভাবে সে দরজা দিয়ে বের হয়ে যেতে পারবে না । এদিকে রেস্টুরেন্ট থেকে প্রায় সবাই ততক্ষণে বের হয়ে গেছে । মিমি খুব ভাল করেই জানে যে যে সবাই বের হয়ে গেল লোকটা ওর দিকে এগিয়ে আসবে । তখন ওকে কে বাঁচাবে?

এটাই কি সেই দলটা?

যুবক বলেছিল ওকে মেরে ফেলতে একটা দল বের হয়েছে । মিমি খুব বেশি সাবধান ছিল প্রথম প্রথম । বাসা থেকে বের হওয়া অফিস যাওয়া সব মিলিয়ে একটু সাবধানেই চলছিলো । তবে সময়ের সাথে সাথে মিমির মনের ভয়টা কমে এসেছিল। কিন্তু এখন মিমির মনে হচ্ছে যে আরো সাবধান হওয়া দরকার ছিল।
কী করবে এখন সে?

আবারও গুলির আওয়াজ শোনা গেল !

এগিয়ে আসছে সে !

মিমি কী করবে? এখনই কি মারা যাবে সে ? সবাইকেই একদিন মরতে হবে । কিন্তু মিমি নিজের জন্য এমন একটা মৃত্যু কি সে আশা করেছিলো? কোন দিন ভেবেছিলো এমন ভাবে সে মারা যাবে?

তখনই চোখ গেল বক্সটার দিকে । হাত বাড়ালেই সেটা পাওয়া যাবে !

মিমি এখন কী করবে এখন?

তখনই আরেকটা গুলির আওয়াজ হল !

মিমি আর চিন্তা করলো না কিছু । হাত বাড়িয়ে বক্সটা নিল । কলারটা হাত দিয়ে ধরতেই শরীরের ভেতরে একটা তীব্র অনুভূতি সৃষ্টি হল । মিমি কয়েক মুহুর্ত চিন্তা করল। এখন যদি সে আবারো এই কলারটা পরে তাহলে তার ভেতরে আবারও সেই আসক্তিটা শুরু হবে । সব সময় এটা পরে থাকতে ইচ্ছে করবে এবং সেই সাথে তীব্র ভাবে একজন ভ্যাম্পায়ারের জীবন যাপন করতে ইচ্ছে করবে । এছাড়া আরও একটা সমস্যা তো আছেই । রাতের বেলা দেখা সেই স্বপ্নটা ! এতো বাস্তব আর পরিস্কার ভাবে দেখা যায় সেই স্বপ্নটা যে মিমি নিজেকে বড় অসহায় মনে করে । স্বপ্নের বিষয় বস্ত্র যতই দিন এগোচ্ছিল তত আরও ভয়ানক হচ্ছিল । মিমির মনে হচ্ছিল যে সে যেন চুম্বকের মত সেই মানুষটার দিকে ধাবিত হচ্ছিল । নিজেকে সে বন্দি অবস্থায় অনুভব করছিল । নিজেকে সে কোন ভাবেই বন্দি ভাবতে চায় না । কোন ভাবেই চায় না যে অন্য কারো হাতের পুতুল হতে । তাই সে ঠিক করেছিল এই ঝামেলা থেকে সে দূরে চলে যাবে । কিন্তু এখন এই অবস্থায় আর সেই ভাবে চিন্তা করার উপায় নেই। এখন সব থেকে আগের চিন্তা যে ওকে এখন বেঁচে থাকতে হবে । এই বিপদ থেকে ওকে কেউ এখন রক্ষা করবে না । কেউ বাঁচাতে আসবে না । এই যে গুলি করতে করতে ওর দিকে গিয়ে যে আসতে, আর কিছু সময়ের ভেতরেই বুঝি সে চলে আসবে । তারপর সোজা ওকে গুলি করে দিতে চলে যাবে । একবার ভাববেও না ।
মিমি এবার লম্বা নিঃশ্বাস নিল । তারপর কলারটা গলায় পরে নিল ।

কয়েক মুহুর্ত কেটে গেল । গুলির আওয়াজ থেমে গেছে । ঠিক সেই সময়ে মিমি নিজের শরীরের ভেতরের সে কাঁপনটা অনুভব করল। পুরো শরীরের ছড়িয়ে গেল সেই অনুভূতিটা । মিমির মনে হল ও যেন আবার জ্ঞান হারাবে । অবশ্য সেই অভ্যাস ওর গড়ে উঠেছিল কিন্তু কয়েকদিন এ কলার সে ব্যবহার করে নি । এখন শরীরের সাথে মানিয়ে নিতে ওর কষ্ট হবে । জ্ঞান হারিয়ে ফেলাটা অস্বাভাবিক কিছু না । সেই ক্ষেত্রে খুনীর কাজ আরও সহজ হয়ে যাবে । গুলির নিশানা করতে সহজ হবে। যতই ও ভ্যাম্পায়ার হয়ে যাক না কেন যদি অজ্ঞান থাকে তাহলে যে কেউ ওর দিকে গুলির নিশানা করতে পারবে সহজে ।

মিমি নিজের জ্ঞান ধরে রাখার চেষ্টা করে চলল। কোন ভাবেই জ্ঞান হারালে চলবে না ।
কোন ভাবেই জ্ঞান হারানো চলবে না ।

সেই সময়েই মিমি আবারও সেই তীব্র অনুভূতিটা অনুভব করলো । আরও তীব্র ভাবে । পুরো শরীর জুড়ে । মনে হল যেন শরীরের পুরো রক্তা যেন টগবগ করে করে ফুটতে শুরু করলো। পুরো শরীরে একটা ঝাকুনি খেয়ে সে থেমে গেল । জ্ঞান হারিয়ে ফেলল সে !

জ্যাকোব এগিয়ে গেল ধীরে পায়ে । পুরো রেস্টুরেন্ট একেবারে ফাঁকা হয়ে গেছে । এখন কেউ হতাহত হয় নি । অবশ্য প্রতিবারই কেউ না কেউ আহত হয় যখন এই রকম ভাবে কাউকে নিশানা বানানো হয় । রাতের বেলা টার্গেটের আসায় যাওয়ার কোন উপায় নেই । কারণ ঐ সময়ে পুরো ভ্যাম্পায়ার গোষ্টী ওর পাহারায় থাকে । রাতের বেলা ওদের সাথে পেড়ে ওঠা একটু কষ্টের । এই কারণে এমন সময়ে ওদের উপর হামলা করতে হবে যখন ওরা সব থেকে দুর্বল থাকে । মেয়েটির অফিসে আক্রমন করাও একটু ঝামেলা ছিল । অস্ত্র নিয়ে সিকিউরিটি পার হওয়াটা ঝামেলা। সব থেকে ভাল ছিল মাঝের কোন স্থানে আক্রমন করা যেখানে কোন সিকিউরিটি থাকবে না । কোন ঝামেলা থাকবে না । আজকে এই সুযোগ এসেছিল । আর দেরি না করে একশানে নেমে গেছে । যদিও ওর কমান্ডার আরিয়ানা ওকে আরও একটু সময় অপেক্ষা করতে বলেছিল । ব্যাক আপ না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথা বলছিল । তবে জ্যাকোব সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করে নি । ভেতরে চলে এসেছে ।

মেয়েটার শরীরে সে গুলি লাগাতে পেরেছে । একটু অবাকই হয়েছে সে । যে ক্ষিপ্রতা সে আশা করেছিল মেয়েটার ভেতরে তার কিছুই ছিল না । তার মানে কি মেয়েটা কলার পরে নি ?
কিন্তু ওকে বলা হয়েছিল যে একবার যে এই কলার পরবে তার পক্ষে এর থেকে দূরে থাকা অসম্ভব একটা ব্যাপার । ড্রাগের মত আসক্ত হয়ে পরে সে । কিন্তু মেয়েটা কিভাবে এই আসক্তি থেকে দূরে চলে এল । জ্যাকোব আরও একটু এগিয়ে গেল । সে জানে মেয়েটা ঐ বড় সোফার আড়ালে লুকিয়ে আছে । কোন নড়া চড়া করছে না । ধীরে পায়ে এগিয়ে গেল সে । একটু একটু করে এগিয়ে যেতে শুরু করল ।

যখন একেবারে সোফার কাছে এল তখনই দেখতে পেল ।
মেয়েটা মেঝেতে পড়ে আছে !
মারা গেছে ?
গুলি লেগেছিল তার শরীরে তবে সেটা মারা যাওয়ার মত স্থানে নয় । রক্ত পড়ছে ।
জ্যাকোবের মনে এতো চিন্তা করে লাভ নেই । মরুক বা না মরুক এখন সোজা মাথায় একটা গুলি করতে হবে । ব্যাস ঝামেলা শেষ । কাল ফ্লাইট ধরে দেশে ফিরে যাবে ।

জ্যাকোব পিস্তল তাক করল মেয়েটার মাথা বরাবর । তারপর যখনই ট্রিগার চাপতে যাবে তখনই পেছন থেকে আওয়াজ শুনতে পেল !
কেউ এসেছে ।
পেছনে ফিরে তাকাল।
আরিয়ানা !
ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে । চোখে সর‍ল দৃষ্টি ! খানিকটা বিরক্তি ! যেন এতো হইচই তার মোটেই পছন্দ হচ্ছে না । অবশ্য জ্যাকোবের কাজ করার ধরনই এমন । রাক ঢাক সে করে করে খুব কম । কারণ সে জানে যে তার পেছনে লোকজন আছে । তারা এই ব্যাপারটা সামলে দিবে ।
জ্যাকোব হাসল একটু । আরিয়ানার চোখের দিকে তাকিয়ে জ্যাকোব অনুভব করলো যে কিছু একটা যেন ঠিক নেই । আরিয়ানা একটু আগে যেখানে বিরক্তি মাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল সেখানে একটা তীব্র বিস্ময় এসে ধরা দিয়েছে ।
জ্যাকোবও টের পেল । ঠিক তার সামনে এসে কেউ দাড়িয়েছে । এতো ক্ষিপ্ত গতি !
জ্যাকোব ঘুরতে গেল কিন্তু সময় পেল না । তার আগেই ওর হাতের পিস্তলটা মিমি চেপে ধরলো । এবং অন্য হাত দিয়ে ওর বুকে সজোরে আঘাত করলো । আঘাতটা এতো তীব্র ছিল যে জ্যাকোব একেবারে উড়ে গিয়ে রেস্টুরেন্টের উল্টোদিকে পড়ল । স্পষ্টই বুঝতে পারল যে কোন না কোন হাড় ঠিকই ভেঙ্গেছে ।

আরিয়ানা পিস্তল বের করল সাথে সাথে । ওর দিকে তাক করে গুলি করতে যাবে কিন্তু তখনই আবিস্কার করলো যে মিমি তার একেবারে কাছে চলে এসেছে । একেবারে নাকের কাছে । এতো গতি !
বিস্ময়ের চোখে কেবল তাকিয়ে রইলো । ওর আর কিছুই করার ছিল না । মিমি ওকে অবশ্য খুব বেশি জোড়ে আঘাত করলো করলো । বাম হাত দিয়ে আগে পিস্তলটা ধরলো । সেটা এক টানে কেড়ে নিয়ে অন্য হাত দিয়ে একটা চড় মারলো গালে । এক পাশে ছিটকে পড়ল সে ।

মিমি রেস্টুরেন্ট থেকে বের হল । কাধের ক্ষতের দিকে তাকাল । সেখান থেকে আর রক্ত পড়ছে না । এমন কি একটু যে তীব্র ব্যাথা করছিল সেটাও করছে না । অবশ্য গুলিটা খুব বেশি ভাল ভাবে লাগে নি । কেবল শরীরের কিছু অংশে লেগে কিছু মাংস উড়িয়ে নিয়ে গেছে ।

মিমি দ্রুত এগিয়ে চলল । যদিও মিমি জানে যে ওর সাথে মোকাবেলা করার ক্ষমতা এদের নেই তারপরেও মিমি পালাতে লাগল । ওকে পালিয়ে যেতে হবে আপাতত । একবার যখন হামলা হয়েছে আবারও হবে । এর পরের বার হয়তো আরও বড় ভাবে হামলা করবে তারা !

দুই
মিমির উপরে হামলার পরে দুইদিন কেটে গেছে । সে প্রথমে ভেবেছিল যে পালিয়ে যাবে কিন্তু কেন জানি যে পালিয়ে যায় নি । নিজের বাসাতেই রয়েছে । সেদিন বাসায় এসে যখন নিজের শরীর থেকে জামা খুলল ক্ষতের অবস্থা দেখার জন্য অবাক হয়ে দেখল যে কোন ক্ষতই নেই । পুরোটা মিলিয়ে গেছে একেবারে । সাথে সাথে গলা থেকে টেনে কলারটা খুলে ফেলল সে । শরীর শান্ত হয়ে এল একটু পরেই ।
এরপর দুইদিন সে বাসা থেকে বের হল না । তবে সাবধান থাকল । সেদিন মেয়েটার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া পিস্তল টা তার কাছেই রয়েছে । এবং সব থেকে বড় কথা হচ্ছে কলারটা এবার সে হাত ছাড়া করলো না । সে চাক বা না চাক এই কলারটাই এখন তার জীবন রক্ষা করবে । অন্য উপায় নেই এখন ।

আজকে রাতে মিমি ওদের বাসার সামনের পার্কে এসেছে । বাসার সামনেই । রাত প্রায় বারোটা বাজে । এই সময়ে পুরো পার্কটাই ফাঁকা । তবে মিমি জানে তারা আছে । সে অনুভব করতে পারছে । যদিও গলায় কলার নেই । সেটা থাকলে হয়তো আর ভাল ভাবেই সে বুঝতে পারতো তাদের উপস্থিতি । এতোদিন পর্যন্ত এখনও তারা একবারের জন্য তাদের সামনে আসে নি ।
মিমি এবার খানিক টা চিৎকার করে বলল, কোথায় তোমরা ! সামনে এসো !

কেউ এগিয়ে এল না । মিমি আরও কিছু সময় অপেক্ষা করল। তারপর পকেট থেকে কলারটা বের করল। সেটা দেখিয়ে বলল, যদি সামনে না আসো তাহলে এটা আমি এখন পুড়িয়ে ফেলব । তোমার প্রিয় রাজার ঘুম ভাঙ্গবে না ।

তখনও কেউ এল না । এবার মিমি সত্যি সত্যিই দিয়াশলাই বের করে যখন আগুণ ধরালো তখন একটা গম্ভীর আওয়াজ শোনা গেল ।
-কোন লাভ হবে না । ওটা পুড়বে না।
-কে কথা বলে?
-সেটা তোমার না জানলেও চলবে না । তুমি জানো যে ওটা তোমার দরকার । ওটা ছাড়া তুমি টিকে থাকতে পারবে না । চার্চের লোকজন তোমাকে এম্রে ফেলবে !

তা অবশ্য ঠিক । এই কলারের শক্তি ছাড়া আসলেই ওর টিকে থাকা একটু কষ্টের হয়ে যাবে । মিমি আবার বলল, সামনে এসো । আমি জানি তোমরা আমার শত্রু নও । আমিও তোমাদের শত্রু নই ।

তখন দেখতে পেল তাদের । সব মিলিয়ে দশ বারজন । মিমি ভেবেছিল ভয়ংকর কিছু দেখবে কিন্তু সবাই মানুষই । কোণ পার্থক্য নেই । কেবল চোখ ছাড়া । চোখ গুলো লাল । একজন মধ্য বয়স্ক পুরুষ এগিয়ে এল সামনে । ওর দিকে তাকিয়ে বলল, আমার নাম ফরহাদ । আমি এই এলাকার প্রধান ।
মিমি বলল, এলাকা ! আপনাদের এলাকা ভাগ আছে নাকি?
-হ্যা আছে । আমাদের বলা হয়েছে তোমার উপরে সর্বাক্ষণিক নজর রাখতে ।
-মানে আমাকে রক্ষা করতে । তাই তো ।
-হ্যা ।
-দেখো এই সব ঝামেলা থেকে আমি মুক্তি চাই । এই কলার নিয়ে যাও অন্য কাউকে দিয়ে দাও !
-এমন করে হয় না ।
-কেন হবে না?
-অন্য কারো সাথে এটা আর কাজ করবে না । এটা তোমার শরীরের একটা অংশ এখন । আমাদের রাজা তোমাকেই নির্বাচন করেছে । তুমি ছাড়া তাকে আর জাগিয়ে তোলা সম্ভব না । এই কারণে তুমি আমাদের কাছে সব থেকে মূল্যবান ।
মিমি কিছু সময় তাকিয়ে রইলো। মনে মনে চিন্তা করছে কিছু । সে জানে তার জীবন আর আগের মত হবে না । আগের মত করে সে আর চলাফেরা আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে না কোন দিন ।
মিমি বলল, আমাকে কী করতে হবে?
-তোমাকে আমাদের কিংয়ের ঘুমন্ত কফিনটা খুজে বের করতে হবে?
-মানে তোমরা জানো না সেটা কোথায়?
-না আমরা কেউ জানি না। তার নিজের নিরাপত্তার জন্যই সেটা কাউকে জানানো হয় নি । তবে তুমি ঠিক ঠিক বের করতে পারবে ।
-আর আমি যদি সেটা না করি । মানে ধর আমি খোজার চেষ্টাই করলাম না ! তখন?

মিমি খেয়াল করলো ফরহাদ নামের লোকটা একটু যেন ইতস্তর করলো । সে যেন ঠিক মত বুঝতে পারে নি । এমন যেন হওয়ার কথা না । ফরহাদ বলল, এমন তো হওয়ার কথা না !
-কোনটা হওয়ার কথা না ?
-তোমার নিজেরই আগ্রহ থাকার কথা সব থেকে বেশি । গলায় কলারটা পরার সাথে সাথে তোমার তীব্র আকর্ষণ সৃষ্টি হওয়ার কথা !
-কিন্তু আমার তো এমন কিছু হচ্ছে না ! বরং মনে হচ্ছে এসব ঝামেলা শেষ হলে বাঁচি !

ফরহাদ এবার আরো বিস্ময় নিয়ে তাকালো মিমির দিকে । ঠিক মত যেন কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে ।
-না। কোন মেয়ের পক্ষে তার আকর্ষণ এড়ানো সম্ভব না ।
-আমি তো পারছি । আরেক আমাকে বলেছিলো যে গলা থেকে কলার খুলে ফেললেই নাকি আমি তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাবো । অথচ দেখো আমার কিছুই হয় নি । আমি একদম স্বাভাবিক আছি ! ফরহাদ যেন কিছু বোঝার চেষ্টা করছে কিছু যেন মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করছে কিন্তু ঠিক মত বুঝতে পারছে না । কিছু হিসাব যেন সে মেলাতে পারছে না । তার জানা মতে তাদের ঘুমন্ত রাজার কলার একবার যে মেয়ে পরবে সে একেবারে ছুটে চলে যাবে তার কাছে । তাকে খুজে বের করার একটা তাগিদ নিজ থেকে অনুভব করবে সে । কিন্তু এই মেয়ের ভেতরে তেমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না । এমন কি হতে পারে?
ফরহাদ কেবল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো?
মিমি নামের যে মেয়েটা তার সামনে দাড়িয়ে আছে তার ভেতরে কি সেই ক্ষমতা আছে?
যদি সত্যিই থাকে তাহলে সত্যিই বিপদের কথা !

আগের পর্বপরের পর্ব

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 36

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →