দ্যা স্লিপিং কিং (পর্ব দুই)

oputanvir
4.8
(29)

কলারটা পাওয়ার পরে মাস খানেক কেটে গেছে । এই কদিনে মিমির জীবন একেবারে বদলে গেছে । ওর সুস্থ স্বাভাবিক জীবনটা একেবারে এলোমেলো হয়ে গেছে । অফিসে যাওয়া বন্ধ কয়ে দিয়েছে কয়েক দিন । অফিসে রিপোর্ট জমা দিয়ে কয়েক দিনের জন্য ছুটি নিয়েছে । । সারা টা সময় কেবল মনে হয় কেউ যেন ওর দিকে চোখ রাখছে । দিনের বেলা এই অনুভূতিটা একটু কম থাকে তবে রাত হলেই এটা বাড়ে । তখন মনে হয় একটা তীব্র চোখ ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে । নিজের এতো শান্তির ঘরটাও ওর কাছে কেমন যেন অনিরাপদ মনে হয় । এই সব কিছু শুরু হয়েছে ঐ অদ্ভুত ঐ চামরার কলারটা পরার পরেই ।

সেদিন গলাতে ওটা পরার পরেই শরীরের ভেতরে একটা তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় । তীব্র একটা আন্দোলন শুরু হয় পুরো শরীর জুড়ে যার ধকল মিমি সহ্য করতে পারে নি । জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলো । প্রথম দিনের হিসাবে সে প্রায় আট ঘন্টা অজ্ঞান ছিল। পরে অবশ্য সময়টা কমে এসেছে । এক সপ্তাহের ব্যবধানে এখন মিমি আর জ্ঞান হারায় না । তবে ওটা পরার পরপরই শরীরের ভেতরে একটা ঝাকুনি ঠিকই অনুভব করে । পুরো শরীরে বিশেষ করে রক্তের ভেতরে এই কাপনটা অনুভব করে বেশি করে ।

এই কলারের ভেতরে কোন অলৌকিক শক্তি রয়েছে । কী শক্তি আছে সেটার সম্পর্কে মিমির কোন ধারণা নেই তবে ওটা গলাতে পরলেই ওর পুরো শরীরের ভেতরে কিছু একটা পরিবর্তন আছে । আর সেই সাথে কলারটা পরে থাকার একটা সুতীব্র আকাঙ্খা সব সময় মিমির ভেতরেই জেগে থাকে ।
কলার পরার পরেই মিমির কাছে পুরো পৃথিবীটা অন্য রকম লাগে । বুকের ভেতরে হার্টবিট বেড়ে যায় অনেক গুণে । তার দৃষ্টিশক্তি শ্রবণ শক্তি এবং নিজের শরীরের শক্তিও বৃদ্ধি পায় অনেক গুলো । গতকাল রাতে সে এই কলার পরেই বাইরে বের হয়েছিলো । এতো জোরে দৌড়েছিলো যে নিজের কাছেই অবাক হয়ে গিয়েছে । এই কলারের ভেতরে কিছু অস্বাভাবিক শক্তি রয়েছে মিমি সেটা বুঝতে পেরেছে ।

তবে সব থেকে বড় কথা হচ্ছে গতকাল এই কলার পরেই সে রাতে ঘুমিয়েছিলো । এবং ঘুমানোর পর থেকেই একটা অদ্ভুত স্বপ্ন সে দেখেছে । কেউ যেন তাকে ডাকছে । বারবার তার কাছে যেতে বলছে । কে তাকে ডাকছে সেটা সে জানে না । কোন একটা প্রাচীন কালের প্রাসাদ দেখা যাচ্ছে ভাসা ভাসা । আর তার নাম ধরেই ডাকছে । ডাকটা এমন আকর্ষনীয় যে মিমি মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে সেটার দিকে দৌড়াচ্ছিলো । যখন তার ঘুম ভাঙ্গে তখন থেকেই সেই ডাকের কথাই চিন্তা করছে সে । কিছুতেই তাকে মন থেকে দুর করে দিতে পারছে না

আজকে দুপুর বেলা বাইরে বের হল মিমি । সুপার সপ থেকে কিছু কেনাকাটা করতে হবে । কলারটা পরেি বের হল । গলির মোড় থেকে সামনে এগোতেই লোকটাকে দেখতে পেল সে । গত দুইদিন ধরেই লোকটা সে দেখছে । লোকটা ওর পিছু পিছু সব জায়গাতে যাচ্ছে । এই কারণেই আজকে কলার পরেই সে বাইরে বের হল । ওর মনের ভেতরে এই ভয় যে যদি কোন ঝামেলা হয় তাহলে দ্রুত সে নিরাপদ স্থানে পালিয়ে যেতে পারবে । যাই হোক না কেন ওর মত দ্রুত কেউ দৌড়াতে পারবে না ।

জিনিস পত্র কেনা শেষ হলে যখন সে বিল দিতে যাবে তখন অবাক হয়ে খেয়াল করলো যে সেই লোকটা ঠিক সামনে দাড়িয়েছে । বুকের ভেতরে একটা হার্টবিট যেন মিস হল মিমির । পরক্ষণেই খুব দ্রুত সেটা লাফাতে শুরু করলো । হয়তো দুই দিন থেকে সে খেয়াল করেছে তবে তারও আগের থেকে লোকটা ওকে হয়তো ফলো করছে । এতোদিন দুর থেকেই ওর উপর নজর রাখতো তবে আজকে এতো কাছে চলে এসেছে ।

মিমি চারিদিকে তাকালো । পুরো সুপার সপে লোক জনে ভর্তি । এর ভেতরে লোকটা ওকে কিছু করতে পারবে না । তবে সুপারসপ থেকে বের হলে হয়তো আবার ঝামেলা হতে পারে । হয়তো ওদের লোকজন অপেক্ষা করে থাকবে বাইরে । ওকে তুলে নিয়ে যাবে !
কিন্তু কেন ?
যাই হোক না কেন ওর কলাতে পরা কলারের যে এটার সাথে কোন সম্পর্ক আছে সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই । ওর এখন এই কলারটা থেকে নিজেকে দুরে রাখা উচিৎ । সে জানে এটাই সম্ভবত সব থেকে সঠিক উপায় । কিন্তু মিমির কোন ভাবেই এই কলারটা হাত ছাড়া করতে ইচ্ছে করছে না । কেবলই মনে হচ্ছে এটা ওর নিজের জিনিস । কেবল ওর নিজের এটার উপর অধিকার আছে !

মিমির মনে দ্রুত চিন্তার ঝড় চলল । এখন ওর কী করা উচিৎ !!

তখনই ওর মোবাইলটা টুং করে বেজে উঠলো । মেসেজ এসেছে ।

মোবাইলটা বের করেই দেখলো অপরিচিত নম্বর থেকে একটা মেসেজ !

মিস মিমি, আপনার সামনে ভয়ানক বিপদ । আপনার ঠিক সামনেই আমার লোক দাড়িয়ে ।

মিমির বুঝতে অসুবিধা হল না ওর উপর আসলেই নজর রাখা হচ্ছে । যেহেতু ওর ফোন নম্বর ওরা জানে তার মানে সব কিছুর খবর তারা ইতিমধ্যেই নিয়ে নিয়েছে । এখন ওর কী করা উচিৎ ?
পালিয়ে যাবে?
কোথায় যাবে?
পুলিশের কাছে ?

মিমির এক বন্ধু এএসপি । তবে সে ঢাকার বাইরে থাকে । ওর কাছে গেলে কি কোন সাহায্য পাওয়া যাবে । কিন্তু সেই পর্যন্ত কি মিমি যেতে পারবে ?

আবারও মেসেজ এলো ।

প্লিজ পালানোর চেষ্টা করবেন না । এটা আপনার জন্য খারাপ হবে । আমি কেবল আপনার সাথে কথা বলতে চাই । আপনার নিজের ভালর জন্যই আপনার জানা উচিৎ আপনি কোন বিপদের ভেতরে আছেন।

মিমি আসলেও জানে না যে ওর সামনে কী বিপদ রয়েছে । তবে কোন বিপদ যে রয়েছে সেই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই । যদি আসন্ন বিপদ সম্পর্কে জানা যায় তাহলে সেটা মোকাবেলা করা সহজ হবে আরো ।

মিমির এখন কী করা উচিৎ ?
আবারও মেসেজ এসে হাজির হল ।

আমি এই সুপার সপের উপরের ক্যাফেতে বসে আছি । দয়া করে আমার কথাটা শুনুন।

মিমির ব্যাপার সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হল । উপরের ক্যাফেতে সে আগেও গিয়েছে । সেখানেও লোকজন থাকবে । আর যাই হোক এতো লোকের ভেতরে এরা কিছু করতে পারবে না ।

কাউন্টারে বিল দিয়ে সে সোজা উপরের ক্যাফের দিকে পা বাড়ালো । ওর সামনে যে লোকটা ছিল তাকে কোথাও দেখতে পেল না সে । ওর আগেই বিল দিয়ে বাইরে বের হয়ে গেছে । সম্ভবত বাইরেই কোথাও অপেক্ষা করছে ।

মিমি ধীর পায়ে ক্যাফেতে ঢুকলো । বেশ কয়েকজন রয়েছে ক্যাফেতে । মিমির চোখ তখন গেল একেবারে কোনার দিকের একটা টেবিলে । একজন উল্টোদিকে মুখ করে বসে রয়েছে । মিমিকে বলে দিতে হল না যে এই মানুষটার সাথেই ওকে দেখা করতে হবে । সেদিকেই পা বাড়ালো সে ।

দুই

মিমি লোকটার দিকে কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো । ঠিক লোক বললে ভুল হবে । যুবক । দেখতে শুনতে বেশ চমৎকার । চোখের ভেতরে একটা অস্বাভাবিক ভাব রয়েছে । এতো তীক্ষ্ণ চোখ সে আগে কখনও দেখেছে বলে মনে করতে পারে না । মিমি বলল, তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছে আমি এখন ভ্যাম্পায়ার হয়ে গেছি?
-থিউরি অনুযায়ী তাই ।
-কই আমার তো কারো রক্ত খেতে ইচ্ছে করছে না !
-কারণ আপনি কারো বাইটে ভ্যাম্পায়ার হন নি । আপনি হয়তো খেয়াল করেন নি আপনার গলার ঐ কলারটা এখন আর ঠিক মত দেখা যাচ্ছে না । ওটা আপনার শরীরের সাথে আটকে গেছে । বুঝতে পেরেছেন কি?

মিমির হাত গলাতে চলে গেল । এবং নিজেই অবাক হয়ে খেয়াল করে দেখলো যে সেখানে সে খুব পাতলা মিহি একটা কিছুর অস্থিত্ব সে অনুভব করছে ।
সামনে বসা যুবক বলল, সামনে দিন যত যাবে তত বেশি আপনার শরীরের সাথে ওটা আটকে যাবে । আর কখনও আলাদা করা যাবে না । আর আপনি এই নতুন অবস্থার সাথে এতোটাই অভ্যস্ত হয়ে যাবেন যে আপনি ওটা ছাড়া চলতে পারবেন না । ইতিমধ্যে যদিও অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে । এটা যদি আপনি এখন খুলতে যান তাহলে দুইদিক দিয়ে বিপদ ।
-দুই দিক দিয়ে?
-হ্যা । ওটা খুলে ফেলার পরে একটা তীব্র শারীরিক ইফেক্ট আপনাকে পেয়ে বসতে । সেটা হয়তো কাটিয়ে নাও উঠতে পারেন আপনি । আর যদি কাটিয়ে উঠেও ফেলেন তাহলে দ্বিতীয় ফলটা হবে আরো ভয়ানক । আপনাকে হত্যা করার জন্য একদল লোক ইতিমধ্যে বের হয়ে গেছে । আপনার কাছে যদি এই শক্তি না থাকে তাহলে কোন ভাবেই ওদের সাথে আপনি পেরে উঠবেন না । আপনার নিজ প্রয়োজনেই এখন রায়ানের এই কলার পরে থাকতে হবে সব সময় । বুঝতে পেরেছেন কি?
-রায়ান!
-হ্যা । ভ্যাম্পায়ার কিং । আপনি তার কলার পরে আছেন । এবং আপনিই কেবল তাকে আবার পুনরায় জাগিয়ে তুলতে পারেন !

মিমি কিছু সময় চুপ করে রইলো । সব কিছু যেন তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে । সব কেমন যেন তার কাছে গল্পের মত মনে হচ্ছে । এমন কি হতে পারে কখনও ! কী সব আজগুবি কথা বার্তা বলতে সামনে বসা এই যুবক । সে নাকি এখন ভ্যাম্পায়ার । তার গলাতে পরানো আছে একটা ভ্যাম্পায়ারের কলার ।
-রায়ানের আবার জেগে ওঠা ঠেকাতে একদল সক্রিয় আছে সব সময় । তারা কোন ভাবেই চায় না যে সেই ভয়নাক ভাম্পায়ার আবার জেগে উঠুক । এর জন্য তারা সামনে আসা যে কোন পথ বেঁছে নিবে । আর বর্তমানে তাকে জাগিয়ে তোলার ক্ষমতা কেবল মাত্র আপনার রয়েছে। তাই আপনাকে পথ থেকে সরানোর চেষ্টা তারা করবেই । তবে …
-তবে ?
-তবে সাহায্যও পাবেন ।
-কার কাছ থেকে ?
-যারা চায় আপনিরায়ানকে জাগিয়ে তোলেন !
-কারা চায়? আপনি নিশ্চয়ই বলবেন না যে ভ্যাম্পায়ার দল আমার পাশে পাশে আমাকে রক্ষার জন্য পাহাড়া দিচ্ছে ।

যুবক হাসলো । তার হাসিতেই বলে দিল মিমি যা বলেছে সেটা মোটেও মিথ্যা নয় । যুবক বলল, তবে তারা দিনের বেলা আসতে পারবে না । আপনি নিশ্চয়ই একটা অনুভূতি টের পেয়েছেন যে রাতের বেলা আপনার উপর চোখ রাখা হচ্ছে । নয়কি ?

মিমি সেটা অস্বীকার করতে পারলো না । রাতের বেলা সত্যিই তার এমন একটা অনুভূতি হয় ।
-ওরা রাতের বেলা আপনার উপর চোখ রাখে । যাতে আপনার কোন ক্ষতি না হয় । এই কারণ আপনার উপর হামলা কখনো রাতে হবে না । হবে দিনের বেলা । তাই সাবধান থাকবেন । সম্ভব হলে প্রতিনিয়ত স্থান পরিবর্তন করবেন ।
-আমি যদি পুলিশের কাছে যাই ?
-গিয়ে কী বলবেন? আপনার এই গল্প বিশ্বাস করবে কেউ ?
-না !

মিমির মনে কত কিছু চলছে ! তখনই সে খেয়াল করলো ব্যাপারটা । সামনে বসা মানুষটার হার্টবিট সে শুনতে পাচ্ছে না । অন্য সবার হার্ট বিট শুনতে পেলেও সামনে বসা মানুষটার কিছুই সে বুঝতে পারছে না ।

যুবক বলল, আপনি চাইলে রায়ানকে জাগিয়ে তুলতে পারেন । এবং একটা কথা সব সময় মনে রাখবেন আমি তাকে জাগিয়ে তুলবেন তাই আপনার কাছে সকল ক্ষমতা থাকবে। রায়ানকে জাগিয়ে তোলার আগে এবং পরে !

-মানে?

-এখন আপনার মাথায় ঢুকবে না কিছুই তবে যদি তাকে জাগিয়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন তাহলে নিজেই বুঝতে পারবেন সব ।

আগের পর্ব পরের পর্ব

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 29

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →