দ্যা স্লিপিং কিং (পর্ব দুই)

oputanvir
4.8
(30)

কলারটা পাওয়ার পরে মাস খানেক কেটে গেছে । এই কদিনে মিমির জীবন একেবারে বদলে গেছে । ওর সুস্থ স্বাভাবিক জীবনটা একেবারে এলোমেলো হয়ে গেছে । অফিসে যাওয়া বন্ধ কয়ে দিয়েছে কয়েক দিন । অফিসে রিপোর্ট জমা দিয়ে কয়েক দিনের জন্য ছুটি নিয়েছে । । সারা টা সময় কেবল মনে হয় কেউ যেন ওর দিকে চোখ রাখছে । দিনের বেলা এই অনুভূতিটা একটু কম থাকে তবে রাত হলেই এটা বাড়ে । তখন মনে হয় একটা তীব্র চোখ ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে । নিজের এতো শান্তির ঘরটাও ওর কাছে কেমন যেন অনিরাপদ মনে হয় । এই সব কিছু শুরু হয়েছে ঐ অদ্ভুত ঐ চামরার কলারটা পরার পরেই ।

সেদিন গলাতে ওটা পরার পরেই শরীরের ভেতরে একটা তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় । তীব্র একটা আন্দোলন শুরু হয় পুরো শরীর জুড়ে যার ধকল মিমি সহ্য করতে পারে নি । জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলো । প্রথম দিনের হিসাবে সে প্রায় আট ঘন্টা অজ্ঞান ছিল। পরে অবশ্য সময়টা কমে এসেছে । এক সপ্তাহের ব্যবধানে এখন মিমি আর জ্ঞান হারায় না । তবে ওটা পরার পরপরই শরীরের ভেতরে একটা ঝাকুনি ঠিকই অনুভব করে । পুরো শরীরে বিশেষ করে রক্তের ভেতরে এই কাপনটা অনুভব করে বেশি করে ।

এই কলারের ভেতরে কোন অলৌকিক শক্তি রয়েছে । কী শক্তি আছে সেটার সম্পর্কে মিমির কোন ধারণা নেই তবে ওটা গলাতে পরলেই ওর পুরো শরীরের ভেতরে কিছু একটা পরিবর্তন আছে । আর সেই সাথে কলারটা পরে থাকার একটা সুতীব্র আকাঙ্খা সব সময় মিমির ভেতরেই জেগে থাকে ।
কলার পরার পরেই মিমির কাছে পুরো পৃথিবীটা অন্য রকম লাগে । বুকের ভেতরে হার্টবিট বেড়ে যায় অনেক গুণে । তার দৃষ্টিশক্তি শ্রবণ শক্তি এবং নিজের শরীরের শক্তিও বৃদ্ধি পায় অনেক গুলো । গতকাল রাতে সে এই কলার পরেই বাইরে বের হয়েছিলো । এতো জোরে দৌড়েছিলো যে নিজের কাছেই অবাক হয়ে গিয়েছে । এই কলারের ভেতরে কিছু অস্বাভাবিক শক্তি রয়েছে মিমি সেটা বুঝতে পেরেছে ।

তবে সব থেকে বড় কথা হচ্ছে গতকাল এই কলার পরেই সে রাতে ঘুমিয়েছিলো । এবং ঘুমানোর পর থেকেই একটা অদ্ভুত স্বপ্ন সে দেখেছে । কেউ যেন তাকে ডাকছে । বারবার তার কাছে যেতে বলছে । কে তাকে ডাকছে সেটা সে জানে না । কোন একটা প্রাচীন কালের প্রাসাদ দেখা যাচ্ছে ভাসা ভাসা । আর তার নাম ধরেই ডাকছে । ডাকটা এমন আকর্ষনীয় যে মিমি মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে সেটার দিকে দৌড়াচ্ছিলো । যখন তার ঘুম ভাঙ্গে তখন থেকেই সেই ডাকের কথাই চিন্তা করছে সে । কিছুতেই তাকে মন থেকে দুর করে দিতে পারছে না

আজকে দুপুর বেলা বাইরে বের হল মিমি । সুপার সপ থেকে কিছু কেনাকাটা করতে হবে । কলারটা পরেি বের হল । গলির মোড় থেকে সামনে এগোতেই লোকটাকে দেখতে পেল সে । গত দুইদিন ধরেই লোকটা সে দেখছে । লোকটা ওর পিছু পিছু সব জায়গাতে যাচ্ছে । এই কারণেই আজকে কলার পরেই সে বাইরে বের হল । ওর মনের ভেতরে এই ভয় যে যদি কোন ঝামেলা হয় তাহলে দ্রুত সে নিরাপদ স্থানে পালিয়ে যেতে পারবে । যাই হোক না কেন ওর মত দ্রুত কেউ দৌড়াতে পারবে না ।

জিনিস পত্র কেনা শেষ হলে যখন সে বিল দিতে যাবে তখন অবাক হয়ে খেয়াল করলো যে সেই লোকটা ঠিক সামনে দাড়িয়েছে । বুকের ভেতরে একটা হার্টবিট যেন মিস হল মিমির । পরক্ষণেই খুব দ্রুত সেটা লাফাতে শুরু করলো । হয়তো দুই দিন থেকে সে খেয়াল করেছে তবে তারও আগের থেকে লোকটা ওকে হয়তো ফলো করছে । এতোদিন দুর থেকেই ওর উপর নজর রাখতো তবে আজকে এতো কাছে চলে এসেছে ।

মিমি চারিদিকে তাকালো । পুরো সুপার সপে লোক জনে ভর্তি । এর ভেতরে লোকটা ওকে কিছু করতে পারবে না । তবে সুপারসপ থেকে বের হলে হয়তো আবার ঝামেলা হতে পারে । হয়তো ওদের লোকজন অপেক্ষা করে থাকবে বাইরে । ওকে তুলে নিয়ে যাবে !
কিন্তু কেন ?
যাই হোক না কেন ওর কলাতে পরা কলারের যে এটার সাথে কোন সম্পর্ক আছে সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই । ওর এখন এই কলারটা থেকে নিজেকে দুরে রাখা উচিৎ । সে জানে এটাই সম্ভবত সব থেকে সঠিক উপায় । কিন্তু মিমির কোন ভাবেই এই কলারটা হাত ছাড়া করতে ইচ্ছে করছে না । কেবলই মনে হচ্ছে এটা ওর নিজের জিনিস । কেবল ওর নিজের এটার উপর অধিকার আছে !

মিমির মনে দ্রুত চিন্তার ঝড় চলল । এখন ওর কী করা উচিৎ !!

তখনই ওর মোবাইলটা টুং করে বেজে উঠলো । মেসেজ এসেছে ।

মোবাইলটা বের করেই দেখলো অপরিচিত নম্বর থেকে একটা মেসেজ !

মিস মিমি, আপনার সামনে ভয়ানক বিপদ । আপনার ঠিক সামনেই আমার লোক দাড়িয়ে ।

মিমির বুঝতে অসুবিধা হল না ওর উপর আসলেই নজর রাখা হচ্ছে । যেহেতু ওর ফোন নম্বর ওরা জানে তার মানে সব কিছুর খবর তারা ইতিমধ্যেই নিয়ে নিয়েছে । এখন ওর কী করা উচিৎ ?
পালিয়ে যাবে?
কোথায় যাবে?
পুলিশের কাছে ?

মিমির এক বন্ধু এএসপি । তবে সে ঢাকার বাইরে থাকে । ওর কাছে গেলে কি কোন সাহায্য পাওয়া যাবে । কিন্তু সেই পর্যন্ত কি মিমি যেতে পারবে ?

আবারও মেসেজ এলো ।

প্লিজ পালানোর চেষ্টা করবেন না । এটা আপনার জন্য খারাপ হবে । আমি কেবল আপনার সাথে কথা বলতে চাই । আপনার নিজের ভালর জন্যই আপনার জানা উচিৎ আপনি কোন বিপদের ভেতরে আছেন।

মিমি আসলেও জানে না যে ওর সামনে কী বিপদ রয়েছে । তবে কোন বিপদ যে রয়েছে সেই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই । যদি আসন্ন বিপদ সম্পর্কে জানা যায় তাহলে সেটা মোকাবেলা করা সহজ হবে আরো ।

মিমির এখন কী করা উচিৎ ?
আবারও মেসেজ এসে হাজির হল ।

আমি এই সুপার সপের উপরের ক্যাফেতে বসে আছি । দয়া করে আমার কথাটা শুনুন।

মিমির ব্যাপার সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হল । উপরের ক্যাফেতে সে আগেও গিয়েছে । সেখানেও লোকজন থাকবে । আর যাই হোক এতো লোকের ভেতরে এরা কিছু করতে পারবে না ।

কাউন্টারে বিল দিয়ে সে সোজা উপরের ক্যাফের দিকে পা বাড়ালো । ওর সামনে যে লোকটা ছিল তাকে কোথাও দেখতে পেল না সে । ওর আগেই বিল দিয়ে বাইরে বের হয়ে গেছে । সম্ভবত বাইরেই কোথাও অপেক্ষা করছে ।

মিমি ধীর পায়ে ক্যাফেতে ঢুকলো । বেশ কয়েকজন রয়েছে ক্যাফেতে । মিমির চোখ তখন গেল একেবারে কোনার দিকের একটা টেবিলে । একজন উল্টোদিকে মুখ করে বসে রয়েছে । মিমিকে বলে দিতে হল না যে এই মানুষটার সাথেই ওকে দেখা করতে হবে । সেদিকেই পা বাড়ালো সে ।

দুই

মিমি লোকটার দিকে কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো । ঠিক লোক বললে ভুল হবে । যুবক । দেখতে শুনতে বেশ চমৎকার । চোখের ভেতরে একটা অস্বাভাবিক ভাব রয়েছে । এতো তীক্ষ্ণ চোখ সে আগে কখনও দেখেছে বলে মনে করতে পারে না । মিমি বলল, তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছে আমি এখন ভ্যাম্পায়ার হয়ে গেছি?
-থিউরি অনুযায়ী তাই ।
-কই আমার তো কারো রক্ত খেতে ইচ্ছে করছে না !
-কারণ আপনি কারো বাইটে ভ্যাম্পায়ার হন নি । আপনি হয়তো খেয়াল করেন নি আপনার গলার ঐ কলারটা এখন আর ঠিক মত দেখা যাচ্ছে না । ওটা আপনার শরীরের সাথে আটকে গেছে । বুঝতে পেরেছেন কি?

মিমির হাত গলাতে চলে গেল । এবং নিজেই অবাক হয়ে খেয়াল করে দেখলো যে সেখানে সে খুব পাতলা মিহি একটা কিছুর অস্থিত্ব সে অনুভব করছে ।
সামনে বসা যুবক বলল, সামনে দিন যত যাবে তত বেশি আপনার শরীরের সাথে ওটা আটকে যাবে । আর কখনও আলাদা করা যাবে না । আর আপনি এই নতুন অবস্থার সাথে এতোটাই অভ্যস্ত হয়ে যাবেন যে আপনি ওটা ছাড়া চলতে পারবেন না । ইতিমধ্যে যদিও অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে । এটা যদি আপনি এখন খুলতে যান তাহলে দুইদিক দিয়ে বিপদ ।
-দুই দিক দিয়ে?
-হ্যা । ওটা খুলে ফেলার পরে একটা তীব্র শারীরিক ইফেক্ট আপনাকে পেয়ে বসতে । সেটা হয়তো কাটিয়ে নাও উঠতে পারেন আপনি । আর যদি কাটিয়ে উঠেও ফেলেন তাহলে দ্বিতীয় ফলটা হবে আরো ভয়ানক । আপনাকে হত্যা করার জন্য একদল লোক ইতিমধ্যে বের হয়ে গেছে । আপনার কাছে যদি এই শক্তি না থাকে তাহলে কোন ভাবেই ওদের সাথে আপনি পেরে উঠবেন না । আপনার নিজ প্রয়োজনেই এখন রায়ানের এই কলার পরে থাকতে হবে সব সময় । বুঝতে পেরেছেন কি?
-রায়ান!
-হ্যা । ভ্যাম্পায়ার কিং । আপনি তার কলার পরে আছেন । এবং আপনিই কেবল তাকে আবার পুনরায় জাগিয়ে তুলতে পারেন !

মিমি কিছু সময় চুপ করে রইলো । সব কিছু যেন তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে । সব কেমন যেন তার কাছে গল্পের মত মনে হচ্ছে । এমন কি হতে পারে কখনও ! কী সব আজগুবি কথা বার্তা বলতে সামনে বসা এই যুবক । সে নাকি এখন ভ্যাম্পায়ার । তার গলাতে পরানো আছে একটা ভ্যাম্পায়ারের কলার ।
-রায়ানের আবার জেগে ওঠা ঠেকাতে একদল সক্রিয় আছে সব সময় । তারা কোন ভাবেই চায় না যে সেই ভয়নাক ভাম্পায়ার আবার জেগে উঠুক । এর জন্য তারা সামনে আসা যে কোন পথ বেঁছে নিবে । আর বর্তমানে তাকে জাগিয়ে তোলার ক্ষমতা কেবল মাত্র আপনার রয়েছে। তাই আপনাকে পথ থেকে সরানোর চেষ্টা তারা করবেই । তবে …
-তবে ?
-তবে সাহায্যও পাবেন ।
-কার কাছ থেকে ?
-যারা চায় আপনিরায়ানকে জাগিয়ে তোলেন !
-কারা চায়? আপনি নিশ্চয়ই বলবেন না যে ভ্যাম্পায়ার দল আমার পাশে পাশে আমাকে রক্ষার জন্য পাহাড়া দিচ্ছে ।

যুবক হাসলো । তার হাসিতেই বলে দিল মিমি যা বলেছে সেটা মোটেও মিথ্যা নয় । যুবক বলল, তবে তারা দিনের বেলা আসতে পারবে না । আপনি নিশ্চয়ই একটা অনুভূতি টের পেয়েছেন যে রাতের বেলা আপনার উপর চোখ রাখা হচ্ছে । নয়কি ?

মিমি সেটা অস্বীকার করতে পারলো না । রাতের বেলা সত্যিই তার এমন একটা অনুভূতি হয় ।
-ওরা রাতের বেলা আপনার উপর চোখ রাখে । যাতে আপনার কোন ক্ষতি না হয় । এই কারণ আপনার উপর হামলা কখনো রাতে হবে না । হবে দিনের বেলা । তাই সাবধান থাকবেন । সম্ভব হলে প্রতিনিয়ত স্থান পরিবর্তন করবেন ।
-আমি যদি পুলিশের কাছে যাই ?
-গিয়ে কী বলবেন? আপনার এই গল্প বিশ্বাস করবে কেউ ?
-না !

মিমির মনে কত কিছু চলছে ! তখনই সে খেয়াল করলো ব্যাপারটা । সামনে বসা মানুষটার হার্টবিট সে শুনতে পাচ্ছে না । অন্য সবার হার্ট বিট শুনতে পেলেও সামনে বসা মানুষটার কিছুই সে বুঝতে পারছে না ।

যুবক বলল, আপনি চাইলে রায়ানকে জাগিয়ে তুলতে পারেন । এবং একটা কথা সব সময় মনে রাখবেন আমি তাকে জাগিয়ে তুলবেন তাই আপনার কাছে সকল ক্ষমতা থাকবে। রায়ানকে জাগিয়ে তোলার আগে এবং পরে !

-মানে?

-এখন আপনার মাথায় ঢুকবে না কিছুই তবে যদি তাকে জাগিয়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন তাহলে নিজেই বুঝতে পারবেন সব ।

আগের পর্ব পরের পর্ব

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 30

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →