দ্যা স্লিপিং কিং

the sleeping king story
4.7
(32)

মিমি খুব সাবধানে বাক্সটা হাতে তুলে নিল । বাক্সটা এখানে কিভাবে এল সেটা ঠিক বুঝতে পারছে না । এই পুরানো বাড়ির বদ্ধ ঘরের দেয়ালের ভেতরে কারুকার্য করা বাক্সটা পাবে, সেটা সে ভাবে নি । বার কয়েক বাক্সটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলো সে । তারপর খানিকটা সময় চেষ্টা করলো খোলার তবে খুলতে পারলো না । অবশ্য হাত ধরেই বুঝেছিল যে এই জিনিসটা বেশ মজবুত । একে সহজে খোলা যাবে না । আরো কিছু সময় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলো । তারপর সেটা নিজের ব্যাক প্যাকের ভেতরে ঢুকিয়ে রাখলো । একবার মিমির মনে হল যে এই ছোট বাক্সটা সে বাড়ির মালিকটা ফেরৎ দিয়ে দিবে । তবে কেন জানি নিজের কাছেই এই চিন্তা বাতিল করে দিল ।
এখানে আসার আগেই সে সব খোজ খবর নিয়েই এসেছে। এই বাড়িটা কম করে হলেও দুইশ বছরের পুরানো। প্রায় একশ বছরের উপরে এখানে কেউ থাকে না । এভাবেই পড়ে আছে । কেবল পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে বাড়ির মালিকানা হাত বদল হয়েছে কেবল । কেউ এখানে এসে থাকে নি । আবার কেউ বিক্রিও করে নি ।
তবে এবার সম্ভবত বিক্রি হবে । এবং যে কোম্পানিটি কিনবে সেই কোম্পানিতেই মিমি কাজ করে । বাড়িটা কেনার আগে তাই ওকে পাঠানো হয়েছে সার্ভে করার জন্য ।
বাড়ির মালিকদের কেউই এখানে থাকে না । এখান থেকে একটু দুরে একটা ছোট গ্রাম রয়েছে । সেই গ্রামের একজন আছেন যে কিনা এখানকার কেয়ারটেকার । তবে সেও যে খুব একটা এখানে আসে টাসে না, সেটাই মিমির মনে হচ্ছে না । বাড়ির দেয়াল গুলো এখনও বেশ মজবুত রয়েছে । নতুন আবার থাম বানানোর দরকার পড়বে না । এগুলো রেখেই নতুন বিল্ডিং তোলা সম্ভব । মিমি দরকারি সব তথ্য নিয়ে নিল । অনেক ছবিও তুলল।
সব কাজ শেষ করতে করতে প্রায় বিকেল হয়ে গেল । কাজ শেষ করে গাড়ি নিয়ে চলে যাওয়ার আগে কি মনে হল আরেকবার সে বাড়ির ভেতরে ঢুকলো । তারপর সব থেকে কোনার ঘরের দেয়ালের দিকে এগিয়ে গেল । এর আগে যখন এসেছিলো তখনই খানিকটা খটকা লেগেছিলো অংশটা দেখে । আবার ফিরে এসে সেই জায়গা টুকু হাতের ছুরিটা দিয়ে খুড়লো । একটু খুড়তেই বের হয়ে এল বাক্সটা । মিমি আর কিছু না ভেবে ছোট বাক্সটা তুলে নিল ব্যাগে । তারপর নিজের গাড়ির দিকে হাটা দিল । আর তখনই তার অনুভূতি টা হল ।
চারিদিকে তাকালো মিমি । জায়গাটা একেবারে নির্জন হয়ে গেছে । যদিও অন্ধকার নামে নি তবে নামবে একটু পরে । পুরো দিনের ভেতরে কেবল দুইবার এই বাড়ির কেয়ারটেকার লোকটা এসেছিলো খাবার আর পানি দেওয়ার জন্য । আর কেউ আসে নি এই দিকে । পুরো দিনের ভেতরে মিমির একবারও মনে হয় নি যে এই এলাকাতে আর কেউ রয়েছে । তবে এখন কেন জানি ওর মনে হচ্ছে যে একা নয় ও । ওর সাথে এই বাড়ি এবং বাড়ির আশে পাশে কেউ না কেউ আছে ।
মিমি দ্রুত পা চালালো । গাড়ির কাছে যেতে ওর মনেও হল যে হয়তো গাড়িতে ওঠার আগেই কেউ ওর উপর ঝাপিয়ে পড়বে । শেষ কয়েকটা কদম বলা চলে মিমি এক প্রকার দৌড়েই চলল । গাড়ির ভেতরে ঢুকে যেন একটু শান্তি পেল । তারপর আর দেরি না কে গাড় স্টার্ট দিল । আপাতত আর থামা থামি নেই । সোজা ঢাকার পথে ।
গাড়িটা দু্রতু এগিয়ে চলছে । যদিও গ্রামের রাস্তায় খুব বেশি গাড়ি চালানোর উপায় নেই । মিমি চোখ সোজা পথে দিকে । অন্য কোন দিকে সে তাকাচ্ছে না । যদি সে তাকাতো তাহলে দেখতে পেত যে একটা কালো অয়োবয় খুব দ্রুত গাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দুরত্ব রেখে দৌড়ে চলেছে গাড়ির সাথে তাল মিলিয়ে দৌড়াতে তার মোটে কষ্ট হচ্ছে না।
মিমির সেদিকে খেয়াল নেই । সে সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে । ব্যাগের ভেতরে যে যে বাক্সটা যে পেয়েে তার ফলে যে তার পুরো জীবন এখন বদলে যেতে বসেছে সেটার ব্যাপার মিমির কোন ধারণা নেই ।

দুই

প্রার ঘন্টা খানেক চেষ্টা করলো মিমি । তারপর গিয়ে বক্সটা খুলল । সত্যি বলতে কি রীতিমত বাক্সটা ভেঙ্গে ফেলতে হল ওকে । এছাড়া আর কোন ভাবেই সেটা খোলার পথ ছিল না । কিন্তু যখন শেষ পর্যন্ত বাক্সটা খোলা হল ভেতরের জিনিসটা দেখে মিমি সত্যিই হতাশ হল । মিমি ভেবেছিলো ভেতরে কোন মূল্যবান জিনিস থাকবে । কিন্তু সেখানে কোন মূল্যবান জিনিস ছিল না । অন্তত হাতে নিয়ে মোটেও সেটা কোন মূল্যবান জিনিস মনে হল না । চামড়ার একটা গলার হাত । অনেকটা বর্তমান সময়ের মেয়েদের চোকার নেকলেসের মত দেখতে । পেছন দিক দিয়ে আটকানোর সিস্টেম রয়েছে । এছাড়া আরেকটা জিনিস মিমির বেশ অবাক মনে হল । বাক্সটের ভেতরটা ছিল বায়ু নিধোরক । যে মানুষই এটা তৈরি করেছে সে চেয়েছে জিনিসটা যেন নষ্ট না হয়ে যায় । জিনিসটা তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল অথচ মিমির কাছে এটা একটা সাধারণ গলার চোকার নেকলেস ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না ।

আরেকবার ভাল করে নেড়ে চেড়ে দেখলো মিমি সেটা । চামড়াটা মোটেই কোন পশুর চামড়া নয় । একটু নরম বটে । রংটা অনেকটাই মানুষের শরীর রংয়ের মত । মিমি নিজের হাতের কাছে এনে সেটা দেখলো । এটা যদি গলায় পড়ে তাহলে দুর থেকে বোঝা যাবে না যে কিছু গলাতে কিছু পরেছে কিনা ! কৌতুহল থেকেই মিমি আয়নার সামনে দাড়িয়ে চোকার বা কলারটা পরলো নিজের গলাতে । তারপর আয়নার দিকে তাকালো ।

মিমির মনে হল যেন গলার সাথে যেন একেবারে সেট হয়ে গেল । যেন ওর নিজের জন্যই এই কলার নেকলেসটা বানানো হয়েছে । আপন হাতে একবার ছুয়ে দিল সেটা । এবং সেই মুহুর্তেই ঘটনা ঘটলো । মিমির মনে হল যেন কলারটা একটু নড়ে উঠলো । একটু চমকে গেল সাথে সাথে । তবে সামলে নিলো নিজেকে । এই চামড়ার কলারটা কোন ভাবেই নড়তে পারে না । এটা তার মনের ভুল ছাড়া আর কিছুই নয় । কিন্তু কয়েক কয়েক মুহুর্ত পরেই আবারও ঘটলো । পুরো কলারটা যেন একটু কেঁপে উঠলো । সেই সাথে মিমি অনুভব করলো যে ওর গলাতে যেন সুক্ষ একটা ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। মশা কামড়ালে কিংবা খুব সরু সুই ফুটলে যেমন ব্যাথা হয় ঠিক সেই রকম ব্যাথা ।

মিমি দ্রুত গলা থেকে সেটা খুলে ফেলতে উদ্যোত হল । আর তখনই তীব্র বিস্ময় নিয়ে লক্ষ্য করলো যে কলারটা যেন তার গলাতে চাপ দিচ্ছে । একেবারে এটে বসছের গলাতে । মিমি মরিয়া হয়ে সেটা খুলে ফেলতে চাইলো কিন্তু মিমির মনে হল যেন সেটা একেবারে চামড়ার সাথে এটে বসেছে । মিমির এক সময়ে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হল । দম বন্ধ হয়ে আসছে মিমির । এবং এক সময়ে মিমি জ্ঞান হারিয়ে নিজের ঘরের মেঝেতে পড়ে গেল ।

তিন

ধীরে ধীরে চোখে মেলে তাকালো মিমি । নিজের ঘরের সিলিংটা চিনতে পারলো । বেশ কিছু সময় মেঝেতে একই ভাবে শুয়ে রইলো । মনে করার চেষ্টা করলো আসলে একটু আগে কী হয়েছে ।
তারপরেই উঠে বসলো । চোখ গেল আয়নার দিকে । তখনও ওর গলাতে সেই কলারটা পরাই আছে । তবে সেটা এতো সুক্ষ ভাবে ওর গলার সাথে আটকে আছে যে খুব গভীর মনযোগ না দিলে সেটা বোঝা যায় না । মিমির বিস্ময় কাটছে না যেন । তার হাত আপনাআপনি সেটার উপর চলে গেল । এবং তখনই অনুভব করতে পারলো ও ।

ওর পুরো শরীরে একটা অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে । খুব তীব্র ভাবে ওর নিজের হৃদপিণ্ডটা লাফাচ্ছে । সব কিছু কেমন যেন অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে ! চারিদিকের সব কিছু যেন খুব বেশি উচ্চ স্বরের মনে হচ্ছে । সব কিছু যেন সে শুনতে পাচ্ছে । নিজের হৃদপিণ্ডের আওয়াজটা এতো পরিস্কার আর এতো জোর আর কখনই মনে হয় নি ।

তখনই সে পায়ের আওয়াজ শুনতে পেল । কেউ সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে আসছে । সেই ঠকঠক পায়ের আওয়াজ । আওয়াজটা এসে থামলো তার ফ্ল্যাটের সামনে । এবং তারপরেই কলিংবেলটা বেজে উঠলো । মিমি যেন জানতোই এখনই বাজবে কলিংবেল ।

কিভাবে টের পেল !

এমন কি মিমি দরজার ওপাশে যে মানুষটা দাড়িয়ে আছে তার হৃদপিণ্ডের আওয়াজ পর্যন্ত মিমি শুনতে পাচ্ছে !
কিভাবে পাচ্ছে ?
আর কেন পাচ্ছে ?

তখনই আয়নাতে চোখ গেল !
নিজের দিকে চোখ যেতেই বুঝতে পারলো না ।

ওর গলাতে বসে থাকা কলারটা !

এমনটা হওয়ার কোন মানে নেই । এমনটা হতে পারে না কোন ভাবেই । কিন্তু মিমি খুব ভাল করেই জানে যে এমনটাই হচ্ছে ।
মিমি নিজের গলাতে হাত দিলো । তারপর পেছন থেকে লকটাতে হাতে টান দিতেই সেটা চট করে খুলে গেল ।
সাথে সাথেই সব কিছু যেন বন্ধ হয়ে গেল ।

সকল আওয়াজ সব স্পন্দন থেকে আবারও সব স্বাভাবিক হয়ে গেল আগের মত !

এক ভাবে তাকিয়ে রইলো সে কলারটা দিকে । আরেকবার পরবে কিনা ভাবছে এমন ভাবনায় ছেদ পড়লো কলিংবেলের আওয়াজে । দরজার কলিংবেলের আওয়াজ ছাড়া আর কোন আওয়াজ নেই এখন । মিমি উঠে দাড়ালো । শরীরটা একটু যেন ভারভার মনে হচ্ছে । তবে সেটা কাটিয়ে উঠে দরজা খুলতে এগিয়ে গেল সে। মনের ভেতরে চিন্তার ঝড় চলছে ।
এমনটা কিভাবে হল সেটা সে তখনও বুঝতে পারছে না ।

পরের পর্ব

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 32

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →