ফ্রি বিয়ার ইফেক্ট

oputanvir
4.9
(57)

এক

এই হোটেলে থাকতে এসে তন্বী যে এভাবে বিপদে পড়ে যাবে সেটা ভাবতেও পারে নি । ও যে নিজে এমন একটা বোকামী করবে আর তার ফলশ্রুতিতে এমন কিছুর সম্মুখীন হতে হবে, সেটা তন্বীর মনে কোনদিন আসে নি । ছেলেটা তন্বীকে করিডোরের দেওয়ালের সাথে চেপে ধরেছে । তন্বী কিছুক্ষণ চেষ্টা করে দেখেছে নিজেকে ছাড়ানোর কিন্তু কিছুতেই পারে নি ।
ছেলেটা ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
-কি ব্যাপার কথা বলছো না কেন ? আমার রুমে কেন ঢুকেছিলে আর পালাচ্ছিলেই বা কেন ?
তন্বীর চোখ বেয়ে পানি নেমে আসতে চাইলো । খুব চেষ্টা করে কোনমতে সেটা আটকে রেখেছে । তন্বী কোনমতে বলল,
-বিশ্বাস করুন আমি ইচ্ছে করে ঢুকিনি । একটু আগে আমি একটু বিয়ার খেয়েছিলাম হোটেলের পাব থেকে । মাথাটা কেমন চক্কর দিতে শুরু করে । আমি আসলে আপনার রুমে ভুল করে ঢুকে পড়েছি ।
যুবক ছেলেটা এবার আরও কঠিন কন্ঠে কিছু বলতে যাবে তখনই একটা দরজা খোলার আওয়াজ হল । আশেপাশের কোন রুমের দরজা খুলে গেল । তন্বী আর যুবক – দুজনেই সেদিকেই তাকালো । দরজাতে একটা মেয়ের চেহারা দেখা গেল । সাথে সাথেই তন্বী অনুভব করলো যে ছেলেটার হাতের চাপ খানিকটা নরম হয়ে এসেছে । মেয়েটার চোখে খানিকটা বিস্ময় দেখা গেল । তারপর মুখ দিয়ে একটাই কথা বের হয়ে এল !
মেয়েটি বলল,
-ফারিজ ! তুমি এখানে ?
তন্বী খেয়াল করলো যুবকটা ওকে ছেড়ে দিয়ে একটু সোজা হয়ে দাঁড়ালো । সামনের যুবকের নাম তাহলে ফারিজ ! ফারিজ মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল,
-তু-তুমি এখানে ?
মেয়েটি একটু হাসলো,
-আমি এসেছি এক বন্ধুর সাথে । তুমি ?
-আমি?
ফারিজ একটু ইতস্তত করলো । তারপর বলল,
-আমি আসলে আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে এসেছি !
মেয়েটি তারপর তন্বীর দিকে ফিরে তাকালো । একটু যেন অবাক হয়েছে । তারপর হাসলো । বলল,
-দ্যাটস গ্রেট । কি নাম তোমার গার্লফ্রেন্ডের ?

ফারিজ তখন তন্বীর দিকে ফিরে তাকালো । তন্বী মুহূর্তের ভেতরে বুঝে গেল ফারিজ নামের ছেলেটা আসলে কি করতে বলছে । তন্বী এখন কি করবে ? এখন ফারিজ ওর হাত ধরে নেই । চাইলেই ও পালিয়ে যেতে পারে । তবে ফারিজ তখন হয়তো আরও রেগে যাবে । এই কথা সত্য যে তন্বী ঠিকই ফারিজের রুমে ঢুকেছিলো । তারপর পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে । হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজে সেটা রয়েছে । সেখানে ঠিকই সব দেখা যাবে । ফারিজ নামের ছেলেটা চাইলে ওকে পুলিশে পর্যন্ত দিতে পারে । এর থেকে একটু সাহায্য করলে যদি এই ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় !

তন্বী এবার নিজ থেকেই একটু সামনে এগিয়ে এল । বলল,
-আমার নাম তন্বী । তোমার নাম কি ?
মেয়েটি আবার হাসলো । মেয়েটি দেখতে সত্যিই সুন্দরী । দেখেই বোঝা যায় যে সম্ভ্রান্ত ঘরের মেয়ে । মেয়েটি বলল,
-আমি এলাইনা ! নাইস টু মিট ইউ তন্বী !

এই বলে এলাইনা ওদের সামনে দিয়ে হেঁটে চলে গেল । চোখের আড়ালে যেতেই তন্বী বলল,
-বিশ্বাস করুন আমি কিছু করি নি । ভুল করে কেবল আপনার রুমে ঢুকেছিলাম । আপনার রুমটা লক করা ছিল না । মাথা ঘুরছিলো বলে আমার রুমের বদলে আপনার রুমে ঢুকে পড়েছিলাম !
ফারিজের দিকে তাকিয়ে তন্বীর মনে হল ছেলেটা অন্য কি যেন ভাবছে । এখনও এলাইনার চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে রয়েছে । তারপর তন্বীকে খানিকটা অবাক করে দিয়েই ফারিজ ওর সামনে থেকে চলে গেল । কোন কথা বলল না । তন্বী কিছুই বুঝলো না । তবে ফারিজ নামের ছেলেটা ওকে আর কিছু করছে না এটা বুঝতে পেরে ও খানিকটা হাফ ছেড়ে বাঁচলো । পাশের দরজাটা বন্ধ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত তন্বী অপেক্ষা করলো । তারপর এক প্রকার দৌড়েই নিজের রুমের দিকে দৌড় দিল । আর একটু পরে ওকে চেক আউট করতে হবে । এই বড় হোটেলে ও কেন এসেছিলো কে জানে ! আর কেনই বা বারে গিয়ে বিয়ার খাওয়ার চেষ্টা করেছিলো । রাতে হোটেলের সকল গেস্টদের জন্য হোটেল কর্তৃপক্ষ ফ্রি ড্রিংসের ব্যবস্থা করেছিলো । ফ্রির জিনিস কখনই ভাল হয় না । তন্বী কোনদিনই বিয়ার নামের জিনিসটা মুখে নিয়ে দেখে নি । তাই একটু খেয়েই মাথাটা একটু ঘুরছিলো । কাজটা মোটেই ঠিক হয় নি ।

চেক আউটের আগ পর্যন্ত তন্বীর মনের ভেতরে একটা ভয় ঠিকই কাজ করলো । বারবারই মনে হচ্ছিলো এখনই বুঝি ফারিজ নামের ছেলেটা এসে হাজির হবে । তারপর আবারও ওর উপর হামলে পড়বে ! তবে শেষ পর্যন্ত এমন কিছুই হল না । তবে এয়ারপোর্টে গিয়ে আবারও এলাইনা নামের মেয়েটার সাথে দেখা হয়ে গেল । তন্বীকে দেখে সে নিজ থেকেই এগিয়ে এল ।
-হাই ! কি খবর ?
তন্বী খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলেও সামলে নিল । মুখে যথাসম্ভব হাসি নিয়ে বলল,
-এই তো !
-চলে যাচ্ছো নাকি ?
-হ্যা । আসলে আমার একটু কাজ আছে !
-ফারিজ কোথায় ?
-ও আমাকে এই এয়ারপোর্টে ড্রপ করে দিয়ে গেল ।

তন্বীর মনে হল এলাইনা মেয়েটা ওকে কেমন চোখে দেখছে । খুব ভাল করে পর্যবেক্ষণ করছে । তন্বী ঠিক বুঝতে পারছে না যে এলাইনা কেন ওকে এতো ভাল করে লক্ষ্য করছে । আচ্ছা, এই মেয়েটাকে দেখে ফারিজ ছেলেটা অমন করলো কেন ? মেয়েটা আসার আগে ফারিজ কেমন কঠিন চোখে ওর দিকে তাকিয়ে ছিল অথচ মেয়েটাকে দেখার সাথে সাথে এমন করে নরম হয়ে গেল কেন ? ওকে কেনই বা নিজের গার্লফ্রেন্ড বলল ! তন্বী কিছুই বুঝতে পারছে না । তন্বী বলল,
-তুমিও ঢাকায় ফিরবে নাকি ?
-আরে না না ! আমি আমার বন্ধুকে সি-অফ করতে এসেছিলাম । আমাকে আরও কয়েকটা দিন থাকতে হবে !

-হাই লেডিস!

তন্বী আর এলাইনা দুইজনই একসাথে ডান দিকে ফিরে তাকালো । তাকিয়ে দেখলো সেখানে ফারিজ দাঁড়িয়ে আছে । করিডোরের সেই ইতঃস্তত ভাবটা আর ওর ভেতরে নেই । তার বদলে একটা আত্মবিশ্বাসের ভাব ফুটে উঠেছে । তন্বী কিছু বলতে যাবে তার আগেই এলাইনা বলল,
-কি ব্যাপার ! তুমিও চলে যাচ্ছো নাকি ?
ফারিজ একটু হাসলো । তারপর বলল,
-হ্যা । তন্বী চলে যাচ্ছে । একা একা থাকতে ভাল লাগবে না । তুমি তো জানোই প্রকৃতি কখনোই আমাকে টানে নি ।
এলাইনা হাসলো একটু । তবে সেই হাসিতে কেন যেন কোন প্রাণ নেই । ফারিজ আরও একটু এগিয়ে এল । তারপর তন্বীর কোমরে একটু হাত দিয়ে বলল,
-চল বেইবি । যাওয়া যাক !

তন্বী কি বলবে কিছুই বুঝতে পারলো না । একবার ফারিজ আর আরেকবার এলাইনার দিকে তাকালো । ফারিজ বলল,
-এলাইনাকে বাই বল ।
তন্বী রোবটের মত বলল,
-বাই !
-বাই ! হ্যাভ এ গুড জার্নি !
ফারিজ বলল,
-ডোন্ট ওয়ারি । উই উইল !
তন্বী নিজের কোমরে আবারও একটা টান অনুভব করলো । ফারিজ ওকে নিয়ে এয়ারপোর্টের ভেতরে রওয়ানা দিয়েছে । তন্বী এখনও ঠিকমতো কিছুই বুঝতে পারছে না । তবে এইটুকু বুঝতে পারছে যে সামনে ও বড় রকমের একটা ঝামেলাতে পড়তে যাচ্ছে । সব হয়েছে ঐ বিয়ারটুকু খাওয়ার জন্য । যদি লোভ করে ও সেই ফ্রি বিয়ারটুকু না খেত তাহলে এই আজকে ঝামেলাতে পড়তে হত না ।

ম্যাঙ্গাটুনস কমিকসে ‘মাই ওয়াইফ ইজ কিউট’ নামে একটা কমিকের কয়েকটা চ্যাপ্টার পড়েছিলাম । সেখানে ঘটনাটা আরেকটু অন্য রকম । নায়ক ঢুকে পড়ে নায়িকার রুমে । তারপর নায়কের এক্স গার্লফ্রেন্ড চলে আসে । তার সামনে নায়িকাকে পরিচয় করিয়ে দেয় নিজের গার্লফ্রেন্ড হিসাবে । সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই এই গল্পের শুরুটুকু হল । এরপর কাহিনী নিজের মত করে সাজাবো । দেখা যাক ঘটনা কোনদিকে নেয়া যায় । 

দুই

তন্বীর জীবনটা আর কত খারাপ হতে পারে সেটা তন্বীর ধারণার বাইরে ছিল । বছর শুরু হতে না হতেই একটার পর একটা খারাপ সংবাদ আসতেই থাকলো । প্রথমত ওর তিন বছরের সম্পর্কে থাকা প্রেমিকের সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল । ঠিক ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল বলতে তন্বীর সামনে তার প্রতারণার ব্যাপারটা পরিস্কার হয়ে ধরা দিল । অনেক আগে থেকেই আবিদের ব্যাপারে ও নানান মানুষের কাছ থেকে নানারকম কথা শুনে আসছিলো কিন্তু কোনদিন ও এসব কথা বিশ্বাস করে নি । আবিদের উপর ওর বিশ্বাস ছিল অটুট । কিন্তু একদিন নিজের চোখে অন্য মেয়ের সাথে দেখার পর এবং পরেরদিন আবিদকে ওর ফ্ল্যাটে অন্য একটা মেয়ের সাথে হাতেনাতে ধরে ফেলার পর তন্বী আর বিশ্বাস না করে পারে নি । পরে অবশ্য আবিদ অনেকবারই ওর কাছে এসেছিলো ক্ষমা চাইতে কিন্তু তন্বী আর সেইদিকে যায় নি ।

প্রেমে ব্যর্থ হয়ে তন্বী ভেবেছিলো যে কাজকর্মে খুব ভাল করে মন দিবে । দিনরাত খেটে দুইটা প্রজেক্ট তৈরি করলো । কিন্তু পরপর দুইটা প্রজেক্টই ও ফেইল করে বসলো । কোম্পানীর ম্যানেজারের অভিযোগ যে ক্লাইন্ট নাকি ওর কাজ পছন্দ করে নি । চাকরী যায় যায় অবস্থা । চাকরি বাঁচাতে তন্বী ম্যানেজারের কাছে সাহায্য চাইলো । কিন্তু ধারণাও ছিল না যে লোকটা কি প্রস্তাব দিয়ে বসবে । ম্যানেজার তারপর ওকে একটা কু-প্রস্তাব দিয়ে বসলো । কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হবে । এমন একটা কথা যে তন্বী শুনবে সেটা ও একদমই ভাবে নি । রেগে গিয়ে বসের গালে একটা চড় বসিয়ে দিল । তারপর চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে বাসায় চলে এল ।

বাসায় যদিও বলল না কিছুই তবে কদিনের মাঝেই সবকিছুই জেনে গেল তারা । তন্বীর বাবা মায়ের মনে হল মেয়ের এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য সবথেকে ভাল উপায় হচ্ছে মেয়েকে এখন বিয়ে দিয়ে দেওয়া । পুরোদমে ছেলে দেখা শুরু হল । তন্বী আর টিকতে না পেরে বাড়ি ছেড়েই চলে গিয়েছিলো । এদিকে ওদিকে থেকে একদিনের জন্য গিয়েছিলো কক্সবাজারে । সেখানেই কক্সমিরান ফাইভ স্টার হোটেলে উঠেছিলো । রাতে বিয়ার খেয়ে ফারিজের ঘরে ঢুকে পড়েছিলো । নতুন আরেক ঝামেলা শুরু হল ওর জীবনে ।

ওরা দুজন একই প্লেনে ঢাকাতে ফিরে এলেও একসাথে বসে নি । ফারিজ ওর সাথে চেকিং এরিয়া পর্যন্ত ছিল । আরো ভাল করে বলতে, যতসময় পেছন থেকে এলাইনাকে দেখা যাচ্ছিলো ততসময়ই ওরা কাছাকাছি ছিল । একেবারে কোমরে হাত দিয়েই । তারপর যখনই একটা বাঁক ঘুরলো তখনই ফারিজ ওকে ছেড়ে দিল । এমন একটা ভাব করে চলে গেল যেন তন্বীকে সে চেনেই না ।
ফারিজের সিট ছিল ভিআইপি কর্নারে । এটা তন্বী দেখেছিলো । আর ও বসেছিলো সাধারণ সিটে । ফারিজকে দেখে তন্বীর অন্তত এইটুকু মনে হয়েছে যে ছেলেটা প্রচুর বদমেজাজী আর জেদি । নিজের যা ইচ্ছে হয় সেটাই করছে । তন্বী কি মনে করলো তার কিছুই সে কেয়ার করে নি । তন্বী সাহস করে কিছু বলতে পারে নি । কারণ ফারিজ ওকে ইচ্ছে করলে পুলিশে দিয়ে দিতো পারতো তার ঘরে ঢোকার অপরাধে। তাছাড়া ফারিজের পোশাক পরিচ্ছদ দেখে তন্বীর মনে হয়েছে ছেলেটা যথেষ্ট বড়লোকের ছেলে । বড়লোকের বখে যাওয়া ছেলে । ভয় পাওয়ার একটু কারণ তো ছিলই । তন্বী ঠিক মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিল যে এই ছেলের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে ।

প্লেন থেকে নেমেই যত দ্রুত সম্ভব তন্বী বাইরে চলে এল । সন্ধ্যা নেমেছে অনেক আগেই । বাইরে আবার টিপটিপ বৃষ্টি শুরু হয়েছে । তন্বী কিছুটা সময় এদিকওদিক তাকালো । এই সময়ে এই এয়ারপোর্ট থেকে সিএনজি কিংবা ক্যাব পাওয়া যাবে না । আর পেলেও সেগুলো আকাশছোঁয়া ভাড়া চাইবে । কিন্তু এছাড়া আর কোন উপায় আছে কি ?
উবার নেবে কি? বৃষ্টি না থাকলে পাঠাও করে যাওয়া যেত ।
উবার ভাড়া দেখেও ওর চোখ কপালে উঠলো । সত্যি বলতে কি, ঠিক এই মুহূর্তে ওর কাছে এতো টাকা নেইও । সাথে করে যা টাকা নিয়ে বের হয়েছিলো তার প্রায় সবটুকুই শেষ হয়ে গিয়েছে । সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে ফাইভ স্টার হোটেলে থাকতে আর প্লেনে করে আসতে গিয়ে । তন্বী অনেকটা নিশ্চিতভাবেই জানে যে এইবার বাসায় গেলে ওকে জোর করে ধরে বিয়ে দিয়ে দেয়া হবে। কোনভাবেই আর আটকাতে পারবে না । তাই ভেবেছিলো বিয়ের আগে স্বাধীনভাবে নিজের মত করে কটাদিন ও ঘুরে বেড়াবে । কিন্তু সেটাও আর হল কোথায়!

তন্বী কি করবে ঠিক বুঝতে পারছিলো না । তবে এখানে বেশি সময় অপেক্ষা করা যাবে না । বাসায় যেতে হবে । রাত বেশি হলে বাসায় গেলে আবার মায়ের বকাঝকা শুনতে হবে । কি করবে ভাবতে পারছিলো না। উবার ডাক দিতে যাবে তার আগেই ওর ঠিক সামনে একটা কালো রংয়ের মার্সিটিজ বেঞ্জ এসে দাঁড়ালো । গাড়িটা থেমে যাওয়ায় একটু কেঁপে উঠলো যেন । পেছন থেকে আবার সেই পরিচিত শব্দটা শুনতে পেল ।
-গাড়িতে ওঠ । তোমাকে পৌঁছে দেই ।

তন্বী পেছন ফিরে তাকালো । দেখতে পেল ফারিজ দাঁড়িয়ে । কখন যে পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে ও টেরই পায় নি । দ্রুত বলল,
-না দরকার নেই। আমি যেতে পারবো ।
ফারিজ একটু বিরক্ত কন্ঠে বলল,
-এতো ঢং করতে হবে না ।
এরই মাঝে গাড়ি থকে ড্রাইভার নেমে এসেছে । পেছনের দরজাটা মেলে ধরেছে। ফারিজ এরপর তন্বী কথার কোন তোয়াক্কা না করে ওর কোমরে আবার হাত দিয়ে খুব স্বাভাবিকভাবে ওকে গাড়ির ভেতরে ঢুকিয়ে দিল । ফারিজ কোমরে হাত দেওয়ার সাথে সাথেই যেন তন্বীর খানিকটা ইলেক্ট্রিক শক খাওয়ার মত অবস্থা হল । কিছু যেন বলতে গিয়েও বলতে পারলো না । এমন কেন হল ? এয়ারপোর্টেও ঠিক এমনটা হয়েছিলো । ওর পুরো শরীরটা যেন কেঁপে উঠেছিল কেবল একটা স্পর্শে ।
তন্বীর আগের প্রেমিক আবিদের সাথে ওর বেশ লম্বা সময়ের জন্য সম্পর্ক ছিল । সেই সময়ে আবিদ ওর হাত ধরেছে অনেকবার । বেশ কিছুবার ওকে চুমুও খেয়েছে । কিন্তু তন্বী এর বেশি কিছুতে আবিদকে এগোতে দেয় নি । এটা নিয়ে আবিদের অভিযোগ থাকলেও সেটা খুব বেশি গা করে নি ও । তন্বীর বান্ধবীদের ধারণা যে তন্বী যদি একটু আধটু আবিদের আবদার রক্ষা করতো তাহলে আবিদ ওর সাথে এমন কিছু করতো না কখনই । তন্বীর এতে আপত্তি ছিল । ওর শরীর ওর কাছে খুব সেনসেটিভ একটা ব্যাপার । ভীড়ের মাঝে ও একদমই চলাচল করে না । এমন কি বাসেও উঠতে চায় না । একটু বেশি খরচ হলেও রিক্সা, সিএনজি কিংবা উবার ব্যবহার করে । কেউ ওর শরীরে হাত দিবে কিংবা ওর শরীরের সাথে কারো শরীরের স্পর্শ লাগবে এটা ও ভাবতেই পারেনা । আর এই বদমাইশ কিনা কত সহজেই কোমরে হাত দিয়ে ফেলছে । কিন্তু ও কিছু বলতে পারছে না কেন ? সেই ফ্রি বিয়ারের ইফেক্ট কি এখনও যায় নি নাকি ! তন্বী আরও একবার নিজেকে বকাঝকা করলো । কেন ও ফ্রি বিয়ার খেতে গিয়েছিলো ! যদি না খেতে যেত তাহলে এসব কিছুই হত না !
তবে গাড়ির ভেতরের দরজাটা বন্ধ হতেই বাইরের চিৎকার চেঁচামিচি আর বৈরি আবহাওয়া একেবারে গায়েব হয়ে গেল । সবকিছু যেন একদম শান্ত হয়ে এল । কখন যে গাড়িটা চলতে শুরু করলো সেটাও তন্বী বুঝতে পারলো না । তন্বীর রাগটাও একটু শান্ত হয়ে এল । মনে মনে বলল যে যাক, বাড়ি পর্যন্ত যাওয়া যাচ্ছে । চুপচাপ যাওয়া যাক । অন্যকিছু এখন না ভাবাই ভাল । আর ভেবে খুব একটা লাভও নেই । এই ফারিজ নামের ছেলেটার ভেতরে কিছু একটা আছে যেটা ও ঠিক বুঝতে পারছে না ।

-তোমার বাসা কোথায় ?
তন্বী বাইরের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখছিলো । ফারিজের কথা শুনে ফিরে তাকালো । বলল,
-ধানমন্ডি ! এগারো নম্বর !
-আমার বাসাও ঐদিকে । দুই নম্বরে ।
তারপর ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে বলল,
-মনজুর গাড়ি আগে এগারো নম্বরের দিকে নিয়ে যাও !
ড্রাইভার মৃদু মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি দিল । ফারিজ আবারও তন্বীর দিকে তাকিয়ে বলল,
-কি কর তুমি ? এখনও পড়ছো নাকি চাকরিবাকরি কিছু কর ?
-করতাম । এখন আর করি না !
-কেন, এখন করো না কেন ? বিয়ে করবে এইজন্য ! শ্বশুরবাড়ির লোকজন চাকরি পছন্দ করে না?
তন্বীর মনের মাঝে একটা বিরক্তি দেখা দিল । তবে সেটা আমলে নিল না । সেটা দাবিয়ে রেখে বলল,
-জি না, বিয়ে করবো না । বিয়ে না করতেই আমি বাড়ি থেকে পালিয়েছিলাম !
-আচ্ছা । তো আবার ফিরে যাচ্ছো কেন ?
-কারণ টাকাপয়সা শেষ । এইজন্য ! আর চাকরি আমি না ছাড়লে এমনিতেও চলে যেত ।
ফারিজ একটু কৌতূহল নিয়ে তন্বীর দিকে তাকালো । ওর চোখে স্পষ্ট প্রশ্ন দেখা দিয়েছে । তন্বী বলল,
-অফিসের ম্যানেজার আমাকে খারাপ প্রস্তাব দিয়েছিলো । আমি তাকে কষে একটা চড় মেরেছিলাম !
-রিয়েলি ?
-হ্যা । ওখানে থাকলে যদি চাকরি নাও যেত তাহলে ম্যানেজার আমার জীবন অতিষ্ঠ করে দিতো । এইজন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি । এখন নতুন চাকরি খুঁজছি !
-কোথায় চাকরি করতে ?
-ফিজ সোশ্যাল লিমিটেড ! মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে !

ফারিজ আর কিছু জানতে চাইলো না । চুপ করে কি যেন ভাবতে লাগলো । তন্বী আবারও বাইরের দিকে তাকালো । বাইরে তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়েছে । এই সময়ে ঢাকা শহরে খুব জ্যাম বাঁধে । তবে আজকে ওদের গাড়িটা খুব দ্রুতই এগিয়ে চলছে । আশেপাশে যেন গাড়িঘোড়া একদমই নেই । তন্বী এর আগে কোনদিন মার্সিটিজে ওঠে নিয়ে । গাড়িটার চারিদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো । সিটের সামনে একটা ছোট টিভি দেখা যাচ্ছে । পাওয়ার অন সুইটটা রয়েছে সামনেই । তন্বীর কি মনে হল, সেটাতে চাপ দিল । সাথে সাথেই টিভি চালু হয়ে গেল । একটা নিউজ চ্যানেল । তন্বী একের পর এক চ্যানেল বদলাতে শুরু করলো । দেখতে দেখতে গান বাংলাতে এসে হাজির । “এই বৃষ্টি ভেজা রাতে তুমি নেই বলে” গান চলছে । তন্বীর কি মনে হল গানটা আরও একটু জোরে দিয়ে দিল । পাশে তাকিয়ে দেখলো ফারিজ ওর দিকে খানিকটা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে । তন্বীর আচরণে হাসবে নাকি কাঁদবে সেটা বোঝার চেষ্টা করছে । অবশ্য তন্বী সেদিকে খুব একটা মনোযোগ দিল না । গানটা শুনতে শুরু করলো । 

 তিন

তন্বী জীবনেও ভাবতে পারে নি যে একটা ফ্রি বিয়ার খাওয়ার পরবর্তী প্রভাব এইরকম হতে পারে ! জীবনে সম্ভবত এই প্রথম কেউ বিয়ার খাওয়ার কারণে এতো ভাল একটা ফল পেল ! তন্বীর আসলে এখন কি করা উচিৎ সেটা ও কিছুতেই বুঝতে পারছে না । তবে ম্যানেজারের সিটে বসে থাকতে ওর খুব একটা খারাপ লাগছে না । ঠিক সকাল এগারোটার সময়ে এসে এই সিটে বসেছে ও । ঘন্টাখানেস সময় পার হয়ে গিয়েছে । একে একে অফিসের অনেকেই এসে ওকে অভিনন্দন জানিয়েছে । সবার চোখেই একটা বিস্ময় ছিল, আর ছিল ঈর্ষা । তন্বীর বেশ মজাই লাগছে ! সেই সাথে এখনও ঠিক বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে এই অসম্ভব কাজটা হয়েছে ! চাকরিটা ছাড়ার সময় ও ভাবতেই পারে নি যে আবারও এই অফিসে এসে কাজ করতে পারবে । ও কেবল অফিসেই ফিরে আসে নি, আগের থেকেও আরও ভাল একটা পজিশন নিয়ে ফিরে এসেছে ।

তন্বী কক্সবাজার থেকে ঢাকাতে ফিরে এসেছে প্রায় এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে । এই কদিন বাসায় থেকে তন্বী উপরে যে কি চাপ গেছে সেটা কেবল তন্বীই জানে । ওর মা কেবল ওর গায়ে হাত তোলাই বাকি রেখেছে । তারা ঘোষণা দিয়েই দিয়েছে যে কোনভাবেই আর এই মেয়েকে ঘরে রাখা যাবে না । বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পুরোটুকু সময়ই তন্বী নিজের ফোন অফ করে রেখেছিলো । তাই তারা কোনরকম খোঁজখবর নিতে পারে নি । এই কটাদিন তারা খুবই ভয়ে ভয়ে ছিল । তাই তারা এবার খুব রেগে গিয়েছে । তন্বী নিজেও জানতো যে এমন কিছুই হবে । তাই মনে মনে ও খানিকটা প্রস্তুতি নিয়েই নিয়েছিলো । এতোদিন চাকরি ছিল বলেই একটা জোর ছিল বুকে । কিন্তু এখন আবার নতুন একটা চাকরি জোগাড় করা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে । সেটা আদৌও হবে কিনা সেই ব্যাপারে তন্বীর সন্দেহ ছিল । তাই আর কোন কথা না বলে মা বাবার কথামত বিয়ের পিঁড়িতে বসতে ওর কোন আপত্তি ছিল না । বলেছিলো ছেলে দেখতে ।

এই কটা দিন তন্বী মন খারাপ করেই বাসায় বসেছিল । কিছুই যেন করার নেই ওর । আজকে সকালটাও শুরু হয়েছিলো অন্য দিনগুলোর মতই । সকাল ঠিক নয়টার দিকে ওর বাসার কলিংবেলটা বেজে ওঠে । ও তখন সবে নাস্তা খেতে বসবে । বাবা মা বসে রয়েছে টেবিলে । তাই নিজেই উঠে গেল দরজা খুলতে । দরজা খুলেই দেখতে পেল একজন কুরিয়ারম্যান এসেছে । ওর নামেই একটা চিঠি এসেছে । খামটা হাতে নিয়ে আবারও খাবার টেবিলে বসলো ও। খেতে খেতে খামটা খুলেই ওর চোখ কপালে উঠলো ।

তন্বীর মা ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
-কি হয়েছে ? কিসের চিঠি ?
তন্বী একবার মায়ের দিকে, আরেকবার হাতের চিঠিটার দিকে তাকালো । কিছু বলার আগেই ওর ফোনটা বেজে উঠলো । নম্বরটা দেখে তন্বী আরেকবার চমকে উঠলো । ফিজ সোশ্যাল লিমিটেডে ও চাকরি করছে প্রায় দুই বছর । এই দুই বছর ধরেই এই নম্বরটা ওর মোবাইলে সেভ করা রয়েছে । কিন্তু কোনদিন এই নম্বরটা থেকে ফোন আসে নি । আর আজকে এই সকালবেলাই ফোন ! ফোনটা হাতে নিয়ে ও টেবিল থেকে উঠে একটু দূরে চলে গেল।
-হ্যালো স্যার ! গুড মর্নিং !
-গুড মর্নিং মাই ডিয়ার ! কেমন আছো তুমি ?
-জি স্যার ভাল আছ.
-লেটার পেয়েছো নিশ্চয়ই?
-জি স্যার।
-তাহলে আজ থেকেই জয়েন করে ফেল । ঠিক আছে ? আমি চাই না আমার কোম্পানীতে নাজিমউদ্দিনের মত কোন লোক থাকুক ।
-থেঙ্কিউ স্যার ।
-ডোন্ট থ্যাঙ্ক মি । মন দিয়ে কাজ কর তাহলেই হবে ! আর ফারিজকে আমার হ্যালো বল ।
-জি আচ্ছা !

ফোন কেটে গেল।
ফারিজ !
ফারিজ !

ওর এই চাকরীটা ফেরৎ পাওয়ার পেছনে যে ফারিজের হাত রয়েছে সেই বিষয়ে ওর কোন সন্দেহ রইলো না । এই ছেলেটা ওর জীবনে আর কি কি নিয়ে আসবে কে জানে ! তবে আপাতত ভাল কিছু যে নিয়ে এসেছে এটাই সব থেকে বড় কথা ।

ফোনটা কেটে যাওয়ার পরে তন্বী খুব জোরে একটা চিৎকার দিল । ওর মা ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
-কি হয়েছে?
তন্বী কোন কথা না বলে কেবল কাগজটা মায়ের দিকে বাড়িয়ে দিল । তারপর দ্রুত নাস্তা খেতে শুরু করলো । এখনই গোসল করে রেডি হতে হবে । আজকে বেটা নাজিমউদ্দিনকে বোঝাবে মজা !

অফিসে পৌঁছালো ঠিক এগারোটার সময়ে । ম্যানেজার নাজিমউদ্দিনের কেবিনে ঢুকতেই তন্বীর মুখটা কেমন শক্ত হয়ে গেল । তখন তার সামনে অফিসের আরও একটা মেয়ে বসে ছিল । মেয়েটাকে সে ভাল করেই চেনে । ম্যানেজারের পেছন পেছন লেগে থাকে সবসময় ! ওকে দেখেই নাজিমউদ্দিন বলল,
-কি ব্যাপার তুমি এখানে ? আর অনুমতি না নিয়ে কেবিনে ঢুকলে কিভাবে ?

তন্বী একটু কৌতুকের হাসি হেসে বলল,
-নিজের কেবিনে ঢুকতে আবার অনুমতি !
-মানে ?
-মানে আপনি এখনো জানেন না ?

এই বলে তন্বী খামটা তার সামনে এগিয়ে দিল । নাজিমউদ্দিন বলল,
-কি এটা ?
-পড়েই দেখুন ।
নাজিমউদ্দিন সেটা হাতে নিয়ে খুলল । কয়েক লাইন পড়েই তার চোখ কলাপে উঠলো । তীব্র বিস্ময় নিয়ে একবার লেটারটার দিকে আরেকবার তন্বীর দিকে তাকাতে লাগলো । তন্বীর ব্যাপারটা মজাই লাগলো । তারপর বলল,
-আপনার মেইলে তো মেইল চলে আসার কথা । একবার চেক করে দেখুন তো !

নাজিমউদ্দিন এই এসি রুমের ভেতরেও ঘামতে শুরু করলো । তারপর নিজের ইমেল চেক করে দেখে আরও একটু ঘাবড়ে গেলো । পকেট থেকে ফোন বের করে একটা নাম্বারে ফোন দিল সে ।
-জি স্যার । স্লামুআলাইকুম স্যার !
কিছু সময় নিরবতা ।
-এটা কি শুনছি স্যার ?
আবারও কিছু সময় নিরবতা ।
-কিন্তু স্যার ….. আমি ….. স্যার স্যার প্লিজ …..

ওপাশ থেকে ফোন কেটে গিয়েছে সেটা বুঝতে কষ্ট হল না । তন্বীর দিকে প্রথমে সে যে দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো সেটা এখন পুরোপুরি বদলে গিয়েছে ।
-তোমাকে আমি দেখে নিবো !
-হা হা হা ! অবশ্যই দেখে নিবেন ! একবার চড় খেয়ে চাকরি চলে গেল আবার ভাবুন পরে দেখলে কি কি হতে পারে ! এখন নিজের জিনিসপত্র নিয়ে বিদায় হোউন এখনই । যাওয়ার আগে সব হিসাবপত্র আপনার সেক্রেটারি… সরি আমার সেক্রেটারিকে বুঝিয়ে দিয়ে যাবেন !

সামনে বসা মেয়েটি কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল তন্বীর দিকে । ঠিক যেন বিশ্বাস করতে পারছিলো না যে কি হচ্ছে ! পুরো অফিসে খবর পৌঁছাতে খুব বেশি সময় লাগলো না । একের পর এক কর্মী আসতে লাগলো ওর ক্যাবিনে । ওকে অভিনন্দন জানাতে লাগলো।

পুরো দিনটা আজকে আনন্দেই কাটলো ওর । ফারিজের কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলো, এমন সময়ে একটা অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন এসে হাজির ।
ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে কেউ বলে উঠলো,
-নতুন অফিস কেমন লাগছে ?
কন্ঠস্বরটা চিনতে তন্বীর মোটেই কষ্ট হল না । তন্বী বলল,
-অফিস মোটেও নতুন না ।
-কিন্তু পোস্ট তো নতুন ।
-তা নতুন । আমি জানি এটার পেছনে আপনার হাত আছে ! এমন একটা সুযোগ আমার খুব বেশি দরকার ছিল । থেঙ্কিউ !
ফারিজ কিছু সময় চুপ করে রইলো । তারপর বলল,
-আমাকে ধন্যবাদ দেওয়ার কোন দরকার নেই । আমি নিজের দরকারে তোমাকে সাহায্য করেছি ।
-মানে ?
-মানে বুঝতে পারবে । অফিস থেকে বের হয়েই দেখবে তোমার জন্য আমার গাড়ি অপেক্ষা করছে ।
-কোথায় যেতে হবে আমাকে ?
-আমার বাসায় ! সেখান থেকে আমরা একটা পার্টিতে যাবো !

তন্বী দেখলো ফারিজ ওকে অনুরোধ করছে না । কেবল বলে দিচ্ছে ওকে কি করতে হবে । তন্বীর মনে হল একবার বলে দেই যে আমি কেন শুনবো আর কেনই বা যাবো কিন্তু সেটা বলতে পারলো না । কেন জানি সেই কথাটা বলার মত শক্তি ও অর্জন করতে পালরো না । ফারিজ আর কিছু না বলে ফোনটা রেখে দিয়েছে ততক্ষণে । এতো সময় ধরে যে আনন্দ ও অনুভব করছিলো সেটা উবে গেল । সবকিছুরই একটা মূল্য আছে ! ফারিজ ওকে দিয়ে এখন কি করাতে চাচ্ছে ?

অফিস থেকে বের হয়ে ফারিজের গাড়িটা দেখতে পেল তন্বী । সেদিনের সেই ড্রাইভারটাই গাড়ির ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে । তন্বী সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই সে ওর দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো । তারপর মাথাটা কাত করে সম্ভাষণ জানালো । তন্বী কি করবে ঠিক বুঝতে পারলো না । বিপরীতে ওর হাসা দরকার । সেটাই করলো । মাথাটা একটু কাত করে তন্বীও হাসলো । ড্রাইভার দরজা খুলে দিলো সেদিনের মত করেই ।

তন্বী গাড়িতে ওঠার আগে একবার কি মনে করে পেছনে ফিরে তাকালো । অফিস ছুটির সময় এখন । অনেকেই অফিসের সিঁড়ির উপরে এসে দাঁড়িয়েছে । ওর দিকে খানিকটা অবাক চোখেই তাকিয়ে রয়েছে । তাদের চোখে খানিকটা বিস্ময় দেখা যাচ্ছে । তন্বী আর কিছু ভাবলো না । গাড়িতে উঠে পড়লো । মনের ভেতরে এখন একটা ভয় কাজ করছে ওর । ফারিজ ওকে কোথায় যেতে বলছে আর কেন ? কি এমন দরকার আছে ওর !

গাড়িটা আরও ঘন্টাখানেক চলার পরে একটা সুদৃশ্য ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে এসে থামলো । বাড়িটা ঠিক শহরের ভেতরে নয় । বেড়িবাঁধের দিকে । সন্ধ্যা হয়ে গেছে । তবে আলো এখনো নিভে যায় নি । বাড়িটার দিকে তন্বী কিছু সময় মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো । কোন সন্দেহ নেই যে ফারিজ সত্যিই অনেক ধনাঢ্য পরিবারের ছেলে । এই কারণেই ওর ভয় একটু বেশি লাগলো । কারণ যার যত টাকা আছে সে তত বেশি বেপরোয়া হতে পারে ।
বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই ও ড্রয়িং রুমে ফারিজকে দেখতে পেল । আজকে ফারিজকে দেখে তন্বী একটু চমকালো । গতদিন হোটেল আর এয়ারপোর্টে যখন ফারিজকে দেখেছিলো সেই সময়ে সে ক্যাজুয়াল পোশাক পরেছিলো । তখনও তাকে দেখতে সুদর্শন মনে হচ্ছিলো । কিন্তু আজকে ফারিজকে দেখে তন্বীর বুকের মাঝে একটা হার্টবিট মিস হয়ে গেল । কালো স্যুট পরে আছে সে । গলায় কালো টাই । পায়ে পলিশ করা জুতা । চুলগুলো মাঝারি আকারে ছাটা । একটু যেন বেশি ঘন লাগছে আজকে !
তন্বী মনে মনে কেবল একটা কথাই বলল যে এই ছেলে এতো সুদর্শন কেন !
ও সামনে এসে দাঁড়াতেই ফারিজ বলল,
-অফিস ঠিক ছিল ?
-হ্যা হ্যা ঠিক ছিল অনেক ! ধন্যবাদ !
-এখানে বস ।
এই বলে পাশের সোফার দিকে ইঙ্গিত করলো । তন্বী বিনা বাক্যব্যয়ে সেখানে বসলো । ফারিজ বলল,
-এবার কাজের কথায় আসা যাক ।
-বলুন । আমি আসলে ….
-বেশি কিছু বুঝতে হবে না । ঠিক আছে । আমি যা বলবো কেবল সেটা মেনে চললেই হবে । আজকে আমার দাদু আর দিম্মার বিবাহ বার্ষিকী । আমরা একটু পরে সেখানে যাবো !
-আমি ?
-ইয়েস । তুমি ! আমার সাথে । আমার গার্লফ্রেন্ড হয়ে !
-গার্লফ্রেন্ড !

তন্বী কি বলবে খুঁজে পেল না ! চোখ বড় বড় করে ফারিজের দিকে তাকিয়ে রইলো । এই ছেলে কি বলছে আর কেনই বা বলছে ?
সেদিনের সেই মেয়েটার সামনে ওকে গার্লফ্রেন্ড হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো সেটা ঠিক ছিল । তন্বী ভেবেছিলো সেটা বুঝি সেখানেই শেষ । কিন্তু এখন পরিবারের সামনে !
ও মাই গড ! কি বলছে এই ছেলে ।

তন্বীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফারিজ উঠে দাঁড়ালো । তারপর গলা উঁচু করে ডাক দিল,
-রেহেনা !

তন্বী দেখতে পেল ওর বয়সীই একটা মেয়ে বের হয়ে এল পাশের ঘর থেকে ।
-জি স্যার !
-ম্যাডামকে তৈরি কর । আমি একটু কাজ সেরে আসছি !

আর কাউকে কিছু বলার যুযোগ না দিয়েই ফারিজ বের হয়ে গেল রুম থেকে । একটু পরে গাড়ির আওয়াজ শোনা গেল । গাড়িটা কম্পাউন্ড থেকে বের হয়ে যাচ্ছে ।

চার

আয়নায় নিজেকে দেখে তন্বী খানিকটা সময় কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। নিজেকে ও সুন্দরী মনে করে । কিন্তু এমন সুন্দরীও মনে করে না যে যাকে দেখে ছেলেরা একেবারে পাগল হয়ে যাবে । কিন্তু এখন নিজেকে আয়নাতে দেখে ও সত্যিই অবাক হয়ে গেছে । রেহেনা নামের মেয়েটি একজন বিউটিশিয়ান । তার সাথে আরও একজন এসিস্ট্যান্ট রয়েছে । এই দুইজন মিলে গত দুই ঘন্টা ধরে ওকে সাজিয়েছে । ফারিজ ওর জন্য তিন সেট পোশাক আনিয়ে রেখেছিলো । তিনটাই ট্রায়াল দেওয়া হয়েছে । তারপর তার ভেতর থেকে একটা নির্বাচন করা হয়েছে । রংটা যে কেমন সেটা তন্বী পরিস্কারভাবে বুঝতে পারছে না । কদিন আগে ফ্রোজেন নামের একটা এনিমেশন মুভি দেখেছিলো ও । সেখানকার এলসা যে ড্রেসটা পরেছিল অনেকটা সেরকমই । তবে এই ড্রেসে নীলের একটা কাজ রয়েছে বেশ । এমন চমৎকার ড্রেস আগে বাস্তবে দেখেছে কি না তন্বীর মনে পরছে না । পরার কথাটা তো দূরেই থাকলো !
শেষ আরেকবার রেহেনা ওকে দেখলো । মনে মনে সন্তুষ্ট হয়ে বলল,
-ম্যাডাম, আপনি রেডি ! আপনার কি আর কিছু লাগবে ?
তন্বী কোন কথা বলল না । আয়নাতে নিজেকে আরও ভাল দেখতে লাগলো । কয়েকটা ছবি তুলে রাখতে হবে । অন্তত নিজের ফেসবুকে তো দেওয়া যাবে ।

ফারিজ ঘরে ঢুকলো একটু পরে । ঘরে ঢুকতেই তন্বীর দিকে তাকিয়ে কিছুটা সময়ের জন্য থেমে গেল । তন্বীর মতই ফারিজ নিজেও খানিকটা অবাক হয়েছে ওকে দেখে । সত্যিই তন্বীকে অন্যরকম লাগছে । রেহেনা বলল,
-স্যার আমাদের কাজ শেষ ।
ফারিজ বলল,
-আচ্ছা ।

দুইজনই রুম থেকে বের হয়ে গেল । ফারিজ আরও কিছুটা সময় তাকিয়ে রইলো তন্বীর দিকে । তারপর আস্তে আস্তে এগিয়ে এল । ঠিক ওর সামনে দাঁড়ালো । এরপর ওকে ধরে আয়নার দিকে ঘুরিয়ে দিল । ফারিজ দাঁড়ালো ওর পেছনে । ফারিজ লম্বায় অন্তত ছয় ফুটের কাছাকাছি হবে । সাধারণ বাঙালী মেয়ে হিসাবে তন্বীর উচ্চতাও একটু বেশি । পাঁচ ফুট ছয় । ফারিজের পাশে ওকে আসলেই চমৎকার মানিয়েছে । তন্বী আয়নার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো । মনের ভেতরে একটা অদ্ভুত চিন্তা কাজ করছে । কি থেকে কি হয়ে গেল বুঝতে পারছে না । মন থেকে চিন্তাটা দূর করে দেওয়ার চেষ্টা করলো ।

তারপরই অনুভব করলো ফারিজ ওর একদম কাছে চলে এসেছে । ওর পুরো শরীরটা যেন কেঁপে উঠল । ছেলেটা কি করতে যাচ্ছে ?
ও জানে না । ওর পুরো শরীর যেন অবশ হয়ে এল । এমন কেন হচ্ছে সেটা তন্বী বুঝতে পারছে না । ফারিজের সামনে এমন শক্তিহীন কেন মনে হচ্ছে নিজেকে !
তারপর অনুভব করলো ফারিজ ওর গলাতে কিছু একটা পরিয়ে দিল । তন্বীর চোখ বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো । চোখ খুলে দেখতে পেল গলায় একটা চমৎকার নেকলেস ! দেখেই মনে হচ্ছে জিনিসটা খুব দামী ! তন্বী বলল,
-এটা ?
-তোমার গলা খালি ছিল । ভাল দেখাচ্ছিলো না !
তন্বী নিজের গলার নেকলেসটা হাত দিয়ে একটু ছুঁয়ে দেখলো । সত্যিই জিনিসটা যে খুব বেশি দামী সেটা বুঝতে ওর কষ্ট হল না ।

ফারিজ বলল,
-চল তাহলে যাওয়া যাক !
তন্বী মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো কেবল ।
গাড়িতে যেতে যেতে ফারিজ ওকে নানা বিষয় শিখিয়ে দিতে শুরু করলো । বিশেষ করে ওদের কবে দেখা হয়েছে । কতদিনের পরিচয় ! আজকে গাড়িটা ফারিজ নিজে চালাচ্ছে । পাশের সিটে তন্বী বসে তাকিয়ে রয়েছে সামনের দিকে।

গাড়িটা এসে থামলো ধানমন্ডি দুই এর একটা বাড়ির গেটের সামনে । এই বাড়িটা দুই তলা । তন্বী বাড়িটা আগেও দেখেছে । নিউমার্কেটে যাওয়ার সময় প্রায়ই বাড়িটার দিকে চোখ পড়তো ওর । মনে মনে ভাবতো এমন একটা স্থানে দুইতলা বাড়িটা কার ? এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িই এপার্টমেন্ট বিল্ডিং । এক ইঞ্চি জায়গায়ও যেখানে সবাই বহুতল ভবন বানিয়ে ফেলছে সেখানে এরা দুইতলা বিশাল বাড়ি বানিয়েছে । সামনে ফুলের বাগান, গাছগাছালিতে ভর্তি । বুঝতে কষ্ট হয় না যে এদের আসলে টাকা পয়সার কোন অভাব নেই ।

একটু পরেই গেটটা খুলে গেল । বাড়ির সামনে বেশ বড় একটা লন । কয়েকটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে সেখানে । গেস্টদের গাড়ি । ফারিজ নিজেই গাড়ি থেকে নেমে তন্বীকে নামতে সাহায্য করলো । ওর হাত ধরলো খুব স্বাভাবিকভাবে । তারপর ধীরে ধীরে মূল বাড়িটার দিকে হাঁটতে শুরু করলো । তন্বী যতই বাড়ির দিকে যেতে শুরু করলো ততই ওর মনে একটা ভয়ের অনুভূতি দানা বাঁধতে শুরু করলো ।

দরজাটা খানিকটা খোলাই বলা চলে । ভেতর থেকে আওয়াজ ভেসে আসছে । মানুষজন কথা বলছে, হাসাহাসি করছে । মৃদু গান বাজার আওয়াজ হচ্ছে । তন্বীর সত্যিই মনে হল যেন ও নিজের বয়ফ্রেন্ডের পরিবারের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে ।

দরজার ঠিক পরেই ছোট একটা রুম । এই রুমটা প্রায় ফাঁকা বলতে গেলে । কয়েকটা চেয়ার আর সোফা রয়েছে । এই ঘরটা পার হতেই বড় একটা ড্রয়িং রুম । সেখানেই অনুষ্ঠানটা হচ্ছে । সব মানুষজন সেখানে রয়েছে । তন্বী দেখলো ওরা ঘরে ঢুকতেই সবার চোখ ওদের দিকে ঘুরে গেল । বিশেষ করে তন্বীর দিকে । কারো চোখে খানিকটা বিস্ময় আবার কারো চোখে খানিকটা কৌতূহল । তন্বীর গালটা আরও একটু লাল হয়ে গেল । একটু যেন লজ্জা পাচ্ছে । এরকম পার্টিতে ও এর আগে আসে নি । এমনি বন্ধুদের জন্মদিন, বিয়ে কিংবা তাদের কারো আত্মীয়ের বিবাহবার্ষিকীতে গিয়েছে ঠিকই তবে সেসব একরকম ছিল । এই পার্টিটা একেবারেই অন্যরকম । অন্তত ওর পরিচিত নয় । তাই অস্বস্তিটা লাগছে ।
ফারিজ ওর হাতটা তখনও ধরেই আছে । ফারিজ জানে সবাই তার দিকেই তাকিয়ে আছে । তবে সেটা নিয়ে সে খুব একটা চিন্তিত না ।
তন্বীর বুঝতে কষ্ট হল না যে ফারিজ এরকম আচরণ পেয়ে অভ্যস্ত। তবে তন্বী মোটেই এমন আচরণ পেয়ে অভ্যস্ত না । ওর অস্বস্তিটা যাচ্ছে না মোটেও । বিশেষ করে সবার সামনে ফারিজ ওর হাত এভাবে ধরে আছে এই ব্যাপারটা ওর একটু অস্বস্তি লাগছে । হঠাৎ তন্বী নিজের হাতে একটু টান অনুভব করলো । ফারিজ ওকে নিয়ে কোনদিকে যাচ্ছে । তন্বী হাঁটতে লাগলো আস্তে আস্তে । একটু পরেই দেখতে পেল তাদের । কাউকে বলে দিতে হল না যে এরাই ফারিজের দাদু আর দিম্মা । ওদের দিকে তাকিয়ে আছে হাসিমুখে । ফারিজ কাছে গিয়ে তার দাদুকে জড়িয়ে ধরলো । তারপর দিম্মাকেও । বলল,
-হ্যাপি এনিভার্সারি!

তন্বী কি বলবে খুঁজে পেল না । চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল । একসময় ফারিজ তন্বীকে দেখিয়ে বলল,
-দিম্মা এই যে, যার কথা বলেছিলাম !

তন্বী দেখতে পেল বৃদ্ধা খুব মিষ্টি করে হেসে ওর কাছে এল । তন্বী কি করবে ঠিক বুঝতে পারলোনা । এই সময়ে আসলে ওর কি করা উচিৎ ! প্রেমিকের পরিবারের সাথে দেখা করতে গেলে মেয়েদের কী করা উচিৎ ?
তন্বী কিছু বুঝতে পারলো না । ওর মনে হল যে এখন বৃদ্ধাকে সম্মান জানানো দরকার । ও যখন ঈদে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যায় দাদুকে প্রতিবারই সালাম করে । ফারিজের দিম্মার বেলাতেও ঠিক একই কাজটা করতে গেল । একটু নিচু হয়ে সালাম করতে যাওয়ার আগেই দিম্মা ওকে ধরে ফেললেন । তারপর বললেন,
-আরে বোকা মেয়ে করে কি ! তুমি আমার বুকে এসো ।
এই বলেই তিনি তন্বীকে জড়িয়ে ধরলেন । তন্বী ভীষণ লজ্জা পেল । তবে যখন দিম্মা ওকে ছেড়ে দিল তখন কেন যেন ভাল লাগলো । দিম্মা তখন ফারিজের দিকে তাকিয়ে বললেন,
-বাহ আমার নাতি তো দেখি খুব ভদ্র মেয়ে খুঁজে এনেছে । তোর মত বেয়াদবের কপালে এই মেয়ে কিভাবে জুটলো শুনি ?
ফারিজ হাসলো একটু কেবল !
দিম্মা আবারও বললেন,
-আগেরটা তো ছিল তোর মতই আদব-কায়দাবিহিন !

‘আগেরটা’ – এই কথাটা কানে আসতেই যেন তন্বীর চোখ পড়লো এলাইনার উপরে । ঠিক ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে ।
এই মেয়েকেও দাওয়াত দিয়েছে ?
তন্বী ঠিক খুঁজে পেল না । তবে তন্বীর সাথে চোখে চোখ পড়তেই এলাইনা চোখ সরিয়ে দিল । যতটুকু চোখ পড়েছিলো তাতেই তন্বী দেখতে পেল যে এলাইনা কেমন আগুন চোখে তাকিয়ে ছিল ওর দিকে । তন্বীকে সেদিন হোটেলে দেখে মেয়েটা প্রথমে বিস্মিত হয়েছিলো । ঠিক যেন বিশ্বাস করতে পারছিলো না । তারপর যখন এয়ারপোর্টে আবারও দেখলো ফারিজের সাথে, তখনই মেয়েটার চোখ দেখে মনে হয়েছিলো যে তন্বীকে সে মোটেই পছন্দ করছে না । আর এখন ওর এই চোখ দেখে মনে হল যে এলাইনা মেয়েটা তন্বীকে ঘৃণা করছে ।

ফারিজ ওকে দিম্মার কাছে রেখে অন্যদিকে চলে গেল । দিম্মা ওর সাথে কথা বলতে লাগলেন । মাঝে মাঝে দাদুও এসে গল্পগুজব করতে শুরু করলেন । কিছু সময় পরে তন্বী হঠাৎ একা হয়ে গেল । দিম্মা ওকে রেখে আর কার সাথে যেন কথা বলছেন । এমন সময় হঠাৎ ওর কাধে কারো হাতের স্পর্শ পেল । ফিরে তাকাতেই দেখলো খুবই সুন্দরী একজন মহিলা ওর পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে । মহিলা তন্বীর দিকে তাকিয়ে আছে হাসিমুখে ।
তন্বী কি বলবে খুঁজে পেল না । মহিলা খুবই পরিচিত ভঙ্গিতে বলল,
-বোর হচ্ছো?
তন্বী একটু লজ্জার হাসি হাসলো । তারপর বলল,
-আসলে এখানে কাউকে চিনি না ।
-এসো আমার সাথে ।
এই বলে সে তন্বীর হাত ধরে ওকে ড্রয়িং রুম থেকে একটু বাইরে নিয়ে এল । ড্রয়িং রুমের সাথে একটা বারান্দা রয়েছে । সেখানে নিয়ে এসে দাঁড় করালো ।
তারপর তন্বীর দিকে বেশ কিছু সময় তাকিয়ে রইলো । এক সময়ে বলল,
-তো, তোমাকে নিয়ে এসেছে আমার ছেলে ?
-আপনি ফারিজের আম্মু ? আসসালামু আলাইকুম আন্টি !
-আরে আরে, আমার সাথে এতো ফর্মালিটির দরকার নেই । তা তোমার সাথে ফারিজের কি ডিল হয়েছে ?
-ডিল ?
তন্বী ঠিক কি বলবে বুঝলো না । ফারিজের আম্মু কি তাহলে সবকিছু জানে ? তন্বী চুপ করে থাকলো কিছু সময় । ফারিজের আম্মু বলল,
-দেখি তো, তোমাকে আরও একটু ভাল করে দেখি !
এই বলে তন্বীর দিকে আরও বেশ কিছু সময় তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল,
-তুমি আসলেই বেশ সুন্দরী তো ! তোমাকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছে !
তন্বী এবার একটু হেসে লজ্জায় মাথা নোয়ালো । ফারিজের মা বলল,
-শোনো মেয়ে, এতো লজ্জা পেতে হবে না বুঝেছো ! এখন থেকে তুমি এই বাড়িরই সদস্য । যখনই ইচ্ছে হবে চলে আসবে । মনে থাকবে !
-জি মনে থাকবে !
-ফারিজের আগের গার্লফ্রেন্ডকে চেনো ?
-এলাইনা ?
-হ্যা । আযাদ সাহেবের মেয়ে । আযাদ সাহেব ফারিজের বাবার এক সময়কার বন্ধু । তাই ওদের ভেতরে চেনা পরিচয় হয়েছিলো বেশ ভালই । মেয়েটাকে আমার কখনই ঠিক পছন্দ হয় নি । কেন হয় নি তাও আমি ঠিক জান না । তবে হয় নি । এলাইনা মেয়ে হিসাবে ভাল বেশ । কিন্তু আমার মনে হত যে ফারিজের সাথে ও ঠিক যায় না !
-ওদের ভেতরে কেন ব্রেকআপ হয়েছিলো?
-কি জানি ! আমাকে কি কিছু বলে নাকি ! দুইটারই ইগো খুব বেশি ! সম্পর্কে যদি ছাড় দেওয়ার মানসিকতা না থাকে তাহলে সম্পর্ক টেকে !
তন্বী কি বলবে ঠিক বুঝলো না । তন্বীর দিকে তাকিয়ে ফারিজের আম্মু বলল,
-শোনে মেয়ে, আগে থেকেই বলছি । যদি তোমাদের মাঝে কোন ঝামেলা হয় তাহলে আগে আমার কাছে আসবে । মনে থাকবে ? হুট করে কিন্তু কিছু করবে না । মনে থাকবে তো !
তন্বী বলার মত কোন কথাই খুঁজে পেল না । কেবল হাসিহাসি মুখ করে তাকিয়ে রইলো । ফারিজের সাথে ওর কিছু শুরুই হল না আর ওর আম্মু ওকে বলছে যে ঝগড়া হলে কি করতে হবে ।

রাতে সব গেস্ট চলে যাওয়ার পরেও তন্বী রয়ে গেল । তখন কেবল পরিবারের লোকজন ছিল । তন্বীর সাথে এবার ফারিজের পরিবার আরও ভালভাবে পরিচিত হল । অনেক কথা হল । তন্বীর মনে হল, এমন আন্তিরক মানুষ ও অনেকদিন দেখে নি । ওর মনটা এমনিতেই ভাল হয়ে গেল খুব বেশি । রাতে ফারিজের দায়িত্ব পড়লো তন্বীকে বাসায় রেখে আসার ।
গাড়ি নিয়ে বের হতে যাবে, হঠাৎ তন্বী বলল,
-শুনুন গাড়িতে যাবো না ,
ফারিজ খানিকটা অবাক হয়ে বলল,
-মানে ? তো কিসে যাবে ?
-রিক্সাতে যাবো!
ফারিজ তন্বীর দিকে এমনভাবে তাকালো যেন এর থেকে অদ্ভুত কথা সে আর কোনদিন শুনে নি । তন্বী সেদিকে খুব একটা খেয়াল দিল না । বলল,
-শুনো আমি এখন রিক্সাতে করে যাবো । গাড়িতে যাবো না ।
ফারিজ বলল,
-আমি জীবনে রিক্সাতে চড়ি নি । আর তুমি এই ড্রেস নিয়ে কিভাবে রিক্সাতে উঠবে শুনি !
-ওটা নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না । তুমি না আসতে চাইলে না আসো ! আমি গেলাম !

তন্বী আর দেরি না করে গেটের দিকে হাঁটা দিল । গেট থেকে বের হয়ে কিছু সময় দাঁড়িয়ে রইলো । ঘড়িতে সময় রাত সাড়ে এগারোটা ! গাড়ি চলাচল কমে গেলেও কিছু গাড়ি আর রিক্সা এখনও আছে । আর তন্বীদের বাড়িটাও খুব বেশি দূরে না । রিক্সা করে যাওয়া যাবে । বাইরে চমৎকার বাতাস দিচ্ছে । এই সময়ে গাড়িতে করে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না ।
রিক্সাকে ডাক দিতে হল না । ও গেটের বাইরে এসে দাঁড়াতেই একটা রিক্সা এসে হাজির হল । রিক্সাতে উঠতে গিয়ে একটু ঝামেলাতে পড়তে হল ওকে । ওর পোশাকটা নিয়ে রিক্সাতে কিভাব উঠবে সেটা বুঝতে পারছিলো না ।

রিক্সাটা যেন একটু বেশি উঁচু । ওর আগে কোনদিন রিক্সাতে উঠতে কষ্ট হয় নি । কিন্তু এই পোশাকটা ওকে বেশি দূর পা তুলতে দিচ্ছে নয় । কি করবে তাই ভাবছে এমন সময় রিক্সাওয়ালা একটা ইট এনে দিল । বলল,
-আফা এইটার উপরে পা দিয়ে উঠেন ।
পা টা উঁচু করে তুলতেই বাঁধলো বিপত্তি । ইটটা নড়ে উঠলো । তন্বী ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে যাচ্ছিলো কিন্তু পড়লো না । ফারিজ ওকে পেছন থেকে ধরেছে ।
চোখে মুখে খানিকটা বিরক্তি নিয়ে বলল,
-এসবের কি দরকার ছিল ?
তন্বীর কেন জানি হাসি আসলো । বলল,
-খুব ছিল ।

ফারিজই তন্বীকে রিক্সাতে উঠতে সাহায্য করলো । তারপর সে জীবনের প্রথমবারের মত রিক্সাতে উঠে সবলো । বলল,
-এই এতটুকু একটা বসার স্থানে দুইজন কিভাবে বসে ?
তন্বী খানিকটা হাসিহাসি মুখ নিয়ে বলল,
-আরে বসে বসে । বস তো চুপ করে ।
তন্বী তারপর দেখলো ফারিজ ওর পোশাকের একটা পাশ নিজ হাত দিয়ে ধরে রেখেছে ! মুখে যথারীতি বিরক্তি ভাব ফুটে রয়েছে ।
তন্বী বলল,
-তুমি আবার কিভাবে আসবে শুনি?
-পেছন পেছন গাড়ি আসছে !
-গুড !

তন্বীর সত্যিই খুব অবাক লাগছিলো । সেই সাথে অদ্ভুত একটা অনুভূতিও হচ্ছিলো । ফ্রি বিয়ারের ফলে আরও কত কিছু দেখার বাকি কে জানে !!

পাঁচ

রিক্সাটা তন্বীদের বাড়ির সামনে এসে থামলো । এতো সময় ধরে ফারিজ বিরক্তমুখেই বসে ছিল তন্বীর পাশে । পুরো পথ জুড়ে তার কেবল একটাই কথা ছিল যে এই এতো একটা ছোট স্থানে দুইজন মানুষ কিভাবে বসে যায় । এটা নিয়ে আবার মেয়েদের কত রোমান্টিকতা !
সত্যিই রিক্সাতে চড়া নিয়ে তন্বীর রোমান্টিকতার শেষ নেই । ওর সবসময় ইচ্ছে করে যে প্রিয় মানুষের সাথে করে রাতেরবেলা এইরকমভাবে রিক্সাতে চড়বে । সারারাত রিক্সাতে করে ঘুরে বেড়াবে । মাঝে মাঝে কোন টংয়ের দোকানে বসে চা খাবে তারা । তারপর আবারও রিক্সাতে চড়বে !

আবিদকে এই কথা বলেও ছিল ও । আবিদ খানিকটা বিরক্তমুখে বলেছিলো যে এইসব আদিখ্যেতা তাদের মত ছাপোষা মধ্যবিত্ত মানুষদের জন্য নয় । এসব বড়লোকদের মানায় । তাদের না । হয়তো কথাটা অন্যভাবেও বলা যেত তবে সেদিন আবিদের কন্ঠে যে ভৎর্সনা ছিল তাতে করে তন্বী আর দ্বিতীয়বার তাকে এই কথা বলে নি । তবে মনের মাঝে এই ইচ্ছেটা ছিল । এখনও আছে ।

ওর পাশে যে মানুষটা এতক্ষণ বসেছিল তার কাছ থেকে এমন আশা করাটা তন্বীর একদমই মানায় না । ফারিজ যে আসবে সেটাও ও ভাবতে পারে নি । যদিও বিরক্তমুখেই বসেছিল তবে ফারিজকে পাশে বসে থাকতে দেখে তন্বীর কেন জানি ভাল লাগছিলো বেশ ।
বাড়ির কাছে আসার পর তন্বী রিক্সা থেকে নামতে যাবে তার আগেই ফারিজ আবারও বিরক্তমুখে বলল,
-দাঁড়াও । তাড়াহুড়ো কর না । আবারও পড়ে যাবে ।

এই বলে সে নিজে আগে নামলো । তারপর তন্বীকে ধরে নামালো । নামানোর সময় ফারিজের হাতটা চলে গেল তন্বীর কোমরে । তন্বী সাথে সাথেই কেঁপে উঠলো । তবে ফারিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে একইভাবে স্বাভাবিক মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । যেন একটা মেয়ের কোমরে হাত দেওয়াটা কোন ব্যাপারই না । খুবই স্বাভাবিক একটা কাজ ।

তন্বী আবারও খানিকটা আড়ষ্ট হয়ে গেল। সেই প্রথমদিনের মত হয়ে গেল খানিকটা । ফারিজ তন্বীর দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল,
-বাসায় যাও । পরে দেখা হবে !
-ইয়ে মানে …..
-বল
-এই ড্রেস আর নেকলেসটা ?
ফারিজ যেন ঠিক বুঝতে পারলো না । বলল,
-কি ?
-মানে এগুলো কাল কোথায় ফেরৎ দিবো?
-ফেরৎ ? ফেরৎ কেন দিবে ?
-মানে ? ফেরৎ দিবো না !
-অবশ্যই না । এগুলো তোমার !
-আরে কি বলেন এইসব ! এতো দামী জিনিস !

তন্বী বুঝতেও পারে নি ও আবার ফারিজকে তুমি থেকে আপনি বলা শুরু করেছে । পার্টিতে আপনি থেকে তুমিতে চলে গিয়েছিলো । প্রেমিককে আপনি বলাটা কেমন দেখায় । তুমি করে বলেছিলো বেশ কিছু সময় । এখন আবার নিজের অজান্তেই আবার আপনিতে চলে গিয়েছে । ফারিজ ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
-শুনো এসব নিয়ে এতো চিন্তা করতে হবে না । যা বলেছি তাই শুনো । আর ঐদুটো ড্রেসও তোমার জন্য । কাল মনজুর দিয়ে আসবে তোমার অফিসে ।

তন্বী কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না । তবে চলেও গেল না ।
দেখলো ফারিজ কাকে যেন ফোন দিচ্ছে । কয়েক মুহূর্ত পরে বলল,
-কোথায় তুমি ?
তন্বী তখনও দাঁড়িয়ে !
ফারিজ বললে,
-কি বললে ? বাসায় চলে গেছ ? তোমাকে কি বললাম যে রিক্সার পেছন পেছন আসতে ! আমি এখন বাসায় আসবো কিভাবে ? ইডিয়েট !
কিছু সময় নিরবতা !
ফারিজ বলল,
-থাক ! চলে গেছো আর কি করা ! আর আসতে হবে না !

ফোন রাখতেই তন্বী বলল,
-কি হয়েছে ?
ফারিজ খানিকটা বিরক্ত কন্ঠে বলল,
-কিছু না । তুমি বাসায় যাও ।
-মনজুর আসবে না ?
-না । গাধাটাকে বললাম রিক্সার পেছন পেছন আসতে কিন্তু সেটা নাকি সে শুনে নি । আমি রিক্সাতে উঠছি দেখে আর আসে নি ।
পেছন থেকে রিক্সাওয়ালা বলল,
-স্যার চলেন আমি আবার নিয়া যাই । ভাড়া কিছু কমায়ে রাখুম নে !

তন্বী হেসে ফেলল । তারপর ফারিজের দিকে তাকিয়ে বলল,
-যান, যান ডিসকাউন্ট পেয়ে গেলেন । এবার চলে যান । আর রিক্সা ভ্রমণটাকে এবার একটু উপভোগ করার চেষ্টা করবেন ! দেখবেন মজা লাগবে !

ফারিজ কিছু সময় তাকিয়ে রইলো । তবে কিছু বলল না । আপাতত ওর মাথা থেকে এর চেয়ে ভাল কোন উপায় বের হচ্ছে না । ফারিজ যখন রিক্সার উপর চড়ে বসলো তন্বীর মনে তখন অদ্ভুত একটা অনুভূতি হল । এটা কেমন অনুভূতি সেটা তন্বী নিজেও বলতে পারবে না । এই ছেলেটা এর আগে কোনদিন রিক্সাতে চড়ে নি । চড়তে পছন্দও করা না । অথচ ওর জন্য চড়েছে । কি অদ্ভুত ! তন্বী ফারিজের রিক্সা করে চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে রইলো একভাবে । আস্তে আস্তে রিক্সাটা চোখের আড়ালে চলে গেল । তারপরেও তন্বী গেটের কাছে দাঁড়িয়েই রইলো !

পরেরদিন অফিসে বেশ চমৎকার কয়েকটা ঘটনা ঘটলো । আগের ম্যানেজার ওকে বলেছিলো যে ওর কাজ নাকি ক্লায়েন্ট একদমই পছন্দ করে নি । অথচ সেই একই কাজ যখন তন্বী নিজে তাদের দেখালো তারা সেটা খুবই পছন্দ করলো । এর মানে স্পষ্ট যে বেটা বদমাইশ ইচ্ছে করে ওর কাজটা ক্লায়েন্টকে দেখায় নি । ওর উপর বদ নজর আগে থেকেই ছিল । তন্বীর ইচ্ছে করলো যে বেটাকে আরও একটা চড় বসিয়ে দেয় গালে ।
দ্বিতীয় ঘটনাটা ঘটলো আরও বড় । লাঞ্চ আওয়ারে ওর অফিসে খুব বড় একটা কোম্পানীর প্রতিনিধি এসে হাজির হল । সেই সাথে ওর অফিসের বসও এসে হাজির হল ওর কেবিনে । বসের সামনে বসেই তন্বী তাদের সাথে কথাবার্তা বলল । বস ওকে খুব ভাল করে লক্ষ্য করছিলো । মোটামুটি কথাবার্তা ফাইনাল করে গেল তারা । আগামী এক বছরের জন্য তারা কোম্পানীর সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে চায় । তাদের কোম্পানীর সব মার্কেটিং ক্যাম্পেইন করবে তন্বীরা । তবে তার আগে ওদের জন্য একটা প্রজেক্ট করতে হবে । সেটা যদি তাদের পছন্দ হয় তাহলে ডিল ফাইনাল হয়ে যাবে !
লোকগুলো চলে যেতেই তন্বী চিৎকার দিতে ইচ্ছে হল । কিন্তু বস সামনে রয়েছে বলে কিছু করতে পারলো না । বস ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
-তুমি দেখছি আমার কোম্পানীর জন্য আসলেই লাকি !
-থ্যাঙ্কিউ স্যার !
-থ্যাঙ্কিউ দিতে হবে না । আগে প্রজেক্টটা তৈরি কর । ওদের পছন্দ হওয়া চাই ।
-অবশ্যই । আমার কেন জানি মনে হচ্ছে পছন্দ হবে !
-দ্যাটস দ্যা স্পিরিট ! গুড লাক !
-থ্যাঙ্কিউ স্যার !

অফিস থেকে বের হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে গেল । তন্বী সবাইকে ব্রিফ করে দিয়েছে । একটা টিমও ঠিক করে ফেলেছে । সব কাজ শেষ করে বের হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে গেল । কিন্তু যতটা আনন্দ নিয়ে ও অফিস থেকে বের হয়েছিলো একটু পরেই সেটা আর থাকলো না।

অফিস থেকে বের হওয়ার পরে মাঝে মাঝেই তন্বী কিছু সময় এদিকওদিক হাঁটাহাঁটি করে । শপিং সেন্টারে ঘোরাঘুরি করে । আজকে ওর হাতে ফারিজের দেওয়া বাকি দুটো ড্রেসের প্যাকেট । ফারিজের ড্রাইভার এসে দিয়ে গেছে । প্যাকেট দুটি হাতে নিয়েই ও হাঁটছিল । অফিস থেকে কিছুদূর যেতেই দেখতে পেল তাকে ।

মেয়েটিকে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখবে সেটা তন্বী মোটেই ভাবতে পারে নি । এবং মেয়েটি যে ওর জন্যই দাঁড়িয়ে আছে সেটাও বুঝতে অসুবিধা হল না ওর । কি চায় মেয়েটি? তন্বীর মনে হল যে মেয়েটিকে ও পাশ কাটিয়ে চলে যায় । কি দরকার এই মেয়েটির সাথে কথা বলার । আর মেয়েটি তাকে পছন্দ করে না সেটা ও তার চোখমুখের অঙ্গভঙ্গি দেখেই বুঝতে পেরেছে ।

তন্বী পাশ কাটিয়ে চলে যেতে যাবে তখনই এলাইনা বলল,
-তন্বী !
নাম ধরে ডেকেছে। দাঁড়াতেই হয় । তন্বী দাঁড়ালো । তারপর এলাইনার দিকে তকিয়ে বলল,
-বলুন !
-তোমার সাথে কয়েকটা কথা ছিল !
-বলুন আমি শুনছি !
-আমার গাড়ির ভেতরে এসে বসে বলি । এখানে অনেক গরম !

তন্বীর একবার মনে হল যে ও মানা করে দেয় । কিন্তু কি মনে করে সেটা করলো না । রাস্তার পাশেই গাড়িটা দাঁড় করানো ছিল । এলাইনা গাড়ির দরজা খুলে ঢুকলো ভেতরে । তন্বী দেখলো ওরা ঢুকতেই গাড়ির ড্রাইভার বের হয়ে গেল।
তন্বী এলাইনার মুখোমুখি বসলো । এলাইনা বেশ কিছু সময় তন্বীর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
-তুমি কি জানো ফারিজ এখনও আমাকে ভালবাসে !
তন্বী কিছু বলল না । চুপ করে রইলো । ফারিজ ওকে ভালবাসে কি বাসে না সেই তথ্য জেনে ওর কোন লাভ নেই । জানার ইচ্ছেও নেই । তন্বী কিছু বলছে না দেখে এলাইনা আবারও বলল,
-আমি জানি কেবলমাত্র আমাকে জ্বালানোর জন্যই ফারিজ তোমাকে ভাড়া করেছে । এর আগেও করেছিলো একজনকে !
তন্বী এবার বলল,
-এক্সকিউজ মি ! কথাবার্তা একটু ভাল করে বল ।
তন্বী দেখতে পেল এলাইনার চোখ জ্বলে উঠলো । তবে সেটা সে সামলে নিল । এলাইনা বলল,
-ফারিজ তোমাকে কত টাকা দিয়েছে ওর গার্লফ্রেন্ড হওয়ার জন্য ? আমি তার থেকে বেশি দেব !

তন্বী অনুভব করলো ওর মেজাজটা খারাপ হতে শুরু করেছে । গাড়ির দরজা খুলে ফেলল । বের হয়ে যাচ্ছে দেখে এলাইনা ওর হাত ধরতে গেল । তবে তন্বী সেটা ছাড়িয়ে নিল । তন্বীর মত একটা সাধারণ ঘরের মেয়ে এলাইনাকে ইগ্নোর করে চলে যাচ্ছে, এটা দেখেই সম্ভবত এলাইনা আর সহ্য করতে পারলো না । সে খানিকটা চিৎকার করে বলল,
-তোমার মধ্যে কিচ্ছু নেই ফারিজের পাশে দাঁড়ানোর মত । বুঝতে পেরেছো ? কত রাত শুয়েছো ওর সাথে ? ও তোমাকে ইউজ করবে, তারপর ছুঁড়ে ফেলে দিবে ।

তন্বীর ইচ্ছে করলো ঘুরে গিয়ে কষে একটা চড় মারে । কিন্তু সেটা করলো না । ওর মাথা দপদপ করতে শুরু করলো ! খানিকটা অন্ধের মত হাটতে লাগলো কেবল । কত সময় যে তন্বী হেটেছে সেটা ও নিজেও বলতে পারবে না । বারবার কেবল এলাইনার কথাটাই মনে আসছে । ‘ফারিজ তোমাকে ভাড়া করেছে, উইজ করে ছুড়ে ফেলে দিবে !’ এই কথাগুলো মাথা থেকে বের করতে পারছে না ।


তন্বী একটা সময়ে লক্ষ্য করলো যে ও একটা বারের সামনে চলে এসেছে । বারটা ও আগেও দেখেছে । কোনদিন ভেতরে ঢোকা হয় নি । আজকে কি মনে করে ভেতরে ঢুকে পড়লো । আবছায়া অন্ধকার পরিবেশ ।
অন্য সময় হলে হয়তো তন্বী এইখানে কোনদিন আসতো না। আসতে পারতো না কিন্তু আজকে ওর মাথা ঠি মত কাজ করছে না । কোনদিকে না তাকিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো ।

ওয়েটারকে বিয়ার দিতে বলল । এই জিনিসটাই কেবল ও খেয়েছে এর আগে । এটার নামই ভাল করে জানে । ওয়েটার এক ক্যান বিয়ার দিয়ে গেল । সেটা কিভাবে শেষ করলো ও নিজেও জানে না । তারপর আরও কয়েক ক্যান শেষ করে ফেলল । হয়তো একটা ক্যানের পর আর খাওয়ার কথা ছিল না যদি তন্বী স্বাভাবিক থাকতো । কিন্তু আজকে ও স্বাভাবিক নেই । তাই অন্যকিছু ও ভাবছে না । অন্যকিছু চিন্তাও করছে না ।

ছয়টা ক্যান শেষ করে তন্বীর মনে হল যে ওর মাথা কাজ করা বন্ধ করা দিয়েছে । ও যখন ব্যাগ নিয়ে উঠে পড়লো । কেউ একজন ওকে কিছু বলল । তন্বী ঠিক বুঝতে পারলো না পরিষ্কারভাবে । সম্ভবত বিল দেওয়ার কথা বলছে । ব্যাগ থেকে কয়েকটা নোট বের করে দিল ও । তারপর খানিকটা দুলতে দুলতে বার থেকে বের হয়ে এল । রাস্তা দিয়ে ও কিভাবে হাঁটছিলো সেটা তন্বীর মনে রইলো না । কেবল একটা কথাই খানিকটা মনে পড়লো যে ও শুধু বমি করে ভাসিয়ে দিল । তারপর আর কিছু মনে নেই ওর !

ছয়

তন্বীর যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন বেশ সকাল হয়ে গেছে । বাইরের ওর মুখে এসে লাগছে । ঘুম ভাঙ্গার পর বেশ কিছুটা সময় সে বিছানাতেই শুয়ে রইলো । মাথাটা তার এখনও খানিকটা ভার ভার ঠেকছে । কেন যে মাথাটা এমন ভার ভার মনে হচ্ছে সেটা কিছু সময় বুঝতে পারলো না ।

চোখ বন্ধ করে আরও কিছুটা সময় শুয়ে রইলো । এক কাপ গরম চা খেতে ইচ্ছে করছে খুব । বিছানা থেকে জোড়ে ডাক দিলে ওর আম্মু হয়তো চা দিয়ে যাবে । কিন্তু ডাক দিতে ইচ্ছে হল না । মনে হল আরও কিছু সময় সে বিছানাতে পড়ে থাকে । আজকে তার অফিসেও যেতে ইচ্ছে করছে না ।

অফিসের কথা মনে হতেই তার গতকালকের সব কথা মনে পড়ে গেল ।

এক লাফে সে বিছানায় উঠে বসলো । এক ঝটকাতেই সব মনে পড়ে গেল । সে বারে ঢুকেছিলো এইটুকু তার মনে আছে কিন্তু তারপর ? তার পর কি হয়েছিলো? একটা ক্যান বিয়ার খেয়েছিলো এটাও একটু ভাসা ভাসা মনে আছে ! কিন্তু এর পরে আর কিছুই মনে পড়ছে না !

কি হয়েছিলো?

সে বাসায় কিভাবে এল রাতের বেলা ?

যখনই বাসার কথা মনে হল তন্বী ঘরটার দিকে তাকিয়ে দেখলো ।

ঘরটা তার অপরিচিত ! এটা তার নিজের ঘর না ।

এটা কার ঘর !

তাকে এখানে কে নিয়ে এসেছে ।

মনের ভেতরে একটা ভয় পেয়ে বসলো । বিছানার ঠিক ডান দিকে একটা বড় আয়না রয়েছে । সেখানে পুরো বিছানাটা দেখা যাচ্ছে । তন্বী নিজেকে দেখতে পেল সেখানে । সেটা দেখার সাথে সাথে আরেকবার চমকে উঠলো । ওর পরনে গতকালের পোশাক নেই । একটা কালো টিশার্ট পরা রয়েছে । নিচে একটা টাইটস রয়েছে । অনুভব করতে পালরো ওর ভেতরে কোন আন্ডারগার্মেন্স পরা নেই ।

ওর পুরো শরীর কাঁপতে লাগলো । কি হয়েছে গত রাতে ওর সাথে ?

কে ওকে নিয়ে এসেছে?

নিয়ে এসে ওর পোশাক বদলে দিয়েছে । তারপর কি করেছে ওর সাথে ?

ওর হুস ছিল না তার মানে ওর সাথে যা ইচ্ছে করতে পারে । কথাটা ভাবতেই ওর পুরো শরীরটা কেঁপে উঠলো । কি করবে ও !

তন্বী বিছানা থেকে নেমে এল ! আগে দেখা দরকার ও এখন কোথায় আছে । দরজা খুলে বের হয়ে আসতেই জায়গাটা চিনতে পারলো । ফারিজের বাসা এটা । গতদিন পার্টিতে যাওয়ার আগে ওকে এখানে নিয়ে এসেছিলো ওকে । নিচের একটা ঘরে ওকে সাজানো হয়েছিলো । উপরে সেদিন ওঠে নি । সিড়ি দিয়ে আস্তে ধীরে নিচে নেমে এল । তন্বীর মনে হল যেন বাসায় কেউ নেই । ফারিজ কোথায় ?

সে তাকে কিভাবে এখানে নিয়ে এল ? আর রাতে সে কি করেছে ওর সাথে ?

যখন ওর কাছে মনে হল যে বাসায় কেউ নেই তখনই একজন মেইড বের হয়ে এল । ওর দিকে তাকিয়ে বলল, ম্যাম আপনি উঠেছেন ! কিছু খাবেন কি ?

খাওয়ার কথা মনে হতেই তন্বীর মনে হল ওর খুব ক্ষুধা লেগেছে । তন্বীর মুখ দিয়ে কিছু বলতে হল না । মেইড খাবার টেবিল সাজাতে শুরু করলো । কাছের বেসিন থেকে হাত মুখ নিল সে । সাথে সাথেই একটা তোয়ালে নিয়ে হাজির হল মেয়েটা । তন্বী আগে কিছু খেয়ে নিতে চাইলো । ওর সত্যিই খুব বেশি ক্ষুধা লেগেছে । এই সময়ে অন্য কিছু ভাবার সময় নেই ।

খাওয়া শেষ করতে না করতেই আবারও মেইড এসে হাজির হল । তন্বীর দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার ঘরে আপনার জন্য পোশাক রেডি করা আছে । ড্রাইভার রওয়ানা দিয়েছে । কিছু সময়ের ভেতরেই চলে আসবে ।

এই বলে মেইড চলে যাচ্ছিলো । তন্বী বলল, শুনো

-জি ম্যাডাম !

-কাল রাতে আমি কখন এসেছি বাসায় ?

-ম্যাডাম আমি তো বলতে পারবো না । দারোয়ান বলতে পারবে !

-কেন ? তুমি ছিলে না ?

-জি না ম্যাডাম । আমি রাতে থাকি না এখানে । সকালে আসি আর সন্ধ্যার একটু পরেই চলে যাই । স্যার তো এখানে সব সময় থাকেন না । মাঝে মাঝে আসেন । যেদিন থাকেন সেদিন আমাকে আগে থেকে বলে যান । আমি তার জন্য রান্না করি । নয়তো কেবল ঘরদোর পরিস্কার করে চলে যাই । দারোয়ান থাকে সব সময় ।

-আচ্ছা ঠিক আছে !

খুব সময় নিয়ে তন্বী গোসল সারলো । একটু আগে সে নিজের ফোনটা চেক করেছে । সেখানে দেখা যাচ্ছে গত রাতে তার মাকে এই ফোন থেকে ফোন করা হয়েছিলো । কে করেছিলো সেটা বুঝতে কষ্ট হল না । ফারিজ ফোন করে কি বলেছে কে জানে ! সব চেয়ে বড় কথা ওর শরীর থেকে পোশাক খুলেছে সে । তার কোন হুশ ছিল না । সে ওর সাথে কি করেছে ?

অনেক কিছু করতে পারে! কথাটা ভাবতেই তন্বীর শরীরের ভেতরে একটা রাগ দেখা দিল । গতকাল ঐ এলাইনা নামের মেয়েটার কথায় সে খুব বিরক্ত হয়েছিলো । মেয়েটার সাহস তো কম না আর এই দিকে ফারিজ !

গোসল শেষ করে জামা কাপড় পড়ে নিল । গাড়িতে উঠতেই ড্রাইভার মনজুর বলল, কোন দিকে যাবো ম্যাডাম আপনার অফিস ?

-না । তোমার স্যারের অফিসের দিকে যাও !

মনজুর কোন কথা বলে গাড়ি স্টার্ট দিল ।

রিসিপশনের মেয়েটা কিছু বলতেই যাচ্ছিলো কিন্তু পেছন থেকে মনজুর এসে বলল, ইনাকে ভেতরে যেতে দেন । রিসিপশনের মেয়েটা আর কিছু জানতে চাইলো না । ভাগ্য ভাল বুদ্ধি করে তন্বী মনজুরকে সাথে নিয়ে এসেছে । নয়তো এই বিশাল অফিসের ভেতরে সে ঢুকতে পারতো না এতো সহজে !

মনজুর ওকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেল । একেবারে ফারিজের ক্যাবিনের সামনে গিয়ে থামলো । ওকে থামতে হল । আরও একজন মানুষ ওদের পথ রোধ করে দাড়িয়েছে । ছেলেটা সম্ভবত পিএস টাইপের কিছু হবে । একেবারে কেবিনের সামনে তার ডেস্ক ! তন্বীর দিকে তাকিয়ে বলল, এখন স্যার মিটিংয়ে আছে । আপনি ভেতরে যেতে পারবেন না ।

মনজুর কিছু বলতে গেল তবে তন্বী তাকে হাত ইশারা করে থামিয়ে দিল । তারপর লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি কি পোস্টে চাকরি কর ? ফারিজের পিএস ?

তন্বী দেখলো সামনে দাড়ালো স্যুট পরা মানুষটার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে । সম্ভত তন্বী ওকে তুমি করে বলছে এটা সে খানিকটা মেনে নিতে পারছে না । কিন্তু তন্বীর উদ্ধতা দেখে কিছু বলতেও পারছে না । তার বসের নাম ধরে ডাকছে । তার উপর পেছনে বসের ড্রাইভার দাড়িয়ে রয়েছে ।

তন্বী কিছু সময় ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকলো । বুঝতে কষ্ট হল না যে ছেলেটা দ্বিধান্তিত হয়েছে । তন্বী আর কিছু চিন্তা করলো না । সোজা কেবিনের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে গেল । পেছনে থেকে ছেলেটা ওকে আটকানোর চেষ্টা করেছিলো কিন্তু তন্বী সেটা শুনলো না ।

কেবিনের ভেতরে ঢুকতেই দেখতে পেল ফারিজের সাথে আরও তিন মানুষ রয়েছে । কোন বিষয় নিয়ে তারা কথা বলছিলো । ওকে ঢুকতে দেখে ওর দিকে ফিরে তাকালো । ফারিজের চোখ খানিকটা কৌতুহল । অন্য তিনজন তাকিয়ে আছে ওর দিকে । তন্বী সেদিকে মন দিল না । ফারিজের দিকে তাকিয়ে বলল, উই নিড টু টক !

ফারিজ বলল, এখন ? কাজ করছি তো !

সামনে থেকে একজন বলল, ফারিজ সাহেব মনে হয় অনেক কাজ করা হয়েছে আপাতত । আমরা অনেক সময় ধরেই কথা বলছি । একটু ব্রেক দরকার । লাঞ্চ আওয়ারের পরে আবার শুরু করি !

ফারিজ সেই লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল, আর ইউ শিওর ?

-হ্যা হ্যা অবশ্যই । কোন সমস্যা নেই । আমাদের মুল আলোচনা তো হয়েই গেছে । এখন কেবল কিছু মাইনর আলচোনা বাকি ! আপনারা বরং নিজেদের মাঝে কথা শেষ করে নিন ।

ফারিজ হাতের ডান দিকে একটা সুইচে চাপ দিল । সাথে সাথে দরজা খুলে সেই পিএস ছেলেটা ঘুরে ঢুকলো ।

-জি স্যার ?

-ইনাদের ভিআইপি গেস্ট রুমে নিয়ে যাও তারপর লাঞ্চের ব্যবস্থা কর । দেখো কি খেতে চান ওনানা ! ঠিক আছে ?

-জি স্যার ।

-আর আমাদের জন্য কফি দাও দুই কাপ ।

তন্বী ফারিজের সামনে বেশ কিছু সময় বসে রইলো । তাকিয়ে আছে ফারিজের দিকে । মনে মনে যে রাগটা সে নিয়ে এসেছিলো, এমন কি কেবিনে ঢুকে যে রাগ নিয়ে কথাটা বলেছিলো, সেটা কেন যেন এখন আর ধরে রাখতে পারছে না । তারপরেও তন্বী বলল, কাল রাতে আমাদের মাঝে কী হয়েছে ?

ফারিজ প্রশ্নটা শুনে যেন খুব কৌতুক বোধ করলো । তারপর বলল, কী হবে ?

-আমি কিভাবে জানবো?

ফারিজ হাসলো । তারপর বলল, আমি কেন বলবো শুনি? বিয়ার খেয়ে মাতাল হয়েছিলে তুমি । কী করেছো সেটার জন্য তো অন্য কেউ দায়ী হতে পারে না । সহ্য হয় না তো খেতে বলেছে কে?

তন্বী ক্ষুদ্ধ চোখে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো ফারিজের দিকে । তারপর বলল, আমার যদি কিছু হয় তাহলে তোমাকে আমি দেখে নিবো বললাম ! সত্যিই দেখে নিবো । তুমি আমাকে পেয়েছো কি ? তোমার একটা উপকার করেছি কি না তাই বলে এই সুযোগ তো তোমাকে দেই নি আমি ।

তন্বী ফারিজকে উঠে দাড়াতে দেখলো। ফারিজ আস্তে আস্তে এগিয়ে এল ওর দিকে । তন্বী কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না । ওর মনে আবারও সেদিনের সেই ভয়টা জেকে বসলো । ছেলেটার চোখে কি যেন আছে । তন্বী কিছুতেই সেটা সহ্য করতে পারে না ।

ফারিজ তন্বীকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরলো খানিকটা । তন্বীর সব হাট পা অবশ হয়ে এল মুহুর্তেই । ফারিজ ওর মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলল, গত রাতে কী হয়েছিলো বলবো? তুমি এতো টাই ড্রাংঙ্ক হয়েছিলে যে বমি করে ভাসিয়ে দিয়েছিলে । তোমাকে তুলে নিয়ে ঘরে আসি । তারপর ওয়াশ রুমে নিয়ে যাই । তোমার শরীর থেকে সব জামা কাপড় আমি নিজে খুলেছি ।

কথাটা বলে তন্বীর চোখের দিকে একভাবে তাকালো ফারিক । তন্বীর বুকটা কেমন কেঁপে উঠলো । সামনে দাড়ানো মানুষটা কালকে ওকে কাপড় ছাড়া দেখেছে । তন্বী কোন মতে বলল, তারপর?

ফারিজ যেন খুব মজা পেল । তারপর বলল, আরও শুনতে চাও ? আচ্ছা শুনো তাহলে । যখন ঐ অবস্থাতে তোমাকে বিছাতে শুইয়ে দিয়ে ফিরে যাচ্ছিলাম তখন তুমি হঠাৎ আমার হাত চেপে ধরলে । বললে কোথায় যাও বয়ফ্রেন্ড ! তুমি কেমন বয়ফ্রেন্ড শুনি ? নিজের গার্লফ্রেন্ডকে এভাবে একা ফেলে যাচ্ছো ! তারপর আমাকে চেনে নিয়ে গেল বিছানাতে …. আরও শুনবে ?

তন্বী চোখ বন্ধ করে ফেলল । খানিকটা কল্পনা করার চেষ্টা করলো গত রাতের ঘটনা । আর ভাবতে পারলো না । ওর পা টা যেন আরও একটু কাঁপতে লাগলো । ফারিজ ওর আরও খানিকটা কাছে চলে এসেছে । এমন সময় খুট করে দরজা খুলে গেল । ফাজির পিএস ছেলেটা হাতে দুইটা কাপ নিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়েছে । ওদেরকে ওভাবে দেখে খানিকটা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে হয়ে দাড়িয়ে রইলো । ফারিজ বলল, জাকির নক করে ঢোক ।

-সরি স্যার । দুই হাতে কফি তো …

যাও কফি রাখো টেবিলে । গেস্টদের খাবার দেওয়া হয়েছে ।

-জি স্যার ।

-আচ্ছা যাও !

জাকির নামের ছেলেটা দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল দ্রুত । ফারিজ এবার ওকে ছেড়ে টেবিলের কাছে চলে গেল । সেখান থেকে একটা কাপ এনে তন্বীর হাতে তুলে দিল । তারপর আবারও নিজের ডেস্কের দিকে এগিয়ে গেল । বলল, কৌতুহল মিটেছে ?

তন্বী কোন কথা বলল না ।

-এবার থেকে আর একা একা বিয়ার খেতে যেও না। যদি বিয়ার খেতেই ইচ্ছে হয় তাহলে আমাকে বল । আমার বাসাতেই আছে । ভাগ্য ভাল যে আমি তোমাকে আনতে মনজুরকে পাঠিয়েছিলাম । ও তোমার খোজ পেয়ে আমাকে ফোন দিয়েছিলো । নয়তো কাল কী হত একবার ভেবেছো কি ?

তন্বী মনে মনে বলল আর হওয়ার বাকি আছে কি ! তন্বী বলল, আমি বাসায় যাবো ।

-কফি খেয়ে যাও ।

-না কফি খাবো না। বাসায় গিয়ে বিয়ার খাবো । তারপর আবারও মাতাল হব । তোমার কোন সমস্যা ?

ফারিজ কফিতে একটা চুমুক দিয়ে হা হা করে হেসে ফেলল । তারপর, মনজুর আছে । ওকে নিয়ে যাও ।

-লাগবে না । আমি একাই যেতে পারবো । আজকের পর থেকে আমাদের মধ্যে আর কোন সম্পর্ক নেই । বুঝতে পারছো । যে ডিল হয়েছিলো সেটা অফ ! টাটা ।

ফারিজকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তন্বী বের হয়ে গেল । দরজা দিয়ে বের হতেই লক্ষ্য করলো যে অফিসের প্রতিটা চোখ ওর দিকে নিবদ্ধ । এতো সময় সবাই কান খাড়া করে যে ওদের দিকেই তাকিয়ে ছিলো সেটা বুঝতে বাকি রইলো না ।

তন্বী কোন দিকে না তাকিয়ে দ্রুত লিফটের দিকে হাটতে শুরু করলো । নিজেকে ধরে কষে একটা চড় মারতে ইচ্ছে করছে । কেন এমন একটা পাগলামো করতে গেল সে । কি দরকার ছিল বারের ভেতরে ঢোকার । এমনিতেও একটা বিয়ার খেয়ে কত বড় ঝামেলাতে পড়েছিলো । আর গতদিন কত গুলো খেয়েছে সেটা ওর মনেও নেই । ফারিজ যা বলল তা যদি সত্য হয় !!

তন্বী আর কিছু ভাবতে পারলো না । আর কিছু ভাবতে চায় না । সব কিছু ভুলে যেতে চায় !

সাত

তন্বীর অফিসে দম ফেলার মত সময় এখন নেই । যে কোন অফিসের প্রধান হওয়াটা যে কত প্যারার একটা কাজ সেটা তন্বী এই কদিনের হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে । এখন অফিসের সব কিছু তন্বীর নজরদারীতে হচ্ছে । হতে হচ্ছে । অনেক কিছুই বদলে গেছে । তন্বী নিজের মত করে সামলে নিচ্ছে । প্রথমে একবার মনে হচ্ছিলো যে পারবে না । তবে এখন মনে হচ্ছে পারবে ।

আগের ম্যানেজার যে কোন প্রজেক্টের কাজ অন্যের উপর চাপিয়ে দিয়ে নিজে বসে বসে হাওয়া খেত তার ভুল ভ্রান্তি বের করতো । কিন্তু তন্বী এই কাজটা করে নি । যে কোন প্রজেক্টের সাথে তন্বী একেবারে প্রথম থেকে যুক্ত থাকছে । নিজে কাজ করছে । এই কারনটা সম্ভবত তন্বীকে অফিসে জনপ্রিয় করে তুলল ।

আগে তো তন্বী কেবল একটা প্রজেক্ট নিয়েই ব্যস্ত থাকতো এখন নিজের একটা প্রধান প্রজেক্ট বাদ দিয়েও প্রায় প্রতিটি প্রজেক্টে ওর সংযুক্তি রয়েছে । তন্বীর এই ব্যস্ততা ভাল লাগছে । প্রথম প্রথম একটু কষ্ট যে হয় নি সেটা না তবে সামলে নিয়েছে সে । সব চেয়ে বড় কথা রাতে ভাল ঘুম হচ্ছে ওর । প্রতিদিন কঠিন পরিশ্রম করে বাসায় গিয়ে যখন হাজির হয় তখন ক্লান্তিতে শরীর ভেঙ্গে পড়ে । খেয়েই ঘুম দেয় । এক ঘুমে রাত পার । আবিদের সাথে ওর ব্রেকআপের পর ঘুমের বেশ সমস্যা হচ্ছিলো । তবে সেটা এখন একেবারে চলে গেছে ।

আজকে প্রায় এক মাস পরে তন্বী একটু স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলল । যে বড় প্রজেক্টটা নিয়ে ওরা কাজ করছিলো সেটা আজকে শেষ হয়েছে । ক্লান্ত খুবই পছন্দ করেছে ওদের কাজ । আগামী এক বছরের জন্য ওদের সাথে এক ডিল ফাইনাল হয়ে যাবে খুব জলদি । বস ফোন দিয়েছিলো তন্বীক । ওর খুব প্রসংশা করলো ।

অফিস ছুটি পর আরও কিছু সময় সে নিজের কেবিনে বসে রইলো । সামনে কদিন একটু কাজের চাপ কম । কটা দিন একটু আরাম করে ঘুমানো যাবে । কিন্তু তন্বী জানেও না যে তার জন্য তার নিজের বাসাতে কি অপেক্ষা করছে ।

আজকে একটু অফিস থেকে বের হয়ে বেশ কিছু সময় সে হাটাহাটি করলো । এদিক ওদিক আগে আগের মত । আগে প্রায়ও অফিস শেষ করে সে এদিক ওদিক হাটাহাটি করতো । আজকেও বেশ কিছুটা সময় সে হাটাহাটি করলো একা একা । তারপর বাসার দিকে রওয়ানা দিল । বাসায় পৌছাতে পৌছাতে আজকে একটু রাত হয়ে গেল। বাসায় ঢুকতেই বড় সর একটা ধাক্কা খেল সে । ওর মনে হল যেন ও অন্য কারো বাসায় ঢুকে পড়েছে । ভাসা ভর্তি মানুষ জন । বেশির ভাগ মানুষদেরই ও চিনে না । কোন দিন দেখে নি । ও বাসার ভেতরে ঢুকতেই সবাই ওর দিকে ঘুরে তাকালো । তন্বী ঠিক বুঝতে পারছিলো না যে কি করবে !

এরা কারা ! এদের তো আগে কোন দিন দেখে নি ?

ওর মা কিংবা বাবার পরিচিত মানুস হতে পারে না । কারণ ওদের যা আত্মীয় স্বজন আছে সবাইকেই মোটামুটি সে চিনে । এতো গুলো অপরিচিত মানুষের মাঝে হঠাৎ করেই একজন পরিচিত মুখ সে দেখতে পেল !

মনের ভেতরে একটা ধাক্কা দিলো সাথে সাথে !

একটা প্রশ্নই মাথার ভেতরে এল !

এই মহিলা এখানে কি করছে ?

তার তো এখানে কোন ভাবেই থাকার কথা না । এখানে কি করছে ?

ওর বিস্ময় আরও একটু বাড়িয়ে দিতে দেখতে পেল ভেতরের ঘর থেকে এক বৃদ্ধা বের হয়ে এল হাসি মুখে । বৃদ্ধা তন্বীকে দেখে আরও একটু বিস্তৃত হাসি দিলেন ! বললেন, হেয়ার ইউ আর মাই চাইল্ড ! কাম হিয়ার !

তন্বী ধীরে ধীরে ফারিজের দিম্মার দিকে এগিয়ে এল । তিনি তন্বীর মাথায় হাত রেখে দোয়া করলেন । তারপর তার কপালে একটু ছোট্ট চুমু খেয়ে বললেন, তুমি তো সেই গেলে আমাদের একেবারে ভুলেই গেলে । তাই চলে এলাম তোমার সাথেই দেখা করতে !

এমন যে কিছু হতে পারে সেটা তন্বী মোটেও ভাবতে পারে নি । ফারিজের সাথে শেষ দেখা হয়েছিলো সেই মাস খানেক আগে । এরপর সে কি করেছে কিংবা কোথায় গিয়েছে সেই ব্যাপারে তন্বীর কোন ধারনা নেই । সে সব কিছু শেষ করে দিয়ে এসেছিলো । তার আর কিছু ভাবার ছিলও না । আর নিজের কাজ নিয়েই সে ব্যস্ত ছিল বিধায় অন্য কিছু ভাবার সময়ও ছিল না ।

তন্বীর এবার তাকালো ফারিজের মায়ের দিকে । তিনি তন্বীর দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমাকে আমি কী বলেছিলাম ?

তন্বী ঠিক কিছু মনে করতে পারলো না যে কি বলেছিলেন উনি । খানিকটা মনে করার চেষ্টা করলো ।

-এসো আমার সাথে !

এই বলে তন্বীকে নিয়ে তন্বীর নিজের ঘরের দিকে হাটা দিল । যাওয়ার পথে রান্না ঘরে উকি দিয়ে দেখলো ওর মা রান্নাতে ব্যস্ত । তাকে দুজন অপরিচিত মহিলা সাহায্য করছে । তাদের সাথেই গল্প করছে । ফারিজের দিম্মও এসে যোগ দিল তাদের সাথে । তন্বীর দিকে তাকিয়ে ওর মা একটু হাসলো । বুঝতে কষ্ট হল না যে পুরো বাড়িটা ফারিজের আত্মীয় স্বজন দখল নিয়ে নিয়েছে । তন্বী ফাজির মায়ের সাথে নিজের ঘরে ঢুকলো । ফারিজের মা ওর দিকে তাকিয়ে বলল, আমি কি তোমাকে বলেছিলাম না যে কোন ঝামেলা হলে আমার কাছে আসবে । হঠাৎ করেই কিছু সিদ্ধান্ত নিবে না !

তন্বী কিছু বলতে গিয়েও যেন বলতে পারলো না ।

-তোমরা যে ঝগড়া করে ব্রেক আপ করেছো এটা না তুমি বলেছো না ফারিজ ! কেউ বলে নি আমাকে ! কদিন ধরেই ফারিজের মুড অফ ! ঠিক মত খায় না, ঘুমায় না। সারারাত বাড়িময় পায়চারি করেছে ! বাড়ির সবাই এটা নিয়ে খুব চিন্তিত ! তারপর সেই যে ইউএসতে গেল আর আসার নাম নেই । ঠিক মত ফোনটোন দেয় না । তারপর জাকিরের কাছ থেকে শুনতে পেলাম যে তুমি অফিসে গিয়েছিলে । ব্রেক আপ করে এসেছো !

জাকির টা কে?

তন্বী মনে করার চেষ্টা করলো । তারপর মনে পড়লো । ফারিজের সেই পিএস টাইপের ছেলেটা !

তন্বীর মা বলল, ফারিজ আর তোমার মাঝে সেদিন রাতে কি হয়েছে সেটাও জাকির শুনেছে । প্রথমে বলতে চাইছিলো না তবে আমি ধমক দেওয়াতে বলেছে !

কথাটা শোনার সাথে সাথে তন্বীর বুকটা কেঁপে উঠলো । একটা তীব্র লজ্জার অনুভূতি পুরো শরীর জুড়ে বয়ে গেল । নিচের দিকে তাকিয়ে ফেলল । ইচ্ছে হচ্ছিলো এখনই মাটির সাথে মিশে যায় সে ।

-এতো বড় সাহস বেয়াদপ টার । ওর বাবা কিংবা দাদু যদি এই কথা জানতে পারে তাহলে ওর পিঠের ছাপ তুলে ফেলবে একেবারে ! তুমি যে রাগ করে ব্রেক করেছো সেটা আমি বুঝতে পারছি ! কিন্তু মা এভাবে কিছু করা তো ঠিকনা । তুমি এভাবে ছেড়ে দিবে ?

তন্বী মুখ তুলে তাকালো ! সে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না ।

ফারিজের মা বলল, শুনো মেয়ে নিজের অধিকার নিজে আদায় করে নিতে হয় । বুঝেছো ? এভাবে ছেড়ে দিতে নেই ।

-মানে ?

-বোকা মেয়ে বলে কি ! মানে আবার কি কথা ! তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে খুব । কেবল আমারই না পরিবারের সবাই । আমরা কোন ভাবেই চাই না তোমাকে যেতে দিতে । অন্তত এখন আরও না ।

এখন তো আরও না বলতে ফারিজের আম্মু কি বোঝাতে চেয়েছে সেটা তন্বীর বুঝতে মোটেও কষ্ট হল না ।

-আমি তো সারা জীবন ফারিজের বাবা কথা মত চলে এসেছি । আমার শ্বাশুড়িও তাই । কোন দিন তাদের ছেড়ে যাওয়ার কথা মনেও আনি নি । কিন্তু তোমার ভেতরে একটা অন্য ভাব আছে । এই যে একটা ড্যাম কেয়ার ভাব এটা আছে ! এটা ফারিজকে সোজা করবে ! আর ফারিজ এই কটা দিন খুবই টেনশনে ছিল । বলাই বাহুল্য তোমাকে নিয়ে ! ফারিজের ইগো বেশি তো এই জন্য তোমার কাছে যে আসছে না নয়তো চলে আসতো । যাই হোক এই সব ভেবে এখন লাভ নেই । আজকেই সব সমাধান হয়ে যাবে !

-মানে?

-মানে তুমি বুঝবে একটু পরেই । ফারিজ ল্যান্ড করে ফেলেছে । একটু পরেই সে এখানে চলে আসবে । তাকে যদিও কিছু বলি নি । ওর দাদু আর তোমার বাবা গিয়েছে ফারিজকে আনতে । দাদুর সামনে কিছু বলতে পারবে না ও । ফারিজের বাবা অবশ্য বেশ ব্যস্ত । সে আজকে হয়তো আসতে পারবে না এখানে । তাকে আমি সব বলেছি । সে আপত্তি করে নি ।

তন্বীর মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হল না । কেবল সে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো । সে যেন কিছুই বুঝতে পারছে না । এসব কি হচ্ছে ওর সাথে আর কেন হচ্ছে ! সামনে দাড়ালো এই মহিলা কি বলছে !

ঘন্টা খানেক পরে যা ঘটতে শুরু করলো তার জন্য তন্বী মোটেই প্রস্তুত ছিল না । ফারিজ তীব্র বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে ছিল তন্বীর দিকে ঠিক একই ভাবে তন্বীও তাকিয়ে রয়েছে ফারিজের দিকে । কি হচ্ছে দুজনের কেউ বুঝতে পারছে না । কেউ বাঁধাও দিতে পারছে না । ফারিজের দুই পাশে ওর বাবা আর দাদু বসে আছে । একেবারে শেষ মুহুর্তে সে চলে এসেছে ছেলের বিয়েতে !

হ্যা । ওর দাদু ঠিক করেছে অনেক হয়েছে । এখনই ওদের বিয়ে হয়ে যাবে । পরে একটা সময় সুযোগ বুঝে অনুষ্ঠান করা হবে । ফারিজ গত একমাস যে খুব কষ্ঠে থেকেছে এটা সে দাদু হিসাবে দেখতে পারছে না । সবার ধারনা হয়েছে ফারিজের এই অবস্থা হয়েছে কারন তন্বী ওর সাথে ব্রেক আপ করেছে । তাই এখন এমন ব্যবস্থা করা হবে যেন আর ব্রেক আপ না হতে পারে !

তন্বীর এক পাশে ওর মা বসেছে আর অন্য পাশে ফারিজের দিম্মা বসেছে । তন্বী মা খুশি । এতোদিন সে তন্বীর বিয়ে নিয়ে কত চিন্তা করছিলো পরে ফারিজদের মত পরিবারে তন্বীর বিয়ে হচ্ছে এটা জানতে পেরে সে আর কোন আপত্তি করে নি । তন্বীর বাবা একটু বলতে চেয়েছিলো যে এতো তাড়াহুড়ার দরকার কি ছিল । তবে সবার সামনে সেই আপত্তি টেকে নি ।

রাত এগারোটার ভেতরে তন্বী আর ফারিজের বিয়ে হয়ে গেল । ফারিজ কিংবা তন্বী কেউ তখনও ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে পারছে না । তাদের দুইজনেরই মনে হচ্ছে যেন তারা কোন স্বপ্ন দেখছে । এখনই সে ঘুম ভেঙ্গে যাবে । ঘুম ভেঙ্গে সব কিছু আগের মত হয়ে যাবে ।

রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ফেরার আগে ফারিজের মা তন্বীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো । তারপর বলল, এখন থেকে তুমি আমাদের পরিবারের অংশ । বুঝতে পেরেছো কি ? এখন থেকে সব কিছুর উপর তোমার অধিকার রয়েছে । বুঝেছো মেয়ে ?

তন্বী কেবল মাথা নাড়ালো ।

-খুব জলদি তোমাকে আমাদের বাসায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবো । তার মানে এই না যে তুমি আমাদের বাসায় আসতে পারবে না । এখন থেকে তোমার দুইটা বাড়ি । দুই বাড়িতে নিয়মিত যাওয়া আসা করবে ।

তন্বী আবারও মাথা নাড়ালো ।

রাতে তন্বীর ঘুম এল না কিছুতেই । কি থেকে কি হয়ে গেল আর কিভাবে হিসাবে হয়ে কিছুই বুঝতে পারলো না সে ! কেবল একটা কথাই তার মনে হচ্ছে সেদিন যদি সেই এক ক্যান বিয়ার সে না খেত তাহলে আজকে তার ফারিজের সাথে বিয়ে হত !

আট

তন্বী কেন যে ফারিজের অফিসে এসে হাজির হল সেটা তন্বী নিজেও বলতে পারবে না। বাসা থেকে সে বের হয়েছিলো অফিসের যাওয়ার উদ্দেশ্যেই । বের হওয়ার সময় তন্বী মা ওর দিকে খানিকটা অবাক চোখে তাকিয়ে বলল, তুই আজকেও অফিস যাবি ?

তন্বী তার থেকেও অবাক হয়ে বলল, অফিস যাবো না কেন ?

-বাহ রে কাল না তোর বিয়ে হল !

ফারিজের সাথে বিয়ে হওয়াতে সব থেকে বেশি খুশি হয়েছে তন্বীর মা । সে সব সময়ই চাইতো তন্বী যেন একটা ভাল জায়গাতে বিয়ে হয়। তার ইচ্ছে ছিল তন্বীর বাবার মতই একজন সরকারী কর্মকর্তার সাথেই বিয়ে হোক । সারা জীবন সে যেমন আর্থিক ভাবে নিশ্চিত থেকেছে, তার মেয়েও যেন তেমন থাকে সেটাই চেয়েছে । তবে ফারিজ সাথে বিয়ে হওয়াতে তন্বীর মা খুব বেশি খুশি হয়েছে ।

তন্বী মায়ের দিকে কিছু সময়ে তাকিয়ে থেকে বের হয়ে গেল ঘর থেকে । গেট দিয়ে বের হতেই দেখতে পেল মার্সিটিজ গাড়িটা ।

ওর বের হওয়ার সাথে সাথে দরজা খুলে মনজুরকে বের হতে দেখলো ।

তন্বী বলল, তুমি এখানে ?

মনজুর হাসলো । তারপর বলল, জি আজ থেকে আমার ডিউটি আপনার এখানে ।

-মানে ?

বলেই বুঝতে পারলো কারণ টা । এখন তো সে আর সাধারন কেউ নেই । মনজুর বলল, আপনার জন্য গাড়ির অর্ডার দেওয়া হয়েছে । সেটা যত দিন না আসছে ততদিন এইটা আপনার !

-তা আমি এটাতে চড়লে তোমার স্যার কোনটাতে চড়বে ?

-স্যার আরেকটা গাড়ি আছে ।

মনজুর দরজা খুলে দিল । গাড়িতে উঠে বসতে বসতে তন্বীর মনে হল আজকে সে অফিস যাবে না । আপাতত অফিসে কাজের চাপ নেই । কাল পরশু থেকে কাজ শুরু করা যাবে ।

-ম্যাডাম কোন দিকে যাবো । অফিসের দিকে ?

-না । তোমার স্যার অফিসে চল !

-জি আচ্ছা ।

তন্বীর বিয়ের কথা বাইরে এখনও প্রকাশ পায় নি । তবে ফারিজের অফিসে পৌছানোর পরেই কেন জানি মনে হল অফিসের সবাই ব্যাপারটা জেনে গেছে । গতদিন সেই রিফিপশনের মেয়েটা ওকে দেখতেই দাড়িয়ে সালাম দিল । তারপর যতজনের সাথে দেখা হল প্রতিটা মানুষ উঠে দাড়ালো । তন্বী নিজে ঠিক বুঝতে পারলো না যে এই একদিনের ভেতরে ওকে সবাই চিনে ফেলল কিভাবে ?

আর খবরটা জানলোই বা কিভাবে ?

ফারিজের কেবিনের সামনে এসে গতদিনের মতই জাকিরকে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো । জাকিরের চেহারা দেখেই বুঝতে পারছে যে আজকে তাকে আটকানোর কোন চেষ্টা সে করবে না । তন্বী দাড়িয়ে জাকিরের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার স্যার কোথায় ?

জাকির বিগলিত হাসি দিয়ে বলল, স্যার ভেতরেই আছে । আপনি যে এসেছেন এই খবর তার কাছে পৌছিয়ে গিয়েছে ।

-আজকে আটকাবেন না আমাকে ?

-কি যে বলেন ম্যাডাম ! হে হে হে !

তন্বী আর কিছু জানতে না চেয়ে দরজাতে হাত রাখলো । নিজেই দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো । তার মনে অদ্ভুত একটা অনুভুতি হচ্ছে । এই অনুভূতিটা সে ধরতে পারছে না । এমন কেন হচ্ছে সেটা তার ধারনার বাইরে । দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখতে পেল তাকে । আজকে সে টেবিলের উপরে খানিকটা হেলান দিয়ে বসে আছে । ঘরে ঢুকতেই প্রথমেই চোখাচোখী হল তন্বীর সাথে । তন্বী সেখানেই থেমে গেল ।

গত মাসে যখন এসেছিলো তখন তার মাথার ভেতরে অন্য কিছু চলছিলো । তাই ফারিজকে সে ভাল করে লক্ষ্য করে নি । আজকে ভাল করেই লক্ষ্য করলো তাকে । আবারও সে মাথার ভেতরে চক্কর দিয়ে উঠলো । তবে এইবার মাথার ভেতরের সেই অনুভূতিরার ভিন্ন একটা রূপ কাজ করছে । সামনে দাড়ালো এই মানুষটা তার স্বামী ! কি আশ্চর্য একটা ব্যাপার !

ফাজির তন্বীর দিকে তাকিয়ে বলল, কি ব্যাপার এখানে কেন ?

তন্বী খানিকটা সামলে নিল । ফারিজের কন্ঠটা কেমন যেন একটু রুক্ষ শোনাচ্ছে । তন্বী অবশ্য খুব একটা তোয়াক্কা করলো না । বলল, এমনি এলাম তোমাকে দেখতে !

-আমাকে দেখার কি আছে?

-কিছু নেই?

বলে আরেকবার ফারিজের দিকে ভাল করে তাকালো । এমন ভাবেই তাকালো যে তন্বী অনুভব করলো ফারিজ যেন খানিকটা অস্বস্তিবোধ করছ। শেষে আর না থাকতে পেরে ফারিজ বলল, কি বেয়াদবের মত তাকিয়ে আছো তুমি ?

তন্বী বলল, বাহ তুমি আমাকে বেহুশ পেয়ে বেয়াদবের মত আচরন করতে পারবে আর আমি আমার বিয়ে করা স্বামীর দিকে ভাল করে তাকাতেও পারবো না ?

ফারিজ কিছু বলতে গিয়েও আটকে গেল । কি বলবে সেটা সত্যিই বুঝতে পারলো না । কথাটা হজম করতে যেন ওর একটু সময় লাগছে । তন্বী বলল, আমি তোমার সাথে ব্রেক আপ করে গিয়েছিলাম বলে কি বিরহেই না তুমি পরে গিয়েছিলে । শুনলাম নাকি রাতে ঘুমাতেই পারো নি । তা কাল রাতে ঘুম হয়েছে তো ?

রাজির খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তন্বীর দিকে । সত্যিই কিছু বুঝতে পারছে না । মেয়েটিট আচরন কেমন যেন অস্বাভাবিক লাগছে । এমন কেন হচ্ছে সে নিজেও বুঝতে পারছে না । তবে অবাক করে দেওয়ার ব্যাপার হচ্ছে কাল রাতে সত্যিই তার ঘুম ভাল হয়েছে । বেশ ভাল হয়েছে ।কেন ভাল হয়েছে সেটার কোন ব্যাখ্যা তার কাছে ছিল না । যেখানে গত রাতে এমন ভাবে ওর বিয়েটা হয়েছিলো ও ভেবেছিলো হয়তো সারা রাত নির্ঘুম কাটাতে হবে ।

ফারিজ বলল, তোমার সাথে আমার সাথে কি ডিল হয়েছিলো মনে আছে তো তোমার?

তন্বী হাসলো । তারপর বলল, হাহ ! আসছে ! শুনো সেই ডিল সেইদিনই শেষ ।

তারপর ফারিজকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সে ঘর থেকে বের হয়ে গেল । ফারিজ কিছুটা সময় তন্বীর চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে রইলো এক ভাবে । ও এখনও ঠিক বুঝতে পারছে না আসলে কি হচ্ছে । এই মেয়ে এতো সাহস পেল কিভাবে !

কিন্তু ফারিজের সম্ভবত তন্বীর ব্যাপারে ভুল ধারনা জন্মেছিলো । সে ভেবেছিলো যে সে ঠিকই তার কাজ করিয়ে নিতে পারবে । তন্বীর ব্যাপার তার অনুভূতির কোন ব্যাখ্যা নেই । তবে মেয়েটা যে তার জীবনে অন্য সাধারন কোন মেয়ে নয় সেটা বুঝতে পারলো আরও কয়েকদিন পরে । বিয়ের পর তন্বি প্রায়ই তাদের বাসায় গিয়ে ঘুরে যেত । বিশেষ করে অফিস শেষ করে নিজের বাসায় ফেরার আগে ওদের বাসা হয়ে যেত । ফারিজের সাথে মাঝে মধ্যে দেখা হত । ফারিজ অন্তত এটা বুঝে গেল যে এই মেয়ে তাদের পরিবারের ভেতরে আস্তে আস্তে একটা শক্ত আসন গেড়ে বসছে । অথচ সে কি চেয়েছিলো ?

সে চেয়েছিলো মেয়েটার সাথে একটু মেলামেশা শুরু করলেই এলাইনা সুরসুর করে তার কাছে ফিরে আসবে । কিন্তু এদিকে সব কিছু ওলটপালট হয়ে গেল । পরিকল্পনা মাফিক কোন কাজ হল না ।

বিয়ের ঠিক মাস খানেক পরে এলাইনা ফারিজে অফিসে এসে হাজির । এলাইনা কে দেখে ফারিজ খানিকটা অবাকই হল । ভেবেছিলো হয়তো এই মেয়ে ওকে ভুলেই গিয়েছে । এলাইনার চোখ দেখেই বুঝতে পারছিলো কিছু হয়েছে !

ফারিজকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলো, ঐ মেয়ে কে তুমি বিয়ে করেছো?

ফারিজ কি বলবে বুঝতে পারলো না । বিয়ে যে করেছে সেটা তো মিথ্যা না ।

এলাইনা এবার সরাসরি এসে ফারিজকে জড়িয়ে ধরলো । ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বলল, আমি বুঝতে পারি নি । আমি ভেবেছি যে আমি হয়তো তোমাকে ভালবাসি না । আর মনে হয়েছে যে তুমি আমার কাছে ফিরে আসবে । আমি জানি ঐ মেয়েকে তুমি ভালবাসো না । তোমার বাসা থেকে জোর করে বিয়ে দিয়েছে !

ফারিজ কিছু বলতে যাবে তখনই ওর কেবিনের দরজা খুলে গেল । দেখতে পেল সেখানে তন্বী দাড়িয়ে আছে !

এই রে সর্বনাশ করেছে!

এই মেয়ে এখানে কেন!

ফারিজ ভেবেছিলো তন্বী বুঝি এবার রাগ করে চলে যাবে । আর ওর কাছে ফিরে আসবে না । ওর নামে কেস করবো । একটা বড় পরিমান টাকা কম্পনসেশন দিতে হবে । কিন্তু এসবের কিছুই হল না । তন্বী রাগান্বিত চোখে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো । এলাইনা ততক্ষনে ফারিজকে ছেড়ে দিয়েছে । তন্বী সোজা এগিয়ে এল । তারপর এলাইনা আর ফারিজকে অবাক করে দিয়ে খপ করে এলাইনার চুল চেপে ধরলো ! তারপর এক প্রকার টানতে টানতে কেবিনের বাইরে নিয়ে গেল । এলাইনা কিছু বলার তো দুরে থাকুক তীব্র বিস্ময়ে কিছু সময় ফারিজের দিকে তাকিয়ে রইলো । আশা করেছিলো ফারিজ হয়তো কিছু বলব কিন্তু ফারিজ কিছুই বলল না । ফারিজ বলবে কি ওর বিস্ময় কাটছে না । এমন কিছু যে হতে পারে, এই মেয়েকে যে এমন কিছু করতে পারে সেটা সে ভাবতেই পারে নি !

মিনিট খানেক পরেই তন্বী আবারও ফিরে এল ওর কেবিনে । এসেই দরজা বন্ধ করে দিল ! ফারিজ তন্বীর চোখের দিকে তাকিয়ে জীবনে প্রথম বারের মত কোন মেয়েকে ভয় পেল । ওর বুকের ভেতরে একটা অদ্ভুত ভয় কাজ করতে শুরু করলো । যে মেয়ে এই ভাবে আরেকটা মেয়েকে চুলের মুঠি ধরে টেনে নিয়ে যেতে পারে, সে মেয়ে যে কোন কিছু করতে পারে !

ফারিজ ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে রইলো তন্বীর দিকে । মেয়েটা কি করবে এখন ?

নয়

ফারিজ নিজের মায়ের দিকে বেশ অবাক হয়েই তাকিয়ে রইলো । তার রেবেকা সুলতানা নিজের হাসি থামাতে পারছেন না । হাসতে হাসতে তার চোখে পানি চলে এসেছে । পাশে তার দিম্মা বসে আছে সেও হাসছে । ফারিজ খানিকটা বিরক্ত হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, ও কাম আন মম । এভাবে হাসবে না তো !

রেবেকা সুলতানা আরও কিছু সময় হাসলেন প্রাণ ভরে । তারপর নিজের হাসি থামালেন । তারপর বললেন, ও এমনটা করলো তার তুই সেটা মেনে নিলি ?

তারপর আবারও কিছু সময় হাসি !

ফারিজ কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল । সত্যিই তো । এই ব্যাপারটা তো সে মোটেও ভেবে দেখেনি । তাই তো সে তন্বীর ঐ আচরনটা কিভাবে মেনে নিলো । তখন কিছু বলতে পারলো না কেন ? আর এখন এসে মায়ের কাছে কেন বলছে এই সব । ফারিজের নিজের কাছেই নিজের আচরন কেমন যেন অবাক করা মনে হল । এমন তো হওয়ার কথা না ।

আচ্ছা সত্যিই সে তন্বীকে কিছু বলতে পারলো না কেন ?

মায়ের কাছে তো আসল কথা সে এখনও বলেই নি । তন্বীকে কেবল এলাইনাকে চুল ধরে অফিস থেকে বের করে দিয়েছে । রিসিপশনের মেয়েটার কাছ থেকে জাকির শুনে এসেছে তন্বী ঠিক কী করেছে? ফারিজ কেবল কেবিনে কি হয়েছে সেটা দেখেছে । বাইরে আসলে কি হয়েছে সেটা ফারিজ দেখে নি । অফিসের সবার সামনেই তন্বী একেবারে চুলের মুঠি ধরেই এলাইনাকে বাইরে নিয়ে যায় গেটের কাছে । তারপর গেটের কাছে নিয়ে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে বাইরে বের করে । আঙ্গুল তুলে এলাইনার দিকে শাসিয়ে বলে, এরপর থেকে আমার স্বামীর আশে পাশে যেন তোমাকে না দেখি । অন্যের স্বামীর দিকে নজর দাও এতো বড় নির্লজ্জ কিভাবে হলে? বাবা মা শেখায় নি কিছু তোমাকে !

তারপর রিসিপশনের মেয়েটা আর গার্ড দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে, শুনো এই মেয়ে যেন কোন ভাবেই এই গেট দিয়ে না ঢুকতে পারে । যদি ঢোকা তাহলে তোমাকে চাকরি আর খেয়ে ফেলবো । মনে থাকে যেন !

এই ঘটনা সবাই দেখেছে । কিন্তু এরপর তন্বী কেবিনে এসে কি করেছে সেটা কেউ দেখে নি । সেটা কেবল ফারিজ আর তন্বীর ভেতরে সীমাবদ্ধ আছে । কথাটা সে মাকে বলবে কিনা বুঝতে পারছে না । বললে আরও এক দফা অপদস্ত হতে হবে মা আর দিম্মায়ের কাছে ।

ফারিজের দিম্মা বলল, বল কেন কিছু বলতে পারছি না?

ফারিজ চুপ করে রইলো । দিম্মা বলল, তোর দাদা আর বাবা যেমন তুই তেমনই হয়েছিস ?

-মানে কি ?

-মানে হচ্ছে দুনিয়ার সবার সাথে বাহাদুরী করলেও তোরা বউয়ের কাছে একেবারে ভেজা বেড়াল । তোর দাদাকে বাড়ি আর অফিসের সবাই জমের মত ভয় পেত তখন কিন্তু আমার সামনে আসলেই তার জারিজুরি সব ঠান্ডা । তোর বাবার বেলাতেও তাই । আর এখন দেখছি তুই তাই হয়েছিস !

এই বলে বউ শাশুড়ি মিলে আরেক দফা হেসে নিল । ফারিজ বুঝলো যে এখানে দাড়িয়ে থাকা মানে হচ্ছে হাসির পাত্র হওয়া । সে নিজকের ঘরের দিকে হাটা দিল । মাথা ঠান্ডা করা দরকার । নিজের ঐ বাসাটায় এখন যেতে পারলে ভাল হত । হাতে ওয়াইনের গ্লাস নিয়ে সুইমিং পুলে কিছু সময়ে নিজের শরীর ডুবিয়ে রাখলে হয়তো মাথা ঠান্ডা হবে । সব কিছু মাথা থেকে দুর হবে ।

রাতের খাওয়ার পরেই রেবেকা সুলতাকার ফোনটা বেজে উঠলো । মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে খানিকটা সময় ভুরু কুচকে উঠলো । এই মহিলাকে সে মোটেই পছন্দ করে না । তবুও নিজেকে যথাযত ভাবে শান্ত করে ফোনটা ধরলো সে ।

-হ্যালো ।

-ভাবী এটা কি শুনছি ?

-কি শুনছেন ?

-আপনার ছেলের বউ নাকি এলাইনার গায়ে হাত তুলেছে !

-কই আমি তো এসব জানি না ।

-ভাবী আপনার একটা বিচার করতে হবে । কোথাকার কোন দুই পয়সার মেয়ে আমার মেয়ের গায়ে হাত তোলে !

-ভাবী তন্বী এখন এই বাড়ির বউ এটা মনে রাখবেন । আর নিজের স্বামীর দিকে যদি অন্য নারী চোখ দেয়, আমি হলে সেই চোখ কাটা চামচ দিয়ে তুলে নিতাম । তন্বী তো ভদ্র অনেক । কেবল চুল ধরে বের করে দিয়েছে । আপনার মেয়েকে বলবেন সে যেন ফারিজের উপর থেকে নিজের কু দৃষ্টি সরিয়ে নেয় । এক সময় ওদের মাঝে কি ছিল সেটা অতীত । এখন ফারিজ অন্যের স্বামী । এটা তাকে মনে রাখতে বলবেন !

রেবেকা সুলতানা আর কিছু না বলে ফোনটা রেখে দিলেন । ফোন রাখার পরে হঠাৎই তার মনে হল তার অনেক বেশি ভাল লাগছে । মনে মনে ঠিক করে নিলেন তন্বীকে একটা পুরস্কার দিতে হবে এই কাজের জন্য । কি দিতে হবে সেটা এখন ভাবতে হবে ।

এই এলাইনা কিংবা তার মাকে সে পছন্দ না করলেও ফারিজের জন্যই সে গিয়েছিলো একদিন কথা বলতে । ফারিজ নিজ থেকে কিছু না বললেও মা হিসাবে রেবেকা সুলতানা ঠিকই বুঝতে পারতেন যে তার ছেলেটা ভাল নেই । সেই কথা বার্তা বলতেই গিয়েছিলো এলাইনার মায়ের সাথে । এলাইনার বাবার সাথে ফারিজের বাবার অনেক দিনের চেনা জানা । সেই সুবাধেই দুই পরিবারের কাছাকাছি আসা যদি রেবেকা সুলতানা কোন দিন কেন জানি এদেরকে পছন্দ করতে পারে নি । ফারিজের সাথে যখন এলাইনার বন্ধুত্ব তারপর একটা সম্পর্কের ভেতরে গিয়েছিলো তখনও রেকেবার পছন্দ হয় নি । তবে তিনি সে কিছুই বলেন নি । ছেলের পছন্দ বলে কথা । চুপচাপ মেনে নিয়েছিলো । তারপর মেয়েটা যখন ইচ্ছে করে ফারিজের সাথে সব সম্পর্ক নষ্ট করে দিল তখন মেয়েটার উপর প্রচন্ড রাগ হয়েছিলো । খোজ নিয়ে তিনি জানতে পেরেছিলো যে এলাইনা তখন কোন এক ব্রিটিশ বিজনেস ম্যানের প্রেমে মজেছে । তারপরেও ছেলের জন্য এলাইনার মায়ের কাছে গিয়েছিলো সে । এলাইনাকে যেন বুঝিয়ে শুনিয়ে কিছু একটা করে । সেদিন সরাসরি রেবেকা সুলতানাকে অপমান না করলেও একটা সুক্ষ ভাবে বুঝাতে চেয়েছিলো যে তার মেয়ে এমন ফেলনা না যে যার তার সাথে বিয়ে করে ফেলবে ।

আর আজকে !

তন্বীকে কাছে পেলে আজই একটা বড় রকমের গিফট দেওয়া যেত । তবে সেটা এখন করতে পারছে না । মেয়েটা আজকে এদিকে আসে নি ।

রাত একটার দিকে ফারিজ তন্বীদের বাসার সামনে গিয়ে হাজির হল । কেন হাজির হল সেটা সে নিজেও জানে না । খাওয়া দাওয়া শেষ করে তার কিছুতেই ঘুম আসছিলো না । বারবার মনে হচ্ছিলো অফিসে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা । মেয়েটার সাহস দেখে সে সত্যিই অবাক হয়ে গিয়েছিলো । এতো সাহস তন্বী কিভাবে পেল ?

আজও মনে আছে সেদিন সেই হোটেলে মেয়েটা কেমন কুকড়ে ছিল । ভয়ে একেবারে কাঠ হয়ে গিয়েছিলো আজ এই মেয়েই কিনা ওর শরীর থেকে জামা কাপড় খুলে নিল !

ব্যাপারটা সে মোটেই ভাবতে চায় না । তারপরেও দৃশ্যটা বারবার ওর চোখের সামনে চলেই আসছে । এলাইনাকে অফিসের বাইরে রেখে এসে তন্বী আবার ফারিজের কেবিনে এসে হাজির হয়েছিলো । কোন কারণ নেই কিন্তু তন্বীর চোখের দিকে তাকিয়ে ফারিজের কেমন যেন ভয় করলো । সামনে দাড়ানো মেয়েটি এখন তার স্ত্রী এবং এই মেয়েটি তাকে অন্য একটু মেয়ের সাথে দেখেছে ।

একটু তো ভয় পাওয়ারই কথা, তাই না ?

তন্বী এক ভাবে বেশ কিছু সময় কেবল ফারিজের দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর ঠান্ডা গলায় বলল, এই শার্ট জড়িয়ে ধরেছিলো, তাই না ? এটা খুলো !

-মানে ?

-মানে জামা খুলতে বলেছি ।

-পাগল নাকি !

-খুলবা না?

ফারিজ মনে মনে ঠিক করে ফেলল যে খুলবে না । এই মেয়ে কি করতে পারে ? কিছুই না । এটা তার অফিস । তার নিজের এলাকা ! এইখানে এই মেয়ে কিছুই করতে পারবে না । ফারিজ বলল, খুলবো না । তবে গলার স্বরে কেন জানি ঠিক বল পেল না । নিজেও ঠিক বুঝতে পারছিলো না যে এই মেয়েকে সে ভয় কেন পাচ্ছে ! এই মেয়েকে ভয় পাওয়ার কি কোন কারণ আছে ?

নেই তো!

তবে সেই ভুলটা ভাঙ্গলো একটু পরেই । ফারিজ তন্বীর দিকেই তাকিয়ে ছিল । মনে মনে ভাবছিলো মেয়েটা কি করবে এখন ?

তখনই দেখতে পেল তন্বী এদিক ওদিক তাকাচ্ছে । এক দিকে তাকিয়ে ওর চোখ স্থির হয়ে গেল । ফারিজের টেবিলের ঠিক ডান দিকে একটা বড় ফুলদানি রয়েছে । বেশ দামী সেটা । তন্বী সেটার কাছে গেল এবং ফারিজকে অবাক করে দিয়ে সেটা লাথি মেরে মেঝেতে ফেলে দিল । পরার সাথে সাথেই সেটা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেল । ফারিজ মুখ হা করে কেবল তাকিয়ে রইলো সেদিকে । সে সত্যিই ভাবতেও পারে নি সে তন্বী এই কাজটা করবে । তন্বী ফারিজের দিকে তাকিয়ে বলল, খুলবে না ? না দাড়াও !

তন্বীর চোখ আবার এদিক ওদিক নড়তে শুরু করলো । সে নতুন কিছু খুজছে ! পেয়ে গেলে সাথে সাথেই । টেবিলের উপরে রাখা পিসির মনিটর ! ফারিজকে আরও অবাক করে দিয়ে তন্বী পিসির মনিটরটা টেনে নামালো । তারপর সর্ব শক্তি দিয়ে মেঝেতে আছাড় মারলো । ফারিজ এতোই অবাক হয়ে গেল যে সে একটা কথা পর্যন্ত বলতে পারলো না । কেউ তার নিজের অফিসে এসে যে এমন কিছু করতে পারে সেটা ফারিজের ধারনার বাইরে ছিল । অবাক হয়ে একবার সে মনিটরের দিকে আরেকবার তন্বীর দিকে তাকাতে লাগলো । মনের ভেতরে তার কু ডেকে উঠলো । বুঝতে কষ্ট হল না যে এই মেয়ে ততক্ষণ পর্যন্ত থামবে না যতক্ষন পর্যন্ত না ফারিজ তার কথা শুনবে ।

এইবার তন্বীর টেবিলের উপরে রাখা ল্যাপটপটার দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করলো ! সেদিকে এগোতে যাবে এমন সময় ফারিজ বলল, দাড়াও দাড়াও প্লিজ ! ওয়েট ! ওয়েট । ওয়েট ! ওর ভেতরে দরকার জিনিস পত্র রয়েছে ।

-লাইক আই কেয়ার !

-ওকে ওকে ওকে ! বাবা ওকে ! আমি শার্ট খুলছি !

ফারিজ নিজের শার্ট খুলে তন্বীর হাতে দিল । তন্বী শার্টটার দিকে তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । তারপর সেটা পায়ের কাছে ফেলে বেশ কিছু সময় পা দিয়ে চটকালো । ফারিজের দিকে তাকিয়ে বলল, এই শার্টে এই মেয়ের স্পর্শ রয়েছে । এটা এই দুনিয়াতে থাকবে না ! দিয়াশলাই দাও !

-দিয়াশলাই?

-হ্যা । কোথায়?

ফারিজ নিজের পকেট থেকেই একটা লাইটার বের করে দিল । তন্বীর লাইটার টা নিয়ে পা দিয়ে ঠেলতে ঠেলতে শার্ট টা নিয়ে গেল ওয়াশ রুমের দিকে । এমন একটা ভাব যেন শার্টটার থেকে ঘৃণ্য বস্তু আর কিছু নেই দুনিয়াতে । এবং সত্যিই সত্যিই ওয়াশরুমে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দিল সেটাতে । ওয়াশ রুমের দরজাটা খোলাই ছিল সেখান থেকে পোড়া গন্ধ আসতে থাকলো । তন্বীর বের হয়ে এল একটু পরে । ওর দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো ।

তারপর দরজার পাশে পড়ে থাকা একটা প্যাকেট ওর দিকে ছুড়ে দিল । প্যাকেটটা তন্বী যখন প্রথম ঘরে ঢুকেছিলো তখনই হাতে করে এনেছিলো । তন্বী আর দাড়ালো না । দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল ।

তন্বী চলে যাওয়ার পর কিছু সময় কেবল বোকার মত দাড়িয়ে রইলো । মেয়েটা ওর সাথে কি করলো সেটা এখনও ওর মাথায় ঢুকছে না ঠিকঠাক মত !

তবে প্যাকেটটা বের করে খানিকটা অবাক হল । একটা নীল রংয়ের শার্ট । পুরো ব্যাপারটা বুঝতে কষ্ট হল না । তন্বী ওর জন্য এই শার্ট টা কিনে এনেছিলো দেওয়ার জন্য । কেবিনে ঢুকেই এলাইনাকে দেখতে পায় তারপর তার মাথা খারাপ হয়ে যায় !

তন্বীদের বাসার সামনে এসে আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করলো সে । কেন সে এখানে এসেছে সেটা ফারিজ নিজেও জানে না । বেশ কিছু সময় দাড়িয়ে থেকে আবারও সামনের রাখা গাড়িটার দিকে পা বাড়ালো । গাড়ির দরজা খুলতে যাবে তখনই ওর ফোন বেজে উঠলো । নাম্বারটা দেখেই খানিকটা চোখ কপালে উঠলো ।

তন্বী ফোন দিয়েছে ।

-হ্যালো !

-কি ব্যাপার চলে যাচ্ছো কেন ?

-তুমি কোথায় ?

-আমি যেখানেই থাকি । আমার বাড়ির সামনে চলে এসে আবার চলে যাচ্ছো কেন ?

ফারিজ ঘুরে দাড়ালো । তন্বীদের ফ্লাটের দিকে তাকালো । সব আলো গুলোই বন্ধ । তন্বী ওকে দেখলো কিভাবে ?

ফারিজ কোন কিছু বলছে না দেখে তন্বী আবার বলল, উপরে আসবা ?

-না ।

-আমি নিচে আসবো ?

ফারিজ কিছু সময় নিল প্রশ্নটার জবাব দিতে । তারপর বলল, আসো !

প্রায় সাথে সাথে বাড়ির গেট টা খুলে গেল । তন্বী যেন গেটের কাছেই দাড়িয়ে দিল । ফারিজ কি বলবে বুঝতে পারলো না । দেখতে পেল তন্বী একটা টিশার্ট পরে আছে । সাথে একটা লেগিংস । ঘরের পোশাক । ল্যাম্প পোস্টের আলোতে তন্বীর এলোমেলো চুল দেখতে বেশ চমৎকার লাগছে !

মেয়েটা এতো জলদি কিভাবে নেমে এল ?

সম্ভবত তন্বী যখন গাড়ি নিয়ে এসেছে তখনই দেখতে পেয়েছে । তারপরই নেমে এসেছে । তন্বী কয়েক পা এগিয়ে এল ওর দিকে । তারপর ফারিজের দিকে তাকিয়ে বলল, নীল শার্টে তোমাকে ভাল মানিয়েছে ।

ফারিজ অনেক টা সময় চুপ করে তাকিয়ে রইলো তন্বীর দিকে । তারপর বলল, সরি !

-সরি কেন ?

এলাইনার ব্যাপারটার জন্য ! আমি আসলে বুঝতে পারি নি যে এলাইনা ওভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরবে ! আর কখনই হবে না !

-আচ্ছা আবারও হওয়ার সম্ভবনা আছে নাকি ? শুনো এবার যদি ঐ মেয়েকে তোমার আশে পাশে দেখি আগে ইট দিয়ে ঐ মেয়ের মাথা ফাঁটাবো তারপর তোমার মাথা ভেঙ্গে দিবো !

ফারিজ হেসে ফেলল । তন্বী এই কাজটা করতেই পারে । আজকে সে যে রূপ দেখেছে তন্বি তাতে তন্বী যে কোন কিছু করতে পারে । কিন্তু মেয়েটা যে এতোটা প্রজেসিভ হবে সেটা ও মোটেই ভাবতে পারে নি ।

-আচ্ছা আমি যাই!

-আচ্ছা !

ফারিজ গাড়ির দিকে ঘুরতে গিয়েও থেমে গেল । তারপর তন্বীর দিকে তাকিয়ে বলল, আমার সাথে যাবে ?

-কোথায় ?

-কোথাও না । কিছু সময় গাড়ি করে ঘুরি । তারপর তুমি চাইলে এখানে নামিয়ে দিবো ।

-আর না চাইলে !

ফারিজ কি বলবে খুজে পেল না । এই মেয়েকে সে সত্যিই বুঝতে পারছে না । ফারিজ বলল, আমি আসলে আমার ঐ বেরিবাধের বাড়িতে যাচ্ছিলাম । যাবে তুমি ?

-তারপর ? আমাকে একা পেয়ে কি করবে শুনি ? ঐদিন কি করেছিলে মনে আছে ?

ফারিজ বলল, আমি ঐদিন কিছুই করি নি ! তোমার পোশাক বদলেছি কেবল । ভয়ানক অবস্থা ছিল পোশাকের ! বিলিভ মি !

তন্বী বলল, কিছু করবে না ? তাহলে আর গিয়ে লাভ কি বল ! বাসায় থাকি !

ফারিজ সত্যিই অবাক হয়ে গেল । এই মেয়েকে সে কোন দিন বুঝতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না । তার বাবা কোন দিন ঠিকঠাক মত তার মাকে বুঝতে পারে নি । এখনও সে দেখে তার মায়ের রাগ ভাঙ্গাতে কিংবা মন পেতে কত কিছু করতে হয় । ওর তো অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাবে !

ফারিজকে আরও একটু অবাক করে দিয়ে তন্বী নিজেই ফারিজের গাড়িতে উঠে সবলো । ফারিজ এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজেও গাড়িতে উঠে বসলো । উঠে বসতেই দেখতে পেল তন্বীর হাতে বিয়ারের ক্যান । সিটের পেছনে ছিল । এক ক্রেন নিয়ে যাচ্ছিলো সে তার বাসায়।

ফারিজ বলল, আরে আরে কি কর !

-কেন ?

-না মানে তোমার তো সহ্য হয় না ।

তন্বী হাসলো আবার । ক্যানটা খুলতে খুলতে বলল, আজকে হুস না থাকলে খুব একটা সমস্যা নেই ।

বলেই সে ক্যানে চুমুক দিল ! আজকে বিয়ারের ইফেক্ট নিয়ে সে চিন্তিত নয় !

সমাপ্ত

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.9 / 5. Vote count: 57

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →