লম্বা সময় ধরে কলিংবেল বাজছে। আমি শুয়ে শুয়ে একবার ভাবার চেষ্টা করলাম যে এই বিকেল বেলা আমার বাসায় কে আসতে পারে? ঢাকার এই বাসার ঠিকানা মানুষ জন জানে না। দরকার পড়লেও তারা আমার বাসায় আসতে পারবে না। আর আমি মানুষজন খুব একটা পছন্দ করি না। তাদের কাছ থেকে যথাসম্ভবত আমি দুরে থাকি। এমন কি সম্ভব হলে মানুষের ফোনও এড়িয়ে যাই। তবে মায়ের ফোন কোন ভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যায় না। মা নিয়ম করে আমাকে ফোন করেন। তবে আব্বা কখনই আমাকে ফোন করে না। তার কোন কথা বলার থাকলে মায়ের মাধ্যমে জানায় । অবশ্য সেটা কদাচিৎ ঘটে। তার ভাষ্যমতে আমি হচ্ছি তার ফেইল প্রোজেক্ট । আমার পেছনে টাকা পয়সা খরচ করা তার জীবনের সব থেকে বড় আফসোসের কারণ। আমার পড়াশোনা লালন পালনের পেছনে টাকা না খরচ করে গরুর খামার করলে নাকি বেশি লাভবান হতেন। আমি অবশ্য বাবার এই সব কথা নিয়ে খুব একটা কিছু মনে করি না। কারণ তার এই অভিযোগ খুব একটা মিথ্যা না ।
আবার কলিংবেলটা বেজে উঠল । সময় হিসাব করি তবে কমে করে হলেও আধা ঘন্টা ঘরে আগমনকারী আমার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। প্রথমে ভেবেছিলাম যে বাড়িওয়ালা এসেছেন । আমার সাথে যোগাযোগ না করে কেবল মাত্র এই একজন মানুষই আসেন । এসে বাড়ির ভেতরটা ঘুরে দেখেন । সব কিছু ঠিক আছে কিনা সেটা জানতে চান । যদিও আমার বুঝতে কষ্ট হয় না যে আসলে তিনি কী জানতে চাইছেন । প্রতিবারই আমি তাকে জানাই যে আমার এখানে থাকতে কোন সমস্যা হচ্ছে না । প্রতিবারই যেন তার মাথা থেকে একটা বড় চিন্তা যেন চলে যায়।
বিছানায় শুয়ে থাকতে খুব আরাম লাগছিল আর এখন তার বকবক শোনার কোন ইচ্ছে আমার ছিল না। শুয়েই থাকব ভেবেছিলাম। বাড়িওয়ালা কয়েকবার কলিংবেল বাজিয়ে বুঝতে পারবেন যে আমি বাসায় নেই। তখন চলে যাবেন । কিন্তু এখন মনে হচ্ছে যে মানুষটা বাড়িওয়ালা না । তাহলে হতে পারে?
আমি বিছানা ছেড়ে উঠলাম । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি বেলা প্রায় পড়ে এসেছে । দুপুরে খাওয়ার পরে ঘুমিয়েছিলাম । লম্বা সময় ঘুম হল । অবশ্য ইদানীং রাতে ঘুম কম হচ্ছে । রিমু মেয়েটা বড্ড জ্বালায় । তাই শান্তিমত ঘুমানোর উপায় নেই। রাতের সেই ঘুম এখন দিনে পুষিয়ে নিতে হচ্ছে।
দরজা খুলতেই আমাকে একটু অবাক হতে হল। মিস নিকিতা আহমেদ দাঁড়িয়ে আছে। আজকে মেয়েটা কালো জিন্সের সাথে একটা সাদা কুর্তা পরেছে। চুলগুলো পনিটেইল করে বাঁধা। এতো সময় এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে বলে মুখটা একটু থমথমে । আমার কেন জানে মনে হল যে যদি আমি দরজা না খুলতাম তাহলে মেয়েটার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসত ।
আমি আমার অবাক হওয়ার ভাবটা লুকানোর চেষ্টা করলাম না। তবে কোন কথাও বললাম না । আমার এখন প্রশ্ন করা উচিৎ যে আপনি এখানে কেন কিংবা আবার বাসার ঠিকানা কোথায় পেলেন কিন্তু করলাম না । নিকিতা আহমেদ এখানে কেন এসেছেন সেটা আমি জানি । আর তার সম্পর্ক আমি যতটুকু জেনেছি তাতে এটাও জানি যে আমার বাসার ঠিকানা বের করা তার পক্ষে কোন ব্যাপার না । আমি দরজা ছেড়ে একটু সরে দাড়ালাম । নিকিতা ঘরের ভেতরে ঢুকল ।
নিকিতা যখন আমার ড্রয়িং রুমে পেতে রাখা ম্যাট্রেসটার উপর বসছল তখন তার চোখে ঘরের চারিদকে ঘুরে বেড়াচ্ছিল । সম্ভবত আমার ঘরটা এতো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হবে সে আশা করে নি । আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম, ঘরে চা নেই । কারণ আমি চা খাই না । তবে কফি আছে । আপনি কফি খান তো?
নিকিতা কেবল সম্মতি সূচক মাথা নাড়ল । আমি চুলায় পানি গরম দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলাম ।
মেয়েটা কেন আমার বাসা খুজে বের করেছে সেটা আমি জানি । আমি সেদিনই পরিস্কার ভাবেই তাকে জানিয়ে দিয়েছিলাম যে তার জানায় ভুল আছে । সে যা চাইছে তা এই বাস্তব পৃথিবীতে কোন দিন সম্ভব না । সেদিন যদিও আমার মনে হয়েছিল যে মেয়েটা আবার আমার সাথে দেখা করতে চাইবে। মনে হয়েছিল যে ফোনেই ব্যাপারটা আমি মিটিয়ে ফেলব । তবে মেয়েটা যে সরসারি আমার বাসার ঠিকানা বের করে বাসায় চলে আসবে সেটা বুঝতে পারি নি।
কফি নিয়ে আমি বসার ঘরে ফিরে এলাম । এই বসাতে খুব একটা জিনিস পত্র নেই । একটা সিঙ্গেল ম্যাট্রেস রয়েছে । আর কয়েকটা বইয়ের তাক । এছাড়া এই ঘরে আর কোন জিনিস পত্র নেই। একটা টিভি রয়েছে দেয়ালে টাঙ্গানো । তবে সেটা শেষ কবে আমি চালু করেছি সেটা মনে করতে পারলাম না । আমি যত সময় বাসায় থাকি তত সময় আমি আমার শোবার ঘরেই থাকি। তবে দিনে একবার পুরো বাসাটা আমি একবার হলেও পরিস্কার করে রাখি। নিকিতা সম্ভবত এটাই লক্ষ্য করে দেখছে। সে সম্ভবত আশা করে নি যে আমার ঘর এতো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হবে।
কাপ সমেত ট্রেটা আমি ম্যাট্রেসের উপরে নামিয়ে রেখে ওর পাশেই বসলাম ।
-আপনি এখানে?
-আপনি কারণটা কি জানেন না?
-আমি কোন যুগের মানুষ বলুন দেখি? এই যুগে এসেও কেউ এসব বিশ্বাস করে?
আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম । ছোট বেলাতে বড়রা যখন ছোটদের কোন বোকা বোকা কথা বা প্রশ্ন শুনে হাসত ঠিক তেমন ভাবে । তবে নিকিতার মুখের গাম্ভীর্য দেখে আমি হাসি বন্ধ করে দিয়ে নিজেও একটু গম্ভীর মুখে তাকালাম । কফির কাপে একটু চুমুক দিতে দিতে বললাম, আপনি যে অসম্ভব কথা বলছেন সেটা কি আপনি বুঝতে পারছেন না?
-আমি জানি আমি কী বলছি। যদি নিজে আমি সম্পূর্ণ ভাবে নিশ্চিত না হতাম তাহলে এতোটা সময় আর শ্রম আমি নষ্ট করতাম না। আমি বুঝতে পারছি না যে আপনার সমস্যাটা কোথায়? আমি তো এমনি এমনি আপনার কাছ থেকে সাহায্য চাইছি না। আপনাকে উপযুক্ত পারিশ্রমিক দেওয়া হবে। আর আমি যতদুর জানি আপনার টাকা পয়সার দরকার আছে, নয় কি?
আমি চট করে প্রশ্নটার উত্তর দিতে পারলাম না । কারণ টাকা পয়সার একটু টানাটানি আমার যাচ্ছে । অবশ্য অন্য সময় যে আমি খুব রাজার হালে থাকি সেটাও না। কাজ কর্ম সব সময় সমান থাকে না । তবে কয়েক মাস ধরে হাতের কাজ কর্ম কম আসছে । একটা অনুবাদের কাজ চলছে কেবল । এটা শেষ হয়ে গেলে সামনে কী পাবো কিনা আমি জানি না । তবে আশার কথা হচ্ছে যে ব্যাংক একাউন্টে কিছু টাকা জমানো আছে । একটু চেপে চললে মাস ছয়েক চলে যাবে নিশ্চিন্তে। আমি এই টাকার কথা মনে রাখার চেষ্টা করি না । ভাবি যে এই টাকাটা আমার নেই। একেবারে যখন হাতে কোন টাকা বা কাজ কর্ম থাকবে না তখনই কেবল এই একাউন্টে হাত দিব।
-আপনি আপনার মোবাইলটা চেক করেছেন কি?
-আমার মোবাইল ?
নিকিতার কথা আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না । আমার মনে হল যে এখানে আসার আগে নিকিতা নিশ্চয়ই আমাকে ফোন দিয়েছে। আমি সেই ফোন ধরি নি । আমি অবশ্য কারো ফোনই ধরি না । আমাকে যারা চেনে তারাও এই ব্যাপারটা ভাল করেই জানে । তাই তারা সাধারণত আমাকে ফোন না করে মেসেজ দিয়ে রাখে। আমি সময় মত তাদের ফোন করি।
আমি উঠে গিয়ে আমার শোবার ঘর থেকে আমার মোবাইলফোনটা নিয়ে এলাম । ফোনটা হাতে নিতেই দেখি সেখানে দুটো মেসেজ এসেছে। একটা অপারেটরের প্রোমশনাল মেসেজ অন্যটা আমার ব্যাংক থেকে । আমার ব্যাংক একাউন্টে কেউ এক লাখ টাকা দিয়েছে। আর টাকা টা যে আমার সামনে বসা মানুষটাই পাঠিয়েছে সেটা আমাকে বলে দিতে হল না । এই মেয়ে আর কী কী খুজে বের করে ফেলেছে উপরওয়ালাই জানে । আমার বাসার ঠিকানা সহ আমার ব্যাংকের একাউন্ট । আমি নিশ্চিত আমার গ্রামের বাড়ি কোথায়ম বাড়িতে কে কে আছে আমি কোথায় পড়াশোনা করেছি কয়টা প্রেম করেছি সব কিছু এই মেয়ে জানে ।
আমি নিকিতার দিকে মুখ তুলে তাকালাম । এই মেয়ে যে সহজে আমার পিছু ছাড়বে না সেটা আমার বুঝতে বাকি রইল না। আমি মুখ দিয়ে কিছু বলতে যাব ঠিক তখনই আমার হাতে ফোনটা কেপে উঠল । আমার ফোনে আমার আব্বার নম্বর সেভ করা নেই । কিন্তু তার নম্বর আমি ঠিকই চিনি । আব্বা যখন প্রথম মোবাইল ফোন কেনেন তখন আমি স্কুলে পড়ি । আমাকে সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলেন । ফোনের মডেল আর সীমের নম্বরটা আমিই পছন্দ করেছিলাম । তখন এলাকাতে আমাদের বাসাতেই সবার আগে মোবাইল ফোন এসেছিল । আমি এই নম্বর আমি তখনকার আমার সব বন্ধুদের দিয়ে বেড়াতাম ।
আমি এবার সত্যিই অবাক হয়ে গেলাম । বাবা তার ছেলেকে ফোন দিবে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার । কিন্তু আমার মন হচ্ছে এই ফোন আসার কারণটা আমার সামনে বসা এই মেয়েটিই।
আমি একবার নিকিতার দিকে তাকালাম । তারপর নিজের ফোনের দিকে । নিকিতা আমার দিকে শান্ত চোখেই তাকিয়ে রয়েছে। আমি তার চেহারা দেখে কিছুই বুঝতে পারলাম না। একবার মনে হল যে ফোনটা না ধরি । তবে সেটা ইচ্ছে হল না । আজকে কতদিন পরে আব্বা আমাকে ফোন দিয়েছেন সেটা আমার মনেও নেই।
ফোনটা ধরে হ্যালো বলার সময় খেয়াল করলাম যে গলাটা একটু যেন কেঁপে উঠল ।
-হ্যা । আব্বা, স্লামুয়ালাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।
-আপনার শরীর ভাল ভাল? মা ভাল আছে?
-হ্যা সবাই ভাল।
তারপর একটা দীর্ঘ নিরবতা। আমি এরপরে কী জিজ্ঞেস করব খুজে পেলাম না । তখনই আমি অবাক হয়ে খেয়াল করলাম যে আমার আসলে আমার বাবার সাথে কথা বলার কোন বিষয় নেই। মায়ের সাথে আমি যখন কথা বলি বেশির ভাগ সময় মা নিজের সব কথা বলে থাকে । আমি কেবল হ্যা হু করে থাকি । আজকে আব্বা আমাকে কেন ফোন দিলেন আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।
-তোমার বড় ভাই ! ওর একটা এপোয়েন্টমেন্ট হওয়ার কথা । এইচএসবিসিতে। অনেক দিন ধরেই সে চেষ্টা করছে ।
আব্বার এই কথার অর্থ আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না। তিনি তার বড় ছেলের উপর খুবই গর্বিত । তিনি নিজেকে তার বড় ছেলের ভেতরে দেখতে পান । সফল দায়িত্ববান । কিন্তু আমি ঠিক বুঝতে পারছি না এই কথা তিনি আমাকে ফোন করে কেন জানাচ্ছেন ।
-সব কিছু তৈরি । এখন কেবল একটা সাইন হলে হয়ে যাবে । কিন্তু…
-কিন্তু…
মনে হল আব্বা কিছুটা ইতস্তর করছেন কথা বলার ক্ষেত্রে । কিংবা আমার কাছে বলতে তার আত্মসম্মানে বাঁধছে। আমি চুপ করেই রইলাম । আব্বা আরও কিছু সময় নিলেন । তারপর বললেন, তোমার নাকি কারো একটা কাজ করে দেওয়ার কথা । কাজটা করে দিলেই নাকি আবেদের এপোয়েন্টমেন্টটা কনফার্ম হয়ে যাবে । ওরা সরাসরি আমার কাছে ফোন করেছিল।
আমি এবার সত্যিই অবাক হয়ে গেলাম । সামনে বসা নিকিতা তখনও শান্ত মুখে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে । একটু আগে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেও এখন তার চোখ আমার বইয়ের তাকের দিকে । এই মেয়ে আমার সব ব্যাপারে একেবারে নাড়ী নক্ষত্র বের করে ফেলেছে এই কয়েক দিনের ভেতরেই ।
আমি বললাম, আচ্ছা আপনি চিন্তা করবেন না । আমি দেখছি ব্যাপারটা ।
ফোন কেটে গেল । আমি ফোনটা ম্যাট্রেসের উপরে রেখে নিকিতার দিকে তাকালাম । নিকিতাও কাপটা এক পাশে সরিয়ে রাখল । আমি বললাম, আপনি আর কী কী জানেন আমার ব্যাপারে?
নিকিতা এবার হাসল একটু । পরিমিত স্নিগ্ধ হাসি । তারপর বলল, এই কথা কেন জানতে চাইছেন ?
-না মানে আমাকে রাজি করানোর জন্য আপনি এমন একজনকে দিয়ে ফোন করালেন যার সাথে আমার গত দশ বছরে একবারও কথা হয় নি। ব্যাপারটা আসলেও ভাববার মত । আপনার হাত দেখা যাচ্ছে অনেক বেশি লম্বা।
-আমার হাত লম্বা না । তবে আমার পরিচিত কিছু মানুষ আছে। তারা আমাকে সাহায্য করতে পারে। এখন বলুন আমাকে সাহায্য করবেন?
-যদি না করি তাহলে কী কী বিপদ নেমে আসবে পারে আমার উপরে কিংবা আমার পরিবারের উপরে?
এই প্রশ্নের উত্তর নিকিতা চট করেই দিল না । সেই আমার দিকে কিছুটা সময় শান্ত চোখে তাকিয়ে রইলো । আর তখনই আমার মনে হল যে এই মেয়েটার চোখ অসম্ভব বিষন্নতায় ভরা । মেয়েটার মনে গভীর কোন দুঃখবোধ রয়েছে।
নিকিতা বলল, ভয় নেই আমার সাহায্য না করলেও আমি আপনাকে বাধ্য করাব না বা কোন বিপদ আসবে না । আমি কেবল অনুরোধ করতে পারি। কিছু সুবিধা অফার করতে পারি । জোর করতে পারি না । করবও না। মানুষকে বিপদে ফেলে কোন কিছু করানো স্বভাব আমার ভেতরে নেই। আপনি মানা করে দিতে পারেন । আমি হয়তো আবারও আপনাকে অনুরোধ জানানোর জন্য আসতে পারি । আর হ্যা আপনার বড় ভাইয়ের কাজটা হয়ে যাবে । এমন কি আপনি যদি আমার কাজটা না করেন তবুও।
নিকিতা আর কথা বাড়াল না । কফির জন্য ধন্যবাদ দিল । তারপর আমার বুক সেলফের কাছে গিয়ে একটা বই টেনে বের করল । বইটা জর্জ অরওয়েল এর লেখা নাইনটিন এইটি ফোর। অনেক পুরানো ছাপার একটা বই ।
-এটা কি আমি নিতে পারি । বইটা অনেক দিন ধরে পড়ব পড়ব ভাবছিলাম । আপনার এখানে দেখে মনে হল নিয়ে যাই।
-নিয়ে যান । আর ফেরত দিতে হবে না ।
-না না । ফেরত দিয়ে যাব । অন্তত এই বই ফেরত দেওয়ার সুতোয় আরেকবার আসব এখানে। আরেকবার অনুরোধ করব ।
আমি এবার বললাম, আপনি কেন আপনার বাবার সাথে কথা বলতে চান? মানুষ মারা গেলে আর তার সাথে সব কিছু চলে যায়। এটাই আমাদের মেনে নেওয়া উচিৎ । যে না বলা কথা থাকে সেটা না বলাই থাকতে দেওয়া উচিৎ । এটাই তো নিয়ম । নাকি? এই নিয়মের ব্যতীক্রম ঘটানো উচিৎ না আমাদের ।
-কিন্তু আপনি তো নিয়ম ভাঙ্গেন । তাই না? মেহরাব হোসেন ।
মেহবার আমার কলেজ জীবনের বন্ধু । বিশ্ববিদ্যালয়ের পরেই ও পুলিশের এসআইতে ঢুকে পড়ে। এখন ঢাকাতে পোস্টিং ওর । এই বসিলার সার্জেন্ট হিসাবে আছে এখন। মাঝে মাঝে আমি ওকে সাহায্য করি । তবে সেটা অবশ্যই আনঅফিশিয়াল ভাবে । আমার দেওয়া কোন তথ্যের পুরোটা মেহবার নিজে আবার খুজে বের করে । আমি যে তথ্য তাকে দিই সেটার কোন ভিত্তি থাকে না । সেটা কেস ফাইলে উল্লেখ থাকে না । তবে তার সাহায্য ঠিকই হয়। এবং আমার এই সাহায্যের কথা আর কারো জানার কথাও না। এই তথ্যটাও এই মেয়ে বের করে ফেলেছে।
আমি বললাম, আচ্ছা আমার ব্যাপারে আর কিছু না জানার আছে ? আচ্ছা বলেন দেখি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা কালীন সময়ে আমি একজনকে পছন্দ করতাম । কিন্তু কোন দিন তাকে বলতে পারি নি । তার আগেই তার বিয়ে হয়ে যায়। সেই মেয়েটার নাম কী?
নিকিতা বললাম, সরি এটা বলতে পারছি না । তবে চাইলে বের করতে পারি । আপনাদের ক্লাসে ৩৯ জন মেয়ে ছিল, ব্যাপার খোজ নিতে হবে ।
আমি হাত তুলে আত্মসমর্পণের মত করা ভঙ্গী করলাম । তারপর বললাম, একবার চেষ্টা করব । শুধু একবার । আপনি কী জানতে চান সেটা আমাকে জানাবেন । তবে সব উত্তর যে পাওয়া যাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই । ঠিক আছে।
নিকিতা এমন ভাবে হাসল যেন সে জানতো আমি তার কথায় রাজি হয়ে যাব, যেন সে জানত যে আমি তার মৃত বাবার সাথে কথা বলতে রাজী হয়ে যাব।
একটা উপন্যাস লেখার চেষ্টা করছি। যদি উপন্যাস নাও হয় বড় একটা গল্প হবে আশা করি । এটা গল্পের প্রথম পর্ব । আরও কাঁটা ছেড়ে হবে যদি উপন্যাস হয় তবে। গল্প হলে এটাই ফাইনাল । আপাতত নাম দিলাম প্রজেক্ট ওয়ান।
ফেসবুকের অর্গানিক রিচ কমে যাওয়ার কারনে অনেক পোস্ট সবার হোম পেইজে যাচ্ছে না। সরাসরি গল্পের লিংক পেতে আমার হোয়াটসএপ বা টেলিগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। এছাড়া যাদের এসব নেই তারা ফেসবুক ব্রডকাস্ট চ্যানেলেও জয়েন হতে পারেন।
সরাসরি মেসেজ পাঠাতে চিঠি.মি এপ ব্যবহার করুন।
Discover more from অপু তানভীর
Subscribe to get the latest posts sent to your email.