কাইয়ুম রসুল সামনের মেয়েটার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলেন। তিনি দীর্ঘদিন মানুষের মন নিয়ে কাজ করছেন । তাদের শারীরিক আচরণ দেখেই বুঝতে পারেন যে সামনে বসা মানুষটা মনের ভেতরে কেমন অনুভুব করছে। কেউ মিথ্যা বললেও তিনি সেটা চট করেই ধরে ফেলেন । তবে হ্যা কিছু মানুষ দারুন ধূর্ত হয়ে থাকে আর দারুন মিথ্যা বলতে পারে । সে সব মানুষদের মিথ্যাটা সহজে ধরা যায় না। এই যেমন সামনে বসা এ মেয়েটির সব আচরণ দেখে মনে হচ্ছে যে মেয়েটি একেবারে সত্য বলছে। আবার মেয়েটি যে অস্থির হয়ে আছে সেটাও সত্য ।
তবে মেয়েটা যা বলছে তা আসলে কোন ভাবেই সত্য হওয়ার কোণ কারণ নেই। এমন কিছু পৃথিবীতে হতে পারে না। কাইযুম রসুল বিশ্বাস করেন যে পৃথিবীর সব কিছুরই বৈজ্ঞানির ব্যাখ্যা রয়েছে। মেয়েটা যে কথা বলছে সেটার কোন না কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে। মেয়েটার হ্যালুশিনেসন হচ্ছে। মাথার ভেতরে কেমিক্যাল ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে গেলে এমনটা হয়ে থাকে । মেয়েটা একটা কর্পোরেট ব্যাংকে চাকরি করে । সে হিসাবে কাজের চাপ অনেক বেশি হওয়ার কথা। এই সময়ে মানসিক অস্থিরতা স্বাভাবিক ।
-মিস মীরা, আপনার সম্ভবত কদিন খুব কাজের চাপ যাচ্ছে।
কাইয়ুম রসুল খেয়াল করলেন এতো সময় মীরা যেমনটা চোখে তাকিয়ে ছিল এখন সেই চোখের দৃষ্টি একেবারে বদলে গেল । মীরার চোখে এখন একটা হতাশার দৃষ্টি দেখতে পাচ্ছেন তিনি । এতো সময় মীরা তার উপরে খানিক ভরশার চোখে তাকিয়ে ছিল । এখন সেটা আর নে।
মীরা বলল, আমি জানি আপনি এরপরে কী বলবেন । আমি আপনার আগে আরো দুইজনের কাছে গিয়েছি। তারাও আমাকে ঠিক একই কথা বলেছে। যাই হোক আপনাকে যে তথ্যটা আমি দেই নি সেটা হচ্ছে যদিও আমি ব্যাংকে চাকরি করি কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সাবজেক্ট ছিল সাইকোলজি। আমার হ্যালুশিনেসন হচ্ছে না। আর মাথার কেমিক্যাল ব্যালেন্সও ঠিক আছে। যাই হোক আমার মনে হচ্ছে আমি আপনার এবং আমার দুজনের সময়ই নষ্ট করছি। আমি বরং আসি।
-শুনুন আমি এখন…।
তবে মীরা শুনল না। সে উঠে চলে গেল।
কাইয়ুন রসুল কিছু সময় চুপ করে বসে রইল । রোগীরা এমন ভাবে উঠে চলে যায় না । মেয়েটা সত্যিই মনে হচ্ছে যে মানসিক ভাবে অস্থির হয়ে আছে। মেয়েটার গল্প অবশ্য বড় অদ্ভুত লাগল । তার কর্ম জীবনে সে অনেক রকম গল্পই শুনেছেন। তবে এই গল্পটার ভেতরে অন্য রকম কিছু রয়েছে।
মীরা মেয়েটা মানুষের মৃত্যু দেখতে পাচ্ছে। মীরা জানালো যে গত কয়েক মাস ধরে, প্রায় প্রায়ই অদ্ভুত একটা দৃশ্য এসে হাজির হচ্ছে মীরার সামনে। প্রথমবার এমন হল মাস ছয়েক আগে। মীরা সেদিন অফিসের কাজ শেষ করতে করতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল। মাস শেষের ক্লোজিংয়ের কাজ চলছিল । সেটা শেষ করতে করতে রাত প্রায় দশটা । নিজের গাড়ি চালিয়েই সে অফিসে আসে । সেদিন গাড়িটা নিতে অফিস বিল্ডিংয়ের পার্কিংয়ে নেমে এল । ওদের অফিসের পার্কিংটা সব সময়ই নির্জন । কেবল মাত্র একটা মুখ রয়েছে ঢোকার আর বের হওয়ার । তাই দুইজন গার্ড থাকে সেখানে। আর পুরো পার্কিংটাই নির্জন থাকে । মীরার একটু ভয় অবশ্য করে । ইংরেজি মুভিগুলোতে দেখেছে যে এই পার্কিংয়ের কোন কোনায় ঘাপটি মেরে থাকে খুনি । রাতের বেলা কেউ গাড়ির কাছে আসলে তার খুন করে চলে যায় । অবশ্য ওদের পার্কিংটা পুরোটা সিসিটিভির আন্ডারে রয়েছে। সব সময় আলোকিত থাকে ।
লিফট থেকে নেমে নিজের গাড়ির দিকে হেটে যাচ্ছিল। তখনই হঠাৎ করেই পুরো পার্কিংয়ের আলো বন্ধ হয়ে গেল একবারে । বিদ্যুৎ চলে গেলে এমনটা হয় । কিন্তু ঠিক এক সেকেন্ডের ভেতরেই আবার জেনারেটর চালু হয়ে যাওয়ার কথা । কিন্তু সেটা হল না । মীরা অন্ধকারের ভেতরে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে রইল । কী করবে ঠিক বুঝতে পারছিল না । ব্যাগের ভেতর থেকে ফোনটা বের করতে যাবে ঠিক এই সময় আবার আলো জ্বলে উঠল । তবে এই আলো উজ্জ্বল এলইডির আলো নয়। আলোটা অনেকটা লালচে ধরনের । লাল আলোটা এসে হাজির হতে সে দেখতে পেল ওর থেকে ঠিক একটু দুরেই একটা লিফটের দরজা খুলে গেছে । লাল আলোটা ঠিক সেখান থেকেই বের হয়েছে। সেই আলোতেই সামনের বেশ কিছুটা অংশ আলোকিত হয়েছে । মীরা দেখতে পেল যে লিফটের সামনে একজন মানুষ হাটু গেড়ে বসে আছে। তার হাত পেছন দিকে বাঁধা। ঠিক তার পেছনে এবং চার পাশে আরও পাঁচজন মানুষের মত কিছু দাঁড়িয়ে রয়েছে । লম্বায় ওরা কম করে হলেও সাত ফুট হবে । গায়ে ধূরস রংয়ের আলখাল্লা পরে রয়েছে । মাথায় হুডি পরানো । হুডির মুখের অংশটুকু কালো হয়ে আছে। সবাই তাকিয়ে আছে লিফটের সামনে হাটু গেড়ে বসে থাকা মানুষটার দিকে ।
মীরা এতোটাই অবাক হয়ে গেল যে প্রথম কিছু মুহুর্তে ওর মনে কোন রকম চিন্তাই এল না। সে কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল । একটু পরে মীরা বুঝতে পারল যে এই দৃশ্যের ভেতরে খুবই অস্বাভাবিক কিছু ব্যাপার রয়েছে। এটা কোন ভাবেই স্বাভাবিক হতে পারে না। তারপরই হাটু গেটে বসা লোকটা মীরার দিকে ফিরে তাকাল । মীরা সাথে সাথেই তাকে চিনতে পারল । ওদের অফিসের ফ্লোর ম্যানেজার জসিম উদ্দিন । ওর দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে রয়েছে।
মীরা মুখ দিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই দেখতে পেল পেছনের সেই লম্বা আলখেল্লা পরা মানুষগুলো একটু এগিয়ে জসিম উদ্দিনের কাধে হাত দিয়ে তাকে একপ্রকার উচু করে ধরে লিফটের ভেতরে ছুড়ে মারল । তারপর নিজেও সে লিফটের ভেতরে ঢুকে পড়ল । লিফটা বন্ধ হওয়ার আগে মীরা কেবল জমিস উদ্দিনের একটা চিৎকার শুনতে পেল। লিফটটা যখন বন্ধ হল তখন আবারও সব কিছু অন্ধকার হয়ে এল। এবং তার কয়েক মুহুর্ত পরে আবার এলইডির ফকফকয়া আলোতে পুরো পার্কিংটা আলোকিত হয়ে গেল।
মীরা কিছু সময় বোকার মত তাকিয়ে রইল । একটু যা দেখলো সেটা বোঝার চেষ্টা করছে সে। মীরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে কোণ লিফট ছিল না। লিফটা গুলো একেবারে পেছনের দিকে। মীরা যেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেখানে কেবল গাড়ি রাখার ফাঁকা জায়গা রয়েছে । বেশির ভাগ জায়গাই এখন ফাঁকা । এতো রাতে এখানে খুব একটা গাড়ি নেই।
তাহলে ও যা দেখল তার অর্থ কী হতে পারে?
মীরা জানে না । মীরা চোখের ভুল ভেবে নিজের গাড়ির দিকে হাটা দিল । গাড়ি নিয়ে সোজা বের হয়ে গেল । কিন্তু ঠিক পরের দিন অফিসে এসে ভয়ংকর একটা খবর জানতে পারল । আগের দিন রাতে নাকি তাদের ফ্লোর ম্যানেজার জসিম উদ্দিন মারা গেছে। ভোর রাতের দিকে হঠাৎ তার বুকে ব্যাথা শুরু হয় তারপরই তার মৃত্যু হয়েছে। মীরা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারল না । পুরো ব্যাপারটাই কী কাকতালীয়!
কিন্তু ঠিক মাস খানেক পরে আবারও একই ঘটনা ঘটলো তখন আর ব্যাপারটা কাকতালীয় মনে হল না। এবারও একই ভাবে সে পার্কিংয়ে গাড়ি নিতে যাচ্ছিল । সময় টা ছিল বিকেল বেলা । অফিস থেকে একটু জ্বলদি বের হয়েছিল আজকে । লিফট থেকে বের হয়ে কিছু দুর এগিয়ে যেতেই আবারও সেদিনের মত লাল আলো দেখতে পেল । আজকে হাটু গেড়ে বসে থাকা মানুষটা ছিল বন্ধু আববারের বাবা রউসুর জামান।
মীরা ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে চাইল না । বারবার মনের ভেতর কেবল একটা কথাই নিজেকে বিশ্বাস করাতে লাগল যে এসব কোন ভাবেই ঘটবে না। এটা বাস্তব হতে পারে না । এটা সত্য হতে পারে না। কিন্তু সত্য হয়েছিল। রউসুর জামান মারা গেল পরদিন সকালে। এভাবে একে একে প্রায় আট জনের মৃত্যুর খবর মীরা পেল তাদের মৃত্যুর আগে।
কাইয়ুম রসুল এ গল্পটা শুনে মীরাকে জিজ্ঞেস করেছিল যে এই যে আগে আগেই মারা যাচ্ছে কেবল আপনিই কেন দেখতে পাচ্ছেন ? কোন মিল আছে কী?
মীরা বলেছিল, কোন প্যার্টার্ন নেই। নারী পুরুষ আর সব বয়সেরই কোন মিল নেই । তবে একটা ব্যাপার কমন । এরা সবাই খারাপ মানুষ।
-খারাপ মানুষ বলতে?
-এদের নামে দুর্নীতি সহ নানান খারাপ কাজের অভিযোগ রয়েছে । কারো কারো নামে মামলাও আছে । আমাদের ফ্লোর ম্যানেজারের যৌন হয়রানীর অভিযোগ রয়েছে । তবে সে আবার চেয়ারম্যানের আত্মীয় হয় তাই কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয় নি । তারপর বর্তমান রুলিং পার্টির সদস্য, পাট মন্ত্রী। তারপর অন্যায়ের কোনো সীমা পরিসীমা তো নেই।
-ওনাকেও দেখেছিলেন?
-হ্যা । প্রথম কয়েক বারে ভেবেছিলাম যে শুধু আমার পরিচিত যারা তাদেরই দেখছি কিন্তু তারপরেই আমি ঐ মন্ত্রীকে দেখলাম । আপয়ান্র হয়তো বিশ্বাস হবে না তবে আমি এই দৃশ্য দেখার পরপরই নিজের ফেসবুকে অনলি মি করে একটা স্টাটাস দিয়েছিলাম ।
মীরা নিজের মোবাইল বের করে কিছু টেপাটেপি করল । তারপর ফোনের স্ক্রিনটা কাইয়ুম রসুলের দিকে বাড়িয়ে দিল । স্টাটাসটা মাস দুয়েক আগের। সময় দেখা যাচ্ছে রাত নয়টা । প্রাইভেসি অনলি মি করা । সেখানে একটা লাইন লেখা। ‘পাটমন্ত্রী কালকের ভেতরে মরবে’।
-আপনি সময় দেখতে পারেন । ঐ মন্ত্রী মারা গেছে পরদিন দুপুর বেলা । আমার এই স্টাটাস দেওয়ার প্রায় আঠারো ঘন্টা পরে । এই স্টাটাস আমি চেক করে দেখতে পারেন । এটা কোন এডিটেড স্টাটাস না। এডিট হিস্টরিতে গেলেই সেটা দেখতে পাবেন।
কাইয়ুম রসুল মীরার গল্পে কিছু বিস্মিত হয়েছেন, তার উপরে মেয়েটা সাইকোলজি নিয়ে পড়াশোনা করেছে জেনে কিছুটা অবাক হয়েছে। মেয়েটা ইচ্ছে করেই আগে নিজের পড়াশোনা নিয়ে কিছু বলে নি । মেয়েটার কথা বার্তাও পরিস্কার মনে হয়েছে । তবে একটু অস্থিরতা ছিল । কাইয়ুম রসুল মনে মনে ভাবতে লাগলেন যে এই ঘটনার ব্যাখ্যা আসলে কী হতে পারে । একবার দুইবার হলে কাকতালীয় ব্যাপার বলেই চালিয়ে দেওয়া যেত কিন্তু আট নয়বার যখন হয়েছে তখন তো কিছু একটা ব্যাপার আছে । এবং অবশ্যই সেটা বৈজ্ঞানিক ভাবেই ব্যাখ্যা করা যাবে।
এসব যখন ভাবছেন তখন তার চোখ গেল কাগজটার উপরে । মীরার চেয়ারের উপরে একটা ছোট ভাজ করা কাগজের টুকরো পড়ে রয়েছে। কৌতূহল নিয়ে সে উঠে কাগজটা নিল । ভাগটা খুলে পড়ল লেখাটা । একটা মাত্র লাইন । ‘‘আজকে আমি আপনাকে দেখেছি’’ ।
লেখাটা পড়েই কাইয়ুম রসুল চমকে উঠলেন।
নিজের আচরণ দেখে কাইয়ুম রসুল নিজেই খানিকটা বিরক্ত হচ্ছেন । বুঝতে পারছেন যে মীরা নামের ঐ মেয়েটার গল্প তার মনের উপরে প্রভাব ফেলেছে । কিছুতেই তিনি সেটা মন থেকে দুর করতে পারছেন না। পরের পেসেন্টকে দেখার সময় খেয়াল করলেন যে তিনি কিছুই মন দিয়ে শুনছেন না। বারবার মনযোগ ছুটে যাচ্ছে। বুঝতে পারলেন যে আজকে আর কোন কাজ হবে না।
নিজের উপরে বিরক্তটা বাড়ছে। মনে হ্ল যে আজকে আর কোন রোগী দেখবেন না। মনটাকে সবার আগে শান্ত করতে হবে। একটা বিশেষ নম্বরে ফোন দিলেন তিনি । প্রতিমাসে একবার অন্তত তিনি এই নম্বরটাতে ফোন দেন । পাওয়ার সাথে সাথে তিনি জানেন কাজ শুরু হয়ে যাবে । এক ঘন্টার ভেতরে একজন এসে হাজির হবে তার উত্তরার ফ্লাটে । আজকে বাসায় ফোন করে জানিয়ে দিতে হবে যে ক্লায়েন্টের চাপ বেশি । ফিরতে দেরি হবে।
কাইয়ুম রসুল চেম্বার থেকে বের হয়ে নিজের গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলেন । ড্রাইভার এগিয়ে এসে দরজা খুলে দিতে গেল । কাইয়ুম রসুল সেই দরজা দিয়ে ঢুকলেন না । সেটা বন্ধ করে দিয়ে বললেন, আজকে তুমি বাসায় চলে যাও।
ড্রাইভার আর কোন বাক্য ব্যয় না করে সোজা ঘুরে হাটা দিল । কাইয়ুম রসুল তার ড্রাইভারের চলে যাওয়া পথের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলেন । তারপর তিনি সামনের দরজার খোলার জন্য এগিয়ে গেলেন । কিন্তু যক্ষন দরজাটা খুলতে যাবেন ঠিক তখনই পুরো পার্কিংয়ের আলো ধপ করে নিভে গেল। অন্ধকারের ভেতরেই কাইয়ুম রসুল অনুভব করলেন খুব শক্তিশালী কোন দুট হাত তাকে যেন একেবারে দুই হাতে তুলে নিল উপরে । তারপর একেবারে ছুড়ে ফেলল মেঝেতে । প্রচন্ড ব্যাথা পেলেন তিনি ।
মুখ দিয়ে আওয়াজ বের করতে চাইলেন বটে তবে পারলেন না। কেউ একজন তার হাত দুটো পেছনের দিক দিয়ে বেঁধে দিল । তারপর চুলের মুঠি ধরে তাকে হাটুর উপরে ভর করে বসালো । এই সবই হচ্ছিল অন্ধকারের ভেতরে । কিন্তু তারপরই তিনি আলো দেখতে পেলেন । লিফটের দরজা খুলে যাচ্ছে । লাল আলো আসছে সেখান থেকে । কাইয়ুম রসুল বড় বড় চোখে তাকিয়ে রইলেন সেদিকে । তার গন্তব্য চিনতে তার মোটেই কষ্ট হল না । এটাই তাহলে তার শেষ গন্তব্য ।
পরিশিষ্ট
মীরা আস্তে আস্তে হাটছে ফুটপাথ ধরে । রাত বেশি হয় নি তবে ভীড় কমে এসেছে । এই সময়ে রাস্তায় পায়ে হাটা মানুষের ভীড় কমে আসে । সবাই গাড়ি কিংবা বাসে করে বাসায় ফেরে । আজকে সে গাড়ি নিয়ে আসে নি । এদিক ওদিক হাটবে সে । মনটা কিছুটা বিষন্ন । সাইকোলজির প্রতিটা ছাত্রছাত্রী কাইয়ুম রসুলকে চেনে খুব ভাল ভাবেই । তারা সবাই কাইয়ুম রসুল হতে চায়। কিন্তু মীরা যখন লিফটের সামনে কাইয়ুম রসুলকে দেখতে পেল তখন বুঝতে কষ্ট হল না যে এই মানুষটার ভেতরে একটা কুৎসিত দিক রয়েছে। প্রথম কয়েকবার লিফটের দৃশ্য দেখে মীরা কিছুটা ভয় পেয়েছিল বটে তবে সেটা সে কাটিয়ে উঠল জলদি । প্রতিটা মৃত্যুত পরেই মীরা খোজ নিয়ে দেখেছে প্রত্যেকেই খারাপ মানুষ ছিল। মীরা কেবল এই খারাপ মানুষের মৃত্যুই দেখতে পায় । তাই যখন কাইয়ুম রসুলকে দেখতে পেল তখন কিছুটা অবাকই হয়েছিল । এক বন্ধুর মাধ্যমে ঘন্টা খানেকের ভেতরেই এপোয়েন্টের ব্যবস্থা করল । দেখাও করে এল । মীরার খুব ইচ্ছে করছিল যে সরাসরিই তাকে খবরটা দিতে যে এবার তার পালা । কিন্তু কেন জানি বলতে পারল না । কাগজে লিখে কাগজটা চেয়ারের উপরে রেখে বের হয়ে এল।
মীরা জানে আগামী চব্বিশ ঘন্টার ভেতএই কাইয়ুম রসুল মারা যাবে। মীরা অনেক ভেবেও লিফটের দৃশ্যটার দেখার কোন কুল কিনারা করতে পারে নি । কেন সে এসব দেখছে সেটা জানে না । অবশ্য এতে মীরার কোণ অসুবিধা হচ্ছে না । কিছু মানুষের আসল চেহারা সে জানতে পারছে এটাই যা। এবার কার চেহারা লিফটে দেখা যাবে কে জানে । মীরা আগ্রহ নিয়েই সেটার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল ।
এই গল্পটার উৎস একটা ছবি ।
ফেসবুকের অর্গানিক রিচ কমে যাওয়ার কারনে অনেক পোস্ট সবার হোম পেইজে যাচ্ছে না। সরাসরি গল্পের লিংক পেতে আমার হোয়াটসএপ বা টেলিগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। এছাড়া যাদের এসব নেই তারা ফেসবুক ব্রডকাস্ট চ্যানেলেও জয়েন হতে পারেন।
সরাসরি মেসেজ পাঠাতে চিঠি.মি এপ ব্যবহার করুন।
Discover more from অপু তানভীর
Subscribe to get the latest posts sent to your email.