ক্যাম্প ফায়ার

oputanvir
4.7
(31)

নওরিন কিছুটা সময় ইতস্তত করে তাকিয়ে রইলো ছেলেটার দিকে । আজকে দ্বিতীয় দিন ছেলেটাকে দেখছে । ছেলেটা সম্ভব নতুন এসেছে এই এলাকাতে । দুপুরের লাঞ্চ করতে গতকালও এসেছিলো । গতকালই সে ফোনে ছেলেটাকে বাংলায় কথা বলতে শুনেছে । সম্ভবত তার মায়ের সাথে কথা বলছিল ছেলেটা । দুপুরে ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করেছে কিনা সেটাই জানতে চাইছিলো ছেলেটা । বাংলা শোনার পর থেকেই ছেলেটার সাথে কথা বলার একটা তাগিত অনুভব করছিল গতকাল থেকেই । নওরিন বর্তমানে যেখানে থাকে সেখানে একজনও বাঙালী মানুষ নেই । সারাদিন ইংরেজির প্যাপু শুনতে শুনতে নওরিন খানিকটা হাফিয়ে উঠেছে । পাশের শহরে একটা বাংলা কমিউনিটি আছে । ছুটি পেলে নওরিন সেখানে যায় ।

আজকেও ছেলেটাকে লাঞ্চ আওয়ারে এখানে আসতে দেখে নওরিন নিজের বার্গারের প্লেটটা তুলে নিয়ে ছেলেটার টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়ালো । তারপর বাংলাতেই বলল, আপনি কি বাংলাদেশী?
ছেলে মুখ তুলে তাকালো । নওরিনের তখনই মনে হল যে এই ছেলে বাংলাদেশী না হয়ে যায়ই না । চেহারাতেই বলে দিচ্ছে বাংলাদেশ থেকে এসেছে । ছেলেটা একটু হেসে বলল, আরে আপনি বাংলাদেশী !
নওরিন সামনের চেয়ারে বসতে বসতে বলল, থ্যাংক গড । একজনকে তো পাওয়া গেল । জানেন বাংলা শোনার জন্য আমাকে পাশের শহরে যেতে হয় । খেতে খেতে যে চমৎকার বাংলা বলা যায় এই বাপারটা আমি যেন ভুলেই গিয়েছি । বাই দা ওয়ে আমি নওরিন । এখানে পোস্ট গ্রাজুয়েট করছি । আপনি ?
-আমি রায়হান । এখানে ঘুরতে এসেছি বলতে পারেন।
-এই শহরে মানুষ তো খুব একটা ঘুরতে আসে না । মানে আমেরিকাতে যারা আসে তাদের কেউ খুব একটা এখানে আসে না ।
-আসলে আমি জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট গুলো এরিয়ে যাই । আমার নির্জনতা পছন্দ বেশি । বনজঙ্গল পাহাড় সমুদ্র এই সবই আমার বেশি পছন্দ । দেশে থাকতে বান্দরবানের এমন কোন জায়গা নেই যে আমি সেখানে যাই নি । ইন্ডিয়াতেও গিয়েছি প্রচুর ।
-তাই নাকি?
-হুম ।
-তা এখানে কোথায় যাওয়ার প্লান শুনি ?
-এখনও ঠিক জানি না । এই যে শহরের শেষ প্রান্তে যে উইসটোন হিল রয়েছে ওখানে ভাবছি কদিন ক্যাম্পিংয়ে যাবো । দেখি ওখানে কেবিন পাওয়া যায় কিনা !

নওরিনের কেন জানি রায়হানকে চট করেই ভাল লেগে গেলে । কেন লেগে গেল যেটা নওরিন জানে না । দেশে কোথায় থাকে কী করে এসব টুকটাক প্রশ্ন করলো । রায়হানও গল্প করে চলল । দুপুরের সময় টুকু পার হয়ে গেল চমৎকার । পরপর আরও সাতদিন দেখা হল একই সময়ে । ছেলেটার মাঝে কেমন যেন একটা মায়া আছে । কথা বললে কথা বলতেই ইচ্ছে করে । প্রতিদিন রায়হান ওকে বলতো শহরের কোথায় কোথায় গিয়েছে সে। নানান স্থানে ঘুরে বেড়াতো সে । নওরিন অবাক হয়ে শুনতো । এতোদিন ধরে সে এই শহরে আছে অথচ সে ঠিকঠাক মত কোথাও যায় নি ।

ঠিক সেই সময়েই নওরিন সিদ্ধান্ত নিলো যে রায়হানের সাথে সেই ক্যাম্পিংয়ে যাবে । কেন এমনটা মনে হল সেটা নওরিন জানে না তবে মনে হল যে ছেলেটার সাথে ঘুরতে যাওয়া যায় । সেমিস্টার ব্রেকের পরে নতুন সেমিস্টার শুরু হতে এখনও বেশ কিছু সময় রয়েছে । দেশ থেকে ওকে বারবার বলছিলো একবার ঘুরে যেতে তবে নওরিনের এতো টাকা খরচ করে মাত্র এক দুই সপ্তাহের জন্য যেতে ইচ্ছে করে নি । যদিও নওরিনের বাবার টাকা পয়সার কোন অভাব নেই তবুও নওরিন জীবনে কখনই বেহিসাবী কিছু খরচের বিপক্ষে । সামনের মেসিস্টারের পরে লম্বা ছুটি পাবে তখন দেশে যাবে ঠিক করেছে ।

রায়হানকে বলতে রায়হান একটু অবাক হল তবে সাথে সাথে খুশিও হল। নওরিন জানালো যে সে প্রায় বছর খানেক সময় ধরে এখানে আছে তার কোথাও ঠিক মত ঘুরতে যাওয়া হয় নি। একদিনের একটা ক্যাম্পিংয়ে যাওয়াই যা রায়হানের সাথে ।

দুই
শাহীন চৌধুরী নিজের মেয়ের নম্বর থেকে কলটা পেয়ে একটু অবাক হল । এই সময়ে তার মেয়ে নওরিন সাধারণ কল করে না । ফোনটা রিসিভ করতেই শাহীন চৌধুরী অবাক হয়ে দেখলো ফোনের স্ক্রিনে অন্য একজনের ছবি । শহীন চৌধুরী প্রথম কয়েক মুহুর্ত কী বলবে ঠিক বুঝতে পারলো না । এই মানুষটার কাছে তার মেয়ের ফোন কিভাবে এল !
-কী ব্যাপার চৌধুরী সাহেব অবাক হচ্ছেন ?
শাহীন চৌধুরী গম্ভীর কন্ঠে বলল, আমার মেয়ে কোথায়?
-এই যে পাশেই আছে?

ফোনের স্ক্রিনটা একটু ঘোরাতেই নওরিনকে দেখতে পেল । নওরিনের চেহারায় একটা ভয় দেখতে পাচ্ছে সে চেহায়া একটা দিশেহারা ভাব । আগুনের পাশে নওরিন বসে আছে । পেছন দিক দিয়ে তার হাত বাঁধা ।
নিজেকে শান্ত করলো সে । এখন উত্তেজিত হলে চলবে না । শাহীন চৌধুরী বলল, কী চাও তুমি?
-তুমি জানো আমি কী চাই ? কনফেস কর!
-কনফেস ! কিসের কনফেস?
-এতো জলদি ভুলে গেলে ! মাত্র তো দুই বছর আগের কথা । ভুলে গেলে ?

শাহীন চৌধুরী তখনই একটু অবাক হল । সে ঠিক ঠিক জানে ছেলেটা কী বলতে চাইছে । কিন্তু এই কথা তো অন্য কারো জানার কথা না । কারো জানার কথা না । তাহলে এই ছেলে কিভাবে জানলো !
ছেলেটা বলল, তোমার কারণে ৪১ টা তাজা প্রাণ মারা গেছে । ৪১ টা । তুমি কেবল নিজের স্বার্থের জন্য এই ৪১জনকে মেরে ফেলেছো ।
-দেখো তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে । আমি কিছুই বুঝতে পারছি না ।
শাহীন চৌধুরী তখনই দেখতে পেল ছেলেটা নিজের পিস্তল বের করলো । তারপর সেটা নওরিনের দিকে তাক করে বলল, দেখো আমার কাছে খুব বেশি সময় নেই । তুমি যদি সোজা কনফেস না কর তাহলে এই যে ফোন কেটে দিবো তার সোজা তোমার মেয়ের মাথায় গুলি করে মেরে ফেলবো ।
-আমি সত্যিই ….
-ওকে ফাইন । অনেক কথা হয়েছে । তুমি আমার বউ বাচ্চাকে মেরে ফেলেছো, তোমার মেয়েকে তো মেরে ফেলতেই পারি ।

এই বলে ফোনটা কাটতে যাচ্ছিলো তখনই শাহীন চৌধুরী চিৎকার করে বলল, ফোন কেটো কেটো না প্লিজ আমি স্বীকার করছি । সব স্বীকার করছি ।
-ফোনটা এবার নওরিনের দিকে ধরলো সে । তারপর বলল, এবার স্বীকার কর যে কী কী করেছো । তোমার মেয়ে শুনুক । যদি সত্যিটা না বল এবার তোমার চোখের সামনেই তোমার মেয়েকে গুলি করবো !

শাহীন চৌধুরী নিজের মেয়ের দিকে তাকালো । আগুনের কারণে মেয়েটার চেহারাতে একটা আলাদা আভা জ্বলজ্বল করছে । কান্নার জল স্পষ্ট চিকচিক করছে । শাহীন চৌধুরী জানে যে এমন এক পরিস্থিতিতে সে পরেছে সেখানে ঐ ছেলের কথা শোনা ছাড়া আর কোন উপায় নেই । আবার তার অপরাধের কথা নিজের মেয়ের সামনে স্বীকার করা মানে হচ্ছে নিজের মেয়ের কাছে আজীবনের জন্য অন্য মানুষ হয়ে যাওয়া !

শাহীন চৌধুরী একটা লম্বা দম নিলেন। তারপর বলল, দুই বছর আগে সরকার ডিফেন্ফ কিছু সফটওয়্যার তৈরির টেন্ডার পাওয়ার চেষ্টা করছিলাম । এটা এমন একটা প্রোজেক্ট ছিল যা আমাদের ভাগ্য পুরোপুরি বদলে দিয়েছে । তাই এটা আমাদের পেতেই হত ।
-তো এটা পাওয়ার জন্য কী করলে তুমি ?
শাহীন চৌধুরী আবারও লম্বা একটা দম নিল । তারপর বলল, আমাদের কম্পিটিটর ছিল লকলেইন কর্পোরেশন । ওদের বানানো সফটও্য়্যার দেশী ফ্লাইট ওনো এয়ার ব্যবহার করতো । আমরা সেই ফ্লাইটের সফটওয়্যার ম্যালফাংসন করার করার জন্য লোক হায়ার করি । আমরা ভেবেছিলাম যে সামান্য ত্রুটির কারণে ওটা মাটিতে ল্যান্ড করতে পারবে তবে সেটা পারে নি । ক্রাশ করে । ক্রু সহ মোট ৪১ জন মারা যায় !

শাহীন চৌধুরী নওরিনের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটা যেন কাঁদতে ভুলে গেছে । নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে আছে অবাক হয়ে । ফোনের স্ক্রিনে ছেলেটাকে আবার দেখা গেল । ঐ ৪১ জনের ভেতরে আমার বউ আর এক বছরের মেয়ে ছিল ।
-দেখো আমি তোমার অপরাধি । আমার মেয়েকে ছেড়ে দাও প্লিজ আমার মেয়েকে ছেড়ে দাও !
ছেলেটা হাসলো । তারপর ফোন কেটে ছিল । শাহীন চৌধুরী আবারও ফোন দিল কয়েকবার কিন্তু কোন কাজ হল না । ফোনটা আনরিচেবল দেখাচ্ছে ।

তিন
নওরিন যেন কাঁদতে ভুলে গেছে । রায়হান ছেলেটাকে তার কত ভাল লেগেছিল অথচ সেই ছেলেটার হাতেই এখন সে মরতে বসেছে । এভাবে হুট করে একটা অচেনা ছেলের সাথে চলে আসাটা যে চরম বোকামী হয়েছে সেটা বুঝতে ওর মোটেও কষ্ট হল না । কিন্তু এখন বুঝে সে আর কী করবে ! ক্যাম্পিংয়ের জন্য ওরা একটা ক্যাব ভাড়া করেছিলো । হিলের কাছেই ক্যাবটা ওদের রেখে চলে যায় আর জানায় যে পরদিন দুপুরে ওদের আবারও নিতে আসবে যদি চায় । অবশ্য এখানে ফোনের নেটওয়ার্ক ভালই আছে । ক্যাব না আসলেও খুব একটা সমস্যা হবে না ।
সব কিছু ঠিক মতই চলছিলো । ওরা বনের ভেতরে ঢুকে পড়লো । কিছু দুর হাটলো তারপর একটা চমৎকার জায়গা খুজে ক্যাম্প বসালো । বিকেলে কফি বানালো রায়হান । ওটা খাওয়ার পরেই নওরিনের মাথা খানিকটা ঘুরতে শুরু করলো । তারপরেই সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে । যখন জ্ঞান ফিরে আসে তখন নিজেকে বন্দী অবস্থায় পায় সে । নিজের হাত শক্ত করে বাঁধা ছিল । আগুন জ্বলছিল সামনে । রায়হানের হাতে পিস্তল দেখতে পাচ্ছিলো । তখনই নওরিনের মনে একটা ভয় এসে বাঁধালো । নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো কয়েকবার ।

তারপর রায়হানই ওর ফোন দিয়ে ওর বাবাকে ফোন দিলো । নওরিন ভেবেছিলো যে রায়হান বুঝি মুক্তিপন চাইবে তবে তারপর রায়হান যা বলল তাতে নওরিন এতো অবাক হল যে নিজের ভয়টাও যেন দুরে সরে গেল । নিজের বাবাকে বড় ঘৃণা হতে শুরু করলো । তার বাবা ৪১টা মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী । আর সেই ৪১ জনের ভেতরে রায়হানের স্ত্রী আর বাচ্চা মারা গেছে । ফোনটা কেটে দেওয়ার পরে নওরিন কেবল ভীত চোখে তাকিয়ে রইলো রায়হানের দিকে । এখনই সে গুলি করে দিবে ওকে । এখনই সে মারা যাবে !
অবশ্য মরে যাওয়াই ভাল ওর । নিজেকে বোঝালো ও । এই পাপবোধ নিয়ে ওর বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যাবে ।

তবে ওকে একদম অবাক করে দিয়ে রায়হান ওর হাত খুলে দিলো । তারপর ওর হাতে ফোন দিয়ে বলল, সোজা হেটে যাও । রাস্তা পাবে । ওখান থেকে ফোন দিলেই ক্যাব চলে আসবে কিছু সময়ের ভেতরে !

নওরিন কিছু সময় অবাক হয়ে রইলো বটে তবে হাত খোলা আর ফোন হাতে পেয়েই সে সোজা পেছন ঘুরে দৌড় দিলো । আর কিছু চিন্তা করলো না । তবে কয়েক মিনিট দৌড়ানোর পরেই ওর মনে হল ও কেন দৌড়াচ্ছে । থেমে গেল । ফোনটা হাতে নিয়েই দেখতে পেল যে ফোনের নেটওয়ার্ক রয়েছে বেশ ভাল রকমই । চাইলে এখনই ফোন করা যায় । কিন্তু নওরিন ফোন করলো না ।

চার
-আবার কেন এসেছো?
-এখন তুমি কী করবে?
-জানি না । ভাবিই নি কী করবে?
-গুলি করবে নিজেকে?
-হয়তো । আমার আসলে বেঁচে থাকার মত আর কিছু নেই ।
-তাহলে এই কাজটা কেন করলে?
-জানি না । ভেবেছিলাম যে হয়তো তোমাকে মেরে ফেললে কিংবা প্রতিশোধ নিলে হয়তো ভাল লাগবে কিন্তু লাগছে না । জানো নওরিন আমার পুরো জীবনটা একদম থেকে গেছে ঐদিন । আমার মেয়েটা, এতো টুকু বয়স । ঠিক মত কোলেও নিতে পারি নি ওকে । চাকরির কারণে আমাকে বাইরে থাকতো হতে বলে মিম বাচ্চা হওয়ার পরে একা সামলাতে পারতো না । বলেছিলাম ওকে যে কিছু দিন মায়ের বাসায় গিয়ে থেকে আসো । অফিসের কাজের চাপ একটু কমে এলে যখন ওদের বললাম চলে আসতে ….

নওরিন দেখতে পেল রায়হান কোন কথা বলতে পারছে না । নিরবে চোখের পানি ফেলে চলেছে
নওরিনের কী মনে হল সে নিজেই এগিয়ে গেল রায়হানের দিকে । তারপর আলতো করেই ওকে জড়িয়ে ধরলো । একটু আগে এই মানুষটা তাকে মেরে ফেলতে যাচ্ছিলো অথচ এখন নওরিন নিজে মানুষটাকে কেমন জড়িয়ে ধরে আছে । নওরিনের এই মানুষটাকে মোটেই ভয় লাগছে না ।

আরও কিছু সময় এভাবে জড়িয়ে থাকতে থাকতেই নওরিন সাইরেনের আওয়াজ শুনতে পেল । পুলিশ আসছে ।
এতো জলদি এখানে কিভাবে চলে এল ?
নওরিনের বুঝতে একটু সময় লাগলো । খুব বেশি কঠিন অবশ্য না । ওর বাবা নিশ্চিত ভাবেই ফোন রাখার সাথে সাথে এখানে যোগাযোগ করেছে । তারপর সেখান থেকে ওর ফোন ট্রাক করে চলে এসেছে পুলিশ ।
নওরিন রায়হানের দিকে তাকালো । সেও পুলিশের আওয়াজ শুনতে পেয়েছে । তবে ওর ভেতরে কোন তৎপরতা দেখা গেল না । রায়হান একই ভাবে বসেই রইলো । নওরিন জানে এখন এখানে পুলিশ এলে কী হবে !

নওরিন বলল, পিস্তল দাও ।
-কী?
-রিভালবারটা দাও ।

নওরিন রায়হানের হাতের কাছেই সেটা পড়ে থাকতে দেখলো । সেটা চট জলদি তুলে নিয়ে সোজা নিজের ব্যাগে চালান করে দিল । তারপর নিজের চেহারা একটু পানি দিয়ে মুছে চুপচাপ বসে পড়লো রায়হানের একদম কাছে । এমন ভাবে যেন যে কারো মনে হবে যে ওরা দুজন প্রেমিক প্রেমিকা ।

আরও মিনিট পাঁচেক পরে চারজন পুলিশ এসে হাজির হল ওদের সামনে। ওদের দিকে তাকিয়ে বলল, মিস নওরিন?
নওরিন যথা সম্ভব নিজেকে শান্ত রেখে বলল, জ্বী আমি ! কোন সমস্যা !

পুলিশ ওদেরকে এভাবে বসে থাকতে দেখেই খানিকটা অবাক হয়েছে । ওরা সম্ভবত অন্য কিছু আশা করেছিলো । তাদের একজন দ্বিধা নিয়েই বলল, আপনি ঠিক আছেন?
-আপনার কেন মনে হচ্ছে আমি ঠিক নেই ?

পাল্টা প্রশ্ন শুনে পুলিশ এবার একটু ভরকে গেল । নওরিন আবারও জানতে চাইলো, আপনারা এখানে কেন এসেছেন জানতে পারি কি?
-না মানে আমাদের কাছে খবর আছে যে আপনার জীবন সংশয়ের সম্ভবনা রয়েছে ।
-কে আপনাদের এই খবর দিলো?
-না মানে স্বয়ং আমাদের কমিশনার আমাদের ফোন করে জানিয়েছে । তাই আমরা ছুটে এসেছি । আপনার ফোনের লোকেশন আমাদের পাঠানো হয়েছে ।
-ওয়েল দেখতেই পাচ্ছেন যে আমি ভাল আর সুস্থ আছি ।
এই বলে সে উঠে দাড়ালো । রায়হান তখনও চুপ করেই তাকিয়ে আছে ওদের দিকে । পুলিশের সামনে গিয়ে নওরিন বলল, দেখুন আমি আমার বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে এখানে একান্তে কিছু সময় কাটাতে এসেছি । এটা আমার বাবা ঠিক পছন্দ করে নি । ও এখানে থাকেও না । আমার সাথে দেখা করতে এখানে এসেছে । বুঝতে পারছেন কী? দয়া করে আমার বাবার কথায় কান দিবেন না ।

পরিশিষ্টঃ

-চাইলেই তো ওদেরকে সত্যটা বলতে পারতে !
-হ্যা পারতাম ।
-তাহলে কেন বললে না ?
-জানি না ।
-এখন কী করবে তুমি?
-আমিও জানি না । যে সত্য আমি জেনেছি তা জানার পরে সামনে আসলে আমি কী করবো সেটা জানি না । তবে আমি আর ঐ বাসায় কোন দিন ফিরে যাবো না । এই টুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি তোমাকে ।

নওরিন আগুনটা আরও একটু উস্কে দিল। কেবল কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ওর পুরো জীবনটা বদলে গেছে । মনের ভেতরটা ঠিক এই ক্যাম্প ফায়ারের মত করেই পুড়ছে। সামনে ও কিভাবে দিন গুলো পার করবে সেটা ও জানেও না । এখন অবশ্য সে জানতেও চায় না । আপাতত এই নির্জন রাতটার দিকে তাকিয়ে সময়টা পার করে দিতে চায় ।

এই গল্প লেখার থিমটা মাথায় এসেছিল যখন কোরিয়ান ড্রামা ভ্যাগাবন্ড দেখেছিলাম । যদিও সেইটার থিম এই গল্পের ধারে কাছেও না তবুও সেই ড্রামার নাম না নিলে অন্যায় হবে।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 31

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →