প্রোজেক্ট নোভা সি-টু (শেষ পর্ব)

oputanvir
4.8
(31)

রাভেস্কির সন্ধানে

আমরা শহরে ছাড়িয়ে এসেছি বেশ কিছুটা সময় আগে । শহরের শেষ মাথায় আমাদেরকে নামিয়ে দিল ট্যাক্সিটা । তার নাকি এর থেকে সামনে যাওয়ার আর অনুমুতি নেই । তবে সে আমাদের জন্য অপেক্ষা করতে রাজি হল । বলল যে এখান থেকে আমরা নাকি আর কোন যান বাহন পাবো না তবে একটু মানি ইউনিট বাড়িয়ে দিতে হবে । আমি ড্রাইভারকে অপেক্ষা করতে বলে হাটা দিলাম নোভাকে নিয়ে ।

আমি এর আগে এই দিকটাতে কোন দিন আসি নি । আসার দরকারও পড়ে নি । এই দিকটা একদম জন মানবহীন । একেবারে গ্রীন জোনের শেষ সীমানায় একটা গেট দেখা যাচ্ছে । ভেবেছিলাম এদিকটাতে অনেক নিরাপত্তা থাকবে কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না । কেমন যেন খাঁ খাঁ করছে ।

আমি একবার পুরো সিসটেক ফাইফ শহরের পুরো ম্যাপটা দেখেছিলাম । এইদিকের শেষ সীমানার পরে আর কিছু নেই । বেশ খানিকটা ফাঁকা জায়গা তার পরেই হোয়াইট জোন শুরু তবে হোয়াইট জোনের প্রবেশ পথ এদিকে নয় । ওটার প্রবেশ পথ অন্য দিকে । তাই এদিকে কেউ আসে না । নো-ম্যান্স ল্যান্ডে কিছু মানুষ থাকে । যাদেরকে শহর থেকে বাইরে বের করে দেওয়া হয়েছে কোন কারণে । তবে সেই কারণের কথা কেউ কোন দিন জানতে পারে না ।

আমরা গেটের কাছে যেতেই দুজন গার্ড আমাদের দিকে এগিয়ে এল । আমার কাছে এসে বলল

-এখানে কী চাই ?

-আমরা নোম্যান্স ল্যান্ড যেতে চাই ।

গার্ড দুটো কিছু সময় মুখ চাওয়া চাওয়ী করলো । তারপর বলল

-এই পথ দিয়ে কাউকে যেতে দেওয়া হয় না । এই কথা তোমরা জানো না ।

-আমাদের যাওয়াটা জরুরী ।

-কোন জরুরী অবস্থাতেও যেতে দেওয়া হবে না । সোজা যেদিকে থেকে এসেছো সেদিকে চলে যাও !

আমি কী করবো ঠিক বুঝতে পারলাম না । আরো গার্ড নিশ্চয়ই আছে আসে পাশে । এদেরকে আমি একা কোন ভাবেই কাবু করতে পারবো না । নোভার চেহারা এখনও কালো কাপড় দিয়ে ঢাকাই রয়েছে । হঠাৎই নোভা একটা কাজ করলো । মুখের সামনে থেকে কালো কাপড়টা সরিয়ে দিল । ওর সেই নিখুত চেহারা বেরিয়ে পড়লো ।

গার্ড দুটো কয়েক মুহুর্ত কোন কথা বলতে পারলো না । বিস্মিত হয়ে গেছে নোভাকে দেখে । সম্ভবত ওরা চিনতে পেরেছে নোভাকে ! নোভা ওদের দিকে তাকিয়ে বলল

-চিনতে পেরেছো আমাকে ? না চিনতে পারলেও সমস্যা নেই । তোমাদের অথোরাইজেশন স্ক্যানার টা কোথায় ? নিয়ে এসো !

একজন দৌড়ে গেল গেটের কাছের ছোট্ট পাহারার রুমের ভেতরে । একটু পরেই ফেরৎ এল হাতে একটা ট্যাবের মোট কালো জিনিস নিয়ে । কিছুক্ষন টেপাটেপি করে সেটা নোভার দিকে বাড়িয়ে দিল । নোভাকে দেখলাম সেই কোডটা আবার লিখতে । এবং সাথে সাথে সবুজ সিগনাল উঠে পড়লো ।

-সন্তুষ্ট ?

একজন গার্ডকে দেখলাম বিনয়ে গলে পড়ছে । একটু আগের সেই রুক্ষ ভাবটার সিটে ফোটাও নেই । বুঝে গেছে নোভা কোন সাধারণ মানুষ নয় । যার কাছে এই ভিআইপি অথোরাইজেশন কোড আছে সে যেন তেন মানুষ হতে পারে না । আমরা গেট পার হয়ে ঢুকে পড়লাম নো-ম্যান্স ল্যান্ডের ভেতরে ।

প্রায় মিনিট তিরিশেক হাটার পরে একটা লাল রংয়ের একতলা বাড়ির সামনে এসে থামলাম । হিসাব মত এটাই হওয়ার কথা রাভেস্কির ম্যারির বাসভবন । কিছু সময় আমরা দুজনেই দরজার সামনে দাড়িয়ে ভাবতে লাগলাম । সামনের পরিস্থিতি নিয়ে । সামনে কি হতে পারে কিংবা কি ধরনের বিপদে আমরা পড়তে পারি । তারপর সব চিন্তা ভাবনা ঝেড়ে ফেলে আমরা দরজাতে টোকা দিতে যাবো ঠিক তার আগেই দরজা খুলে গেল । ৫৫/৬০ বছরের এক লোক আমাদের সামনে দাড়িয়ে । ছবিতে আমি যে লোকটাকে দেখেছিলাম তার বয়স আরও কম মনে হয়েছিলো । তবে সেটা অনেক আগের হতে পারে । তাই হয়তো এখন ভদ্রলোকোকে এতো বৃদ্ধ লাগছে আমার দিকে একবার তাকিয়ে থেকে নোভার দিকে তাকিয়ে রইলো একভাবে । কয়েক মিনিট যেন এভাবেই কেটে গেল । আমি বললাম

-মিস্টার রাভেস্কি ?

লোকটা এবার আমার দিকে তাকালো । তারপর কোন কথা না বলে আমাদের কে ভেতরে আসার জন্য ইংগিত করলো । আমরা তারপ পেছন পেছন যেতে লাগলাম ।

ঘরের চারিদিকে কেমন অযত্নের ছাপ । বোঝা যাচ্ছে রাভেস্কি ম্যারি সাহেব খুব একটা ভাল অবস্থাতে নেই । কেবল মাত্র বেঁচে আছে কোন ভাবে । আমাদের কে নিয়ে এমন একটা জায়গাতে তিনি থামলেন যেটা দেখে অনেকটা অফিসের মত মনে হল । তারপর আমাদের কে দুটো চেয়ার দেখিয়ে বসতে ইঙ্গিত করলেন । আমরা বসে পড়লাম । দুজনের কারো মুখে কোন কথা নেই । আমাদের কে রেখে উনি ভেতরে চলে গেলেন ।

আমরা দুজনেই কিছু সময় পরে কিছু নাড়াচড়া করার আওয়াজ পেলাম । বুঝতে কষ্ট হল না উনি কিছু যেন খুজতেছেন । কিছু সময় পরে আবারও আমার কাছে ফিরে এলেন । তারপর সোজাসুজি নোভার দিকে তাকিয়ে বলল

-আমি জানতাম, এক না একদিন তুমি আমার কাছে আসবে ! মার্গারেট এমন কোন ব্যবস্থা করবেই ।

আমি বললাম

-আপনি মার্গারেটকে চিনেন ? আসলে আমরা আপনার ব্যাপারে তেমন কোন খোজই বের করতে পারি নি । আমরা …..

আমাকে হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলল

-আমি সবাই কে চিনি । মার্গারেটের বাবা আর আমি আগে এক সাথে কাজ করতাম ।

বলেই ভদ্রলোক কিছু সময় চুপ করে রইলো । আমি আর নোভা দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলাম । কিছু বলতে গিয়েও বললাম না । মনে হল ভদ্রলোককে নিজে নিজেই সব কিছু বলতে দেওয়া ভাল । তবে নোভা চুপ করে রইলো না । জানতে চাইলো

-আমার সাথে মার্গারেটের কি সম্পর্ক ? ওর চেহারা আর আমার চেহারা একদম এক কিভাবে ?

রাভেস্কি ম্যারি আবারও যেন কিছু সময় চুপ করে বসে রইলো । কিছু যেন ভাবছে । মনে হল আগের কোন সময়ে তিনি চলে গেছেন । তারপর চোখ খুলে নোভার দিকে তাকিয়ে বলল

-কারণ মার্গারেটই তুমি আর তুমিই মার্গারেট । তোমার আর মার্গারেটের ভেতরে কোন পার্থক্য নেই ।

আমরা দুজন একসাথে চিৎকার করে উঠলাম !

-মানে ?

রাভেস্কি বলল

-গল্পটা অসম্ভব মনে হবে তবে এই বিজ্ঞানের যুগে কোন কিছুই অসম্ভব নয় ।

তারপর নোভার দিকে তাকিয়ে বলল

-নোভা, তুমি আমারই সৃষ্টি !

নোভার দিকে তাকিয়ে দেখি ওর দৃষ্টি কেমন ঘোলা হয়ে গেছে । সম্ভবত ও নিজেও বুঝতে পেরেছে ও কে ? ওর চোখে আমি কেমন একটা বিষাদের ছায়া দেখতে পেলাম !

রাভেস্কি ম্যারি তখন তার গল্প শুরু করে দিয়েছে ! আমরা দুজন নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে । মনে মনে ভাবতে লাগলাম এটাও কি সম্ভব ?

ডা. রাভেস্কির গল্প

-মার্গারেটের জন্য পুরো স্টেস পাগল ছিল । কেবল একটা নয়, সিসটেক স্টেটের যে ছয়টা স্টেট আছে সবাই মার্গারেটের জন্য বলতে গেলে পাগল ছিল । যে কোন মূল্যে তারা মার্গারেট কে পেতে চাইতো । এর ভেতরে প্রেসিডেন্টের ছেলে থেকে শুরু করে আমাদের পুলিশ চিফ ইরোন আইভান পর্যন্ত ছিল । অন্যান্য স্টেটের লোকজনকে ঠেকানো গেলেও নিজের স্টেটের মানুষদেরকে আটকিয়ে রাখা মুশকিল হয়ে পড়লো । সত্যি বলতে কি তারা মার্গারেটকে পাওয়ার জন্য তাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ব্যবহার করতেও রাজি ছিল । যখন কোন ভাবেই মার্গারেটের মন গলানো গেল না তখন অনেকে ভিন্ন পথ অবলম্বন করতে চাইলো । পুরো জীবনের জন্য না হলেও অন্তত একরাতের জন্য তাদের মার্গারেটকে চাই ই চাই । মার্গারেট বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দিল । চেনা জানা জানা মানুষ ছাড়া কারো সাথে আর কারো সাথে স্বাধারনত দেখা করতো না ।

আমার সাথে ওর নিয়মিত দেখা হত কারন আমরা একই জায়গাতে কাজ করতাম । স্টেট সায়েন্স ইন্সটিটিউটে ! ও আমার এসিস্ট্যান্ট হিসাবে কাজ করতো ! তাই আমার সাথে ওর কথা হত মাঝে মাঝে ! যতই দিন যেতে লাগলো মেয়েটা ততই বিষণ্ণ হয়ে উঠতে লাগলো । মাঝে মাঝে নিজের ভাগ্যকে দোষ দিতো যে সে কেন এতো সুন্দর হল । সাধারণ মেয়েদের মত চেহারা হলেই বরং ভাল হত । একটা স্বাভাবিক জীবন তো তার থাকতো । মেয়েটার এভাবে একলা হয়ে যাওয়া আর গৃহ বন্দী হয়ে যাওয়াটা আমার খাছে খারাপ লাগতো । তাই আমি ওর বাবাকে একটা ভয়ংকর প্রস্তাব দেই ।

-কি করম প্রস্তাব ?

-মার্গারেটের ক্লোন বানানোর প্রস্তাব !

নোভা রাজেস্কি ম্যারির দিকে কয়েক মুহুর্ত তাকিয়েই রইলো । আমি নোভার দিকে তাকিয়ে দেখি নোভার চোখের ভেতরে এক অচেনা বিষাদ দেখা দিয়েছে ।

রাভেস্কি বলল

-তুমি একেবারে মার্গারেটের হুবাহু কপি । আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে তাহলে তুমি ওর ক্লোন !

-ক্লোন !!

রাভেস্কি বলল

-ওর বাবা আমাদের বিজ্ঞান ইস্টিটিউটের প্রধান, ড. স্টুয়ার্ড মিলান প্রথমে এই কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লো । আমাদের এই স্টেটে মানব ক্লোন করা একেবারে নিষিদ্ধ ছিল । প্রাচীন কালে এই জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারনেই পৃৃথিবী প্রায় ধ্বংশ হতে বসেছিলো । এখন এই বর্তমানেও মানুষের জন্ম প্রদান করাটা খুব কঠিন নিয়মের সাথে নিয়ন্ত্রন করা হয় । সেখানে আবার বাড়তি মানুষ । আমাদের সরকার এটা জানতে পারলে সবাইকে একেবারে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়তো ! ওর বাবা প্রথমেই মানা করে দিল । আমি আর কথা বার্তা বাড়ালাম না !

কিন্তু সপ্তাহ খানেক পরে ড. স্টুয়ার্ড মিলান আমাকে আবারও ডেকে পাঠায় তার ল্যাবে । গিয়ে দেখি সেখানে আমাদের পুলিশ চিফ ইরোন আইভানও উপস্থিত । তার উপস্থিতিতেই ড. মিলান আমাকে আমার ক্লোন প্রস্তাবের কথা তুলল । তারপর আস্তে আস্তে অনেক কথা হল । আমি জানতাম যে ইরোন নিজেও মার্গারেটের জন্য পাগল ছিল কিন্তু প্রেসিডেন্টের বড় ছেলের কারণে সে কিছুই করতে পারছিলো না । তাকে মার্গারেটের আশা ছেড়ে দিতে হয়েছিলো । প্রেসিডেন্টের বড় ছেলের সাথে মার্গারেটের বাগদান হওয়ার কথা চলছিলো । মার্গারেটের নিজেও তাকে পছন্দ ছিল । এখানে ইরোনের কিছুই করার ছিল না । তাই এই এই প্রোজেক্টে ইন্টারেস্টের কারণটা আমি বুঝতে পারছিলাম । ঠিক হল আমরা এই প্রোজেক্টটা গোপনে চালাবো । যারা যারা মার্গারেটের জন্য পাগল ছিল সবার সাথে যোগাযোগ করে জানানো হবে প্রোজেক্টের কথা । তাদেরকে বলা হবে যে একজন মার্গারেট তাদের কাছে সরবারহ করা হবে কিন্তু সেই জন্য তাদের অর্থ খরচ করতে হবে । এভাবেই প্রোজেক্টের অর্থায়ন হবে ।

আসলে মার্গারেট তো একজন ছিল এবং কেবল মাত্র একজনই তাকে পেতে পারে । এটা সবাই জানতো তাই এই সুযোগ যখন আসলো তখন সেটা কেউ হারাতে চাইলো না । বলা চলে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক অর্থ আমাদের হাতে চলে এল । আমি আসলে এই পর্যন্তই জানতাম । কিন্তু এসবের আড়ালে যে আরও ভয়ংকর কিছু চলছিলো সেটা আমি জানতে পারে নি । আমি ….

এই টুকু বলেই রাভেস্কি থামলো । টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে এক চুমুকে শেষ করে ফেলল । তারপর আবারও সে বলা শুরু করলো, আমরা মানে আমি মার্গারেট ভেবেছিলাম আমরা কেবল ক্লোনই তৈরি করবো কিন্তু সেটা পেছনেও আরও একটা উদ্দেশ্য ছিল । ভুলটা আমারই প্রথম ছিল । আমি ইরোকে চিনতে ভুল করেছিলাম । ভেবেছিলাম যে ও কেবল মার্গারেটের প্রতি ভালবাসা থেকেই হয়তো এমনটা করছে । কিন্তু ইরোনের এর পেছনের আসল উদ্দেশ্য আমি আরও কয়েকদিন পরে টের পাই । আমার ক্লোনিং এর কাজ তখন চলছে খুব দ্রুত । আমাদের আগে উদ্দেশ্য ছিল যে আমরা আগে একটা স্যাম্পল তৈরি করবো সেটা যদি সঠিক ভাবে কাজ করে তাহলে সামনে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে । প্রথম প্রোজেক্টের নাম ছিল “নোভা সি ওয়ান” । সি ওয়ানের কাজ করতে গিয়ে হঠাৎই আবিস্কার করি যে স্বাভবিকের চেয়েও ক্লোনের বডিতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক অনেক বেশি রয়েছে তাছাড়াও শরীরে আরও কিছু অস্বাভাবিকত্ব রয়েছে । বলা চলে নোভাকে বানানো হচ্ছে একেবারে কঠিন আর মজবুত হিসাবে । বাস্তবের মার্গারেট নিখুত সুন্দরী থাকলেও সে ছিল মানুষ । তার মানুষ হিসাবে কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল । কিন্তু নোভার বডিতে সেরকম মানুষ্য সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করার একটা প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে ।

-যেমন ?

-যেমন নোভা কখনও অসুস্থ হবে না । আহত হলে খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে । সব কিছু শিখবে খুব দ্রুত আর তার শারীরিক শক্তি একজন স্বাভাবিক মানুষের থেকেও অনেক বেশি হবে ।

-আচ্ছা !

আমি বুঝতে পারলাম ঐদিন নোভা কিভাবে এতো দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠলো । রাভেস্কি আবার বলা শুরু করলো

-আরও লক্ষ্য করলাম কেউ নোভার মস্তিস্কে খুব ক্ষদ্র কিছু ন্যানো-চিপ বসিয়ে দিয়েছে । এটা মস্তিস্কের নিউরনের সাথে সংযুক্ত । ব্যাপারটা ডা. মিনাল কে বলতেই তিনি খুব স্বাভাবিক ভাবে নিলেন । তিনি বললেন তার সাবজেক্ট যেন বেশি দিন সার্ভাইভ করতে পারে এই জন্য এমনটা করা হয়েছে ।

আমি বললাম

-আর ন্যানো চিপ গুলো কেন বসানো হয়েছে ?

-আমরা যাতে তাদের কার্যক্রম গুলো দেখতে পারি ?

-নাকি তাদেরকে নিয়ন্ত্রন করতে পারেন এই জন্য ?

-দেখুন আপনি আপনার কাজ করুন । আপনার দায়িত্ব কেবল আপনি পালন করুন । অন্য কিছু দেখার ব্যাপারটা আমার উপর ছেড়ে দিন !

-স্পষ্টই বুঝতে পারছিলাম যে এদের উদ্যেশ্য আসলে অন্য কিছু । আমি তার ল্যাব থেকে বের হয়েই একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিলাম । আমার কাছে মনে হল কেবল যে এটা স্বাভাবিক কোন কাজ করছে না । এর ভেতরে আরও ঘাপলা আছে । মার্গারেটকে বলতেই সে চোখ কপালে তুলল । প্রথমে ঠিক বিশ্বাসই করতে পারছিলো না । তার নিজের বাবা এমন একটা কাজ করতে পারে সেটা ভাবতেই পারে নি । অনেক কান্না কাটি করলো কিছু সময় । পরে আমি তাকে বোঝালাম যে এটা এখন কান্না কাটি করার সময় নয় । আমাদের আগে সব কিছু খুজে বের করতে হবে । দুজনে মিলে খোজ খবর শুরু করলাম । আমি জানতে পারলাম এদের আসল উদ্দেশ্য । এরা আসলে ক্লোন তৈরি করছে ঐ সকল ধনী মানুষের মনরঞ্জনের জন্য নয় তাদেরকে হত্যা করার জন্য । ন্যানো চিপ গুলো ক্লোনের বডিতে প্রবেশ করানো হয়েছে ওদেরকে এখান থেকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য । নোভা প্রোজেক্টের ক্লান্টের বলতে গেলে হোয়াইট সিটি সব বড় বড় মানুষজন । সরকারী অফিসার থেকে শুরু করে কয়েকজন মন্ত্রীও পর্যন্ত এর ভেতরে আছে । তাদেরকে একই দিনে এই ক্লোন গুলো সরবারহ করা হবে । বাকি কাজ গুলো ক্লোনেরা নিজেরাই করবে !

আর এই সুযোগে পুলিশ চিফ নিজে ক্ষমতা দখল করবে । প্রেসিডেন্টের ছেলেকে আসল মার্গারেটের বদলে নোভা সি ওয়ান সরবারহ করা হবে । একই রাতের ভেতরে হোয়াইট সিটির সব শীর্ষ স্থানীয় মানুষ গুলো মারা পড়বে । তাদের পথে মাথা তুলে দাড়ানোর মত কেউ থাকবে না । আর সেই সাথে তাদের সাথে থাকবো এক সুপার আর্মি ! যেটা দিয়ে যে কাউকে সামলানো যাবে । এটাই ছিল ওদের প্লান ।

এটা জানার পরেই আমি আর মার্গারেট মিলে ঠিক করলাম যে যে কোন মূল্যেই এই প্রোজেক্ট সফল হতে দেওয়া যাবে না । আমরা এটাকে ধ্বংশ করার প্লান কর ফেললাম । স্যাম্পল বডিকে ধ্বংশ করতেও আমরা সক্ষম হয়ে গেলাম কিন্তু আমি ধরা পড়লাম । আমাকে হয়তো মেরেই ফেলতো তবে আমি খুব সাধারণ কোন মানুষ নই তাই আমাকে হত্যা করা হয় নি । আমাকে অনেক দিন ল্যাবের সেলে আটকে রাখার পর শাস্তিস্বরূপ আমাকে এই নো-ম্যান্স ল্যান্ডে নির্বাসনে দেওয়া হয়েছে । সাথে সাথে আমাকে এও জানানো হয়েছে যে যদি আমি বোকার মত কাজ করতে যাই তাহলে তাদের কাছে সব প্রমান পত্র রয়েছে । এই প্রোজেক্টের মূল পরিকল্পনা কারি আমি নিজেই ছিলাম । এটা প্রমান করতে ওদের খুব একটা কষ্ট হবে না । আমি যদি বোকার মত কিছু করতে যাই তাহলে আমাকে সারাটা জীবন জেলের ভাত খেতে হবে অন্য দিকে আমি বাকি জীবনটা এই নো-ম্যান্স ল্যান্ড কাটিয়ে দিতে পারি কোন ঝামেলা ছাড়াই । আমার আসলে কিছুই করার ছিল না । প্রেসিডেন্টের কাছে গেলে আমি নিজেই ফেসে যেতাম । তাই এখানে থাকাটাই সঠিক মনে হল ।

তবে আমি জানতাম এই প্রোজেক্ট এখানে থেমে থাকবে না । তবে আমার কিছু করার ছিল না । জানতাম প্রোজেক্ট নোভা আবার শুরু হবে । সি ওয়ান বন্ধ হয়েছিল খুব জলদিই ওরা নোভাকে নতুন ভাবে শুরু করলো । আই গেস তুমি সেই প্রোজেক্টের প্রথম স্যাম্পল !

নোভা এতো সময় ডা. রাভেস্কির দিকে তাকিয়ে ছিল তার পর আমার দিকে তাকালো । সে যে কোন মানুষ নয় কেবল এককটা স্যাম্পল এটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে ওর । আমি ওর মনের কথা বুঝতে পারলাম । আমি উঠে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম । বললাম

-আমি জানি তুমি কেমন অনুভব করছো । তবে তুমি কেবল জেনে রেখো যে আর অন্য ১০ মানুষ যেভাবে ভাবে, তাদের যেরকম মন আছে তোমারও সেরকম মন আছে । বুঝতে পেরেছো ! তুমি বুঝতে পারছো আমার কথা ?

আমি নোভার কান্নার আওয়াজ পেলাম । এরকম ভাবে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়লে যে কারো ভেঙ্গে পড়ার কথা । আমাদের যখন বাবা মা মারা যায় আমাদের অনুভুতি কি রকম হয় আমরা বুঝতে পারি । আর যদি জানা যায় যে আমাদের কোন মা বাবাই ছিল না আমরা ফ্যাক্টরীতে তৈরি হয়েছি তখন আমাদের মনের অবস্থা কেমন হবে ? আমি নোভাকে শান্তনা দিতে লাগলাম । সেই সাথে মেয়েটাকে একটু কাঁদার সুযোগও দিলাম । কাঁদলে একটু হালকাও হবে ।

পেছন থেকে রাভেস্কি বলল

-কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না যদি নোভা সি টু ঠিক ঠাক ভাবে কাজ করে তাহলে তাহলে নোভার নিয়ন্ত্রন তো ডা. মিলানের হাতে থাকার কথা । নোভার আচরন দেখে তো তেমন মনে হচ্ছে না । তার মানে মার্গারেট ঠিকই তার কাজ করতে পেরেছে !! কিন্তু এসব হল কিভাবে ? তুমি আমার খোজই বা পেলে কিভাবে ?

-ব্যাপারটা আমি বলছি !!

আমরা তিনজনই ঘুরে দাড়ালাম । কারণ কথাটা আমরা কেউ বলি নি । কথাটা যে বলেছে সে রাভেস্কির অফিসে রুমের দরজায় দাড়িয়ে আছে । আমরা কথা বার্তায় এতো মশগুল ছিলাম যে সে কখন এই রুমে এসেছে বুঝতেই পারি নি ।

আমাদের সামনে দাড়িয়ে আছে স্টেট পুলিশ চিফ ইরোন আইভান !

মুখোমুখি

-আমাদের প্লান ঠিক মত এগিয়েই যেত যদি না ঐ ছোট্ট দুর্ঘটনা টা না ঘটতো । স্যাম্পলকে বহনকারি ভ্যানটার এক্সিডেন্ট না হলে আজকে হয়তো আমরা এখানে থাকতাম না । তোমাদেরও মারা যেতে হত না।

পুলিশ চিপ কেন যে এসব কথা বলছে সে সব আমার মাথায় ঢুকছে না । আমার মনের কথা যেন পড়ে ফেলল ইরোন আইভান । আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-ভাবছো কেন তোমাদের কে এসব কথা বলছি ? বলছি কারন তোমরা তো মারাই যাচ্ছো অন্তত মরার আগে জেনে যাও কেন মারা গেলে । তবে তোমাদের একটা সুযোগ আমি দেব । তোমরা ঠিক যেভাবে মরতে চাও সেভাবেই তোমাদের মারা হবে ।

আমি ইরোন আইভানের চেহারা দিকে তাকিয়ে অবাক না হয়ে পারলাম না । লোকটার কাছে এসব কৌতুক ছাড়া যেন আর কিছুই না । আসলে ক্ষমতা ওর হাতে রয়েছে তাই তো এতো মজা লাগছে !

আমাকে আর নোভাকে চেয়ারের উপরে বসিয়ে রাখা হয়েছে । কেবল মাত্র আমাকে হাত দুটো পেছনে হ্যান্ডকাফ দিয়ে পেছন দিকে আটকে রাখা হয়েছে । আমাদের থেকে কয়েক হাত দুরে ইরোন আইভান বসে আছে । তার ঠিক কয়েক গজ দুরে ডা. রাভেস্কিকে দেখা যাচ্ছে । ভয়ে তার মুখ একেবারে শুকিয়ে গেছে । কিন্তু আমার কেন জানি মোটেই ভয় লাগছে না । আমি নোভার দিকে তাকানোর চেষ্টা করলাম । মেয়েটা সেই কখন থেকে একেবারে শান্ত হয়ে বসে আছে । একেবারে ইরোন আইভানের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে !

ইরোন আইভান আবারও আমাদের দুজনের দিকে ব্যাঙ্গাত্বক চোখে তাকিয়ে বলল

-তোমরা আসলে আমার কাজ আরও সহজ করে দিয়েছো । এখানে না আসলে আমি তোমাদের থেকে এতো সহজে আমি এই ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতাম না । যাক এবার একেবারে সব ঝামেলা শেষ হয়ে যাবে আশা করি ।

তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-তোমাকে আমি কত ভাল একটা সুযোগ দিয়েছিলাম । কিন্তু তুমি তো সেটা নিলে না ! কেবল মাত্র একটা ফোন করলে বাকি জীবনটা তোমার কতই না সুখে কাটতো । সেটা না করে একটা ফ্যাক্টরী তৈরি পোডাক্টের জন্য জীবনটা খোয়াতে বসেছো !

আমি কঠিন মুখে বললাম

-এই শব্দটা আর ব্যবহার করবেন না । নোভা …..

আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই ইরোন আইভান আবারও হেসে উঠলো । আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-নোভা ওর নাম নয় । ওটা প্রোজেক্টের নাম , ওর মডেল নাম্বার সি টু ! বুঝেছো । আমরা যেন প্রোডাক্টের উপরে লেভেল লাগাই ঠিক তেমনি । সি ওয়ান সি টু ….।

-স্টপ ইট ! স্টপ !

আমি কেন এতো জোরে চিৎকার করে উঠলাম আমি নিজেি বলতে পারবো না । নোভার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে এই কদিন আমি একেবারে ওর সাথে সাথেই ছিলাম । একেবারে জ্বলজ্যান্ত একটা মানুষ ! একটা মেয়ে । মাঝের যে কয়টা দিন ও যেখন আমার বাসায় লুকিয়ে ছিল আমি যখন কাজ থেকে বাসায় ফিরে আসতাম অবাক হয়ে দেখতাম ও আমার জন্য রান্না করে রেখেছে ।

আমি প্রথম দিন খুবই অবাক হয়ে গেলাম । সেই সাথে একটা খুশি খুশি অনুভুতিও হল মনের ভেতরে । নোভার দিকে তাকিয়ে বললাম

-এসবের কি দরকার ছিল ?

-কোন কাজ ছিল না ।

-রান্না কোথা থেকে শিখলে ?

-ভিডিও টিউটিরিয়াল দেখে !

আমি মুখে নিয়ে দেখলাম রান্না অসম্ভব সুন্দর হয়েছে ওকে সেটা বলতে মেয়েটা বা্চ্চা মেয়ের মত খুশি হয়ে উঠলো । আমার মাথার উপর তখন বিরাট একটা ঝামেলা কাজ করছিলো কিন্তু এই ছোট্ট এই টুকু আনন্দের ভেতরে কোন খাদ ছিল না !

এখন ইরোন আইভান যখন নোভাকে ফ্যাক্টরী তৈরি প্রোডাক্ট বলল আমার কেন জানি ভাল লাগলো না । ইচ্ছে হল বেটার মুখে চেপে ধরি ! কিন্তু সেটা চাইলেও করা যাবে না । আমার হাত পেছন থেকে বাঁধা !

আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নোভার দিকে তাকিয়ে আইভান বলল

-এবার তোকে আমি এতো সহজে ছাড়ছি না । আগের বার ভেবেছিলাম কোন ঝামেলা হবে না । ঠিকঠাক মত জায়গা মত ডেলিভারি হয়ে গেলে তোকেও মরতে হত না । রানীর মত থাকতি কিন্তু ….

নোভা বলল

-সেক্স স্লেভ হয়ে ? এর চেয়ে আমি মরে যাওয়া পছন্দ করবো !

নোভা যেন খুব মজার কোন কথা বলেছে । হাহা হাহা করে হেসে ফেলল । তারপর বলল

-ফ্যাক্টরিতে তৈরি বস্তুর আবার এতো আত্মসম্মান !!

তখন নোভা একটা অদ্ভুত কাজ করলো । ইরোন আইভান আমাদের থেকে খুব বেশি দুরে বসে ছিল না । নোভা মুখ ভর্তি থুথু ইরোনের দিকে ছুড়ে দিল । এবং সেটা নিখুত ভাবে গিয়ে পড়লো ইরোনের মুখের উপরে ।

ঘটনা যে এভাবে ঘটতে পারে সেটা ইরোন নিজেও বুঝতে পারে নি । পর মুহুর্তেই একটা তীব্র রাগের ছাপ দেখতে পেলাম আমি । ইরোন উঠে এসে নোভার গালে জোড়ে একটা চড় মারলো ! কিছুই হয় নি এমন ভাব করে নোভা চড় টা হজম করে নিল !

আমি বললাম

-বড় বীর পুরুষ দেখছি তুমি হে ! একটা মেয়ের পেছন থেকে হাত বেঁধে তাকে চড় মাড়া হচ্ছে !

-চুপ ! একদম চুপ ! ভেবেছিলাম তোদের কে আমি শান্তিতে মারবো কিন্তু সেটা তোরা হতে দিলি না । সবাইকে মজা বুঝাবো !

তারপর নোভার দিকে তাকিয়ে বলল

-দাড়া আজকে তোকে মজা দেখাবো ! তোর আফসোস হবে কেন তুই সেদিন পালিয়েছিলি এই ভেবে !

ইরোন আইভান হাত তুলে একজন কে ডাকলো । হাতের ইশারা পেয়ে একজন কালো পোশাক পরা সৈনিকক দৌড়ে চলে এল । তারা এতোক্ষন দরজার কাছে অস্ত্র হাতে অপেক্ষা করছিলো ।

-জিলানকে ডাক দাও !

লোকটা যেমন করে এসেছিলো ঠিক তেমন করেই দৌড়ে চলে গেল । লোকটা চলে গেলেই ইরোন আইভান আবারও নিজের জায়গাতে গিয়ে বসলো । দেখতে পেলাম ওর চেহারায় আবার সেই কৌতুক ভাবটা চলে এসেছে । নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রন করে নিয়েছে । আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-আমার প্লান আরেকটু হলেই তোমরা নষ্ট করে দিয়েছিলে । তবে ভাগ্যভাল যে সেটা পারো নি । আচ্ছা তোমাদের কি মাথায় একটু বুদ্ধিও নেই ? যখন মার্গারেটের আইডেন্টিফিকেশন নাম্বারটা প্রবেশ করালে একবারও কি মনে হয় নি যে এই নাম্বারটা তোমাকে অবস্থান আমাদের জানিয়ে দেবে !

আরে তাই তো !

আমার আসলেই নিজেকে খানিকটা বোকা বোকা মনে হল । এই কথাটা তো আমার মনেই হয় নি । প্রথমবার যখন নোভা আইডি নাম্বারটা প্রবশ করালো তখনও ওটা আমার কম্পিউটার ছিল । সেটার আইপি হাইড করা ছিল বিধায় আমাদের ওরা খুজে পায় নি । কিন্তু একটু আগে যখন ও গার্ডদের কম্পিউটারে ও আইডি কোর্ডটা প্রবেশ করালো তখন সেটা করা হয় নি । তাই আমাদের খোজও বের করতে তাদের খুব একটা কষ্ট হয় নি ।

নোভার দিকে তাকিয়ে মনে হল ও এসবের কিছুই বুঝতে পারছে না । ওর মাথায় যেন অন্য কিছু কাজ করছে । কি এতো ভাবছে মেয়েটা ! এতো শান্ত আছে কিভাবে ?

আইভান বলল

-আমরা সব রকম প্রস্তুতিই নিয়ে রেখেছিলাম আমার পরিকল্পনা মাফিক । কিন্তু ঐ মার্গারেট আরেকটু হলেই ঝামেলায় ফেলে দিতো আমাদের ।

রাভেস্কি এতো সময় চুপ করে ছিল । সে হঠাৎ বলে উঠলো

-নিয়ন্ত্রন ন্যানো চিপ গুলো ও সরিয়ে ফেলেছিলো তাই না ?

আইভান তার দিকে তাকিয়ে বলল

-হ্যা । যার ফলে একেবারে পরিপূর্ণ ভাবে মুক্ত চিন্তার অধিকারী হয়ে ওঠে নোভা । তবে সে সব স্মৃতি আর জ্ঞান ওর ভেতরে প্রবেশ করানোর সময় পায় নি ।

নোভার চোখের মনি যেন একটু নড়ে উঠতে দেখলাম । আমার দিকে তাকাতে আমি ওকে চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম । বলার চেষ্টা করলাম, দেখেছো তো ….. একেবারে মুক্ত চিন্তার অধীকারী । তোমার উপর কারো নিয়ন্ত্রন নেই । তুমি স্বাধীন ঠিক আমার মতই । আমার মত করেই চিন্তা করতে পারো তুমি ! আমার কেন জানি মনে হল নোভা আমার মনের কথা বুঝতে পেরেছে । ওর চোখ দেখেই আমার সেটা মনে হল !

আইভান তখনও রাভেস্কির সাথে কথা বলেই চলেছে ।

-তোমার এসিস্টেন্ট না । আমরা যদি আগে থেকেই জানতে পারতাম যে ও ব্যাপারটা জানে তাহলে এই ঘটনা ঘটতোই না । তুমি যে ওকে বলে দিয়েছো এটা জানলে এতো কিছু হত না । তোমাকেও মরতে হত না । কিন্তু আর রিস্ক নেওয়া যায় না । এখানেই তোমাদের সলিল সমাধী হবে । নো-ম্যান্স ল্যান্ডে মরবা তাই সিসটেক স্টেট এখানে নাক গলাবেও না । বুঝেছো ? ঠিক মত কবরও ঝুটবে না । আমাদের সাথে হাত মেলালে এমনটা হত না রাভেস্কি ।

তাকিয়ে দেখি রাভেস্কি এবার ভয়ে কুকড়ে গেল । একটু যেন কাঁদতে আরাম্ভ করলো । আমি কিছু বলতে যাবো ঠিক তখনই ষাড়ের মত স্বাস্থ্যবান একজনকে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করতে দেখলাম । ইরোন আইভানের পাশে এসে দাড়ালো । ইরোন নোভাকে দেখিয়ে বলল

-একে পাশে রুমের নিয়ে যাও । আজকে এ তোমার । তবে শর্ত একটাই ওর চিৎকারের আওয়াজ যেন আমি এখান থেকে শুনতে পাই । পারলে আরও কয়েকজন কে নিয়ে যাও ।

আমি নিজের মাঝেই একটা আতঙ্ক অনুভব করলাম । ওরা নোভার সাথে কি করতে যাচ্ছে বুঝতে পেরে একটা তীব্র ঘৃনা জন্মালো ইরোন আইভানের উপর । এই লোকটা একটু পরেই আমাকে মেরে ফেলবে হয়তো, আমার এখন ভয় পাওয়ার কথা কিন্তু আমার কেন জানি ভয় লাগছে না আর । একটু আগে যে নোভার জন্য যে আতঙ্ক অনুভব করছিলাম সেটা এখন তীব্র এক রাগে পরিনত হল । আমি নিজের জায়গা ছেড়ে উঠে দাড়ালাম ।

-বানচোৎ …. তোকে ….

এই বলে চিৎকার করে উঠে ইরোনের দিকে লাফ দিলাম কিন্তু সেটা মাঝ পথেই থামিয়ে দিলো ষাড়ের মত লোকটা ! আমাকে এতো জোড়ে ধাক্কা মাড়লো যে আমি ছিটকে গিয়ে ঘরের কোনায় গিয়ে পড়লাম । চোখে বন্ধ হয়ে এল ব্যাথার যন্ত্রনায় । চোখ বন্ধ হয়ে আসার আগে দেখতে পেলাম ষাড়টা আমার দিকে এগিয়ে আসছে কিন্তু তখনই ইরোন আইভারের গলা শুনতে পেলাম । সে বলছে

-ওকে ছাড়ো । ও পড়ে থাকুক । তুমি এইটাকে নিয়ে যাও

আমি বিশ্রী একটা হাসির শব্দ শুনতে পেলাম । চোখ খুলে দেখি ষাড়ের সাথে খুব স্বাভাবিক ভাবেই নোভা উঠে দাড়ালো । আমি ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম । মেয়েটা এতো শান্ত কিভাবে আছে ? ও কি বুঝতে পারছে না ওর সাথে এখন কি হতে যাচ্ছে !

নোভা চলে যেতেই আমি উঠতে গেলে একজন সৈনিক আমার কাছে এসে দাড়ালো । আমার দিকে বন্দুকের নল তাক করে এখানেই পড়ে থাকতে ইশারা করলো । আমি বললাম

-তুই কখনই তোর শয়তানি বুদ্ধিতে সফল হবি না ।

আবারও ইরোন আইভান যেন খুব মজা পেল আমার কথা শুনে । বলল

-আমাকে কে থামাবে শুনি ? তুমি ?

-আমি না থামালেও আমার কম্পিউটার ঠিক ঠিক থামিয়ে দেবে ?

-মানে ?

দেখলাম আইভান যেন একটু সচকিত হয়ে উঠলো । আমি বললাম

-আমাকে এতো কাঁচা ভাবলে চলবে কেন ? একজন হ্যাকার সব সময় নিজের সেফটির কথা সবার আগে ভাবে । তুমি কি ভেবেছো আমি এসবের কিছুই জানি না । তোমার কি মনে হয় মার্গারেট এতো জায়গা রেখে নোভাকে সেই পথেই কেন পাঠালো যে রাস্তায় আমি যাই !

আমি ইরোন আইভানের চোখে একটু সন্দেহ দেখতে পেলাম । ঠিক এটাই আমি চাই । আমি সব মিথ্যা বলছি তবে ইরোন আইভানের মনে সন্দেহ জাগবেই ।

ইরোন বলল

-মার্গারেট কেন পাঠাবে ওকে ? তোমার কাছে কেন পাঠাবে ?

আমি বললাম

-একটু মনে করে দেখো তো তোমার ক্লায়েন্টের বাসা কোথায় বার নোভাকে বহনকারী ভ্যানটা কোথায় এক্সিডেন্ট করেছে ?

আমি এসবের কিছুই জানি না । কেবল অন্ধকারে ঢিল ছুড়লাম । ঠিকঠাক মত লেগে গেল মনে হল অন্তত ইরোন আইভানের চেহারা দেখে তো তাই মনে হল । আমি বললাম

-আমি অনেক আগে থেকেই মার্গারেটের সাথে যোগাযোগ রাখি ।

-মিথ্যা কথা । কোন ভাবেই তোমার সাথে মার্গারেটে যোগাযোগের কোন উপায় নেই ।

আমি এবার হেসে উঠলাম ।

-সত্যিই নেই ? তোমাকে একটা গোপন কথা বলি । আমার খোজ খবর তো তুমি ভাল করেই নিয়েছো, তাই না ?

ইরোন কোন কথা বলল না । ওর চোখের দিকে তাকিয়েই বোঝা গেল ঐ দিনের পর আমার ব্যাপারে সে ঠিকই খোজ খবর নিয়েছে । আমি বললাম

-হাই স্কুলের সব পরীক্ষায় যে ছেলেটা টপ করতো সে হঠাৎ করেই ফাইনালে একেবারে নিচের দিকে কিভাবে চলে গেল ? এই প্রশ্ন মনে আসে নি তোমার ? আমি যে মেইন কম্পিউটারকে নিজের ইচ্ছামত নাচাতে পারি সেটা কি তুমি জানো ?

ইরোনের মুখের সন্দেহের চাপটা আরও গভীর হতে দেখে আমি নিজের মিথ্যা বলার জোরটা আরও বাড়িয়ে দিলাম । আমি আবার বললাম

-আমি যদি আজকে ঠিক সাতটা আগে আমার বাসায় না পৌছায় তাহলে ঠিক ঠিক সাতটা এক মিনিটে প্রোজেক্ট নোভা সি টুর ব্যাপার যত তথ্য আছে সব পুরো ওয়েবে ছড়িয়ে পড়বে । সবার আগে সেটা পৌছাবে প্রেসিডেন্টের কাছে ।

-আমি বিশ্বাস করি না ।

-কোরো না । সেটা তোমার ব্যাপার । আমরা তো মরছিই তবে মনে রেখো তুমিও বাঁচবে না । তোমার বিশ্বাসের জন্য আরও একটা কথা বলি ।

এটা বললে আমি জানি ইরোন আইভান ঠিক ঠিক আমার কথা বিশ্বাস করে নেবে । আমি মাঝে মাঝে খুব একটা দুষ্টামী করতাম মেইন কম্পিউটারে ঢুকে । এমনই একটা দুষ্টামী করতে গিয়ে একবারে একটু ঝামেলা হয়ে গেছিলো । আমি বললাম

-বছর খানেক আগে হঠাৎ করেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনেক খানি মানি ক্রেডিট গায়েব হয়ে গেছিলো । মনে আছে ? এমন কি সেটা নিউজেও চলে এসেছিলো । কারণ ঠিক ঐ সময়ে একজন সাংবাদিকের একাউণ্ট থেকে বেশ বড় এমাউন্টের ক্রেডিট গায়েব হয়েছিল । সাথে সাথেই খবরটা ছড়িয়ে পড়ে পুরো স্টেটে । সবাই তখন নিজের একাউণ্টে প্রবেশ করে চেক করার জন্য । এতো লোড সার্ভার নিতে না পেরে খানিকটা সময় ডাউন থাকে । প্রায় দুইদিন সেটা ডাউন ছিল । মনে আছে তো ?

ইরোন আইভান আবারও কোন কথা না বলে আমার দিকে এগিয়ে এল । আমি এবার একটু উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করলাম । তবে ধাক্কার ফলে বুকের ব্যাথাটা বেশ টের পাচ্ছিলাম । সম্ভবত কোথাও কোন হাড় ভেঙ্গে গেছে । আমার খুব কাছে আসতেই আমি আমি বললাম

-কাজটা আমি করেছিলাম । চাইলে এও বলতে পারি কিভাবে কাজটা করেছি । বলবো ?

ইরোন আইভান আমার কলার চেপে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই গগন ফাটানো চিৎকারে পুরো ঘর কেঁপে উঠলো । আমি তো অবাক হয়েছি সাথে সাথে ইরোন আইভান এবং রুমে থাকা সবাই অবাক হয়ে গেছে । কারণ চিৎকারটা আসছে পাশে ঘর থেকে যেখানে একটু আগে জিলান নামের ষাড়টা নোভাকে নিয়ে গেছে ! কিন্তু অবাক হওয়ার কারন হচ্ছে চিৎকারটা নোভার নয়, জিলানের !

কয়েক মুহুর্ত কেটে গেল । দেখতে পেলাম চারজন সৈনিক দৌড়ে চলে গেল পাশের ঘরের দিকে । ধুপধাপ কয়েক আওয়াজ হল কয়েক মুহুর্ত তারপর সব চুপ । যে একটু আগে আমার দিকে যে বন্দুক তাক করে ছিল তার চোখে আমি দ্বিধা দেখতে পেলাম । কয়েক মুহুর্ত যেন ঠিক বুঝতে পারলো না সে কি করবে । তারপর সেও পাশের ঘরের দিকে হাটা দিলো অস্ত্র তুলে তবে সেটা কয়েক পা মাত্র । মুহুর্তের ভেতরে দেখলাম নোভা দরজার সামনে দাড়িয়ে । এবং এতো দ্রুত সে রিএক্ট করলো যে আমি নিজেই অবাক হয়ে গেলাম । পরমুহুর্তে তাকিয়ে দেখি একটা ফুট সাইজের ছোড়া সৈনিকের গলার কাছে বিধে আছে ।

ইরোন আইভান কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো । কি হচ্ছে তার কিছুই সে ঠিক বুঝতে পারছে না । কিন্তু সামলে নিল নিজেকে । তারপর পকেট থেকে পিস্তলটা বের করে তাক করলো নোভার দিকে ।

আমি ঠিক ওর পেছনে যে দাড়িয়ে আছি সেটা ও ভুলেই গেছে । ও গুলি করতে যাবে ঠিক তখনই আমি শরীর সব শক্তি দিয়ে ইরোন আইভানের পেছনে আমি একটা লাথি দিলাম ।

গুলি চলল ঠিকই তবে সেটা নোভার দিকে গেল না । আর আমার লাথির ধাক্কা সামলাতে না পেরে সোজা ওর নোভার সামনে গিয়ে পড়লো ।

উঠে গিয়ে আবারও পিস্তল তাক করতে গেল কিন্তু সেই সুযোগ ও পেল না । নোভা ইরোন আইভানের দু হাত চপে ধরেছে । কয়েক সেকেন্ড বাদের ইরোনের হাত থেকে পিস্তল খসে পড়লো । ইরোনের চেহারা দেখেই মনে হচ্ছে নোভা ওকে খুব শক্ত করে ধরেছে এবং ও সেটা সহ্য করতে পারছে না । এক সময় ব্যাথায় কাঁকিয়ে উঠলো । নোভা বলল

-আমি ফ্যাক্টারিতে তৈরি হতে পারি কিন্তু আমার ভেতরে এমন অনেক কিছুই আছে যা তোমার ভেতরে নেই ! তোমরা আমাকে কিভাবে তৈরি করেছো সেটা ভুলে গেছো ? আমি সাধারন কেউ নই, এটা জানো না ?

তারপর আমি মট করে হাড় ভাঙ্গার আওয়াজ পেলাম । ইরোনকে নোভা ছেড়ে দিলো । কিন্তু সে আর উঠতে পারলো না, মাটিতে শুয়ে পড়লো । ইরোন আইভাবের কব্জি হাতের কাছ থেকে অস্বাভাবিক ভাবে ঝুলে আছে । কোন মানুষ এভাবে কারো হাড় ভেঙ্গে দিতে পারে সেটা আমি না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতাম না ।

নোভা আমার দিকে এগিয়ে এল । আমার বুকের যেদিকে জিলান ধাক্কা মেয়েছিলো সেটার উপরে হাত রাখলো !

-তুমি ঠিক আছো ?

-তোমার জন্য, বেঁচে আছি ।

নোভা বুকের ওখানে কয়েকবার হাত বুলিয়ে বলল

-হাড় ভাঙ্গে নি । ভয় নেই । চল আমাদের আরও একটু কাজ বাকি আছে ।

তারপর আমরা এদেরকে এখানে রেখেই ডা. রাভেস্কিকে নিয়ে রওনা দিয়ে দিলাম । যাওয়ার আগে কেবল একটাবার আমি পাশের ঘরে একটু উকি দিয়ে দিলাম । হাত পা ছড়িয়ে কালো পোষাক পরা লোক গুলো এমন ভাবে পড়ে আছে যেন কাপড়ের দলা পড়ে আছে । রাভেস্কি নিজের চোখকে একেবারেই বিশ্বাস করতে পারছে না একটু আগে সে মারা যাচ্ছিলো এখন সব কিছু কেমন পাল্টে যাচ্ছে ।

আমি ইরোন আইভানকে দেখিয়ে বললাম

-এর কি হবে ?

-ভয় নেই এ কিছু করতে পারবে না । হাতের কব্জির হাড় যেভাবে ভেঙ্গেছে সেটা আর জীবনেও ঠিক হবে না !

আর ওর দিকে খেয়াল দিলাম না । ওকে রেখেই আমরা হোয়াইট প্যালেসের দিকে রওনা দিলাম ! 

শেষ কথা

আমাদের রেখে যাওয়া ক্যাবটা দেখি তখনও আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে । আমরা তিনজন সেটাতে উঠে বসলাম । পথে কয়েকবার আমাদের আটকানো হল তবে সেই আগের মত করেই নোভা নিজের আইডি কোড দিয়ে সব কিছু পার করে এল আমরা থামলাম সোজা হোয়াইট প্যালেসের সামনে । আমি এখানে কোন দিন আসতে পারবো ভাবতে পারি নি। নোভা সোজা আমাদেরকে নিয়ে হাজির হল প্রেসিন্ডেন্টের ছেলের কাছে ।

ও এতো কিছু চেনে কিভাবে জানতে চাইলে নোভা বলল

-ভুলে যাচ্ছো কেন আমি কার কাছ ক্লোন ? সে যা জানে সেটা আমার ভেতরেও আছে । কিন্তু আমি ওর থেকে সৃষ্টি ওর ভেতরের সব কিছু আমার ভেতরে আছে । ও যা পছন্দ করে আমারও তাই ভাল লাগে । দেখলে না ঐ আইডিটা আমি কিভাবে আপনা আপনি বলে দিলাম ! হয়তো একেবারে নেই তবে আস্তে আস্তে আসতেছে । এই যে এই প্যালেসে আমি কোন দিন আসি নি কিন্তু আমার কাছে সব কেমন পরিচিত মনে হচ্ছে ।

আমরা প্রেসিডেন্টের ছেলের অফিসের সামনে গিয়ে হাজির হলাম । নোভাকে দেখে গার্ড আমাদের কে সালাম ঠুকলো । বোঝাই যাচ্ছে নোভা এখানে মাঝে মাঝেই আসতো ! কেউ ওকে বাঁধা দিল না কারন ও যে মার্গারেট সেটা আমি আর রাভেস্কি ছাড়া আর কেউ জানে না ।

প্রেসিন্টের ছেলেকে সব বলার পরে সে যেন আকাশ থেকে পড়লো । কিন্তু অবিশ্বাসও করতে পারলো না । তারপরের কাজ গুলো আরও সহজ হয়েগেল । এক ব্যাটালিয়ান সৈন্য চলে গেল ডা. মিলানের ইনস্টিটিউটে । সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হল । আর উদ্ধার করা হল মার্গারেটকে ! ওর বাবা ওকে আটকে রেখেছিলো যাতে করে ও কাউকেকিছু না বলতে পারে ।

মার্গারেট ব্যস্ত হয়ে গেল নোভাকে নিয়ে । রাভেস্কির আবারও বিজ্ঞান ইনস্টিটিউের জন্য গুরুত্বপূর্ন হয়ে গেল । কেবল আমারই কোন কাজ রইলো না । আমি যখন চলে আসতে যাবো আমাকে কঠিন করে সাবধান করে দেওয়া হল এসব যেন কাউকে আমি না বলি । স্টেটের নিরাপত্তার জন্যই এমনটা করতে হবে । আমি সম্মতি জানালাম । বললাম যে এমন ঘটনা যে ঘটেছে সেটা আমার এখনই মনে নেই । সামনে মনে থাকবে কিভাবে । আমাকে এও জানানো হল যে আমার এই কাজের জন্য খুব শীঘ্রই আমাকে পুরুস্কার দেওয়া হবে । আমি মুখে হাসি নিয়ে বের হয়ে এলাম ।

যখন বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে বের হতে যাবো দেখতে পেলাম নোভা আমার দিকে দৌড়ে আসছে । আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো । আমি ওর হার্টবিট খুব ভাল করেই শুনতে পাচ্ছিলাম । আমি বললাম

-তাহলে এটাই শেষ দেখা !

-তাই তো মনে হচ্ছে ! ওরা আমাকে মনে হয় বের হতে দিবে না আর । অবশ্য বের হওয়া ঠিকও হবে না । একই শহরে হুবাহু দুজন থাকলে সমস্যা তো !

আমি হাসলাম ! তারপর বললাম

-জানো এই কটা দিনে আমি তোমার সঙ্গ খুব উপভোগ করেছি । নিরানন্দময় জীবনে তোমার আগমন আমার জন্য চমৎকার একটা আশির্বাদ । আমি সারা জীবন তোমার কথা মনে রাখবো !

-আমিও ! আমার কাছে স্মৃতি বলতে তোমার থেকেই শুরু সেটা !

আমি করিডোর দিয়ে বেরিয়ে যেতে লাগলাম তখনও আমার কেন জানি মন খারাপ হতে লাগলো । পেছনে তাকাবো না তাকাবো না করেও তাকিয়ে ফেললাম । তাকিয়ে দেখি নোভা কেমন ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি এখান থেকেই ওর চিকচিক করা অশ্রুজ্বল কনা দেখতে পেলাম । সেটা যে শতভাব মানুষের অশ্রু সে বিষয়ে আমার বিন্দু মাত্র সন্দেহ রইলো না !

পরিশিষ্টঃ

আবার সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে এসেছে । আমি ঠিক আগের মতই কাজে যাই কাজ থেকে ফিরে আসি । মাঝে মাঝে কম্পিউটার দিয়ে মেইন কম্পিউটারে ঢুকে । এদিক ওদিক ঘোরাফেরা করি । এই ঘোরা ফেরা করতে করতেই অনেক খবর পেয়েছি । এই এক মাসে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে । ডা. রাভেস্কিকে বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের প্রধান করা হয়েছে । ইরোন আইভানকে অদ্ভুত কারনে কেউ খুজে পাচ্ছে না । রেকর্ড বলছে তিনি নো-ম্যান্স ল্যান্ডে গিয়েছিলেন তারপর আর ফিরে আসেন নি ।

মোট ১১৭ জন ধনী আর প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হোয়াইট প্যালেটে ডাক হয়েছিল । তাদের সাথে প্রেসিডেন্টের কি কথা হয়েছে টা অবশ্য কেউ জানে না । তবে অসমর্থিত সুত্র বলছে হোয়াইট প্যালেস থেকে বের হওয়ার সময় সবার মুখই নাকি বেশ গম্ভীর ছিল । আমার অবশ্য বুঝতে কষ্ট হল না কেন গম্ভীর ছিল ।

আমি অবশ্য এসব নিয়ে আর খুব একটা মাথা ঘামাই না । আবার নিয়ম করে বাবা মায়ের সাথে দেখা করতে যাই । ও হ্যা প্রেসিডেন্টের ছেলে তার কথা রেখেছে । আমার নামে একটা কার্ড ইস্যু হয়েছে । আমি এখন যখন ইচ্ছা আমার বাবা মায়ের সাথে দেখা করার জন্য গ্রীন সিটিতে যেতে পারি । এমন কি আমি যদি চাই আমি প্রতিদিন কাজ শেষে বাবা মায়ের ওখানে গিয়ে থাকতে পারি । তবে আমার কেন জানি থাকতে ইচ্ছে হয় নি । আমি আমার জায়গাতেই ভাল আছি ।

তবে আমি নোভাকে কেন জানি মিস করি । ঐ দিন চলে আসার সময় ওর চোখের জলটা আমি এখনও ভুলতে পারি নি । মেয়েটা কেমন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল । আমি সেই দৃষ্টিকে কিছুতেই ভুলতে পারি না । বিশেষ করে বাসায় আসার সময় সেই নিশুতি রোডের কাছে আসলেই আমার নোভার কথা মনে পড়ে ।

আজকেও যথারীতি যখন আমি কাজ শেষ করে বাসার দিকে আসছিলাম তখনও নোভার কথা মনে পড়লো । বিশেষ করে নিশুতি রোডের কাছে আসতেই মনে হল ঐ তো ওখানে পড়ে ছিল মেয়েটা ! আমি পালাতে গিয়েও থেমে যাই ।

আমি বাইকের গতি বাড়াতে যাবো তখনই একটা অদ্ভু্ত কিছু দেখতে পেলাম । রাস্তার ঠিক মাঝে কেউ দাড়িয়ে আছে । আমি খানিকটা খাবি খেলাম । বুকের ভেতরে একটা সুক্ষ ভয়ের ছায়া বয়ে গেল । আমি যখন বাইক ব্রেক করে রাস্তার উপর থেমে গেছি তখন বাইকের আলোতে সেই কেউটাকে আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখলাম ।

আরেকটু কাছে আসতেই আমার মনের ভেতরে কেমন যেন একটা অনুভুতি হল । মনে হল সামনের মানুষটা আমার পরিচিত !

আলোতে যখন আমি ওর মুখ দেখতে পেলাম তখন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । নোভা আমার কাছে এসে বলল

-এরকম নিশুতি রাতে এরকম নিশুড়ি রাস্তায় বাইক থামানো উচিৎ নয় জনাব ! বিপদ হতে পারে ! আগের বা কি হয়েছিলো মনে নেই?

আমি কেবল বললাম

-মনে আছে বলেই তো থামালাম !

নোভা আর কোন কথা বলল না ! আমার বাইকের পেছনে চড়ে বসলো ! আমি বাইক বাসার দিকে বাইকের গতি বাড়িয়ে দিলাম । মনের ভেতরে অনেক প্রশ্ন রয়েছে । নোভার এখানে থাকার কোন কথা না । ওকে কি ওরা এখানে আসতে দিয়েছে ? নাকি ও পালিয়ে এসেছে ?

আমি প্রশ্ন করতে গিয়েও করলাম না । কোন কিছু দরকার নেই জানার ! যদি দরকার পড়ে তাহলে আবারও পালিয়ে যাবো ওকে নিয়ে । নোভা আমার সাথে রয়েছে এটাই আমার কাছে অনেক কিছু !

(সমাপ্ত)

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 31

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →