Skip to content
Menu
অপু তানভীর
  • গল্পবাড়ি
  • কৌতূহল
    • FAQ
    • ফেসবুক পেইজ
    • ওয়াটপ্যাড প্রোফাইল
    • ইনস্টাগ্রাম একাউন্ট
    • টুইটার লিংক
    • ৭৫০ গল্পের ব্লগ লিংক
    • ৭০০ গল্পের ফেসবুক লিংক
    • ৪০০ গল্পের পিডিএফ ডাউনলোড
  • সূচিপত্র
  • রাফায়েল
  • সামহোয়্যারইন ব্লগ
  • বই পত্র
  • প্যাঁচাল
অপু তানভীর
January 2, 2023January 2, 2023

প্রোজেক্ট নোভা সি-টু (শেষ পর্ব)

5
(21)

রাভেস্কির সন্ধানে

আমরা শহরে ছাড়িয়ে এসেছি বেশ কিছুটা সময় আগে । শহরের শেষ মাথায় আমাদেরকে নামিয়ে দিল ট্যাক্সিটা । তার নাকি এর থেকে সামনে যাওয়ার আর অনুমুতি নেই । তবে সে আমাদের জন্য অপেক্ষা করতে রাজি হল । বলল যে এখান থেকে আমরা নাকি আর কোন যান বাহন পাবো না তবে একটু মানি ইউনিট বাড়িয়ে দিতে হবে । আমি ড্রাইভারকে অপেক্ষা করতে বলে হাটা দিলাম নোভাকে নিয়ে ।

আমি এর আগে এই দিকটাতে কোন দিন আসি নি । আসার দরকারও পড়ে নি । এই দিকটা একদম জন মানবহীন । একেবারে গ্রীন জোনের শেষ সীমানায় একটা গেট দেখা যাচ্ছে । ভেবেছিলাম এদিকটাতে অনেক নিরাপত্তা থাকবে কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না । কেমন যেন খাঁ খাঁ করছে ।

আমি একবার পুরো সিসটেক ফাইফ শহরের পুরো ম্যাপটা দেখেছিলাম । এইদিকের শেষ সীমানার পরে আর কিছু নেই । বেশ খানিকটা ফাঁকা জায়গা তার পরেই হোয়াইট জোন শুরু তবে হোয়াইট জোনের প্রবেশ পথ এদিকে নয় । ওটার প্রবেশ পথ অন্য দিকে । তাই এদিকে কেউ আসে না । নো-ম্যান্স ল্যান্ডে কিছু মানুষ থাকে । যাদেরকে শহর থেকে বাইরে বের করে দেওয়া হয়েছে কোন কারণে । তবে সেই কারণের কথা কেউ কোন দিন জানতে পারে না ।

আমরা গেটের কাছে যেতেই দুজন গার্ড আমাদের দিকে এগিয়ে এল । আমার কাছে এসে বলল

-এখানে কী চাই ?

-আমরা নোম্যান্স ল্যান্ড যেতে চাই ।

গার্ড দুটো কিছু সময় মুখ চাওয়া চাওয়ী করলো । তারপর বলল

-এই পথ দিয়ে কাউকে যেতে দেওয়া হয় না । এই কথা তোমরা জানো না ।

-আমাদের যাওয়াটা জরুরী ।

-কোন জরুরী অবস্থাতেও যেতে দেওয়া হবে না । সোজা যেদিকে থেকে এসেছো সেদিকে চলে যাও !

আমি কী করবো ঠিক বুঝতে পারলাম না । আরো গার্ড নিশ্চয়ই আছে আসে পাশে । এদেরকে আমি একা কোন ভাবেই কাবু করতে পারবো না । নোভার চেহারা এখনও কালো কাপড় দিয়ে ঢাকাই রয়েছে । হঠাৎই নোভা একটা কাজ করলো । মুখের সামনে থেকে কালো কাপড়টা সরিয়ে দিল । ওর সেই নিখুত চেহারা বেরিয়ে পড়লো ।

গার্ড দুটো কয়েক মুহুর্ত কোন কথা বলতে পারলো না । বিস্মিত হয়ে গেছে নোভাকে দেখে । সম্ভবত ওরা চিনতে পেরেছে নোভাকে ! নোভা ওদের দিকে তাকিয়ে বলল

-চিনতে পেরেছো আমাকে ? না চিনতে পারলেও সমস্যা নেই । তোমাদের অথোরাইজেশন স্ক্যানার টা কোথায় ? নিয়ে এসো !

একজন দৌড়ে গেল গেটের কাছের ছোট্ট পাহারার রুমের ভেতরে । একটু পরেই ফেরৎ এল হাতে একটা ট্যাবের মোট কালো জিনিস নিয়ে । কিছুক্ষন টেপাটেপি করে সেটা নোভার দিকে বাড়িয়ে দিল । নোভাকে দেখলাম সেই কোডটা আবার লিখতে । এবং সাথে সাথে সবুজ সিগনাল উঠে পড়লো ।

-সন্তুষ্ট ?

একজন গার্ডকে দেখলাম বিনয়ে গলে পড়ছে । একটু আগের সেই রুক্ষ ভাবটার সিটে ফোটাও নেই । বুঝে গেছে নোভা কোন সাধারণ মানুষ নয় । যার কাছে এই ভিআইপি অথোরাইজেশন কোড আছে সে যেন তেন মানুষ হতে পারে না । আমরা গেট পার হয়ে ঢুকে পড়লাম নো-ম্যান্স ল্যান্ডের ভেতরে ।

প্রায় মিনিট তিরিশেক হাটার পরে একটা লাল রংয়ের একতলা বাড়ির সামনে এসে থামলাম । হিসাব মত এটাই হওয়ার কথা রাভেস্কির ম্যারির বাসভবন । কিছু সময় আমরা দুজনেই দরজার সামনে দাড়িয়ে ভাবতে লাগলাম । সামনের পরিস্থিতি নিয়ে । সামনে কি হতে পারে কিংবা কি ধরনের বিপদে আমরা পড়তে পারি । তারপর সব চিন্তা ভাবনা ঝেড়ে ফেলে আমরা দরজাতে টোকা দিতে যাবো ঠিক তার আগেই দরজা খুলে গেল । ৫৫/৬০ বছরের এক লোক আমাদের সামনে দাড়িয়ে । ছবিতে আমি যে লোকটাকে দেখেছিলাম তার বয়স আরও কম মনে হয়েছিলো । তবে সেটা অনেক আগের হতে পারে । তাই হয়তো এখন ভদ্রলোকোকে এতো বৃদ্ধ লাগছে আমার দিকে একবার তাকিয়ে থেকে নোভার দিকে তাকিয়ে রইলো একভাবে । কয়েক মিনিট যেন এভাবেই কেটে গেল । আমি বললাম

-মিস্টার রাভেস্কি ?

লোকটা এবার আমার দিকে তাকালো । তারপর কোন কথা না বলে আমাদের কে ভেতরে আসার জন্য ইংগিত করলো । আমরা তারপ পেছন পেছন যেতে লাগলাম ।

ঘরের চারিদিকে কেমন অযত্নের ছাপ । বোঝা যাচ্ছে রাভেস্কি ম্যারি সাহেব খুব একটা ভাল অবস্থাতে নেই । কেবল মাত্র বেঁচে আছে কোন ভাবে । আমাদের কে নিয়ে এমন একটা জায়গাতে তিনি থামলেন যেটা দেখে অনেকটা অফিসের মত মনে হল । তারপর আমাদের কে দুটো চেয়ার দেখিয়ে বসতে ইঙ্গিত করলেন । আমরা বসে পড়লাম । দুজনের কারো মুখে কোন কথা নেই । আমাদের কে রেখে উনি ভেতরে চলে গেলেন ।

আমরা দুজনেই কিছু সময় পরে কিছু নাড়াচড়া করার আওয়াজ পেলাম । বুঝতে কষ্ট হল না উনি কিছু যেন খুজতেছেন । কিছু সময় পরে আবারও আমার কাছে ফিরে এলেন । তারপর সোজাসুজি নোভার দিকে তাকিয়ে বলল

-আমি জানতাম, এক না একদিন তুমি আমার কাছে আসবে ! মার্গারেট এমন কোন ব্যবস্থা করবেই ।

আমি বললাম

-আপনি মার্গারেটকে চিনেন ? আসলে আমরা আপনার ব্যাপারে তেমন কোন খোজই বের করতে পারি নি । আমরা …..

আমাকে হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলল

-আমি সবাই কে চিনি । মার্গারেটের বাবা আর আমি আগে এক সাথে কাজ করতাম ।

বলেই ভদ্রলোক কিছু সময় চুপ করে রইলো । আমি আর নোভা দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলাম । কিছু বলতে গিয়েও বললাম না । মনে হল ভদ্রলোককে নিজে নিজেই সব কিছু বলতে দেওয়া ভাল । তবে নোভা চুপ করে রইলো না । জানতে চাইলো

-আমার সাথে মার্গারেটের কি সম্পর্ক ? ওর চেহারা আর আমার চেহারা একদম এক কিভাবে ?

রাভেস্কি ম্যারি আবারও যেন কিছু সময় চুপ করে বসে রইলো । কিছু যেন ভাবছে । মনে হল আগের কোন সময়ে তিনি চলে গেছেন । তারপর চোখ খুলে নোভার দিকে তাকিয়ে বলল

-কারণ মার্গারেটই তুমি আর তুমিই মার্গারেট । তোমার আর মার্গারেটের ভেতরে কোন পার্থক্য নেই ।

আমরা দুজন একসাথে চিৎকার করে উঠলাম !

-মানে ?

রাভেস্কি বলল

-গল্পটা অসম্ভব মনে হবে তবে এই বিজ্ঞানের যুগে কোন কিছুই অসম্ভব নয় ।

তারপর নোভার দিকে তাকিয়ে বলল

-নোভা, তুমি আমারই সৃষ্টি !

নোভার দিকে তাকিয়ে দেখি ওর দৃষ্টি কেমন ঘোলা হয়ে গেছে । সম্ভবত ও নিজেও বুঝতে পেরেছে ও কে ? ওর চোখে আমি কেমন একটা বিষাদের ছায়া দেখতে পেলাম !

রাভেস্কি ম্যারি তখন তার গল্প শুরু করে দিয়েছে ! আমরা দুজন নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে । মনে মনে ভাবতে লাগলাম এটাও কি সম্ভব ?

ডা. রাভেস্কির গল্প

-মার্গারেটের জন্য পুরো স্টেস পাগল ছিল । কেবল একটা নয়, সিসটেক স্টেটের যে ছয়টা স্টেট আছে সবাই মার্গারেটের জন্য বলতে গেলে পাগল ছিল । যে কোন মূল্যে তারা মার্গারেট কে পেতে চাইতো । এর ভেতরে প্রেসিডেন্টের ছেলে থেকে শুরু করে আমাদের পুলিশ চিফ ইরোন আইভান পর্যন্ত ছিল । অন্যান্য স্টেটের লোকজনকে ঠেকানো গেলেও নিজের স্টেটের মানুষদেরকে আটকিয়ে রাখা মুশকিল হয়ে পড়লো । সত্যি বলতে কি তারা মার্গারেটকে পাওয়ার জন্য তাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ব্যবহার করতেও রাজি ছিল । যখন কোন ভাবেই মার্গারেটের মন গলানো গেল না তখন অনেকে ভিন্ন পথ অবলম্বন করতে চাইলো । পুরো জীবনের জন্য না হলেও অন্তত একরাতের জন্য তাদের মার্গারেটকে চাই ই চাই । মার্গারেট বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দিল । চেনা জানা জানা মানুষ ছাড়া কারো সাথে আর কারো সাথে স্বাধারনত দেখা করতো না ।

আমার সাথে ওর নিয়মিত দেখা হত কারন আমরা একই জায়গাতে কাজ করতাম । স্টেট সায়েন্স ইন্সটিটিউটে ! ও আমার এসিস্ট্যান্ট হিসাবে কাজ করতো ! তাই আমার সাথে ওর কথা হত মাঝে মাঝে ! যতই দিন যেতে লাগলো মেয়েটা ততই বিষণ্ণ হয়ে উঠতে লাগলো । মাঝে মাঝে নিজের ভাগ্যকে দোষ দিতো যে সে কেন এতো সুন্দর হল । সাধারণ মেয়েদের মত চেহারা হলেই বরং ভাল হত । একটা স্বাভাবিক জীবন তো তার থাকতো । মেয়েটার এভাবে একলা হয়ে যাওয়া আর গৃহ বন্দী হয়ে যাওয়াটা আমার খাছে খারাপ লাগতো । তাই আমি ওর বাবাকে একটা ভয়ংকর প্রস্তাব দেই ।

-কি করম প্রস্তাব ?

-মার্গারেটের ক্লোন বানানোর প্রস্তাব !

নোভা রাজেস্কি ম্যারির দিকে কয়েক মুহুর্ত তাকিয়েই রইলো । আমি নোভার দিকে তাকিয়ে দেখি নোভার চোখের ভেতরে এক অচেনা বিষাদ দেখা দিয়েছে ।

রাভেস্কি বলল

-তুমি একেবারে মার্গারেটের হুবাহু কপি । আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে তাহলে তুমি ওর ক্লোন !

-ক্লোন !!

রাভেস্কি বলল

-ওর বাবা আমাদের বিজ্ঞান ইস্টিটিউটের প্রধান, ড. স্টুয়ার্ড মিলান প্রথমে এই কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লো । আমাদের এই স্টেটে মানব ক্লোন করা একেবারে নিষিদ্ধ ছিল । প্রাচীন কালে এই জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারনেই পৃৃথিবী প্রায় ধ্বংশ হতে বসেছিলো । এখন এই বর্তমানেও মানুষের জন্ম প্রদান করাটা খুব কঠিন নিয়মের সাথে নিয়ন্ত্রন করা হয় । সেখানে আবার বাড়তি মানুষ । আমাদের সরকার এটা জানতে পারলে সবাইকে একেবারে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়তো ! ওর বাবা প্রথমেই মানা করে দিল । আমি আর কথা বার্তা বাড়ালাম না !

কিন্তু সপ্তাহ খানেক পরে ড. স্টুয়ার্ড মিলান আমাকে আবারও ডেকে পাঠায় তার ল্যাবে । গিয়ে দেখি সেখানে আমাদের পুলিশ চিফ ইরোন আইভানও উপস্থিত । তার উপস্থিতিতেই ড. মিলান আমাকে আমার ক্লোন প্রস্তাবের কথা তুলল । তারপর আস্তে আস্তে অনেক কথা হল । আমি জানতাম যে ইরোন নিজেও মার্গারেটের জন্য পাগল ছিল কিন্তু প্রেসিডেন্টের বড় ছেলের কারণে সে কিছুই করতে পারছিলো না । তাকে মার্গারেটের আশা ছেড়ে দিতে হয়েছিলো । প্রেসিডেন্টের বড় ছেলের সাথে মার্গারেটের বাগদান হওয়ার কথা চলছিলো । মার্গারেটের নিজেও তাকে পছন্দ ছিল । এখানে ইরোনের কিছুই করার ছিল না । তাই এই এই প্রোজেক্টে ইন্টারেস্টের কারণটা আমি বুঝতে পারছিলাম । ঠিক হল আমরা এই প্রোজেক্টটা গোপনে চালাবো । যারা যারা মার্গারেটের জন্য পাগল ছিল সবার সাথে যোগাযোগ করে জানানো হবে প্রোজেক্টের কথা । তাদেরকে বলা হবে যে একজন মার্গারেট তাদের কাছে সরবারহ করা হবে কিন্তু সেই জন্য তাদের অর্থ খরচ করতে হবে । এভাবেই প্রোজেক্টের অর্থায়ন হবে ।

আসলে মার্গারেট তো একজন ছিল এবং কেবল মাত্র একজনই তাকে পেতে পারে । এটা সবাই জানতো তাই এই সুযোগ যখন আসলো তখন সেটা কেউ হারাতে চাইলো না । বলা চলে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক অর্থ আমাদের হাতে চলে এল । আমি আসলে এই পর্যন্তই জানতাম । কিন্তু এসবের আড়ালে যে আরও ভয়ংকর কিছু চলছিলো সেটা আমি জানতে পারে নি । আমি ….

এই টুকু বলেই রাভেস্কি থামলো । টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে এক চুমুকে শেষ করে ফেলল । তারপর আবারও সে বলা শুরু করলো, আমরা মানে আমি মার্গারেট ভেবেছিলাম আমরা কেবল ক্লোনই তৈরি করবো কিন্তু সেটা পেছনেও আরও একটা উদ্দেশ্য ছিল । ভুলটা আমারই প্রথম ছিল । আমি ইরোকে চিনতে ভুল করেছিলাম । ভেবেছিলাম যে ও কেবল মার্গারেটের প্রতি ভালবাসা থেকেই হয়তো এমনটা করছে । কিন্তু ইরোনের এর পেছনের আসল উদ্দেশ্য আমি আরও কয়েকদিন পরে টের পাই । আমার ক্লোনিং এর কাজ তখন চলছে খুব দ্রুত । আমাদের আগে উদ্দেশ্য ছিল যে আমরা আগে একটা স্যাম্পল তৈরি করবো সেটা যদি সঠিক ভাবে কাজ করে তাহলে সামনে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে । প্রথম প্রোজেক্টের নাম ছিল “নোভা সি ওয়ান” । সি ওয়ানের কাজ করতে গিয়ে হঠাৎই আবিস্কার করি যে স্বাভবিকের চেয়েও ক্লোনের বডিতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক অনেক বেশি রয়েছে তাছাড়াও শরীরে আরও কিছু অস্বাভাবিকত্ব রয়েছে । বলা চলে নোভাকে বানানো হচ্ছে একেবারে কঠিন আর মজবুত হিসাবে । বাস্তবের মার্গারেট নিখুত সুন্দরী থাকলেও সে ছিল মানুষ । তার মানুষ হিসাবে কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল । কিন্তু নোভার বডিতে সেরকম মানুষ্য সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করার একটা প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে ।

-যেমন ?

-যেমন নোভা কখনও অসুস্থ হবে না । আহত হলে খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে । সব কিছু শিখবে খুব দ্রুত আর তার শারীরিক শক্তি একজন স্বাভাবিক মানুষের থেকেও অনেক বেশি হবে ।

-আচ্ছা !

আমি বুঝতে পারলাম ঐদিন নোভা কিভাবে এতো দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠলো । রাভেস্কি আবার বলা শুরু করলো

-আরও লক্ষ্য করলাম কেউ নোভার মস্তিস্কে খুব ক্ষদ্র কিছু ন্যানো-চিপ বসিয়ে দিয়েছে । এটা মস্তিস্কের নিউরনের সাথে সংযুক্ত । ব্যাপারটা ডা. মিনাল কে বলতেই তিনি খুব স্বাভাবিক ভাবে নিলেন । তিনি বললেন তার সাবজেক্ট যেন বেশি দিন সার্ভাইভ করতে পারে এই জন্য এমনটা করা হয়েছে ।

আমি বললাম

-আর ন্যানো চিপ গুলো কেন বসানো হয়েছে ?

-আমরা যাতে তাদের কার্যক্রম গুলো দেখতে পারি ?

-নাকি তাদেরকে নিয়ন্ত্রন করতে পারেন এই জন্য ?

-দেখুন আপনি আপনার কাজ করুন । আপনার দায়িত্ব কেবল আপনি পালন করুন । অন্য কিছু দেখার ব্যাপারটা আমার উপর ছেড়ে দিন !

-স্পষ্টই বুঝতে পারছিলাম যে এদের উদ্যেশ্য আসলে অন্য কিছু । আমি তার ল্যাব থেকে বের হয়েই একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিলাম । আমার কাছে মনে হল কেবল যে এটা স্বাভাবিক কোন কাজ করছে না । এর ভেতরে আরও ঘাপলা আছে । মার্গারেটকে বলতেই সে চোখ কপালে তুলল । প্রথমে ঠিক বিশ্বাসই করতে পারছিলো না । তার নিজের বাবা এমন একটা কাজ করতে পারে সেটা ভাবতেই পারে নি । অনেক কান্না কাটি করলো কিছু সময় । পরে আমি তাকে বোঝালাম যে এটা এখন কান্না কাটি করার সময় নয় । আমাদের আগে সব কিছু খুজে বের করতে হবে । দুজনে মিলে খোজ খবর শুরু করলাম । আমি জানতে পারলাম এদের আসল উদ্দেশ্য । এরা আসলে ক্লোন তৈরি করছে ঐ সকল ধনী মানুষের মনরঞ্জনের জন্য নয় তাদেরকে হত্যা করার জন্য । ন্যানো চিপ গুলো ক্লোনের বডিতে প্রবেশ করানো হয়েছে ওদেরকে এখান থেকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য । নোভা প্রোজেক্টের ক্লান্টের বলতে গেলে হোয়াইট সিটি সব বড় বড় মানুষজন । সরকারী অফিসার থেকে শুরু করে কয়েকজন মন্ত্রীও পর্যন্ত এর ভেতরে আছে । তাদেরকে একই দিনে এই ক্লোন গুলো সরবারহ করা হবে । বাকি কাজ গুলো ক্লোনেরা নিজেরাই করবে !

আর এই সুযোগে পুলিশ চিফ নিজে ক্ষমতা দখল করবে । প্রেসিডেন্টের ছেলেকে আসল মার্গারেটের বদলে নোভা সি ওয়ান সরবারহ করা হবে । একই রাতের ভেতরে হোয়াইট সিটির সব শীর্ষ স্থানীয় মানুষ গুলো মারা পড়বে । তাদের পথে মাথা তুলে দাড়ানোর মত কেউ থাকবে না । আর সেই সাথে তাদের সাথে থাকবো এক সুপার আর্মি ! যেটা দিয়ে যে কাউকে সামলানো যাবে । এটাই ছিল ওদের প্লান ।

এটা জানার পরেই আমি আর মার্গারেট মিলে ঠিক করলাম যে যে কোন মূল্যেই এই প্রোজেক্ট সফল হতে দেওয়া যাবে না । আমরা এটাকে ধ্বংশ করার প্লান কর ফেললাম । স্যাম্পল বডিকে ধ্বংশ করতেও আমরা সক্ষম হয়ে গেলাম কিন্তু আমি ধরা পড়লাম । আমাকে হয়তো মেরেই ফেলতো তবে আমি খুব সাধারণ কোন মানুষ নই তাই আমাকে হত্যা করা হয় নি । আমাকে অনেক দিন ল্যাবের সেলে আটকে রাখার পর শাস্তিস্বরূপ আমাকে এই নো-ম্যান্স ল্যান্ডে নির্বাসনে দেওয়া হয়েছে । সাথে সাথে আমাকে এও জানানো হয়েছে যে যদি আমি বোকার মত কাজ করতে যাই তাহলে তাদের কাছে সব প্রমান পত্র রয়েছে । এই প্রোজেক্টের মূল পরিকল্পনা কারি আমি নিজেই ছিলাম । এটা প্রমান করতে ওদের খুব একটা কষ্ট হবে না । আমি যদি বোকার মত কিছু করতে যাই তাহলে আমাকে সারাটা জীবন জেলের ভাত খেতে হবে অন্য দিকে আমি বাকি জীবনটা এই নো-ম্যান্স ল্যান্ড কাটিয়ে দিতে পারি কোন ঝামেলা ছাড়াই । আমার আসলে কিছুই করার ছিল না । প্রেসিডেন্টের কাছে গেলে আমি নিজেই ফেসে যেতাম । তাই এখানে থাকাটাই সঠিক মনে হল ।

তবে আমি জানতাম এই প্রোজেক্ট এখানে থেমে থাকবে না । তবে আমার কিছু করার ছিল না । জানতাম প্রোজেক্ট নোভা আবার শুরু হবে । সি ওয়ান বন্ধ হয়েছিল খুব জলদিই ওরা নোভাকে নতুন ভাবে শুরু করলো । আই গেস তুমি সেই প্রোজেক্টের প্রথম স্যাম্পল !

নোভা এতো সময় ডা. রাভেস্কির দিকে তাকিয়ে ছিল তার পর আমার দিকে তাকালো । সে যে কোন মানুষ নয় কেবল এককটা স্যাম্পল এটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে ওর । আমি ওর মনের কথা বুঝতে পারলাম । আমি উঠে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম । বললাম

-আমি জানি তুমি কেমন অনুভব করছো । তবে তুমি কেবল জেনে রেখো যে আর অন্য ১০ মানুষ যেভাবে ভাবে, তাদের যেরকম মন আছে তোমারও সেরকম মন আছে । বুঝতে পেরেছো ! তুমি বুঝতে পারছো আমার কথা ?

আমি নোভার কান্নার আওয়াজ পেলাম । এরকম ভাবে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়লে যে কারো ভেঙ্গে পড়ার কথা । আমাদের যখন বাবা মা মারা যায় আমাদের অনুভুতি কি রকম হয় আমরা বুঝতে পারি । আর যদি জানা যায় যে আমাদের কোন মা বাবাই ছিল না আমরা ফ্যাক্টরীতে তৈরি হয়েছি তখন আমাদের মনের অবস্থা কেমন হবে ? আমি নোভাকে শান্তনা দিতে লাগলাম । সেই সাথে মেয়েটাকে একটু কাঁদার সুযোগও দিলাম । কাঁদলে একটু হালকাও হবে ।

পেছন থেকে রাভেস্কি বলল

-কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না যদি নোভা সি টু ঠিক ঠাক ভাবে কাজ করে তাহলে তাহলে নোভার নিয়ন্ত্রন তো ডা. মিলানের হাতে থাকার কথা । নোভার আচরন দেখে তো তেমন মনে হচ্ছে না । তার মানে মার্গারেট ঠিকই তার কাজ করতে পেরেছে !! কিন্তু এসব হল কিভাবে ? তুমি আমার খোজই বা পেলে কিভাবে ?

-ব্যাপারটা আমি বলছি !!

আমরা তিনজনই ঘুরে দাড়ালাম । কারণ কথাটা আমরা কেউ বলি নি । কথাটা যে বলেছে সে রাভেস্কির অফিসে রুমের দরজায় দাড়িয়ে আছে । আমরা কথা বার্তায় এতো মশগুল ছিলাম যে সে কখন এই রুমে এসেছে বুঝতেই পারি নি ।

আমাদের সামনে দাড়িয়ে আছে স্টেট পুলিশ চিফ ইরোন আইভান !

মুখোমুখি

-আমাদের প্লান ঠিক মত এগিয়েই যেত যদি না ঐ ছোট্ট দুর্ঘটনা টা না ঘটতো । স্যাম্পলকে বহনকারি ভ্যানটার এক্সিডেন্ট না হলে আজকে হয়তো আমরা এখানে থাকতাম না । তোমাদেরও মারা যেতে হত না।

পুলিশ চিপ কেন যে এসব কথা বলছে সে সব আমার মাথায় ঢুকছে না । আমার মনের কথা যেন পড়ে ফেলল ইরোন আইভান । আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-ভাবছো কেন তোমাদের কে এসব কথা বলছি ? বলছি কারন তোমরা তো মারাই যাচ্ছো অন্তত মরার আগে জেনে যাও কেন মারা গেলে । তবে তোমাদের একটা সুযোগ আমি দেব । তোমরা ঠিক যেভাবে মরতে চাও সেভাবেই তোমাদের মারা হবে ।

আমি ইরোন আইভানের চেহারা দিকে তাকিয়ে অবাক না হয়ে পারলাম না । লোকটার কাছে এসব কৌতুক ছাড়া যেন আর কিছুই না । আসলে ক্ষমতা ওর হাতে রয়েছে তাই তো এতো মজা লাগছে !

আমাকে আর নোভাকে চেয়ারের উপরে বসিয়ে রাখা হয়েছে । কেবল মাত্র আমাকে হাত দুটো পেছনে হ্যান্ডকাফ দিয়ে পেছন দিকে আটকে রাখা হয়েছে । আমাদের থেকে কয়েক হাত দুরে ইরোন আইভান বসে আছে । তার ঠিক কয়েক গজ দুরে ডা. রাভেস্কিকে দেখা যাচ্ছে । ভয়ে তার মুখ একেবারে শুকিয়ে গেছে । কিন্তু আমার কেন জানি মোটেই ভয় লাগছে না । আমি নোভার দিকে তাকানোর চেষ্টা করলাম । মেয়েটা সেই কখন থেকে একেবারে শান্ত হয়ে বসে আছে । একেবারে ইরোন আইভানের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে !

ইরোন আইভান আবারও আমাদের দুজনের দিকে ব্যাঙ্গাত্বক চোখে তাকিয়ে বলল

-তোমরা আসলে আমার কাজ আরও সহজ করে দিয়েছো । এখানে না আসলে আমি তোমাদের থেকে এতো সহজে আমি এই ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতাম না । যাক এবার একেবারে সব ঝামেলা শেষ হয়ে যাবে আশা করি ।

তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-তোমাকে আমি কত ভাল একটা সুযোগ দিয়েছিলাম । কিন্তু তুমি তো সেটা নিলে না ! কেবল মাত্র একটা ফোন করলে বাকি জীবনটা তোমার কতই না সুখে কাটতো । সেটা না করে একটা ফ্যাক্টরী তৈরি পোডাক্টের জন্য জীবনটা খোয়াতে বসেছো !

আমি কঠিন মুখে বললাম

-এই শব্দটা আর ব্যবহার করবেন না । নোভা …..

আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই ইরোন আইভান আবারও হেসে উঠলো । আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-নোভা ওর নাম নয় । ওটা প্রোজেক্টের নাম , ওর মডেল নাম্বার সি টু ! বুঝেছো । আমরা যেন প্রোডাক্টের উপরে লেভেল লাগাই ঠিক তেমনি । সি ওয়ান সি টু ….।

-স্টপ ইট ! স্টপ !

আমি কেন এতো জোরে চিৎকার করে উঠলাম আমি নিজেি বলতে পারবো না । নোভার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে এই কদিন আমি একেবারে ওর সাথে সাথেই ছিলাম । একেবারে জ্বলজ্যান্ত একটা মানুষ ! একটা মেয়ে । মাঝের যে কয়টা দিন ও যেখন আমার বাসায় লুকিয়ে ছিল আমি যখন কাজ থেকে বাসায় ফিরে আসতাম অবাক হয়ে দেখতাম ও আমার জন্য রান্না করে রেখেছে ।

আমি প্রথম দিন খুবই অবাক হয়ে গেলাম । সেই সাথে একটা খুশি খুশি অনুভুতিও হল মনের ভেতরে । নোভার দিকে তাকিয়ে বললাম

-এসবের কি দরকার ছিল ?

-কোন কাজ ছিল না ।

-রান্না কোথা থেকে শিখলে ?

-ভিডিও টিউটিরিয়াল দেখে !

আমি মুখে নিয়ে দেখলাম রান্না অসম্ভব সুন্দর হয়েছে ওকে সেটা বলতে মেয়েটা বা্চ্চা মেয়ের মত খুশি হয়ে উঠলো । আমার মাথার উপর তখন বিরাট একটা ঝামেলা কাজ করছিলো কিন্তু এই ছোট্ট এই টুকু আনন্দের ভেতরে কোন খাদ ছিল না !

এখন ইরোন আইভান যখন নোভাকে ফ্যাক্টরী তৈরি প্রোডাক্ট বলল আমার কেন জানি ভাল লাগলো না । ইচ্ছে হল বেটার মুখে চেপে ধরি ! কিন্তু সেটা চাইলেও করা যাবে না । আমার হাত পেছন থেকে বাঁধা !

আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নোভার দিকে তাকিয়ে আইভান বলল

-এবার তোকে আমি এতো সহজে ছাড়ছি না । আগের বার ভেবেছিলাম কোন ঝামেলা হবে না । ঠিকঠাক মত জায়গা মত ডেলিভারি হয়ে গেলে তোকেও মরতে হত না । রানীর মত থাকতি কিন্তু ….

নোভা বলল

-সেক্স স্লেভ হয়ে ? এর চেয়ে আমি মরে যাওয়া পছন্দ করবো !

নোভা যেন খুব মজার কোন কথা বলেছে । হাহা হাহা করে হেসে ফেলল । তারপর বলল

-ফ্যাক্টরিতে তৈরি বস্তুর আবার এতো আত্মসম্মান !!

তখন নোভা একটা অদ্ভুত কাজ করলো । ইরোন আইভান আমাদের থেকে খুব বেশি দুরে বসে ছিল না । নোভা মুখ ভর্তি থুথু ইরোনের দিকে ছুড়ে দিল । এবং সেটা নিখুত ভাবে গিয়ে পড়লো ইরোনের মুখের উপরে ।

ঘটনা যে এভাবে ঘটতে পারে সেটা ইরোন নিজেও বুঝতে পারে নি । পর মুহুর্তেই একটা তীব্র রাগের ছাপ দেখতে পেলাম আমি । ইরোন উঠে এসে নোভার গালে জোড়ে একটা চড় মারলো ! কিছুই হয় নি এমন ভাব করে নোভা চড় টা হজম করে নিল !

আমি বললাম

-বড় বীর পুরুষ দেখছি তুমি হে ! একটা মেয়ের পেছন থেকে হাত বেঁধে তাকে চড় মাড়া হচ্ছে !

-চুপ ! একদম চুপ ! ভেবেছিলাম তোদের কে আমি শান্তিতে মারবো কিন্তু সেটা তোরা হতে দিলি না । সবাইকে মজা বুঝাবো !

তারপর নোভার দিকে তাকিয়ে বলল

-দাড়া আজকে তোকে মজা দেখাবো ! তোর আফসোস হবে কেন তুই সেদিন পালিয়েছিলি এই ভেবে !

ইরোন আইভান হাত তুলে একজন কে ডাকলো । হাতের ইশারা পেয়ে একজন কালো পোশাক পরা সৈনিকক দৌড়ে চলে এল । তারা এতোক্ষন দরজার কাছে অস্ত্র হাতে অপেক্ষা করছিলো ।

-জিলানকে ডাক দাও !

লোকটা যেমন করে এসেছিলো ঠিক তেমন করেই দৌড়ে চলে গেল । লোকটা চলে গেলেই ইরোন আইভান আবারও নিজের জায়গাতে গিয়ে বসলো । দেখতে পেলাম ওর চেহারায় আবার সেই কৌতুক ভাবটা চলে এসেছে । নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রন করে নিয়েছে । আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-আমার প্লান আরেকটু হলেই তোমরা নষ্ট করে দিয়েছিলে । তবে ভাগ্যভাল যে সেটা পারো নি । আচ্ছা তোমাদের কি মাথায় একটু বুদ্ধিও নেই ? যখন মার্গারেটের আইডেন্টিফিকেশন নাম্বারটা প্রবেশ করালে একবারও কি মনে হয় নি যে এই নাম্বারটা তোমাকে অবস্থান আমাদের জানিয়ে দেবে !

আরে তাই তো !

আমার আসলেই নিজেকে খানিকটা বোকা বোকা মনে হল । এই কথাটা তো আমার মনেই হয় নি । প্রথমবার যখন নোভা আইডি নাম্বারটা প্রবশ করালো তখনও ওটা আমার কম্পিউটার ছিল । সেটার আইপি হাইড করা ছিল বিধায় আমাদের ওরা খুজে পায় নি । কিন্তু একটু আগে যখন ও গার্ডদের কম্পিউটারে ও আইডি কোর্ডটা প্রবেশ করালো তখন সেটা করা হয় নি । তাই আমাদের খোজও বের করতে তাদের খুব একটা কষ্ট হয় নি ।

নোভার দিকে তাকিয়ে মনে হল ও এসবের কিছুই বুঝতে পারছে না । ওর মাথায় যেন অন্য কিছু কাজ করছে । কি এতো ভাবছে মেয়েটা ! এতো শান্ত আছে কিভাবে ?

আইভান বলল

-আমরা সব রকম প্রস্তুতিই নিয়ে রেখেছিলাম আমার পরিকল্পনা মাফিক । কিন্তু ঐ মার্গারেট আরেকটু হলেই ঝামেলায় ফেলে দিতো আমাদের ।

রাভেস্কি এতো সময় চুপ করে ছিল । সে হঠাৎ বলে উঠলো

-নিয়ন্ত্রন ন্যানো চিপ গুলো ও সরিয়ে ফেলেছিলো তাই না ?

আইভান তার দিকে তাকিয়ে বলল

-হ্যা । যার ফলে একেবারে পরিপূর্ণ ভাবে মুক্ত চিন্তার অধিকারী হয়ে ওঠে নোভা । তবে সে সব স্মৃতি আর জ্ঞান ওর ভেতরে প্রবেশ করানোর সময় পায় নি ।

নোভার চোখের মনি যেন একটু নড়ে উঠতে দেখলাম । আমার দিকে তাকাতে আমি ওকে চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম । বলার চেষ্টা করলাম, দেখেছো তো ….. একেবারে মুক্ত চিন্তার অধীকারী । তোমার উপর কারো নিয়ন্ত্রন নেই । তুমি স্বাধীন ঠিক আমার মতই । আমার মত করেই চিন্তা করতে পারো তুমি ! আমার কেন জানি মনে হল নোভা আমার মনের কথা বুঝতে পেরেছে । ওর চোখ দেখেই আমার সেটা মনে হল !

আইভান তখনও রাভেস্কির সাথে কথা বলেই চলেছে ।

-তোমার এসিস্টেন্ট না । আমরা যদি আগে থেকেই জানতে পারতাম যে ও ব্যাপারটা জানে তাহলে এই ঘটনা ঘটতোই না । তুমি যে ওকে বলে দিয়েছো এটা জানলে এতো কিছু হত না । তোমাকেও মরতে হত না । কিন্তু আর রিস্ক নেওয়া যায় না । এখানেই তোমাদের সলিল সমাধী হবে । নো-ম্যান্স ল্যান্ডে মরবা তাই সিসটেক স্টেট এখানে নাক গলাবেও না । বুঝেছো ? ঠিক মত কবরও ঝুটবে না । আমাদের সাথে হাত মেলালে এমনটা হত না রাভেস্কি ।

তাকিয়ে দেখি রাভেস্কি এবার ভয়ে কুকড়ে গেল । একটু যেন কাঁদতে আরাম্ভ করলো । আমি কিছু বলতে যাবো ঠিক তখনই ষাড়ের মত স্বাস্থ্যবান একজনকে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করতে দেখলাম । ইরোন আইভানের পাশে এসে দাড়ালো । ইরোন নোভাকে দেখিয়ে বলল

-একে পাশে রুমের নিয়ে যাও । আজকে এ তোমার । তবে শর্ত একটাই ওর চিৎকারের আওয়াজ যেন আমি এখান থেকে শুনতে পাই । পারলে আরও কয়েকজন কে নিয়ে যাও ।

আমি নিজের মাঝেই একটা আতঙ্ক অনুভব করলাম । ওরা নোভার সাথে কি করতে যাচ্ছে বুঝতে পেরে একটা তীব্র ঘৃনা জন্মালো ইরোন আইভানের উপর । এই লোকটা একটু পরেই আমাকে মেরে ফেলবে হয়তো, আমার এখন ভয় পাওয়ার কথা কিন্তু আমার কেন জানি ভয় লাগছে না আর । একটু আগে যে নোভার জন্য যে আতঙ্ক অনুভব করছিলাম সেটা এখন তীব্র এক রাগে পরিনত হল । আমি নিজের জায়গা ছেড়ে উঠে দাড়ালাম ।

-বানচোৎ …. তোকে ….

এই বলে চিৎকার করে উঠে ইরোনের দিকে লাফ দিলাম কিন্তু সেটা মাঝ পথেই থামিয়ে দিলো ষাড়ের মত লোকটা ! আমাকে এতো জোড়ে ধাক্কা মাড়লো যে আমি ছিটকে গিয়ে ঘরের কোনায় গিয়ে পড়লাম । চোখে বন্ধ হয়ে এল ব্যাথার যন্ত্রনায় । চোখ বন্ধ হয়ে আসার আগে দেখতে পেলাম ষাড়টা আমার দিকে এগিয়ে আসছে কিন্তু তখনই ইরোন আইভারের গলা শুনতে পেলাম । সে বলছে

-ওকে ছাড়ো । ও পড়ে থাকুক । তুমি এইটাকে নিয়ে যাও

আমি বিশ্রী একটা হাসির শব্দ শুনতে পেলাম । চোখ খুলে দেখি ষাড়ের সাথে খুব স্বাভাবিক ভাবেই নোভা উঠে দাড়ালো । আমি ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম । মেয়েটা এতো শান্ত কিভাবে আছে ? ও কি বুঝতে পারছে না ওর সাথে এখন কি হতে যাচ্ছে !

নোভা চলে যেতেই আমি উঠতে গেলে একজন সৈনিক আমার কাছে এসে দাড়ালো । আমার দিকে বন্দুকের নল তাক করে এখানেই পড়ে থাকতে ইশারা করলো । আমি বললাম

-তুই কখনই তোর শয়তানি বুদ্ধিতে সফল হবি না ।

আবারও ইরোন আইভান যেন খুব মজা পেল আমার কথা শুনে । বলল

-আমাকে কে থামাবে শুনি ? তুমি ?

-আমি না থামালেও আমার কম্পিউটার ঠিক ঠিক থামিয়ে দেবে ?

-মানে ?

দেখলাম আইভান যেন একটু সচকিত হয়ে উঠলো । আমি বললাম

-আমাকে এতো কাঁচা ভাবলে চলবে কেন ? একজন হ্যাকার সব সময় নিজের সেফটির কথা সবার আগে ভাবে । তুমি কি ভেবেছো আমি এসবের কিছুই জানি না । তোমার কি মনে হয় মার্গারেট এতো জায়গা রেখে নোভাকে সেই পথেই কেন পাঠালো যে রাস্তায় আমি যাই !

আমি ইরোন আইভানের চোখে একটু সন্দেহ দেখতে পেলাম । ঠিক এটাই আমি চাই । আমি সব মিথ্যা বলছি তবে ইরোন আইভানের মনে সন্দেহ জাগবেই ।

ইরোন বলল

-মার্গারেট কেন পাঠাবে ওকে ? তোমার কাছে কেন পাঠাবে ?

আমি বললাম

-একটু মনে করে দেখো তো তোমার ক্লায়েন্টের বাসা কোথায় বার নোভাকে বহনকারী ভ্যানটা কোথায় এক্সিডেন্ট করেছে ?

আমি এসবের কিছুই জানি না । কেবল অন্ধকারে ঢিল ছুড়লাম । ঠিকঠাক মত লেগে গেল মনে হল অন্তত ইরোন আইভানের চেহারা দেখে তো তাই মনে হল । আমি বললাম

-আমি অনেক আগে থেকেই মার্গারেটের সাথে যোগাযোগ রাখি ।

-মিথ্যা কথা । কোন ভাবেই তোমার সাথে মার্গারেটে যোগাযোগের কোন উপায় নেই ।

আমি এবার হেসে উঠলাম ।

-সত্যিই নেই ? তোমাকে একটা গোপন কথা বলি । আমার খোজ খবর তো তুমি ভাল করেই নিয়েছো, তাই না ?

ইরোন কোন কথা বলল না । ওর চোখের দিকে তাকিয়েই বোঝা গেল ঐ দিনের পর আমার ব্যাপারে সে ঠিকই খোজ খবর নিয়েছে । আমি বললাম

-হাই স্কুলের সব পরীক্ষায় যে ছেলেটা টপ করতো সে হঠাৎ করেই ফাইনালে একেবারে নিচের দিকে কিভাবে চলে গেল ? এই প্রশ্ন মনে আসে নি তোমার ? আমি যে মেইন কম্পিউটারকে নিজের ইচ্ছামত নাচাতে পারি সেটা কি তুমি জানো ?

ইরোনের মুখের সন্দেহের চাপটা আরও গভীর হতে দেখে আমি নিজের মিথ্যা বলার জোরটা আরও বাড়িয়ে দিলাম । আমি আবার বললাম

-আমি যদি আজকে ঠিক সাতটা আগে আমার বাসায় না পৌছায় তাহলে ঠিক ঠিক সাতটা এক মিনিটে প্রোজেক্ট নোভা সি টুর ব্যাপার যত তথ্য আছে সব পুরো ওয়েবে ছড়িয়ে পড়বে । সবার আগে সেটা পৌছাবে প্রেসিডেন্টের কাছে ।

-আমি বিশ্বাস করি না ।

-কোরো না । সেটা তোমার ব্যাপার । আমরা তো মরছিই তবে মনে রেখো তুমিও বাঁচবে না । তোমার বিশ্বাসের জন্য আরও একটা কথা বলি ।

এটা বললে আমি জানি ইরোন আইভান ঠিক ঠিক আমার কথা বিশ্বাস করে নেবে । আমি মাঝে মাঝে খুব একটা দুষ্টামী করতাম মেইন কম্পিউটারে ঢুকে । এমনই একটা দুষ্টামী করতে গিয়ে একবারে একটু ঝামেলা হয়ে গেছিলো । আমি বললাম

-বছর খানেক আগে হঠাৎ করেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনেক খানি মানি ক্রেডিট গায়েব হয়ে গেছিলো । মনে আছে ? এমন কি সেটা নিউজেও চলে এসেছিলো । কারণ ঠিক ঐ সময়ে একজন সাংবাদিকের একাউণ্ট থেকে বেশ বড় এমাউন্টের ক্রেডিট গায়েব হয়েছিল । সাথে সাথেই খবরটা ছড়িয়ে পড়ে পুরো স্টেটে । সবাই তখন নিজের একাউণ্টে প্রবেশ করে চেক করার জন্য । এতো লোড সার্ভার নিতে না পেরে খানিকটা সময় ডাউন থাকে । প্রায় দুইদিন সেটা ডাউন ছিল । মনে আছে তো ?

ইরোন আইভান আবারও কোন কথা না বলে আমার দিকে এগিয়ে এল । আমি এবার একটু উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করলাম । তবে ধাক্কার ফলে বুকের ব্যাথাটা বেশ টের পাচ্ছিলাম । সম্ভবত কোথাও কোন হাড় ভেঙ্গে গেছে । আমার খুব কাছে আসতেই আমি আমি বললাম

-কাজটা আমি করেছিলাম । চাইলে এও বলতে পারি কিভাবে কাজটা করেছি । বলবো ?

ইরোন আইভান আমার কলার চেপে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই গগন ফাটানো চিৎকারে পুরো ঘর কেঁপে উঠলো । আমি তো অবাক হয়েছি সাথে সাথে ইরোন আইভান এবং রুমে থাকা সবাই অবাক হয়ে গেছে । কারণ চিৎকারটা আসছে পাশে ঘর থেকে যেখানে একটু আগে জিলান নামের ষাড়টা নোভাকে নিয়ে গেছে ! কিন্তু অবাক হওয়ার কারন হচ্ছে চিৎকারটা নোভার নয়, জিলানের !

কয়েক মুহুর্ত কেটে গেল । দেখতে পেলাম চারজন সৈনিক দৌড়ে চলে গেল পাশের ঘরের দিকে । ধুপধাপ কয়েক আওয়াজ হল কয়েক মুহুর্ত তারপর সব চুপ । যে একটু আগে আমার দিকে যে বন্দুক তাক করে ছিল তার চোখে আমি দ্বিধা দেখতে পেলাম । কয়েক মুহুর্ত যেন ঠিক বুঝতে পারলো না সে কি করবে । তারপর সেও পাশের ঘরের দিকে হাটা দিলো অস্ত্র তুলে তবে সেটা কয়েক পা মাত্র । মুহুর্তের ভেতরে দেখলাম নোভা দরজার সামনে দাড়িয়ে । এবং এতো দ্রুত সে রিএক্ট করলো যে আমি নিজেই অবাক হয়ে গেলাম । পরমুহুর্তে তাকিয়ে দেখি একটা ফুট সাইজের ছোড়া সৈনিকের গলার কাছে বিধে আছে ।

ইরোন আইভান কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো । কি হচ্ছে তার কিছুই সে ঠিক বুঝতে পারছে না । কিন্তু সামলে নিল নিজেকে । তারপর পকেট থেকে পিস্তলটা বের করে তাক করলো নোভার দিকে ।

আমি ঠিক ওর পেছনে যে দাড়িয়ে আছি সেটা ও ভুলেই গেছে । ও গুলি করতে যাবে ঠিক তখনই আমি শরীর সব শক্তি দিয়ে ইরোন আইভানের পেছনে আমি একটা লাথি দিলাম ।

গুলি চলল ঠিকই তবে সেটা নোভার দিকে গেল না । আর আমার লাথির ধাক্কা সামলাতে না পেরে সোজা ওর নোভার সামনে গিয়ে পড়লো ।

উঠে গিয়ে আবারও পিস্তল তাক করতে গেল কিন্তু সেই সুযোগ ও পেল না । নোভা ইরোন আইভানের দু হাত চপে ধরেছে । কয়েক সেকেন্ড বাদের ইরোনের হাত থেকে পিস্তল খসে পড়লো । ইরোনের চেহারা দেখেই মনে হচ্ছে নোভা ওকে খুব শক্ত করে ধরেছে এবং ও সেটা সহ্য করতে পারছে না । এক সময় ব্যাথায় কাঁকিয়ে উঠলো । নোভা বলল

-আমি ফ্যাক্টারিতে তৈরি হতে পারি কিন্তু আমার ভেতরে এমন অনেক কিছুই আছে যা তোমার ভেতরে নেই ! তোমরা আমাকে কিভাবে তৈরি করেছো সেটা ভুলে গেছো ? আমি সাধারন কেউ নই, এটা জানো না ?

তারপর আমি মট করে হাড় ভাঙ্গার আওয়াজ পেলাম । ইরোনকে নোভা ছেড়ে দিলো । কিন্তু সে আর উঠতে পারলো না, মাটিতে শুয়ে পড়লো । ইরোন আইভাবের কব্জি হাতের কাছ থেকে অস্বাভাবিক ভাবে ঝুলে আছে । কোন মানুষ এভাবে কারো হাড় ভেঙ্গে দিতে পারে সেটা আমি না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতাম না ।

নোভা আমার দিকে এগিয়ে এল । আমার বুকের যেদিকে জিলান ধাক্কা মেয়েছিলো সেটার উপরে হাত রাখলো !

-তুমি ঠিক আছো ?

-তোমার জন্য, বেঁচে আছি ।

নোভা বুকের ওখানে কয়েকবার হাত বুলিয়ে বলল

-হাড় ভাঙ্গে নি । ভয় নেই । চল আমাদের আরও একটু কাজ বাকি আছে ।

তারপর আমরা এদেরকে এখানে রেখেই ডা. রাভেস্কিকে নিয়ে রওনা দিয়ে দিলাম । যাওয়ার আগে কেবল একটাবার আমি পাশের ঘরে একটু উকি দিয়ে দিলাম । হাত পা ছড়িয়ে কালো পোষাক পরা লোক গুলো এমন ভাবে পড়ে আছে যেন কাপড়ের দলা পড়ে আছে । রাভেস্কি নিজের চোখকে একেবারেই বিশ্বাস করতে পারছে না একটু আগে সে মারা যাচ্ছিলো এখন সব কিছু কেমন পাল্টে যাচ্ছে ।

আমি ইরোন আইভানকে দেখিয়ে বললাম

-এর কি হবে ?

-ভয় নেই এ কিছু করতে পারবে না । হাতের কব্জির হাড় যেভাবে ভেঙ্গেছে সেটা আর জীবনেও ঠিক হবে না !

আর ওর দিকে খেয়াল দিলাম না । ওকে রেখেই আমরা হোয়াইট প্যালেসের দিকে রওনা দিলাম ! 

শেষ কথা

আমাদের রেখে যাওয়া ক্যাবটা দেখি তখনও আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে । আমরা তিনজন সেটাতে উঠে বসলাম । পথে কয়েকবার আমাদের আটকানো হল তবে সেই আগের মত করেই নোভা নিজের আইডি কোড দিয়ে সব কিছু পার করে এল আমরা থামলাম সোজা হোয়াইট প্যালেসের সামনে । আমি এখানে কোন দিন আসতে পারবো ভাবতে পারি নি। নোভা সোজা আমাদেরকে নিয়ে হাজির হল প্রেসিন্ডেন্টের ছেলের কাছে ।

ও এতো কিছু চেনে কিভাবে জানতে চাইলে নোভা বলল

-ভুলে যাচ্ছো কেন আমি কার কাছ ক্লোন ? সে যা জানে সেটা আমার ভেতরেও আছে । কিন্তু আমি ওর থেকে সৃষ্টি ওর ভেতরের সব কিছু আমার ভেতরে আছে । ও যা পছন্দ করে আমারও তাই ভাল লাগে । দেখলে না ঐ আইডিটা আমি কিভাবে আপনা আপনি বলে দিলাম ! হয়তো একেবারে নেই তবে আস্তে আস্তে আসতেছে । এই যে এই প্যালেসে আমি কোন দিন আসি নি কিন্তু আমার কাছে সব কেমন পরিচিত মনে হচ্ছে ।

আমরা প্রেসিডেন্টের ছেলের অফিসের সামনে গিয়ে হাজির হলাম । নোভাকে দেখে গার্ড আমাদের কে সালাম ঠুকলো । বোঝাই যাচ্ছে নোভা এখানে মাঝে মাঝেই আসতো ! কেউ ওকে বাঁধা দিল না কারন ও যে মার্গারেট সেটা আমি আর রাভেস্কি ছাড়া আর কেউ জানে না ।

প্রেসিন্টের ছেলেকে সব বলার পরে সে যেন আকাশ থেকে পড়লো । কিন্তু অবিশ্বাসও করতে পারলো না । তারপরের কাজ গুলো আরও সহজ হয়েগেল । এক ব্যাটালিয়ান সৈন্য চলে গেল ডা. মিলানের ইনস্টিটিউটে । সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হল । আর উদ্ধার করা হল মার্গারেটকে ! ওর বাবা ওকে আটকে রেখেছিলো যাতে করে ও কাউকেকিছু না বলতে পারে ।

মার্গারেট ব্যস্ত হয়ে গেল নোভাকে নিয়ে । রাভেস্কির আবারও বিজ্ঞান ইনস্টিটিউের জন্য গুরুত্বপূর্ন হয়ে গেল । কেবল আমারই কোন কাজ রইলো না । আমি যখন চলে আসতে যাবো আমাকে কঠিন করে সাবধান করে দেওয়া হল এসব যেন কাউকে আমি না বলি । স্টেটের নিরাপত্তার জন্যই এমনটা করতে হবে । আমি সম্মতি জানালাম । বললাম যে এমন ঘটনা যে ঘটেছে সেটা আমার এখনই মনে নেই । সামনে মনে থাকবে কিভাবে । আমাকে এও জানানো হল যে আমার এই কাজের জন্য খুব শীঘ্রই আমাকে পুরুস্কার দেওয়া হবে । আমি মুখে হাসি নিয়ে বের হয়ে এলাম ।

যখন বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে বের হতে যাবো দেখতে পেলাম নোভা আমার দিকে দৌড়ে আসছে । আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো । আমি ওর হার্টবিট খুব ভাল করেই শুনতে পাচ্ছিলাম । আমি বললাম

-তাহলে এটাই শেষ দেখা !

-তাই তো মনে হচ্ছে ! ওরা আমাকে মনে হয় বের হতে দিবে না আর । অবশ্য বের হওয়া ঠিকও হবে না । একই শহরে হুবাহু দুজন থাকলে সমস্যা তো !

আমি হাসলাম ! তারপর বললাম

-জানো এই কটা দিনে আমি তোমার সঙ্গ খুব উপভোগ করেছি । নিরানন্দময় জীবনে তোমার আগমন আমার জন্য চমৎকার একটা আশির্বাদ । আমি সারা জীবন তোমার কথা মনে রাখবো !

-আমিও ! আমার কাছে স্মৃতি বলতে তোমার থেকেই শুরু সেটা !

আমি করিডোর দিয়ে বেরিয়ে যেতে লাগলাম তখনও আমার কেন জানি মন খারাপ হতে লাগলো । পেছনে তাকাবো না তাকাবো না করেও তাকিয়ে ফেললাম । তাকিয়ে দেখি নোভা কেমন ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি এখান থেকেই ওর চিকচিক করা অশ্রুজ্বল কনা দেখতে পেলাম । সেটা যে শতভাব মানুষের অশ্রু সে বিষয়ে আমার বিন্দু মাত্র সন্দেহ রইলো না !

পরিশিষ্টঃ

আবার সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে এসেছে । আমি ঠিক আগের মতই কাজে যাই কাজ থেকে ফিরে আসি । মাঝে মাঝে কম্পিউটার দিয়ে মেইন কম্পিউটারে ঢুকে । এদিক ওদিক ঘোরাফেরা করি । এই ঘোরা ফেরা করতে করতেই অনেক খবর পেয়েছি । এই এক মাসে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে । ডা. রাভেস্কিকে বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের প্রধান করা হয়েছে । ইরোন আইভানকে অদ্ভুত কারনে কেউ খুজে পাচ্ছে না । রেকর্ড বলছে তিনি নো-ম্যান্স ল্যান্ডে গিয়েছিলেন তারপর আর ফিরে আসেন নি ।

মোট ১১৭ জন ধনী আর প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হোয়াইট প্যালেটে ডাক হয়েছিল । তাদের সাথে প্রেসিডেন্টের কি কথা হয়েছে টা অবশ্য কেউ জানে না । তবে অসমর্থিত সুত্র বলছে হোয়াইট প্যালেস থেকে বের হওয়ার সময় সবার মুখই নাকি বেশ গম্ভীর ছিল । আমার অবশ্য বুঝতে কষ্ট হল না কেন গম্ভীর ছিল ।

আমি অবশ্য এসব নিয়ে আর খুব একটা মাথা ঘামাই না । আবার নিয়ম করে বাবা মায়ের সাথে দেখা করতে যাই । ও হ্যা প্রেসিডেন্টের ছেলে তার কথা রেখেছে । আমার নামে একটা কার্ড ইস্যু হয়েছে । আমি এখন যখন ইচ্ছা আমার বাবা মায়ের সাথে দেখা করার জন্য গ্রীন সিটিতে যেতে পারি । এমন কি আমি যদি চাই আমি প্রতিদিন কাজ শেষে বাবা মায়ের ওখানে গিয়ে থাকতে পারি । তবে আমার কেন জানি থাকতে ইচ্ছে হয় নি । আমি আমার জায়গাতেই ভাল আছি ।

তবে আমি নোভাকে কেন জানি মিস করি । ঐ দিন চলে আসার সময় ওর চোখের জলটা আমি এখনও ভুলতে পারি নি । মেয়েটা কেমন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল । আমি সেই দৃষ্টিকে কিছুতেই ভুলতে পারি না । বিশেষ করে বাসায় আসার সময় সেই নিশুতি রোডের কাছে আসলেই আমার নোভার কথা মনে পড়ে ।

আজকেও যথারীতি যখন আমি কাজ শেষ করে বাসার দিকে আসছিলাম তখনও নোভার কথা মনে পড়লো । বিশেষ করে নিশুতি রোডের কাছে আসতেই মনে হল ঐ তো ওখানে পড়ে ছিল মেয়েটা ! আমি পালাতে গিয়েও থেমে যাই ।

আমি বাইকের গতি বাড়াতে যাবো তখনই একটা অদ্ভু্ত কিছু দেখতে পেলাম । রাস্তার ঠিক মাঝে কেউ দাড়িয়ে আছে । আমি খানিকটা খাবি খেলাম । বুকের ভেতরে একটা সুক্ষ ভয়ের ছায়া বয়ে গেল । আমি যখন বাইক ব্রেক করে রাস্তার উপর থেমে গেছি তখন বাইকের আলোতে সেই কেউটাকে আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখলাম ।

আরেকটু কাছে আসতেই আমার মনের ভেতরে কেমন যেন একটা অনুভুতি হল । মনে হল সামনের মানুষটা আমার পরিচিত !

আলোতে যখন আমি ওর মুখ দেখতে পেলাম তখন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । নোভা আমার কাছে এসে বলল

-এরকম নিশুতি রাতে এরকম নিশুড়ি রাস্তায় বাইক থামানো উচিৎ নয় জনাব ! বিপদ হতে পারে ! আগের বা কি হয়েছিলো মনে নেই?

আমি কেবল বললাম

-মনে আছে বলেই তো থামালাম !

নোভা আর কোন কথা বলল না ! আমার বাইকের পেছনে চড়ে বসলো ! আমি বাইক বাসার দিকে বাইকের গতি বাড়িয়ে দিলাম । মনের ভেতরে অনেক প্রশ্ন রয়েছে । নোভার এখানে থাকার কোন কথা না । ওকে কি ওরা এখানে আসতে দিয়েছে ? নাকি ও পালিয়ে এসেছে ?

আমি প্রশ্ন করতে গিয়েও করলাম না । কোন কিছু দরকার নেই জানার ! যদি দরকার পড়ে তাহলে আবারও পালিয়ে যাবো ওকে নিয়ে । নোভা আমার সাথে রয়েছে এটাই আমার কাছে অনেক কিছু !

(সমাপ্ত)

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 5 / 5. Vote count: 21

No votes so far! Be the first to rate this post.

Share this:

  • Twitter
  • Facebook
  • Print
  • WhatsApp

Like this:

Like Loading...

সেরা পোস্ট

5 (42)

এই সব মিথ্যা গল্প 2.1

5 (21)

প্রোজেক্ট নোভা সি-টু (শেষ পর্ব)

5 (28)

আমার প্রথম কর্পোরেট চাকরির ইন্টারভিউয়ের অভিজ্ঞতা

5 (15)

আমার সাইকেলরা এবং তাদের নিয়ে গল্প

5 (20)

নেকড়ের ডাক

4.9 (28)

নিনেন

4.9 (51)

শিমুলের কাছে ফেরা

4.9 (40)

প্রাচীন মমি (দ্বিতীয় পর্ব)

4.9 (61)

টুকরো জীবন দৃশ্য

4.9 (39)

কল্পনার চেয়ে সত্য

Categories

  • এডোপ্টেড থিম
  • গল্প
    • পরমানু গল্প
    • বড় গল্প
    • ভৌতিক গল্প
    • রহস্য – থ্রিলার
    • রাফায়েল সিরিজ
    • লাভ এন্ড ইরোটিকস
  • তৃষার গল্প
  • দিনলিপি
  • প্যাঁচাল
  • ফিচার
  • মুভিস – ড্রামাস
  • লেজেন্ডস
  • সংকলন

Recent Posts

  • পাহাড়ে ভিনগ্রাহী
  • নাইরার নিয়ন্ত্রন
  • চিত্রা
  • ফ্রি বিয়ার ইফেক্ট
  • ক্যাম্প ফায়ার

Recent Comments

  • nazmusm on চিত্রা
  • Rajaul Karim on হিংস্র শ্বাপদ
  • Mehrab Hossain on আমি হতে চেয়েছিলাম বইয়ের দোকানদার
  • mukul hosen on বখাটের প্রেম
  • আরজেড on বখাটের প্রেম

সকল পোস্ট

Tags

sex (1) অতিমানব (2) অপু (4) অপু তানভীর (12) অভিজ্ঞতা (2) এলিয়েন (2) কর্পোরেট (1) খুনী (1) গল্প (128) চাকরির ইন্টারভিউ (1) চারু (6) ছেলেমানুষী (1) ছোট গল্প (37) জন্মদিনের স্মৃতি (1) টোপ (1) তৃষার গল্প (14) দ্বিতীয় বাসর (2) ধর্ষণ (1) নারী (2) নেকড়ে (1) পার্ফেক্ট হাজব্যান্ড (2) পিএস (4) প্যাচাল (2) প্রোজেক্ট নোভা (1) ফেইক বয়ফ্রেন্ড (1) বই (2) বগর-বকর (1) বাসররাত (1) বিয়ার (1) বিয়ে (3) বড়গল্প (4) ভালোবাসার গল্প (2) ভুতের গল্প (6) ভৌতিক গল্প (23) মিতু (2) মিথ্যা গল্প (5) মুভি (2) রাজকুমার (3) রাফায়েল (5) রাবার গার্ল (1) লেটাক্স (1) ষড়যন্ত্র (2) সায়েন্স ফিকশন (2) হোমমিনিস্টার (14) ১৮+ (11)

Contacts

Phone: +8801737166199
Email: contact@oputanvir.com

About This Blog

Contact Me
Privacy Policy

Site views since December 1, 2020

1 2 6 1 1 2
Total views : 438315