জান্তব (পর্ব ০২)

4.7
(17)

সব কিছু ঘটার পেছনেই কোন না কোন কারণ থাকে। তৃষার নিজের জীবনের সাথে বেশ কয়েকবারই এই ঘটনা ঘটতে দেখেছে । অপুর সাথে ওর পরিচয় একেবারে হঠাৎ করেই হয়েছিল ঠিক যে সময়ে হওয়ার কথা ছিল । সেই সময়ে যদি অপু ওর জীবনে না আসত তাহলে আজকে ও কোথায় থাকত সেটা সে নিজেও জানে না । সব কিছু ঘটে কোন নির্দিষ্ট কারণে। 

অপুর কথা মনে হতেই সামনের দিকে ফিরে তাকাল। অপু ঠিক ওর উল্টো দিকে বসে রয়েছে। এক টানা ইঞ্জিনের আওয়াজে একটু ঝিমুনির মত আসছে । অপুর চোখ তাই কিছুটা বন্ধ । তৃষা ওর দিকে এক ভাবে কিছুটা সময় তাকিয়ে রইল । জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপে পাশে পাওয়ার জন্য কেউ যে ওর পাশে রয়েছে এটা ভাবতে তৃষার ভাল লাগে, যদি অন্য সবার মত অপু নিজেও এখানে আসার বিরুদ্ধে ছিল । তবে শেষ পর্যন্ত তৃষা খুব ভাল করেই জানত যে অপু ঠিক ঠিক আসবে ওর সাথে । পৃথিবীর আর কেউ ওর সাথে না আসলেও অপু আসবেই। অপু না এলে বাবাকে নিয়ে এতো দূর আসাটা একটু কষ্টকর হয়ে যেত তৃষার জন্য।

মনের ভেতরে সেই দ্বিধাটা আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠল । এখানে বাবাকে নিয়ে আসাটা কি ভুল হল?

কিছু কি হবে?

হাসানের চিঠি পড়ে মনের ভেতরে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে । একজন মৃত্যু পথযাত্রী মৃত্যুর আগে কেন তার কাছে মিথ্যে কথা বলে যাবে? এমন কোন কারণ নেই । হাসানের কোন স্বার্থও নেই। আর ঠিক যখনই সব ডাক্তাররা তৃষার বাবার উপর থেকে সব রকম আশা ছেড়ে দিয়েছে ঠিক তখনই হাসানের সাথে তৃষার পরিচয় হতে হল ! সব কিছু যে কোন না কোন কারণে ঘটে এটা তো তৃষা বিশ্বাস করে । হাসানের সাথে পরিচয় এবং হাসানের কাছ থেকে ওর চিঠি পাওয়া এটাই নির্দেশ করে যে ওর বাবার সামনে আরও একটা সুযোগ রয়েছে !

বাবাকে তৃষা কোন ভাবেই হারাতে চায় না । ওর মা চলে যাওয়ার পরে ওর বাবাই ওর কাছে সব । এখন অপু ওর জীবনে এসেছে সত্য কিন্তু বাবার গুরুত্ব কোন ভাবে কমে যায় নি । শেষ চেষ্টা একবার করতেই হবে ওকে । শেষ পর্যন্ত দেখতেই হবে কী হয় !

হাসানের চিঠির মাধ্যমেই এই হাসপাতালের খোজ সে পেয়েছে । অদ্ভুত এক হাসপাতাল । হাওডরের একেবারে শেষ মাথায় । ঘুরে যাওয়া যায় মাটির রাস্তা দিয়ে । একেবারে ভারত সীমান্ততের কোল ঘেষে সেই রাস্তা। সে রাস্তা খুবই ভয়ানক । এতোটা পথ হয়তো তার বাবা যেতে পারবে না । তাই হওরের পথ দিয়েই যাওয়া ভাল । 

নিজেস্ব গাড়িতেই হাওর পর্যন্ত এসেছে ওরা । আগে থেকেই একটা বোট ভাড়া করে এসেছে ঢাকা থেকে । একটা ব্যাপার তৃষা খেয়াল করে দেখেছে যে যখনই হাসপাতালটার নাম নিয়েছে বলতে গেলে কেউই যেতে চায় নি ওখানে । শেষে বাধ্য হয়ে অন্য পথ ধরেছে । ওদের একজন ব্যবসায়িক পার্টনারের নিজেস্ব হাউজবোট আছে । তার বাসাও এখানেই । মাঝে মাঝে এখানে আসে ফূর্তি করতে । তাকে অনুরোধ করে এই হাউজবোটটা ভাড়া করেছে । তৃষার আবার মানুষের অনুগ্রহ নিতে ভাল লাগে না কখনই । তবুও বাধ্য হয়ে সে কাজটা করেছে । আর এই হাউজবোট নেওয়ার আরেকটা কারণ রয়েছে । অপুকে কোন হাসপাতালের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হবে না । ওকে থাকতে হবে এই হাউজবোটেই ।

যখন প্রথমবার তৃষা হাসপাতালে যোগাযোগ করল তখন ওখান থেকে খুব ভাল করেই বলে দেওয়া হয়েছিল যে ওরা মাত্র একজন গেস্ট এলাউ করে । বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শুধু মাত্র রোগী থাকে ওদের ওখানে । অন্য কেউ থাকে না । তবে এমন অনেক রোগী রয়েছে যাদের পরিবারের লোকজন কিছুতেই এতোটা দূরে একা একা তাদের প্রিয় মানুষকে রাখতে রাজি হন না । তাই তাদের কথা চিন্তা করে একজন গেস্টকে তারা রাখতে রাজি হয়েছে । তবে সেখানেও নানান শর্ত রয়েছে । রোগী থাকবে সব সময় আলাদা ঘরে আর গেস্টদের জন্য রয়েছে আলদা ঘর । দিনের ভেতরে কেবল কিছু সময়ের জন্য গেস্টরা তাদের রোগীর সাথে দেখা করতে পারবে । বাকি সময়টা রোগীকে থাকতে হবে একা । অবশ্য এই চিকিৎসাতে নাকি রোগী বেশির ভাগ সময়েই ঘুমিয়েই থাকে । যে ঔষধ তাকে দেওয়া হয় তাতে নাকি ঘুম আসে বেশি । হাসানও তার চিঠিতে এই একই কথা বলেছে । হাসান দিনের বেশির ভাগ সময়েই ঘুমিয়ে থাকত । ঘুমের মাঝে সে অদ্ভুত স্বপ্ন দেখত । স্বপ্নে দেখত যে কেউ ওর সামনে আসছে । ওর পুরো শরীরে কিছু একটা মাখিয়ে দিচ্ছে । সেটা এতোটাই বাস্তব মনে হত যে আসলেই সেটা স্বপ্নে নাকি সত্যি সত্যি হচ্ছে সেটা নিয়ে হাসানের মনে সন্দেহ ছিল । 

সন্দেহ তৃষার মনেও আছে ? আসলেই কি হাসান ক্যান্সার থেকে ভাল হয়ে উঠেছিল? ফোর্থ স্টেজ ক্যান্সার থেকে আসলেই কেই সুস্থ হয়ে উঠতে পারে? 

তৃষা নিজেও প্রথমে বিশ্বাস করে নি । হাসানের মেডিক্যাল রিপোর্ট সে নিজে খুজে বের করে দেখেছে। কোন সন্দেহ ছিল না যে হাসান ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল এবং সেটা একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে গিয়েছিল । কিন্তু যখন তৃষার সাথে হাসানের জেলখানাতে দেখা হয়েছে, হাসানকে সে পরীক্ষা করেছে তখন তার ভেতরে কোন ক্যান্সার সেল ছিল না । তার মানে হাসান সুস্থ হয়েছিল ! এটাই তো তারই প্রমান । হাসান যদি ঠিক হতে পারে তৃষার বাবাও কি পারবে?

তৃষা কোন অলৌকিকে বিশ্বাস করে না । কিন্তু যখন প্রিয় মানুষ মরতে বসে তখন কোন লজিক লৌকিক অলৌকিক ব্যাপার মাথায় থাকে না । তখন কেবল মনে হয় যেকোন ভাবে তাকে বাঁচাতে হবে ! তাই তো আজকে তৃষা ওর বাবাকে নিয়ে এসেছে এই হাসপাতালে । 

হাউজবোটটার গতি খুব বেশি না । আসলে এটা দীর্ঘ যাত্রার জন্য তৈরি করা হয় নি । তবুও অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে ফেলল ওরা । যখন প্রায় বিকেল হয়ে এসেছে তখন হাসপাতালটা দেখা গেল । চারিদিকে হওরের পানির ভেতরে একটা যেন ছোট দ্বীপ । সে দ্বীপের উপরেই একটা দুই তলা বাড়ি । পুরো দ্বীপটাই উচু দেওয়া দিয়ে ঘেরা । ভেতরে বেশ গাছপালা দেখা যাচ্ছে । আস্তে আস্তে হাউজবোটটা সেদিকে এগিয়ে গেল । 

অপু ওর পাশে এসে বসল । তারপর বলল, তুমি নিশ্চিত তো এখনও?

-হ্যা । 

-কোন বিপদ হলে?

-তুমি তো আছো ! নায়ক হয়ে আমাকে উদ্ধার করবে। পারবে না !

-হা হা ! একেবারে নায়ক সাকিব খান হয়ে বাঁচাতে আসব।

তৃষা তাকাল অপুর দিকে। অপু হাসলেও ওর মুখে একটা চিন্তার রেখা ঠিকই দেখা গিয়েছে। অপু প্রথম থেকেই রাজি ছিল না । তারপর যখন শুনতে পেল যে ও থাকতে পারবে না তখন তো খুব বেঁকে বসেছিল । বলেছিল তৃষার থাকার দরকার নেই । ও নিজে থাকবে। তৃষার একবার মনেও হয়েছিল অপুই থাকুক ভেতরে । কিন্তু পরে মনে হল ও নিজে যেহেতু ডাক্তার তাই অপুর থেকে ও নিজে ভাল বুঝতে পারবে। তাই ওর থাকাটা বেশি দরকারি । 

অপু পকেট থেকে থেকে একটা ছোট বক্স বের করে দিল । তারপর বলল, এটা নাও!

-এয়ারবাটস? আমার কাছে আছে তো !

-এটা এয়ারবাটস না । এটা একটা কমিউনেশন ডিভাইস ! ফোনের নেট এখানে নেই বললেই চলে । তোমাকে ফোনে পাব না হয়তো তবে এটার মাধ্যমে যোগাযোগ করা যাবে । এটার রেঞ্জ মোটামুটি ৫ কিলোমিটার । আমি আশে পাশেই থাকব বোটে । কোন বিপদ হলে এটা কানে দিয়ে কথা বলবে । চার্য দিবে নরমাল এয়ারবাটস এর মত করে । 

তৃষা হাসল । তারপর বলল, সত্যি সত্যিই তুমি দেখি নায়ক সাকিব খান হয়ে গেছ । 

অপু হাসল বটে তৃষা সেই হাসিতে একটা দুঃচিন্তার ছাপ ঠিকই দেখতে পেল। 

দেখতে দেখতে বোটটা একেবারে সামনে এসে হাজির হল । একটা ছোট ঘাট দেখা যাচ্ছে । তবে সেখানে কোন নৌকা বা বোট নেই । তার মানে চাইলেও এখান থেকে কেউ বাইরে যেতে পারবে না । অন্তত তাৎক্ষতিক ভাবে তো নয়ই ! বাইরে থেকে বোট আসবে তারপর । অবশ্য তৃষা ম্যাপে দেখেছে এখান থেকে বালনি ঘাট কাছেই । ট্রলারে আধা ঘন্টার মত পথ। সেখানে যাওয়া যাবে । 

তৃষা ঘাটের ঠিক কাছেই বড় লোহার গেটটা দেখতে পেল । সেখানে লেখা ‘নিরাময়’ ! একজন সাদা এপ্রোন পরা মানুষ দাঁড়িয়ে । হাসি মুখে ওদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে । বোটটা ঘাটে আসতেই তৃষার বাবা বের হয়ে এলেন । দীর্ঘ জার্নিতে বেশ খানিকটা ক্লান্ত । 

তৃষা আর অপু মিলে তৃষার বাবা আহসানুল হককে নামতে সাহায্য করল। সাদা এপ্রোন পরা লোকটা এগিয়ে এল । হাসি মুখে বলল, আপনাদের আসতে কষ্ট হয় নি তো?

-দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তি । এই যা !

-আমি ডাক্তার কবীর শেখ । এই ফেসিলিটি আমিই দেখা শোনা করি। আশা করি যে জন্য আপনারা এসেছেন সেটা পূরণ হবে । 

তৃষা লোকটাকে চিনতে পারল । ফোনে এই লোকটার সাথেই ওর কথা হয়েছিল । গেটের কাছে আসতেই কবীর শেখ অপুর দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার যাত্রা এই পর্যন্ত। রোগীকে আমি নিয়ে যাচ্ছি।

অপুর বুঝতে কষ্ট হল না যে অপুকে ভেতরে ঢুকতে মানা করছে। থাকতে দিবে না হয় বুঝা গেল । তাই বলে ঢুকতেও দিবে না । আচ্ছা বেয়াদব লোক দেখছি !

তৃষার দিকে তাকিয়ে অপু বলল, আমি তাহলে আসি । সাবধানে থেকো । 

তৃষা একটু হাসল তারপর বাবার সামনেই অপুর ঠোটে আলতো করে একটা চুমু খেল । বলল, তুমিও সাবধানে থেকো । আর আমাকে নিয়ে এতো চিন্তা করতে হবে না । আমরা ঠিক থাকব । 

তৃষা গেট দিয়ে প্রবেশ করার সময় দেখল তার বাবা খানিকটা বিরক্ত নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে । এভাবে চুমু খাওয়াটা তার পছন্দ হয় নি । যদিও তৃষার কাছে এটা খুবই স্বাভাবিক । তার জন্ম হয়েছে আমেরিকাতে । এ লেভেল পর্যন্ত সে সেখানেই ছিল । বাবার ইচ্ছে দেশে এসে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে । অপুও আগে সবার সামনে চুমু খাওয়াতে খুব অস্বস্তিবোধ করত । তৃষা অবশ্য এতে খুব একটা গা করত না । নিজের পছন্দের মানুষকে চুমু খাওয়ায় এতো লুকোচুরির কী আছে ! 

গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতে তৃষার মনে হল একেবারে অন্য একটা জগতে চলে এসেছে । চারিদিকটা যেন একটু বেশি নিরব হয়ে গেছে । যত সময় বাইরে ছিল একটা আলাদা আবহ ছিল কিন্তু এখানকার পরিবেশ একেবারে আলাদা । তৃষার কাছে বড় অদ্ভুত লাগল ব্যাপারটা । বড় গেট দিয়ে ঢুকতেই দুই তলা বিল্ডিং টা চোখে পড়ল । তবে কবীর শেখ তাদের সেদিকে নিয়ে গেল না । বড় বিল্ডিংয়ের পাশ দিয়ে যাওয়া একটা রাস্তা ধরে ঠিক পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়া হল । 

তৃষা আরেকটা বিল্ডিং দেখতে পেল সেখানে । তবে সেটা একতলা । এবং এই একতলা বিল্ডিং সামনেও একটা গেট রয়েছে । পুরো বিল্ডিংটা বেশ ভাল ভাবে আটকানো । চারিদিক লোকার দেয়াল দেওয়া । যেন কোন ভয়ংকর জন্তুকে ঠেকিয়ে দেওয়ার জন্য এটা তৈরি করা হয়েছে । 

গেট খুলে ভেতরে প্রবেশ করল ওরা । তারপর কবীর শেখ ওদের বিল্ডিংয়ের ভেতরে নিয়ে এল । তৃষা দেখল মোট তিনটা ঘর । একটা ঘরের দরজা খোলা । সে ঘরের ভেতরেই নিয়ে যাওয়া হল !

বেশ বড় একটা ঘর । শোয়ার জন্য একটা বড় বিছানা । একটা ছোট টি-টেবিল । একটা ছোট তাক রয়েছে । সেখানে কিছু বই পত্র । আর কিছুই নেই । 

তৃষা একটু অবাক না হয়ে পারল না । হাসপাতালের কেবিনের মত মোটেই মনে হচ্ছে না এটা । মনে হচ্ছে যেন কোন ইকো রিসোর্টের রুম । 

কবীর শেখ বলল, এখানে কোন ফ্যান নেই । দেখতে পাচ্ছেন । অবশ্য ফ্যানের দরকার পড়বে না । সন্ধ্যা ছয়টা থেকে এগারোটা পর্যান্ত জেনারেটর চলে । তখন আলো আসবে ।

তৃষার বাবাকে বিছানাতে শুইয়ে দিয়ে কবীর শেখ বলল, মিস তৃষা আপনি আমার সাথে আসুন !

তৃষা একটু অবাক হয়ে বলল, আমি এখানে থাকব না ?

-জ্বী না । রোগীর সাথে রাতে আপনি থাকবেন না । আপনার থাকার ঘর আলাদা !

-কেন এখানে কী সমস্যা?

-সমস্যা আছে । রোগীর সাথে কেউ থাকবে না ।

-কিন্তু …

-কোন কিন্তু নয় । এই নিয়ম কোন ভাবেই ভঙ্গ করা যাবে না । আপনি দিনের বেলা আপনার বাবার কাছে এসে দেখা করবেন । কিন্তু রাতের বেলা তাকে একাই থাকতে হবে । এবং যখন আমাদের ডাক্তার দ্বিন মোহাম্মাদ আসবেন তখন তিনি রোগীকে একাই দেখবেন । সেই সময়ে কেউ থাকবে না পাশে। 

তৃষা অবশ্য জানত এই কথা । হাসানের চিঠিতে সে এই কথা লিখেছিল । ডাক্তার দ্বীন মোহাম্মাদ । সে দিনে কখনও আসেন না । নাম দ্বীন অথচ দিনে আসেন না । 

শেষে তৃষা নিজের ব্যাগ হাত নিল । বাবাকে বিদায় জানিয়ে আবারও বের হয়ে গেল । বের হওয়ার আগে কবীর শেখ তৃষার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি এখানে শুয়ে বিশ্রাম নিন । চাইলে ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসতে পারেন । কিছু সময় পরেই আপনার খাবার চলে আসবে । চেষ্টা করবেন বাইরে না বের হতে । তবে কিছু দরকার হলে ঐ লাল সুইচটা টিপবেন । আমি চলে আসব ।

তৃষা বের হওয়ার সময় খেয়াল করল যে পাশের রুমেই একজন মানুষ রয়েছে । দরজাটা সামান্য ফাঁক হয়ে আছে এবং সে ফাঁক হয়ে থাকা স্থানে কেউ একজন ওদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

তৃষার জায়গা হল দুই তলার সামনের দিকে একটা ঘরে । এটাও বেশ চমৎকার একটা ঘর । বড় বিছানা । বড় জানালা । আসার সময়ই দেখতে পেল ওর ঠিক পাশেই একজন রয়েছে । মানে ওর মতই গেস্ট । যদিও হাসান জানিয়েছিল ও যখন ছিল তখন পুরো হাসপাতালে সে ছিল একা । এখানে অন্তত আরও একজন রোগী এবং একজন গেস্ট আছে । 

তৃষা মাথা থেকে দুঃচিন্তা দুর করার চেষ্টা করল । তার ভয়ের কোন কারণ নেই । তার কোন ক্ষতি হবে না । ব্যাগের ভেতর থেকে রিভালবারটা সে পরীক্ষা করে দেখল । পুরো লোড করা । অটোমেটিক । এছাড়া অপু রয়েছে আশে পাশেই । ওকে রক্ষা করতে ছুটে আসবে । কোন বিপদ হবে না আশা করি । নিজের মনকেই সে বুঝ দিতে লাগল । কিন্তু জানি তৃষার মন ক্যু ডেকেই চলেছে । মনে হচ্ছে যেন কোন ভয়ংকর বিপদে পড়তে যাচ্ছে সে ! এখানে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা হয়তো ঠিক হয় নি ।

প্রথম পর্ব

গল্প সরাসরি পেতে হোয়াটসএপ গ্রুপ বা টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন করুন

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 17

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

2 Comments on “জান্তব (পর্ব ০২)”

Comments are closed.