আপনার জীবন সঙ্গী কার মত?

oputanvir
4.8
(32)

মনে মনে খুব করে চাইছিলাম যেন লীনা তেমনটা না হয়। অবশ্য কয়েকদিন লীনার আচরণ আমার কাছে অন্য রকম মনে হচ্ছে। বিশেষ করে যেদিন ওকে ছেলে পক্ষ দেখতে এসেছিল সেদিন থেকেই লীনা খানিকটা বদলে গেছে। ছেলে নাকি জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার। দেখতেও নাকি বেশ সুদর্শন। ওর বাবার পছন্দ করা ছেলে। অবশ্য আমার নিজের কেন জানি মনে হচ্ছে ছেলেটাকে লীনারও পছন্দ হয়েছে।
লীনাই আমাকে আগে নক দিল । বলল, তাহলে এইবারও হয় নি?
আমি কোন কথা না বলে চুপ করে রইলাম। লীনা বলল, আমি অনেক দিন বাসায় আটকে রেখেছি। আর আমার পক্ষে আটকে রাখা সম্ভব না ।
আমি বললাম, আরেকবার চেষ্টা করব আমি।
-সেটা তুমি কর। কিন্তু আমি আর পারছি না। আমার পক্ষে আর সম্ভব না ।

লীনা আমাকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই লাইন কেটে দিল । আমি ফোনটা রেখে কিছু সময় চুপ করে বসে রইলাম । কিছু সময় মাথা নিচু করে বসে রইলাম । এমন কিছু যে হবে সেটা আমি আগে থেকেই আশংঙ্কা করেছিলাম । তবে এতো অল্প কথায় যে লীনা সব কিছু শেষ করে দিবে সেটা আমি ভাবি নি । আরও কিছু কথা তো বলতে পারত । কিছুটা মন খারাপের ভাব করে কিংবা গলার স্বর অন্য রকম করেই না হয় বলতে পারত । কিন্তু ওর কন্ঠস্বর শুনে আমার মনে হল যেন ও এমন কিছু বলার জন্য একটা সুযোগ খুজছিল কেবল ! সেটাই পেয়ে গেছে ও !
রাতে খাবার টেবিলে বাবা আমার দিকে গম্ভীর কন্ঠে বলল, এভাবে আর কত দিন ? এভাবে তোমাকে আমি বসে বসে খাওয়াবো আর কত দিন?
আমি কোন কথা না বলে চুপচাপ খেতে লাগলাম ।
নিলু বলল, এখনও তো সময় আছে । সবে তো মাত্র দুই বছর পার করল ।
-যার হয় না তার কখনই হয় না । তোমার বড় ভাইকে দেখে কিছু শেখ !
মাকে দেখলাম চুপচাপ খেয়ে যেতে । ভাইয়া আর ভাবীও কোন কথা বলল না । আমি যেন নেই এখানে । আমার থাকা না থাকাতে কারো কিছু যায় আসে না কেবল নিলু ছাড়া ! রাতে আমার ঘরে এসে নিলু বলল, মন খারাপ করিস না ভাইয়া । এবার মন দিয়ে পড় !
আমি উদাস জানালার দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছু সময় । তারপর বললাম, আমি ঠিক করে বাসা ছেড়ে দিব ।
-কী ? বাসা ছেড়ে দিবি মানে কী?
-দেখি কোথাও উঠব ভাবছি। আর টিউশনি করি তো । নিজের খরচ চালিয়ে নিতে পারব আমি ।
-তাই বলে নিজের বাসা ছেড়ে চলে যাবি?
-নিজের বাসা আর কই বল ! সবার আচরণ দেখে মনে হয় যেন আমি অন্য কারো বাসায় অনাগ্রহ হয়ে আছি । আমি কোন কালেই বাবা মায়ের প্রিয় ছেলে ছিলাম না । ভাইয়ার মত এতো ব্রিলিয়ান্ট তো আমি না !

আমি জানতাম যে আমার রেজাল্টের জন্য আরেকজন অপেক্ষা করে আছে । শুভদের বাসায় পড়াতে গিয়েই টের পেলাম যে ওদের বাসায় পরিবেশটা বেশ আনন্দের । উৎসব উৎসব একটা ভাব । কারণটা আমি সহজেই অনুমান করতে পারি । মিতু তাহলে বিসিএসটা হয়ে গেছে । প্রথম বিসিএসের ক্যাডার হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা বেশ চমৎকার । পড়ানো শুরুর একটু পরেই দেখতে পেলাম বেশ ভাল খাওয়া দাওয়া আসল । এবং সেটা মিতু নিজেই নিয়ে এল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার রেজাল্টের কথা তো বললেন না !
আমি কোন কথা না বলে একটু হাসলাম কেবল । তখনই দেখলাম মেয়েটার মুখ কালো হয়ে গেল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল, সরি !
আমি আবারও একটু হেসে বললাম, আরে ব্যাপার না । সামনের বার হবে, টেনশন নেই !
রাতে যখন বের হলাম শুভদের বাসা থেকে পেছনে দিকে তাকিয়ে দেখি মিতু আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এতো দূর থেকেও আমি ওর চোখে কষ্ট দেখতে পেলাম !

একটা সপ্তাহ পার হয়ে গেল দেখতে দেখতে । আমি একটা মেসবাড়িতে উঠে পড়েছি । বাসায় ঠিক মত বলিও নি । কেবল মাকে বললাম যে আমি কিছু অন্য খানে থাকব । সেখানে গিয়ে পড়াশোনা করব। দেখলাম যে তার কোন ভাবান্তর হল না । ভাল মন্দ কিছুই বলল না সে । পরের সপ্তাহ আমি পড়াতে গিয়েছি এমন সময় দেখলাম শুভদের বাসার পরিস্থিতি একটু আলাদা । অন্যদিন ওদের বাসার অবস্থা যেমন থাকে আজকে তেমন নয় ।
শুভকে পড়ানোর সময়ে ভয়ংকর তথ্যটা জানতে পারলাম । মিতু নাকি ওর বাবা মাকে পরিস্কার ভাবেই জানিয়ে দিয়েছে যে সে আমাকে বিয়ে করতে চায় । ওর বাবা প্রথমে বেশ রাগারাগি করেছিল তবে মিতু জেদের কাছে নাকি নতি স্বীকার করেছে !
মানে সে রাজি হয়েছে !
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । মিতু যে আমার প্রতি খানিকটা দুর্বল সেটা আমি আগে থেকেই জানতাম । তবে সেটা যে এই পর্যায়ে যাবে সেটা তো ভাবিই নি । শুভকে পড়ানোর মাঝখানেই দেখতে পেলাম মিতু ঘরে এসে উপস্থির হল । শুভর দিকে তাকিয়ে বলল, অন্য ঘরে যা !
-পড়ছি তো !
-একদিন কম পড়লে কিছু হবে । যা ভাগ !
শুভকে দেখলাম অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে গেল । আমি খানিকটা অস্বস্তি নিয়ে তাকালাম মিতুর দিকে । মিতু শুভ চেয়ারে বসতে বসতে বলল, আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই !
-তোমার মাথা ঠিক আছে ! তুমি একজন বিসিএস ক্যাডার হয়ে আমাকে বিয়ে করতে চাইছো । আমার মত বেকারকে !
-হ্যা । চাইছি । আপনার কিছু করতে হবে না । বাসায় বসে থাকবেন, বই পড়বেন, ঘুরবেন !
-আর ? তুমি চাকরি করবে?
-হ্যা !
-লোকে কী বলবে জানি না । আমার কাছে লোকের মতামত মূখ্য নয়! আপনি রাজি কিনা বলুন । না রাজি হলে আমি জোর করব না । আর কখনও আপনার সামনে আসব না । আর আমি জানি আপনার ঐ প্রেমিকা আপনাকে ছেড়ে নতুন কাউকে ধরেছে !
-কিভাবে জানো ?
-আমি সব জানি । এমন কি আপনি যা জানেন না তাও জানি । সে সম্ভবত কোন ছুতো খুজছিল আপনাকে ছাড়ার জন্য । আপনার রেজাল্ট সেই সুযোগ তাকে এনে দিয়েছে । কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন যে সে আরও মাস তিনেক আগে থেকেই ঐ ছেলের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে !
আমি কোন কথা বললাম না । এমন একটা ব্যাপার আমি নিজেও ধারণা করেছিলাম বটে । তবে এই মেয়েটা আমাকে পছন্দ করছে। এই পর্যায়ে পছন্দ করছে যে নিজের বাবা মায়ের সাথে যুদ্ধ পর্যন্ত করে তাদের রাজি করিয়ে ফেলেছে। এবং আমাকে বিয়ে করতে চাইছে । আমার এমন অবস্থা দেখেও । এটা কি আসলেই সম্ভব? এমন মেয়ে কি আসলেই আছে?
মিতু আমার চোখের দিকে তাকিয়েই কথাটা বলল আবার ।
-যদি আপনি রাজি না হোউন তাহলে আর কোন দিন আপনার সামনে আসব না । কোন দিন না !
আমি প্রথমেই ভেবেছিলাম যে মানা করে দেব । কিন্তু মিতুর দিকে তাকিয়ে কেন জানি একটা কথাও বলতে পারলাম না । আমার তাকিয়ে থাকা দেখেই মিতু কিভাবে যেন বুঝে গেল যে আমি রাজি হয়ে গেছি । সে একটু লজ্জা পেয়ে গেল এবং এবং তারপরই ঘর ছেড়ে একেবারে দৌড়ে বের হয়ে গেল।

ঐদিন রাতে আমাকে রাতের খাবার খেয়েই আসতে হল । মিতুর বাবা আমার সম্পর্কে প্রায় সব কিছুই জানতেন । অনেক দিন থেকেই আমি শুভকে পড়াই । আমাকে সে ভাল ছেলে হিসাবেই জানেন । কেবল পড়াশোনা শেষ করে একটা চাকরির আশায় রয়েছি ।
খাওয়ার এক পর্যায়ে তিনি বললেন, দেখ সব মেয়ের বাবাই চায় একজন প্রতিষ্ঠিত ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে । আমারও তাই চাই । তবে ছেলে মেয়েদের খুশির ব্যাপারটাও আমি দেখতে চাই। তোমার সাথে ওকে বিয়ে দিতে আমার কোন আপত্তি নেই। তবে আমি চাই তুমি কিছু কর । একেবারে যে সরকারি চাকরিই হতে হবে সেটাও না । তবে কিছু একটা কর । আমার বেশ কিছু বন্ধু বান্ধব আছে । ওদেরকে আমি তোমার ব্যাপারে বলব । আশা করি কিছু একটা জোগার করে দিতে পারবে । এতে নিশ্চয়ই আপত্তি নেই তোমার ?
আমি চুপ চাপ খেয়ে গেলাম। হ্যা না কিছুই বললাম না । তবে আমার ভাব দেখিয়ে তাদের এটা মনে হল যে আমার কোন আপত্তি নেই । তারা এতেই খুশি ।

হঠাৎ করেই আমার জীবনটা অন্য এক ট্রাকে লাফ দিয়ে অন্য ট্রাকে চলে এল । আগে লীনার সাথে প্রেম ছিল সেটা মিতুর সাথে শুরু হল আর অন্য দিকে বাসা থেকে আমার মেস জীবন শুরু হল । কেন জানি মনে হল আগের থেকে এই জীবনটাই আমার ভাল লাগতে শুরু করল । তবে তখনই আমার জীবনে আরেকটা বড় পরিবর্তন এল । আমি সেদিন গিয়েছি সীমান্তস্কোয়ারে । সেখানেই লীনাকে দেখতে পেলাম । ও সম্ভবত ওর হবু স্বামীকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে । আমার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল । এমন একটা ভাব করল যেন আমাকে চেনেই না । একেবারে না চেনার ভাব করেই চলে গেল ।
আমার নিজের ভেতরে কী হল আমি জানি না । তবে একটা রাগ অনুভব করলাম । আমি তখনই মিতুকে ফোন দিলাম । ওর সাথে আমার এখনই দেখা করা চাই । মিতু বাসাতেই ছিল । বলল যে সে আসছে ।
মিতুর আসতে আসতে ঘন্টা খানেক সময় লেগে গেল । এই পুরো সময়ে আমি মনের ভেতরে আরও ভাল করে সিন্ধান্ত নিলাম যে আমাকে কী করতে হবে ! আমি কী করতে চাই ।
মিতু আসতেই আমি ওকে বলল, আমি তোমাকে আজকেই বিয়ে করতে চাই !
আমার মুখ থেকে শুনে মিতু প্রথমে একটু অবাক হল বটে । তবে একটু হেসে বলল, কী ব্যাপার এতো উতলা হলে কেন ?
-কারণ আছে । চল এখনই বিয়ে করে ফেলি !
-আরে বাবা যদি একা একাই বিয়ে করব তাহলে বাবাকে রাজি করালাম কেন শুনি? চল বাসায় চল । আর হঠাৎ করে আমাকে এভাবে বিয়ে করতে চাইছো কেন শুনি ? কী ……
দেখলাম মিতু মাঝ পথেই থেমে গেল । আমি বুঝতে পারলাম যে মিতু লীনাকে দেখতে পেয়েছে । কিছু সময় সেদিকে তাকিয়ে থেকে মিতু বলল, বুঝলাম কারণ ।
তারপর বেশ খানিকটা সময় ধরে হাসল । হাসি থামিয়ে বলল, এতো ছেলে মানুষ তুমি !
আমি বললাম, তুমি যা ভাব তাই । আমি ওর আগেই তোমাকে বিয়ে করতে চাই ।
-আচ্ছা করবে । সেটা সমস্যা না । এখন আসো তোমার প্রাক্তনকে কিছুটা জ্বালানো যাক ।
এই বলে মিতু আমার আমাকে নিয়ে উঠে দাড়াল । তারপর আমার হাত ধরল । এরপর আমরা হাটতে শুরু করলাম। মিতু এমন ভাবে আমার গা ঘেষে । এতো ঘনিষ্ঠ ভাবে স্বামী স্ত্রীরাও শপিং মলে হাটাহাটি করে না । দেখলাম অনেকেই আমাদের দিকে তাকাচ্ছিল । আমার খানিকটা অস্বস্তি যে লাগছিল না সেটা বলব না । তবে সেই সাথে ভালও লাগছিল ।

এই মেয়েটা আমাকে এতো পছন্দ কেন করে আমি জানি না । আসলেই কি কোন কারণ আছে নাকি কোন কারণ ছাড়াই?
অনেকের মত এক সময়ে দেখতে পেলাম লীনাও আমাদের দেখতে পেল । এবং আমি যেটা আশা করি নি সেটাই দেখলাম ওর চোখে । প্রথমবার আমাকে দেখে যেমন একটা অচেনা ভাব ছিল এখন সেখানে অন্য রকম একটা চাহনি ! বিস্ময়ের সাথে সাথে আরও অন্য কিছু । এই অন্য কিছুটা কী?
মিতু একটু হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, দেখেছো তোমার প্রাক্তন কী জ্বলা জলছে!
-জ্বলছে?
-অবশ্যই ! কোন মেয়েই এটা সহ্য করতে পারবে না যে তার প্রাক্তন অন্য মেয়ের সাথে সুখে আছে । এটা সম্ভবই না ।
-সত্যিই নাকি?
-শতভাগ ! আমাদের মনভাব কী জানো? সেটা হচ্ছে আমরা নিজেরা অন্য ছেলের সাথে বিয়ে করে সুখী হতে পারি কিন্তু এই আমরাই দেখি আমাদের প্রাক্তন অন্য কোন মেয়ের সাথে সুখ রয়েছে সেটা আমাদের সহ্য হয় না । আমরা আশা করি যে আমাদের কে হারিয়ে ওরা দেবদাশ হয়ে ঘুরে বেড়াবে । কষ্ট পাবে । দেখো আজকেই তোমার প্রাক্তন তোমাকে ফোন দিবে ।
আমরা আরো কিছু সময় লীনাকে জ্বালিয়ে তারপর বাসার দিকে রওয়ানা দিলাম । রিক্সায় মিতু বলল, এখনও বিয়ে করতে চাও ! আজই?
-হুম আজই । সেই সাথে একটা কথাও তোমাকে বলা উচিৎ !
-কী কথা?
-সেটা চল তোমার বাবার সামনেই বলি । তুমি না বললে বাবাকে রাজি করিয়েছ । আশা করি আমার এই কথা শুনলে সেও রাজি হবে !

মিতুর বাবা একটু অবাকই হলেন যখন আমি তাকে বললাম যে মিতুকে আমি আজ কালের ভেতরেই বিয়ে করতে চাই । মিতুর বাবা বললেন, তাহলে তুমি কালই আমার বন্ধুর সাথে দেখা কর । কী বল ?
আমি হেসে বললাম, চাকরির জন্য ?
-হ্যা । একেবারে কিছু না করে বিয়ে করা ঠিক হবে?
আমি মিতুর দিকে তাকিয়ে বললাম, চাকরি নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না । সেটা আমার কাছে অনেক আগেই হয়েছে !
মিতুর দিকে তাকিয়ে দেখি সেও খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে । আমি দুজনের দিকে তাকিয়ে বললাম, আঙ্কেল আমাদের দেশে পুরুষ মানুষের ভাল একটা চাকরি বা আয় রোজগার না কোন দাম নেই । নিজের পরিবারের কাছেই সে বোঝা হয় । যেমনটা আমি হয়েছিলাম । আমাদেরকে কেউ নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসে না । কিছু দেওয়ার বিনিময়েই কেবল ভালবাসে !
মিতুর বাবা একটু হাসলেন । তারপর বললেন আমাদের পুরুষদের জীবন এমনই বাবা । এটা নিয়ে মন খারাপ কর না !
-কিন্তু দেখেন আপনার মেয়ে আমাকে তখন আপন করে নিতে চেয়েছে যখন আমার কিছু নেই । সদ্য আমি ফেইল করেছি জেনেও আমাকে সে আপন করে নিয়েছে । আপনারাও তাই । তবে একটা কথা আমি আপনাদের কাছ থেকে লুকিয়েছি । সবার কাছ থেকেই লুকিয়েছি। কারণ তেমনটা যদি না করতাম তাহলে হয়তো আজকে এখানে আমি দাড়িয়েই থাকতাম না । মিতুর সাথে আমার পরিচয় হত না ।
আমি কিছু সময় থামলাম । তারপর বললাম, আমি এইবার বিসিএসে ফেইল করি নি । পাশ করেছি । এই দেখুন আমার সিক্সটি এইট পজিশন এসেছে !
এই বলে আমি মেসেজটা মিতুকে দেখালাম । মিতু খানিকটা বিস্ময়ের সাথে তাকিয়ে রইল সেদিকে ।
আমি বললাম যে আমার ব্যর্থ অবস্থায় আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল সে আমার সফলার ভাগিদার হতে পারে না । আমার সফলার ভাগিদার কেবল সেই হতে পারে যে আমার ব্যর্থতায় পাশে থাকে ! আমি মিতুকে আজই বিয়ে করতে চাই । আপনি প্লিজ মানা করবেন না । প্লিজ !

রাত নয়টার ভেতরেই আমাদের বিয়ে হয়ে গেল । বাবা মা কে ফোন করে আমার রেজাল্টের কথা জানালাম। তারপর আমার বিয়ের কথাটাও । নিলুকে সবার আগেই আমি বলেছিলাম । তবে ওকে একেবারে গোপন রাখতে বলেছিলাম কথাটা ।
এরপর মজার ব্যাপার ঘটনা । আমি আমার বিসিএস পাশের কথাটা ফেসবুকে পোস্ট করলাম । শুভ কামনার বন্যা বয়ে গেল । আমি জানি এটা লীনার কাছে ঠিক ঠিক পৌছে যাবে । এবং সে আমার কাছে ফিরে আসতে চাইবেই । তবে এতো জলদি হবে ভাবি নি । দেখলাম রাত বারোটার দিকে লীনার ফোন এসে হাজির ।
মিতু আমার দিকে তাকিয়ে বলল, এখনও নম্বর সেভ করা দেখছি !
আমি হাসলাম । ফোনটা রিসিভ করে লাউড স্পিকারে দিলাম ।
-তুমি আমার সাথে এমন একটা কাজ করতে পারলে?
-কেমন কাজ?
-তুমি আমাকে কেন বললে না? তুমি জানো আমি কতটা ট্রাই করেছি বাবাকে আটকে রাখতে । তোমার এই খবরটা বাবাকে বললে সে আর মানা করত না । যাই হোক এখনও দেরি হয়ে যাই নি । বাবা রাজি করিয়ে ফেলব । তুমি কোন চিন্তা কর না ।
-তাহলে আজকে যার সাথে ঘুরছিলে ঐ ব্যাংকারের কী হবে?
-ওটা নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না । আমি সামলে নিব !
দেখলাম মিতু খুব কষ্টে নিজের হাসি থামিয়ে রেখেছে । এক সময়ে আর পারল না ।
ফোনের ওপাশ থেকে লীনা বলল, কে হাসছে !
আমার হয়ে মিতুর উত্তর দিয়ে দিল । বলল, আজকে যাকে দেখলেন আমি সেই !
-নাফিস এটা কে?
মিতু বলল, আমি নাফিসের স্ত্রী । আজকেই আমাদের বিয়ে হয়েছে । আপনার কাছ থেকে নাফিস হাত ছাড়া হয়ে গেছে । আর ভুল করেও আমার স্বামীকে ফোন দিবেন না । আমি দেখতে হাসি খুশি হলেও আমার নিজের জিনিসের ব্যাপারে আমি খুব হিংসুক । কেউ আমার স্বামীর দিকে হাত বাড়ালে তার হাত একেবারে ভেঙ্গে ফেলব ।
এই বলে মিতু ফোন কেটে দিল । আমি ওর দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি দেখি আসলেই ডেঞ্জারাস মেয়ে !
-তা একটু আছিই বলা যায় !
এই বলে সে আমার দিকে আরেকটু এগিয়ে এল ।

আমি যদি ঐদিন রেজাল্টের কথাটা সাথে সাথেই প্রকাশ করে দিতাম তাহলে আজকে আমার অবস্থান একেবারে আলাদা হত । মিতুর সাথে এখানে এভাবে আমার বিয়ে হত না । ওর কাছাকাছি আসা হত না । লীনাই আমার বউ থাকত । আমি কেবল কৌতুহলবসতই এটা দেখতে চেয়েছিলাম যে একজন ব্যর্থ মানুষের হাত ধরার মত সাহস লীনার আছে কিনা ! লীনার ছিল না । ওকে হয়তো আমি দোষ দেই না । পুরো পৃথিবীটাই এমন । এখানে সবাই সফল মানুষের হাত ধরতে চায় ।
কিন্তু এখানে মিতুর মত মানুষও আছে যারা সব কিছুর বাইরে গিয়ে কেবল নিজের ভালবাসার নিজের পছন্দের মানুষকেই বেছে নেয় !
আপনার জীবন ভালবাসার মানুষটি কেমন ?
লীনার মত নাকি মিতুর মত?

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 32

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →