জীবন এগিয়ে চলে

oputanvir
4.7
(47)

মিমির মা রাবেয়া খাতুন রাগত চোখে মেয়ের দিকে তাকালো । তারপর কঠিন কন্ঠে বলল, ফেল বলছি । এখনই ফেল ওটা !
মিমি মায়ের কথা বিন্দু মাত্র পাত্তা না দিয়ে বেড়ালের বাচ্চাটাকে আদর করতে করতে বলল, ফেলবো না ।
-তাহলে কিন্তু গাড়িতে উঠতে দিবো না ।
-উঠলাম না ।

রাবেয়া খাতুনের মনেই হচ্ছিলো যে মিমি এমন কথাই বলবে । তিনি খানিকটা সময় অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো মিমির দিকে । মিমি অবশ্য তার দিকে তাকিয়ে নেই । সে বেড়ালের বাচ্চাটাকে আদর করতে করতে রাস্তার পাশে চলে গেল । বৃষ্টি তখন আরো জোরে নামতে শুরু করেছে । মিমি প্রায় ভিজে গেছে । বাধ্য হয়ে রাবেয়া খাতুন মিমিকে গাড়িতে তুলে নিলেন । বেড়ালকে নিয়ে তারা বাড়ির দিকে এগিয়ে চলল । পুরো গাড়িতে রাবেয়া মিমিকে বকাঝকা করতে করতে গেলেন । মিমির অবশ্য সেদিকে কোন খেয়ালই নেই । সে ছোট বেড়ালের বাচ্চাটাকে আদর করতে ব্যস্ত। নিজের রুমাল দিয়ে সেটার শরীর মোছার দিকেই তার মনযোগ বেশি । তার মা তাকে কী বলল না বলল সেদিকে কোন খেয়াল নেই ।

-তুই কি বাচ্চা ? এভাবে রাস্তা থেকে আর কত বেড়াল তুলে আনবি ? আমাদের বাসায় কয়টা বেড়াল আছে হিসাব আছে ?
-মা এতো চিন্তা করো না তো । আমাদের বাসায় মাত্র চারটা বেড়াল এখন । সামনের সপ্তাহ দুটো বাচ্চা এডোপশনে চলে যাবে । দেখবে এটাও ঠিক চলে যাবে ।
-না যাওয়া পর্যন্ত যে ঝামেলা পাকাবে এটা সেটা কে দেখবে?
-তুমি যেন খুব দেখো ! আমিই তো দেখা শোনা করি ।

রাবেয়া খাতুন কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু বলতে পারলো না । কারণ মিমি মিথ্যা বলে নি । বেড়ালের যাবতীয় দেখা শোনা মিমি নিজেই করে । এমন কি বেড়াল বাথরুম করলেও সেটাও সে-ই পরিস্কার করে । মিমির এই পশু পাখিদের প্রতি ভালোবাসা দেখে রাবেয়া খাতুন উপরে উপরে রাগ করলেও ভেতরে ভেতরে ভেতরে মেয়ের জন্য তার খুব ভাল লাগে । পুরো এলাকার মানুষ মিমির এই স্বভাবের কথা জানে । মেয়েটার মনে এমন মায়া আর নিষ্পাপ সে । তবে এরই সাথে মেয়েটাকে নিয়ে তিনি চিন্তায়ও থাকেন । মেয়েটা দিন দিন বড় হচ্ছে । এমন নরম মনের মানুষেরাই জীবনে বেশি কষ্ট পায়। মিমির জীবনে কী আছে সেটা কেউ বলতে পারে না । তবে ওরা দুজনের কেউই জানে না যে এই আজকের ঘটনার ফলেই মিমির জীবনটা বদলে যেতে শুরু করেছে ।

দুই

আতিকুর রহমান ঠিক বুঝতে পারছেন না সামনে বসা মানুষ তার কাছে কী চায় ! যখন থেকে তিনি সামনে বসা মানুষটার পরিচয় জানতে পেরেছেন তখন থেকেই খানিকটা অস্বস্তিতে পড়েছেন । এতো বড় মানুষ তার কাছে নিজে এসেছে সেটা ভাবতেই অবাক লাগছে ।

আরমান চৌধুরীকে চেনে না খুব কম মানুষই রয়েছে । এমন কোন ব্যবসা নেই যেখানে আরমান চৌধুরীর ব্যবসা নেই । সব স্থানেই তার রাজত্ব আর সেই মানুষ কিনা আতিকুর রহমানের মত একজন সাধারণ সরকারি অফিসের অফিসে এসে হাজির হয়েছেন । এটা হজম করতে খানিকটা কষ্ট হচ্ছে আতিকুর রহমানের !

আরমান চৌধুরী সরাসরি আতিকুর রহমানের দিকে তাকালেন । তারপর বলল, আমি আপনার কাছে একটা জরুরী বিষয় নিয়ে কথা বলতে এসেছি ।
বয়সে আরমান চৌধুরী অনেক ছোট হবে তার । তারপরেও আতিকুর রহমান বললেন, জ্বী বলুন !
-দেখুন আমি আসলে একটা প্রস্তাব দিতে এসেছি ।
-প্রস্তাব !
-জ্বী ! আমি আপনার মেয়ে আফসানা মিমিকে বিয়ে করতে চাই । এবং যত দ্রুত সম্ভব । আমি খোজ নিয়েই এসেছি । আমি জানি আপনার মেয়ে কোন ছেলের সাথে প্রেম ঘটিত কোন সম্পর্কে জড়িত নয় । এবং আপনারাও আপনার মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য কোন ছেলের খোজ করছেন না । সুতরাং আমার সাথে তার বিয়ে হতে কোন সমস্যা নেই ।

একবারে এতো গুলো কথা বলে আরমান চৌধুরী থামলো । আতিকুর রহমান তীব্র বিস্ময় নিয়ে কিছু সময় আরমান চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে রইলো । আসলে কেউ যে এভাবে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারে সেটা তার ধারণার বাইরে ছিল । আর সব থেকে বড় কথা যে আরমান চৌধুরীর মত কেউ তার মেয়েকে বিয়ে করতে চাইতে পারে সেটাও তার ধারণার বাইরে ছিল ।
-আমি ……
-আমি কেবল আপনাকে প্রস্তব দিলাম । রাজি হওয়া বা না হওয়া আপনার ব্যাপার । তবে একটা কথা আমি আপনাকে বলতে চাই যে আপনার মেয়েকে আমি বিয়ে করেই ছাড়বো । মানে আমি আমার ক্ষমতা কখনো অবৈধ ভাবে কোথাও ব্যবহার করি নি । তবে এই ক্ষেত্রে আমি করবো । দরকার হলে তাকে তুলে নিয়ে গিয়েই বিয়ে করবো । এটা জেনে রাখুন ।

আরমান চৌধুরী ঠিক যেভাবে এসেছিলো তেমন ভাবেই আবার বিদায় নিয়ে চলে গেল । আতিকুর রহমান কেবল কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে বসে রইলেন নিজের চেয়ারে । ব্যাপারটা কিছুতেই তার মাথায় ঢুকলো না। তিনি কিছুতেই ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে পারছেন না।


মিমির মিয়ে হয়ে গেল । মিমি কেবল অবাক হয়ে দেখলো কিভাবে আর কত দ্রুত তার বাবা মা তাকে এক বড়লোক ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিলো । তার বিন্দু মাত্র আপত্তি শুনলো না । মিমি কিছুতেই বিয়ে করতে চাইছিলো না কিন্তু নিজেকে কোন ভাবেই রক্ষা করতে সে পারলো না ।

বাসররাতে বসে সে অপেক্ষা করতে লাগলো তার স্বামীর জন্য । সে শুনেছে গুনে মানে সব দিক দিয়ে তার স্বামী আরমান চৌধুরী সবার সেরা । দেখতে শুনতে ভাল আর প্রচুর টাকা পয়সার মালিক । আমাদের দেশী বাবা মায়ের ভেতরে এই লক্ষ্যণটা খুব ভাল পরিমানেই আছে যে যদি ছেলে অনেক টাকা পয়সার মানুষ হয় তাহলে সেই হবে সব থেকে যোগ্য ছেলে তার মেয়ের জন্য । তবে এই ক্ষেত্রে আরো একটা ব্যাপার মিমির কানে এসেছে । আরমান চৌধুরী সরাসরি তার বাবাকে হুমকি দিয়েছে যদি বিয়ে না দিতে চায় তাহলে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে ।
মিমির কোন ইচ্ছে ছিল না এই বিয়েতে । এমন না যে তার অন্য কোথাও পছন্দ রয়েছে কিংবা সে পড়াশোনার মাঝে এখন বিয়ে করবে না । মিমির বিয়ে না করতে চাওয়ার পেছনে অন্য একটা কারণ রয়েছে । এমন একটা কারণ যেটা হয়তো কেউ বিশ্বাসই করবে না । আর তার বিয়ে করা স্বামী তো এই ব্যাপারে মানবেই না । মিমি শুনেছে বাসর রাতেই কেউ কেউ কাজটা করে ফেলে । কিন্তু মিমির পক্ষে কি সেটা করা সম্ভব ?
ও হয়তো মরেই যাবে !!
মিমি আর ভাবতেই পারছে না ব্যাপারটা !

একটু পরেই আরমান ঘরের ভেতরে ঢুকলো । বসলো খাতের এক পাশে । তারপর মিমির দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার বেড়াল গুলোর কী হয়েছে ?

মিমি একটু অবাক হয়েই তাকালো আরমানের দিকে । এমন একটা প্রশ্ন যে আরমান করতে পারে সেটা মিমির মাথাতে আসে নি । মুখ তুলে তাকিয়ে বলল, মানে ?
-মানে তোমার যে বেড়াল আছে বাসায় ওগুলো কী হবে এখন ?
-চেষ্টায় আছি এডোপশনে দিয়ে দেওয়ার । যতদিন না হচ্ছে আম্মু দেখা শোনা করবে ।
-চাইলে এখানে এনে রাখতে পারো । কোন সমস্যা নেই । আমি ছাদে আলাদা ভাবে ব্যবস্থা করে দিবো ।

মিমি অবাক হয়েই যাচ্ছে আরমানের আচরনে । কিছুতেই বুঝতে পারছে না এই মানুষটা হঠাৎ করে ওর সাথে এমন আচরণ কেন করছে ! মিমি বলল, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
-বল ?
-আপনি আমাকে কেন বিয়ে করলেন? আমি শুনেছি যে আপনি আবার বাবাকে সরাসরি হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন !
-হুমকি !!

আরমান হেসে ফেলল । বলল, তোমার বাবা আসলে বুঝতে ভুল করেছেন । আমি তোমাকে কেবল বিয়ে করতে চেয়েছি ।
-কেন? মানে এতো মেয়ে থাকতে আমিই কেন ! এমন না যে আমরা প্রেম করছি কিংবা আমি চোখ ধাধানো সুন্দরী । তাহলে কেন বিয়ে করতে এতো উতলা হলেন?

আরমান চট করেই উত্তর দিতে পারলো না । এতো উলতা কেন হল সে ! সে নিজেও জানে ! সেদিন বৃষ্টিতে মিমিকে ওভাবে বেড়ালের বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নেওয়ার দৃশ্যটা সে কিছুতেই চোখের সামনে থেকে সরাতে পারে নি ।

মিমিকে কিছুই বলল না সে । কেবল মুগ্ধ চোখে মিমির দিকে তাকিয়ে রইলো । এই মেয়েটাকে সে আপন করেই পেয়েছে । জীবনে কোন সিদ্ধান্তই সে হুট করে নেয় নি । ভেবে চিন্তে তারপর সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে । কেবল এই একটা সিদ্ধান্তই সে নিয়েছে ।

আরো বেশ কিছু কথা বার্তা হল ওদের ভেতরে । একটা সময়ে মিমির ভয় অনেকটা কেটে গেল । তার মনে যে ভয়টা ছিল সেটা কেটে যেতেই মিমির মনে হল যে তার স্বামীকে কথাটা বলা দরকার । হয়তো আজকে রাতেই আরমান ওর সাথে ঘনিষ্ট হতে চাইবে । যা মিমির পক্ষে মেনে নেওয়া কষ্টকর হবে ।

মিমি বলল, আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই নি ।
-আমি জানি । এভাবে জোর করলে যে কারো পক্ষেই বিয়েতে রাজি হওয়াটা একটু কষ্টের !
-না ঐ কারণে না । আমার কোন ভালবাসার মানুষ ছিল না । বা আমি যে প্রতিষ্ঠিত না হয়ে বিয়ে করবো না এমন পনও করি নি ।
-তাহলে?
-আমি আসলে কেবল আপনাকে না কাউকেই বিয়ে করতে চাই না ।
-কেন?

মিমি এবার তাকালো আরমানের দিকে । মনে হল যে এখনই কথাটা বলে দেওয়া দরকার । যদি এটা জানার পরে আরমান ওকে ডিভোর্স দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাতেও মিমির কোন আপত্তি নেই । বরং সেটাই ওর জন্য ভাল ।
মিমি বলল, আমি এসেক্সুয়্যাল ! আমার সেক্সের কোন আগ্রহ নেই । বিন্দু মাত্র আকর্ষণ অনুভব করতে পারি না আমি। আপনার প্রতি আমি হয়তো অন্য ভাবে আকর্ষণ অনুভব করবো কিন্তু শারীরিক ভাবে কোন কখনই আকর্ষণ অনুভব করবো না । সামনে যদি আমার সাথে আপনি কিছু করতে চান, এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার কিন্তু আপনাকে তা জোর করে করতে হবে !

কথা গুলো এক নাগারে বলে মিমি চুপ করে রইলো । আরমানও কোন কথা বলল না । বেশ কিছু সময় নিরবতা পালন করার পরে আরমান বলল, আচ্ছা আজকে ক্লান্ত অনেক । তুমি শুয়ে পড় ।

এই বলে আরমান আর কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল । মিমির কেন জানি কান্না এল খুব । এমনটা যে হবে সেটা মিমি জানতো । তবে এটাই ভাল হয়েছে । যদি আরমান ওর উপর জোর খাটাতো মিমির কিছু করারও ছিল না ।

রাতে বালিশ চেপে যখন মিমি শুয়ে পড়লো তখন ওর কেন জানি মনে হল যে এমনটা না হলেও পারতো ! সেই ছোট বেলাতে যদি ঐ ঘটনা না ঘটতো তাহলে আজকে এমন একটা ঘটনার উদ্ভব হত ! মিমি জানে না।

সকালে মিমির ঘুম ভাঙ্গলো বেশ বেলা করেই । অবশ্য রাতে দেরি করে ঘুমালে বেলা করে ঘুম তো ভাঙ্গবেই । ঘুম ভেঙ্গে কিছু সময় সে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর যখন উঠলো । বিনাছার পাশে ছোট বক্স টেবিলের উপরে ওর মোবাইলটা রাখা । মোবাইলটা নিতে গিয়েই দেখলো সেটার নিচে একটা কাগজ চাপা দেওয়া । কৌতুহল নিয়ে সে কাগজটা তুলল । গোটা গোটা অক্ষরে সেটা কয়েকটা লাইন লেখা ।

মিমি, আমি তোমার ব্যাপারটা বুঝতে পারছি । তবে এটা কখনই ভেবো না যে আমি কখনো তোমার সাথে জোর জবরদস্তি করে কিছু করবো ।কেবল যে শারীরিক দিকটা হবে সম্পর্কের ভিত্তি তেমন তো নয় । মানসিক ভাবে তো আমরা একে অন্যের কাছে আসতে পারি ! একবার চেষ্টা করে কি দেখবে? যদি না হয় তাহলে আমরা না হয় ভিন্ন পথ দেখবো । তবে একবার চেষ্টা করে কি দেখবে প্লিজ !!

মিমি চিঠিটা পড়ে কিছু সময় চুপ করে বসে রইলো । আরমান চৌধুরী ওকে কেবল অবাকই করে যাচ্ছে ।

মিমি আর আরমানের বিবাহিত জীবন শুরু হল । মিমির সাথে আগেই আলোচনা করে নিলো সব যাতে করে কোন প্রকার অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি না হয় ।

একদিন দুইদিন করে ওদের বছর খানেক পার করে দিল পাশপাশি । এর মাঝে আরমান একবারও ওর সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করে নি । এছাড়া ওরা এক সাথে ঘুরেছে বাইরে খেতে গেছে । পাশে শুয়েছেও । তবে দুরত্ব সব সময়ই ছিল । মিমিও সব সময় চেষ্টা করতো ভাল স্ত্রী হওয়ার । তবে একটা অপরাধবোধ ওর মাঝে সব সময় রয়েই যেত ।

একদিন আর না থাকতে পেরে কথাটা সে আরমানকে বলেই ফেলল । ওরা রাতের খাওয়া শেষ করে তখন এক সাথে টিভি দেখতে বসেছিলো । যদিও টিভি দেখা কোন অযুহাত না । একসাথে বসে গল্প করাটাই আসল উদ্দেশ্য ছিল । বিয়ের পরে আরমান কাজ কর্মের পরিমান কমিয়ে দিয়েছে অনেক । মিমির সাথে অনেক সময় কাটায় ।

-একটা কথা বলব বলব ভাবছিলাম !
-বলে ফেল । এতো ভাবার কী আছে?
-আমার মনে হয় আমি তোমার সাথে অন্যায় করছি ।
-কী অন্যায় করছো?
-তুমি জানো আমি কিসের কথা বলছি !

আরমান কিছু সময় তাকিয়ে রইলো মিমির দিকে । তারপর বলল, আমি কি কিছু বলেছি?
-বলতে কেন হবে? আমি কি বুঝতে পারি না ! এটা ঠিক হচ্ছে না ।
-তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না । এই যে তোমার পাশে বসে আছি গল্প করছি, চাইলেই হাত ধরা যাচ্ছে মাঝে মাঝে তোমাকে চুমুও খেতে পারছি । এটা অনেক !
-না এটা যথেষ্ঠ না ।
-ওকে বুঝলাম ! তোমার কি পরামর্শ বল শুনি?

মিমি চুপ করে রইলো কিছু সময় । তারপর বলল, আমি চাই তুমি ফোর্স কর !
-আমি এটা কখনই করবো না ।
-প্লিজ ।
-তাহলে আমি আর তোমার সাথে থাকবো না ।

আরমান বুঝতে পারলো যে মিমি একদম সিরিয়াস হয়েই কথাটা বলেছে । সে মিমির আরো একটু কাছে এগিয়ে এল । তারপর কপালে একটা ছোট চুমু খেয়ে বলল, আমার দিকে তাকিয়ে দেখো তো তোমার কি মনে হচ্ছে ? মনে হচ্ছে কি আমি কোন অভিযোগ করছি?

মিমি তাকালো একভাবে । এই এক বছরের আরমানের দিকে তাকিয়ে মিমির এই মনভাবটা ঠিকই বুঝতে পারে । খুব ভাল ভাবেই সে বুঝতে পারে । তবুও ওর নিজের কাছে খারাপ লাগে । খুব বেশি খারাপ লাগে ।

আজকে মিমির কী মনে হল সে আরমানকে সত্য কথাটা বলার সিদ্ধান্ত নিল । মিমি বলল, তোমাকে একটা কথা বলতে চাই আমি!
-বল । তুমি জানো আমি সব সময় তোমার কথা শুনতে চাই ।
-এই এসেক্সুয়্যালিটির ব্যাপারটা অনেকের ক্ষেত্রেই জেনেটিক ব্যাপার হতে পারে । তবে আমার মনে হয় এটা জন্মগত নয় ।
আরমান খানিকটা কৌতুহল নিয়ে তাকালো মিমির দিকে । মিমি বলল, আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি তখন আমি একটা ভয়ংকর দৃশ্য দেখেছিলাম ।
আরমানও এবারো কোন কথা বলল না । মিমি বলল, সেদিন আমি স্কুল থেকে একটু আগে আগেই ফিরে এসেছি । আমার মা একই স্কুলের শিক্ষিকা ছিল । আমি মায়ের সাথেই বাসায় ফিরতাম । তবে সেদিন বাবা বাসায় ছিল বলে আমার মা দপ্তরিকে দিয়ে আমাকে বাসায় পাঠিয়ে দিল । দপ্তরি আঙ্কেল আমাকে বাসার গেটের সামনে নামিয়ে দিয়ে আবার ফিরে গেল । আমি … আমি যখন ঘরের দরজায় কড়া নাড়তে যাবো তখনই আমি বুঝতে পারলাম যে ঘরের ভেতরে অস্বাভাবিক কিছু হচ্ছে । সামনের দরজা দিয়ে না ঢুকে আমি পেছনের দরজা দিয়ে ভেতরে উকি দিলাম । ওটা বেশির ভাগ সময়ে খোলাই থাকে । আমি যখন ভেতরে ঢুকলাম তখন …..
মিমির গলা যেন ধরে এল । আরমান হঠাৎ করেই বুঝতে পারলো যে মিমি কী বলতে যাচ্ছে । সে এগিয়ে এসে মিমিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। তারপর বলল, বলতে হবে না । আমি বুঝতে পারছি ।
-না বলতে হবে আমাকে । প্লিজ বলতে দাও ।

আরমানকে যেন আরো একটু শক্ত করেই জড়িয়ে ধরলো সে । তারপর বলল, আমি দেখলাম আমার এতো ভদ্র বাবা একটা অপরিচিত মেয়ের সাথে বিছানায় শুয়ে রয়েছে । কী ভয়ংকর একটা দৃশ্য যে ওটা আমার কাছে ছিল আমি জানি না । আমার সেই ছোট বেলা থেকেই এই ব্যাপারটার উপরে একটা তীব্র ঘৃণা জন্মেছে । আমি কী করবো বল !
-তোমাকে কিছু করতে হবে না । কিছু না । ঠিক আছে ! তুমি যেমন আছো যেভাবে আছো সেভাবেই আমি তোমাকে ভালোবাসি ।

তারপর কী হল !
জীবন এগিয়ে চলল । হয়তো মিমি তার এই ব্যাপারটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিল নিজের মনের জোরে অথবা পারে নি । হয়তো আরমান একই ভাবে মিমিকে ভালো বেসে গেছে আবার হয়তো এক সময়ে আরমানের ভালোবাসা শেষ হয়ে এসেছে । কত কিছুই না হতে পারে ! জীবন এগিয়ে চলে কেবল !

ফেসবুকের অর্গানিক রিচ কমে যাওয়ার কারনে অনেক পোস্ট সবার হোম পেইজে যাচ্ছে না। সরাসরি গল্পের লিংক পেতে আমার হোয়াটসএপ বা টেলিগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। এছাড়া যাদের এসব নেই তারা ফেসবুক ব্রডকাস্ট চ্যানেলেও জয়েন হতে পারেন।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 47

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →