জীবন এগিয়ে চলে

oputanvir
4.7
(46)

মিমির মা রাবেয়া খাতুন রাগত চোখে মেয়ের দিকে তাকালো । তারপর কঠিন কন্ঠে বলল, ফেল বলছি । এখনই ফেল ওটা !
মিমি মায়ের কথা বিন্দু মাত্র পাত্তা না দিয়ে বেড়ালের বাচ্চাটাকে আদর করতে করতে বলল, ফেলবো না ।
-তাহলে কিন্তু গাড়িতে উঠতে দিবো না ।
-উঠলাম না ।

রাবেয়া খাতুনের মনেই হচ্ছিলো যে মিমি এমন কথাই বলবে । তিনি খানিকটা সময় অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো মিমির দিকে । মিমি অবশ্য তার দিকে তাকিয়ে নেই । সে বেড়ালের বাচ্চাটাকে আদর করতে করতে রাস্তার পাশে চলে গেল । বৃষ্টি তখন আরো জোরে নামতে শুরু করেছে । মিমি প্রায় ভিজে গেছে । বাধ্য হয়ে রাবেয়া খাতুন মিমিকে গাড়িতে তুলে নিলেন । বেড়ালকে নিয়ে তারা বাড়ির দিকে এগিয়ে চলল । পুরো গাড়িতে রাবেয়া মিমিকে বকাঝকা করতে করতে গেলেন । মিমির অবশ্য সেদিকে কোন খেয়ালই নেই । সে ছোট বেড়ালের বাচ্চাটাকে আদর করতে ব্যস্ত। নিজের রুমান দিয়ে সেটার শরীর মোছার দিকেই তার মনযোগ বেশি । তার মা তাকে কী বলল না বলল সেদিকে কোন খেয়াল নেই ।

-তুই কি বাচ্চা ! এভাবে রাস্তা থেকে আর কত বেড়াল তুলে আনবি । আমাদের বাসায় কয়টা বেড়াল আছে হিসাব আছে ?
-মা এতো চিন্তা করো না তো । আমাদের বাসায় মাত্র চারটা বেড়াল এখন । সামনের সপ্তাহ দুটো বাচ্চা এডোপশনে চলে যাবে । দেখবে এটাও ঠিক চলে যাবে ।
-না যাওয়া পর্যন্ত যে ঝামেলা পাকাবে এটা সেটা কে দেখবে?
-তুমি যেন খুব দেখো ! আমিই তো দেখা শোনা করি ।

বাবেয়া খাতুন কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু বলতে পারলো না । কারণ মিমি মিথ্যা বলে নি । বেড়ালের যাবতীয় দেখা শোনা মিমি নিজেই করে । এমন কি বেড়াল বাথরুম করলেও সেটাও সেই পরিস্কার করে । মিমির এই পশু পাখিদের প্রতি ভালোবাসা দেখে রাবেয়া খাতুন উপরে উপরে রাগ করলেও ভেতরে ভেতরে ভেতরে মেয়ের জন্য তার খুব ভাল লাগে । মেয়েটার মনে এমন মায়া আর নিষ্পাপ সে । তবে এরই সাথে মেয়েটাকে নিয়ে তিনি চিন্তাও থাকেন । মেয়েটা দিন দিন বড় হচ্ছে । এমন নরম মনের মানুষেরাই জীবনে বেশি কষ্ট পায় সব সময় । মিমির জীবনে কী আছে সেটা কেউ বলতে পারে না । তবে ওরা দুজনের কেউই জানে না যে এই আজকের ঘটনার ফলেই মিমির জীবনটা বদলে যেতে শুরু করেছে ।

আতিকুর রহমান ঠিক বুঝতে পারছেনা না সামনে বসা মানুষ তার কাছে কী করছে । যখন থেকে সে সামনে বসা মানুষটার পরিচয় জানতে পেরেছেন তখন থেকেই খানিকটা অস্বস্তিতে পড়েছেন । এতো বড় মানুষ তার কাছে নিজে এসেছে সেটা ভাবতেই অবাক লাগছে ।

আরমান চৌধুরীকে চেনে না খুব কম মানুষই রয়েছে । এমন কোন ব্যবসা নেই যেখানে আরমান চৌধুরীর ব্যবসা নেই । সব স্থানেই তার রাজত্ব আর সেই মানুষ কিনা আতিকুর রহমানের মত একজন সাধারণ সরকারি অফিসের অফিসে এসে হাজির হয়েছেন । এটা হজম করতে খানিকটা কষ্ট হচ্ছে আতিকুর রহমানের !

আরমান চৌধুরী সরাসরি আতিকুর রহমানের দিকে তাকালেন । তারপর বলল, আমি আপনার কাছে একটা জরুরী বিষয় নিয়ে কথা বলতে এসেছি ।
বয়সে আরমান চৌধুরী অনেক ছোট হবে তার । তারপরেও আতিকুর রহমান বললেন, জ্বী বলুন !
-দেখুন আমি আসলে একটা প্রস্তাব দিতে এসেছি ।
-প্রস্তাব !
-জ্বী ! আমি আপনার মেয়ে আফসানা মিমিকে বিয়ে করতে চাই । এবং যত দ্রুত সম্ভব । আমি খোজ নিয়েই এসেছি । আমি জানি আপনার মেয়ে কোন ছেলের সাথে প্রেম ঘটিত কোন সম্পর্কে জড়িত নয় । এবং আপনারাও আপনার মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য কোন ছেলের খোজ করছেন না । সুতরাং আমার সাথে তার বিয়ে হতে কোন সমস্যা নেই ।

একবারে এতো গুলো কথা বলে আরমান চৌধুরী থামলো । আতিকুর রহমান তীব্র বিস্ময় নিয়ে কিছু সময় আরমান চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে রইলো । আসলে কেউ যে এভাবে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারে সেটা তার ধারণার বাইরে ছিল । আর সব থেকে বড় কথা যে আরমান চৌধুরীর মত কেউ তার মেয়েকে বিয়ে করতে চাইতে পারে সেটাও তার ধারণার বাইরে ছিল ।
-আমি ……
-আমি কেবল আপনাকে প্রস্তব দিলাম । রাজি হওয়া বা না হওয়া আপনার ব্যাপার । তবে একটা কথা আমি আপনাকে বলতে চাই যে আপনার মেয়েকে আমি বিয়ে করেই ছাড়বো । মানে আমি আমার ক্ষমতা কখনো অবৈধ ভাবে কোথাও ব্যবহার করি নি । তবে এই ক্ষেত্রে আমি করবো । দরকার হলে তাকে তুলে নিয়ে গিয়েই বিয়ে করবো । এটা জেনে রাখুন ।

আরমান চৌধুরী ঠিক যেভাবে এসেছিলো তেমন ভাবেই আবার বিদায় নিয়ে চলে গেল । আতিকুর রহমান কেবল কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে বসে রইলো নিজের চেয়ারে । ব্যাপারটা টা কিছুতেই তার মাথায় ঢুকলো না


মিমির মিয়ে হয়ে গেল । মিমি কেবল অবাক হয়ে দেখলো কিভাবে আর কত দ্রুত তার বাবা মা তাকে এক বড়লোক ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিলো । তার বিন্দু মাত্র আপত্তি শুনলো না । মিমি কিছুতেই বিয়ে করতে চাইছিলো না কিন্তু নিজেকে কোন ভাবেই রক্ষা করতে সে পারলো না ।

বাসররাতে বসে সে অপেক্ষা করতে লাগলো তার স্বামীর জন্য । সে শুনেছে গুনে মানে সব দিক দিয়ে তার স্বামী আরমান চৌধুরী সবার সেরা । দেখতে শুনতে ভাল আর প্রচুর টাকা পয়সার মালিক । আমাদের দেশী বাবা মায়ের ভেতরে এই লক্ষ্যণটা খুব ভাল পরিমানেই আছে যে যদি ছেলে অনেক টাকা পয়সার মানুষ হয় তাহলে সেই হবে সব থেকে যোগ্য ছেলে তার মেয়ের জন্য । তবে এই ক্ষেত্রে আরো একটা ব্যাপার মিমির কানে এসেছে । আরমান চৌধুরী সরাসরি তার বাবাকে হুমকি দিয়েছে যদি বিয়ে না দিতে চায় তাহলে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে ।
মিমির কোন ইচ্ছে ছিল না এই বিয়েতে । এমন না যে তার অন্য কোথাও পছন্দ রয়েছে কিংবা সে পড়াশোনার মাঝে এখন বিয়ে করবে না । মিমির বিয়ে না করতে চাওয়ার পেছনে অন্য একটা কারণ রয়েছে । এমন একটা কারণ যেটা হয়তো কেউ বিশ্বাসই করবে না । আর তার বিয়ে করা স্বামী তো এই ব্যাপারে মানবেই না । মিমি শুনেছে বাসর রাতেই কেউ কেউ কাজটা করে ফেলে । কিন্তু মিমির পক্ষে কি সেটা করা সম্ভব ?
ও হয়তো মরেই যাবে !!
মিমি আর ভাবতেই পারছে না ব্যাপারটা !

একটু পরেই আরমান ঘরের ভেতরে ঢুকলো । বসলো খাতের এক পাশে । তারপর মিমির দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার বেড়াল গুলোর কী হয়েছে ?

মিমি একটু অবাক হয়েই তাকালো আরমানের দিকে । এমন একটা প্রশ্ন যে আরমান করতে পারে সেটা মিমির মাথাতে আসে নি । মুখ তুলে তাকিয়ে বলল, মানে ?
-মানে তোমার যে বেড়াল আছে বাসায় ওগুলো কী হবে এখন ?
-চেষ্টায় আছি এডোপশনে দিয়ে দেওয়ার । যতদিন না হচ্ছে আম্মু দেখা শোনা করবে ।
-চাইলে এখানে এনে রাখতে পারো । কোন সমস্যা নেই । আমি ছাদে আলাদা ভাবে ব্যবস্থা করে দিবো ।

মিমি অবাক হয়েই যাচ্ছে আরমানের আচরনে । কিছুতেই বুঝতে পারছে না এই মানুষটা হঠাৎ করে ওর সাথে এমন আচরণ কেন করছে ! মিমি বলল, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
-বল ?
-আপনি আমাকে কেন বিয়ে করলেন? আমি শুনেছি যে আপনি আবার বাবাকে সরাসরি হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন !
-হুমকি !!

আরমান হেসে ফেলল । বলল তোমার বাবা আসলে বুঝতে ভুল করেছেন । আমি তোমাকে কেবল বিয়ে করতে চেয়েছি ।
-কেন? মানে এতো মেয়ে থাকতে আমিই কেন ! এমন না যে আমরা প্রেম করছি কিংবা আমি চোখ ধাধানো সুন্দরী । তাহলে কেন বিয়ে করতে এতো উতলা হলেন?

আরমান চট করেই উত্তর দিতে পারলো না । এতো উলতা কেন হল সে ! সে নিজেও জানে ! সেদিন বৃষ্টিতে মিমিকে ওভাবে বেড়ালের বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নেওয়ার দৃশ্যটা সে কিছুতেই চোখের সামনে থেকে সরাতে পারে নি ।

মিমিকে কিছুই বলল না সে । কেবল মুগ্ধ চোখে মিমির দিকে তাকিয়ে রইলো । এই মেয়েটাকে সে আপন করেই পেয়েছে । জীবনে কোন সিদ্ধান্তই সে হুট করে নেয় নি । ভেবে চিন্তে তারপর সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে । কেবল এই একটা সিদ্ধান্তই সে নিয়েছে ।

আরো বেশ কিছু কথা বার্তা হল ওদের ভেতরে । একটা সময়ে মিমির ভয় অনেকটা কেটে গেল । তার মনে যে ভয়টা ছিল সেটা কেটে যেতেই মিমির মনে হল যে তার স্বামীকে কথাটা বলা দরকার । হয়তো আজকে রাতেই আরমান ওর সাথে ঘনিষ্ট হতে চাইবে । যা মিমির পক্ষে মেনে নেওয়া কষ্টকর হবে ।

মিমি বলল, আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই নি ।
-আমি জানি । এভাবে জোর করলে যে কারো পক্ষেই বিয়েতে রাজি হওয়াটা একটু কষ্টের !
-না ঐ কারণে না । আমার কোন ভালবাসার মানুষ ছিল না । বা আমি যে প্রতিষ্ঠিত না হয়ে বিয়ে করবো না এমন পনও করি নি ।
-তাহলে?
-আমি আসলে কেবল আপনাকে না কাউকেই বিয়ে করতে চাই না ।
-কেন?

মিমি এবার তাকালো আরমানের দিকে । মনে হল যে এখনই কথাটা বলে দেওয়া দরকার । যদি এটা জানার পরে আরমান ওকে ডিভোর্স দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাতেও মিমির কোন আপত্তি নেই । বরং সেটাই ওর জন্য ভাল ।
মিমি বলল, আমি এসেক্সুয়্যাল ! আমার সেক্সের কোন আগ্রহ নেই । বিন্দু মাত্র আকর্ষণ অনুভব করতে পারি না আমি। আপনার প্রতি আমি হয়তো অন্য ভাবে আকর্ষণ অনুভব করবো কিন্তু শারীরিক ভাবে কোন কখনই আকর্ষণ অনুভব করবো না । সামনে যদি আমার সাথে আপনি কিছু করতে চান, এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার কিন্তু আপনাকে তা জোর করে করতে হবে !

কথা গুলো এক নাগারে বলে মিমি চুপ করে রইলো । আরমানও কোন কথা বলল না । বেশ কিছু সময় নিরবতা পালন করার পরে আরমান বলল, আচ্ছা আজকে ক্লান্ত অনেক । তুমি শুয়ে পড় ।

এই বলে আরমান আর কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল । মিমির কেন জানি কান্না এল খুব । এমনটা যে হবে সেটা মিমি জানতো । তবে এটাই ভাল হয়েছে । যদি আরমান ওর উপর জোর খাটাতো মিমির কিছু করারও ছিল না ।

রাতে বালিশ চেপে যখন মিমি শুয়ে পড়লো তখন ওর কেন জানি মনে হল যে এমনটা না হলেও পারতো ! সেই ছোট বেলাতে যদি ঐ ঘটনা না ঘটতো তাহলে আজকে এমন একটা ঘটনার উদ্ভব হত ! মিমি জানে না.

সকালে মিমির ঘুম ভাঙ্গলো বেশ বেলা করেই । অবশ্য রাতে দেরি করে ঘুমালে বেলা করে ঘুম তো ভাঙ্গবেই । ঘুম ভেঙ্গে কিছু সময় সে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর যখন উঠলো । বিনাছার পাশে ছোট বক্স টেবিলের উপরে ওর মোবাইলটা রাখা । মোবাইলটা নিতে গিয়েই দেখলো সেটার নিচে একটা কাগজ চাপা দেওয়া । কৌতুহল নিয়ে সে কাগজটা তুলল । গোটা গোটা অক্ষরে সেটা কয়েকটা লাইন লেখা ।

মিমি, আমি তোমার ব্যাপারটা বুঝতে পারছি । তবে এটা কখনই ভেবো না যে আমি কখনো তোমার সাথে জোর জবরদস্তি করে কিছু করবো ।কেবল যে শারীরিক দিকটা হবে সম্পর্কের ভিত্তি তেমন তো নয় । মানসিক ভাবে তো আমরা একে অন্যের কাছে আসতে পারি ! একবার চেষ্টা করে কি দেখবে? যদি না হয় তাহলে আমরা না হয় ভিন্ন পথ দেখবো । তবে একবার চেষ্টা করে কি দেখবে প্লিজ !!

মিমি চিঠিটা পড়ে কিছু সময় চুপ করে বসে রইলো । আরমান চৌধুরী ওকে কেবল অবাকই করে যাচ্ছে ।

মিমি আর আরমানের বিবাহিত জীবন শুরু হল । মিমির সাথে আগেই আলোচনা করে নিলো সব যাতে করে কোন প্রকার অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি না হয় ।

একদিন দুইদিন করে ওদের বছর খানেক পার করে দিল পাশপাশি । এর মাঝে আরমান একবারও ওর সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করে নি । এছাড়া ওরা এক সাথে ঘুরেছে বাইরে খেতে গেছে । পাশে শুয়েছেও । তবে দুরত্ব সব সময়ই ছিল । মিমিও সব সময় চেষ্টা করতো ভাল স্ত্রী হওয়ার । তবে একটা অপরাধবোধ ওর মাঝে সব সময় রয়েই যেত ।

একদিন আর না থাকতে পেরে কথাটা সে আরমানকে বলেই ফেলল । ওরা রাতের খাওয়া শেষ করে তখন এক সাথে টিভি দেখতে বসেছিলো । যদিও টিভি দেখা কোন অযুহাত না । একসাথে বসে গল্প করাটাই আসল উদ্দেশ্য ছিল । বিয়ের পরে আরমান কাজ কর্মের পরিমান কমিয়ে দিয়েছে অনেক । মিমির সাথে অনেক সময় কাটায় ।

-একটা কথা বলব বলব ভাবছিলাম !
-বলে ফেল । এতো ভাবার কী আছে?
-আমার মনে হয় আমি তোমার সাথে অন্যায় করছি ।
-কী অন্যায় করছো?
-তুমি জানো আমি কিসের কথা বলছি !

আরমান কিছু সময় তাকিয়ে রইলো মিমির দিকে । তারপর বলল, আমি কি কিছু বলেছি?
-বলতে কেন হবে? আমি কি বুঝতে পারি না ! এটা ঠিক হচ্ছে না ।
-তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না । এই যে তোমার পাশে বসে আছি গল্প করছি, চাইলেই হাত ধরা যাচ্ছে মাঝে মাঝে তোমাকে চুমুও খেতে পারছি । এটা অনেক !
-না এটা যথেষ্ঠ না ।
-ওকে বুঝলাম ! তোমার কি পরামর্শ বল শুনি?

মিমি চুপ করে রইলো কিছু সময় । তারপর বলল, আমি চাই তুমি ফোর্স কর !
-আমি এটা কখনই করবো না ।
-প্লিজ ।
-তাহলে আমি আর তোমার সাথে থাকবো না ।

আরমান বুঝতে পারলো যে মিমি একদম সিরিয়াস হয়েই কথাটা বলেছে । সে মিমির আরো একটু কাছে এগিয়ে এল । তারপর কপালে একটা ছোট চুমু খেয়ে বলল, আমার দিকে তাকিয়ে দেখো তো তোমার কি মনে হচ্ছে ? মনে হচ্ছে কি আমি কোন অভিযোগ করছি?

মিমি তাকালো একভাবে । এই এক বছরের আরমানের দিকে তাকিয়ে মিমির এই মনভাবটা ঠিকই বুঝতে পারে । খুব ভাল ভাবেই সে বুঝতে পারে । তবুও ওর নিজের কাছে খারাপ লাগে । খুব বেশি খারাপ লাগে ।

আজকে মিমির কী মনে হল সে আরমানকে সত্য কথাটা বলার সিদ্ধান্ত নিল । মিমি বলল, তোমাকে একটা কথা বলতে চাই আমি!
-বল । তুমি জানো আমি সব সময় তোমার কথা শুনতে চাই ।
-এই এসেক্সুয়্যালিটির ব্যাপারটা অনেকের ক্ষেত্রেই জেনেটিক ব্যাপার হতে পারে । তবে আমার মনে হয় এটা জন্মগত নয় ।
আরমান খানিকটা কৌতুহল নিয়ে তাকালো মিমির দিকে । মিমি বলল, আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি তখন আমি একটা ভয়ংকর দৃশ্য দেখেছিলাম ।
আরমানও এবারো কোন কথা বলল না । মিমি বলল, সেদিন আমি স্কুল থেকে একটু আগে আগেই ফিরে এসেছি । আমার মা একই স্কুলের শিক্ষিকা ছিল । আমি মায়ের সাথেই বাসায় ফিরতাম । তবে সেদিন বাবা বাসায় ছিল বলে আমার মা দপ্তরিকে দিয়ে আমাকে বাসায় পাঠিয়ে দিল । দপ্তরি আঙ্কেল আমাকে বাসার গেটের সামনে নামিয়ে দিয়ে আবার ফিরে গেল । আমি … আমি যখন ঘরের দরজায় কড়া নাড়তে যাবো তখনই আমি বুঝতে পারলাম যে ঘরের ভেতরে অস্বাভাবিক কিছু হচ্ছে । সামনের দরজা দিয়ে না ঢুকে আমি পেছনের দরজা দিয়ে ভেতরে উকি দিলাম । ওটা বেশির ভাগ সময়ে খোলাই থাকে । আমি যখন ভেতরে ঢুকলাম তখন …..
মিমির গলা যেন ধরে এল । আরমান হঠাৎ করেই বুঝতে পারলো যে মিমি কী বলতে যাচ্ছে । সে এগিয়ে এসে মিমিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। তারপর বলল, বলতে হবে না । আমি বুঝতে পারছি ।
-না বলতে হবে আমাকে । প্লিজ বলতে দাও ।

আরমানকে যেন আরো একটু শক্ত করেই জড়িয়ে ধরলো সে । তারপর বলল, আমি দেখলাম আমার এতো ভদ্র বাবা একটা অপরিচিত মেয়ের সাথে বিছানায় শুয়ে রয়েছে । কী ভয়ংকর একটা দৃশ্য যে ওটা আমার কাছে ছিল আমি জানি না । আমার সেই ছোট বেলা থেকেই এই ব্যাপারটার উপরে একটা তীব্র ঘৃণা জন্মেছে । আমি কী করবো বল !
-তোমাকে কিছু করতে হবে না । কিছু না । ঠিক আছে ! তুমি যেমন আছো যেভাবে আছো সেভাবেই আমি তোমাকে ভালোবাসি ।

তারপর কী হল !
জীবন এগিয়ে চলল । হয়তো মিমি তার এই ব্যাপারটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিল নিজের মনের জোরে অথবা পারে নি । হয়তো আরমান একই ভাবে মিমিকে ভালো বেসে গেছে আবার হয়তো এক সময়ে আরমানের ভালোবাসা শেষ হয়ে এসেছে । কত কিছুই না হতে পারে ! জীবন এগিয়ে চলে কেবল !

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 46

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →