নাইরুর সামনে আর কোন পথ নেই । নিজের জীবন বাঁচাতে তাকে ওদের কথা শুনতেই হবে ।
কিন্তু এছাড়া আর কোন উপায় ওর কাছে নেই । নয়তো কেবল ওর নিজের প্রাণটাই যাবে না ওর নাতির জীবনটাও এরা নিয়ে নিবে ।
সামনে বসা মানুষটা আবারও বলল, এতো চিন্তা করার কিছু নেই । কফিনটা কেবল ওখানে রাখবে । আর তোমাকে কিছু করতে হবে না ।
-কিন্তু?
-কোন কিন্তু না । আমাকে তুমি খুব ভাল করেই চিনো । তুমি জানো আমি না শুনতে পছন্দ করি না । আর আমি তো তোমাকে এমন কঠিন কাজও করতে বলছি না । বলছি কি?
নাইরু আর কোন কথা বলার সাহস পেল না । এই মানুষটাকে সে খুব ভাল করেই চেনে । নিজের শত্রুদের সাথে তার যে কতটা কঠিন আচরণ সেটার সম্পর্কে নানান রকম গল্প সে জানে ।
-কফিনে কী আছে?
-সেটা তোমার না জানলেও চলবে। কেবল মূল্যবান কেউ শুয়ে আছে !
নাইরুর কাধে একটা বিশেষ বাড়ি তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বাড়ি না বলে উপাসনালয় বললেই ভাল হবে। ইউরোপের চার্চ থেকে এটা তৈরির জন্য অর্ডার এসেছে । বেশ ভাল টাকা পয়সা খরচ হচ্ছে । ঢাকা থেকে দুরে এমনে কটা স্থানে এতো বড় উপাসনালয় তৈরির কারণটা নাইরু জানে না । তবে সেটা নিয়ে ওর অবশ্য খুব একটা চিন্তাও নেই । ওর কাজ কেবল বাড়ি তৈরি করে দেওয়া । ও সেটাই করে দিচ্ছে।
কিন্তু এর মাঝপথে এসে যখন ঢাকার সব থেকে বড় ব্যবসায়ী তার সাথে দেখা করল তখনই মনে হল কিছু একটা ঝামেলা আছে এই বাড়ি নিয়ে । নাইরু একটা সময়ে এই ব্যবসায়ীর কাছেই চাকরি করত। তারপর এক সময়ে সেখান থেকে বের হয়ে এসে নিজের ফার্ম দিয়েছে।
নাইরু বলল, আমাকে কী করতে হবে?
-কিছু না । বেজম্যান্টের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে না?
-জ্বী।
-ব্যাস তাহলেই হবে । তুমি কেবল আজ রাতে ওখানে থাকবে । সকল পাহাড়াদারদের ছুটি দিয়ে দিও । আমার লোকজন রাতে ওখানে যাবে । ওরাই সব কাজ করে দিয়ে । কেউ জানতেও পারবে না যে ওখানে কিছু ছিল । ঠিক আছে?
-জ্বী !
-এই কথা যেন কেউ কখনো না জানতে পারে। জানলে এর ফল যে কী হবে সেটা তুমি খুব ভাল করেই জানো ।
ঐদিন রাতেই একটা বড় ট্রাক এসে থামলো কনস্ট্রাকশন সাইটে । সেখানে কেবল নাইরু ছিল । আর কেউ সেখানে ছিল না । সবাইকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছিল ।
##
মিমি অন্ধের মত করেই হাটছে । সামনে কী আছে সেটা ওর জানা নেই । তবে তার কেবল মনে হচ্ছে যেন খুব কাছের কেউ ওকে ডাকছে । সে সামনের সেই অন্ধকারের ভেতরেই আছে । ওকে তীব্র ভাবে ডাকছে । এই ডাক সে উপেক্ষা করতে পারছে না ।
মিমি সামনে এগিয়ে চলল ।
##
আরিয়ানা যেন নিজের কানকে ঠিক মত বিশ্বাস করতে পারলো না । ভ্যাম্পায়ার কিং এখানে শুয়ে আছে? এটা কী আদৌও সম্ভব? ওদের নিজের একটা হেড কোয়াটারেই ভ্যাম্পায়ার কিং শুয়ে আছে! কেউ কখনও কি কল্পপনা করেছে যে রায়ানের কফিন এখানেই রয়েছে ।
আরিয়ানা যতদুর জানে রায়ানের মৃত্যুর পরে একটা সময় পর্যান্ত তার কফিন কোথায় আছে সেটার ব্যাপারে চার্চের একটা ধারণা ছিল । ইউরোপের নানান স্থানে সেটা ঘুরে বের হয়েছে । চার্চ সেই সময়ে খুব চেষ্টা করেছে কফিনটা হাতে পাওয়ার তবে সেটা কব্জা করতে পারে নি । প্রতিবারই কিভাবে জানি তারা জেনে যেত আর চার্চ কাছে যাওয়ার আগেই কফিন নিয়ে হাওয়া হয়ে যেত । তবে একটা সময়ের পরেই কফিন সম্পর্কে আর কোন তথ্যি চার্চের কাছে ছিল না । সেটা যেন হওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছিল ।
আরিয়ানার কাছে এইবার ব্যাপারটা পরিস্কার হল । চার্চ সব জায়গাতে রায়ানকে খুজলেও নিজেদের বাসার ভেতরে খুজবে না সেটাই স্বাভাবিক । এই হেডহোয়াটার তৈরির সময়েই এখানে সেট করে দেওয়া হয়েছে সেটা ।
বেজমেন্টের পথ কোন দিকে?
আরিয়ানা কোন কথা বলল না । মিমি বলল, আমাদের হাতে খুব বেশি সময় নেই । আমি আগেই বলেছি কারো কোন ক্ষতি আমি করতে চাই না । দয়া করে বাধ্য করবে না ।
-তুমি কিভাবে নিশ্চিত হচ্ছো যে কফিনটা এখানেই আছে?
-আমি নিশ্চিত করেই বলছি কারণ আমি জানি । ও এখানেই আছে। এই যে আমি সেটা টের পাচ্ছি । এই কলারটা দেখছো না, এটাই আমাকে বলে দিচ্ছে ।
-তুমি জানো রায়ান জেগে উঠলে আবার কী হবে?
মিমি পুরো ঘরের এদিক ওদিক তাকাল । তারপর আরিয়ানার দিকে ফিরে তাকাল । বলল, না জানি না আসলে। এবং তুমিও জানো না সে জেগে উঠলে কী হবে। জানো কি ? তুমি যা জানো তা হচ্ছে তোমার পূর্বপুরুষদের শেখানো বুলি ! আর কিছু না ।
-তুমি জানো না ওরা কী করে? মানুষদের সাথে ওদের আচরণ কেমন ?
-ওরা আমাদের সাথে ঠিক তাই করে যা আমরা অন্য সব প্রাণীদের সাথে করি । এর বাইরে কিছু করে কি?
-তুমি পাগল হয়ে গেছো । ঐ কলার তোমার মনটা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে।
-ভুল । আমি এটা পরি না। এটা কিছু দিন আমার নেশায় পরিণত হয়েছিল সত্য তবে এখন এটা আমার জন্য দরকার জিনিস না । আমি কেবল আজকে এটা পরেছি রায়ানকে মুক্ত করার জন্যই।
-না তোমরা এটা করতে পারবে না । আমরা থাকতে করতে পারবে না ।
ঠিক সেই সময়েই বাইরে আওয়াজ শোনা গেল । সাধারণ মানুষের জন্য আওয়াজটা শোনা হয়তো সম্ভব না তবে ভ্যাম্পায়ারদের জন্য এমন আওয়ান শোনা সম্ভত । মিমি চারিদিকে তাকিয়ে দেখল অন্য সবাই সেটা বুঝতে পেরেছে। এবং আরিয়ানা নিজেও বুঝতে পারল ব্যাপারটা । একটু হেসে বলল, তোমাদের বলেছিলাম না যে ব্যকআপ আছে ! আমাদের প্রতিটা হেডকোয়াটারের সাথে প্রতিটা হেড কোয়াটারের একটা কন্টিনিউস সংযোগ থাকে সব সময় । যখনই কোন সংযোগ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে আশে পাশের সব কোয়ার্টারে খবর চলে যায় । সব এজেন্টদের কাছে খবর চলে যায় । ওরা চলেছে, রাইট?
মিমি কোন কথা বলল না । কারণ হঠাৎ পরিস্থিতি বদলে গেছে । অনেক কয়জন লোক এসে হাজির হচ্ছে । এতো গুলো মানুষের সাথে ওরা যুদ্ধ করে নাও পারতে পারে । আর যুদ্ধ যদি শুরু হয় তাহলে ক্ষয় ক্ষতি হবেই । দুই পক্ষের মানুষই মারা পড়বে । এটা মিমি মোটেই যায় না।
মিমি ওর সাথিদের দিকে তাকিয়ে বলল, এদের কে বেঁধে রাখো। তারপর চল ভেতরে ! আমাদের হাতে সময় নেই একদম ।
মিমির কথা মত কাজ হল । তবে আরিয়ানাকে ওরা সাথে নিল ।
আরিয়ানাকে অবশ্য বলে দিতে হল যে বেজমেন্টটা কোথায় । মিমির মনে হল ও যেন ঠিক ঠিক জানে কোন পথে ওকে যেতে হবে । ঠিক সেই পথেই ও এগিয়ে চলল। এক সময়ে ঠিক বেজমেন্টের দরজার সামনে এসে থামল ।
দরজা খোল !
মিমির হুকুম পাওয়া মাত্রই দুইজন এগিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করল। অনেক দিন দরজার না খোলার কারণে সেটা জ্যাম হয়ে আছে । তবে ভ্যাম্পায়ারদের শক্তির কাছে এক সময়ে পরাজিত হল । দরজা খুলে গেল ।
সবাইকে নিয়ে যখন ঘরের ভেতরে প্রবেশ করল তখন ওরা যা ভেবেছিল তেমন কিছুই দেখা গেল না ।
পুরো বেজমেন্ট একেবারে ফাঁকা ।
কিছু নেই সেখানে।
আরিয়ানা এর আগে এই বেজমেন্টে প্রবেশ করে নি । সেও আশা করেছিল যে এখানে হয়তো সে এখানে কিছু না কিছু দেখতে পাবে । তবে এখানে কিছু নেই । পুরো বেজমেন্ট ফাঁকা ।
সবাই খানিকটা দ্বিধান্বিত হয়ে গেল । এখানে কিছু নেই ।
মিমি নিজেও খানিকটা সময়ে যেন কিছু যেন বুঝতে পারল না। ওর একটা ধারণ ছিল । ঠিক ধারণা না, ওর একটা বিশ্বাস ছিল যে রায়ানের কফিন সে এখানেই দেখতে পাবে । এতো তীব্র ভাবে অনুভব করতে পারছিল । এমন কি এখনওসে এটা বুঝতে পারছে । কিন্তু চোখের সামনে সে কাউকে দেখতে পাচ্ছে না । কিন্তু অনুভূতি তীব্র এখনও । সেই প্রথম দিন থেকে এই কলারটা গলাতে দেওয়ার পর থেকে যেমন টা মনে হয়েছিল, এখনও সেই অনুভূতি হচ্ছে । যেন সে আছে এখানেই !
-কোথায় সে !
-এখানেই আছে !
-কোথায়?
-মেঝের নিচ ! আই ক্যান ফিল ইট !
এরপর মিমি পুরো ঘর জুড়ে হাটতে লাগল । তারপর একটা স্থানে দাঁড়িয়ে গেল । এখানেই আছে ।
মেঝে খোদাই কর !
কিন্তু খোদাইয়ের জন্য আশে পাশে কোন যন্ত্র দেখা গেল না । ওরা সাথে করে কোন কোদাল বা বেলচা নিয়ে আসে নি । এমন কিছু দরকার যা ওদের মেঝে খুড়তে হবে। তবে আশার কথা হচ্ছে এটা কোন কনক্রিটের নয় ।
তবে ঝামেলা তখনই বাঁধল । বাইরে গিয়ে যে কিছু নিয়ে আসবে সেটার সময় ওরা পেল না । তার আগেই উপর থেকে মানুষের আওয়াজ শোনা গেল । ওরা চলে আসছে ।
বেজমেন্টের দরজা বাধ্য হয়ে বন্ধ করে দিতে হল ।
-তোমরা আটকা পরেছো ।
কথাটা বলল আরিয়ানা ।
-এই দরজার ওরা ভেঙ্গে ঢুকতে পারবে না । এমন ভাবেই তৈরি ।
-ভুলে যাচ্ছো কেন যে তোমরা বেরও হতে পারবে না । আর দিনের আলোতে আরও বার হতে পারবে না । তোমরা পুরোটা সময় এখানেই আটকে থাকবে । আর উপরে আমাদের লোক তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে । কিভাবে বের হবে বল ?
ঠিক সেই সময়ে দরজার ধাক্কা পড়ল । কেউ যেন কিছু দিয়ে সেখানে আঘাত করল । মিমি সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে । ওরা আসলেই আটকা পড়েছে । অনেকটাই ফাঁদে পড়েছে । ওরা এখান থেকে কিভাবে বের হবে?
আবার দরজার আঘাত পড়ল ।
আরিয়ানা এতো সময় সত্যিই ভয় নিয়ে ছিল । মনে হচ্ছিল যেন সত্যিই বুঝি রায়ান জেগে উঠবে এবার। আর একবার যদি সে জেগে উঠে তাহলে না জানি কী হবে। তবে এখন ওর মন থেকে সেই ভয়টা গায়েব হয়ে গেছে । যদিও ওর ভ্যাম্পায়ারদের সাথেই আটকা পড়েছে। তার পরেও ওর মনে হচ্ছে যে কোন ভয় নেই । এবারের মত বিপদ কেটে গেছে ।
কিন্তু তার মনের কথা মনেই রয়ে গেল । দরজাতে আগের থেকেও জোড়ে আওয়াজ হল । নিশ্চিত ভাবেই ওরা হ্যান্ড গ্রেনেডের ব্যবহার করছে । যে কোন ভাবেই তারা দরজা ভেঙ্গে ফেলতেই চায় । যদি সত্যিই দরজা ভেঙ্গে ফেলে তাহলে দুই পক্ষের ভেতরে এবার একটা যুদ্ধ ঠিকই বাধবে এবং তাতে যে ক্ষয় ক্ষতি হবে সেটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই ।
এমন চিন্তা যখন আরিয়ানার মনে আসছিল তখনই একটা অবাক করার ঘটনা ঘটলো । আরিয়ানা দেখলো যে কয়জন ভ্যাম্পায়ার ঘরের ভেতরে ছিল তারা হাত দিয়েই মাটি খুড়তে শুরু করেছে । কেউ বা নিজের পকেট থেকে মোবাইল কিংবা চাবির রিং দিয়ে সেই কাজ শুরু কর দিয়েছে । এবং আরিয়ানা তীব্র বিস্ময় নিয়েই খেয়াল করে দেখল যে চারজন মিলে খুব দ্রুতই সেই কাজ এগিয়ে নিয়ে চলল ।
এদিকে আঘাতের পর আঘাত হতে চলল দরজায় অন্য দিকে হাত, মোবাইল আর চাবির রিং দিয়েই মাটি খোদায় । কোণটা আগে শেষ হবে?
ওরা দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকবে নাকি এরা মাটি খুড়ে তাদের রাজার কফিন বের করবে?
waiting from long day,,,,
আমার আসলে গত কয়েক মাস ধরে অনেক ব্যস্ততা যাচ্ছে । শান্তি মত বসতে না পারলে আমার আবার গল্প লেখা হয় না।