নীতু এন্ড দ্য হর্সম্যান (পাঁচ)
আফনান সামনে বসা মানুষটাকে ঠিক পছন্দ করছে না । তার চেহারাতে এমন কিছু রয়েছে যা আফনানের ভাল লাগছে না । আফনান তার বাবার ব্যবসার কারণে অনেক মানষের সাথেই মিশেছে । অনেক রকমের মানুষ দেখেছে । কাউকে প্রথম দেখার পরপরই তার উপর একটা মনভাব তৈরি হয় । আফনানের সামনে বসা লোকটার প্রতি সেই মনভাবটা মোটেই ভাল মনে হচ্ছে না । সে এখান থেকে চলে যেতে চাইছে । কিন্তু যেতে পারছে না ।
আফনানের কাছে আজকে সকালেই একটা অচেনা নম্বর থেকে ফোন এসে হাজির হয় । কদিন থেকেই আফনানের মন মেজাজ খারাপ । নীতুর বাসা থেকে ঐ ভাবে অপমানিত হয়ে ফিরে আসার পর থেকে সে নিজেকে আর সুস্থির করতে পারে নি । নীতুকে সে খুজেছে কিন্তু পায় নি । দুদিন পরে তার কাছে খবর আসে যে নীতু সেইদিন রাত থেকেই আরিয়ান কবীরের বাসায় অবস্থান করছে । খবরটা জানার পর থেকেই বুকের ভেতরে একটা তীব্র অমানের কষ্ট এসে জড় হয়েছে । একটা অব্যক্ত রাগ এসে জড় হয়েছে আফনানের ভেতরে কিন্তু সে কিছুই করতে পারছে না ।
একবার আফনানের মনে হয়েছিলো আরিয়ানকে কবীরকে লোক লাগিয়ে মাইর খাওয়ায় কিন্তু পরে নিজেই সেট বাদ দিয়েছে । ওর বাবা ব্যাপারটা জানতে পারলে খুব বেশি রাগ করবে । এমনিতেও আফনানের উপরে সে একটু রেগে আছে । ওভাবে নীতুদের বাসা থেকে অমানিত হয়ে ফিরে আসার পরে সে আফনানকে বেশ ভাল রকমেই বকাঝকা করেছে । এখন আর অন্য কিছু করা যাবে না যাতে ওর বাবা রাগ করে । অন্য কোন উপায় বের করতে হবে ।
আফনান অবশ্য নিজের আচরনে নিজে খানিকটা বিস্মিত । নীতুর প্রতি সে এমন আচরণ করছে সেটা সে নিজেও জানে না । এমন তো না যে নীতুকে সে অনেক ভালোবাসে । অথবা ভালোবাসেও না । কিন্তু তারপরেও কিভাবে ব্যাকুল হয়ে যাচ্ছে ওর প্রতি । এখন ওর মনে হচ্ছে যে নীতুকে না পেলে ওর জীবন চলবে না । অথচ এমন ছিল না কোন সময় ! আর এখন নীতু পাওয়ার পথে সব থেকে বড় বাঁধা হচ্ছে ঐ আরিয়ান কবীর । ঐ লোকটা কে কিভাবে নীতুর থেকে দুরে সরানো যায় সেটাই কেবল আফনান ভাবছে কিন্তু এখনও কোন সমাধান খুজে পাচ্ছে না ।
ঠিক এই সময়েই আফনানের ফোনে এই অচেনা লোকের ফোন নম্বর টা এল । প্রথমবার আফনান ফোন রিসিভ না করলেও পরেরবার করলো । ইচ্ছে ছিল ফোন রেখে দিবে পরিচিত কেউ না হলে তবে ফোনের অপাশ থেকে যখন আরিয়ান কবীরের নাম বলল তখন আর না ফোন রাখা হল না । ওপাশ থেকে একটা গম্ভীর কন্ঠ বলল যে কখন তার সাথে দেখা করতে হবে এবং একটা ঠিকানাও দিলো তাকে । সেই ঠিকানা মোতাবেকই এসে হাজির হয়েছে ।
আফনান সরাসরি সামনে বসা মানুষটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে । আফনান মোটেই পছন্দ করছে না তাকে তবে সব থেকে উপরে আফনানের রাগ আর অপমান । আরিয়ান কবীরের একটা ব্যবস্থা তাকে করতেই হবে যে কোভাবে । আফনান বলল, তো বলুন আপনি কিভাবে আমাকে সাহায্য করতে পারেন ? সব থেকে বড় কথা আপনি কেন আমাকে সাহায্য করবেন?
লোকটা একটু হাসলো । তারপর বলল, ওয়েল একেবারে টু দি পয়েন্ট । কোন হাই হ্যালো নেই । যাক এটা ভাল । তোমাকে সাহায্য করার প্রধান কারণ হচ্ছে আমারও তোমার সাহায্য লাগবে । অর্থ্যাৎ তুমি এমন কিছু চাও যা আমার দরকার আর আমি এমন কিছু করতে পারি যা তুমি চাও !
-যেমন ?
-তুমি আরিয়ান কবীর নামের ঐ মানুষটাকে গায়েব করে দিতে চাও, রাইট ?
-হ্যা ।
-আমিও তাই চাই । এটা করতে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি । যদি তুমি কিছু কর আমার জন্য !
-যেমন?
-তুমি আমার হয়ে নীতুকে ধরে নিয়ে আসবে !
সরু চোখে তাকালো সে সামনে বসা লোকটার দিকে । তারপর বলল, নীতুকে যদি আমিই ধরে নিয়ে আসি তাহলে আপনার তো কোন দরকার নেই আামর । আমি নিজেই সেটা করতে পারি । ওকে তুলে নিয়ে বিয়ে করতে পারি ।
লোকটা যেন জানতোই আফনান এমন কথা বলবে । একটু হাসলো । তারপর বলল, না তুমি সেটা পারো না । চেষ্টা করে দেখতে পারো । নীতু নামের মেয়েটাকে ধরে নিয়ে আসার চেষ্টা করলেই সেখানে হর্সম্যান চলে আসবে । যদি কোন মতে নিজের আস্তানায় কিংবা বাড়িতে তুলেও নিয়ে আসতে পারো বা যেখানেই তাকে লুকিয়ে রাখো না কেন হর্সম্যান তাকে খুজে বের করবেই । আর বিশ্বাস কর তুমি হর্সম্যানের হাতে পড়তে চাইবে না । এই কাজে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি, মানে তাকে লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতে পারি ।
-তাহলে আপনিই তাকে কেন তুলে নিয়ে আসছেন না? আমার সাহায্য তো আপনার লাগার কথা না ।
-এখানেও কিন্তু আছে । আমি নীতুকে স্পর্শ করতে পারবো না । হর্সম্যান নীতুর শরীরে নিজের সীল মেরেছে এরই ভেতরে । তবে তুমি যেহেতু সাধারণ মানুষ তুমি পারবে নীতুকে নিয়ে আসতে ! সো এটা হচ্ছে ডিল । তুমি নীতুকে তুলে নিয়ে আসার ব্যবস্থা কর । আমি সাহায্য করবো অবশ্যই । এবং হর্সম্যান যাতে নীতুকে খুজে না পায় সেটার ব্যবস্থাও করবো ।
-তারপর?
-তারপর কী হয় সেটা তোমার জানার দরকার নেই । যদি রাজি থাকো তাহলে হাত মেলাতে পারো ।
আফনানের মনের ভেতরটা চিৎকার করে বলছেন যেন এখনই এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য কিন্তু সে সব চিন্তা একপাশে সরিয়ে রেখে আফনান বলল, ওকে আমি রাজি । বলুন কী করতে হবে ?
আফনান লোকটার মুখে হাসি দেখতে পেল । আরো একবার মনে হল কাজটা ঠিক হচ্ছে না ।
নীতু এন্ড দ্য হর্সম্যান
নীতুর যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন সকাল হয়ে গেছে । বিছানা থেকে উঠে বসলো সে । অনুভব করলো শরীরে এখনও ব্যাথা রয়েছে । তবে গতদিনের থেকে ব্যাথাটা এখন অনেকটাই কম । আরিয়ান বলেছিলো যে ব্যাথাটা দুই দিনের ভেতরেই কমে যাবে । সেই সাথে শরীরের দাগ গুলো । নিজের হাত পায়ের দিকে তাকালো নীতু । এরই ভেতরে হাতের রেখা গুলো অনেকটাই বিলীন হয়ে গেছে । অথচ প্রথম দিন কী প্রকট আকারেই না সেগুলো দেখা যাচ্ছিলো । ঠিক যেমন করে মানুষের শরীরে ট্যাটু আকা হয় ওর পুরো শরীরেও ট্যাটুর মত করে নানান রকম রকমের কারুকার্য দেখা গিয়েছিলো রিচ্যুয়ালটার পরে ।
রিচ্যুয়ালটার কথা মনে হতেই একটা লজ্জার আভা দেখা গেল নীতুর মুখে । এমন একটা কাজ সে কোন দিন করতে পারবে সেটা ভাবে নি কোন দিন । ঐদিনের ঘটনার পরে আরিয়ানের মুখ একেবারে গম্ভীর হয়ে গিয়েছিলো । রাফায়েল নামের মানুষটা চলে যাওয়ার পরেই নীতুকে নিজের ঘোড়ায় তুলে নিল আরিয়ান । তারপর ওরা এসে হাজির হল আরিয়ানের বাসায় । আরিয়ানের বাসাটা যে ঠিক কোথায় নীতু সেটা বুঝতে পারলো না । পুরো এলাকাটা কেমন যেন অচেনা মনে হচ্ছিলো । তবে ঘরে ঢুকতেই সব কিছু আবার স্বাভাবিক মনে হল । আরিয়ান প্রথমে ওর শরীরের ক্ষত গুলো দেখলো । পরে গিয়ে একটু ব্যাথা পেয়েছিলো । এক স্থানে কেটে গিয়েছিলো নীতুর । সেটাই পরিস্কার করে ওষুধ লাগিয়ে দিল । তারপর রাতের খাবার খেল ওরা এক সাথে । নীতু এই পুরো সময়ে কোন কথা বলে নি । অবশ্য ওর খুব একটা অস্বস্তি লাগছিলো না অথচ সেটা লাগলেই বরং স্বাভাবিক ছিল । নীতুর মনে হচ্ছিলো যেন অনেক দিন ধরেই সে এই বাসায় আসা যাওয়া করে ।
খাওয়া শেষ হওয়ার পরে কিছু সময় নীতু একটা বসে রইলো বসার ঘরে । আরিয়ান ওকে রেখে ঘরের ভেতরে চলে গিয়েছিলো কোন কাজে । আধা ঘন্টা পরে ফিরে এল । তারপর বলল, আমি দুঃখিত আমার কারণে তোমাকে এই বিপদে পড়তে হচ্ছে ।
নীতু কী বলবে বুঝলো না । আরিয়ান উত্তরের আশা করে আবারও বলল, আসলে তোমার পিছ ওরা ছাড়বে না যত সময় না তোমাকে মেরে না ফেলছে ।
নীতু পুরোটা না জানলেও কিছুটা জানে । আরিয়ান বলল, এখন একটা রিচু্য়্যাল করতে হবে যাতে কোন অশরীরি শক্তি তোমার কাছে না আসতে পারে । বুঝেছো ? এছাড়া এই রিচুয়্যালটা করার পরে তোমার সাথে আমার একটা বন্ড তৈরি হবে । সেটা তোমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভাঙ্গবে না । এর মানে হচ্ছে তুমি আর কখনই আমার থেকে আলাদা হতে পারবে না, আমাকে ছেড়েও যেতে পারবে না । আমার কাছ থেকে তোমার কোন কিছু লুকানো থাকবে না । ব্যাপারটা কি বুঝতে পারছো তুমি? ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নাও । যদি না করতে চাও রিচুয়্যালটা আমি তোমার উপর জোর করবো না । এবং আমি চেষ্টা করবো আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে তোমাকে রক্ষা করার । কিন্তু ওরা বারবার আসবে এবং আমাকে প্রতিবার জিততে হবে । ওদের কেবল এক বার জিতলেই হবে ! বুঝেছো ?
নীতু মাথা ঝাকালো !
-সিদ্ধান্ত নাও । এটা একান্তই তোমার সিদ্ধান্ত ।
আরিয়ান চলে যাচ্ছিলো নীতু বলল, আমাকেই কেন ওরা মারতে চায় ?
-কারণ তুমি আমাকে ডেকে নিয়ে এসেছো । তোমার ডাকেই আমি এসেছি । এবং সেখান থেকেই আমাদের একটা বন্ড ড়ৈরি হয়েছে ।
-তার মানে আমি নিজেই এসবের জন্য দায়ী !
আরিয়ান হাসলো একটু । হ্যা তুমি দায়ী নিজের এই অবস্থার জন্য । আমিও দায়ী । আমি সবার ডাকে আসি না ।
-আমার ডাকে কেন আসলেন তাহলে?
-জানি না । মনে হল যে আসি ।
-আপনি সত্য কথা বলছেন না । আপনি ঐ রাফায়েল নামের মানুষটার সামনে কী যেন বলেছিলেন ! আমি পুরোটা বুঝি নি তবে আমি জানি যে আপনি ঠিক কেন এসেছে সেটা আপনি ঠিক ঠিক জানেন !
আরিয়ান তাকিয়ে রইলো কিছু সময় নীতুর দিকে । কী যেন ভাবলো সে । তারপর বলল, হ্যা আমি জানি ।
-শুনি কারণ টা !
-তুমি আমার …..আমার এই সময়ের সঙ্গী । ব্রাইড বলতে পারো ।
নীতু কিছু সময়ে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, এই সময়ের বলতে?
-এই সময়ের বলতে তুমি মানুষ । মর্টাল । আমি যুগে যুগে টিকে থাকি । প্রতিটি সময়ে আমার সঙ্গী হিসাবে কেউ না কেউ আসে ।
-এই সময়ে আমি এসেছি?
-হ্যা ।
-আগেও এসেছে ?
-হ্যা।
-সর্ব শেষ গার্লফ্রেন্ড কবে ছিল ?
গার্লফ্রেন্ড শব্দ শুনে আরিয়ান হেসে ফেলল । তারপর বলল, এসেছে কিছু বছর আগে।
-কত বছর ?
আরিয়ান এবার তাকালো নীতুর দিকে । তারপর বলল সর্ব শেষ জন এসেছি আজ থেকে প্রায় সাড়ে চারশ বছর আগে ।
নীতু একটু চমকালো । তারপর বলল, এতো সময় ধরে আপনি একা রয়েছে । এর ভেতরে আর কেউ আসে নি ? মানে কেউ আপনাকে ডাকে নি ?
-ডেকেছে । অনেকেই ডেকেছে । কিন্তু আমি সাড়া দিই নি ।
-কেন দেন নি?
নীতু দেখতে পেল আরিয়ান কিছু বলতে গিয়েও যেন থেমে গেল । যেন কিছু তার মনে পড়ে গেল । এমন কিছু মনে পড়লো যার স্মৃতি আরিয়ানের জন্য কষ্টকর সেটা নীতু আরিয়ানের চেহারা দেখই বুঝতে পারলো । তাই মনে মনে ঠিক করলো যে আর কিছু জানতে চাইবে না । তবে নীতুকে অবাক করে দিয়ে আরিয়ান বলতে শুরু করলো ।
-কারণ সর্বশেষ যে জন এসেছিল সে আমার কারণে মারা গিয়েছিলো । আমি সময় মত ব্যবস্থা গ্রহন করি নি । যদি করতে পারতাম তাহলে সে মারা যেত না । আমি আর কারো মারা যাওয়ার কারণ হতে চাই নি । কিন্তু তুমি যখন সেদিন সেখানে এলে, সেদিন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারি নি । আর ….
-আর ….
আরিয়ান কিছু বলতে গিয়েই যেন বলল না । চুপ করে রইলো কিছু সময় । তারপর বলল, তাই আমি চাই রিচ্যুয়্যালটা হোক । যদিও শেষ সিদ্ধান্তটা তোমার একান্তই নিজের ।
নীতু বলল, আমি রাজি ।
-শিওর তুমি ?
-হ্যা । আমি রাজি ।
নীতু একবারে এভাবে রাজি হয়ে যাবে সেটা সম্ভবত আরিয়ান নিজেও ভাবে নি যে নীতু এতো জলদি রাজি হয়ে যাবে । নীতু নিজেও জানে না সে এতো জলদি কেন রাজি হয়ে গেল ! আরো একটু ভাবার দরকার ছিল নয় কি !
রাতের বেলা রিচুয়্যাল শুরু হল । আরিয়ানের এই বাড়ির নিচেই একটা বেজমেন্ট রয়েছে । সেখানে একটা সিঙ্গেল খাটের সমান বেডির উপরে নিতু উপুর হয়ে শুয়ে পড়লো আরিয়ানের কথা মত । তারপর শুনতে পেল আরিয়ান যেন কিছু বিড়বিড় করে বলছে । অদ্ভুত একটা সুর বেজে উঠলো যেন কানে । সেটা শুনতে শুনতে কখন যে ঘুম চলে নীতু নিজেও জানে না । তবে ঘুম ভাঙ্গলো প্রচন্ড ব্যাথায় । নীতু চোখ মেলে নড়াচড়ার চেষ্টা করলো কিন্তু অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো ওর সমস্ত শরীর যেখন অবশ হয়ে গেছে । একটুও নড়তে পারছে না । সেই সাথে এটাও অনুভব করলো যে ওর শরীরে কোন কাপড় নেই । সম্পর্ণ নগ্ন হয়ে উপুর হয়ে শুয়ে রয়েছে । আর তীব্র গরম যেন কিছু ওর শরীর উপরে পড়ছে । সেটা শরীরের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে । নীতু চিৎকার করার চেষ্টা করলো কিন্তু মুখের মাংসপেশীও যেন অবশ হয়ে গেছে । একটা আওয়াজ পর্যন্ত করতে পারলো না । প্রচন্ড ব্যাথায় আবারও জ্ঞান হারালো সে ।
আবার যখন জ্ঞান ফিরলো তখন নরম বিছানাতে নিজেকে আবিস্কার করলো । খাটের উপর শুয়ে রয়েছে । চোখ মেলেই দেখতে পেল আরিয়ান ওর পাশেই বসে রয়েছে । ওকে চোখ মেলতে দেখে বলল, একটু কষ্ট হবে এখন । শরীরে ব্যাথা থাকবে ।
নীতু নড়তে গিয়েই টের পেল পুরো শরীরে আসলেই প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করতে পারছে । এবং সেই একই ভাবে নগ্ন হয়েই সে বিছানাতে শুয়ে রয়েছে ।
আরিয়ানের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিল । চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো একটু । লজ্জা আর ব্যাথা মিশ্রিত চোখের পানি । আরিয়ান বুঝতে পারলো নীতুর অবস্থাটা । বলল, একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে আমার শক্তি ধারণ সহজ কথা নয় । তুমি ছাড়া অন্য কেউ হলে এতো সময় মারা পরতো সে । শরীরের দাগ আর ব্যাথা কমে যাবে দুই দিনের ভেতরে !
তখনই নীতু নিজের শরীরের দিকে তাকালো । পুরো শরীর জুড়ে অদ্ভুত কারুকার্যময় ট্যাটু আঁকা হয়েছে !
তীব্র বিস্ময় নিয়ে এবার তাকালো আরিয়ানের দিকে । আরিয়ান বললম ভয় নেই । এই চিহ্ন গুলো শরীরের সাথে মিশে যাবে দ্রুত । তুমি এখন বিশ্বাস নাও । চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকো কেবল ।
আরিয়ান চলে যাওয়ার পর নীতু আবারও ঘুমিয়ে পড়েছিলো । এভাবেই দুটো দিন পার হয়ে গেছে । আজকে ঘুম থেকে আয়নায় নিজেকে ভাল করে দেখলো । আরিয়ান বলেছিলো যে প্রথম দিনটা কোন কাপড় না পরতে । এই সময়ে পুরো শরীর আলো বাতাসে থাকাই ভাল । অবশ্য পরের দিন নিজেই পোশাক নিয়েছিলো ।
দরজা ঠেলে বের হয়ে এল নীতু । আরিয়ানকে দেখতে পেল রান্না ঘরে । এই বাসায় বিদেশের রান্না ঘর আর ডাইনিং রুম একই স্থানে । দেওয়ালের দিকে কিচেন কেবিনেট । তার সামনে ডাইনিং টেবিল । রান্না কর আর টেবিলে বসে খাও । অনেক মুভিতে দেখেছে নীতু ।
ওকে উঠে আসতে দেখে আরিয়ান হাসলো একটু । বলল, রান্না শেষ হয়েছে । খেতে এসো । খাবারের কথা শুনেই অনুভব করলো যে এই দুদিন খাওয়া হয় নি কিছুই । এখন যেন ক্ষুধা লাগছে বেশ ।
আফনানের জ্বলন্ত চোখ সম্পূর্ন রূপে উপেক্ষা করে নীতু সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো আফনান আবারও ওর পথ আগলে দাড়ালো । বলল, কাজটা ভাল করো নি তুমি?
-আমি ভাল করি নি? আমি তোমাকে বলেছিলাম আমাদের বাসায় যেতে ? বলেছিলাম? একবারের জন্য বলেছিলাম?
আফনান কথার জবাব না দিয়ে বলল, আমার বাবাকে ঐ ভাবে অপদস্ত না করলেও পারতে তুমি?
-আমি কাউকে অপদস্ত করতে চাই নি । তার মানে এই না যে আমাকে ধরে কেউ বিয়ে করতে চাইবে আমি রাজি হয়ে যাবো । কেউ যদি তোমার বাবাকে সেই অবস্থায় নিয়ে গিয়েছে সেটা তুমি কেবল নিজে আর কেউ না । বুঝেছো কথাটা ! শুনো তোমার সাথে যথেষ্ঠ কথা হয়েছে । আর না ! পথ ছাড়ো !
-আর তুমি যে ঐ লেকচারের সাথে রাত কাটাচ্ছো সেটা !
এবার নীতু খানিকটা রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না । হাতের কাছেই ছিল আফনান । বাম হাত দিয়ে একটা চড় মারলো আফনানের গাল বরাবর ! তারপর বলল, কত মানুষের সাথে তুমি শুয়েছো সেটা নিয়ে কেউ কিছু কোন দিন বলেছে ? আমি কার সাথে মিশবো না মিশবো সেটা নিয়ে বলার তুমি কে ? কে তুমি হু দ্য ফাক আর ইউ ! বড়লোক বাপের অযোগ্য একটা প্রোডাক্ত । কিছু করেছো আজ পর্যন্ত নিজে নিজে !
নীতু একটু থামলো । তবে কেন জানি রাগ কমলো না মোটেই । নীতু আবার বলল, মাকাল ফল চিনো আগে সেই মাকাল ফল ছিলে তুমি । বাইরের টা সুন্দর ভেতরটা কুৎসীত । আর এখন তো সেটাও নেই । এই দেখ চেহারা কী বিশ্রী হয়ে গেছে আর খোড়া হয়ে গেছে । তোমার মত ছেলেকে বিয়ে করবে শুনি । যদি করেও সেটা তোমার বাবার কারণে তোমার কারণে না । বুঝতে পারছো নিজের অবস্থান !
আফনান নীতুর কাছ থেকে এমন প্রতি উত্তর মোটেই আশা করে নি । এভাবে ওকে আর কেউ কোন দিন অপমান করে নি । তাকিয়ে দেখলো অনেকেই ওকে দেখছে । আফনানের মনে হল নীতু যা বলছে সবাই সেটা বিশ্বাস করে নিচ্ছে । সবার চোখে যেন একটা করুণার অনুভতি দেখতে পাচ্ছে যেন । আফনান সেখান সোজা হাটতে শুরু করলো । তবে পায়ের কারণে ঠিক মত যেন হাটতেও পারছিলো না ।
পুরো ঘটনা দুর থেকেই আরিয়ান দেখতে পেল । মুখে একটা হাসি দেখা দিল ওর । এতো দুর থেকে নীতুর রাগান্বিত চেহারা ও খুব ভাল করেই দেখতে পাচ্ছে । তবে সেটা অবশ্য খুব একটা নেই দেখার । আরিয়ান নীতুর মনের রাগটা অনুভব করতে পারছে পরিস্কার ভাবেই । ওদের ভেতরে যে বন্ড তৈরি হয়েছে সেটার কারণে নীতুকে পরিস্কার ভাবে অনুভব করতে পারে এখন । একটু মনযোগ দিলে সে কী চিন্তা করে সেটাও বুঝতে পারে পরিস্কার । তবে সেটা আরিয়ান করতে চায় না । তবে তীব্র অনুভূতি গুলো না চাইতেও চলে আসে ওর কাছে ।
সারা দিনে বেশ কয়েকটা ক্লাস অন্য একাডেমি কাজে আরিয়ান ব্যস্ত রইলো । নীতু ওকে একবার ফোন দিয়েছিলো । কাজ আছে শুনে আর বেশি কথা বাড়ায় নি । জানালো যে ক্লাস শেষ করে ও টিউশনিতে যাবে । তারপর সেখান থেকে বাসায় । আরিয়ান নিজের কাজে ব্যস্ত থাকলেও নীতুর উপস্থিতি সে ঠিকই অনুভব করতে পারছিলো । এমন যেন সব সময় নীতু ওর সাথেই রয়েছে । সব কাজ শেষ করতে করতে সন্ধ্যা হল । আগামীকাল ফোর্স সেমিস্টারের রেজাল্ট দিতে হবে । সেটার কাজই করছিলো ও । একটু আড়মোড়া ভেঙ্গে বারান্দায় ফিরে এল । ক্যাম্পাসের সব গাড়ি চলে গেছে । বলতে গেলে একেবারে ফাঁকা হয়ে গেছে । কর্মচারিদের কিছু রয়েছে । আর কিছু পলিটিক্যাল ছেলেরা বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে এখানে ওখানে । আর কেউ নেই কোথাও !
ঠিক এই সময়ে আরিয়ান অনুভব করতে পারলো নীতুর কিছু হয়েছে । হঠাৎ করে কোন বিপদে পড়লে যেমন মানুষের মন চমকে উঠে ভয়ে নীতুরও ঠিক সেই অনুভূতি হয়েছে । তার মানে নীতু বিপদে পড়েছে । আরিয়ান অন্য কিছু ভাবলো না আর । সে ঠিক ঠিক জানে নীতু কোথায় আছে । সেখানেই যেতে হবে ওকে ।
ওভাবেই সে দ্রুত সিড়ি দিয়ে নেমে এল দৌড়ে । তারপর বাইকের দিকে দৌড়ে যেতে যাবে তখনই মনে হল কিছু যেন এখানেও ঠিক নেই । কেউ ওকে উদ্দেশ্য করে কিছু একটা ছুড়ে দিয়েছে । মনযোগ নীতুর দিকে ছিল বলেই অন্য দিকে খেয়াল করে নি সে । বলের মট জিনিসটা এসে থামলো ওর পায়ের কাছে । সেটা চিন্তে পারলো আরিয়ান ।
হাত দিয়ে নিজের চারিপাশে একটা বলয় তৈরির চেষ্টা করলো বটে তবে পুরো টুকু কাজ হল না । তীব্র একটা শব্দে বোমাটা ফাটলো । আরিয়ান ছিটকে পড়লো দুরে । মাথার ভেতরটা কেমন যেন ঝিমঝিম করে উঠলো আরিয়ানের ।
কয়েক মুহুর্তের জন্য যেন চেতনাও হারিয়ে ফেলল সে । তবে সেটা ফিরে এল সাথে সাথেই । উঠে বসলো সে । দেখতে পেল পলিটিক্যাল ছেলে গুলো দৌড়ে আসছে ওর দিকে । ওকে অভাবে উঠে বসতে দেখে অবাক হল ওরা । বলল, স্যার আপনি ঠিক আছে ।
পুরো শরীর ধুলোবালিতে ভরে গেছে তবে শরীরের ক্ষতি হয় খুব একটা । আরিয়ান উঠতে উঠতে বলল, হ্যা ঠিক আছে । আড়াল নিয়েছিলাম ।
আরিয়ান তখনই আবিস্কার করলো যে নীতুকে সে অনুভব করতে পারছে না । বোমাটা ফাঁটার আগেও নীতুকে সে বুঝতে পারছিলো, ওর ভয় অনুভব করতে পারছিলো । কিন্তু এখন আর নীতুকে সে অনুভব করতে পারছে না ।
আরিয়ান বড় অসহায়বোধ করলো । তবে এটা নিশ্চিত যে কোন জাদু বা অশরীরি জিনিস নীতুর কোন ক্ষতি করতে পারবে না । ওকে যে বা যারা নিয়েছে তারা অতিপ্রাকৃত কিছুর সাথে যুক্ত নয় ।
তাহলে ওকে কে ধরলো !
আর কেনই বা নিল !
জয়েন করুন হোয়াটসএপ গ্রুপ অথবা টেলিগ্রাম চ্যানেলে ।
Discover more from অপু তানভীর
Subscribe to get the latest posts sent to your email.
গল্পটি সুন্দরভাবে এগিয়ে চলেছে। তবে দীর্ঘ ব্যবধানে গল্পের ছন্দ হারাচ্ছিলাম। আশা করছি পরের পর্ব শীঘ্রই আপলোড করবেন।
নানান ব্যস্ততা আর কাজের কারণে চাইলেই দ্রুত পর্ব লেখা সম্ভব হয় না ।