মেয়েটি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেই চলেছে । হাত পা ছাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছে । কিন্তু পারছে না । মেয়েটির হাত পা লোহার খাটের কাছে শক্ত করে বাঁধা । মুখ দিয়ে বের করছে একটা জান্তব আওয়াজ । একটা পুরুষালী আওয়াজ বের হচ্ছে । কেউ যেন মেয়েটির কন্ঠকে কথা বলছে । দুইটা কন্ঠস্বর একই সাথে কিছু বললে যেমন শোনা যায় ঠিক তেমন ভাবে শোনা যাচ্ছে মেয়েটির কন্ঠস্বর ।
মেয়েটির এক্সারসিজম চলছে । কিন্তু কোন ভাবেই মেয়েটির শরীর থেকে অতৃপ্ত আত্মাটাকে বের করা সম্ভব হচ্ছে না । পবিত্র পানি ছিটিয়ে কিংবা গ্রন্থ থেকে ঈশ্বরের কথা শুনিয়েও কাজ হচ্ছে না কোন ভাবে । এইদিকে মেয়েটির অকথ্য ভাষায় যাজককে গালিগালাজ করেই চলেছে। হাইপ্রিস্ট যখন খানিকটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন ঠিক তখনই ঘরের দরজাটা খুলে গেল ।
ঘরে থাকা সবার চোখ চলে গেল সেদিকে । এক্সারসিজমের সময়ে কারো ঘরের আসার নিয়ম নেই । কিন্তু তারপরেও দরজাটা খুলে গেল । হাইপ্রিস্ট যখন মুখ দিয়ে কিছু বলতে যাবেন তখনই খেয়াল করলেন যে এতো সময়ে মেয়েটির যে দম্ভ দেখাচ্ছিলো সেটা ভীত চোখে তাকিয়ে রয়েছে দরজার দিকে । অর্থ্যাৎ দিয়ে যে প্রবেশ করতে যাচ্ছে তার অস্তিত্ব সে আগেই টের পেয়ে গেছে । এবং তাকে দেখে সে ভয় পাচ্ছে ।
তারপরেই দরজা দিয়ে সে প্রবেশ করলো । হাইপ্রিস্ট সাথে সথেই চিনে ফেলল তাকে ।
রাফায়েল !
রাফায়েল কারো দিকে তাকালো না । কাউকে কোন ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টাও করলো না । সরাসরি মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেল । হাইপ্রিস্ট রাফায়েলকে পছন্দ না করলেও তার সাহায্য তাকে নিতে হয় মাঝে মাঝেই । ছেলেটার ভেতরে এমন কিছু আছে যা তিনি এখনও বুঝে উঠতে পারেন নি । তবে সব সময় রাফায়েল মানুষের উপকারই করে এসেছে । তারপরেও রাফায়েলের মাঝে যেন কিছু অশুভ একটা ব্যাপার আছে । তিনি সেটা ঠিক বুঝতে পারেন কিন্তু সেই অশুভ ব্যাপারটা যে সেটা তিনি জানেন না ।
রাফায়েল মেয়েটির সামনে গিয়ে দাড়াতেই মেয়েটি আবারও চিৎকার করা শুরু করলো । তবে এবার সেটা ভয়ে । নিজের জীবন বাঁচানোর মত ভয়ে । সর্বশক্তি দিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো সে কিন্তু পারলো না ।
রাফায়েল মেয়েটির কাছে এগিয়ে নিজের বাম হাতটা তার মাথার উপরে রাখলো । কিছু একটা করতে যাবে তখনই মেয়েটি কাতুতি করে মিনতি করে বলল, আমাকে ছেড়ে দাও, আমাকে ছেড়ে দাও আমি এখনও এই মেয়েটিকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি ।
রাফায়েল একটু যেন হাসলো । তারপর বলল, তা তো তুমি যাবেই ।
-আমাকে মেরে ফেলো না । আমাকে চলে যেতে দাও । আমাকে চলে যেতে দাও।
-তোমাকে চলে যেতে দিয়ে আমার লাভ কি ! আছে কি? এর থেকে বরং ঝামেলা দুর করি !
-দাড়াও দাড়াও আমাকে যেতে দিলে আমি এমন একটা তথ্য দিবো যা পেলে তুমি খুশি হবে ।
-তোমার কাছ থেকে আমার কোন কিছু জানার নেই ।
-আছে আছে । তোমাকে চেনে এমন একজনকে মেরে ফেলতে লুক্তুম পাঠানো হয়েছে। খুব জলদি সে মারা যাবে !
রাফায়েল একভাবে তাকিয়ে রইলো মেয়েটির দিকে । মেয়েটি আবারও বলল, আমাকে যেতে দিলে আমি তোমাকে বলে দিবো সে কোথায় আছে ।
রাফায়েল আরেকটু চিন্তা করছে । স্প্রিটরা মিথ্যা বলতে পারে না । অর্থ্যাৎ ওকে ধোকা নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার উপায় নেই । তার মানে সত্যিই লুক্তুম পাঠানো হয়েছে কাউকে মেরে ফেলতে । লুক্তুমকে ডেকে আনা খুব সহজ কাজ নয় । কাজটা কে করতে পারে?
-ঠিক আছে । যেতে দিচ্ছি কিন্তু এরপর যদি অন্য কারো শরীরে ভর কর তাহলে সেখানেই তোমার ভব লঙ্গ সাঙ্গ করে দিবো ।
নীতু কিছু সময় কেবল তাকিয়ে রইলো মানুষটার দিকে । মানুষটা এমন ভাবে ওর সামনে দিয়ে হেটে যেন কিছুই হয় নি । একটু আগে ওর সামনে দিয়ে হেটে সে প্রাণীটার কাছে এগিয়ে গেল । ওর যে রাস্তার উপরে বসে আছে সেটা যেন দেখেও দেখলো না । মাটিতে পড়ে থাকা প্রাণীটার দেহের কাছে দাড়িয়ে কী যেন পরীক্ষা করতে থাকলো ।
নীতু কিছু বলতে যাবে ঠিক সেই সময়েও আওয়াজটা শুনতে পেল নীতু ।
ঘোড়ার খুরের আওয়াজ !
নীতু দেখতে পেল সামনে দাড়ানো মানুষটাও সেই আওয়াজটা শুনতে পেয়েছে । তবে একবার আওয়াজের দিকে তাকিয়ে আবারও দেহটার দিকে ফিরে তাকালো সে । জিনিসটা দেখতে শুরু করলো ।
আরিয়ান ঘোড়া এসে থামলো নীতু পাশে । নীতু উঠে দাড়িয়েছে ততক্ষনে । আরিয়ান ঘোড়া থেকে নেমে নীতুর দিকে তাকিয়ে বলল, ইউ ওকে!
নীতুর হঠাৎ কেন জানি খুব অভিমান হল আরিয়ানের উপর । কেন এমন মনে হল সেটা নীতু নিজেও জানে না । বারবার কেবল মনে হল যে কেন সে সময় মত এল না । আরেকটু হলেই তো নীতুর মারা পড়তো !
নীতু নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে নিল । তারপর বলল, আমি ঠিক আছি ।
ঠিক শব্দটা শোনার পরেও আরিয়ানের মুখ থেকে যেন চিন্তার রেখাটা চলে গেল না । সে আরো কিছুটা সময় তাকিয়ে রইলো নীতুর দিকে । নীতুর মনে হল যে আরিয়ান ওর পুরো দেহ পর্যবেক্ষণ করছে । নিজে দেখে আস্বস্ত হওয়ার চেষ্টা করছে যে আসলেই নীতু ঠিক আছে কিনা !
-নীতুর কিছু হয় নি !
আওয়াজটা এল সেই মানুষটার কাছ থেকে । আরিয়ান এবার ফিরে তাকালো তার দিকে । নীতু দেখতে পেল তার হাতে একটা মরা বাদুর রয়েছে । মানুষটা অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে ।
প্রথমে নীতুর দিকে তারপর আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে মানুষটা বলল, এই কী অকাজ করেছো শুনি?
আরিয়ান বলল, কিছু করি নি ।
-তাহলে এই মেয়েটার উপরে লুক্তুম কেন ছেড়ে দিলো কেউ ?
-আমি কী জানি তার?
-তো কে জানে?
-তোমাকে না বলেছি মানুষের জীবনে অশান্তি নামিয়ে আনবে না । সাধারণ মানুষের সাথে তোমার মেলামেশা সেই মানুষটার জন্য যে বিপদজনক সেটা কি তুমি জানো না !
-কেন আপনি মেশেন না?
-আমি কেবল তাদের সাথেই মিশি যাদেরকে আমি প্রোটেক্ট করতে পারি ! বি রিসপনসেবল !
আরিয়ান কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু থেমে গেল । নীতুর কেবল মনে হল যে সামনে দাড়ানো মানুষটা আরিয়ানকে বকছে । এবং আরিয়ান সেটা মেনেও নিচ্ছে । ব্যাপারটা নীতুর কাছে বড় অদ্ভুত লাগছে । তার মানে হচ্ছে আরিয়ান সম্পর্কে সে জানে খুব ভাল ভাবেই ।
আরিয়ান বলল, এর পর থেকে আমি সাবধান হব ।
-তাই হও । প্রতিবার আমার কাছে খবর আসবে না । প্রতিবার আমিও আসবো না ।
আরিয়ান বলল, থেঙ্কিউ !
-এই মেয়েটাই কি……
বাক্যটা শেষ করলো না সে । আরিয়ান বলল, হ্যা । শী ইজ দ্য ওয়ান ।
-তুমি নিশ্চিত ?
-হ্যা ।
-তাহলে তুমি জানো এমন হতেই পারে । সাবধান কেন হও নি ?
আরিয়ান কোন জবাব দিলো না । নীতু দেখলো মানুষটা ওর দিকে একটু এগিয়ে এল । তারপর নিজের পকেট থেকে একটা হলুদ রংয়ের লেবুর মত বল বের করে দিল ওর হাতে । বলল, এটা সাথে রাখো । তোমার ইরেসপেনসিবল বয়ফ্রেন্ড সময়মত না আসলে একটা কাজে দিবে । যখন এর সাথে জড়িয়েছো বিপদ সহজে পিছু ছাড়বে না ।
নীতু হাত বাড়িয়ে সেটা নিল । নীতু দেখলো এরপর সে আর কিছু না বলে যেদিক থেকে এসেছিলো সেদিকেই চলে গেল ।
সে চলে যেতেই নীতু বলল, ইনি কে ?
আরিয়ান যেন কথাটা শুনতে পায় নি । সে নিজের চিন্তায় মগ্ন । কিছু নিয়ে যেন ভাবছে । নীতু আবার বলল, ইনি কে?
-ওর নাম রাফায়েল ।
-কে হয় আপনার?
আরিয়ান যেন চিন্তা করলো একটু । তারপর বলল, আমাদের সম্পর্ক আসলে ঐ ভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে না ।
-তাহলে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে?
-তোমাদের ভাষায় বললে সে সম্পর্কে আমার কাজিন ব্রাদার হয় !
-কাজিন !
-ঐ রকমই কিছু ধরে নাও । এখন এখান চল । আগে আমাকে বের করতে হবে কে তোমার পেছনে লেগেছে !
নীতু নড়লো না । তার আগে বলল, আমাকে আগে বল যে রাফায়েল আমাকে ঐ কথা কেন বলল? বিপদ আমার পিছু ছাড়বে না কেন? আমাকে কেন কেউ বিশেষ এই সুপারন্যাচারাল কেউ আমাকে মারতে চাইবে?
-এসব পরে হবে !
-না এখনই বল !
নীতুর দৃঢ়তা দেখে আরিয়ান একটু অবাক হল বটে । তবে বুঝলো যে এখন নীতুকে বলতে হবে । আরিয়ান বলল, কারণ তুমি হার্সম্যানের ব্রাইড ! তোমাকে মেরে ফেলতে পারলে ওরা আমাকে আটক করতে পারবে । আমার এনার্জি নিজেদের কাজে ব্যবহার করতে পারবে ।
-আমি কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ হলাম । মানে কিভাবে?
-কারণ আমি তোমাকে চুজ করেছি । এটা সত্য যে তোমাকে চুজ করে আমি তোমার জীবন খানিকটা বিপদে ফেলে দিয়েছি কিন্তু তারপর থেকেও বেশি নিজেকে ভলনারেবল করেছি । একজন হর্সম্যান যখন কাউকে নিজের ব্রাইড হিসাবে চুজ করে তখন নিজের অংশ তার ভেতরে দিয়ে দেয় । এই কারণে হর্সম্যানরা সারা জীবন একাই থাকে ।
-তার মানে আমি আপনার সেই দৈত্যের প্রাণ ভমরা !
আরিয়ান হেসে ফেলল । বলল, হ্যা তেমন টাই ধর !
নীতু আর কিছু জানতে চাইলো না । আরিয়ান বলল, এবার থেকে আমি সাবধান থাকবো । কোন অতিপ্রাকৃত প্রাণী যাতে তোমার কাছে না আসতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখবো আমি ।
-গুড ! চল এখন!
তখনই নীতুর মনে পড়লো ও কিভাবে বাসা থেকে পালিয়ে এসেছে আর কেন এসেছে । নীতু বলল, বাসায় যাবো না ।
-কেন?
-কারণ আমি বাসা থেকে পালিয়ে এসেছি । নয়তো আমাকে আজই বিয়ে দিয়ে দিতো ।
আরিয়ান হেসে ফেলল । তাহলে কোথায় যাবে?
-জানি না ।
নীতু মুখে যদিও বলল যে জানে না কোথায় যাবে তবে সে খুব ভাল করেই জানে যে এখান থেকে কোথায় যাবে সে ।
#
-স্যার রাফায়েল চলে আসবে আমরা বুঝতে পারি নি ।
কথাটা বলে একটু ভয়ে ভয়ে সামনে তাকালো ছেলেটি । ঘরের সব আলো বন্ধ তবে জানালা খোলা থাকার কারণে বাইরে থেকে আলো ঠিকই আসছে । সেখান থেকে তাকে দেখা যাচ্ছে । কম বয়সী ছেলেটি ভয়ে ভয়ে সেদিকেই তাকিয়ে আছে । সে বলল, রাফায়েল কিভাবে খোজ পেল । ঠিক মত বলয় তৈরি করা হয় নি
-জ্বী স্যার হয়েছিলো ।
-তুমি জানো বলয়ের ভেতরের খবর কেউ পায় না । তাহলে রাফায়েল কিভাবে পেল ?
-স্যার ডিমনদের মাঝে ঠিকই যোগাযোগ থাকে আপনি জানেন । এই রকম একটা ডিমন বলে দিয়েছে লুক্তুম অবস্থানটা । আর আপনি তো রাফায়ে সম্পর্কে জানেনই । তার পক্ষে অনেক কিছুই সম্ভব !
ছেলেটি দেখলো সে চোখ বন্ধ করে কি যেন ভাবছে । ছেলেটি ভয়ে ভয়ে দাড়িয়েই রইলো । আরও একটা কথা বলতে চাইছে কিন্তু বলতে সাহস পাচ্ছে না । সে বলল, তার মানে ঘোড়সাওয়ার এখন সাবধান হয়ে যাবে । আর ঐ মেয়েটিকে আক্রমন করা যাবে না । কোন লাভ হবে না ।
কম বয়সী ছেলেটি একটু হাফ ছেড়ে বাঁচলো । এই কথাটাই সে বলতে যাচ্ছিলো । নীতু নামের মেয়েটির উপরে হর্সম্যান নিজের প্রোটেকশন সীল বসিয়ে দিয়েছে । এখন আর কোন জাদু কিংবা জাদুর প্রাণী নীড়ুর কোন ক্ষতি করতে পারবে না ।
সে বলল, এখন অন্য ভাবে নীতুর ব্যবস্থা করতে হবে । কিন্তু কিভাবে !!
দারুন!!
পড়া শুরু করতেই যেন শেষ হয়ে আসে গল্পগুলো।
দ্রুতই পরের পর্ব পাবো আশা করছি, আর একটু লম্বা করে লিখলে মনে হয় আমাদের মত এই অতৃপ্ত আত্মারা শান্তি পায়।
শুভকামনা