নীতু এন্ড দ্যা হর্সম্যান (৪র্থ পর্ব)

oputanvir
4.7
(26)

নীতুর জীবনে আবারও বড় রকমের পরিবর্তন এসেছে । বিশেষ করে ঐদিন আরিয়ান কবীরের সাথে বাইকে করে সবার সামনে বের হয়ে আসার পরে সবার নজর এখন নীতুর দিকে । ক্লাসের মেয়ে গুলো ওর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে । সেটা নীতু খুব ভাল করে বুঝতে পারছে । এমন কি ওর কাছের বান্ধবীও ওকে কেমন যেন এড়িয়ে চলছে । সবার চোখেই ওর প্রতি একটা ঈর্ষা দেখতে পাচ্ছে ও । তবে ছেলেদের চোখে সেটা দেখছে না । তারা যেন একটু খুশি হয়েছে । কারণ আগে সব মেয়েরা যেমন করে আরিয়ান কবীরের দিকে ঝুকে ছিল নীতুর কাছে সেটা ছুটে গেছে । ছেলেরা আবার তাদের অবস্থান ফেরৎ পেয়েছে । তবে একজন ছেলে ঠিক খুশি নয় । সেই ছেলেটা হচ্ছে আফনান ।

নীতু আবিস্কার করতে পারছে যে আফনান ওর প্রতি এবার সত্যি সত্যি আগ্রহী উঠেছে এবং খুব করে চাইছে ওর সাথে পুনরায় সম্পর্কে গড়ে তুলতে । বেশ কয়েকবার সে নীতুর সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে । নানান ভাবে তাকে বুঝানোর চেষ্টা করছে । আজও ক্লাসের পরে নীতুর সামনে এসে হাজির হল আফনান । ওর পাশে বসতে বসতে বলল, তুমি কি আরিয়ান স্যারের ব্যাপারে খোজ খবর নিয়েছো?

নীতু খানিকটা বিরক্ত নিয়ে তাকালো আফনানের দিকে । তারপর বলল, আফনান তুমি একটু বেশি অনধিকার চর্চা করছো না কি?
আফনান নীতুর কথা শুনে দমে গেল না । বরং বলল, আমি খোজ নিয়েছি । মাস তিনেক আগে এই মানুষটার এই ঢাকাতে কোন অস্তিত্ব ছিল না । যেন হঠাৎ করে সে শূন্য থেকে উড়ে এসেছে পড়েছে । এমন একটা মানুষকে নিয়ে তোমার চিন্তা হচ্ছে না?
-আমার চিন্তা নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না আফনান । আমারটা আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে দাও । আর আমি জানি যে কোথা থেকে এসেছে ।

কথাটা বলেই নীতু একটু থামলো । একবার একটু চিন্তা করলো সে কথাটা বলবে কিনা । তারপর বলল, সে আমার কারণেই এসেছে এখানে । যদি তুমি এতোই আগ্রহী হয়ে থাকো তাহলে শুনে রাখো যে আরিয়ানের এখানে আসার প্রধান কারণ আমি । খুশি এবার?

আফনান খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো নীতুর দিকে । ওর যেন ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না নীতুর কথা । আপনা আপনি মুখ একটা প্রশ্ন বের হয়ে গেল আফনানের । বলল, মানে? তোমার কারণে এসেছে বলতে?
-সব কিছুর মানে বুঝতে হবে না তোমার ! আর আমি এই ব্যাপারে তোমার সাথে আর কোন কথা বলতে আগ্রহী নই ।

আফনানকে আর কোন সুযোগ না দিয়ে নীতু ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে গেল । সত্যি সত্যিই মনের ভেতরে একটা বিরক্তবোধ আফনানের এই অযাচিত ভাবটা দেখে । আফনানের আজকের এই অবস্থার জন্য নীতু নিজে দায়ী । তার কারণেই আফনানের ঐ দুর্ঘটনা ঘটেছিলো । সেই হিসাবে আফনানের প্রতি নীতুর একটা সহানুভূতি থাকা উচিৎ কিন্তু নীতুর মনের আফনানের জন্য বিন্দু মাত্র সহানুভূতি নেই । বিশেষ করে ওকে নিয়ে ঐ খেলার পর থেকে আফনানের প্রতি একটা ঘৃণাই কেবল কাজ করেছে মনে । নীতুর কেবল মনে হয়েছে যে আফনান কেবল নিজের কর্মফল ভোগ করেছে আর কিছু না । যদি সে ওর সাথে এই ঘৃণ্য খেলাটা না খেলতো তাহলে আজকে নীতু কিংবা আফনান কারোর জীবনই এমন হত না । নীতু থাকতো নিজের মত । নতুন করে কোন স্বপ্ন দেখতো না, এভাবে অপমানিত হত এবং এভাবে প্রতিশোধ পরায়নও হয়ে উঠতো না ।

নীতুর মনে হয়েছিলো আফনান বুঝি কেবল ওকে ক্যাম্পাসেই এভাবে জ্বালাতন করবে । কিন্তু সে যে তার বাসায় চলে যাবে সেটা সে ভাবে নি কখনই । পরের দিন শুক্রবার ছিল । যদিও শুক্রবারেও নীতুর টিউশনি থাকে । টিউশনি থেকে বাসায় হাজির হয়ে নীতু তীব্র বিস্ময় নিয়ে দেখতে পেল আফনান এসে হাজির হয়েছে ওর পুরো ফ্যামিলি নিয়ে । নীতু যখন ঘরে প্রবেশ করলো তখনই একটা ধাক্কার মত খেল । আফনান বসে রয়েছে একজন ভদ্রলোক আর একজন ভদ্রমহিলার সাথে । এরা যে ওর বাবা মা সেটা বুঝতে কষ্ট হল না । ওর ঘরে ঢুকতেই দেখতে পেল ওর বাবা হাসি মুখে এগিয়ে এল । বলল, আরে তুই এতো দেরি কেন করলি?

নীতু আসলে কী বলবে ঠিক খুজে পেল না । পুরো ব্যাপারটার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগলো । ব্যাপারটা যে এই দিকে যাবে সেটা সে ভাবতও পারে নি । পরিস্থিতি ওর হাত থেকে এভাবে চলে যাবে এটা সে ভাবতে পারে নি । এখন সে কী করবে!

ঐদিন রাতের খাওয়া দাওয়ার পরেই বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হল । আফনানের ইচ্ছে আজই আকদ হয়ে যাবে । এমন ভাবেই ওরা প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল। নীতুর বাবা কোন ভাবেই এই বিয়েতে অমত দিতে পারলেন না । আফনান বাবা একজন ব্যবসায়ী তার উপর রাজনীতি করেন । ছেলে নীতুর সাথেই পড়ে । এছাড়া নীতু সাথে নাকি তার একটা ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল । তবে মাঝে ওদের মাঝে একটু ঝগড়া হয়েছি । নীতু অভিমান করে ওর কাছ থেকে দুরে রয়েছে । কিন্তু এখন আফনান ওকে বিয়ে করতে চায় ।

একেবারে শেষ মুহুর্তে নীতু বলল, আমি এই বিয়ে করবো না ।
আফনানের বাবা হাসি মুখে বললেন, দেখো মান অভিমান রাগ এই সব একটু হয় সম্পর্কে । বিয়ে একটা বড় ব্যাপার ! আমার ছেলে তোমাকে সত্যিই ভালোবাসে । আর আমি আমার ছেলের খুশির জন্য সব করতে পারি !

নীতুর ভেতরে কোথা থেকে এতো সাহস এল নীতু নিজেও জানে না । সে কঠিন গলাতে বলল, আপনার ছেলে আমার সাথে কী করেছে আপনি জানেন না । আপনার ছেলে বলে নি আপনাকে? আমি আপনার ছেলেকে কোন ভাবেই বিয়ে করবো না ।
এবার নীতু দেখতে পেল আফনানের বাবার মুখের হাসি মিলিয়ে গেল । সে নীতুর বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার মেয়ে বোঝান । সে যদি স্ব ইচ্ছেতে রাজি না হয় তাহলে আমি জোর খাটাতেও পারি । আপনি জানেন আমি কী করতে পারি !

নীতুর বাবা খানিকটা অসহায়ের মত করে নীতুর দিকে তাকালো । নীতুর যা বোঝার বোঝা হয়ে গেল । সবাই ভেবেছিলো যে নীতু বুঝি এখন রাজি হয়ে যাবে । তবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে নীতু সোজা বাসার সদর দরজার দিকে দৌড় দিল । এক ঝটকাতে দরজা খুলে ফেলল । সামনেই ওর স্যান্ডেলটা ছিল । সেটা পায়ে আটকিয়ে সোজা সিড়ির দিকে দৌড় দিল লিফটের জন্য অপেক্ষা করলো না ।

যখন সে সিড়ি দিয়ে নিচে নামছিলো তখন ওর বারবার মনে হচ্ছিলো যেন ওর পেছনে কেউ দৌড়ে আসছে । আফনানের পা ঠিক থাকলে হয়তো দৌড়ে আসতো সে ।
গেট দিয়ে বের হলে নীতু কোন দিকে দৌড় দিলো সেটা সে নিজেও জানে না । কিছু সময় সে কেবল সে দৌড়াতেই থাকলো । একটা সময় নীতু থামলো । রাস্তার পাশে দাড়িয়ে সে একটু দম নিতে শুরু করলো । যখন স্থির হল তখন চারিদিকে তাকানোর সুযোগ পেল সে । একেবারে অন্য কোন জায়গাতে চলে এসেছে যেন !
কত সময় দৌড়িয়েছে সে!
আশে পাশের জায়গা টা সে ঠিক চিনতে পারছে না । অবশ্য এভাবে চট করে অপরিচিত জায়গাতে চলে যাওয়াটা ওর কাছে স্বাভাবিক একটা ব্যাপার হয়ে গেছে । আরিয়ান যখন আসে ওর সামনে আসে তখন চারিদিকের পরিবেশ এমনিতেই বদলে যায় । সব কিছু কেমন অন্য রকম হয়ে যায় । আজও কি তেমন কিছু হয়েছে?
আরিয়ান আসবে এখন?

নীতু চারিদিকে তাকাতে লাগলো ! একটু যেন বেশী ঠান্ডা হয়ে গেছে চারিদিক । পরিবেশটা হঠাৎ করেই বদলে গেল । নীতুর মনে ঠিক সেই সময়ে অজানা একটা ভয় এসে জড় হল ! আরিয়ান যখন আসে তখন কখনও এমন মনে হয় না । আজকের অবস্থা একেবারে অন্য রকম মনে হচ্ছে নীতুর কাছে ।
নীতু এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো । ও এখান থেকে বের হওয়ার জায়গা খুজছে ।

আরিয়ান বলেছিলো যদি এমন কোন ঘটনা ঘটে যখন ওকে ওর দরজার হয় তখন যেন সে নিজের মন থেকে ওকে ডাকে । ডাক দিলেই সে শুনতে পাবে । এমন একবার সে চেষ্টাও করেছিলো । প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিলো । টিউশনি থেকে বাসায় ফিরতে পারছিলো না । তখন একমনে আরিয়ান কে ডাক দিল । ঠিক ৫ মিনিটের ভেতরেই ওর কাছে ফোন এসে হাজির । জানালো যে ও ঠিক বাসার সামনে এসে হাজির হয়েছে । বাইরে বের হয়ে দেখলো রেইনকোট পরে আরিয়ান দাড়িয়ে ।

আজকে স্থির হয়ে কয়েকবার ডাকলো আরিয়ানের নাম ধরে । কিন্তু নিজের কাছেই মনে হল ডাকটা যেন আরিয়ান শুনতে পেল না । ঐদিন নিজেও বুঝতে পেরেছিলো যে আরিয়ান শুনেছে কিন্তু আজকে এমন কোনা অনুভূতি হল না নীতুর ! নীতু এখন কী করবে?
নীতু জানে না !

ঠিক সেই সময়েই দেখতে পেল জিনিসটাকে । মানুষের মত দেখতে তবে মানুষ যে নয় সেটা নীতু বুঝতে পারলো । এবং নীতু এটাও বুঝতে পারলো সে প্রাণীটা ওর ক্ষতি করতে আসছে ওর দিকে । নীতু আবারও নিজের ভেতরে দৌড়ানোর একটা তাড়না অনুভব করলো সে ।

দৌড়াতে শুরু করলো আবারও । এবং সাথে সাথে নীতু বুঝতে পারলো যে ওর পেছনে প্রাণীটাও এগিয়ে আসছে । পায়ের আওয়াজ সে শুনতে পাচ্ছে খুব ভাল করেই । তবে নীতু খুব বেশি দুরে যেতে পারলো না । রাস্তার উপরেই হোচট খেয়ে পড়ে গেল । কোন মতে হাত দিয়ে পতন থেকে ব্যাথা পাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেল বটে তবে সেটা একেবারে ব্যাথাহীন হল না পতনটা !
মুখ দিয়ে একটা আর্তচিৎকার বের হয়ে গেল । কিন্তু তারপরই মনে হল যে এই ব্যাথার থেকেও ভয়ংকর ব্যাপার সামনে রয়েছে । মানুষের মত প্রাণীটা ঠিক ওর সামনে এসে দাড়ালো । অন্ধকার মুখের দিকে তাকিয়ে নীতুর মনে হল সেটা হাসছে । ভয়ংকর চোখে সেটা তাকিয়ে রয়েছে ওর দিকে । এখনই যেন ঝাপিয়ে পড়বে ওর উপরে ।
তারপর?
এভাবেই মারা যাবে সে?

যখন মনে হল যে প্রাণীটা এখনই হামলা করবে, ঠিক তখনই একটা আওয়াজ শুনতে পেল ।
অপ্রে ভিয়েস্টা !

তারপরই এলো আলোর ঝলকানিটা ! এসে সোজা লাগলো নীতুর সামনে দাড়ানোর প্রাণীটার শরীরে । এক ধাক্কায় কয়েক হাত দুরে গিয়ে পড়লো ! আর উঠলো না । নীতু কয়েক মুহুর্ত কেবল বোকার মত করে তাকিয়ে রইলো সেদিকে । ঠিক বুঝতে পারছে না কী হল । কিভাবে হল !

নীতু উঠে বসলো কোন মতে। পেছনে ফিরে তাকালো যেদিক থেকে । আলোর ঝলকানীটা যেখান যেদিক থেকে এসেছে তাকালো ।

আগের পর্ব পরের পর্ব

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 26

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

2 Comments on “নীতু এন্ড দ্যা হর্সম্যান (৪র্থ পর্ব)”

  1. গল্পটা দারুণ আকর্ষণ বাড়াচ্ছে প্রতি পর্বে। আর এখন তো শেষে এসে মনে হচ্ছে আপনার জনপ্রিয় চরিত্র ‘রাফায়েল’ এর আগমন ঘটতে চলেছে। আশা করছি দ্রুতই গল্পের পরবর্তি অংশ পোস্ট করবেন।

    শুভকামনা ????

Comments are closed.