আমি সব সময় একটা কথা বিশ্বাস করি যে যদি ভাগ্যে কোন জিনিস না লেখা থাকে তাহলে শত চেষ্টা করেও সেই জিনিস পাওয়া সম্ভব না । নীলাকে পাওয়ার জন্য আমার চেষ্টার কোন ত্রুটি ছিল না । এমন কি আমি আমার সকল লজ্জা অস্বস্তিবোধ এক পাশে কাটিয়ে আমি নীলাকে নিজের মনের কথা বলেও ফেলেছিলাম । কিন্তু আমার কপাল খারাপ । তার আগেই কেউ নীলাকে জয় করে নিয়েছে । পারিবারিক ভাবে ওদের বিয়েও ঠিক হয়ে আছে । আমাকে ও খুব নম্র ভাবে জানালো যে সামনের মাসেই ওর বিয়ে । দুঃখ কষ্ট বুকে নিয়ে ফিরে এলাম । নীলার কাছে আমি এটা নিয়ে কৃতজ্ঞ ছিলাম যে ও এই কথাটা অফিসের আর কাউকে জানাই নি । মেয়েরা সাধারণত এই সব কথা গোপন রাখে না । বন্ধু বান্ধব কলিগদের মাঝে ছড়িয়ে দেয় । নীলাও যদি এমন করতো তাহলে আমার লজ্জার সীমা থাকতো না। যাই হোক দেখতে দেখতে নীলার বিয়ের দিন চলে এল । অফিসের সবাইকেই দাওয়াত দিল । আমাকেও আসতে বলল । আমাকে যেন একটু আলাদা ভাবেই অনুরোধ করলো যেন আমি যাই ।
আমার কষ্ট হবে জেনেও কেন জানি বিয়েতে গিয়ে হাজির হলাম । নীলাকে বিয়ের সাজে দেখতে খুব বেশি ইচ্ছে করছিলো । যদিও অন্যের সাথেই ওকে দেখতে হবে, অন্যের পাশে ওকে দেখতে হবে তারপরেও আমার বধু সাজে নীলাকে খুব করে দেখতে মন চাইলো ।
ঢাকার বিয়ে গুলোতে আগেই বিয়ের অনুষ্ঠান হয়ে যায় । পরে অনুষ্ঠান করে । তবে নীলার বিয়েতে দেখলাম যে বিয়ে হয় নি । এই কমিউনিটি সেন্টারেই বিয়ে পড়ানো হবে । বরযাত্রী আসবে এবং এখান থেকে ওকে বরের বাড়ি নিয়ে যাবে । এমন ভাবেই পরিকল্পনা করা হয়েছে । আমরা মেয়ে পক্ষ হিসাবে গিয়েছি । আমি তখনও নীলাকে দেখতে পাই নি । আমাদের অফিসের মেয়ে কলিগরা ভেতরে ঢুকে নীলার সাথে দেখা করে এসেছে । আমার ইচ্ছে করছিলো খুব কিন্তু নিজের কাছেই কেন জানি সাহস করে উঠতে পারলাম না । যখন মনে হল এবার একটু দেখা করে আসা উচিৎ ঠিক তখনই হইচই শুনতে পেলাম ।
বর চলে এসেছে !
আমার আর যাওয়া হল না । পুরো কমিউনিটি সেন্টারে বড় শোরগোল হতে লাগলো । গেট ধরা টাকা নেওয়া আরও কত কিছু । আমার এসব দেখে মন খারাপ হল খুব । মনে হল এখানে আসাটা মোটেও ঠিক হয় নি । বাসায় বসে থাকলেও বরং ভাল হত ।
বর চলে আসার পরে অনেকটা সময় কেটে গিয়েছে । তখনও বরযাত্রী খাওয়া শুরু করে নি । বিয়ে পড়ানো হবে তারপর খাওয়া দাওয়া শুরু হবে । তখন আবারও কেমন যে হট্টগোল শুনতে পেলাম । তবে এটা কেমন যে একটু আলাদা ধরনের । তার ঠিক আধাঘন্টা পরে আমি দেখতে পেলাম নীলাকে । বউ সাজে সে ঘর থেকে বের হয়ে আসছে । ওর মুখের দিকে তাকিয়েই আমার মনে হল কিছু যেন একটা ঠিক নেই । বরের সামনে গিয়ে সে সোজাসুজি কী যে জিজ্ঞেস করলো ।
আমি দেখতে পেলাম বর সাহেব তাকে যেন কিছু বোঝানোর চেষ্টা করলো । কিন্তু নীলার চেহারা তখন বদলে গেছে । সে চিৎকার করে বলল, এখনই এখান থেকে বের হয়ে যাও ।
বর সাহেব যেন ঠিক মত বুঝতে পারলো না নীলার কথা । বলল, কী বলছো তুমি?
-আমি ঠিক বলছি । তোমাকে আমি বিয়ে করবো না । তোমার বাবা আমার বাবার কাছে এককোটি টাকা যৌতুক চেয়েছে। আর তুমি সেটা জানার পরেও চুপ থেকেছো ।
-নীলা প্লিজ কোন সিন ক্রিয়েট করো না ।
-তুমি যাবে এখান থেকে নাকি পুলিশ ডাকবো । তোমাদের মত লোভী পরিবারে আমি বিয়ে করবো না ।
এই পর্যায়ে দেখলাম নীলার বাবা এসে নীলাকে থামাতে চাইলো কিন্তু নীলা কোন ভাবেই থামলো না । স্টেজ থেকে ঘুরে সে অতিথিদের দিকে তাকালো । আমার কেন জানি মনে হল নীলা আমাকে খুজছে । কোন কারণ নেই এমনটা মনে হওয়ার কিন্তু আমার মনে হল । আমি বসা ছিলাম, উঠে দাড়ালাম । আমার চোখের সাথে চোখ পড়লো নীলার । দেখলাম নীলা আমার দিক থেকে চোখ না সরিয়ে সোজা আমার দিকেই হেটে এল । একেবারে আমার সামনে এসে থামলো । তারপর বলল, নাদিম সাহেব আপনি কি আমাকে বিয়ে করতে পারবেন এখন?
আমি বিন্ধু মাত্র দেরি না করে বললাম, হ্যা অবশ্যই । কাজী সাহেব কি চলে এসেছে নাকি ডেকে নিয়ে আসবো ?
-চলে এসেছে । আসুন ।
এই বলে নীলা আমার হাত ধরে একেবারে সবার সামনে আমাকে ঘরের ভেতরে নিয়ে গেল ।
যখন আমি বিয়ের জন্য কবুল বললাম আর সাক্ষর করলাম তখনও আমার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না যে নীলাকে সত্যি সত্যি বিয়ে করে ফেলেছি । যখন বাইরে বের হয়ে এলাম তখন দেখলাম বরের লোকজন অনেকেই চলে গেছে তবে কন্যা পক্ষের সবাই রয়েছে । সবাই যেন খুব মজা পাচ্ছে । নীলার বাবা যদিও খুব বেশি খুশী হলেন না নীলার এই কান্ডে তবে আমাকে সে মেনেই নিলেন ।
আমি অবশ্য এসব কিছুই ভাবছি না । আমার হাত তখন নীলার হাতে । আমার কেবল মনে হচ্ছে আমি যেন স্বপ্ন দেখছি । এখনই স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবে । স্বপ্ন ভেঙ্গে আমি দেখবো আমি সেই অনুষ্ঠানের খাবার টেবিলে বসে আছে । কাচ্চির প্লেট আমার সামনে রয়েছে !
আসলেই কি স্বপ্ন দেখছি নাকি বাস্তবে ঘটছে এসব?
সত্যি কি নীলাকে পেয়ে গেছি আমি?
পরমানু গল্প ভালো ছিল
Well written.