নীতু চোখ মেলে তাকালো । প্রথম কিছু সময় নীতুর মনে করতে পারলো না সে কোথায় আছে । ঘরটা কেমন যেন অন্ধকার হয়ে আছে । সব কিছু অপরিচিত মনে হচ্ছে ওর কাছে । তবে সেটা মাত্র কয়েম মুহুর্তের জন্য । তারপরেই সব কিছু মনে পড়ে গেল ওর !
আফনান ওকে কিডন্যাপ করেছে । জোর করে ওকে গাড়িতে তুলে নিয়েছিলো । ওর সাথে আরো কয়েকজন ছিল । ওরা ওকে তুলে নিতে সাহায্য করেছে । ঘটনা এতো জলদি ঘটেছিলো যে নীতু চিৎকার করার সময় পর্যন্ত পায় নি । গাড়িতে ওঠার সাথে সাথেই ওর মুখে কিছু চেপে ধরেছিলো ওদের ভেতরের কেউ । তারপর নীতুর আর কিছু মনে নেই । এখন ঘুম ভাঙ্গলো ওর । চোখ মেলে ঘরটা দেখার চেষ্টা করলো ও । ঠিক ঘর না এটা । চারিদিকে তাকিয়ে মনে হল কোন বেজমেন্টের মত জায়গা । আবছাপা আলো রয়েছে ঘরে তবে আলোর উৎস সম্পর্কে নীতু নিশ্চিত হতে পারলো না । নীতুর মনে হল যে দেয়ালের শরীর বেয়ে আলো বে রহয়ে আসছে ।
নীতু একটু ধাতস্থ হওয়ার পরেই ব্যাপারটা অনুভব করতে পারলো । আরিয়ানকে সে অনুভব করতে পারছে না । আরিয়ানের সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকেই নীতু আরিয়ান উপস্থিতি সব সময় টের পেত । কিন্তু রিচুয়্যালের পর থেকে ওর উপস্থিতি ছিল তীব্র । অথচ এখন ও কিছুতেই অনুভব করতে পারছে না । হঠাৎ করেই নীতু যেন ভয় করতে শুরু করলো । আরিয়ানকে ও অনুভব করতে পারছে না এর মানে হচ্ছে আরিয়ানও ওকে অনুভব করতে পারছে না । আরিয়ান বলেছিলো যে রিচুয়্যালের পর সব সময় ওর সাথেই থাকবে । তাই যে কোন বিপদেই নীতুর কাছে এসে গিয়ে হাজির হতে পারবে । তাই যখন নীতুকে আফনান ধরে নিয়ে যাচ্ছিলো তখনও সে ভয় পায় নি । মনে হয়েছিলো আরিয়ান চলে আসবে এখনই । ভয়ের কোন কারণ নেই । কিন্তু এখন!
নীতু ঘরের ভেতরে যেখানে ছিল সেখানেই বসে রইলো কিছু সময় । ওর এখন কী করা উচিৎ ?
চিৎকার করবে?
না সেটা ঠিক হবে না । কোন লাভও হবে বলে মনে হয় না ।
নীতুর ঘরটার দিকে আরো একবার ভাল করে তাকালো । ঘরটা বেশ ছোট । ছাদ নিচু । এক পাশে সে বসে রয়েছে একটা খাটের মত জায়গাতে । তবে খাটের মত জায়গাটা সিমেন্ট দিয়ে তৈরি । সেখানে কোন তোষক নেই । কিছু নেই । নীতু কী করবে ভাবছিলো এমন সময় একটা আওয়াজ শুনে চমকে গেল !
দেখতে পেল লোকটাকে । ঘরটা ছোট যদিও দেওয়ালের কিছু অংশ অন্ধকার হয়ে আছে । সেখানেই দাড়িয়ে ছিল সে ।
দরজা একটা দেখা যাচ্ছে ওর ঠিক উল্টোদিকে । সেটা একটা লোহার দরজা । সেখানে খুলে নি । বাইরে থেকে আসে নি । পুরোটা সময় এই ঘরের ভেতরেই ছিল । নীতু খেয়াল করে নি তাকে ।
লোকটা আলোতে বের হয়ে এল । লোকটা দেখতে সে বেশ সুপুরুষ । চোখ দুটো গভীর আর নীল !
নীতুর মনে হল এই চোখ তার যেন অনেক পরিচিত !
লোকটি এগিয়ে এল আরো একটু । নীতুর দিকে তাকিয়ে বলল, হাউ আর ইউ মিস নীতু ?
-আপনি কে? আমাকে এখানে কেন ধরে এনেছেন ?
হাসলো সে । তারপর বলল, তুমি দেখি প্রশ্নের জবাব দিতে জানো না । কী জানতে চাইলাম আর কী জবাব দিলে ! আবারও জানতে চাইছি । কেমন আছো?
-ভাল নেই । আমি বাসায় যেতে চাই ।
-সরি টু সে । এর থেকে ভাল ব্যবস্থা করতে পারছি না বলে দুঃখিত ।
নীতু কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বলল, ব্যবস্থা করতে পারছেন না নাকি ভয়ে করতে চান না । আসলে আপনি খুব ভাল করেই জানেন আমাকে এখন থেকে অন্য কোথাও নিলেও আরিয়ান সেটা জেনে যাবে । সম্ভবত এই ঘরে কোন বেরিয়ার দেওয়ার রয়েছে যাতে করে আরিয়ান আমার খবর না পায় । রাইট !
নীতু দেখতে পেল নীতুর মুখে কথা শুনে লোকটির মুখ থেকে হাসিটা একটু যেন মিলিয়ে গেল । তবে সেটা সাথে সাথে ফিরে এল । নীতু আবার বলল, তাই না?
-হ্যা বুদ্ধিমান তুমি ।
-আপনারা সবাই কি আরিয়ানকে ভয় পান খুব ! তাই না ? এই কারনে আফনানকে ব্যবহার করেছেন । এমন এক অবস্থা যে আমাকে ধরতের আপনাদের আফনানকে লাাগলো ।
নীতুর তখনই মনে হল যে আরিয়ান কিছু বলেছিলো ওকে । রিচুয়্যাল হয়ে গেলে ওর শরীরে কোন অশরীরির স্পর্শ পড়বে না । সামনে দাড়ানো এই মানুষটা যদিও দেখতে মানুষের মতই মনে হচ্ছে তবে অস্বাভাবিক হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে । চেষ্টা করে দেখবে নাকি !
লোকটা স্বাভাবিক ভাবেই ওর থেকে একটু দুরে দাড়িয়ে ছিল । নীতু হঠাৎ করে উঠে দাড়ালো । তারপর এগিয়ে গেল লোকটার দিকে । নীতু তখনই দেখতে পেল লোকটার মধ্যকার নড়াচড়া । একটু যেন পিছিয়ে গেল সে ।
সেটা দেখেই নীতু বুঝলে যে লোকটাও জানে এই ব্যাপার । নীতুর কাছে সে আসতে পারবে না । এটা দেখেই নীতু হেসে ফেলল । তারপর বলল, হা হা হা । আপনি দেখি সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে গেলেন । আরে চিন্তা করবেন না আমি আপনাকে কিছু করবো না । আসুন দেখি আপনার চোখটা কেমন যেন আমার পরিচিত মনে হচ্ছে ! কোথায় যেন দেখেছি !
এই বলে নীতু একটু এগিয়ে যেতেই লোকটা দ্রুত চলে গেলে দরজার কাছে । একটু যেন বিব্রত মনে হচ্ছে তাকে । বিশেষ করে সে ভেবেছিলো নীতু হয়তো খুব ভয় পাবে তার আচরণে অথচ উল্টো তাকেই কিনা দৌড়ানী দিল । দরজা খুলে বের হওয়ার সময় আরেকবার তাকালো নীতুর দিকে ।
দুই
দুটো দিন কিভাবে পার হল আরিয়ান ভেবে পেল না । নীতুর কোন খোজ নেই । এমন কি রাফায়েলের কাছেও গিয়েছিলো । সেখান থেকেো খুব একটা সাহায্য পাওয়া গেল না । রাফায়েল কেবল বলল, তোমার সাথে যুক্ত রয়েছে সে । যে বন্ড তৈরি হয়েছে তার পরও যখন তুমি তাকে খুজে পাচ্ছো না সেখানে আমি যে খূজে পাবো না সেটা তো বুঝতেই পারছো!
আরিয়ান জানে ব্যাপারটা । তারপরেও সে এসেছে । এবার সে নীতুকে কোন ভাবেই হারাতে চায় না । এভাবে তাকে হারাতে দিবে না । কিন্তু কী করবে সে ! নিজের কাছে এই রকম অসহায় আর হতাশ তার আগে কখনই মনে হয় নি । এখন ও কী করবে খুজে পেল না । তবে এবার যদি সত্যিই নীতুর কিছু হয় তাহলে সে কাউকে ছাড়বে না । প্রত্যেকটাকে খুজে খুজে শেষ করবে ।
আরিয়ানের মনের কথা সম্ভবত রাফায়েল টের পেল । সে ওর দিকে তাকিয়ে বলল, যাই কর নিয়ম ভেঙ্গো না । তুমি জানো তোমাকে নির্দিষ্ট কিছু নিয়মের ভেতর দিয়ে যেতে হয় !
-নিয়মের আমি খ্যাতা পুড়ি !
-তাই কী বললে হয় !
-তোমাকে তো যেতে হয় না এমন কোন নিয়মের ভেতর দিয়ে !
-কারণ আমি আর তুমি এক নই । আমার সৃষ্টি তোমার মত করে হয় নি । এটা কেন বারবার ভুলে যাও!
আরিয়ান আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো তবে থেমে গেল । এখন রাফায়েলের সাথে তর্ক করে আসলে কোন লাভ নেই । আর রাফায়েল যা বলছে সেটাও মিথ্যা না । রাফায়েল তার মত করে সৃষ্টি হয় নি । রাফায়েলের উপরে একজন ছাড়া আর কারো এখতিয়ার নেই । কিন্তু আরিয়ান যদি নিজে নিয়ম ভাঙ্গে তাহলে তাৎক্ষণিক তার ফল সে পাবে । এই রকম অনেকেই আগে তাদের কর্মের ফল পেয়েছে । হর্সম্যানটা কখনই কোন মানুষকে নিজ থেকে হত্যা করতে কিংবা আক্রমন করতে পারে না । এটা নিয়ম বহির্ভূত । যদি কেউ করে তাহলে তাদের এই হর্সম্যানশীপ চলে যাবে তখনই । তাদের নামিয়ে দেওয়া হবে একটা আরো নিচের দলে ।
রাফায়েল বলল, আমি খোজ চালানোর চেষ্টা করছি । খবর পেলে তোমাকে জানাবো । আর দয়া করে কোন বোকামো করো না । ইচ্ছে করে ফাঁদে পা দিও না । তোমার অনেক সীমাদ্ধতা আছে সেটা তুমি খুব ভাল করেই জানো । তাই সাবধান ।
রাফায়েল চলে যাওয়ার পরে নিজের ঘরে কিছু সময় পায়চারি করতে লাগলো । কী করবে কিভাবে করবে তাই কেবল ঘুরপাক খেতে লাগলো আরিয়ানের মাথায় । কোন অশরীরি বা অতিপ্রাকৃত সত্ত্বা নীতুর শরীরে হাত দিতে পারবে না । তার মানে খুব পরিস্কার ব্যাপার হচ্ছে কোন মানুষ এই কাজে নিয়জিত ছিল !
কে হতে পারে ?
এছাড়া ওর উপর বোমাহামলাটাও একেবারে ঠিক সময়মত হয়েছে । মানে যখন নীতুকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো ঠিক সেই সময়েই ওর উপর হামলা হয়েছিলো । আরিয়ান এমনিতেও সব ব্যাপারে সতর্ক থাকে কিন্তু নীতুর বিপদ জেনে ওর মনযোগটা পুরোপুরি অন্য দিকে ছিল । তাই যখন বোমাটা ছোড়া হয় ও ঠিক খেয়াল করে নি । নিশ্চিত ভাে দুই গ্রুপের ভাবে যোগাযোগ ছিল । হয়তো ফোনে একই সাথে যুক্ত ছিল ওরা । যখনই নীতুকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো ওরা জানতো যে আরিয়ান বের হয়ে আসবে এই সময়েই । সেই সময়েই হামলাটা হয়েছে। যে সময়ের জন্য আরিয়ান চেতনা হারিয়েছে ঠিক সেই সময়েই ভেতরেই নীতুকে কোন বেরিয়ারের ভেতরে ঢুকানো হয়েছে যাতে নীতুর কোন খোজ খবর না আসে ।
কে করেছে কাজটা?
ঠিক এই সময়ে আরিয়ানের ফোনটা বেজে উঠলো । ফোন নম্বরটা দেখেই আরিয়ানের ভুরু কুচকে উঠলো । এই ছেলে ওকে কেন ফোন দিচ্ছে এখন?
তিন
আফনানের মনে হল সামনে দাড়ানোর মানুষটা মোটেই তার ক্লাসের শিক্ষক না । এমন কি যে সম্ভবত কোন স্বাভাবিক মানুষও না । তার নীল চোখের জন্য সে পুরো ক্যাম্পাসে বিখ্যাত । কিন্তু এখন সেই নীল চোখ যেন মুহর্তের ভেতরে বদলে গেছে । আফনানের মনে হল যে সামনে দাড়ানো মানুষটা ওকে একটা ঘুসি মারতে চাইছে কিন্তু খুব কষ্টে নিজেকে সংবরণ করে রেখেছে ।
-আই এম সরি স্যার । আমি আসলে বুঝতে পারি নি ।
-বুঝতে পারো নি? তুমি আসলে মানুষ ? মানুষের মন নিয়ে খেলা কর সবার সামনে তাদের অপমান কর তারপর নিজের মনের মত না হলে যা ইচ্ছে তাই করবে ! একবারও মনে হল না নীতুর এতে কী পরিমান বিপদ হতে পারে!
-আমি ভেবেছিলাম যে সে আপনাকে চায় । আসলে নীতুকে দিয়ে আপনাকে নিয়ে যাবে । মাঝে দিয়ে আমার রাস্তা পরিস্কার হয়ে যাবে !
-পরিস্কার না !! নীতুকে তুমি কোন দিন পাবে না এটা এখনও বোঝো নি !
আফনান বুঝেছে । সে নীতুকে পাবে না । তবে ঐ বাসার ভেতরে প্রবেশ করার পর থেকেই আফনানের যেন কিছুই ভাল লাগছিলো না । নীতুকে গাড়িতে করে সেই লোকের ঠিকানা মোতাবেক বাসাতেই পৌছে দিয়েছিলো । গাড়িটা যখন বাড়ির গেটের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করলো তখনই আফনানের ভাল লাগে নি ।
নীতু তখনও অজ্ঞান ছিল । গাড়ির দরজা খুলতেই আফনান দেখতে পেল দরজার সামনেই একটা স্ট্রেচার দাড় করানো । নীতুকে ওখানেই তুলতে নির্দেশ দিল লোকটা । আফনান তাই করলো । কিন্তু তারপরই আফনানকে অবাক করে দিয়ে লোকটা বলল, তুমি এখন যাও !
আফনান বলল, যাও মানে ! এমন তো কথা ছিল না !
-কোন কথাই ছিল না । আমি বলেছিলাম তোমার রাস্তা পরিস্কার করে দিবো । তার আগে পর্যন্ত আমার মত করে চলতে দাও । এখানে তোমার কোন কাজ নেই । আপাতত চলে যাও ।
-নীতুকে একা রেখে আমি যাবো না ।
-তোমার চাওয়া না চাওয়াই কিছু যায় আসে না ।
আফনান আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই ওর ফোনটা বেজে উঠলো । ফোনটা চোখের সামনে আনতেই দেখতে পেল ওর বাবার ফোন । একবার মনে হল ফোনটা সে ধরবে না তবে লোকটা ওকে বলল, ফোনটা ধর । তোমার বাবা কী বলতে চায় শোনো !
আফনান সরু চোখে তাকালো লোকটার দিকে । তারপর ওর বাবার ফোনটা রিসিভ করলো।
-হ্যালো ।
-আফনান ।
-জ্বী বাবা ।
-সোজা বাসায় চলে আসো । তোমার ওখানে কোন কাজ নেই ।
আফনান খানিকটা অবাক চোখে তাকালো লোকটার দিকে । লোকটার মুখে একটা সব জান্তার ভাব রয়েছে । সে বলল, বাবার কথা শোনো । কাজ শেষ হলে আমি ডাক দিবো তোমাকে ।
-নীতুর কোন ক্ষতি যেন না হয় ।
লোকটা যেন হাসলো । তারপর বলল, নীতুর প্রতি আমার কোন আগ্রহ নেই । তবে ওর ভেতরে যা আছে সেটা আমার দরজার । সেটা বের করতে পারলেই নীতুর প্রয়োজনীয়তা আমার কাছে ফুরিয়ে যাবে । তুমি তখন তাকে নিয়ে যেও ।
আফনান পুরো ব্যাপারটা বুঝলো না । নীতুর ভেতরে কী আছে যা বের করতে হবে ! কিন্তু সেখানে আর থাকার উপায় নেই । ওর বাবা যখন বলেছে তখন ওকে চলে যেতেই হবে ।
বাসায় এসেও আফনান মোটেও শান্তি পায় নি । দুইদিন পার হয়ে গেল অথচ কোন খোজ নেই । কয়েকবার ফোন দিয়েছে ঐ নম্বরে কিন্তু কোন লাভ হয় নি । ফোন ঢুকেই নি ।
তখনই মনে হল যে কাজটা সে মোটেও ঠিক করে নি । নীতুর জীবন হয়তো সত্যই বিপদে ।
আরিয়ান সবটা শুনে বলল, কোথায় নিয়ে গেছে ওকে !
আফনান জলদি করে বলল, আমি ঠিকানা বলে দিচ্ছি আপনাকে । আমিও যাবো আপনার সাথে !
-তোমার গিয়ে কাজ নেই ।
-আপনি একা কী করবেন ?
-সেটা নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না ।
চার
সে নিজের লাইব্রেরিতে বসে রয়েছে । তার মনটা খানিকটা বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে । লক্ষ্যের এতো কাছে চলে এসেও যেন জয় লাভ করতে পারছে না । যেমনটা ভেবেছিল তেমনটা হল না । নীতু নামের মেয়েটার বেলাতে যেমনটা ভেবেছিলো তেমনটা হল না কিছুতেই । হর্সম্যান যখন কোন মেয়ের ডাকে সাড়া দেয় তখনই সেই মেয়েটা স্যাকরিফাইনের জন্য উপযুক্ত হয়ে যায় । হর্সম্যানকে পরাজিত করতে তাদের সৌল খুব কাজে দেয় । কিন্তু এই মেয়েটা হর্সম্যানের অর্ধেকটা নিজেকের ভেতরে ধারণ করে নিয়েছে । কোন হর্সম্যান এভাবে নিজের জীবনী শক্তি কোন মেয়ের সাথে শেয়ার করে না । অথচ নীতুর সাথে করেছে । নীতু নামের মেয়েটা যে তার কাছে কত গুরুত্বপূর্ণ সেটা বুঝতে আর বাকি নেই । এখন কোন ভাবেই নীতুর ভেতরের শক্তিকে আর গ্রহন করা যাবে না । এই পুরো শক্তিটাই নষ্ট হবে ।
অবশ্য এক দিক দিয়ে অন্য আরেকটা পথ খুলে গেছে । নীতুর সাথে নিজের শক্তি শেয়ারের ফলে হর্সম্যানের নিজের শক্তি কমে গেছে । আগের মত আর শক্তিশালি নয় । এখন নীতুকে কেবল এই বেরিয়ারের ভেতরে আটকে রাখলেই চলবে । হর্সম্যান অটোটা শক্তিশালি হবে না । তাকে হারানো সম্ভব হবে । এবং তাকে যদি নিজের পছন্দমত জায়গাতে নিয়ে আসা যায় তাহলেই চলবে । পুরোপুরি ভাে তাকে হাতের মুঠোয় পাওয়া যাবে ।
-স্যার আসবো !
সে ফিরে তাকালো । তার এসিস্ট্যান্ট ছেলেটা এসেছে ।
-হ্যা । আসো ।
-স্যার কাজ শেষ হয়েছে ।
-সব বেরিয়ার ঠিক মত দেওয়া হয়েছে ?
-জ্বী স্যার ।
-ডাবল চেক করেছো?
-জ্বী স্যার । সব ডাবল চেক করা হয়েছে ।
লোকটার মুখে হাসি ফুটলো । অনেক দিন পরে একটা সুযোগ এসেছে । অনেক পর একটা সুযোগ এসেছে । এর আগেও একবার এসেছিলো সুযোগ । সেইবার অবশ্য হর্সম্যান ফাঁদে পা দেয় নি । একই ভাবে মেয়েটাকে ধরে ফাঁদ পাতা হয়েছিলো । কিন্তু সেইবার হর্সম্যান আসে নি । কিন্তু এইবার কেন জানি মনে হচ্ছে সে আসবে । সে এইবার আসবেই ।
লোকটার কথা সত্য করে দিতেই যেন হঠাৎ করেই বাইরের আলো কমে এল । এবং এক সময়ে একেবারে কমে গেল । মনে হল যেন সূর্য টুপ করে দুবে গেছে । লোকটা নিজের লাইব্রেরীর পর্দা উঠিয়ে বাইরে তাকালো । এবং তখনই দেখতে পেল তাকে ।
কালো ঘোড়ার উপরে কালো পোশাকের হর্সম্যান ।
প্রায় চারশ বছর আগে একবার মুখোমুখী হয়েছিলো হর্সম্যানের সাথে । আবার মুখোমুখো হল তারা । আজকে সে পুরোপুরি প্রস্তুত । কেবল হর্সম্যান গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলেই সে আটকা পড়বে । অবশ্য এখনও এই সম্ভবনা আছে গতবারের মত এবারও সে ফাঁদ দেখে সামনে না এগিয়ে চলে যাবে । তখন অবশ্য কিছুই করার থাকবে না । তবে সে জানে এইবার হর্সম্যান ভেতরে ঢুকবে ।
তাই হল । লোকটা দেখতে পেল হর্সম্যান তার ঘোড়া সমেত ধীরে ধীরে গেটের কাছে গিয়ে সামনে এসে হাজির হল একটু যেন থামলো । এখনও চিন্তা করছে ভেতরে ঢুকবে কিনা । কারণ সে নিজেও জানে যে ভেতরে ঢোকা মানেই ফাঁদে পা দেওয়া ।
একভাবে তাকিয়ে রইলো লোকটা । এবং তখনই ঘোড়া এগিয়ে এল । ঢুকে পড়লো গেট দিয়ে ভেতরে ! হাসি ফুটলো লোকটার মুখে ।
পাঁচ
অরিয়ান এগোনের চেষ্টা করছে কিন্তু অনুভব করছে নিচ থেকে শক্ত কিছু যেন তার দুই পা চেপে ধরেছে । কিছুতেই সে নিজেকে ছাড়াতে পারছে না । এখনও নীতুকে সে অনুভব করতে পারে নি । নীতু এই বাড়িতেই আছে ! নীতুর সাথে একবার মাত্র সংযোগ স্থাপন হলেই কাজ হবে । এই রিস্ক নিয়েই সে ভেতরে ঢুকেছে । ভেতরে প্রবেশের সাথে সাথেই অনুভব করেছে তীব্র একটা বলয় যেন ওকে চেপে ধরেছে । যতই সামনে এগোচ্ছে তই সেটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে ।
আরিয়ান তবুও এগিয়ে যেতে লাগলো । নীতু যদি বাড়ির ভেতরে থেকে থাকে তাহলে যতটা সম্ভব কাছে যেতে হবে । কারণ কাছাকাছি থাকলে যত শক্তিশালি ব্যারিয়ারই হোক না কেন নীতুকে সে ঠিক খুজে নিবে ।
কিন্তু একটা পর্যায়ে এসে আরিয়ান একেবারে বন্দী হয়ে গেল । ওর হাত পা কে অসংখ্যা অশরীরি হাত এসে চেপে ধরেছে । কিছুতেই সে নিজেকে মুক্ত করতে পারছে না । তখনই আরিয়ান দেখতে পেল তাকে ! একেবারে সরাসরি চোখাচোখি হল । প্রায় চারশ বছর পরে এই ভাবে মুখোমুখী হল ওরা !
-হ্যালো ব্রাদার । অনেক দিন পরে দেখা !
আরিয়ান কোন কথা বলল না । দাঁতে দাঁত চেপে নিজের সমস্ত শক্ত দিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছে । বারবার নীতুকে খুজে চলেছে । নীতু কোথায় তুমি !
নীতু !!
লোকটা আবার বলল, আমাদের মাঝে এখনও কত মিল জানো তো ! তোমার চোখ আর আমার চোখ এখনও হুবাহু একই রকম । তোমার ঐ প্রেমিকা আমার চোখ দেখেই চিনে ফেলেছিলো।
আরিয়ানের তখন হঠাৎ মনে হল নীতু বেঁচে আছে তো !
আরিয়ানের মনের কথাই যেন বুঝতে পারলো সে । বলল, হ্যা এখনও সে বেঁচে আছে । একবার তোমার সাথে আমি হিসা পরিস্কার করে নিই । তারপর তারটা দেখবো ।
-কোথায় সে !
-আছে । নিরাপদে আছে । আসো আগের কাজ আগে করা যাক !
-অরিত্র । এইবার কিন্তু আমি তোকে ছাড়বো না । সত্যি ছাড়বো না ।
-হা হা হা । আগে নিজে মুক্ত হয়ে নাও ।
অরিত্র হাসান এবার মাটিতে বসে পড়লো । তার পেছন থেকে দুজন মানুষ দৌড়ে এসে ঠিক সামনে একটা পোর্টেবল চুলা রেখে দিলো । সেখানে আগুন জ্বলছে । এরপর অরিত্র হাসান মন্ত্র পড়তে শুরু করলো । আরিয়ানের কানে প্রথম লাইনটা যাওয়ার সাথে সাথেই মনে তী্র একটা ছুরি এসে বিধলো ওর শরীরে !
আরিয়ান অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো । অরিত্র হাসান বলল, ভাবছো কোথা থেকে জানলাম ! গত তিনশ বছর ধরে আমি এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করেছি । আজকে তুমি নিজে এসে ধরা দিয়েছো !
ছয়
নীতু তীব্র একটা ব্যাথা নিয়ে জেগে উঠলো । চোখ মেনে নিজেকে ঠিক আগের স্থানেই দেখতে পেল সে । সেই ছোট বেজমেন্ট । অন্ধকার ঘর । তবে আবহাওয়ায় একটা গুমট ভা সে স্পষ্ট বুঝতে পারছে । আর থেকে মনের ভেতরে একটা চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করতে পারছে সে । ব্যাপারটা বুঝতে নীতুর আরো কিছু সময় লাগলো ।
আরিয়ান বিপদে রয়েছে !
হয়তো সে কষ্ট পাচ্ছে সে। এই কারণে কষ্টটা অনুভব করতে পারছে ।
চঞ্চল হয়ে উঠলো নীতুর মন । কী করবে সে !
কিভাবে রক্ষা করবে আরিয়ানকে !
কিছু সময় দরজার সামনে গিয়ে ধাক্কা ধাক্কি করলো সে কিন্তু কোন কাজ হল না । এই শক্ত দরজা খোলা তার পক্ষে সম্ভব না । ঘরের চারিদিকে খেয়াল করে দেখলো । কিছু নেই যা দিয়ে দরজা ভাঙ্গা যায় ! কী করবেে সে !
আবারও সেই ব্যাথাটা !
আরিয়ানের কষ্ট হচ্ছে !
তখনই চোখ গেল ছোট ব্যাগটার দিকে । এই ব্যাগটাই সাথে ছিল যখন কিডন্যাপ করা হয়েছিলো । ব্যাগটা ফেলে দেয় নি ওরা । ব্যাগের ভেতরে বইখাতা ছাড়া আর কিছু নেই অবশ্য ।
না ! মনে পড়লো নীতুর !
আরো একটা জিনিস আছে !
দ্রুত এগিয়ে গেল ব্যাগটার দিকে । চেইন খুলে বের করে আনলো হলুদ লেবুর মত ফলটা !
রাফায়েল নামের মানুষটা বলেছিলো বিপদে পড়লে লেবুটা চেপে ধরতে !
তাই করলো সে । হাতের মুঠোই চেপে ধরলো সে !
সাথে সাথেই কেউ যেন কথা বলে উঠলো ওর মাথার ভেতরে !
-নীতু !
-হ্যা ।
-তোমাকে বের হতে হবে এখনই ।
-কিভাবে ! দরজা তো বন্ধ !
-দরজার কাছে যাও কেবল !
-কী হবে?
-যেতে বলছি যাও !
নীতু লেবুটা হাতে নিয়ে এগিয়ে গেল দরজার দিকে । দরজার সামনে দাড়াতেই অদ্ভুত একটা ঘটনা ঘটলো । নীতু দেখতে পেল দরজাটা কেমন যে আয়নার মত হয়ে গেছে । আয়নার দেওয়ালটা যেন একটু একটু নড়ছে । মনে হচ্ছে সেটা আসলে পানি দিয়ে তৈরি । নীতু সেখানে হাত দিতেই ওর হাতের কিছুটা সেই আয়নার ভেতরে ঢুকে গেল । নীতু ভয়ে ভয়ে পুরো টুকু ঢুকে গেল ।
দরজার পার হয়ে গেছে সে !
-আমার হাতে আর খুব বেশি সময় নেই । ভয় পেও না কিছুতেই । মনে রেখো তুমি এখন সব থেকে ক্ষমতাধর !
তারপর কন্ঠস্বরটা থেমে গেল ! কয়েকবার চেষ্টা করলো বটে কিন্তু আর কোন আওয়াজ শুনতে পেল না । হাতের লেবুর দিকে তাকিয়ে দেখলো সেটা কালো হয়ে শুকিয়ে গেছে এরই ভেতরে । অথচ একটু আগেই কতই না তাজা ছিল !
নীতু আবারও সেই ব্যাথা অনুভব করলো !
আরিয়ান । ও কষ্ট পাচ্ছে !
নীতু যখনই সামনের দিকে পা বাড়াতে যাবে তখনই সেদিনের মত প্রাণীটা দেখতে পেল । করিডরের একেবারে শেষ মাথায় দাড়িয়ে আছে । নীতুকে দেখেই দৌড়ে এগিয়ে আসতে লাগলো । নীতুর ভেতরটা ভয়ে কেঁপে উঠলো । পেছনের দেয়ালের দরজা বন্ধ । যাওয়ার জায়গা নেই । কোন দিকে যাবে সে !
নীতু দাড়িয়ে রইলো একভাবে । পা কাঁপতে লাগলো । এমন ভয়ংকর একটা প্রাণী যদি এগিয়ে আসে তাহলে যে কারো ভয় লাগবে ! যখন সেটা একেবারে কাছে চলে এসেছে তখনই একটু আগের কথা মনে পড়লো । রাফায়েল ওকে বলেছিলো তুমি সব থেকে ক্ষমতাধর !
ঠিক তখনই ঘটলো ঘটনা । প্রাণীটা ওর দেহ বরাবর লম্বা লাফ দিলো । যখন ওর থেকে আর ইঞ্চ খানেক দুরে তখনই মনে হল কোন কিছুর সাথেই সেটা ধাক্কা খেল এবং সাথেই ছিটকে গিয়ে পড়লো দুরে । কিন্তু উঠে পড়লো সাথে সাথে এবং আবারও ঝাপ দিল নীতুর দেহ লক্ষ্য করে এবং একই ভাবে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়লো । তিনবার একই ভাবে ধাক্কা খেল সে অথচ শিক্ষা হল না নির্বোধ প্রাণীটার । কিন্তু এবার যখন লাফ দিল নীতুর কী যেন মনে হতে হাত বাড়িয়ে ওটা ধরার চেষ্টা করলো এবং অবাক হয়ে দেখলো ওরার হাতের একটা অংশ সে চেপে ধরেছে এবং এটাতেই ফল হল মারাত্মক । মনে হল যেন প্রাণীটার পুরো শরীরে আগুন ধরে গেছে । নিজেকে নীতুর হাত থেকে মুক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে অথচ কিছুতেই নিজেকে মুক্ত করতে পারছে না । দেখতে দেখতে যন্ত্রনায় নিস্তেজ হয়ে গেল প্রাণীটা ।
নীতু নিজের ক্ষমতা দেখে নিজেই অবাক হয়ে গেল ! তারপরই মনে পড়লো ওকে যেতে হবে। আরিয়ান বিপদে আছে !
আরিত্র হাসান আস্তে আস্তে আরিয়ানের শরীর থেকে অশরীরি শক্তি আলাদা করতে শুরু করেছে । তার মুখের দিকে তাকাতেই বুঝতে পারছে যে কষ্ট পাচ্ছে । অথচ সে তার নিজের ভাই । কিন্তু এই ভাইয়ের প্রতি তার কোন সহানুভূতি নেই । তার চাই ক্ষমতা ।
ঠিক সেই সময়েই অরিত্র হাসানের মনে হল আরিয়ান নড়ে উঠলো । যত সহজে একটু আগে সে আরিয়ান জীবনী শক্তি বের করতে পারছিলো এখন মনে হল সে টান দিতে পারছে না ।
কী ঝামেলা হল !
তখনই সে আরিয়ানের মুখে হাসিটা দেখতে পেল । তবে হাসিটা সে অরিত্রের দিকে তাকিয়ে হাসে নি । ওর পেছনের কাউকে দেখে হেসেছে । মন্ত্র পড়া থামিয়ে এক ঝটকায় পেছনে তাকালো সে ।
সাথে সাথেই তীব্র একটা বিস্ময় নিয়ে দেখলো ওর ঠিক পেছনেই নীতু দাড়িয়ে রয়েছে ।
মেয়েটা ছাড়া পেল কিভাবে !
ঐ দরজার খোলা কারো পক্ষে সম্ভব ছিল না ।
কিভাবে হল সে !
নীতু ঠিক সেই কাজটাই করলো যা একটু হাতে করেছে । হাত দিয়ে অরিত্রের কাধটা চেপে ধরলো । অরিত্রর মনে হল যেন তার কাঁধে একটা আগুনের গোলা এসে পড়েছে । নীতুর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল নীতুর চোখেও যেন আগুন জ্বলছে । নীতু আরো একটু জোর দিতেই অরিত্র তীব্র একটা ব্যাথা অনুভব করলো । যেন কাধটা একেবারে জ্বলে যাচ্ছে ।
নীতু অবশ্য চেপে ধরে রাখলো না । যেভাবে হালকা কোন বস্তু ছুড়ে দেয় ঠিক সেই ভাবে অরিত্রকেও ছুড়ে দিল । তারপর আবার যখন তার দিকে এগিয়ে যেতে যাবে তখন আরিয়ানের কন্ঠস্বর শুনতে পেল ।
-লেট হিম গো !
-কী !
-যেতে দাও ওকে !
-কেন ? যেতে দিলে আবারও আসবে তোমার পেছনে !
-আসুক । তবুও যেতে দাও ! হি ইজ মাই ব্রাদার !
নীতু তখনই বুঝতে পারলো কারণ ! চোখ দুটো কেন এতো পরিচিত মনে হয়েছিলো তখন !
নীতু আর এগোলো না অরিত্রর দিকে । বরং আরিয়ানের দিকে এগিয়ে গেল । ওকে দাড়াতে সাহায্য করলো । তারপর দুজন আস্তে আস্তে দরজার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো ।
অরিত্র তখনও অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে রয়েছে । প্রথমতো তার এতো দিনের চেষ্টা বিফলে গেছে দ্বিতীয় তাকে ওরা ছেড়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে ।
পরিশিষ্ট
ঘোড়ায় উপরে নীতু আর আরিয়ান আছে । আস্তে আস্তে ঘোড়া এগিয়ে চলছে সামনের দিকে । নীতু বলল, তুমি জানতে যে একটা ফাঁদ তার পরেও ভেতরে কেন ঢুকলে !
-তোমাকে রক্ষা করতে !
-ইস ! আমার নায়ক রে !
-সত্যি তাই ।
-হয়েছে ।
হঠাৎ আরিয়ান বলল, আসলে একই ভাবে এর আগে আমি পালিয়ে গিয়েছিলাম । নিজের জীবনকে বেশি মূল্য দিয়েছিলাম সেবার । কিন্তু সে হারিয়ে গেল তখন আসলে বুঝতে পারি যে কী হারিয়েছিলাম। তোমাকে কোন ভাবেই হারাতে চাই না।
নীতু কী বলবে খুজে পেল না প্রথমে । একটু যেন গালটা লাল হল । কেন হল সেটা নিজেও জানে না ।
কী অদ্ভুত ভাবে সে একটা অতিপ্রাকৃত স্বত্ত্বার প্রেম করছে এবং এটা তার কাছে স্বাভাবিকও মনে হচ্ছে !
-আচ্ছা সত্যিই সে তোমার ভাই ?
-হ্যা ।
-মায়ের পেটের ভাই !
-মায়ের পেটের ভাই !! হাহাহাহাহহা ! আমাদের এখানে আমরা কখনই মায়ের পেটের ভাই হই না । বাবার পেটের ভাই বলতে পারো !
-এটা আবার কেমন কথা !
-বুঝবে । সময় যাক !
-আমার বোঝার দরকার নেই । বাবার পেটের ভাই । কী কথা !
ঘোড়া এগিয়ে যেতে থাকে । সেই সাথে দুজনের গল্পও । নীতু আর ঘোড়সাওয়ারের গল্প এগিয়ে চলতে থাকতে আপন গতিতে !!
গল্পের লিংক সরাসরি পেতে হোয়াটস এপ গ্রুপ অথবা টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন করুন।
দারুন সমাপ্তি!
যদিও রাফায়েল এখানে একজন সহযোগী চরিত্র মাত্র, তারপরও তার দৃশ্যমান দারুণ একটা ভূমিকা রয়েছে।
রাফায়েল আসলে সব গল্পেরই সহযোগী চরিত্রই থাকে । খেয়াল করে দেখুন ।