খানিকটা অস্বস্তি নিয়েই শশী মিটিং রুমে ঢুকলো । সে খুব ভাল করেই জানে অর্কও থাকবে মিটিং রুমে । ওর সাথে দেখা হবে । চোখাচোখী হবে । না জানি ছেলেটা না আবার কোন পাগলামি করে বসে । যদি সত্যটা প্রকাশ পায় তাহলে শশী নিজে খুব লজ্জায় পড়ে যাবে । তখন ব্যাপারটা কেমন হবে সেটা শশী নিজেও জানে না ।
মিটিং রুমে ঢুকেই শশী খেয়াল করলো সেখানে তখনও কেউ এসে পৌছায় নি । শশী ঘড়ির দিকে তাকালো । বারোটা তখনও বাজে নি । এখনও মিনিট খানেক সময় বাকি রয়েছে । শশী চেয়ার গুলোর দিকে তাকাতে লাগলো । কোন জায়গায় বসলে অর্কের সাথে চোখাচোখী হবে না সেটা খুজতে লাগলো । অর্ক সব সময় সিইও মাহবুব স্যারের কাছেই বসে । সেটা ডান দিকে কিংবা বাম দিকে হতে পারে । শশী ডান দিকের কোনার একটা চেয়ারে বসলো । যদি অর্কও ডান দিকে বসে তাহলে তাহলে ওর সাথে চোখাচোখী হওয়ার সম্ভবনা নেই । তবে বাম দিকে বসলে সেটা হবে বেশ ভাল করেই । এটা শশী চায় না মোটেও ।
নিজের চেয়ার বসে অপেক্ষা করতে লাগলো সবার জন্য । কয়েক মিনিটের ভেতরেই একে একে চলে আসতে লাগলো সবাই । এবং অবাক করে দিয়ে অর্ক এল সবার পরে । বসলো একেবারে ঠিক শশীর বিপরীত দিকে । একেবারে মুখোমুখী । অবশ্য কেবল ঐ সিটটাই ফাঁকা ছিল ।
মিটিং শুরু হয়ে গেল কিছু সময়ের ভেতরেই । চলল বেশ কিছু সময় ধরে । মিটিং শেষ পর্যায়ে মাহবুব স্যার হঠাৎ অর্কের দিকে তাকিয়ে বলল, কী ব্যাপার অর্ক তোমার মন খারাপ নাকি? আজকে কোন কথাই বলছো না!
এমনটা মনে হওয়াটা স্বাভাবিক । প্রতিটা মিটিংয়ে অর্ক সব থেকে কথা বলে বেশি । সবাই হাসায় কিংবা যে ব্যাপারেই ওর আগ্রহ সব থেকে বেশি । আজকে সে এমন ভাবে চুপ চাপ আছে সেটা যে কারো চোখে পড়বেই । অর্ক কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর পাশ থেকে আইরিন বলল, স্যার অর্কের মন খারাপ !
-কেন মন খারাপ ?
-ছ্যাঁকা খেয়েছে স্যার !
শশী একটা ধাক্কার মত খেল । সেই সাথে মনের ভেতরে একটা অস্বস্তির দানা বাঁধলো । আইরিন জানে ব্যাপারটা ।
মাহবুব স্যার অবাক হয়ে বলল, কী বলছো? অর্কের মত ছেলেকে রিজেক্ট করেছে কোন মেয়ে ? মেয়েটা দেখি বড় গাধা দেখি মেয়েটা !
আইরিন সাথে সাথে বলল, সেটাই তো ! আমি কত করে জানতে চাইলাম সেই গাধা মেয়েটার নাম কী অর্ক কিছুতেই নামটা বলল না । বেচারা একা একাই কষ্ট পাচ্ছে । আমাদেরকে বললে আমরা না হয় আরেকবার চেষ্টা করতে পারতাম ।
শশী খানিকটা সংকুচিত অনুভব করলো । একটু লজ্জা আর অস্বস্তি নিয়েই সে চেয়ারে বসে রইলো । যদিও এটা বুঝতে পারছে যে অর্কের রিজেক্ট হওয়ার ব্যাপারটা জানলেও কে অর্ককে রিজেক্ট করেছে সেটা এখনও কেউ জানে না । অর্ক কাউকে বলে নি ।
এখন এই রুমে যদি সবাই জানে যে শশীই হচ্ছে সেই গাধা যে অর্ককে রিজেক্ট করেছে তাহলে ব্যাপারটা কেমন হবে সেটা ভাবতেও শশীর গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো । সেটা ভাবতে চাইলো না মোটেই । অর্ক একবারের জন্যও ওর দিকে তাকায় নি রুমে ঢোকার পর পর্যন্ত ।
অর্ক এবার মাহবুব স্যারের দিকে তাকিয়ে বলল, স্যার ওকে নিয়ে আলোচনা না হোক । তার ইচ্ছে হয় নি রাজি হয় নি। আমাদের সবার ব্যক্তিগত পছন্দের উপরে সম্মান করা উচিৎ !
আইরিন বলল, দেখছেন স্যার কত মহান প্রেম !
মাহবুব স্যার বললেন, ওকে আজকের মিটিং তাহলে আজকে এখানেই শেষ । আমাদের অর্কের আজকে মন খারাপ । এই কারণে আর কাজ হবে না এখন । আজকে দুপুরে লাঞ্চ অফিসের পক্ষ থেকে !
মাহবুব স্যার একটু থেমে আবার বললেন বললেন, নাহ কাজটা যেই করুক তার পছন্দের সম্মান আমাদের করা উচিৎ । যাই হোক আমাদের সবারই পছন্দ আছে । সেই ব্যাপারে আমাদের কোন কিছু করার নেই । তবে আমরা অর্কের মন ভাল করার চেষ্টা তো করতে পারি । আর মন ভাল করার জন্য ভাল মন্দ খাওয়ার থেকে ভাল কিছু আর হতেই পারে না । কী বল তোমরা !
সবাই হইহই করে উঠলো !
মাহবুব স্যার বললেন, শশী লাঞ্চের দায়িত্ব তোমার উপর থাকলো । এই কাজ গুলো তুমি ভাল করে ।
শশী আবারও অস্বস্তি নিয়ে তাকালো । তবে মাহবুব স্যার কথাটা ভুল বলেন নি । শশী ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে বেশ চমৎকার করে । অফিসের যে কোন প্রোগ্রামের আয়োজন শশী সব থেকে ভাল করে শেষ করে । কেউ কোন আপত্তি করলো না ।
ঠিক হল লাঞ্চ দুপুর তিনটায় । এখনও ঘন্টা খানেক সময় আছে । কে কী খাবে কার পছন্দ এসব আলোচনা চলল কিছু সময় তারপর যে যার ডেস্কে চলে গেল । শশী বের হল বাইরে খাবারের জন্য । গাড়ি দেওয়া হল অফিস থেকেই । অফিসের গাড়িতে করে যাওয়ার সময় শশী ওর সাথে ঘটে যাওয়া দুইদিন ঘটনা । শশী কোন দিন ভাবতেও পারে নি ওর নিজের সাথে এমন ঘটনা ঘটতে পারে । বিশেষ করে ওদের অফিসের অর্ক ওকে ভালোবাসার কথা বলতে পারে । অর্ক অফিসের সব থেকে সুদর্শন ছেলে । সেই সাথে সব থেকে চার্মিং । সব অবিবাহিত মেয়েরা তো বটেও বিবাহিতরাও মাঝে মাঝে ওর সাথে ফ্লার্ট করতে পিছপা হয় না । ওদের অফিসের এই বিল্ডিংয়ে আরো অনেক গুলো অফিস আছে । সবার জন্য রুফটপে একটা বড় ক্যাফে আছে । সেখানে লাঞ্চ আওয়ারে অনেকের সাথেই দেখা হয় কথা হয় । । অন্য অফিসের সব মেয়েদের চোখ যে অর্কের দিকে সেটা বলার অপেক্ষাও রাখে না । এই পর্যন্ত চারজন মেয়ে অর্ককে প্রোপোজ করেছে সরাসরি । আর সেই অর্ক কিনা শশীকে পছন্দ করে !
ব্যাপারটা কারো হজম হবে না । এমন শশীর নিজেরও ব্যাপারটা হজম হল না । শশী নিজের সম্পর্কে খুব ভাল করেই জানে । কোন ভাবেই আসলে অর্কের সাথে ওর মিল হয় না । বিশেষ করে অর্কের চাল চলন মনভাব শশীর সাথে মিলবে না । অর্ক কী দেখে ওকে পছন্দ করলো সেটা শশী নিজেও জানে না । তবে শশী অনেকটাই বাস্তববাদী । সে জানে যে সম্পর্কটা যতই লোভনীয় দেখাক না কেন বাস্তবা খুব কঠিন হবে । ওর তাল মেলাতে শশীকে ম্যারাথন দৌড়াতে হবে, নিজেকে ভেঙ্গে চুড়ে পরিবর্তন করতে হবে যা শশী মোটেও চায় না । ওর শান্ত সুন্দর জীবনটা ও কোন ভাবেই এতো জটিল করতে চায় না ।
তাই সবিনয়ে অর্ককে সে মানা করেছিলো । জানিয়েছিলো যে সে এসবের ভেতরে জড়াতে চায় না । তবে সত্যি বলতে কি যে ধরণের ছেলেদের কে নিয়ে মেয়েরা স্বপ্ন দেখে অর্ক যে ঠিক সেই রকম একজন ছেলে সেটার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই । শশী নিজেও যে ওকে বেশ পছন্দ করে সেটা শশী কোন ভাবেই অস্বীকার করতে পারবে না । তার পরেও সে রাজি হয় নি । অর্ক অবশ্য আর কিছু জানতে চায় নি । মন খারাপ হয়েছে সেটা শশী খুব ভাল করেই বুঝতে পারছিলো । মন খারাপ শশীর নিজেরও হয়েছে বেশ । রাজি হলে হয়তো ভাল লাগতো । তবে রাজি হলে পরের জটিলতা বাড়তো অনেক যা শশী চায় নি একদমই ।
দুপুরের খাওয়া দাওয়া হল বেশ । অর্কের মুখে হাসি ফুটলো বটে তবে শশীর কেন জানি মনে হল সেটা আসলে মেকি । আসল প্রাণ খোলা হাসি না । শশীর মন কেন খারাপ হয়ে রইলো অর্কের জন্য । ছেলেটা হয়তো অনেকটা দিন এমন করে মন মরা হয়েই রইবে ।
পরের দুটো দিন কেটে গেল ঝামেলা ছাড়াই । অর্ক ছিল চুপচাপ আর নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত । শশীর ধারে কাছেও কাছে আসে নি । তবে তিন নম্বর দিনে অফিস থেকে বের হওয়ার পথেই শশীর সামনে এসে দাড়ালো । তখন অফিস থেকে প্রায় সবাই চলে গেছে । শশী একটু কেপে উঠলো বটে । তবে সামলে নিল । বলল, কিছু বলবেন?
-হ্যা ।
-বলুন ।
-আমার সাথে এককাপ কফি কি খাওয়া যায় এখন?
-এখন ?
-হ্যা । প্লিজ !
শশীর একবার মনে হল মানা করে দেয় কিন্তু করলো না । তাহলে হয়তো অর্কের মন আরো খারাপ হবে । বলল, চলুন ।
অফিসের সামনের একটা কফি শপেই বসলো ওরা । কফি এল । কেউ কোন কথা বলল না কিছু সময় । শশীই প্রথমে জানতে চাইলো কেন কফি খেতে চাইলেন হঠাৎ ?
-চাইতে পারি না?
-হ্যা পারেন ।
-আর তোমার সাথে তো কফি খেতে চাওয়ার খুব বড় কারণ আছে । তাই না?
শশী জবাব দিল না । কথা বললেই কথা বাড়বে, বাড়বে অস্বস্তি । সেটা শশী চায় না । তবে অর্ক থামলো না । বলল, তুমি কেন আমাকে রিজেক্ট করলে!
শশী বলল, রিজেক্ট শব্দ খুব বাজে শোনায় । আপনি কিছু একটা বলেছেন আমি তাতে রাজি হই নি ।
-ঐ হল ! তুমি কেন রাজি হলে না?
শশী ঠিক বুঝতে পারলো না যে কী বলবে । যে কারণে সে রাজি হয় নি সেটা কী বলবে কিনা সেটা ভাবছে । অর্ক আবার বলল, প্লিজ বল । আমি এটা শুনতে চাই । আমি ভেবেছিলাম আমি জানার চেষ্টা করবো না । তবে এটা না জেনে আমি শান্তি পাচ্ছি না মোটেও । প্লিজ !
শশী জোরে একটা দম নিল । তারপর কারণটা বলে দিলো । কারনটা শোনার পরে অর্ক কিছু সময় যেন চুপ করে রইলো । শশী ভেবেছিলো কোন কথা বলবে তবে বলল না । আর খুব একটা কথাও হল না ওদের ভেতরে । কফি শেষ করে যে যার দিকে চলে গেল । শশী ভেবেছিলো এসবের বুঝি এখানেই শেষ হবে । তবে শেষ হল না । পরের দিন শুক্রবার হওয়াতে শশী সকালে একটু বেলা করেই ঘুমালো । এগারোটার দিকে যখন নাস্তা করতে বসলো তখন ইন্টারকম থেকে ফোন করে জানালো যে একজন ছেলে তার সাথে দেখা করতে এসেছে । নাম বলতেই চোখ কপালে উঠলো ওর ।
অর্ক এসেছে নিচে !
ছুটির দিন হওয়াতে বাবাও রয়েছে বাসায় । ছোট বোন আর মা রয়েছে রান্নাঘরে । শশী কী করবে ঠিক বুঝতে পারলো না । ফোন বের করে অর্ককে ফোন দিল । ফোনটা রিসিভ হল সাথে সাথেই ।
-আপনি বাসায় কেন এসেছেন?
-তোমার সাথে দেখা করতে !
-মানে কী ?
-কোন মানে নেই । তুমি আধা ঘন্টার ভেতরে তৈরি হয়ে নিচে নামো নয়তো আমি উপরে আসবো ।
-দেখুন আপনি এমন কোন কাজ করবেন না । আমি মাহবুব স্যারকে রিপোর্ট করবো ।
-কর। কোন আপত্তি নেই । তখন অফিসের সবাই সব কিছু জেনে যাবে । যেই জটিলতা এড়াতে চাইছিলে সেই জটিলতাই এসে হাজির হবে । এবং তুমি এটা খুব ভাল করে জানো যে অফিসের সবার মনভাব আমার দিকেই যাবে !
শশী নিজেও জানে ব্যাপারটা । ব্যাপারটা যদি অফিসে জানা জানি হয় তাহলে ব্যাপারটা ওর জন্য মোটেও ভাল হবে না । কিছু সময় শশী ঠিক বুঝতেই পালরো না যে কী করবে ! তবে ভাবা ভাবির সময় এখন নেই । অর্ককে এখন বাসায় আসতে দেওয়া যাবে না । বলল, আচ্ছা আমি নামছি নিচে । আপনি সামনের চায়ের দোকানে গিয়ে দাড়ান প্লিজ !
-আপনি কেন পাগলামি করছেন শুনি?
শশী বাসা থেকে যত দ্রুত সম্ভব তৈরি হয়ে বাসার বাইরে এল । একটু হাটতেই দেখতে পেল অর্ককে । সে চায়ের দোকানে ঢোকে নি । বাইরে দাড়িয়ে মোবাইল টিপছে । ওকে দেখেই এগিয়ে এল হাসি মুখে । ওখান থেকে রিক্সায় করে ওরা কাছের একটা ক্যাফেতে এসে হাজির হল ।
অর্ক বলল, আমার মনে হয় পাগলামীটা তুমি করছো । যাই হোক আমি একটা চেষ্টা করে দেখটে চাই আরেকবার ।
-আমি চাই না ।
-আরে আগে শোনাই না কী বলতে চাইছি । তারপর পছন্দ না হলে আমি কিছু বলবো না ।
শশী তাকালো তবে কোন কিছু বলল না । অর্ক বলল, তার আগে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দাও । সত্যি করে বলবে ।
-জ্বী বলুন ।
-তুমি কি আমাকে অপছন্দ কর ? মানে সহ্য করতে পারো না এমন কিছু তো নয় রাইট ? অন্তত আমি যে মানুষ হিসাবে খারাপ নই কিংবা আমার সাথে সময় কাটাতে যে খারাপ লাগবে না এটা সত্য !
-হ্যা সত্য ।
-গুড । এটাই জানার ছিল । তুমি কেবল চাও যাতে তোমার শান্তির জীবন নষ্ট না হোক, জটিলতা না আসুক । তাই না?
-হ্যা । আমি আগেও বলেছি আপনার সাথে আমার লাইফ স্টাইল মিলবে না । আমরা একে অন্যের সাথে তাল মেলাতে পারবো না ।
-ওকে বাবা ওকে ! বুঝেছি । আসো একটা কাজ করি !
-কী কাজ ?
-একটা ট্রায়াল পিরিয়ড হোক !
শশী যেন ঠিক মত বুঝতে পারলো না । বলল, ট্রায়াল পিরিয়ড মানে কী?
-মানে হচ্ছে আমার সাথে একটা মাস আমার প্রেমিকার মত করে থাকবে । কিন্তু ব্যাপারটা থাকবে একেবারে গোপন । কেউ জানবে না টের পাবে না । কেউ জানবে না । যদি একমাস পরে তোমার মনে হয় যে তোমার জীবন জটিল হয়ে যাচ্ছে আমরা দুজন দুই দিকে চলে যাবো । আমি আর কখনই তোমার সামনে আসবো না ।
-জ্বী না এসব হবে না ।
-প্লিজ । একটা বার চেষ্টা করেই দেখো । আমি জানি তুমি আমাকে পছন্দ কর । তোমার চোখে চাহনি আমাকে তোমার প্রতি আকৃষ্ট করেছে । এই চাহনি চিনতে আমি ভুল করি নি । প্লিজ ! একটা বার চেষ্টা করে দেখি ।
শশী কোন ভাবেই না করতে পারলো না । রাজি হয়ে গেল । রাজি হওয়ার সময়েই শশীর মনে হল যে কাজটা মোটেও ঠিক হল না । এই যে আটকে যাচ্ছে সেটা থেকে আর সে বের হতে পারবে না । তবে কেন জানি মনের অন্য আরেকটা অংশ ঠিকই বলছে যে কাজটা ঠিকই হয়েছে । একবার চেষ্টা করে দেখতে দোষ কোথায় !
একটা মাস যে কিভাবে পার হয়ে গেল শশী নিজেও টের পেল না । এই পুরোটা সময় সত্যিই সত্যি ওরা দারুণ প্রেম করলো সবার কাছ থেকে । অফিসে মেসেজ চালাচালি সবার চোখ এড়িয়ে দেখা করা । এমনি একদিন অর্ক ওর গালে একটা চুমুও খেয়ে ফেলল । তখন যদিও রাগ করে চলে এসেছিলো তবে নিজের ডেস্কে বসার পরেই রাগ পড়ে গেল । তার বদলে সেখানে একটা অন্য রকম অনুভূতি এসে জড় হল ।
একমাস সময়টা যখন শেষ হতে যাবে তার আগের দিন শশী একটা ভয়ানক কাজ করলো । কাজটা সে যে কেন করলো সেটা নিজেও জানে না । ওদের ফেসবুকে অফিস কলিগদের একটা গ্রুপ ছিল । সেই গ্রুপেই ও অর্কের সাথে তোলা কয়েকটা ছবি পোস্ট করলো । আইডি এনানিউমাস করে ছবি করে পোস্ট করলো যাতে করে কেউ বুঝতে না পারে কে পোস্ট করেছে । পোস্ট বাটনে চাপ দেওয়ার সময়ে বুকের ভেতরে কেমন যেন লাগছিলো । ছবির কেপশনে লিখলো আমাদের হিডেন লাভ বার্ডস !
পোস্ট হওয়া পরপরই সবাই দেখে ফেলল। ওকে কয়েকজন ফোনও দিলো তবে শশী করো ফোন ধরলো না । কিছু সময় পরে এসে হাজির হল অর্কের ফোন । ফোন ধরেই সে ব্যস্ত কন্ঠে বলল, বিশ্বাস কর আমি ছবি গুলো পোস্ট করি নি । আমি জানিও না করে করেছে । আমি এডমিনকে ছবি সরাতে মেসেজ দিয়েছি ।
অর্কের কন্ঠের ব্যস্ততা দেখে শশীর হাসি পেয়ে গেল । শান্ত কন্ঠে বলল, আমি জানি তুমি ছবি গুলো পোস্ট কর নি ।
-কিভাবে জানো ?
-কারণ আমি জানি কে ছবি গুলো পোস্ট করেছে?
-কে করেছে?
-আমি !
ফোনের ওপাশ থেকে কোন আওয়াজ শোনা গেল না । হয়তো তথ্যটা হজম করতে অর্কের কিছুটা সময় লাগছে । ও হয়তো বুঝতেও পারছে না আসলে শশী কেন এটা করলো ! অনেকটা সময় চুপ থাকার পরে অর্ক বলল, কেন করলে ? তুমিই না লুকিয়ে থাকতে চেয়েছিলে?
-করলাম কারণ আমি ফিরে যাওয়ার পথ বন্ধ করতে চেয়েছি । আমি …. আমি তোমাকে ছেড়ে যাই নি । যদিও আমার মনের একটা অংশ এখনও তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাচ্ছে কিন্তু অংশটা তোমাকে ছেড়ে যেতে চায় না । এই একমাসে এটা আমি খুব ভাল করেই উপলব্ধি করতে পেরেছি !
দীর্ঘ সময় কেউ কোন কথা বলল না । তারপর অর্ক বলল, কাল থেকে অফিসে কিন্তু অনেক প্যারা খাবে বলে দিলাম ।
-আমি একা তো খাবো না । তুমিও তো খাবে !
অর্ক হাসলো, তারপর বলল যাক ট্রায়াল পিরিয়ড শেষ হয়ে এখন আসল প্রেম শুরু হবে আমাদের !
শশীও হাসলো কেবল । ওদের আসল প্রেম তো কবেই শুরু হয়ে গেছে ।
গল্পের লিংক সরাসরি পেতে হোয়াটস গ্রুপ অথবা টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন করুন। সকল গল্পের জন্য সূচিপত্র দেখুন।
Discover more from অপু তানভীর
Subscribe to get the latest posts sent to your email.
আহা!
এমন ট্রায়াল লাভার হওয়ার সুযোগ জুটলে মন্দ হতো না.. ????