ট্রায়াল পিরিয়ড

oputanvir
4.6
(49)

খানিকটা অস্বস্তি নিয়েই শশী মিটিং রুমে ঢুকলো । সে খুব ভাল করেই জানে অর্কও থাকবে মিটিং রুমে । ওর সাথে দেখা হবে । চোখাচোখী হবে । না জানি ছেলেটা না আবার কোন পাগলামি করে বসে । যদি সত্যটা প্রকাশ পায় তাহলে শশী নিজে খুব লজ্জায় পড়ে যাবে । তখন ব্যাপারটা কেমন হবে সেটা শশী নিজেও জানে না ।

মিটিং রুমে ঢুকেই শশী খেয়াল করলো সেখানে তখনও কেউ এসে পৌছায় নি । শশী ঘড়ির দিকে তাকালো । বারোটা তখনও বাজে নি । এখনও মিনিট খানেক সময় বাকি রয়েছে । শশী চেয়ার গুলোর দিকে তাকাতে লাগলো । কোন জায়গায় বসলে অর্কের সাথে চোখাচোখী হবে না সেটা খুজতে লাগলো । অর্ক সব সময় সিইও মাহবুব স্যারের কাছেই বসে । সেটা ডান দিকে কিংবা বাম দিকে হতে পারে । শশী ডান দিকের কোনার একটা চেয়ারে বসলো । যদি অর্কও ডান দিকে বসে তাহলে তাহলে ওর সাথে চোখাচোখী হওয়ার সম্ভবনা নেই । তবে বাম দিকে বসলে সেটা হবে বেশ ভাল করেই । এটা শশী চায় না মোটেও ।

নিজের চেয়ার বসে অপেক্ষা করতে লাগলো সবার জন্য । কয়েক মিনিটের ভেতরেই একে একে চলে আসতে লাগলো সবাই । এবং অবাক করে দিয়ে অর্ক এল সবার পরে । বসলো একেবারে ঠিক শশীর বিপরীত দিকে । একেবারে মুখোমুখী । অবশ্য কেবল ঐ সিটটাই ফাঁকা ছিল ।

মিটিং শুরু হয়ে গেল কিছু সময়ের ভেতরেই । চলল বেশ কিছু সময় ধরে । মিটিং শেষ পর্যায়ে মাহবুব স্যার হঠাৎ অর্কের দিকে তাকিয়ে বলল, কী ব্যাপার অর্ক তোমার মন খারাপ নাকি? আজকে কোন কথাই বলছো না!

এমনটা মনে হওয়াটা স্বাভাবিক । প্রতিটা মিটিংয়ে অর্ক সব থেকে কথা বলে বেশি । সবাই হাসায় কিংবা যে ব্যাপারেই ওর আগ্রহ সব থেকে বেশি । আজকে সে এমন ভাবে চুপ চাপ আছে সেটা যে কারো চোখে পড়বেই । অর্ক কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর পাশ থেকে আইরিন বলল, স্যার অর্কের মন খারাপ !
-কেন মন খারাপ ?
-ছ্যাঁকা খেয়েছে স্যার !

শশী একটা ধাক্কার মত খেল । সেই সাথে মনের ভেতরে একটা অস্বস্তির দানা বাঁধলো । আইরিন জানে ব্যাপারটা ।

মাহবুব স্যার অবাক হয়ে বলল, কী বলছো? অর্কের মত ছেলেকে রিজেক্ট করেছে কোন মেয়ে ? মেয়েটা দেখি বড় গাধা দেখি মেয়েটা !
আইরিন সাথে সাথে বলল, সেটাই তো ! আমি কত করে জানতে চাইলাম সেই গাধা মেয়েটার নাম কী অর্ক কিছুতেই নামটা বলল না । বেচারা একা একাই কষ্ট পাচ্ছে । আমাদেরকে বললে আমরা না হয় আরেকবার চেষ্টা করতে পারতাম ।

শশী খানিকটা সংকুচিত অনুভব করলো । একটু লজ্জা আর অস্বস্তি নিয়েই সে চেয়ারে বসে রইলো । যদিও এটা বুঝতে পারছে যে অর্কের রিজেক্ট হওয়ার ব্যাপারটা জানলেও কে অর্ককে রিজেক্ট করেছে সেটা এখনও কেউ জানে না । অর্ক কাউকে বলে নি ।
এখন এই রুমে যদি সবাই জানে যে শশীই হচ্ছে সেই গাধা যে অর্ককে রিজেক্ট করেছে তাহলে ব্যাপারটা কেমন হবে সেটা ভাবতেও শশীর গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো । সেটা ভাবতে চাইলো না মোটেই । অর্ক একবারের জন্যও ওর দিকে তাকায় নি রুমে ঢোকার পর পর্যন্ত ।

অর্ক এবার মাহবুব স্যারের দিকে তাকিয়ে বলল, স্যার ওকে নিয়ে আলোচনা না হোক । তার ইচ্ছে হয় নি রাজি হয় নি। আমাদের সবার ব্যক্তিগত পছন্দের উপরে সম্মান করা উচিৎ !
আইরিন বলল, দেখছেন স্যার কত মহান প্রেম !

মাহবুব স্যার বললেন, ওকে আজকের মিটিং তাহলে আজকে এখানেই শেষ । আমাদের অর্কের আজকে মন খারাপ । এই কারণে আর কাজ হবে না এখন । আজকে দুপুরে লাঞ্চ অফিসের পক্ষ থেকে !
মাহবুব স্যার একটু থেমে আবার বললেন বললেন, নাহ কাজটা যেই করুক তার পছন্দের সম্মান আমাদের করা উচিৎ । যাই হোক আমাদের সবারই পছন্দ আছে । সেই ব্যাপারে আমাদের কোন কিছু করার নেই । তবে আমরা অর্কের মন ভাল করার চেষ্টা তো করতে পারি । আর মন ভাল করার জন্য ভাল মন্দ খাওয়ার থেকে ভাল কিছু আর হতেই পারে না । কী বল তোমরা !
সবাই হইহই করে উঠলো !

মাহবুব স্যার বললেন, শশী লাঞ্চের দায়িত্ব তোমার উপর থাকলো । এই কাজ গুলো তুমি ভাল করে ।

শশী আবারও অস্বস্তি নিয়ে তাকালো । তবে মাহবুব স্যার কথাটা ভুল বলেন নি । শশী ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে বেশ চমৎকার করে । অফিসের যে কোন প্রোগ্রামের আয়োজন শশী সব থেকে ভাল করে শেষ করে । কেউ কোন আপত্তি করলো না ।

ঠিক হল লাঞ্চ দুপুর তিনটায় । এখনও ঘন্টা খানেক সময় আছে । কে কী খাবে কার পছন্দ এসব আলোচনা চলল কিছু সময় তারপর যে যার ডেস্কে চলে গেল । শশী বের হল বাইরে খাবারের জন্য । গাড়ি দেওয়া হল অফিস থেকেই । অফিসের গাড়িতে করে যাওয়ার সময় শশী ওর সাথে ঘটে যাওয়া দুইদিন ঘটনা । শশী কোন দিন ভাবতেও পারে নি ওর নিজের সাথে এমন ঘটনা ঘটতে পারে । বিশেষ করে ওদের অফিসের অর্ক ওকে ভালোবাসার কথা বলতে পারে । অর্ক অফিসের সব থেকে সুদর্শন ছেলে । সেই সাথে সব থেকে চার্মিং । সব অবিবাহিত মেয়েরা তো বটেও বিবাহিতরাও মাঝে মাঝে ওর সাথে ফ্লার্ট করতে পিছপা হয় না । ওদের অফিসের এই বিল্ডিংয়ে আরো অনেক গুলো অফিস আছে । সবার জন্য রুফটপে একটা বড় ক্যাফে আছে । সেখানে লাঞ্চ আওয়ারে অনেকের সাথেই দেখা হয় কথা হয় । । অন্য অফিসের সব মেয়েদের চোখ যে অর্কের দিকে সেটা বলার অপেক্ষাও রাখে না । এই পর্যন্ত চারজন মেয়ে অর্ককে প্রোপোজ করেছে সরাসরি । আর সেই অর্ক কিনা শশীকে পছন্দ করে !

ব্যাপারটা কারো হজম হবে না । এমন শশীর নিজেরও ব্যাপারটা হজম হল না । শশী নিজের সম্পর্কে খুব ভাল করেই জানে । কোন ভাবেই আসলে অর্কের সাথে ওর মিল হয় না । বিশেষ করে অর্কের চাল চলন মনভাব শশীর সাথে মিলবে না । অর্ক কী দেখে ওকে পছন্দ করলো সেটা শশী নিজেও জানে না । তবে শশী অনেকটাই বাস্তববাদী । সে জানে যে সম্পর্কটা যতই লোভনীয় দেখাক না কেন বাস্তবা খুব কঠিন হবে । ওর তাল মেলাতে শশীকে ম্যারাথন দৌড়াতে হবে, নিজেকে ভেঙ্গে চুড়ে পরিবর্তন করতে হবে যা শশী মোটেও চায় না । ওর শান্ত সুন্দর জীবনটা ও কোন ভাবেই এতো জটিল করতে চায় না ।

তাই সবিনয়ে অর্ককে সে মানা করেছিলো । জানিয়েছিলো যে সে এসবের ভেতরে জড়াতে চায় না । তবে সত্যি বলতে কি যে ধরণের ছেলেদের কে নিয়ে মেয়েরা স্বপ্ন দেখে অর্ক যে ঠিক সেই রকম একজন ছেলে সেটার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই । শশী নিজেও যে ওকে বেশ পছন্দ করে সেটা শশী কোন ভাবেই অস্বীকার করতে পারবে না । তার পরেও সে রাজি হয় নি । অর্ক অবশ্য আর কিছু জানতে চায় নি । মন খারাপ হয়েছে সেটা শশী খুব ভাল করেই বুঝতে পারছিলো । মন খারাপ শশীর নিজেরও হয়েছে বেশ । রাজি হলে হয়তো ভাল লাগতো । তবে রাজি হলে পরের জটিলতা বাড়তো অনেক যা শশী চায় নি একদমই ।

দুপুরের খাওয়া দাওয়া হল বেশ । অর্কের মুখে হাসি ফুটলো বটে তবে শশীর কেন জানি মনে হল সেটা আসলে মেকি । আসল প্রাণ খোলা হাসি না । শশীর মন কেন খারাপ হয়ে রইলো অর্কের জন্য । ছেলেটা হয়তো অনেকটা দিন এমন করে মন মরা হয়েই রইবে ।

পরের দুটো দিন কেটে গেল ঝামেলা ছাড়াই । অর্ক ছিল চুপচাপ আর নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত । শশীর ধারে কাছেও কাছে আসে নি । তবে তিন নম্বর দিনে অফিস থেকে বের হওয়ার পথেই শশীর সামনে এসে দাড়ালো । তখন অফিস থেকে প্রায় সবাই চলে গেছে । শশী একটু কেপে উঠলো বটে । তবে সামলে নিল । বলল, কিছু বলবেন?
-হ্যা ।
-বলুন ।
-আমার সাথে এককাপ কফি কি খাওয়া যায় এখন?
-এখন ?
-হ্যা । প্লিজ !

শশীর একবার মনে হল মানা করে দেয় কিন্তু করলো না । তাহলে হয়তো অর্কের মন আরো খারাপ হবে । বলল, চলুন ।

অফিসের সামনের একটা কফি শপেই বসলো ওরা । কফি এল । কেউ কোন কথা বলল না কিছু সময় । শশীই প্রথমে জানতে চাইলো কেন কফি খেতে চাইলেন হঠাৎ ?
-চাইতে পারি না?
-হ্যা পারেন ।
-আর তোমার সাথে তো কফি খেতে চাওয়ার খুব বড় কারণ আছে । তাই না?
শশী জবাব দিল না । কথা বললেই কথা বাড়বে, বাড়বে অস্বস্তি । সেটা শশী চায় না । তবে অর্ক থামলো না । বলল, তুমি কেন আমাকে রিজেক্ট করলে!
শশী বলল, রিজেক্ট শব্দ খুব বাজে শোনায় । আপনি কিছু একটা বলেছেন আমি তাতে রাজি হই নি ।
-ঐ হল ! তুমি কেন রাজি হলে না?

শশী ঠিক বুঝতে পারলো না যে কী বলবে । যে কারণে সে রাজি হয় নি সেটা কী বলবে কিনা সেটা ভাবছে । অর্ক আবার বলল, প্লিজ বল । আমি এটা শুনতে চাই । আমি ভেবেছিলাম আমি জানার চেষ্টা করবো না । তবে এটা না জেনে আমি শান্তি পাচ্ছি না মোটেও । প্লিজ !

শশী জোরে একটা দম নিল । তারপর কারণটা বলে দিলো । কারনটা শোনার পরে অর্ক কিছু সময় যেন চুপ করে রইলো । শশী ভেবেছিলো কোন কথা বলবে তবে বলল না । আর খুব একটা কথাও হল না ওদের ভেতরে । কফি শেষ করে যে যার দিকে চলে গেল । শশী ভেবেছিলো এসবের বুঝি এখানেই শেষ হবে । তবে শেষ হল না । পরের দিন শুক্রবার হওয়াতে শশী সকালে একটু বেলা করেই ঘুমালো । এগারোটার দিকে যখন নাস্তা করতে বসলো তখন ইন্টারকম থেকে ফোন করে জানালো যে একজন ছেলে তার সাথে দেখা করতে এসেছে । নাম বলতেই চোখ কপালে উঠলো ওর ।
অর্ক এসেছে নিচে !

ছুটির দিন হওয়াতে বাবাও রয়েছে বাসায় । ছোট বোন আর মা রয়েছে রান্নাঘরে । শশী কী করবে ঠিক বুঝতে পারলো না । ফোন বের করে অর্ককে ফোন দিল । ফোনটা রিসিভ হল সাথে সাথেই ।
-আপনি বাসায় কেন এসেছেন?
-তোমার সাথে দেখা করতে !
-মানে কী ?
-কোন মানে নেই । তুমি আধা ঘন্টার ভেতরে তৈরি হয়ে নিচে নামো নয়তো আমি উপরে আসবো ।
-দেখুন আপনি এমন কোন কাজ করবেন না । আমি মাহবুব স্যারকে রিপোর্ট করবো ।
-কর। কোন আপত্তি নেই । তখন অফিসের সবাই সব কিছু জেনে যাবে । যেই জটিলতা এড়াতে চাইছিলে সেই জটিলতাই এসে হাজির হবে । এবং তুমি এটা খুব ভাল করে জানো যে অফিসের সবার মনভাব আমার দিকেই যাবে !

শশী নিজেও জানে ব্যাপারটা । ব্যাপারটা যদি অফিসে জানা জানি হয় তাহলে ব্যাপারটা ওর জন্য মোটেও ভাল হবে না । কিছু সময় শশী ঠিক বুঝতেই পালরো না যে কী করবে ! তবে ভাবা ভাবির সময় এখন নেই । অর্ককে এখন বাসায় আসতে দেওয়া যাবে না । বলল, আচ্ছা আমি নামছি নিচে । আপনি সামনের চায়ের দোকানে গিয়ে দাড়ান প্লিজ !

-আপনি কেন পাগলামি করছেন শুনি?
শশী বাসা থেকে যত দ্রুত সম্ভব তৈরি হয়ে বাসার বাইরে এল । একটু হাটতেই দেখতে পেল অর্ককে । সে চায়ের দোকানে ঢোকে নি । বাইরে দাড়িয়ে মোবাইল টিপছে । ওকে দেখেই এগিয়ে এল হাসি মুখে । ওখান থেকে রিক্সায় করে ওরা কাছের একটা ক্যাফেতে এসে হাজির হল ।
অর্ক বলল, আমার মনে হয় পাগলামীটা তুমি করছো । যাই হোক আমি একটা চেষ্টা করে দেখটে চাই আরেকবার ।
-আমি চাই না ।
-আরে আগে শোনাই না কী বলতে চাইছি । তারপর পছন্দ না হলে আমি কিছু বলবো না ।

শশী তাকালো তবে কোন কিছু বলল না । অর্ক বলল, তার আগে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দাও । সত্যি করে বলবে ।
-জ্বী বলুন ।
-তুমি কি আমাকে অপছন্দ কর ? মানে সহ্য করতে পারো না এমন কিছু তো নয় রাইট ? অন্তত আমি যে মানুষ হিসাবে খারাপ নই কিংবা আমার সাথে সময় কাটাতে যে খারাপ লাগবে না এটা সত্য !
-হ্যা সত্য ।
-গুড । এটাই জানার ছিল । তুমি কেবল চাও যাতে তোমার শান্তির জীবন নষ্ট না হোক, জটিলতা না আসুক । তাই না?
-হ্যা । আমি আগেও বলেছি আপনার সাথে আমার লাইফ স্টাইল মিলবে না । আমরা একে অন্যের সাথে তাল মেলাতে পারবো না ।
-ওকে বাবা ওকে ! বুঝেছি । আসো একটা কাজ করি !
-কী কাজ ?
-একটা ট্রায়াল পিরিয়ড হোক !

শশী যেন ঠিক মত বুঝতে পারলো না । বলল, ট্রায়াল পিরিয়ড মানে কী?
-মানে হচ্ছে আমার সাথে একটা মাস আমার প্রেমিকার মত করে থাকবে । কিন্তু ব্যাপারটা থাকবে একেবারে গোপন । কেউ জানবে না টের পাবে না । কেউ জানবে না । যদি একমাস পরে তোমার মনে হয় যে তোমার জীবন জটিল হয়ে যাচ্ছে আমরা দুজন দুই দিকে চলে যাবো । আমি আর কখনই তোমার সামনে আসবো না ।
-জ্বী না এসব হবে না ।
-প্লিজ । একটা বার চেষ্টা করেই দেখো । আমি জানি তুমি আমাকে পছন্দ কর । তোমার চোখে চাহনি আমাকে তোমার প্রতি আকৃষ্ট করেছে । এই চাহনি চিনতে আমি ভুল করি নি । প্লিজ ! একটা বার চেষ্টা করে দেখি ।

শশী কোন ভাবেই না করতে পারলো না । রাজি হয়ে গেল । রাজি হওয়ার সময়েই শশীর মনে হল যে কাজটা মোটেও ঠিক হল না । এই যে আটকে যাচ্ছে সেটা থেকে আর সে বের হতে পারবে না । তবে কেন জানি মনের অন্য আরেকটা অংশ ঠিকই বলছে যে কাজটা ঠিকই হয়েছে । একবার চেষ্টা করে দেখতে দোষ কোথায় !

একটা মাস যে কিভাবে পার হয়ে গেল শশী নিজেও টের পেল না । এই পুরোটা সময় সত্যিই সত্যি ওরা দারুণ প্রেম করলো সবার কাছ থেকে । অফিসে মেসেজ চালাচালি সবার চোখ এড়িয়ে দেখা করা । এমনি একদিন অর্ক ওর গালে একটা চুমুও খেয়ে ফেলল । তখন যদিও রাগ করে চলে এসেছিলো তবে নিজের ডেস্কে বসার পরেই রাগ পড়ে গেল । তার বদলে সেখানে একটা অন্য রকম অনুভূতি এসে জড় হল ।

একমাস সময়টা যখন শেষ হতে যাবে তার আগের দিন শশী একটা ভয়ানক কাজ করলো । কাজটা সে যে কেন করলো সেটা নিজেও জানে না । ওদের ফেসবুকে অফিস কলিগদের একটা গ্রুপ ছিল । সেই গ্রুপেই ও অর্কের সাথে তোলা কয়েকটা ছবি পোস্ট করলো । আইডি এনানিউমাস করে ছবি করে পোস্ট করলো যাতে করে কেউ বুঝতে না পারে কে পোস্ট করেছে । পোস্ট বাটনে চাপ দেওয়ার সময়ে বুকের ভেতরে কেমন যেন লাগছিলো । ছবির কেপশনে লিখলো আমাদের হিডেন লাভ বার্ডস !

পোস্ট হওয়া পরপরই সবাই দেখে ফেলল। ওকে কয়েকজন ফোনও দিলো তবে শশী করো ফোন ধরলো না । কিছু সময় পরে এসে হাজির হল অর্কের ফোন । ফোন ধরেই সে ব্যস্ত কন্ঠে বলল, বিশ্বাস কর আমি ছবি গুলো পোস্ট করি নি । আমি জানিও না করে করেছে । আমি এডমিনকে ছবি সরাতে মেসেজ দিয়েছি ।

অর্কের কন্ঠের ব্যস্ততা দেখে শশীর হাসি পেয়ে গেল । শান্ত কন্ঠে বলল, আমি জানি তুমি ছবি গুলো পোস্ট কর নি ।
-কিভাবে জানো ?
-কারণ আমি জানি কে ছবি গুলো পোস্ট করেছে?
-কে করেছে?
-আমি !

ফোনের ওপাশ থেকে কোন আওয়াজ শোনা গেল না । হয়তো তথ্যটা হজম করতে অর্কের কিছুটা সময় লাগছে । ও হয়তো বুঝতেও পারছে না আসলে শশী কেন এটা করলো ! অনেকটা সময় চুপ থাকার পরে অর্ক বলল, কেন করলে ? তুমিই না লুকিয়ে থাকতে চেয়েছিলে?

-করলাম কারণ আমি ফিরে যাওয়ার পথ বন্ধ করতে চেয়েছি । আমি …. আমি তোমাকে ছেড়ে যাই নি । যদিও আমার মনের একটা অংশ এখনও তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাচ্ছে কিন্তু অংশটা তোমাকে ছেড়ে যেতে চায় না । এই একমাসে এটা আমি খুব ভাল করেই উপলব্ধি করতে পেরেছি !

দীর্ঘ সময় কেউ কোন কথা বলল না । তারপর অর্ক বলল, কাল থেকে অফিসে কিন্তু অনেক প্যারা খাবে বলে দিলাম ।
-আমি একা তো খাবো না । তুমিও তো খাবে !
অর্ক হাসলো, তারপর বলল যাক ট্রায়াল পিরিয়ড শেষ হয়ে এখন আসল প্রেম শুরু হবে আমাদের !

শশীও হাসলো কেবল । ওদের আসল প্রেম তো কবেই শুরু হয়ে গেছে ।

গল্পের লিংক সরাসরি পেতে হোয়াটস গ্রুপ অথবা টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন করুন। সকল গল্পের জন্য সূচিপত্র দেখুন।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.6 / 5. Vote count: 49

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

One Comment on “ট্রায়াল পিরিয়ড”

Comments are closed.