দ্য রেস

4.9
(10)

ডাক্তার নাদিয়া সারমিন খুব অধৈর্য ভাবে আবারও কথাটা বলল, প্লিজ কিছু একটা করুন। মেয়েটাকে বাঁচানো যাবে না নয়তো।
ওপাশ থেকে আবারও সেই একই কথা শোনা গেল। অপারেটর বলল, ম্যাম, প্লিজ বোঝার চেষ্টা করুন। আবহাওয়া একদম ভাল না। এই বাতাসের ভেতরে কোন ভাবেই চপার নিয়ে বের হওয়া যাবে না। সম্ভব হলে আমরা কেন আসব না বলুন!
নাদিয়া বাইরের দিকে তাকাল আবার। কেবিনের জানালা দিয়ে বাইরের আকাশটা দেখা যাচ্ছে। আবহাওয়া সত্যিই খারাপ। বৃষ্টি অতোটা জোরে না হলেও প্রচুর বাতাস হচ্ছে। এই বাতাসের ভেতরে হেলিকাপ্টার নিয়ে বের হওয়া যাবে না।
নাদিয়া নিজের চোখের কোণে আসা পানিটা মুছে ফেলল। তবে লাভ হল না। আবারও সেখানে বিন্দু বিন্দু পানি জমতে শুরু করল। এতো অসহায় লাগছে নিজের কাছে। কিছুই করার নেই ওর। চোখের সামনে মেয়েটাকে এভাবে মরতে দেখবে সে। কিছুই করার থাকবে না।
ঘন্টা দুয়েক আগেই মেয়েটাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। ছাদ থেকে পরে গিয়েছে। মাথায় আঘাত পেয়েছে। যতদ্রুত সম্ভব মেয়েটার মাথায় অপারেশন করাতে হবে। কিন্তু এখানে সেটা সম্ভব না। এটা ঢাকাতেই হতে হবে। কিন্তু সেখানে নিয়ে যাবে কিভাবে!
এয়ার এম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়া যেত কিন্তু আজকে সকাল থেকে প্রচন্ড বাতাস হচ্ছে। এই বাতাসের ভেতরে হেলিকাপ্টার উড়ানো সম্ভব না। হতাশ হয়ে নাদিয়া বুকের ভেতরটা হুহু করে কেঁদে উঠল আরেকবার। ডাক্তারদের নাকি নার্ভ শক্ত হতে হয়। তবে নাদিয়ার এখনও সেটা হয় নি। রোগীর কিছু হলে নাদিয়া নিজেকে শান্ত রাখতে পারে না। এই রোগীটা তার নিজের নয়। সে এখানে এসেছে ট্রেনিংয়ের জন্য। তবে টিউটি ঠিকই দিতে হয়। ইমাজেন্সীতে যায় না সে। কিন্তু আজকে চরম পরিস্থিতিতে অনেক কিছুই নাদিয়ার কাধে এসে হাজির হয়েছে।
নাদিয়া যখন হতাশ হয়ে নিজের কেবিনের চেয়ারে বসতে যাবে তখনই তার নজরে এল টিভির খবরটা। প্রেসিডেন্ট আমান ফারিজ কুমিল্লাতে এখন। দলীয় কাজে এসেছিল সে। তবে এখন আবহাওয়া খারাপের জন্য সার্কিট হাউজে আছে। আবহাওয়া ভাল হলেই আবারও ঢাকার উদ্দেশ্য রওয়ানা দিবে।
নাদিয়া নিজের ফোন বের করল। নাদিয়ার কাছে পিএস মাহমুদের নম্বর আছে। সেদিনের সেই ঘটনার পরে আরও একবার প্রেসিডেন্ট আমান ফারিজ এসেছিল তাদের হাসপাতালে। সেবার অবশ্য আর আনঅফিশিয়াল ভাবে আসেন নি। তারপরেও তাকে সে মনে রেখেছে। আর সেবার সে নিজেই তার পিএস মাহমুদের নাম্বর তাকে দিয়েছিল। বলেছিল স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোন দরকারে যেন সে পিএস মাহমুদকে ফোন দেয়।
নাদিয়া ফোনটা হাতে নিয়ে আরও কয়েকবার ভাবল। ফোন দেওয়া উচিত হবে কিনা সে জানে না। তবে মেয়েটাকে বাঁচানোর সম্ভাব্য সব চেষ্টা তাকে করতেই হবে। নাদিয়া নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন দিল।

সার্কিট হাউজের সামনে দলের নেতাকর্মী দিয়ে ভরতি। কেবল যে তার দলের নেতাকর্মী রয়েছে সেটাও না, স্থানীয় প্রচুর মানুষও রয়েছে। আবহাওয়ার ভাল না, তারপরেও সবাই দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমান ফারিজ সার্কিট হাউজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে সবার দিকে হাত নাড়ছেন। যদিও তার সিকিউরিটি চিফ শরীফ তাকে বারবার ঘরের ভেতরে যেতে বলছে, আমান ফারিজ সেদিকে কান দিচ্ছে না। কেউ হত্যা চেষ্টা করবে, এটা সে ভাবতেই পারে না। আর কেউ যদি হামলা করেও তাতে কী বা আসে যায়। এভাবেই যদি মরণ লেখা থাকে তবে তাই থাক!
তবে পিএস মাহমুদের যখন চিন্তিত মুখে বারান্দায় এসে হাজির হল তখন আমান ফারিজের মনে হল কিছু হয়েছে। তার মনে হল যে বাসা থেকে সম্ভবত ফোন এসেছে। এখানে আসার আগে তার বাবাকে দেখে এসেছিল একটু অসুস্থ। গতকাল রাত থেকে তার একটু জ্বর এসেছে।
সে দ্রুত ঘরের ভেতরে চলে গেল। মাহমুদের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইল, বাসা থেকে এসেছে?
-না স্যার।
মনের ভেতরে একটু স্বস্তি পেল সে। তবে মাহমুদের মুখের ভাব দেখে মনে হল অন্য কিছু হয়েছে। সে বলল, তাহলে?
-আপনার ডাক্তার নাদিয়া সারমিনের কথা মনে আছে?
-হ্যা। কেন মনে থাকবে না!
-উনি এখন এখানে আছেন।
-তাই নাকি?
-এখানে প্রশিক্ষক হিসাবে আছেন, কিছু দিনের জন্য।
-পয়েন্টে আসো মাহমুদ!
-স্যার, আজকে ওনাদের হাসপাতালে একজন এক্সিডেন্ট রোগী এসেছে। হেড ইঞ্জুরি। জরুরী ভিত্তিতে ঢাকা নিয়ে যেতে হবে। সময় খুব কম। কিন্তু এই আবহাওয়াতে এয়ারএম্বুলেন্স সম্ভব না।
-ওহ!
-উনি ফোন দিয়েছিলেন যে কোনো ভাবে তাকে সাহায্য করা যায় কিনা!
আমান ফারিজ কিছু সময় কী যেন ভাবল। তারপর বলল, ক্যান্টনমেন্টের সাথে কথা বল। ওদের চপার নিয়ে যেতে বল।
-স্যার, এরই ভেতরে আমি কথা বলেছি তাদের সাথে। ওরাও একই কথা বলেছে। এই আবহাওয়াতে চপার তোলা খুবই বিপজ্জনক। আবহাওয়া শান্ত না হলে সম্ভব না কিছুতেই। কিন্তু কত সময়ে সেই আবহাওয়া শান্ত হবে সেটা কেউ জানে না। তত সময়ে মেয়েটা টিকবে কিনা সন্দেহ! আমি ওদের অর্ডার দিয়ে রেখেছি যে আবহাওয়া শান্ত হওয়া মাত্রই যেন চপার নিয়ে হাজির হয়। এখন কেবল দোয়া করেন যেন আবহাওয়া দ্রুত শান্ত হয়!
মাহমুদ প্রেসিডেন্ট আমান ফারিজের দিকে তাকিয়ে রইলেন একভাবে। তার চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে তিনি কিছু ভাবছেন। সেই কিছুটা যে স্বাভাবিক কিছু না সেটা মাহমুদ জানে। তবে কেন জানি আজকে মাহমুদের মনে সেই দুঃচিন্তাটা এল না। নাদিয়া সারমিন কেমন বাচ্চাদের মত কাঁদছিল। একটা অচেনা মেয়ের জন্য এই কান্না দেখে মাহমুদের মনে হইয়েছিল, ইস! কোনো ভাবে যদি মেয়েটাকে সাহায্য করা যেত! তার ক্ষমতায় যা ছিল সে করে ফেলেছে। আবহাওয়া একটু ভাল হলেই আর্মি চপার চলে আসবে। সেই পর্যন্ত মেয়েটাকে টিকে থাকলেই হয়!
-মাহমুদ !
-জ্বী স্যার।
-ক্যান্টনমেন্টের সাথে কথা বল। ওদের বল বেস্ট ইকুইপ্ট আর্মি এম্বুলেন্স হাসপাতালে পাঠাতে। জলদি। সেই সাথে ওদের বেস্ট ড্রাইভারকে যেন পাঠায়। ১৫ মিনিট সময়। জলদি। আর আমার গাড়ি রেডি করতে বল। আমি হাসপাতালে যাবো।
-স্যার!
-কোনো কথা না মাহমুদ। উই হ্যাভ টু উইন দিস রেস!

দুই

-মিস নাদিয়া কেমন আছেন? আবার দেখা হয়ে গেল!
নাদিয়া এতোটা সময়ে নিজের কেবিনে বসে ছিল বিষন্ন হয়ে কিন্তু সাইরেনের আওয়াজ শুনে সে বাইরে বের হয়ে এল। দুইতলা থেকে দেখতে গাড়ি বহরটা। নাদিয়াকে বলে দিতে হল না যে কে আসছে। নাদিয়া এটা ভাবে নি যে স্বয়ং আমান ফারিজ এসে হাজির হবে। সে তার পিএসকে ফোন দিয়ে সাহায্য চেয়েছিল সে ভেবেছিল যে হয়তো কোন ভাবে সাহায্য করবে। মাহমুদ কথা দিয়েছিল যে আবহাওয়া একটু ভাল হলেই চপার চলে আসবে। নাদিয়া সেটার জন্য অপেক্ষা করছিল। কিন্তু এর ভেতরেই আমান ফারিজ এসে হাজির হয়েছে।
-স্যার আপনি?
-আপনার রোগীর কী অবস্থা?
-ভাল না স্যার। কখন যে ঢাকা পৌছাতে পারব জানি না।
-ওয়েল। সেই চেষ্টায় হচ্ছে। আমরা বাই রোড যাচ্ছি।
নাদিয়া ঠিক বুঝতে পারল না। এখান থেকে বাইরোড কিভাবে যাবে? কত সময় লাগবে?
-মিস নাদিয়া চিন্তা করবেন না। এখানে আবহাওয়া শান্ত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে লাভ নেই। ঢাকা এখান থেকে দেড় ঘন্টার পথ। কিন্তু আমরা ৪৫/৫০ মিনিটে পৌছানোর কথা ভাবছি! অলরেডি প্রোসেস শুরু হয়ে গেছে। পুরো রাস্তা আমাদের জন্য ক্লিয়ার করা হচ্ছে। আমার গাড়ির ঠিক পেছনের আপনার এম্বুলেন্স থাকবে। এডভ্যান্সড আর্মি ইকুইপ্ট এম্বুলেন্স! আশা করি সমস্যা হবে না।

নাদিয়ার কাছে সব কিছু কেমন যেন স্বপ্নের মত মনে হল। কিন্তু হঠাৎ মনে হল যে সামনের মানুষটা যেহেতু বলছে তাহলে সম্ভব।
আমান ফারিজ আবারও বলল, এছাড়া চপারকে অর্ডার দেওয়াই আছে। যখনই সম্ভবত হবে তখনই সেটা উড়াল দিবে। আমারকে তুলে নিবে।

রোগীর নাম মিমি। ক্লাস এইটে পড়ে সে। ছাদে উঠেছিল আজকে। সেখান থেকেই পরে গেছে। মিমির মা বাবা আর বড় মামা এসেছে হাসপাতালে। তারা অবাক হয়ে দেখছে দেশের সব থেকে ক্ষমতাধর মানুষটা তাদের সামনে, তার মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। মিমিকে এম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছে।
আমান ফারিজ তার সিকিউরিটি চিফকে ডেকে বলল, শরীফ, বাইক চলে গেছে?
-জ্বী স্যার। এক গ্রুপ সামনে গেছে। আরেক গ্রুপ আমাদের একটু আগে যাবে।
-ট্রাফিক কমিশনারের সাথে কথা হয়েছে?
-জ্বী স্যার। ওনারা কন্ট্রোলে রুমে আছে। এছাড়া প্রতিটা থানায় খবর চলে গেছে। আমরা যেতে যেতে সবাই রাস্তায় নেমে যাবে। পুরো রাস্তা ফাঁকা থাকবে আমাদের জন্য।
-আর ঢাকার ট্রাফিক কমিশনার?
-স্যার তার সাথে যোগাযোগ হয়েছে। আমাদের রুট তাদের জানানো হয়েছে। রাস্তা ফাঁকা থাকবে।

নাদিয়ার এম্বুলেন্সে উঠে উঠে বসল। আগে থেকেই এজন ডাক্তার আর নার্স সেখানে উঠে বসেছে। আমান ফারিক নিজের গাড়িতে ওঠার সে এম্বুলেন্সের ড্রাইভারের কাছে এল। তাকে বলল, কী নাম আপনার?
জসিম মিয়া এতো সময় ভীত চোখে তাকিয়ে ছিল চারিদিকে। সে আর্মির এম্বুলেন্সে চালায় অনেক দিন। তবে এমন পরিস্থিতিতে সে এর আগে কোন দিন পড়ে নি। তার সামনে এখন যে মানুষটা দাঁড়িয়ে তার নাম জিজ্ঞেস করছে সে কেউ নয়, এই দেশের প্রধান। সে নিজে তাকে ভোট দিয়েছে। সেই মানুষ তাকে আপনি করে বলছে! তার মত সামান্য একজন মানুষকে আপনি করে বলছে সে!
জসিম মিয়া একটু তোতলাতে তোতলাতে বলল, স-স্যার জ-জসিম মিয়া!
-জসিম মিয়া! আপনার উপরে আমি ভরসা করতে পারি তো? আমার গাড়ি একশ একশ বিশের বেশি যাবে। এই বৃষ্টির ভেতরে আপনি আমাদের সাথে তাল মেলাতে পারবেন তো? একটা মানুষের জীবনের ব্যাপার!
হঠ্যাত জসিমের চোখ সিক্ত হয়ে এল যেন! সামনে দাঁড়ানো মানুষটার কন্ঠে কোনো অর্ডার নয় বরং অনুনয় শোনা যাচ্ছে। এতো ক্ষমতাধর মানুষ অথচ কত বিনয়!
জসিম মিয়া বলল, স্যার আপনারে জবান দিতেছি। আমি পৌছাইয়া দিমু।
আমান ফারিজ একটু হাসল।
-গুড টু নো!
এবার আমান ফারিজ এগিয়ে গেল মিমির বাবা মায়ের দিকে। তাদের উদ্দেশ্য করে বলল, আপনাদের জন্য এখনই গাড়ি আসছে। আমরা আগে রওয়ানা দিই কেমন!
তারপর মিমির বাবা হঠাত করেই আমান ফারিজকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কাঁন্না করে দিল। শরীফ এগিয়ে আসছিল তবে আমান ফারিজের ইশারাতে তাকে থামতে বলল। আমান ফারিজ তাকে শান্তনা দিয়ে বলল, আমাকে ক্ষমা করে দিন। এটা আমার ব্যর্থতা যে আমি আমার আমলে এখানে সেই দরকারি একটা হাসপাতাল তৈরি করতে পারি নি। এইজন্য আপনার মেয়েকে ঢাকা যেতে হচ্ছে। যদি আপনার মেয়ের কিছু হয় তবে সেটা আমার সব থেকে বড় ব্যর্থতা হবে।
তারপর তাকে রেখেই আমান ফারিজ নিজের গাড়িতে গিয়ে বসল। পিএস মাহমুদ আগে থেকেই সেখানে বসে রয়েছে।

রেস শুরু হল!

এরই ভেতরে খবর পৌছে গেছে মিডিয়াতে। স্বয়ং প্রেসিডেন্ট আমান ফারিজ একটা মেয়েকে ঢাকাতে নিয়ে আসছেন। একটা মেয়েকে এয়ার এম্বুলেন্সে করে ঢাকা পাঠানো সম্ভব হচ্ছে আবহাওয়ার কারণে। তাই তিনি নিজে নিয়ে আসছেন তাকে। একটা রুট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুরো দেশের মানুষ লাইভ দেখছে।

গাড়ি চলছে ঝড়ের গতিতে। যদিও বৃষ্টি হচ্ছে তবে ড্রাইভার জসিম মিয়া আসলেই দক্ষ ড্রাইভার। সে ঠিক ঠিক প্রেসিডেন্টের মার্সিডিজের সাথে টক্কর দিচ্ছে। একটু সময়ের সময়ের জন্যও যে পিছিয়ে পড়ে নি। আমান ফারিজ কনফারেন্স কলে ডিএমপি কমিশনারের সাথে কথা বলেই চলেছেন।
গাড়ির সামনে মোট তিনটা মোটর সাইকেলের বহর এগিয়ে গেছে। নির্দিষ্টি দুরুত্বে গিয়ে তারা এটা নিশ্চিত করছে যেন কোন ভাবেই কেউ রাস্তায় কোন প্রতিবন্ধক তৈরি করতে না পারে।

কাঁচপুর ব্রিজ পার হতেই আমান ফারিজ একটা অবাক করা দৃশ্য দেখতে পেল। সে দেখতে পেল বৃষ্টি উপেক্ষা করেও মানুষ রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এবং এটা কোন বিচ্ছিন ভাবে নয়। তারা দুই পাশ দিয়ে দাঁড়িয়ে গাড়ি যাওয়ার জন্য রাস্তা তৈরি করেছে। সায়েদাবাদ পার হতেই সেটা আরও স্পষ্ট ভাবে দেখা গেল। কোথাও কোনো ভীড় নেই, গাড়ি যাওয়ার জন্য রাস্তা তৈরি করেছে মানব ঢাল। এর আগে যখন ভিআইপি পার হওয়ার সময়ে রাস্তায় মানুষ বিরক্ত হয়ে অপেক্ষা করত কিন্তু এইবার তাদের মুখে কোন বিরক্তি নেই।
মাত্র ৫২ মিনিটে প্রেসিডেন্টের গাড়ি বহর এসে হাজির হল ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে।

হাসপাতালে সবাই প্রস্তুতই ছিল। এম্বুলেন্স থামার সাথে সাথে সবাই দৌড়ে গেল সেদিকে। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে এই প্রথমবার ফারাজ দেখলে মানুষ তার আগে অন্য কাউকে রিসিভ করছে। মনে মনে একটু খুশিই হল।

গাড়ি থেকে বের হয়েই আমান ফারিজ দেখতে পেল এরই ভেতরে হাসপাতালের চারিপাশে প্রচুর মানুষ এসে হাজির হয়েছে। সবাই তার নামে স্লোগান দিচ্ছে। শরীফ তার কাছে এসে বলল, স্যার আপনি গাড়ি থেকে বের হবে না। আমাদের এখন রেসিডেন্সে ফেরত যাওয়া দরকার।
-আরেহ রিলাক্স শরীফ। তুমি এতো চিন্তা কর!
-আমার কাজই আপনার সেফটি নিয়ে চিন্তা করা!

আমান ফারিজ সবার দিকে হাত নাড়ল। মাহমুদ এরই ভেতরে একটা হ্যান্ড মাইক এনে দিয়েছে আমান ফারিজের হাতে। এমন পরিস্থিতির জন্য গাড়িতে একটা হ্যান্ড মাইক থাকেই সব সময়। আমান ফারিজ হ্যান্ড মাইকটা হাতে নিল। তারপর একটা জোরে দম নিয়ে বলল, আজকে আমাদের এই রেসে আপনারা সবাই যে আমাদের সাথে ছিলেন এই জন্য আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি জানি না যে উপরওয়ালা মেয়েটার কপালে কী রেখেছেন তবে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি জানি এই ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা যথেষ্ট হয় না মাঝে মাঝে। এটা আমাদের সরকারের, আমার ব্যর্থতা যে আমাদের এখনও চিকিৎসার জন্য ঢাকাতে দৌড়াতে হচ্ছে। তবে আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি সামনের মাসেই আমরা প্রতিটি মেজর সিটিতে বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগ নিব যাতে করে আমাদের সামনে এমন পরিস্থিতি আর না আসে। আপনারা সবাই মেয়েটার জন্য দোয়া করবেন। আপনাদের সবার দোয়ায় আশা করি সে সুস্থ হয়ে উঠবে। আপনারা এখানে আর ভীড় করবেন না। অন্য রোগীদের অসুবিধা করবেন না।

নাদিয়া হাসপাতালের বিল্ডিং থেকে আমান ফারিজের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সে অনুভব করতে পারছে তার মনের ভেতরে একটা পরিবর্তন আসছে। এমন একটা মানুষকে ভালো না ভেবে কি থাকা যায়!

এই গল্পের সাথে সংযুক্ত আরেকটি গল্প

ফেসবুকের অর্গানিক রিচ কমে যাওয়ার কারনে অনেক পোস্ট সবার হোম পেইজে যাচ্ছে না। সরাসরি গল্পের লিংক পেতে আমার হোয়াটসএপ বা টেলিগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। এছাড়া যাদের এসব নেই তারা ফেসবুক ব্রডকাস্ট চ্যানেলেও জয়েন হতে পারেন।

অপু তানভীরের নতুন অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে

বইটি সংগ্রহ করতে পারেন ওয়েবসাইট বা ফেসবুকে থেকে।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.9 / 5. Vote count: 10

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *