সত্যিই সে এসেছিলো !

4.7
(56)

পিএস মাহমুদ খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো প্রেসিডেন্ড আমান ফারিজের দিকে । সে যা বলছে সেটা শুনে মাহমুদের দুই কান গরম হয়ে গেছে । এখন তার নিজের চুপ ছিড়তে ইচ্ছে করছে । নিজের গালে একটা কষে চড়ও দিতে ইচ্ছে করছে । কোন দুঃখে সে ফেসবুকের স্টাটাসটা প্রেসিডেন্টকে দেখাতে গিয়েছিলো । আজকে যদি সেটা না দেখাতো তাহলে নিশ্চিত এখন প্রেসিডেন্ট আমান ফারিজ নিজের স্টাডি রুমে বসে বই পড়লো । দিনের সকল কাজ শেষ করে এই সময়টা সাধারনত সে নিজের স্টাডি রুমে কাটায় ।
-স্যার আরেক বার একটু ভাববেন প্লিজ !
-কোন ভাবা ভাবি নেই । শোন কোন প্রোটোকলের দরকার নেই । শাফিক আর নাইমকে ডাক দাও । সাথে নিমিলাকে নাও । ব্যাস এই তিনজনে পেছনের গাড়িতে থাকবে । আমার সাথে কেবল তুমি থাকবে । কোন প্রেসিডেন্সিয়াল ফ্ল্যাগ থাকবে না । কেউ জানবেই না যে আমি বের হচ্ছি !

মাহমুদ বলল, যদি চেয়ারম্যান স্যার জানতে পারেন !
-মাহমুদ ! সে পার্টি চেয়ারম্যান হতে পারে কিন্তু দেশ চালাই আমি আর তুমি আমার চাকরি কর । আমার কথা শোনা তোমার কাজ । তার কথা চিন্তা করা না !

যদিও আমান ফারিজ নিজেও জানে পার্টি চেয়ারম্যান মানে তার বাবা যদি এই ঘটনা জানতে পারে তাহলে তার খবর আছে । মাহমুদকে সেই বকা দিবে । একটু না হয় দিক ! কী যায় আসে ! মেয়েটার মুখে হাসি ফোটানো যাবে এটা সব থেকে জরুরী !

ডাক্তার নাদিয়া সারমিন নিজের কেবিনে বসে ছিলো । আজকে তার নাইট ডিউটি । সন্ধ্যা ছয়টা থেকে শুরু হয়েছে । চলবে সকাল ছয়টা পর্যন্ত । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সবে মাত্র রাত দশ । একটু আগে একবার রাউন্ড দিয়ে এসেছেন । আবার একঘন্টা পরে আরেকবার রাউন্ডে যাবেন । এর মাঝে ইমারেজন্সী না হলে আর যাওয়ার দরকার নেই । এই সময়টা নাদিয়া সাধারনত বই পড়ে কিংবা মোবাইলে ফেসবুক ব্রাউজ করে । বইটা সে রাত বারোটার পরে পড়া শুরু করে ।

মোবাইল বের করে ফেসবুকে লগিন করলো সে । কালকের দেওয়া স্টাটাসটার দিকে তাকালো । বেশ কিছু লাইক আর কমেন্ট এসেছে সেখানে । নাদিয়া খুব একটা পোস্ট দেয় না । কিন্তু কালকে এমন মন খারাপ ছিল টুকুন মেয়েটার জন্য । মেয়েটার হাতে সত্যিই আর সময় খুব বেশি নেই ।

২০৫০ সালে এসে চিকিৎসা বিজ্ঞাস কত আধুনিক হয়েছে । এখন দেশেই খুব ভাল ক্যান্সার চিকিৎসা হয় । ৫০০ সজ্য বিশিষ্ট একটা বিশাল আর অত্যাধুনিক ক্যান্সার হাসপাতালে নাদিয়া কাজ করে । এখানে সব ধরনের ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে । দেশী বিদেশী অনেক ডাক্তার রয়েছে কিন্তু তারপরেও তাদের কিছু করার নেই । আসলে কিছু কিছু ব্যাপার কেবল মাত্র উপরওয়ালার হাতেই থাকে । মানুষ কেবল চেষ্টা করছে পারে । অন্য কিছু করতে পারে না ।

টুকুন মেয়েটার অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে । আর মেয়েটা নিজেও সেটা বুঝতে পারছে । কিন্তু তারপরেও সব সময় কী না হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করছে সে । ইস মেয়েটার জন্য যদি সে কিছু করতে পারো । এটা নিয়েই সে লিখেছিলো গতদিন । মেয়েটার শেষ ইচ্ছে পূরণের ব্যাপারে । মেয়েটা তার পছন্দের মানুষের সাথে দেখা করতে চায় । কিন্তু সেই মানুষটা বলতে গেলে একেবারে ধরা ছোঁয়ার বাইরে । এই এগারো বছরের মেয়েদের সাধারণত কোন কার্টুন চরিত্র কিংবা নায়ক গায়কদের পছন্দ থাকে কিন্তু এই মেয়েটার পছন্দ দেশের প্রেসিডেন্টকে ! কী আজিব একটা ব্যাপার !

অবশ্য দেশের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আমান ফারিজ আসলেই পছন্দ করার মতই একজন মানুষ । পুরো দেশের মানুষ তাকে পছন্দ করে । কিন্তু তাই বলে তাকে তো আর বলা যায় না আপনি আসুন তো, এই মেয়েটার সাথে একটু দেখা করে যান ।

নাদিয়ার মনটা আবারও খারাপ হল একটু । তখনই দরজার দিয়ে একজন অপরিচিত মানুষ ঢুকলো । পুরো ঘরটা দেখলো একবার । নাদিয়ার মনে হল লোকটা সব কিছু পরীক্ষা করে দেখছে । এই লোকটা কে ?
নাদিয়া বলল, কী ব্যাপার আপনি ?
লোকটা সেই কথার জবাব দিলো না । কানের কাছে এক হাত নিয়ে বলল, অল ক্লিয়ার ।

নাদিয়া আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো তখনই তার জীবনের সব থেকে আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটলো । আরও একজন মানুষকে সে কেবিনে ঢুকতে দেখলো । সেই মানুষটাকে চিনতে মাত্র তিন সেকেন্ড লাগলো । আমান ফারিজ হাসি মুখে তার সামনে এসে দাড়িয়ে বলল, মিস নাদিয়া। আপনার সাথে এভাবে দেখা করতে আসার কারণে আমি খানিকটা লজ্জিত । আসলে আপনার পেসেন্টের সাথে আমি দেখা করতে এসেছি । আই হোপ আপনার কোন আপত্তি নেই!

নাদিয়ার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হল না । সে কেবল একবার মাথাটা দুই দিকে নাড়ালো ।
-গুড । চলুন । যাওয়া যাক । আমার হাতে একদম সময় নেই । কেউ কিছু বোঝার আগেই আমার আমাকে রেসিডেন্সে ফিরে যেতে হবে !

নাদিয়া যখন করিডোর দিয়ে হাত তে শুরু করলো তখনও ওর ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না যে সে আমান ফারিজের পাশে হাটছে । এই মানুষটা টুকুনের সাথে দেখা করতে এসেছে । তার মানে কোন ভাবে তার স্টাটাসটা প্রেসিডেন্টের নজরে এসেছে । আর তিনি কোন প্রকার প্রটোকল না নিয়েই চলে এসেছেন ।

নাদিয়া যখন মেডিকেলে পড়তো তখন একবার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট তাদের কলেজ পরিদর্শনে এসেছিলো । কত যর প্রটোকল আর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল সেখানে তার কোন ইয়ত্তা নেই । এমন কি তাদের মোবাইল ফোন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার অনুমুতি ছিল না । অথচ এই মানুষটা তার পাশ দিয়ে হাটছে । সামনে দুজন গার্ডকে দেখা যাচ্ছে । আর পেছনে দুইজন । তাদের একজন আবার গার্ড না, সম্ভবত পিএ হবে । সে চিন্তিত মুখে সব কিছু দেখছে । নিশ্চিত ভাবেই সেএসব পছন্দ করছে না ।

হাটতে হাটতে টুকুনের কেবিনের সামনে চলে এল ওরা । ভেতরে টুকুন আর ওর মা রয়েছে । এখনও ঘুমানোর সময় হয় নি । সারা দিন শুয়ে বসে কাটানোর কারণে রাতে ঘুম আসতে দেরি হয় ।
নাদিয়া ভেতরে ঢুকলো । টিভি চলছিলো । টুকুনের মা একটা চেয়ারে বসে কমলা লেবুর খোঁসা ছাড়াচ্ছিলো আর টুকুন টিভির দিকে তাকিয়ে ছিল ।
নাদিয়াকে ঢুকতে দেখে টুকুন হাসলো । তারপর বলল, আসুন আন্টি । দেখুন একটু পরেই প্রেসিডেন্ট স্যারকে দেখাবে । আজকে সে চীন মৈত্রীতে গিয়েছিলো।
নাদিয়া হাসলো । বলল, তোমার জন্য আরও বড় কিছু অপেক্ষা করছে ।
-তাই? কী?
-দেখতে চাও ?
-হুম !

ঠিক তখনই দরজা খুলে আমান ফারিজ ঢুকলো । প্রথম কয়েক মুহুর্ত কেউ কোন কথা বলল না । নাদিয়া কেবল দেখলো টুকুনের মায়ের হাত থেকে কমলালেবুটা পড়ে গেল । টুকুনের কয়েক মুহুর্ত লাগলো বুঝতে । তারপরই সে চিৎকার দিয়ে উঠলো আনন্দে !
টুকুন নিজের বিছানা ছেড়ে উঠে আসতে গেল কিন্তু আমান ফারিজ সেটা হতে দিল না । সে নিজেই দৌড়ে এগিয়ে এল তার বেডের কাছে । তারপর বলল, আরে তুমি কেন উঠছো শুনি ? উঠো না !

নাদিয়া কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো টুকুনের চেহারার দিকে । মেয়েটার চোখ দিয়ে পানি পড়া শুরু করেছে তবে সেই পানি আনন্দের ! নাদিয়ার কাছে এখনও সব কিছু কেমন অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে ! আচ্ছা এমন কি সম্ভবনা রয়েছে যে সে স্বপ্ন দেখছে ? এমন তো হতে পারে ! পারে না?

আমান ফারিজ থাকলো আরও আধা ঘন্টা । টুকুনের সাথে সেলফি তুলল । নাদিয়াও তুলল সেলফি । এমন সুযোগ তো আর বারবার আসে না ।

একসময় মাহমুদ এসে বলল, আমাদের এখন যাওয়া দরকার । খবর এসেছে চেয়ারম্যান স্যার বাসায় দিকে রওয়ানা দিয়েছেন !
আমান ফারিজ এবার টুকুনের দিকে তাকিয়ে বলল, দেখেছো তো কী অবস্থা ! আমি দেশের প্রেসিডেন্ট তবুও এখনও বাবার কথা মত চলতে হয় ! তবে আমাদের আবার দেখা হবে । তুমি সুস্থ হয়ে এবার প্রেসিডেন্স রেসিডেন্সে আসবে । ঠিক তো !
টুকুন হাসলো । তারপর বলল, অবশ্যই !
-আমি তাহলে যাই ?
-আচ্ছা ।

আমান ফারিজ উঠে দাড়ালো । নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, ডাক্তার ম্যাম, থাকুন তাহলে । আমি আসি !
নাদিয়ার হঠাৎ কী যে হল সে নিজেও বলতে পারবে না । সে আমান ফারিজকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে । ধরেই থাকলো । তারপর আবার ছেড়ে দিলো হঠাৎ করেই । লজ্জিত চোখ তাকালো তারপর । বলল, সরি মিস্টার প্রেসিডেন্ট স্যার। আসলে আমি এখনও ঠিক বিশ্বাস করতে পারছি না ।
ফারিজ কেবল হাসলো । বলল, সরি বলতে হবে না । আসি আমি ।

নাদিয়াও তাদের সাথে সাথেই গেট পর্যন্ত এল । মুখে মাস্ক থাকার কারণে প্রেসিডেন্টকে কেউ চিনতে পারে নি । গাড়িতে ওঠার আগে নাদিয়া বলল, স্যার একটা অনুমুতি চাই ।
-বলুন ।
-আপনার সাথে তোলা এই ছবি কি আমি শেয়ার করতে পারি !
মাহমুদ জলদি বলে উঠলো, খবরদার না । আমরা যে এখানে এসেছি সেটা কেউ জানে না !
আমান ফারিজ বলল, ওহ মাহমুদ । চুপ করো না ।
তারপর নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, ওকে আপনি শেয়ার করতে পারেন তবে আগে বাসায় পৌছে নিই । এই ধরুন ঘন্টা খানেক পরে । কেমন ?
-জ্বি আচ্ছা !
-স্যার !
মাহমুদ আবার বলল।
-যদি চেয়ারম্যান স্যার….
-মাহমুদ …. তোমাকে আমি আগেই বলেছি তুমি আমার চাকরি কর, চেয়ারম্যান স্যারের না ।
-জ্বি স্যার !
-চল এবার যাওয়া যাক ! মিস নাদিয়া ভাল থাকুন । হয়তো আবার কখনও দেখা হবে !

নাদিয়া কেবল অবাক হয়ে তাদের চলে যেতে দেখলো । তার শরীর এখনও খানিকটা কাঁপছে । এখনও সে বিশ্বাস করতে পারছে না সত্যিই সে এসেছিলো !

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 56

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →