মাই ডিয়ার হোম মিনিস্টার (পর্ব ১৪)

4.6
(11)

দরজার আস্তে আস্তে ফাঁক হচ্ছে আমি সেদিকে তাকিয়ে আছি । বুকের ভেতরে একটা কাঁপন অনুভব করলাম । ধরা পরে যাওয়ার ভয় । নিকিতা যদি দেখতে পায় যে আমি ওর ল্যাপটপ থেকে কিছু জিনিস কপি করছে তাহলে কি হবে ?
এটা ওর ব্যক্তিগত ল্যাপটপ ! একটা দেশের হোম মিনিস্টারের ল্যাপটপে এভাবে অবৈধ ভাবে ঢুকে পড়াটা অন্যায়ের ভেতরে পড়ে । কত গুরুত্বপূর্ন জিনিস সেখানে থাকতে পারে যেগুলো বাইরে প্রকাশ পেলে অনেক বড় সমস্যা হয়ে যেতে পারে ।

আমি ল্যাপটপের ঢাকনাটা বন্ধ করে দিলাম । তবে এখনও সেটা চালু আছে । ডেক্সটপ হলে পাওয়ার সুইচ অফ করলেই ঝামেলা শেষ হয়ে যায় কিন্তু ল্যাপটপে সেটা করতে পারবো না । এখন এটা বন্ধ করবো কিভাবে ?
দরজাটা একটু খুলে গেছে । তবে নিকিতা বের হয়ে এল না । তার বদলে ওর মাথা বের হয়ে এল । ওর মুখে পানি লেগে আছে । আমার দিকে তাকিয়ে খানিকটা লজ্জিত কন্ঠে বলল, অপু তোয়ালেটা দাও দেখি ! নিতে ভুলে গেছি !

আমি উঠে দাড়ালম । ডান দিকের চেয়ারের উপর সেটা রাখা ছিল । তোয়ালেটা হাতে নিয়ে একেবারে দরজার সামনে এল । বুকের কাঁপনটা ততক্ষণে কমে গেছে । নিকিতার কেবল মাথা দেখা যাচ্ছে । আমি হঠাৎ বললাম
-তোয়ালে নিতে হলে বাইরে বের হয়ে আসতে হবে !
নিকিতার মুখে একটা বিস্ময় দেখতে পেলাম । আমার কাছ থেকে যেন এই ধরনের কথা সে আশাই করে নি । বলল
-দুষ্টামী করবা বলে দিলাম !
-উহু ! কোন দুষ্টামী না । আমি সিরিয়াস ! এটা নিতে হলে বাইরে বের হয়ে আসতে হবে ।
-দেখো ভাল হবে না বলছি ।
-না হোক !
-পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিবো !
-দাও । তোমাকে ওখান থেকে বের করতে হলে আমার যদি ১০ বছরের জেল হয় তবুও আমি রাজি ! জীবনে তো অনেক ভাল প্রেমিক হয়ে থাকলাম এখন না হয় একটু দুষ্টামি করিই !

নিকিতা আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । আমিও ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলাম । আমি আসলে সময় নিতে চাচ্ছি । ও যত বেশি সময় নিবে আমার জন্য তত ভাল । ফাইল গুলো কপি হয়ে যাবে । তবে আমি নিশ্চিত যে ও বের হয়ে আসবে না । যতদুপর জানি ওর শরীরে এখন কোন কাপড় নেই । এই ভাবে বের হয়ে আসতে পারবে না কোন ভাবেই ।
কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সত্যি সত্যিই দরজাটা খুলে গেল সম্পূর্ন । তারপর ওর নগ্ন পাটা আগের বের করলো ও । আমার পুরো শরীরে একটা বড় রকমের ধাক্কা মারলো । আমি সত্যিই ভাবি ও বের হয়ে আসবে ! আমার পুরো জীবনে এই রকম কোন ঘটনা ঘটে নি । আমি ঘরে দাড়ালাম । আমার পক্ষে নিকিতার দিকে তাকানো কোন ভাবেই সম্ভব না ।

আমি অনুভব করলাম নিকিতা একদম আমার পেছনে এসে দাড়িয়েছে । আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে নিকিতা বলল
-এই বীর পুরুষ । তাকাও আমার দিকে !
আমি কোন মতে বললাম
-সরি ! আমি আসলে পারবো না !
নিকিতার হাসির আওয়াজ পেলাম । নিকিতা বলল
-তোমার দৌড় আমার জানা আছে ।
-আমি সত্যিই ভাবি নি তুমি বের হয়ে আসবে !
নিকিতা আমার হাত থেকে তোয়ালেটা নিল । তারপর বলল,
-মেয়েরা যখন কাউকে ভালবাসে তখন তাদের জন্য সব কিছু করতে পারে । সব অন্যায় আবদারও মেনে নেয় । বুঝতে পেরেছো ?
-হুম !

আমি নিকিতার আবারও বাথরুমের ভেতরে চলে যাওয়াটা বুঝতে পারলাম । দরজা বন্ধ হতে আবার ঘরে দাড়ালাম । আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না কি করবো ? নিকিতার আচরণ আবারও আমাকে খানিকটা দ্বিধায় ফেলে দিল । আমার মন বলছে এই মেয়েটা আমাকে ভালবাসে । সিড়ি ঘরে ঐদিন মেয়েটা যা বলেছে সেটা কোন ভাবেই সত্য হতে পারে না । একবার মনে হল পেন ড্রাইভটা বের করে ফেলি । আমার দরকার নেই এই সব প্রমানের । কিন্তু অন্য মনটার কারনে সেটা পারলাম না ।

ল্যাপটপের ঢাকনাটা আবারও খুলে দেখলাম সব ফাইল কপি করা হয়ে গেছে । আমি পেন ড্রাইভটা বের করে ল্যাপটপ টা বন্ধ করে দিলাম । এখন আমার কাজ হবে এই সব অডিও ফাইল গুলো চেক করে দেখা

সপ্তাহ খানেক লেগে গেল আমার সব ফাইল গুলো চেক করতে । নিকিতার তার ফোন কলের সব রেকর্ড রাখতো । কে কে তাকে ফোন করে এবং কারকার কাছে কি কি কথা হয় সে সবের একটা প্রমান নিকিতার কাছে রয়েছে । দেশের বেশ কিছু বড় বড় বিজনেস ম্যানের সাথে নিকিতার কথা হয়েছে । তাদের অন্যায় আবদার নিকিতা শুনেছে । কিছু কিছু শুনতে রাজি হয়েছে আবার কিছু না করে দিয়েছে । খানিকটা মন খারাপই হল আমার । বাইরে থেকে নিকিতাকে দেখে যতই স্বচ্ছ আর পরিস্কার মনে হোক না কেন আসলে ভেতরে সে একেবারে স্বচ্ছ না । হয়তো কোন রাজনীতিবীদই তা নন । সিস্টেমটাই হয়তো এই রকম । আমি সেটা নিয়ে আর ভাবলাম না ।
ফোন কলের সাথে সাথে সাথে নিকিতার কাছে কিছু মিটিংয়ের রেকোর্ডিংও আছে দেখতে পেলাম ।

সেটা সব চেক করতে গিয়েও আমি সব থেকে বড় ধাক্কাটা খেলাম । ঐদিন মেয়েটি যা বলেছে সেটা আসলে সত্য । নিকিতা আসলেই প্লান করেই আমার সাথে দেখা করেছে ।

রেকোডিংয়ের মোট তিন জনের কথা শোনা যাচ্ছে । একটা নিকিতা নিজে । অন্য জন্য ওর বাবা আজাহার আহমেদ । তৃতীয় ব্যক্তিটিকে আমি ঠিক চিনতে পারলাম না । মন দিয়ে শোনার চেষ্টা করলাম । সেই বেশি কথা বলছিলো । রেকোডিং টা চলছে-

নিকিতা তুমি আমাদের দলের সব থেকে বড় টার্মকার্ড । আমি চাই তোমার জনপ্রিয়তাই সবার আগে থাকুক । হ্যা তোমার কাজে একটু সমস্যা যে হচ্ছে সেটা বলবো না বিশেষ করে আমাদের দলের অনেকই তোমার উপর ঠিক পুরোপুরি সন্তুষ্ট না যেহেতু তুমি তাদেরকেও ছাড় দাও নি ।
নিকিতার হাসির আওয়াজ পেলাম । নিকিতা বলল, এই জন্যই আমার জনপ্রিয়তা বাড়ছে । একটু সমস্যা হবে তবে বৃহৎ স্বার্থে সেটা ত্যাগ করতে হবে । এখন আমার মাথায় আরো একটা বুদ্ধি এসেছে । আমি ঠিক করেছি আমি একটা রিলেশন করবো । প্রেম করবো । এবং সেটা সবাই জানবে সবাই দেখবে !
-মানে কি ?
-মানে টা খুব সহজ ! মনে করেন আপনি খুব ফুটবল খেলতে, ফুটবল খেলা দেখতে পছন্দ করেন, নিজেও খেলেন । এখন সামনে যদি এমন একটা মানুষ আপনি দেখেন যে নিজেও ফুটবল খেলে, খেলা দেখে ফটবল খুব ভাল বোঝে তাহলে আপনার মনভাব কি ? তার প্রতি আপনা আপনিই আপনার একটা পজেটিভ মনভাব চলে আসবে । এখন আরেকটা ব্যাপার লক্ষ্য করেন । আমাদের দেশের ইয়াং জেনারেশন, স্কুল থেকে কলেজ ভার্সিটি সবার ভেতরে একজা মনভাব খুব কমন । প্রেম । প্রায়ই সবাই এটা করে । যারা করে তারাও মনে মনে এইটার ব্যাপারে ফ্যান্টাসী পেষন করে । এখন কল্পনা করে দেখে তারা এমন একজন মানুষকে দেখতে পাবে সে তাদের মতই কারো প্রেমে পরেছে তাকে ঘুরে বেড়াচ্ছে তার হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজছে । আবার প্রেমে ব্যর্থ হয়ে কষ্ট পাচ্ছে । এটা আমাদের দেশের ইয়াং জেনারেশনদের একটা ট্রেড মার্ক । ওরা যখন আমাকে ঠিক তাদের মত করেই প্রেম করতে দেখতে ভালবাসতে দেখবে আমার প্রতি ওদের একটা পজেটিভ ভাব আপনা আপনিই চলে আসবে ।
এইবার নিকিতার বাবার কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম
-কিন্তু বিরোধী পক্ষ যদি এটা নিয়ে কিছু বলে ?
-চিন্তা কর না তো ! এটা ফল পজেটিভ আসবেই । আই ক্যান এশিওর ইউ !

আমি সত্যিই নিজের কানকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । তাহলে সবই ছিল প্রিপ্লান ! এই আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া আমার, সাথে প্রেম করা, এমন কি ঐ বৃষ্টিতে ভেজার ছবি ভাইরাল হওয়াটাও !

আমি আর কিছু ভাবতে পারছিলাম না । কিছু না ।
হঠাৎ কিছু মনে হতেই আমি আবারও ফোন রেকোর্ডিং ফোল্ডার ওপেন করলাম । এখানকার ফাইল গুলো তারিখ আর সময় দিয়ে সেভ করা হয়েছে । সব ফোন রেকোডিংই এমন করেই সেভ হয় । আমি যেদিক গুলি খেয়েছিলাম সেদিনের তারিখ বের করলাম । সেদিন মোট ১১ টা ফোন কল এসেছিলো । একটার সাইজ একেবারে কম । মাত্র কয়েক কিলোবাইট ! আমি সেই ফাইলটা চালু করলাম । মোট ১৩ সেকেন্ডের কল রেকোডিং । ফোন রিসিভ হতেই কিছু সময় নিরবতা । তারপর কেউ বলল
-আজকেই সেই দিন !
নিকিতা বলল
-হ্যা !

লাইন কেটে গেল । আমি সময়টা দেখলাম দুপুর দুইটা ২৬ মিনিট । এটাই সেই কল । কেউ কিছু করার অনুমূতি চাইছে । নিকিতা সেটার অনুমূতি দিয়েছে । কোন কাজের অনুমূতি সেটা আমার বুঝতে কষ্ট হল না । আমার বুকের ভেতরটা হুহু করে উঠলো । এই প্রমানটা না পেলেই সম্ভবত ভাল হত ।

আইরিনও ঠিক একই কাজ করেছিলো । আমার সাথে ওর পরিচয়ের কারন ছিল আমার পড়াশুনা । আমি ওকে পড়াশুনায় সাহায্য করতাম অনেক । আমার তৈরি করা নোট গুলো ও নিতো । পরে বুঝেছিলাম যে কেবল সেগুলোর জন্যই সে আমার কাছে এসেছি । আর আজকে নিকিতাও তাই । নিজের রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য, সবার কাছে নিজের গ্রহনযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য সে আমাকে ব্যবহার করেছে । এমন কি আমাকে মেরে ফেলার অনুমূতি দিতেও তার বাঁধে নি ।
তীব্র একটা রাগ হল । মনটা প্রতি হিংসায় ভরে উঠলো । যে কাজের জন্য সে আমাকে ব্যবহার করেছে সেটাই আমি ধ্বংস করেদিবো । আমি পিসিটা অন করলাম । এ অডিও ফাইল আমি এখন নেটে ছেড়ে দিবো । দেশের মানুষ জানুক নিকিতার আসল চেহারা !!

###

আমি একভাবে তাকিয়ে রইলাম কম্পিউটারের মনিটের দিকে । প্রায় আপলোড হয়ে গেছে । আর মাত্র কয়েক সেকেন্ড পরেই আপলোড কমপ্লিট হয়ে যাবে । তখন কেবল একটা টাইটেল লিখে ওকে বাটনে চাপ দিলেই সেটা নেটে চলে যাবে ।
কয়েক সেকেন্ড বাকি তখনই আমার পিসি হ্যাঙ করলো । আমি অবাক হয়ে দেখলাম পিসিটা একা একাই রিস্টার্ট নিয়ে নিল । সেই ক্লিপটা গায়েব । আপলোড হয় নি । আমি আবারও যখন আপলোড করতে যাবো তখনই আমার ফোন বেজে উঠলো ।
নিকিতার ফোন !
আমার মনের ভেতরে কেমন কু ডেকে উঠলো ! এই মেয়ে এখন ফোন কেন দিল
তারপর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম । এই সময়েই সে ফোন দেয় সাধারনত । আমার মাথা কাজ করছিলো না । আমি কি করবো বুঝতে পারছি না । আমার মাথাট ভেতরে কেবল ঐ অডিও ক্লিপটার কথা কাজ করছিলো । একটা মানুষ এমন কাজ কিভাবে করতে পারে !

আমি ফোন রিসিভ করলাম । আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই নিকিতা বলল
-তুমি কি করছিলে ?
-মানে ?
একটু সময় নিয়ে নিকিতা বলল
-অপু তোমার কি মনে হয় না আমি সব জানতে পারবো ? দেশের পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা আমি চালাই আমি জানবো না ? আমার ল্যাপটপ থেকে কেউ কিছু কপি করে নিবে আর আমি সেটা টের পাবো না ?

নিকিতার কন্ঠে একটা শান্তভাব আমি টের পেলাম । ওর এই দিকটা আমি খুব ভাল করে চিনি । বিশেষ করে ও যখন কোন ব্যাপার নিয়ে খুব বেশি ডিটারমাইন হয় তখন এমন শান্ত কন্ঠে কথা বলে ! আমি চুপ করে রইলাম কিছুটা সময় ! কি বলবো খুজে পেলাম না । আসলে নিকিতার কাছ থেকে এমন কিছু আমি আশা করি নি । নিকিতা আবার বলল
-আমি না চাইলে তুমি তোমার পিসি থেকে একটা কিছুও আপলোড করতে পারবে না । এমন কি একটা ফেসবুক স্টাটাসও দিতে পারবে না । বুঝেছো !
নিকিতা চাইলেই এই কাজটা করতে পারে । একটু আগে সেটা করেও দেখিয়েছে । আমি ক্লিপটা আপলোড দিতে পারি নি । নিকিতা আবার বলল
-আমি জানি তুমি কি জেনেছো ! আমি সেবসের কিছু ছাফাই দেবো না । তুমি সেটা বিশ্বাস করবে না আমি জানি !
আমি বললাম
-কিন্তু আমি তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম । আমার সব কিছু দিয়ে !
-হ্যা আমি জানি ! আমি সেটা ভঙ্গ করেছি । আমার স্বার্থেই । এই জন্য আমি সরি !
-কেবল সরি ! আর কিছু না ?
নিকিতা কোন কথা বলল না । নিকিতা এতো জখন্য একটা কাজ করেও কেবল একটা সরি দিয়েই কাজ শেষ করতে চাচ্ছে । ঠিক যেমনটা দেশের রাজনীতিবীদরা করে । আমি বললাম
-আসলে আমার মা ঠিকই বলেছিলো । একজন পলিটেশিয়ান সব সময়ই পলিটেশিয়ান । তারা সব কিছু করতে পারে । তাদের কোন দিন বিশ্বাস করা যায় না ।
নিকিতা যেন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল । আমি সেটা শুনতে পেলাম ফোনে এপাশ থেকেও । নিকিতা বলল
-আমি জানি না তুমি কি করবে । তবে তোমার কাছে আমি অপরাধী । তুমি যদি এখন চাও অডিও ক্লিট টা আপলোড করতে পারো । আমি আর বাধা দিবো না তোমাকে !

এই বলে ও ফোন রেখে দিল । ফোন রাখার পরেও বেশ কিছুটা সময় আমি ফোনটা কানের কাছে ধরে রাখলাম । এখনও আবার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছিলো যে নিকিতা আমাকে বলবে যে সে সেটা করেছে সেটাতে তার কোন ইচ্ছে ছিল না । বাধ্য হয়ে করেছে কিন্তু সেটা সে বলল না । কেবল নিজের কৃত কর্ম গুলো স্বীকার করে নিল ।

আরেক বার ইচ্ছে হল অডিও ক্লিপটা আপলোড করে দেই কিন্তু করতে পারলাম না । নিজের মনের কাছে সাই দিল না । শেষে নিজেই ডিলিট করে দিলাম । এমন হয় । আমরা যখন কারো প্রেমে পড়ি তখন তার শত অপরাধও ক্ষমা করে দেই । কত অযৌক্তিক কাজ করি ! আমিও এমন একটা অযৌক্তিক কাজ করে ফেললাম ।

তারপর থেকে নিকিতার সাথে আমার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেল একেবারে । আমি ওকে ফোন দিতাম না, দেখা করতাম না । নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম । ভাবার চেষ্টার করলাম যে নিকিতা নামের কেউ আমার জীবনে ছিল । কিন্তু এই দেশের মিডিয়া সেটা হতে দিল না । মাস খানেক পরে একটা নিউজ আমার চোখে পড়লো । আমাকে আর নিকিতাকে নিয়ে করেছে । সেখানে সাংবাদিক প্রশ্ন করেছে শিরোনাম করেছে যে তাহলে কি তাদের মাঝে বিরহ চলছে ?

আবারও সেই প্যারা শুরু হল । আমার পিছে সাংবাদিক ঘুরতে শুরু করলো । বারবার সেই একই প্রশ্ন করা শুরু করলো যে আমার আর নিকিতার মাঝে ঝামেলা কি ? কি হয়েছে? আমরা কি ব্রেক আপ করেছি কি না !

ব্যাপারটা আবারও একটু পালে হাওয়া পেল যখন নিকিতা তার ব্যক্তিগত ফেসবুক স্টাটাসে লিখলো “প্রিয় মানুষটা যখন দুরে চলে যায় পৃথিবীর সব কিছু অর্থহীন মনে হয়” । মানুষ জনের আর বুঝতে বাকি থাকলো না যে আমাদের মাঝে সত্যি ঝামেলা চলচে । এটা যেন নিকিতার জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে দিল । তাদের মতই একজন মানুষ নিকিতা যে প্রেম করছে প্রেমিকার সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে আবার প্রেমিকার সাথে মান অভিমানও চলছে । বিরহে সেও কষ্ট পাচ্ছে । সব বাঙালী মেয়ের মাঝই এই জিনিস দেখা যায় ! নিকিতাকে যেন তারা আরও আপন করে নিতে থাকলো ।

আমার মনটা আরও খারাপ হয়ে গেল । বুঝতে বাকি রইলো না এটাও আসলে নিকিতারই একটা চাল ! নিজের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর আরও একটা কৌশল । আমার ইচ্ছে হল মনের দুঃখে দেশ ছেড়ে চলে যাই । কারন এই দেশে যত সময় থাকবো এই ব্যাপারটা আমার চোখে সামনে ঘটতে থাকবেই । প্রতিনিয়ত ! যেখানেই আমি যাই আমাকে এই ব্যাপারটা আমার সামনে আসবেই ।

একদিন আমি আমার অফিস রুমে বসে ছিলাম । তখনই আামর কয়েকজন ছাত্র ছাত্রী আমার রুমে এসে হাজির হল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-স্যার আসবো ?
-হ্যা আসো !
রুমের ভেতরে ঢুকেও তারা যেন কিছু বলতে পারছিলো না । একটু যেন অস্বস্থিবোধ করছিলো বলতে । আমি বললাম
-কি বলবে বল ? কোন কাজে এসেছিলে ?
-স্যার আপনি নাকি বাইরে যাওয়ার কথা ভাবছেন ?
-হ্যা কাগজ পত্র তৈরি করা হয়ে গেছে প্রায় ।
-স্যার আমাদের ছেড়ে যাবেননা প্লিজ ! আর ম্যামকে একটা রেখে যাবেন না !
-ম্যাম ! মানে কোন ম্যাম !

ছাত্রছাত্রীরা এদিক ওদিক তাকালো । আমি যেন ওদের আরও বেশি অস্বস্থিতে ফেলে দিয়েছি । ম্যাম মানে ওরা নিকিতার কথা বলছে সেটা বুঝটে পারলাম সাথে সাথেই । এই ছেলে মেয়ে গুলো কি জানে তাদের প্রিয় নিকিতা ম্যাডাম কি করেছে আমার সাথে । খুব ইচ্ছে হল ওদের কে সব বলে দেই । কিন্তু কেন যে বলতে পারলাম না জানি না । আরেকজন বলল
-স্যার আমরা আপনাদের দুজেনর কাপলটাকে সব থেকে পার্ফেক্ট কাপল মনে করি । তাহসান মিথিলার যে কাপল ছিল এক সময় সেটার থেকেও বেশি পার্ফেক্ট মনে হয় ! কি চমৎকার একটা জটি আপনাদের । প্লিজ স্যার আমাদের কথা একটু ভাবেন !

আমি এবার সত্যিই রেগে গেলাম । এটাই হচ্ছে এই দেশের মানুষের সমস্যা । নিজেরা ঘটনার কিছু না জেনে না বুঝে এতো কিছু এমন ভাব করে বসে থাকবে যে তারা সব কিছু জানে ! আমি বললাম
-শোন এতো কিছু তোমাদের বুঝতে হবে না । তোমরা কাজে যাও । আমার জীবন নিয়ে আমি কি করবো সেটা আমি সিদ্ধান্ত নিবো !

আমি সত্যিই বুঝে গেলাম যে আমার আর এই দেশে থাকাটা চলবে না । এর চেয়ে বরং বাইরে চলে যাই । আরও সপ্তাহ খানেক এই ভাবেই কেটে গেল । আমার বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি খুব ভাল ভাবেই চলছে । বাসাতেও জানিয়েছি । মা আর বাবা বুঝতে পেরেছেন আমার আর নিকিতার মাঝে কোন ঝামেলা শুরু হয়েছে । কিন্তু সেটার ব্যাপারে তারা কিছু জানতে চান নি । এটা আমার জন্য ভালই হয়েছে এক দিক দিয়ে ! এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিলো । ধীরে ধীরে আমার নিকিতার ব্যাপারটা মিডিয়ার আড়ালে চলে এল ।

আমি খানিকটা স্বস্থিবোধ করতে লাগলাম । কিন্তু সেটা খুব বেশি সময়ের জন্য নয় ।
ক্যাম্পাসের কাজ শেষ করে বাসার দিকে যাচ্ছিলাম তখনই আমার এক ছাত্রের ফোন পেলাম । ফোন ধরার সাথে সাথেই ছেলেটা বলল
-স্যার আমরা খুব খুশি হয়েছি !
-মানে ? কেন ?
-এই যে স্যার আপনি আমাদের কথা ভেবেছেন !
-কি বলছো এই সব !
-স্যার আপনি এমন ভাব করছেন যেন কিছুই করেন নি । যাই হোক নিকিতা ম্যামের পেইজে গেলেই টের পাবেন । আর লুকানোর কিছু নেই !

আমি ফোন কেটে কিছু সময় বোকার মত তাকিয়ে রইলাম । কিছু বুঝতে পারছিলাম না । ফেসবুকে ঢুকে নিকিতার ব্যক্তগত ফেসবুক প্রোফাইলে ঢুকলাম । সেখানে কিছুই দেখতে পেলাম না । ওর একটা ভেরিফাইড পেইজও আছে সেটার ভেতরে ঢুকতেই চোখ কপালে উঠলো আমার !
সেখানে আমার আর নিকিতার একটা ছবি পোস্ট করা হয়েছে । মাস দুয়েক আগের ছবি । ঢাকার কাছেই একটা রিসোর্টে গিয়েছিলাম । দুজন এক সাথে বিকেলের চা খেতে খেতে গল্প করছিলাম । এটাই সম্ভবত আমাদের এক সাথে তোলা শেষ ছবি । আমি ক্যাপশনে দিকে তাকিয়ে রইলাম অবাক হয়ে । সেখানে লেখা “আপন মানুষ গুলোই আমার কাজ করার সব থেকে অনুপ্রেরণা । তুমি সাথে আছো বলেই আমি আরও নতুন উদ্যোমে এগিয়ে যাই সামনে”

আমি কিছু সময় কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম । এটা নিকিতার আবার নতুন কি খেলা শুরু করেছে ! আমার মাথায় কিছু আসছিলো না । তবে কিছু যে তার মাথায় চলছে সেটা বুঝতে আমার মোটেই কষ্ট হল না । মানুষজন কে দেখানোর আবার কি দরকার ছিল যে আমি আবারও ওর জীবনে ফিরে এসেছি !

আমার মনের কথা মনেই রয়ে গেল । দেখলাম আমার উবার গাড়িটা হঠাৎ করে থেমে গেল । আমি বাইরে তাকিয়ে ড্রাইভারকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবো তার আগেই দুপাশ থেকে কয়েকজন আমার মানুষ গাড়িটাকে ঘিরে ধরলো । আমি ওদের হাতে পিস্তল দেখতে পেলাম । কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাকে অস্ত্রের মুখে গাড়ি থেকে বের করে একটা মাইক্রোতে তুলে নিল । আমি কিছু বলার আগেই একজন আমার নাকে একটা রুমাল চেপে ধরলো ।
মিষ্টি একটা গন্ধ টের পেলাম !
ক্লোরোফর্ম !

চেতনা হারানোর আগে আমার কেবল এটাই মনে হল যে আমি সম্ভবত এবার সত্যি সত্যিই মারা যাচ্ছি । এবার নিকিতা আমাকে সত্যি সত্যিই মেরে ফেলবে !

পরের পর্ব

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.6 / 5. Vote count: 11

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

One Comment on “মাই ডিয়ার হোম মিনিস্টার (পর্ব ১৪)”

  1. অনেক excited হয়ে আছি পরবর্তী পর্বের জন্য। কখন দিবেন?

Comments are closed.