মাই ডিয়ার হোম মিনিস্টার (পর্ব ১৩)

5
(7)

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরেও আমার পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও মাস খানেক সময় লেগে গেল । সারাটা দিন আমি বাসাতেই থাকতাম । বই পড়ে টিভি দেখে সময় কাটছো । আর কাটতো অনলাইন ব্রাউজিং করে । এই কদিনে আমি দেশের মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছি । আমাকে নিয়ে অনেক গল্প চালু হয়ে গেছে ।

তার ভেতরে একটা গল্প হচ্ছে ঐদিন আসলে নিকিতাকে মারার জন্য গুলি করা হয়েছিলো । আমি সেটা বুঝতে পেরে নিজের শরীর পেতে দিয়ে তাকে রক্ষা করেছি । এই গল্পটা পাবলিক সব থেকে বেশি গিলেছে । কেবল ফেসবুক পোস্টই নয় বেশ কিছু অনলাইন পোর্টালে এই নিউজ ছাপা হয়েছে । আমার কিছু স্টুডেন্ট কলিগেরা আমাকে ট্যাগ দিয়ে সেই নিউজ শেয়ারও দিয়েছে । তারা খুব প্রাউড ফিল করতেছে আমাকে নিয়ে ।

আমি মনে মনে না হেসে পারি নি । তবে আমি এই টুকু বুঝতে পারলাম না যে আমি আগের সহজ সরল লেকচারার নেই । আমি এখন পাবলিক ফিগারে পরিনত হয়েছি । মানুষজন আমাকে এখন চেনে । হাসপাতালে থাকা কালীন বেশ কিছু বিখ্যাত মানুষ আমাকে দেখতে এসেছিলো । বাসায় আসার পরেও বেশ কিছু মানুষ এসেছে । আমাদের ক্যাম্পাসে অনেকে এসেছে । একদিন সেই ছাত্রনেতা কামাল আফসার এসে হাজির । আমার সাথে খুব হাসিখুশি ভাবে কথা বলল । আগে কি হয়েছে সেসব ভুলে গিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলল । সাথে এও বলে গেল যে ক্যাম্পাসে আমার নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব নাকি তার । আমার উপর আর হামলা হবে না এটা নিশ্চিত করে গেছে ।

নিকিতার আচরন সব থেকে বেশি পরিবর্তন হয়েছে । আগে তো একটু রেখে ঢেকে আমার সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতে আসতো এখন আর সেব কিছু নেই । আমার বাসার সামনে সব সময় একটা পুলিশের গাড়ি অপেক্ষা করে । কেবল আমিই না, আমার পরিবারের যে কেউ বাইরে গেলেই তার পেছন পেছন পুলিশ থাকে । মা একদিন নিকিতা খুবই বিরক্তি নিয়ে এই কথা বলল । তার পেছনে পুলিশ থাকে সব সময় এটা তার পছন্দ না । আমি ভেবেছিলাম নিকিতা এই প্রশ্নের জবাব দিবে না কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে নিকিতা বলল

-দেখুন আমি আপনি পছন্দ করেন কিংবা না করেন এটা আমি করবোই । আমি ওখানে ছিলেন না । আমি ছিলাম যখন অপু আমার সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল । এটো ক্ষমতা থাকার পরেও আমার সেদিন কি পরিমান অসহায় লেগেছিলো সেটা আমি আপনাকে বোঝাতে পারবো না । এমনটা আমি আর হতে দিবো না । কোন ভাবেই না । অপুর এবং আপনাদের সবার নিরাপত্তার ব্যাপারটা সবার আগে এখন আমার কাছে ।

নিকিতার কন্ঠে কিছু একটা ছিল । মা দেখলাম আর কিছু বলল না । হাসপাতালে নিকিতা প্রতি রাতেই আমার কাছে আসতো । রাত টুকু ক্যাবিনেই থাকতো সে । সকালে আবার চলে যেত । বাসায় আসার পরেও প্রায় প্রতিদিন রাতেই সে আমার বাসায় আসে । রাতের খাবার আমরা এক সাথে খাই । আমার মা আর নিকিতার মাঝে একটা ঠান্ডা বউ শ্বাশুড়ির লড়াই চলছে । তবে মা নিকিতাকে কেন জানি সহ্য করে নিয়েছে । এমন একটা ব্যাপার আছে না যে ছেলে প্রেম করে বিয়ে করেছে কিন্তু মায়ের সেটা পছন্দ না । কিন্তু কিছু বলতেও পারছে না । আমার বাসার পরিস্থিতি হয়েছে তেমন ।

আরেকটা পরিবর্তন হয়েছে । সেটা হচ্ছে দেশের আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে । গুম খুন আর ছিনতাইয়ের পরিমান অনেক কমে গেছে । নিকিতা তার ফেসবুক থেকে একদিন এই কথাই পোস্ট দিয়েছিলো । সে লিখেছিলো যে কাছের কেউ যখন আহত হয়ে পড়ে থাকে তখন কেমন লাগে সেটা সে পুরোপুরি বুঝতে পেরেছে । এমটা যেন দেশের আর কাউকে বুঝতে না হয় সেটার ব্যবস্থা সে করবে । এবং তাই করতে লাগলো । সত্যিই সত্যিই অবস্থার উন্নতি হতে লাগলো । তবে সেই সাথে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করতে লাগলাম যে বিরোধী দলের লোকজন একটু যেন বেশিই দৌড়ের উপর আছে । মাঝে মাঝেই এই সংবাদ পত্রিকাতে দেখতে লাগলাম !

এরই মাঝে আরেকটা ঘটনা ঘটলো । আমার কাছে কুরিয়ারে আসা সেই ফোনটা বেজে উঠলো । আমি রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা মেয়ের কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম ।

-আপনি বাসায় আসেন না এখন ?

-হ্যা আছি । আপনাদের বাসার ছাদে আসুন !

এই বলে লাইন কেটে গেল । আমি কিছু সময় বোকার মত চেয়ে রইলাম মোবাইলের দিকে । তারপর আর কিছু না ভেবে ছাদের দিকে রওয়ানা দিলাম । ছাদে উঠে খানিকটা এদিক ওদিক তাকাতেই দেখলাম একটা মেয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে । ছাদের সিড়ি ঘরের দিকেই আবার আমাকে যেতে ইশারা করলো । সিড়ির উপরেই আমরা দাড়ালাম । মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছু সময় । এই মেয়েটিই যে সেদিন হাসপাতালে নার্স হয়েছিলো সেটা বুঝতে পারলাম । আমি বললাম

-আপনি ! আজকে এভাবে বাসায় এসেছে । আজকে তো নিকিতা জেনে যাবে ?

মেয়েটি হাসলো । তারপর বলল

-জানতে পারে তবে না জানার সম্ভাবনাই বেশি । আপনাদের বিল্ডিংয়ের এইট সির বাসিন্দা ফকরুদ্দিন সাহেবের কাছে এসেছি আজকে । তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য । যদিও প্রধান উদ্দেশ্য ছিল আপনার সাথে কথা বলা । বুঝতেই পারছেন ।

আমি মাথা নাড়ালাম । তারপর বললাম

-আপনি সে দিন যা বলেছিলেন আমার বিশ্বাস হয় নি ।

-না হওয়ার কথা । তবে আমি মিথ্যা বলি নি । শুনুন আপনার কোন দিন মনে হয় দেশের স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একজন সাধারন লেকচারার সাথে কেন প্রেম করছে ? এই সহজ প্রশ্নটা আপনার মাথায় আসে নি ?

এই প্রশ্ন যে আমার মাথায় আসে নি সেটা বলবো না । অনেকবার এসেছে । নিকিতা যদিও আমাকে বলেছিলো যে আমার সেদিনের আচরনই নাকি ওকে আমার প্রতি আগ্রহী করে তুলেছিলো । পরে আমি আর এসব নিয়ে মাথায় ঘামাই নি । মেয়েটি বলল

-মানুষ নিজেদের মত মানুষকে পছন্দ করে । নিকিতা ম্যামের টার্গেট ছিল ইয়াং জেনারেশনের সমর্থন পাওয়া । আমি অবশ্যই বলবো না যে সে একজন খারাপ হোম মিনিস্টার । অন্তত আমার দেখা সব থেকে সেরা সে । তার কারনেই আমাদের পুলিশ সেক্টরটা আরও স্বচ্ছ আর কার্যকরী হয়েছে ।

এই কথাটা মোটেই মিথ্যা না । মেয়েটি বলেই চলল

-একবার কল্পনা করুন । এখন প্রত্যেক ছেলে মেয়ে স্কুল কলেজ থেকেই প্রেম করা, বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় । তাদের একজন মন্ত্রীও যদি ঠিক তাদের মত আচরন করে লাইক প্রেম করতেছে বয়ফ্রেন্ড কে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এটা তাদের উপর কি ইম্প্যাক্ট পরবে । ইয়াং জেনারেশন সেই মন্ত্রীকে নিজের মত করে ভাবতে শুরু করবে এমন একজন সে তাদের মত । এই প্যারালাল সমর্থনের জন্য আপনি এসেছেন ।

আমি কোন কথা বলতে পারলাম না । কিন্তু এটা মানতে ইচ্ছে করছিলো না । আবার এটার বিপরীতে কিছু বলতেও পারছিলাম না ।

মেয়েটি বলল

আমি নিজেও তাকে পছন্দ করি । চাই সেই যেন এই দায়িত্বে থাকুক । এই জন্য আমি কখনই তার বিপক্ষে যেতে পারবো না । কিন্তু অন্য দিক দিয়ে রিদির সাথে তিনি যা করেছেন সেটাও আমি ভুলতে পারছি না । আমি বললাম

-রিদির সাথে কি করেছে ?

-রিদিকে সে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে । আপনি জানেন কি না জানি না তবে রিদি আপনাকে সত্যিই পছন্দ করতো । আমার সাথে তার কথা হত, এখনও হয় । তাকে স্কলারশীপ দিয়ে দেশের বাইরে পাঠানো হয়েছে । এমন একটা ব্যবস্থা করা হয়েছে যেন সেন আগামী পাঁচ বছর সে দেশে আসতে না পারে ।

আমি অবিশ্বাসের চোখে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলাম । মেয়েটি বলেই চলল

-রিদির বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগটা একেবারে স্বচ্ছ ছিল না । সেটাও রিদি হয়তো ছেড়ে দিতো আপনার জন্য । কিন্তু ওর বাবার কারনে আসলে সে সব কিছু মেনে নিয়েছে । আপনি জানেন রিদির বাবা সরকারি কর্মচারি । তার কিছু দোষ ছিল । আমাদের দেশের যেই রকম অবস্থা । আপনি জানেন । আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের কাছে সব কিছুর প্রমান থাকে । রিদির বাবারটাও ছিল । রিদিকে কেবল বলা হয়েছে যেন সে স্কলারশিপ নিয়ে চলে যায় দেশের বাইরে । দেশের কারো সাথে যোগাযোগ যেন না করে । বিশেষ করে আপনার সাথে । যদি সেটা সে না শোনা তাহলে তার বাবার উপর আলাদা ভাবে ইনকোয়ারি কমিশন বাসানো হবে । কম করেও হলেও দশ বছর জেলে যাবে সে । তার আর কি করার ছিল !

আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না । কোন কথা বের হচ্ছিলো না । মেয়েটি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখলো । তারপর বলল

-আমার এখন যাওয়া দরকার । আপনার উপর আবারও হামলা হতে পারে । হবেও মনে হচ্ছে । প্যারালাল সমর্থন নিকিতা ম্যাম পেয়ে গেছে । এখন তার চাই সিম্প্যাতি সাপোর্ট ! আপনি হচ্ছেন সব থেকে বড় টোপ সেটার জন্য । আমি আপনাকে বাঁচাতে পারবো না । সেই ক্ষমতা আমার নেই । আমি কেবল আপনাকে সাবধান করলাম ।

মেয়েটি আর কিছু না বলে চলে গেল । আমি সিড়িতেই বসে পড়লাম । আমার কিছু ভাল লাগছিলো না । বুকের ভেতরে কেমন শূন্য শূন্য মনে হচ্ছিলো । নিকিতা সত্যিই কি এমন করেছে আমার সাথে ? ও এটা কিভাবে করলো ?

কিন্তু ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আমি সত্যিই অনুভব করতে পেরেছিলাম যে সে আমাকে ভালবাসে । তাহলে এই অনুভব কি মিথ্যা ছিল? আমার মন দুই দিকে ভাগ হয়ে গেল । একদিন বলল যে মেয়েটি যা বলেছে সেটা সম্পূর্ন মিথ্যা । মেয়েটিকে রিদি পাঠিয়েছে । আরেকদিক বলছে মেয়েটার আমাকে মিথ্যা বলে কোন লাভ নেই । রিদিরও আসলে লাভ নেই । আমি রিদিকে ছেড়ে দেই নি । ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে !

আমি উঠে দাড়ালম । যে কোন কিছু বিশ্বাস করার আগে আমার আগে প্রমান বের করা দরকার ! হাতে প্রমাণ না পেয়ে আমি কোন কিছু বিশ্বাস করবো না । এবং কোন কিছু অবিশ্বাসও করবো না ।

অবশ্য সেই সুযোগ আমার চলেও এল সপ্তাহ খানেক পরে । নিকিতা সেদিন রাতে আমাদের বাসায় শাওয়ার নিতে গেল । শাওয়ার নিতে গেলে নিকিতার কম করেও হলেও আধা ঘন্টা সময় লাগে । ওর সাথে ওর ল্যাপটপ ব্যাগ ছিল । ও ভেতরে ঢুকতেই ল্যাপটপটা চালু করলাম । পাসওয়ার্ড দেওয়া দেখে আগ্রহ দমে গেল । নিজেকে গাধা মনে হল । ওর ল্যাপটপ যে পাসওয়ার্ড দেওয়া থাকবে এটা জানাই ছিল । ল্যাপটপ টা আবার বন্ধ করতে যাবো তখনই কি মনে আমি পাসওয়ার্ড বক্সে আামর নিজের নাম লিখলাম । এবং আমাকে অবাক করে দিয়ে সেটা খুলে গেল ! আমি সত্যিই বিশ্বাস করতে পারছিলাম যে নিকিতা আমার নাম ওর ল্যাপটপের পাসওয়ার্ড হিসাবে ব্যবহার করবে !

আমি সেদিকে কিছু তাকিয়ে থেকে তারপর একটার পর একটা ফোল্ডার খুজতে লাগলাম । খুব বেশি খুজতে হলও না । একটা ফোল্ডারে রেকোর্ডিং নামের বেশ কিছু ফাইল পেলাম । মিটিং, ফোন এই দুই ফোল্ডারে কম করে হলেও কয়েক হাজার ফাইল রয়েছে । মোট ১৭ জিবি । আমি বিন্দু মাত্র দেরি না নিজের পেন ড্রাইভে সেগুলো ট্রান্সফার করতে শুরু করলাম । এখন ১৫/২০ মিনিটের মত লাগার কথা ।

এর মাঝে যদি ও দরজা খুজে বের হয়ে আসে তাহলে আমার খবর আছে ! এই রেকোডিং গুলো অবশ্যই খুব সেনসেটিভ ব্যাপার । তবুও রিস্ক নিতেই হবে ।

যখন মাত্র অর্ধেক ফাইল ট্রান্সফার হয়েছে তখনই আমি দরজায় সিটকানি খোলার আওয়াজ শুনতে পেলাম । আজকে দশ মিনিট আগেই নিকিতা বের হয়ে আসছে!

ও মাই গড !

এখন কি হবে !

ও তো দেখে ফেলবে যে আমি ওর ল্যাপটপ চালু করেছি ! কি করেছি সেটা বুঝতেও বাকি থাকবে না !

এখন ?

পরের পর্ব

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 5 / 5. Vote count: 7

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

Comments are closed.