মাই ডিয়ার হোম মিনিস্টার (শেষ পর্ব)

4.7
(36)

আমাকে ঠিক আটকে কিংবা বেঁধে রাখা হয় নি । আমাকে রাখা হয়েছে একটা পুরানো ফ্যাক্টরির ভেতরে । বিশাল বড় ছাদ । চারিপাশে পুরানো কিছু মেশিন পত্র পড়ে আছে । একটা চেয়ারে বসে আছি আমি । ঘুম ভাঙ্গার পর থেকে আমি নিজেকে এখানেই আবিস্কার করি । খানিকটা সময় লেগে যায় ধাতস্ত হতে । তারপর আস্তে আস্তে মনে পড়ে আমার সাথে কি হয়েছিলো । উবারের গাড়িটা থেকে আমাকে কয়েকজন মিলে তুলে নিয়ে এসেছিলো  । তারপর হয়তো আমাকে এখানে বসিয়ে রেখেছে । 

আমার থেকে একটু দুরে দুইজন মানুষ দাড়িয়ে আছে দুইদিকে । আমি যখন প্রথমে উঠতে যাচ্ছিলাম একজন আমাকে হাতের ইশারাতে বসে থাকতে বলেছে । কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু খুব একটা লাভ হয় নি । তারা কোন কথা বলে নি । মাথার উপর একটা অল্প পাওয়ারের বাল্ব জ্বলছে । আর কোন আলো নেই । আমি চুপচাপ বসে রয়েছি । কিছু বুঝতে পারছি না কি আমার সাথে আসলে কি হতে চলেছে ! সত্যিই কি আমি মারা যাবো ! এবার সত্যিই কি নিকিতা আমাকে গুম করে দিবে ?

আমি আবারও আমার দুই পাশের মানুষ দুজনের দিকে তাকালাম । একবার মনে হল আমি উঠে গিয়ে একজনের উপর হামলা করে পালিয়ে যাওর চেষ্টা করি । কিন্তু পরে সেই সম্ভাবনা বাদ দিয়ে দিলাম । এই দুজনের সাথে আমি কোন ভাবেই পেরে উঠবো না । আর নিশ্চয়ই বাইরে আরও অনেকেই আছে । এরা কারো আসার জন্য অপেক্ষা করছে । নিকিতার নিশ্চয়ই । আমার সাথে হয়তো শেষ কয়েকটা কথা বলার দরজার !

হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে অনেক আগেই । এখন বাইরে বেশ রাত । আমাকে ঠিক কোথায় নিয়ে এসেছে সেটা আমার জানা নেই । শহর থেকে দুরেই হবে । এমন কোন জায়গা যেখানে চিৎকারের আওয়াজ কারো কানে যাবে না । এমন কি গুলির আওয়াজও হয়তো কেউ শুনতে পাবে না ।

গাড়িতে যখন আমি চেতনা হারাতে শুরু করি তখনই আমার মাথায় সব কিছু পরিস্কার হয়ে গিয়েছিলো । বিশেষ করে ফেসবুকে আমাদের ঐ ছবি পোস্ট করার মধ্যে নিকিতা সবাইকে বুঝিয়েছে যে আমাদের মাঝে যে ঝামেলা চলছিলো সেটা শেষ হয়ে গিয়েছে । এমন সময় যদি আমাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় তাহলে পুরো দেশের সিম্প্যাথি যাবে নিকিতার দিকে । আমি গোবেচারা সাধারণ মানুষ । আমাকে মেরে ফেলার কোন কারন নেই কারো । যদি আমাকে কেউ মারতে চায় সেটা হবে আমি নিকিতার আপন মানুষ বলেই । আমি মারা গেলে বিরোধী দলের উপর পুরো নেগেটিভ মনভাব সৃষ্টি হবে । আমজনতা কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা এতো চিন্তা ভাবনা করবে না । যদি তখন আম জনতাকে ঠিক ভাবে বোঝানো যায় যে তাদের জন্য কাজ করতে গিয়েই নিকিতা আমাকে হারিয়েছে তাহলে নিকিতার প্রতি তাদের সমর্থন আরও বহুগুণে বেড়ে যাবে ! কারোই কিছু যাবে আসবে না ঠিক, মাঝ খান দিয়ে আমি হব বলির পাঠা !

তবে আমার মনে একটা ক্ষিণ আশা আছে যে হয়তো আজকেই আমাকে মেরে ফেলা হবে না । আমাকে এখানে আটকে রাখতে পারবে কিছু দিন । তারপর …

আমি আর ভাবতে চাইলাম না । আমার সাথে আসলে কি হবে সেটা আর এখন আমার হাতে নেই । আমার কিছু করারও নেই ।

চেয়ারে একভাবে বসেই রইলাম । কখন যে চোখ লেগে এল আমি টেরও পায় নি । ঘুমটা ভেঙ্গে গেল গাড়ির শব্দে । আমি চোখ মেলে তাকাতেই টের পেলাম যে আমার পাশের দুইজন মানুষের মধ্যেও চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে ।

আমি অপেক্ষা করতে থাকি ! এখনই নিশ্চয়ই নিকিতা এসে হাজির হবে !

আচ্ছা মেয়েটা কি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারবে ?

পারবে সম্ভবত !

আমি অপেক্ষা করতে থাকি ! কয়েকটা মুহুর্ত কেটে যায় এমনি ভাবে !

কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ফ্যাক্টরিতে ঢুকে নিকিতার বাবা আজাহার আহমেদ । বাবা মেয়ের মিলিত কাজা । কিন্তু আরও কয়েক মূহুর্ত যাওয়ার পরে আমি আবিস্কার করলাম যে নিকিতা তার পেছনে নেই । সে একাই এসেছে । আমাকে পেছনে তাকিয়ে থাকতে দেখে আজাহার আহমেদ বলল, আর কেউ আসে নি । আমি একাই !

আমি কোন কথা না বলে তাকিয়ে রইলাম । আজাহার আহমেদ বলল

-তোমার মনে কৌতুহল হচ্ছে না যে কেন তোমাকে এখানে আনা হয়েছে ?

-কৌতুহল হয়ে লাভ কি ?

আজাহার আহমেদ হাসলো । তারপর বলল

-যে কারনটার জন্য মারা যাচ্ছো সেটা জানবে না ?

আমি কিছু সময় তার চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলাম । তারপর বললাম

-নিকিতা এসবের কিছুই জানে না । তাই না ?

-হ্যা সে জানে না ! প্রথমবার তোমার উপর হামলা হওয়ার পর সে উঠে পড়ে লেগেছিলো এটার পেছনে কে সেটা খুজে বের করার জন্য । এখনও চেষ্টা করে চলেছে । কি বোকাই না আমার মেয়েটা ! দেশের এতো বড় পদে আছে কিন্তু সে বুঝতেও পারছে না সব কিছু চাইলেই সে করতে পারে না ।

আমি কেমন অবিশ্বাসের চোখেই তাকিয়ে রইলাম আজাহার সাহেবের দিকে । আমি নিজে কানে নিকিতার আওয়াজ শুনেছি । এই ভদ্রলোক এখন কি বোঝাতে চাইছে । আমার চেহারাতে হয়তো এমন কিছু ছিল যেটা সে বুঝতে পারলো । আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-তোমাকে মিথ্যা বলে আমার কি লাভ ? কিছুক্ষণের মাঝেই তুমি মারা যাবে ।

তাও অবশ্য ঠিক । কিছু সময়ের মাঝেই আমি মারা যাবো । আমাকে মিথ্যা বলার কোন কারন নেই । আজাহার আহমেদ বলল

-হ্যা তোমার সাথে পরিচয় তোমার সাথে প্রেম মানুষজনকে জানানো এসব নিকিতার বুদ্ধি ছিল কিন্তু যখন ওর বুদ্ধিটা কাজে দিতে শুরু করলো তখনই আমার মাথায় আরও বড় কিছু এসে হাজির হল । আমি নিজের পরিকল্পনা সাজাতে শুরু করলাম। যদি নিকিতার কাছ থেকে আড়াল করে এসব করা খুব সহজ ছিল না । তবে সম্ভব হয়েছে ।

আজাহার আহমেদ চোখের ইশারা করতেই আমার বাম পাশের লোকটা তার কাছে এগিয়ে গেল । নিজের কোমর থেকে পিস্তলটা বের করে তার হাতে দিল । আমি তাকিয়েই রইলাম ।

আজাহার আহমেদ পিস্তলটা হাতে নিয়ে কিছু সময় নাড়াচাড়া করলো । তারপর বলল, মৃত্যর রাজনীতির মাঠে অনেক বড় একটা হাতিয়ার । এই এক হাতিয়ার ব্যাপার করে অনেক কিছু করা সম্ভব । শোক সেন্টিমেন্ট পাব্লিককে ম্যানুপুলেট করতে খুব সাহায্য করে ! জানোই তো ! অন্যেরা অনেক করেছে । কেবল এই এক কথা সেন্টিমেন্ট দিয়ে তারা নিজেদের কত অকাজকে জায়েজ করে নিয়েছে । পাব্লিক সেটা মেনেও নিয়েছে ।

 আজাহার সাহেব আমার দিকে পিস্তল তাক করলো । আমি সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেললাম । আর কিছু সময় পরেই গুলির আওয়াজ শুনতে পেলাম । আমার বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো মুহুর্তেই । মায়ের মুখটা দেখতে ইচ্ছে হল । নিকিতারকেও দেখতে ইচ্ছে হল !

কিন্তু কয়েক মুহুর্ত কেটে যাওয়ার পরেও লক্ষ্য করলাম যে আমি কোন ব্যাথা অনুভব করছি না । এর আগেও আমি গুলি খেয়েছি । সেটার ব্যাথাটা কেমন সেই ব্যাপারে আমার পরিস্কার ধারনা আছে ।

চোখ মেলে তাকাতেই আমার চোখ গেল আজাহার আহমেদের দিকে । সে শান্ত চোখে পিস্তল তাক করে দাড়িয়ে আছে । তবে সেটা আমার দিকে নয় । যে লোকটা পিস্তল এগিয়ে দিয়েছিলো তার দিকে । লোকটার বিস্মিত চেহারা আমি দেখতে পাচ্ছিলাম পরিস্কার । আর আমার ডান দিকে যে মানুষটা ছিল সেই লোকটা মাটিয়ে পড়ে আছে । গুলিটা তাকে করা হয়েছে ।

আমি কিছু বলতে যাবো তার আগে আজাহার আহমেদ দ্বিতীয় গুলি করলো । বিন্দুমাত্র শব্দ না করে লোকটা মাটিতে পড়ে গেল । আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলাম । আজাহার আহমেদ যেন আমার বিস্মিত হওয়াটা উপভোগ করলো কিছু সময় । তারপর বলল

-কি বুঝতে পারছো না কেন করলাম ?

আমি কিছু বললাম না । আসলে কিছু বলার মত ছিল না । আজাহার আহমেদ বলল

-আমি কোন কিছুরই সাক্ষি রাখি না । রাখা ঠিক না । তোমাকে যে গুলি করেছি তাকে বাঁচিয়ে রাখি নি । নয়তো নিকিতা আমার কাছে ঠিকই পৌছে যেত !

তখনই পেছন থেকে একটা আওয়াজ শুনতে পেলাম ।

-আমি ঠিকই পৌছে গেছি !

আমি এবং আজাহার আহমেদ দুজনের চোখেই সাথে সাথে সেদিকে ঘুরে গেল । আমি অবাক হয়ে দেখলাম নিকিতা এসে হাজির হয়েছে । আজাহার আহমেদও বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে । নিকিতা আস্তে আস্তে এগিয়ে এল আমাদের দিকে । ওর চোখের শান্ত ভাব দেখে আমার কেন জানি ভয়টা চলে গেল মুহুর্তেই । জানি না কেন তবে মনে হল নিকিতা ঠিক সব সমলে নেবে ! নিকিতা ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বলল

-ওকে যেতে দাও বাবা ।

-বোকা মেয়ে আমি এটা তোর ভালর জন্য করছি । বুঝতে কেন পারছিস না ?

-আমার এতো ভালর দরকার নেই । যা হয়েছে যথেষ্ঠ !

-না । এটা যথেষ্ঠ না । দলের জন্য সেক্রিফাইস করতেই হয় !

নিকিতা তখন অনেকটাই কাছে চলে এসেছে । আজাহার আহমেদ বলল

-আর এগোবি না ।

-বাবা আবারও বলছি যা করেছো এখনই থামো ! আমি কাউকে নিয়ে আসি নি । একেবারে একা এসেছি । প্লিজ অপুকে যেতে দাও । আমি বাকিটা সামলে নিবো !

-আজাহার আহমেদ যেন খুব মজা পেল । বলল

-সামলে নিবি ! ভুলে যাস না যে আমি তোর বাবা । তোকে কিছু সামলাতে হবে না ।

এই বলে সে আমার দিকে পিস্তল তাক করতে গেল । আমি তখনই নিকিতার নড়াচড়া দেখতে পেলাম । ওর বাবার আগেই নিকিতা গুলি চালালো । নিকিতার গুলি লেগে মাথার উপর জ্বলতে থাকা বাল্বটা নিভে গেল । পুরো ঘরটা অন্ধকার হয়ে গেল মুহুর্তেই । তারপর আরেকটা গুলির আওয়াজ শুতে পেলাম । এটার সাথে সাথেই নিকিতার বাবার আত্মচিৎকার শুনতে পেলাম !

আমি বোকার মত কেবল দাড়িয়ে ছিলাম কিছু সময় । তারপরই আমি অনুভব করলাম কেউ এসে আমার উপর ঝাপিয়ে পরেছে । তারপরই কয়েকটা গুলির আওয়াজ শুনতে পেলাম কেবল ।

নিকিতা বলল, ওঠো ওঠো জলদি ওঠো ! আরও লোকজন থাকতে পারে !

এই বলে আমার হাত ধরেই অন্ধকারের ভেতরে দৌড় দিল । কোন দিকে দৌড় দিল আমি জান না ।

যখন দরজা দিয়ে বের হয়ে এলাম তখন পেছন দিক দিয়ে নিকিতার বাবার চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম । তিনি চিৎকার করে নিকিতাকে ডাকছেন । নিকিতা অবশ্য সেদিকে কান দিল না । আমার হাত ধরে দৌড় দিল । দরজা দিয়ে বের হতেই চোখে অন্ধকার খানিকটা সয়ে এল । চাঁদের আলো না থাকলেও আবছায়া আলোতে আমি দুটো গাড়ি দেখতে পেলাম । নিকিতা আমাকে নিয়েই সেদিকে দৌড় দিল ।

গাড়িটা যখন চলতে শুরু করলো তখন আমি একটু স্থির হতে পারলাম । নিকিতা যখন দেখি তখনই আমার কেন জানি মনে হয়েছিলো এবার হয়তো বেঁচেই যাবো । তবুও খোলা পিস্তলের সামনে নিজের মনকে শান্ত রাখা খুব সহজ কোন কাজ না । কিন্তু এখন খানিকটা নিরাপদ লাগছে ।

কিন্তু নিকিতার দিকে তাকাতেই দেখি ওর শার্টের এক পাশ পাশে লাল রক্তে মাখামাখি হয়ে গেছে । আমি বললাম

-তোমার গুলি লেগেছে !

নিকিতার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ও দাঁতের সাথে দাঁত চেঁপে নিজের ব্যাথা সহ্য করে আছে । কোন মতে বলল, আমি ঠিক আছি ! তুমি গাড়ি চালাও !

-আমাদের হাসপাতালে যাওয়া দরজার !

-না ! এখনও তুমি নিরাপদ নাও । আমার কিছু হবে না । পেছন পেছন আসতে পারে !

-জাহান্নামানে যাক সব !

আমি গাড়ির এক্সেলেরেটরে চাপ দিলাম । আমার সামনে আর কিছু মনে হচ্ছে না । কে আমার পিছু নিয়েছে কিংবা কে নিবে কিংবা সামনে কি হবে সেসব কিছুই আমার মাথায় এল না । আমার কেবল মনে হল আগে নিকিতাকে হাসপাতালে নিতে হবে ।

আমি বারবার নিকিতার দিকে তাকাচ্ছিলাম । ওকে জাগিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলাম ।

নিকিতার কথা একটু একটু করে গুলিয়ে যাচ্ছিলো । একটা পর্যায়ে নিকিতা বলল,

-বাবার উপর রাগ রেখো না, কেমন ! আমার কথা ভেবে এই খারাপ কাজ গুলো করেছে । আর যদি আমার কিছু হয়ে যায় আমাকে ক্ষমা করে দিও । তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি !

আমি বললাম, চুপ ! এখন এসব কিছু ভাবতে হবে না ! একদম চুপ !

আমি কিভাবে আর কত দ্রুত গাড়ি চালিয়েছি আমি নিজেই বলতে পারি না । যখন জিএমসির ইমারজেন্সি ওয়ার্ডে আমি এসে হাজির হলাম তখন মনে হচ্ছিলো আমি আর এই পৃথিবীতে নেই । বারবার নিকিতার দিকে তাকাচ্ছিলাম । মনে মনে ভয় হচ্ছিলো হয়তো এখনই নিকিতার কিছু হয়ে যাবে !

গাড়ি থেকে নেমে নিকিতাকে বের করলাম । তারপর ওকে কোলে তুলে নিয়ে দৌড় দিলাম ! নিকিতা ততক্ষনে ব্যাথার কারনে চেতনা হারিয়ে ফেলেছে !

রক্তাক্ত দেহ দেখে ডাক্তার প্রথমে ছুটে এল । নিকিতাকে পরীক্ষা করে বলল

-এখানে তো গুলি লেগেছে ! এটাতো পুলিশ কেস ! আগে পুলিশকে খবর দিতে হবে !

আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই পাশে দাড়িয়ে থাকা নার্স বলল, স্যার ইনি তো নিকিতা ম্যাডাম ! আমাদের হোম মিনিস্টার !

ডাক্তার সাহেব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন কিছুটা সময় ! তারপর পকেট থেকে মোবাইল বের করে কাকে যেন ডায়েল করলো ! কয়েক মুহুর্ত পরে ফোন কানে রেখে বলল জি স্যার । এখনই আসা লাগবে ! এখনই ….

আর কোন কথা না বলে ফোন কেটে দিল সে । তারপর চিৎকার করে ওটি রেডি করতে বলল ।

মাত্র এক ঘন্টার মধ্যে কিভাবে জানি সবাই জেনে গেল যে নিকিতা হাসপাতালে রয়েছে । তাকে কে বা কারা গুলি করেছে । পুরো হাসপাতালটা যেন জন সমুদ্রে পরিনত হল । পুলিশকে হিমসিম খেতে হচ্ছিলো ভীড় সামাল দিতে ।

আমি হাসপাতালের করিডোরে বসে ছিলাম চুপচাপ । আমার মাথায় কেবল নিকিতার কথা ভাসছে । অন্ধকারের ভেতরে নিকিতা যদি আমার উপর ঝাপিয়ে না পড়তো তাহলে এই গুলিটা হয়তো আমার শরীরে লাগতো !

-স্যার !

আমি মাথা নিচু করে বসে ছিলাম । ডাক শুনে ফিরে তাকালাম । দেখি নিকিতার পিএ দাড়িয়ে আছে ।

-স্যার বাইরে ভিড়ের অবস্থা খুব খারাপ হচ্ছে ।

-আমি কি করবো ?

-এখানে কেউ নেই । ভীড় ঠেলে কেউ আসতে পারছে না । ম্যামের বাবাকেও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না ফোনে । এখন আপনি কিছু করুন প্লিজ !

-কি করবো আমি !

-আপনি কিছুটা বলুন যাতে শান্ত হয় মানুষ ।

-আমি !

-হ্যা ! পাবলিক আপনার কথা শুনবে ! তারা আপানকে চেনে । আর এখন ম্যাডামের সব থেকে কাছের মানুষও আপনিই ।

আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে উঠে দাড়ালাম । নিকিতার সাথে পরিচয় হওয়ার পর আমার জীবনটা আসলেই বদলে গেছে । আমি কি কোন দিন ভেবেছিলাম আমার জীবনে এসবের মুখোমুখি হতে হবে !

যাক অভ্যাস করে নিতে হবে ! সামনের জীবনে আরও কত কি করতে হবে কে জানে !

পরিশিষ্টঃ

নিকিতার জ্ঞান ফিরলো একদিন পরে । আমি তখন বাইরে ছিলাম । আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার নিজের মা এসে হাজির হয়েছে হাসপাতালে । নিকিতার মা আর আমার মা কেবিনে ওর কাছে ছিল । মা আমাকে বলল যে আমি বাসায় গিয়ে একটু ফ্রেস হয়ে আসি । তাই গিয়েছিলাম । ফিরে এসে দেখি নিকিতা মায়ের সাথে কথা বলছে । ডাক্তার বলল যে আমি যাওয়ার পরপরই জ্ঞান ফিরেছে । অবস্থা উন্নতির দিকে !

ঘরে ঢুকতে নিকিতা আামর দিকে তাকালো । কিছু সময় পরে মা রুম ছেড়ে বাইরে চলে গেল । আমি নিকিতার বেডের পাশে গিয়ে বসলাম । নিকিতা আমার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বলল, থ্যাঙ্কিউ !

-কেন ?

-সব কিছু সামাল দেওয়ার জন্য । তুমি চাইলেই সব সত্য বলতে পারতে !

আমি হাসলাম । তারপর বললাম

-আমাকে শেষ পর্যন্ত লেকচারার থেকে পলেটিশিয়ান বানিয়েই দিলে !

নিকিতা বলল

-সঙ্গদোষে লোহা ভাসে !

দুজনেই হাসলাম কথাটা শুনে !

সত্যি চাইলে আমি সত্যি কথাটাই হয়তো সবাইকে বলতে পারতাম । বলতে পারতাম যে আমার সাথে যা হয়েছে তার জন্য নিকিতার বাবা দায়ী । রাতে তিনি আমাকে গুলি করেছিলেন । নিকিতা সেটা ঠেকিয়েছে নিজের শরীর দিয়ে । জানি না এসব বললে কি হত ! তবে নিকিতার জীবনটা আরও বেশি জটিল হয়ে যেত । এটা কেন জানি করতে ইচ্ছে হল না । তাই সাংবাদিকদের বলেছি যে আমরা ওদের ফার্ম হাউজে গিয়েছিলাম নিজেদের ভেতরে কিছু সময় কাটাতে । এই সময়ে খুব সিকিউরিটি নিয়ে যায় নি । কারন নিকিতা আমাকের মাঝে কেউ থাকুক এটা পছন্দ করতো না । এই সুযোগটা নিয়েছে সন্ত্রাসীরা । হামলা করেছে । এক পর্যায়ে নিকিতার শরীরে গুলি লাগে । আমি ওকে নিয়ে কোন মতে বের আসতে সক্ষম হই ! এই গল্প বানিয়েছি ! পাবলিক সেটা বিশ্বাসও করেছে ।

নিকিতার বাবা এখন কোথায় আছে সেটা এখনও জানা যায় নি । হয়তো আছে কোথায় । সময় মত বেরিয়ে আসবে । আগে বেরিয়ে আসুক তারপর কি করা যায় সেটা চিন্তা করা যাবে ! 

নিকিতা হাসি থামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো চুপ করে । সেই দৃষ্টিতে আমি কোন মিথ্যা দেখতে পেলাম না । হয়তো শুরুতে সে নিজের স্বার্থের জন্যই আমাকে ব্যবহার করেছিল । কিন্তু একটা পর্যায়ে গিয়ে সেই খেলাটাই সত্যিই হয়ে গেছে তার জন্য !

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 36

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

One Comment on “মাই ডিয়ার হোম মিনিস্টার (শেষ পর্ব)”

Comments are closed.