মাই ডিয়ার হোম মিনিস্টার (পর্ব ১০)

5
(6)

মাঝে মাঝেই ক্লাস শেষ করেও আমার ক্যাম্পাসে আরও কাজ থাকে । সেদিনও ক্লাসের শেষে আমাদের স্যারদের একটা মিটিং ছিল । সামনে আমরা একটা সেমিনার করতে যাচ্ছি সেই ব্যাপারেই চেয়ারম্যান স্যার আমাদের সাথে আলোচনা করছিলো । মিটিং শেষ হতে হতে প্রায় বিকেল হয়ে গেল । আমি আরও কিছুটা সময় রুমে কাটিয়ে যখন বের হতে যাবো তখনই নিকিতার ফোন এসে হাজির ।

স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে একটু অবাক হলাম । কারন এই সময়ে নিকিতা খুব দরকার না হলে ফোন করে না । ওর সাথে আমার বেশির ভাগ দিনেই কথা হয় রাতের বেলা । সকল শেষ করে ও ফোন দেয় । মাঝে মাঝে কাজের ফাঁকে ও আমাকে মেসেজ করে । আমিও তাই করি । আমি জানি ও কি পরিমান ব্যস্ত থাকে সারা দিন । ওকে বিরক্ত করি না তাই । কিন্তু এই বিকেল বেলা ওর ফোন পেয়ে খানিকটা অবাক না হয়ে পারলাম না । এর আগেরবার অসময়ে ফোন করে আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলো তারপর কি হুলস্থুল ব্যাপার ঘটে গেছে । যদিও ব্যাপারটা এখন খানিকটা শান্ত । আজকে আবার কি হবে কে জানে !

আমি ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নিকিতা বলল

-কি খবর মাই ডিয়ার বয়ফ্রেন্ড ! এখন ক্যাম্পাসে ?

কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলাম । আমি যে এখন ক্যাম্পাসে আছি এটা ও জানে । এমন কি আমি কোন রংয়ের শার্ট পরে আছি এই খবরও ওর কাছে আছে । আমি মাঝে মাঝেি ভুলে যাই যে আমার প্রেমিকা সাধারন কেউ নয় । আমি বলল

-হ্যা । তুমি কোথায় ?

-তুমি যেখানে আমি সেখানে !

-মানে কি !

-কোন মানে ফানে নাই । তোমাদের ক্যাম্পাসের বটতলায় আসো !

-তুমি এখানে !!

একটু অবাক হলাম যদিও এর আগে নিকিতা কয়েকবার এসেছে আমার ক্যাম্পাসে । আমার অফিসেই এসেছে । মুখে ওড়না দিয়ে পর্দা করে এসেছে । কেউ ওকে চিনতে পারে নি । আকজেও নিশ্চয়ও সেভাবেই এসেছে । মাঝে মাঝে এই মেয়ের সাহস দেখে আমি অবাক না হয়ে পারি না । অবশ্য তার পরেই নিজের মনকে বুঝ দেই যে এই মেয়ে পারে না এমন কোন কাজ নেই ।

আমি কাজ কর্ম দ্রুত শেষ করে বটতলার দিকে হাটা দিলাম । কিন্তু বটতলার কাছে গিয়ে বেশ বড় রকমের একট ধাক্কা খেলাম । নিকিতা আসলেই সেখানে একটা টুল পেতে বসে আছে । আমার অবাক হওয়ার কারন হচ্ছে নিকিতা আজকে তার মুখ ঢাকে নি । আশে পাশে সবাই তাকে দেখতে পাচ্ছে । কিন্তু কাছে আসার সাহস পাচ্ছে না । নিকিতার আশে পাশে ওর সিকিউরিটিকেও দেখতে পেলাম ।

এখন ক্যাম্পাসে ভীড় অনেকটা কম । সবাই ক্লাস করে চলে গেছে । কিছু রাজনৈতিক ছেলে মেয়েরা আছে । আর অল্প কিছু সাধারন ছেলে মেয়েরা । সেই অল্প ভীড়ের মাঝে সেই ছাত্র নেতা কামাল আফসারকে দেখতে পেলাম । আমাকে দেখে সে যেন আরও অবাক হয়ে গেছে ।

আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না । এই মেয়ের মাথায় এখন কি চলছে কে জানে ! আমি ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম ওর দিকে । আমাকে দেখতেই ওর মুখে হাসি দেখা গেল । ওর পাশে বসে থাকা একটা টুল এগিয়ে দিল । আমি চুপচাপ বসলাম । নিকিতা বলল

-কি ব্যাপার এমন মুখ করে রেখেছো কেন ?

-সিরিয়াস লি ? এই ভাবে ?

-হোয়াট ! কি হয়েছে ? আর কত লুকাবো বল ! আর ভাল লাগছে না । মন্ত্রী হয়েছি তো কি হয়েছে ! আমার পছন্দ অপছন্দ নেই?

আমি কি বলবো খুজে পেলাম না । নিকিতা বটতলার ফুচকা মামার দিকে তাকিয়ে বলল

-মামা দুইটা ফুচকা দিবেন ! একটাতে ঝাল দিবেন বেশি আরেকটা তে একদম কম । মাস্টার সাহেব আবার ঝালে খেতে পারে না !

দেখতে পেলাম ফুচকাওয়ালা আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসলো । যেন ঝাল খেতে না পারাটা কত মজার একটা ব্যাপার ! আমি কেবল তাকিয়ে আছি আশে পাশে । নিকিতা আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-কি ব্যাপার অন্য দিকে তাকিয়ে আছো কেন ? আমার চেহারা পছন্দ হচ্ছে না !

-না মানে ….

-কোন মানে ফানে করবা না তো ! লোকে কি ভাবলো এতো কিছু ভাবলে হবে !

আমরা যখন ফুচকা খেতে শুরু করলাম তখন দেখলাম আমার ডিপার্টমেন্টের একটা মেয়ে এগিয়ে এল ধীর পায়ে । মেয়েটা একটু ভয়ে ভয়ে এগিয়ে আসছে । ভেবেছিলাম সিরিউরিটি ওকে আটকাবে তবে আটকালো না । আমাদের সামনে এসে নিকিতার দিকে তাকিয়ে বলল

-ম্যাম, আপনার অনেক বড় ফ্যান আমি । সত্যি বলতে আপনাকে দেখেই মনে হয়েছে আমরা যদি রাজনীতিতে আসি তাহলে দেশের অবস্থা চাইলেই বদলানো সম্ভব ! আপনার সাথে কি একটা ছবি তুলতে পারি প্লিজ !

নিকিতা হসলো ! তারপর বলল

-আরে এতো ভয় পাচ্ছো কেন ? আজকে আমি এই মন্ত্রী নই বরং তোমাদের স্যারের উমম…. তোমরা কি বল যেন হ্যা জিএফ হয়ে এখানে এসেছি ।

মেয়েটির মুখের হাসি এবার বিস্তৃত হল । মেয়েটি বলল

-আমি সত্যিই আপনার মত হতে চাই । আপনার মত কাজ করতে চাই ।

-ভেরি গুড । কই ছবি তুলবে না ? আসো !

মেয়েটা ছবি তুলে চলে গেল । দেখতে পেলাম তারপর আরও অনেকেই এগিয়ে এল । এমন কি সেই ছাত্রনেতা কামাল সাহেবেও এগিয়ে এল।

পুরো বিকেলটা নিকিতা ওখানেই কাটালো । রাতে অনলাইনে আবারও ঝড় বয়ে গেল । তবে এবার দেখলাম মানুষ সমালোচনা করছে না । বরং প্রসংশা করছে । একজন এতো ক্ষমতাবান মানুষ হয়ে একটা বিকেল সাধারন ভাবে তার পছন্দের মানুষের সাথে গাছের নিচে বসে ফুচকা খাচ্ছে গল্প করছে ! এটা এর আগে কেউ ভাবতে পেরেছিলো !! কেউ পারে নি । নিকিতা সেই কাজটাই করেছে । সত্যিই বলতে কি এর ফলেই ওর জনপ্রিয়তা যেন আরও বাড়তে লাগলো । সেই সাথে আমিও বিখ্যাত হয়ে গেলাম । আমার ফেসবুকে ফলোয়ারের সংখ্যা বাড়তে লাগলো হুহু করে ! পথে ঘাটে অফিসে সবাই এখন আমার দিকে অন্য চোখে তাকাতে লাগলো । আমার কাছে সব কিছু যেন অন্য রকম লাগছিলো । সত্যি বলতে কি এই হঠাৎ করে টক অব দ্য টাউন হতে পেরে আমার খারাপ লাগছিলো না ।

কিন্তু এতো সবার মাঝে একজন মানুষ ঠিক খুশি ছিল না । সেটা হচ্ছে আমার মা । সে রাজনীতিবীদদের একজন পছন্দ করে না । তবুও নিকিতার আচরন আর আমার নিকিতার প্রতি আগ্রহ দেখে সে চুপ করে ছিলো । কিন্তু নিকিতার আসল পরিচয় জানতে পেরে সে খানিকটা হপ করে রয়েছে । সরাসরি না করছে না তবে ঠিক হ্যাও করছে না ।

নিকিতা মাঝে দুবার এসেছে আমাদের বাসায় । তবে আমার আশা আছে যে মায়ের মন আমি আর নিকিতা মিলে গলিয়ে ফেলবো । নিকিতার খুব জলদিই বিয়ে করার ইচ্ছে । আগামী ইলেকশনের কাজে নামার আগেই সে চাচ্ছে যে বিয়েটা করে ফেলতে । আমারও কোন আপত্তি নেই ।

সব কিছু ঠিকই চলছিলো । এর মাঝে একটা অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটলো । একদিন কুরিয়ারের মাধ্যমে আমার কাছে একটা বক্স এসে হাজির । বক্সটা খুলতেই দেখি তারপর ভেতরে একটা ছোট সেলফোন । চাইনিজ মোবাইল । কম দামী । একটা সীম ভরা আছে ওতে । কিছু সময় খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম সেটার দিকে । আমাকে ফোন গিফট করবে কে ? তাই আবার এই ভাবে ?

ফোনের ভেতরে একটাই মাত্র নাম্বার সেভ দেখেলাম । সেখানে লেখা “কল মি”

কোন কিছু না ভেবে ডায়াল বাটনে চাপ দিলাম । কয়েকবার রিং হতেই ওপাশ থেকে রিসিভ হল । আমি হ্যালো বললাম । কিছু সময় নিরবতার পরে ওপাশ থেকে শুনতে পেলাম

-আপনার জীবন হুমকির মুখে ।

নিশ্চিত ভাবেই একটা মেয়ে কন্ঠ । তবে মেয়েটা সম্ভবত নিজের কন্ঠ লুকাতে চাইছে । আমি বললাম

-মানে ? কি বলছেন !

-শুরুন বেশি কথা বলা যাবে না । হয়তো ট্টেস করে ফেলবে । কেবল এই কথা বলছি খুব সাবধানে থাকবেন । এই ফোনটার কথা কাউকে বলবেন না । আপনার আসল ফোনে আড়িপাতা হয় তাই এই ভাবে আপনাকে সাবধান করলাম । আমি আবার ফোন করবো ! সাবধান !

আর কাউকে বলবেন না এই ফোনের কথা । কাউকে না !

বলেই ফোনটা কেটে গেল । আমি আবার ফোন দিলাম । কিন্তু ফোনটা বন্ধ পেলাম । কিছুই বুঝতে পারছিলাম না । নিকিতাকে কি জানাবো এই ফোনের কথা ?

কিন্তু তখনই মনে হল ফোনকারী কাউকে না জানাতে বলেছে । অবশ্য নিকিতা আমাকে আগেই সাবধান করেছে । আমি যেহেতু নিকিতার সাথে আছি তাই বিরোধী দলের কাছে আমি এখন একটা টার্গেটে পরিনত হয়েছি । আমার পেছনে সব সময় চর লাগিয়ে রাখার পেছনেও এই একটা কারন আছে । আমি খানিকটা দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগতে লাগলাম । আমার কি বিপদ হতে পারে ! বুঝতে পারছি না !

পরের পর্ব

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 5 / 5. Vote count: 6

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

Comments are closed.