মাই ডিয়ার হোম মিনিস্টার (পর্ব ১১)

5
(9)

দুপুরের এই সময়টা রাস্তায় গাড়ির পরিমান কম থাকে । কিন্তু আজকে মনে হচ্ছে সব গাড়ি রাস্তায় নেমেছে । তীব্র জ্যাম সৃষ্টি হয়েছে । নাকি আমার মনেই এমন মনে হচ্ছে । রাস্তাঘাট আমার কাছে কেমন যেন মনে হচ্ছে ! সব কিছু অপরিচিত ঠেকছে । আমি জোরে জোরে দম নিচ্ছি কেবল ! কত সময় ধরে দৌড়াচ্ছি আমি বলতে পারবো না । একটু আগে একটা সিএনজিতে ছিলাম । তবে সেটা ছেড়ে দিয়েছি । জ্যামের ভেতরে আটকে থাকতে থাকতে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো । আমার কেবল মনে হচ্ছে আমার এখন নিকিতার কাছে পৌছাতে হবে ।

আজকে কাটাবনের কাছে একটা সম্মেলন ছিল । সেখানে বক্তিতা দেওয়ার সময় নিকিতার উপর হামলা হয়েছে । স্নাইপার দিকে কেউ ওকে গুলি করেছে । এর বেশি কিছু কেউ জানে না । ওকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হয়েছে । কত টুকু আঘাত পেয়েছে সেটা বলা যাচ্ছে না । সংবাদটা শোনার সাথে সাথে আমার বুকের ভেতরে একটা তীব্র আকুলতা দেখা দিয়েছে ওকে দেখার জন্য । ওকে কয়েকবার ফোন দিয়েছি কিন্তু কেউ ফোন ধরে নি । আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারি নি । আমার কেবলই এখন মনে নিকিতাকে নিজের চোখে না দেখতে পারলে আমার শান্তি নেই ।

ওর বাসার সামনে যখন পৌছালাম ততক্ষনে সামনে প্রচুর ভীড় জমে গেছে । আমি ভীড় ঠেকে গেটের কাছে এসে হাজির । অন্য সবাইকে ভেতরে ঢুকতে না দিলেও আমাকে ভেতরে ঢুকতে দিল । আমি এর আগেও এই বাসায় এসেছি কয়েকবার । তাছাড়া আমাকে সবাই মোটামুটি চেনে । দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই দেখতে পেলাম ঘরের ভেতরে কয়েকজন মানুষ রয়েছে । এক পাশে সোফার নিকিতা বসে আছে । আমি ভেতরে ঢুকতেই সবার চোখ আমার উপর পড়লো । নিকিতাকে দেখলাম উঠে দাড়ালো । ওর বাবাকেও দেখতে পেলাম ।

আমি জানি না আমার ভেতরে কি হল আমি সবার সামনে গিয়েই নিকিতাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম । যদিও কাজটা কতখানি ঠিক হল আমি জানি না তবে মনে হল এটা না করলে যেন আমি শান্তি পাবো না । প্রথমে কিছু সময়ে আমার মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হল না । আমার বুকের ভেতরের আন্দোলনে কারনে আমি কোন কথা বলতে পারছিলাম না । একটা সময় নিকিতা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে শুরু করলো, আরে বাবা আমার কিছু হয় নি । বিশ্বাস কর ! কিচ্ছু হয় নি ! এই দেখো আমি একদম ঠিক আছি !

কত সময় পড়ে আমি নিজেকে নিকিতার থেকে আলাদা করেছিলাম মনে পড়লো না । তবে তখন তাকিয়ে দেখি ঘর ততক্ষণে একদম ফাঁকা হয়ে গেছে । সবাই রুম ছেড়ে চলে গেছে । আমার মুখের ভাব দেখে নিকিতা বলল

-এমন বাচ্চাদের মত আচরন করে কেউ ? সবার সামনে আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরলে ! আমি লজ্জায় শেষ !

আমি ততক্ষণে একটু সামলে নিয়েছি । নিকিতাকে বললাম

-সরি ! আসলে আমি …

-তুমি কি ?

-জানি না । নিজেকে ধরে রাখতে পারি নি । বারবার মনে হচ্ছিলো যদি তোমার কিছু হয়ে যেত…..

আমার কথা বলার ভাবটাই এমন ছিল নিকিতা আমার দিকে বেশ কিছু সময় তাকিয়ে রইলো । তারপর আমার ঠোঁটে চুমু খেল খুব গভীর ভাবে ! একটা পর্যায়ে ও আমাকে নিয়ে ওঠে আরও ভেতরের ঘরে ! আরও তীব্র ভাবে দুজন দুজন কে ভালবাসতে শুরু করলাম !

সন্ধ্যার পরপরই নিকিতা সাংবাদিকদের জানালো যে সব কিছু ঠিক আছে । তার শরীরের কোন আঘাত লাগে নি । হামলা হয়েছিলো তবে স্নাইপার লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে । কে এই হামলার পেছনে আছে সেটা সে ঠিকই খুজে বের করবে । সে মোটেই এই হামলার কারনে ভীত হয়ে পড়ে নি । তার কাজ সে করেই যাবে । এবং আরও বেশি উদ্দম আর সততার সাথে ।

রাতে আমি নিকিতার বাসাতেই থেকে গেলাম । আমার আসলে ওকে চোখের আড়াল করতে ইচ্ছে করছিলো না । ওকে যে কতখানি ভালবাসতে শুরু করেছি সেটা আমি আজকে আরও ভালবাসে উপলব্ধি শুরু করেছি । রাতে ওর ঘরের ঝুল বারান্দায় বসে বসে দুজন গল্প করতে লাগলাম ।

কফির মগ হাতে নিয়ে নিকিতা বলল

-এই যে প্রফেসর সাহেব, আপনি যে কাজটা করলেন এতো গুলো মানুষের সামনে সেটা কি ঠিক হয়েছে ? আমার বাবা ছিল বাবার কয়েকজন বন্ধু পর্যন্ত ছিল । তারা কি মনে করলো ?

-যা মনে করে করুক ! আমার বউ বলে কথা !

-এখনও বউ হই নি !

-হও নি, হবা ! ইনফ্যাক্ট খুব জলদি । আমি তোমাকে নিজের বউই মনে করি । আর তুমিও যদি তা নাই ভাববে তাহলে ঐ কাজ….

আমাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে নিকিতা বলল

-এই বেয়াদপ চুপ ….

-বাহ রে তুমি করতে পারবা আর আমি বলতে …..।

সাথে সাথেই দেখলাম নিকিতার মুখ লাল হয়ে গেল । ও বলল

-এবার কিন্তু ভাল হবে না । একদম চুপ ! ঐ সময়ে তোমার মাথা যেমন ঠিক ছিল আমারও না । ঠান্ডা মাথায় এসব কখনই হত না । বুঝলে !

আমি কিছু বললাম না । নিকিতা আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আবার বলল

-জানো,তোমার ঐ চেহারা দেখে আমারও আসলে ….. আমিও আসলে আামর আবেগ কে নিয়ন্ত্রন করতে পারি নি । তুমি জানো আমি এই পুরো জীবনে আমার প্রতি কারো এতো তীব্র আবেগ দেখাতে দেখি নি । আমাকে অনেকে চেয়েছে কিন্তু আই গেস তোমার মত করে কেউ নয় । আমি যে তোমাকে সেদিন তুলে নিয়ে গিয়েছিলাম মোটেই ভুল করি নি !

আমি ওর আরেকটু কাছে এসে আরেকবার চুমু খেলাম ওকে ! নিকিতা সেটাতে বাঁধা দিল না । তখন নাকি ওর মাথা ঠিক ছিল না কিন্তু এখন তো মাথা ঠান্ডা । এখনও নিজেকে নিয়ন্ত্রন করার কোন লক্ষ্যন দেখতে পেলাম না !

পরের কয়েক দিন আমাদের আরও ঘন ঘন দেখা হতে লাগলো । মোটামুটি ও যেখানে যেত আমি কাজ না থাকলে সেখানে আমিও হাজির থাকতাম । একদিন রাত বারোটার দিকে তীব্র বৃষ্টির মাঝে ওর বাসার সামনে হাজির হলাম । ওকে ফোন করতেই ও জানলা দিয়ে কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর নিজেই নেমে এল । দুজন ওদের বাসার সামনে খানিক সময় লাফালাফি করলাম । তখনই আমার মনে হল এই মেয়েকে আমার বিয়ে করতে হবে । এবং জলদিই বিয়ে করতে হবে । নিজের ভেতরেই একটা পরিকল্পনা করে ফেললাম ।

পরের সপ্তাহেই কাজটা করতে হবে । ওকে বললাম যে আমার পছন্দের রেস্টুরেন্টে ওকে নিয়ে আমি ডিনার করতে চাই । এর আগে দুবার আমরা গিয়েছি সেখানে । তবে আগের দুবারই নিকিতার মুখ ঢাকা ছিল ওড়না দিয়ে । এবার সেটা থাকবে না । আর ঠিক করেছি এবার ওকে আমি সবার সামনেই বিয়ের জন্য প্রোপোজ করবো ।

ঠিক সময় মতই ও হাজির হল । ওকে আসতে দেখে অনেকেই অবাক হল । কয়েকজন ওর সাথে এসে ছবি তুলল । অনেকে অটোগ্রাফও নিলো । এমনটা হবে আমি জানতামই । তাই মুখ বুঝে সহ্য করা ছাড়া আর আসলে কিছু করার নেই । যখন সময় পেলাম তখন আমি ম্যানেজারকে ইশারা করলাম । সে হঠাৎই রেস্টুরেন্টের আলো খানিকটা কমিয়ে দিল । সেই সাথে নিকিতার সব থেকে পছন্দের গানটা বেজে উঠলো মৃদু স্বরে । নিকিতা অবাক হয়ে বলল

-কি ব্যাপার কি হচ্ছে ?

আমি ওকে আরও খানিকটা অবাক করে দিয়ে ঠিক ওর সামনে হাটু গেড়ে বসলাম । পকেট থেকে আংটি বের করে ওর সামনে বাড়িয়ে দিলাম । বললাম

-মাই ডিয়ার হোম মিনিস্টার তুমি কি আমার ঘরের হোম মিনিস্ট্রির দায়িত্ব নিবে ?

নিকিতা কিছু সময় তাকয়ে রইলো আমার দিকে । ওর চোখে আমি পানি দেখতে পেলাম । চারি দিকে তখন সবাই চুপ করে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে ! এমন কি গানও বন্ধ হয়ে গেছে । পুরো রেস্টুরেন্টে একটা পিন পতন নিরবতা ।

নিকিতা কিছু বলবে এর আগে ঢং ঢং করে ঘড়ির আওয়াজ শুনতে পেলাম । আওয়াজটা যেন একটু বেশিই তীব্র মনে হল আমার কাছে । সেই সাথে কোথাও কাচ ভাঙ্গার আওয়াজ শুনতে পেলাম আমি । সাথে সাথেই একটা তীব্র ব্যাথা অনুভব করলাম আমি । আমার বুকের ভেতরে যেন আগুন ঢুকে পড়েছে ।

আমি আংটিটা তখনও হাত দিয়ে ধরে রেখেছি । তবে নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না । চোখটা চলে গেল আমার নিজের বুকের দিকে । এই রকম আলোতেও সাদা শার্টে লাল রক্ত চিনতে অসুবিধা হল না আমার ।

কেউ আমাকে গুলি করেছে !! আমি মারা যাচ্ছি !

মাটিতে ঢলে পড়ার আগে নিকিতার চিৎকার শুনতে পেলাম কেবল । চোখ বন্ধ হওয়ার আগে নিকিতাকে দেখলাম আমার দিকে এগিয়ে আসতে । একেবারে চোখ বন্ধ করার আগে কেবল একটা কথাই মনে হল, নিকিতা কি “হ্যা” বলেছিলো !

পরের পর্ব

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 5 / 5. Vote count: 9

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →