মাই ডিয়ার হোম মিনিস্টার (পর্ব ০৯)

5
(8)

রাতের বেলা কয়েকবার ফোন দিতে গিয়েও ফোন দিতে পারলাম না । বারবার কেবল মনে হচ্ছিলো যে আমার কারনেই নিকিতার এতো বড় সমস্যা হয়ে গেল । আমার কারনেই ওর ক্যারিয়ারে একটা বড় দাগ হয়তো লেগে গেল । আমি যদি আমার ইচ্ছের কথাটা না বলতাম তাহলে হয়তো কোন দিন এই ব্যাপারটা হত না ।

রাত বারোটার দিকে নিকিতা নিজেই ফোন দিল আমাকে । আমি কি বলবো খুজে পেলাম না । নিকিতা বলল

-মন খারাপ মনে হচ্ছে ?

-আই এম সরি !

-সেকি কেন ? সরি কেন ?

-আমার কারনে তোমার এতো বড় ক্ষতি হয়ে গেল !

-কিসের ক্ষতি !! শুনো এই সব ব্যাপার নিয়ে তোমার চিন্তা করার কোন কারন দেখি না আমি । এইসব নিয়ে ভাববেও না মোটেও । মনে থাকবে !

-কিন্তু …..

-কোন কিন্তু না । আমি সামলাবো ! তোমার কেবল কাজ হবে আমার বয়ফ্রেন্ড হওয়া আর আমাকে নিজের গার্লফ্রেন্ড মনে করা !

-বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ডের জন্য আমরা খানিকটা বেশি বড় হয়ে গেছি না ! এর থেকে হাসব্যন্ড ওয়াইফ বেশি ভাল শোনায় !

ওপাশ থেকে বেশ কিছু সময় কোন কথা শোনা গেল না । আমি বললাম

-কি হল ?

নিকিতা খুব নরম গলায় বলল

-না কিছু না । আমি বাবাকে বলব । যদিও আমি যতদুর জানি বাবা এই ব্যাপারটা জেনে গেছে এরই ভেতরে ।

-তো এখন কি করবো ? তোমার বাবা কাছে প্রস্তাব পাঠাবো ?

-না না না ! এখন না । আমি বলবো কি করতে হবে আর কখন করতে হবে । আর তুমি এখন ঘুম দাও । অন্য কিছু এখন ভাবতে হবে না । বুঝতে পেরেছো ! আমি এদিকটা সমলাবো !

যদিও ও আমাকে চিন্তা করতে মানা করলো তবুও আমি চিন্তা করা থেকে নিজেকে দুরে রাখতে পারলাম না । আমাদের এই ব্যাপারটা জেনে যাওয়ার ফলে ওর ক্যারিয়ারে কি হবে এই চিন্তাটা মাথা থেকে দুর করতে পারলাাম না । নিশ্চয়ই ওর বিরোধী পক্ষ এটা নিয়ে অনেক ঝামেলা করবে ।

ঝামেলা অবশ্য তারা করতেও চাইলো কিন্তু নিকিতা যে ব্যাপারটা এই ভাবে সামাল দেবে আমি ভাবতেই পারি নি । দুদিন পরে ওর এক সংবাদ সম্মেলনে হঠাৎ এক সাংবাদিক এই প্রশ্ন করে ফেলল । ম্যাডাম আপনার সাথে ঐ ছেলেটি আসলে কে ?

আমি তখন ওর এই অনুষ্ঠানটা টিভিতে দেখছিলাম । প্রশ্নটা শুনে মুহুর্তের ভেতরে নিকিতার চেহারার রং বদলে গেল । নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলো কিছু সময় ধরে । তারপর বলল

-এখানে আপনাদের ডাকা হয়েছে আমাকে আমার কাজের ব্যাপারে প্রশ্ন করার জন্য । আমাদের দেশে সামনের কয়েক দিনে একটা হামলা হওয়ার কথা আশংকার করা হচ্ছে, ইনটেলিজেসন্স থেকে তাই জানানো হয়েছে । আমি আপনাদেরকে এই ব্যাপারে সাবধান করতে ডেকেছি । আর আপনি বলছেন আমার সাথের ঐ ছেলেটি কে ? আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি সে এই হামলার সাথে যুক্ত নয় । কিংবা সে হুমকিও নয় দেশের জন্য ! বুঝতে পেরেছেন কি ?

-কিন্তু ম্যাডাম আমাদের কি জানার অধিকার নেই ?

নিকিতা এবার সত্যিই সত্যিই রেগে গেল । খানিকটা রাগত কন্ঠেই বলল, আমি এই দেশের একটা গুরুত্বপূর্ন পদে আছি । আপনারা আমার কাজের ব্যাপারে প্রশ্ন করুন । আমি যদি কোন ভুল করি সেটা আমাকে মনে করিয়ে দিন । কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হওয়ার সাথে সাথেও আমি একজন মানুষ । আমার একটা ব্যক্তিগত জীবন আছে । সবার যেমন আছে । এখন আমি ঐ ছেলের সাথে যদি বৃষ্টিতে ভিজেও থাকি সেটা কি অন্যায় কিংবা খারাপ কাজ হয়েছে ? আমি কোন আইন ভেঙ্গে কাজটা করেছি ? এমন কোন আইন কি আমাদের দেশে আছে যে যেখানে লেখা আছে প্রশাসনের মানুষদের কোন ব্যক্তিগত জীবন থাকতে পারবে না ? আছে কি ?

কেউ কোন কথা বলল না । নিকিতা বলল,

-যদি আপনাদের এই ইচ্ছে থাকে তাহলে এই বার আপনাদের জনপ্রতিনিধিদের বলুন । আমরা একটা আইন বানাই যেখানে এমপি মন্ত্রীরা কেউ বিয়ে করতে পারবে না কাউকে পছন্দ করতে পারবে না। ঠিক আছে বানাবো এমন আইন ? তাই কি চান ? বলুন তাই কি চান ?

সেই সাংবাদিক মিন মিন করে বলল

-জি না !

-তাললে অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করা বন্ধ করুন ! আমার ব্যক্তিগত জীবন ব্যক্তিগতই রাখতে দিন । যে ছবিটা ফেসবুকে ছাড়া হয়েছে সেটা যে তুলেছে তাকে আমি খুজতেছি । অন্যের ছবি লুকিয়ে তোলা অন্যায় এবং সেটা পাব্লিক্যারি প্রকাশ করাও অন্যায় । ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন আপনারা !

দৈনিক দ্বিতীয় আলোর একজন সিনিয়ির সাংবাদিক উঠে দাড়ালো । ম্যাডাম রাগ করবেন না । আসলে আমাদের মাঝে সাংবাদিকতার জ্ঞানে অবাব আছে এটা আমরা সবাই জানি । আসলে সিস্টেমটাই এমন হয়ে গেছে ।

-হ্যা সব দোষ এখন সিস্টেমের ! এটা বলেই সবাই খালাশ পেয়ে যায় । কেউ এগিয়ে এসে সেটা ঠিক করার কথা চিন্তা করে না ।

-কিন্তু আপনি করছেন । এই জন্য দেশের সব মানুষ আপনাকে খুব বেশি পরিমান পছন্দ করে । আপনার ব্যাপারে খুব বেশি আগ্রহী ! আমরা আসলে আপনার দিকেই চেয়ে আছি । আপনি যখন চাইবেন তখনই বলবেন । এটাই আমাদের কাম্য ! তবে দেশের মানুষ এখন সত্যিই আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে । যদি আপনার কোন রকম আপত্তি না থাকে তাহলে বলতে পারেন তার ব্যাপারে ।

নিকিতা খানিকটা হাসলো । তারপর বলল

-রমুন সাহেব আপনি খুবই বুদ্ধিমান । দেশের উপর হামলার সংবাদ থেকেও যখন মানুষ আমার বৃষ্টিতে ভেজার গল্প শুনতেই বেশি আগ্রহী তখন বলি —– হ্যা সেদিন একজনের সাথে আমি বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম । গাড়িতে করে যাচ্ছিলাম এক সাথে বৃষ্টি নামলো কি মনে হল নেমে পরলাম । তাকে আমার পছন্দ । তারও তাই । খুব জলদিই সম্ভবত পারিবারিক ভাবে কিছু হবে । চেষ্টা করবো এটা পরিবারের ভেতরেই রাখতে । আর কিছু জানতে চান ?

-যদি তার পরিচয় টা জানাতেন !

-দেখুন আমি পাব্লিক ফিগার । সে না । সে শান্তিপ্রিয় মানুষ । তাকে সেই রকম ভাবেই থাকতে দিন । আমি তার পরিচয় দিতে চাই না কারন সেটা দেওয়ার সাথে সাথে আপনারা গিয়ে হাজির হবে তার কাছে । এটা আমি পছন্দ করবো না । আরেকটা কথা যদি তবুও আপনাদের মাঝে কেউ তার পরিচয় জেনেও ফেলেন এবং তাকে গিয়ে বিরক্ত করেন তাহলে আমি ব্যাপারটা পছন্দ করবো না !

শেষের লাইনটা যে নিকিতা সবাইকে হুমকি দিল সেটা বুঝতে কষ্ট হল না । ব্যাপারটা এই ভাবে মিটে যাবে ভাবি নি । নিকিতার এই ভাবে বলাতে অন্য কারো কিছু বলারই রইলো না । যদিও বিরোধী পক্ষের কেউ বলার চেষ্টা করলো যে এই ভাবে একজন মন্ত্রী প্রকাশ্যে বৃষ্টিতে ভিজতে পারেন না কিন্তু সেসব কথা হালে পানি পেলো না ।

এরফলে আরেকটা কাজ হল । আগে থেকে ইয়াং জেনারেশনের মধ্যে নিকিতা তুমুল জনপ্রিয় ছিল । এই ঘটনার ফলে সেটা আরও বৃদ্ধি পেয়ে গেল । একে তো নিকিতা ছিল সব থেকে ইয়াং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তারপর তার কাজ কর্ম একদম পরিস্কার । সে কাউকেই ছাড় দিয়ে কাজ করে না । নিকিতার ক্ষমতায় আসার পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের ইমেজ অনেক ঊন্নতি হয়েছে । আর এখন তারা তাদের পছন্দের মন্ত্রী প্রেমও করে এবং সেটা বলতে দ্বিধাও বোধ করে না !

কিন্তু কদিন পরে ও যা করলো সেটা আমি কোন দিন কল্পনা করি নি । নিকিতা যে এমন কিছু করতে পারে সেটা আসলেই আমার ধানার বাইরে ছিল । কেবল আমার কেন অন্য কারো মনেই এমন কথা আসে নি । নিকিতার মত পদে থাকা কেউ যে এমন একটা কাজ করতে পারে সেটা এই দেশের ইতিহাসে এই প্রথম ।

পরের পর্ব

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 5 / 5. Vote count: 8

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

Comments are closed.