মাই ডিয়ার হোম মিনিস্টার (পর্ব ০৮)

4.9
(7)

নিকিতার সাথে আমার প্রেমটা চলতে থাকলো অনেকটা নাইট টেনেরর স্কুলে পড়া ছেলে মেয়েদের মত । কিশোর বয়সের প্রেমে যেমন সব সময় এই ভয়ে থাকতে হয় যদি কেউ দেখে ফেলে আমাদের অবস্থাও হয়েছে তেমন । মাসের বেশির ভাগ সময়ই নিকিতাকে নানান কাজকে ব্যস্ত থাকতে হয় । আমি ওকে দেখতে পাই না । যখন দেখা করি তবুও লুকিয়ে ঝুকিয়ে । বেশির ভাগ সময়ই ও একেবারে মুখ ওড়না পেঁচিয়ে আসে ।

আমি ওকে নিয়মিত টিভিতেই দেখতে পাই । কিন্তু ও আমাকে দেখতে পায় না । মাঝে মাঝে তাই হাজির হই ওর বলা স্থানে । কাজের কারনেই ওকে মাঝে মাঝেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় । আমাকে একটা পাস এনে দিয়েছে সে । আমি সময় পেয়ে সেই সাংবাদিক সেজে চলে যাই । ভীড়ের মাঝে ওর চোখ আমার উপরে থাকে । মুখে হাসি হাসি নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেয় সে । এই ভাবেই আমাদের বেশির ভাগ দেখা হয় ।

তবে এসবের মাঝেও আমার দিকে ওর সজাগ দৃষ্টি থাকে সব সময় । বিশেষ করে আমি কি করি না করি সব জানে । একদিন এই কথা জানতে চাইলে ও বলল, শুনো পৃথীবীর সব মেয়ের এই একটা ইচ্ছে যে সে তার প্রেমিক স্বামীর ব্যাপারে সব কিছু জানে । আমার কাছে ওয়ে আছে আমি কেন করবো না ?

-তাই বলে সব সময় আমার পেছনে লোক লাগিয়ে রাখবে ?

নিকিতা হাসলো । তারপর বলল

-মনে করো তোমার কোন বিপদ হল । যেকোন বিপদ আর তোমার একা একা সেটা সাফার করতে হল আমি এই ব্যাপারটা কোন দিন মেনে নিতে পারবো না । তোমার সাথে যাই হোক ভাল খারাপ আমি চাইবো সবার আগে আমি জানবো আমি ষবার আগে ব্যবস্থা নিবো ! বুঝতে পেরেছো ? তুমি কি জানো আমাদের মেয়েদের হাতে যদি ক্ষমতা থাকতো তাহলে তারা তাদের ভালবাসার মানুষের জন্য সব কিছু করে ফেলতো সকল আঘাত আগে নিজের শরীর দিয়ে ঠেকিয়ে দিতো । কিন্তু আমাদের সব সময় তা থাকে না । কিন্তু আমার অনেকটাই আছে আমি সেটার ব্যবহার করবো না ?

আমি কোন কিছু বলতে পারলাম না । এই কথার বিপরীতে আর কিছু বলাও যায় না ।

আমাদের প্রেম চলতে থাকে । নিকিতা মাঝে মাঝে খুব গোপনে আমাদের বাসায় আসে । তারপর মায়ের সাথে কিছু সময় গল্প করে । বাবা এই সময় খুব অস্বস্থির ভেতরে থাকে । তার কাছে ব্যাপারটা এখনও ঠিক স্বাভাবিক না ।

তবে আমার মাঝে মাঝে মন খারাপ হয় । আমি এতো অস্বাভাবিক জীবন চাই নি । আমি যেমন সাধারন মানুষ আমি চেয়েছিলাম আমার প্রেমিকা/বউও আমার মতই সাধারন কেউ হয় । হয়তো হাউজওয়াইফ নয়তো আমার মত জব করবে । আমরা অফিস শেষে এক সাথে ঘুরতে যাবো । রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করবো । বৃষ্টি হলে রিক্সা করে ঘুরবো । কিন্তু নিকিতার সাথে কোন দিন সেটা সম্ভব না ।

নিকিতা নিজেও এটা জানতো । আমার যে মাঝে মাঝে মন খারাপ হয় সেটা সেও জানে । সেদিন ছুটির দিন ছিল । প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে । আমি শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিলাম । এমন সময় নিকিতার ফোন এসে হাজির ।

-কি করছেন পড়ছেন প্রোফেসর সাহেব ?

-এই সময়ে আর কি করবো !

-শুনো এখনই বাইরে বের হও তো !

-মানে ?

-তোমার বাসার সামনে দেখো গাড়ি চলে গেছে । কালো রংয়ের পাঞ্জাবীটা পরে এসো ।

-কেন ? আমি তো বুঝতে পারছি না ।

-এতো কিছু বুঝতে হবে না । আসতে বলছি আসো !

আমি কথা না বাড়িয়ে পাঞ্জাবী পরে নিলাম । কয়েক দিন আগে নিকিতাই এটা আমাকে উপহার দিয়েছে । বাসার গেটের কাছে আসতেই দেখলাম কালো রংয়ের গাড়ি এসে হাজির হয়েছে বাসার সামনে । আমাকে দেখে সেটার দরজারও খুলে গেল । আমি কোন কিছু চিন্তা না করে ভেতরে ঢুকে পড়লাম । গাড়ি কিছু সময় চলার পরে একটা স্থানে এসে থামলো । বেশ কিছু সময় ধরে গাড়িটা চলে থেমে গেল । আমি তাকিয়ে ঠিক রাস্তাটা চিনতে পারলাম না । রাস্তাটার দুইপাশে সারি সারি গাছ । বিশেষ করে কদম আর কৃষ্ণচুড়া গাছই বেশি দেখা যাচ্ছে । রাস্তায় গাড়ির চলাচল নেই বললেই চলে । আমি তাকিয়ে দেখি আমাদের গাড়ির ঠিক সামনে আরেকটা গাড় দাড়িয়ে রয়েছে ।

কিছু সময় পরেই গাড়িটা থেকে হাতে ছাতা নিয়ে একজন কালো রংয়ের শাড়ি পরা এক মেয়ে বের হয়ে এল । আমাদের গাড়ির দিকে হাটতে লাগলো । আরেকটু ভাল করে তাকাতেই আমি অবাক হয়ে দেখলাম মেয়েটা আর কেউ নয়, নিকিতা ! আমার গাড়ির সামনে এসে বলল গাড়ির দরজা খুলতে ইশারা করলো । আমি দরজাটা খুলতেই ও ছাতা নিয়ে দরজার কাছে চলে এল ।

এক ছাতার নিচে আমরা দাড়িয়ে আছি । নিকিতা হাতের ইশারা করতেই গাড়ি দুটো চলে গেল । তাকিয়ে দেখি পুরো রাস্তা জুড়ে কেবল আমরা দুজন । একটা গাড়িও দেখা যাচ্ছে না । আমি বললাম

-যদি কেউ এখানে আমাদের দেখে ফেলে ?

নিকিতা হাসলো । বলল

-দেখবে না । সেরকম ব্যবস্থা করা হয়েছে !

-কি রকম ?

-এই রাস্তার দুই মাথায় ডাইব্রেশন করা হয়েছে । একটু ঘুরে যাবে । তাছাড়া পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে । কেউ আসবে না !

এই বলে নিকিতা হাতের ছাতাটা রাস্তায় ফেলে দিলো । সাথে সাথে এক ঝাক বৃষ্টির পানি আমাদের ভিজিয়ে দিতে লাগলো । আমি অবাক নিকিতার দিকে তাকিয়ে রইলাম । এই মেয়ে আমার ইচ্ছে পুরনের জন্য পুরো রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে । খাইছে আমারে !

মুষল ধারে বৃষ্টি পড়তে থাকলো আর আমরা দুজন বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলাম এক সাথে । মাঝে মাঝে হাটি রাস্তার উপর বসে থাকি । জীবনে এর থেকে চমৎকার বৃষ্টিময় সময় আমি কাটিয়েছি কি না আমার জানা নেই ।

আমার মনের সেই সাধারন প্রেমিকার আফসোস টা একেবারে চলে গেল । মনে হল এর থেকে ভালা আর কিছু হতেই পারে না । আমার প্রেমিকা আমার সাথে বৃষ্টিতে ভেজার জন্য পুরো একটা রাস্তা বন্ধ দিয়েছে । এটা আমি কোথায় পেতাম !

বাসায় ফেরার পরেও অনেকটা সময় এই আনন্দ নিয়েই সময় কাটাতে লাগলাম । কিন্তু সুখের পর ঝামেলা এসে হাজির । আমার বেলাতেও ঠিক তাই এসে হাজির হল । ফেসবুকে কয়েকটা ছবি মুহুর্তের ভেতরে ভাইরাল হয়ে গেল । এবং সেই ছবিটা আর কারো নয় আমার আর নিকিতার বৃষ্টিতে ভেজার ছবি । রাত দশটা বাজতে বাজতে সব গুলো নিউজ পোর্টালের লিড নিউজ হয়ে গেল সেটা । দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোন ছেলের সাথে বৃষ্টিতে ভিজছে ।

ফেসবুকে খুব ঝড় উঠলো । অনেকে এটার বিপরীতে অবস্থান নিচ্ছে আবার অনেকে এটার পক্ষে । কেউ বলছে এতো গুরুত্বপূর্ন পদে থেকে কেউ এমন কাজ কিভাবে করে আবার কেউ বলছে সে তার দায়িত্ব পালনে কখনও অবহেলা করে নি । তার কি ব্যক্তিগত জীবন থাকতে পারে না । সে হোম মিনিস্টার হয়েছে বলে কি সে কাউকে ভালবাসতে পারে না । জল্পনা কল্পনা চলতে লাগলো । নিকিতার সাথের ছেলেটা আসলে কে ?

কেউ বলছে অনেক ব্যবসায়ী কেউ বলছে ফ্যামিলি ফ্রেন্ড কিংবা বাইরে থেকে ! কিন্তু আমার আসল পরিচয় কেউ তখন বের করতে পারে নি ।

আমি কি করবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না । যে কয়টা ছবি পোস্ট হয়েছে সেখানে আমার চেহারা খুব স্পষ্ট করে দেখা যাচ্ছে না । যারা আমাকে চেনে তারা হয়তো ভাল করে তাকালে বুঝতে পারবে যে নিকিতার সাথের ছেলেটা আমি ।

সামনে কি হবে কে জানে ?

ওর ক্যারিয়ারে নিশ্চয়ই একটা বড় রকমের দাগ সৃষ্টি হয়ে গেল আমার জন্য !

ইস! যদি ওকে আমার ঐ ইচ্ছের কথা না বলতাম তাহলে হয়তো এসব কিছুই হত না !

পরের পর্ব

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.9 / 5. Vote count: 7

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

Comments are closed.