মাই ডিয়ার হোম মিনিস্টার (পর্ব ০৭)

4.8
(10)

আমার মা তখনও এক মনে কথা বলেই যাচ্ছে । কে তার কথা শুনছে কি শুনছে না সেটার দিকে লক্ষ্য নেই । আমি নিকিতাকে নিয়ে মায়ের সামনে এসে দাড়ালাম । মা আমার দিকে না তাকিয়েই বলল

-কে এসেছে ?

আমি কিছু বললাম না । এক সময় মা আমাদের দিকে ফিরে তাকালো । নিকিতাকে দেখে বলল

-এটা কে ?

আমি খানিকটা দ্বিধা দ্বন্দ্ব নিয়ে তাকিয়ে রইলাম মায়ের দিকে । একটু বোঝার চেষ্টা করছি মা নিকিতাকে ঠিক চিনতে পেরেছে কি না । মা তখনও নিকিতার দিকে তাকিয়ে আছে । একটা পর্যায়ে আমার মনে হল মা নিকিতাকে চিনতে পারে নাই । আমি বলল

-ও নিকি ! আমার ফ্রেন্ড !

-ফ্রেন্ড ! কেমন ফ্রেন্ড ! আগে তো দেখি নি কোন দিন !

নিকিতা আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল

-আম্মু, ও আসলে লজ্জা পাচ্ছে । আমরা ফ্রেন্ড না । বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড ! এতোদিন আপনার ভয়ে আমাকে সামনে আনে নি । আমি কয়েকবার আসতে চেয়েছি ।

মা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো নিকিতার দিকে । অবাক হওয়ার বেশ কারন আছে । প্রথমত নিকিতা মাকে খুব স্বাভাবিক ভাবে আম্মু ডেকেছে । একেবারে প্রথম দিনেই এভাবে আম্মু ডাকাটা সহজ নয় ! তারপর এখনও কোন মেয়ে এতো সহজে তার প্রেমিকের মায়ের কাছে এই কথা টা বলতে পারে এটা কেউই বিশ্বাস করবে না । ব্যাপারটা ঠিক স্বাভাবিক না আমাদের দেশের মেয়ের জন্য ।

আর মায়ের থেকে সম্ভবত আমি নিজেই সব বেশি অবাক হয়েছি । বলে কি এই মেয়ে ?

মা এবার আমার দিকে তাকিয়ে রইলো চোখ গরম করে ! তার চোখের ভাষা আমার পড়তে মোটেই কষ্ট হল না । মা যেন আমার কাছে জানতে চাইছে যে কদিন আগে তুই বললি রিদিকে পছন্দ আবার আজকে এই মেয়েকে নিয়ে এসেছিস ! এই মেয়ে আবার বলছে তোরা নাকি বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড ! মানে কি এসবের !

আমি কিছু না বোঝার ভান করে তাকিয়ে রইলাম । নিকিতা বলল, আম্মু আপনি ওকে বকবেন না প্লিজ ! আসলে ও আপনাকে অনেক ভালবাসে তো, আমার থেকেও বেশি তাই আপনি অন্য কারো সাথে যখন ওর বিয়ে দিতে চাইলেন ও মানা করে নি । এমন কি আমিও ওকে বলেছি আম্মুর যদি পছন্দ হয় তাহলে তুমি আমাকে ছেড়ে ওকেই বিয়ে কর !

এই কথা শুনেই দেখলাম আম্মু খানিকটা গলে গেল । দেখলাম হাতের কাজটা এক পাশে সরিয়ে রেখে নিকিতার কাছে এগিয়ে এল । নিকিতাকে দেখতে শুরু করলো ভাল করে । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তা তুই ঐ মেয়ের কথা কেন বলেছিলি আমাকে ? আর প্রথমেই একে কেন নিয়ে আসিস নি ?

তাই তো এই প্রশ্নের জবাব আমি এখন কিভাবে দিবো ? আমি আমতা আমতা করে বললাম

-আসলে ….

নিকিতা আবারও আমাকে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে এল । বলল, আসলে আম্মু আমার মধ্যে একটা কারন আছে যেটা আপনি পছন্দ করেন না । এই জন্য ও আপনাকে কষ্ট দিতে চায় নি ।

মা বলল, কি কারন ?

নিকিতা আমার দিকে একবার তাকালো । তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, আসলে আমি রাজনীতির সাথে যুক্ত ! আপনি তো রাজনীতি ঠিক পছন্দ করেন না । তাই ?

ঘরের ভেতরে খানিকটা নিরবতা বিরাজ করলো । কেউ কোন কথা বলল না কিছু সময়ে । নিকিতা নিজের মুখকে করুণ করে রেখেছে । কিন্তু মাকে দেখে মনে হচ্ছে সে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগছে । সে কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না । আমি বললাম

-মা একটু বোঝার চেষ্টা কর । যারা রাজনীতির সাথে যুক্ত তারা তো সবাই খারাপ না । নিকিতাকে দেখো তোমার কি মনে হচ্ছে ….. মা

আমাকে মাঝ পথেই থামিয়ে দিল । তারপর বলল

-আমাকে বুঝাতে হবে না ।

তারপর নিকিতার দিকে তাকিয়ে বলল

-দেখো মেয়ে, আমি কিছু বলছি না তোমাকে কিংবা তোমাদের । তবে তুমি যদি আমার ছেলেকে পছন্দ কর আর ওর ও যদি একই ইচ্ছে থাকে তাহলে তুমি নিজেকে ঐ লাইণ থেকে আস্তে আস্তে সরিয়ে আনো । আমি জানি একেবারে সহজ হবে না তবে সম্ভব ! তোমার সহজ সোজা সত্য কথা আমার পছন্দ হয়েছে । আর আমি তোমার বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে চাই !

দেখলাম নিকিতা হাসলো । আপাতত মা যে পটে গেছে সেটা আমার কিংবা নিকিতার কারোই বুঝতে বাকি রইলো না । নিকিতা হঠাৎ করেই মা জড়িয়ে ধরলো । এইবার মায়ের মুখে হাসি দেখতে পেলাম । যাক আপাতত মা পটে গেছে । এবং মা নিকিতাকে মোটেই চিন্তে পারে নি । কিন্তু বাবা মোটেই চিনতে ভুল করলেন না । রাতে বাবা একটু হাটতে যান । ফিরে এসে নিকিতাকে দেখে চোখ কপালে তুলে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । মায়ের সাথে নিকিতা তখন টেবিল সাজাচ্ছিলো ।

মা বাবার দিকে তাকিয়ে বলল

-দেখো তোমার ছেলের কান্ড ! তোমার ছেলে নাকি এই নিকিকে পছন্দ করে । অথচ দেখো আমরা কি করতে যাচ্ছিলাম । যা হয় ভালর জন্য হয় !

বাবার মুখের কথা তখন হারিয়ে গেছে । আর হারাবে না কেন ! দেশের হোম মিনিস্টারকে যদি নিজের ঘরে দেখা যায় হঠাৎ করে যে কারো মুখের কথা হারিয়ে যাবে । কিছু বলতে যাবে তখনই আমি সেখানে হাজির । বাবাকে অন্য রুমে নিয়ে এলাম । বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-এই মেয়ে এখানে কেন ? আর তোর মা কি বলছ ?

আমি একটু শুকনো হাসি হেসে বললাম

-আমি কিছুই জানি না বাবা । আমার হাতে কিছুই নেই ।

-এই মেয়েকে কিভাবে পটালি ?

-আমি পটাই নি বাবা !

-তাহলে ?

-কিভাবে যে কি হয়েছে সেটা আমি নিজেই জানি না । এখন কেবল জানি যে এই মেয়ে খুব জলদি আমাকে বিয়ে করবে !

বাবা তখনও আমার দিকে অবাক চোখেই তাকিয়ে রয়েছে । তার এখনও কথাটা ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না । অবশ্য আমি হলেও আমার ঠিক বিশ্বাস হত না এই সব কথা । বাবা বলল

-তো মা তো চিনতে পারে নি মনে হচ্ছে !

-হ্যা । চিনতে পারে নি ।

-চিনতে পারলে কি হবে বুঝতে পারছিস ?

-না । তবে এমন কিছু করতে হবে যাতে চিনতে না পারে ?

-কত দিন ?

-যতদিন পারা যায় ।

বাবা তখনও আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে অবিশ্বাসের চোখে । তার ছেলের প্রেমিকা যে দেশের হোম মিনিস্টার সেটা তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে ।

রাতের খাবার সময়ও বাবা ঠিক স্বাভাবিক হতে পারছিলো না । নিকিতার সাথে কথা বলার সময় বাবার মুখ দিয়ে বারবার আপনি বের হয়ে যাচ্ছিলো । মা শুনে বিরক্ত হয়ে বলল, কি ব্যাপার বলতো ! তোমার কি বুদ্ধি শুদ্ধি লোপ পেয়ে গেল ! ছেলের বন্ধুকে কেউ আপনি করে বলে !

রাতের খাবারের পর মা নিকিতার সাথে আরও কিছু সময় গল্প করলো । তারপর আমার উপর দায়িত্ব পরলো ওকে বাসায় পৌছে দিয়ে আসার জন্য । রুম থেকে বের হতেই নিকিতা নিজের ওড়না বের করে সেটা মুখে পেঁচিয়ে নিল । যে কেউ ওকে দেখে ফেলতে পারে । তখন চিনে ফেললে ঝামেলা হয়ে যাবে । আমি কেবল ওর চোখের তাকিয়ে রইলাম । নিকিতা বলল

-কি দেখো !

-তোমাকে দেখছি । মাঝে মাঝে মনে হয় যে স্বপ্নে দেখছি ! এখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না ।

-হবে হবে ! আরও সময় যেতে দাও ! সব ঠিক হয়ে যাবে । দেখছো না তোমার আম্মুকে কিভাবে নিজের দলে নিয়ে এলাম !

-দেখলাম ! সত্যিই তোমার বুদ্ধির তারিফ না করে পারছি না । অবশ্য যেভাবে তুমি তোমার মন্ত্রনালয় চালাও তোমার অসম্ভব কিছু নেই ।

-তাহলেই বুঝো ! সাবধান !

আমি হেসে ফেললাম !

কথা বলতে বলতেই আমরা বাসার বাইরে চলে এলাম । দেখলাম সাথে সাথেই একটা গাড়ি এসে থামলো । নিকিতা দরজা খুলে উঠতে উঠতে বলল, উই হ্যাভ এ লং ওয়ে টু গো ! টেক কেয়ার !

নিকিতা গাড়িতে উঠে বসলো । আমি অনেকটা সময় ধরে ওর গাড়ির দিকে চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো । কেন জানি মনের ভেতরে আশ্চর্য রকম আনন্দ অনুভূতি হল আমার ! সত্যিই তাহলে হোম মিনিস্টারের প্রেমে পড়ে গেলাম !

পরের পর্ব

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 10

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →