করোনার দিন গুলোতে প্রেম

4.7
(46)

ফোনের আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার । যদিও ঘুমিয়েছি কিনা নিজও জানি না । খানিকটা তন্দ্রার মত এসেছে কেবল । বসে বসে কি আর ঘুমানো যায় ! ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি তানিন ফোন দিয়েছে ।
স্ক্রিনে ওর নাম দেখে খানিকটা চিন্তিত হয়ে উঠলাম । কোন কি সমস্যা হল? এতো রাতে আবার ফোন কেন করেছে ?

-হ্যালো?
-অপু । তুমি বাসায় যাও নি?
আমি কিছু সময় চুপ করে রইলাম । তারপর বললাম, না।
-কোথায় রয়েছো ?
-এই তো ওয়ার্ডের সামনে যে ফাঁকা জায়গাটা রয়েছে । ওখানে বসার কিছু চেয়ার রয়েছে । ওখানেই রয়েছি ।
ওপাশ থেকে কিছু সময় কোন কথা শোনা গেল না । কেন শোনা গেল না বুঝতে পারলাম একটু পরেই । দেখি ওয়ার্ডের দরজার কাছে তানিন এসে দাড়িয়েছে । হাতে স্যালাইনের সুই ফোটানো । সন্ধ্যার দিকে ডাক্তার স্যালাইন দিয়েছিলো । সেটা সম্ভবত শেষ হয়ে গেছে । আমি এগিয়ে গেলাম । তারপর বললাম, কিছু দরকার ছিল?
তানিন মাথা নাড়ালো । আমার দিকে এক ভাবে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো কেবল । মনে যেন তানিন চোখ ভর্তি জল এসেছে । তবে সেটা সে সামলানোর চেষ্টা করছে । তারপর বলল, তুমি বাসায় যাও নি কেন?
-এমনি । আমার সমস্যা হচ্ছে না । কদিন আগে আব্বাকে নিয়ে এসেছিলাম তো । তখন ছিলাম । আর তোমার সাথে তো কেউ নেই । আমি আছি !

এবার দেখলাম তানিনের চোখ গড়িয়ে জল বেরিয়ে এল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল, থ্যাঙ্কিউ ।
-মেনশন নট । এখন কেমন লাগছে ? শ্বাস কষ্ট আছে?
-একটু আছে তবে আগের থেকে কম ।
-ভাল লক্ষ্মন । এবার থেকে ভালর দিকে যাবে আশা করি । তুমি আর দাড়িয়ে থেকো না । বেডে গিয়ে শুয়ে পড় আর কিছু দরকার হলেই আমাকে ডাকবে । মনে থাকবে তো ?
-থাকবে।

এই বলে তানিন আবারও ওয়ার্ডের ভেতরে চলে গেল । তবে যাওয়ার সময় দেখলাম বারবার কেবল আমার দিকে ফিরে তাকাচ্ছিলো । ওর ফিরে ফিরে তাকানোটা আমার দেখতে ভাল লাগছিল। মনের ভেতরে একটা আনন্দ দিচ্ছিলো ।

তানিনকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। ওর করোনা পজেটিভ এসেছে । সেই সাথে অবস্থা একটু খারাপই হয়েছে । শ্বাস কষ্টটা বিশেষ করে । সমস্যা হচ্ছে এই মেয়েটার ঢাকাতে কেউ নেই । আর নিজে থাকে একটা বাসায় সাবলেট থাকে একটা রুম নিয়ে । ওর করোনা হয়েছে শুনেই তারাও তানিনকে আর বাসায় রাখতে চাচ্ছে না । তাদের বাসায় বৃদ্ধ বাবা মা রয়েছে । খুব একটা দোষ দেওয়া যায়ও না তাদের । শেষ উপায় না দেখে ও হাসপাতালে চলে এসেছে । কিন্তু হাসপাতাল এমন একটা জায়গা যে কারো মন দুর্বল করে দিবে । নিজে মনের কাছে মানুষ যতই শক্ত হোক না কেন অসুস্থ হয়ে যখন কেউ হাসপাতালে পড়ে থাকে তখন ইচ্ছে করে তাকে দেখা শুনার করার জন্য কেউ থাকুক ।

তাই আমি খবরটা শোনার সাথে সাথেই আমি চলে এসেছি হাসপতালে । এই সময়ে একজন মানুষ থাকা জরুরী তার পাশে । আমার বাবাকে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়ার পরে আমার নিজেরও করোনা হয়েছিলো । যদিও আমার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগে নি তবে শরীর খারাপ হয়েছিলো । তার ভেতরেও আমাকে নিজের কাজ নিজেই করতে হয়েছিলো । তখন আমি আসলে বুঝতে পেরেছিলাম যে একজন কাছের মানুষ থাকাটা কত জরুরী ।

হাসপাতালে কেটে গেল দুইটা দিন । এই দুইটা দিন সত্যিই বলতে আম হাসপাতাল থেকে নড়ি নি খুব একটা । সব সময়ই থেকেছি হাসপাতালে । একদিন তানিন আমাকে একটা ফোন ধরিয়ে দিয়ে বলল, একটু কথা বল তো ।
আমি বললাম, কে?
-আমার বাবা । কিছুতেই শুনতে চাচ্ছে না । বারবার আসতে চাচ্ছে । এই করোনার ভেতরে বাবা আসলে উপায় আছে ! প্লিজ একটু বুঝিয়ে বল ।

আমি ফোন ধরলাম । তারপর সালাম দিলাম । বললাম আঙ্কেল আপনি চিন্তা করবে না । আমি আছি ।
-তুমি বাবা ….
ফোনের ওপাশে কিছু একটা জিজ্ঞেস করতে গিয়েও যেন থেমে গেল । আমি বললাম, আঙ্কেল আপনি কোন চিন্তা করবেন না । আমি সব সময়ই হাসপাতালে রয়েছি । ওর যেটা যখন দরকার ব্যবস্থা করছি । আপনি মোটেও ভাববেন না যে তানিন একা একা পরে আছে এখানে । আর আপনার শুনেছি এজমা রয়েছে । দয়া করে এখন আসবেন না এখানে । আমি কথা দিচ্ছি তানিনের কিছু হবে না ।

যখন ফোনটা আমি ফেরৎ দিলাম দেখলাম তানিন আমার দিকে কেমন চোখে আবার তাকিয়ে রয়েছে । মেয়েটার চোখে একটা তীব্র কৃতজ্ঞতাবোধ লক্ষ্য করছি । সেই সাথে অন্য কিছু । এই অন্য কিছু আমি আগে ওর চোখে দেখি নি ।

তানিনের সাথে আমার পরিচয় আমাদের অফিসে । আমার সাথেই কাজ করে সে । টুকটাক কথা বার্তা থেকে পরিচয় । তবে আগে কোন ভাবেই ওর সাথে আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল না । কিন্তু তারপরেও ওর জন্য হাসপাতালে এসেছি । ঐ যে বললাম অসুস্থ অবস্থায় কারোই একা থাকাটা উচিৎ নয় ।

আমার স্থানে সায়েমের থাকার কথা হাসপাতালে । সায়েমও আমাদের সাথেই চাকরি করে । এবং আমি যতদুর জানি সায়েমের সাথে তানিনের কিছু একটা চলছে । প্রেমের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক না হলেও প্রেম প্রেম ভাব । আমি যদিও নিশ্চিত করে বলতে পারবো না তবে সম্ভবত তানিন সায়েমকে আসতে বলেছিলো কিন্তু করোনার ভয়ের কারণে সায়েম আসে নি । এখন এমন অবস্থা যে করোনা শুনলে স্বামী তার বউ কে ফেলে চলে যাচ্ছে । এমনই ভয় পেয়েছে সবাই । তবে আমার যেহেতু একবার এই রোগ হয়ে গেছে তাই খুব একটা ভয় আর নেই ।

এর মাঝে ওর বাবা ঢাকাতে চলেই এলেন । কোন ভাবেই শুনলেন না । তবে তানিন কোন ভাবেই তাকে ওয়ার্ডের ভেতরে ঢুকতে দিলো না । আমি নিজের তানিনের বাবাকে বাইরে থেকে মাস্ক গ্লোভস পরিয়ে উপরে নিয়ে গেলাম । তিনি সাথে করে খাবার সহ অনেক কিছু নিয়ে এসেছিলেন । সেগুলো আমি নিয়ে এলাম উপরে । ওয়ার্ডের বাইরে তানিন এল । কথা বার্তা চলল কিছু সময় ।
উনি রাতেই আবার ফিরে গেল । আমি এবার নিজে তাকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে এলাম । বাস ছাড়ার সময় আমি তাকে নিশ্চিত করে বললাম যে কোন প্রকার চিন্তা করার দরকর নেই । আমি আছি ওর কাছে । আমাকে দেখে এবং আমার কথা শুনে সম্ভবত তিনি মানসিক ভাবে একটু শান্তি পেলেন । তানিনকে যেন ঠিকঠাক মত দেখে রাখি সেই কথা বলে গেলেন । আর নিয়মিত আমার সাথে যোগাযোগ রাখবেন তিনি । যে কোন দরকারেই যেন আমি তাকে সব কিছু জানাই । যাওয়ার আগে আমার হাতে দুই হাজার টাকার দুটো নোট গুজে দিলেন । আমি কিছুতেই নিবো না । কিন্তু সে দিবেই । শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে নিতে হল ।

পুরো এক সপ্তাহ পরে তানিনকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে দিলো । তবে তখনও করোনা ওর ভেতর থেকে ঠিক ঠাক মত যায় নি । হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশ বেশি । তাই সিরিয়াস রোগী ছাড়া এরা রাখছে না । একটু স্টেবল হয়ে গেলেই বসলে বাসায় চলে যেতে ।

আমি ওকে বললাম, বাসায় যাওয়া কি ঠিক হবে ? আমার তো মনে হয় না । কারণ এখনও তোমার কাছ থেকে অন্য কারো ছড়াতে পারে !
তানিন বলল, তাহলে কি করবো? ঢাকার বাসায় যাওয়া যাবো না । গ্রামে তো যাওয়ার প্রশ্নই আসে না । কোন হোটেলে উঠবো?
-উহু ! যদি কিছু না মনে কর তাহলে আমার বাসায় যেতে পারো ।
-তোমার বাসা !
-হ্যা । একটু ছোট যদিও । তবে আশা করি সমস্যা হবে না । আর সপ্তাহ খানেক থাকলেই সুস্থ হয়ে যাবে !

তানিন আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার সমস্যা হবে না?
-আরে না । তোমার কোন সমস্যা না হলেই হল ! আসলে আমার বাসাটা হচ্ছে ছাদের উপরে । চিলোকোঠা টাইপ । চলবে ?

তানিনকে নিজের বাসায় নিয়ে এলাম । আসলে আমি ওর জন্য এতো কিছু কেন করছি সেটা আমি নিজেও জানি না । কোন কারণ নেই আবার হয়তো আছে ! পরের একটা সপ্তাহ সত্যিই বলতে সময় খুব চমৎকার কাটলো । সারাদিন টুকটাক গল্প করতাম আমরা । আমি যদি রান্না পারি ভাল তবে তানিনের রান্নার কাছে সেটা চুনোপুটি । আমাদের দিন কাটতো এমন ভাবে যে সকালে নাস্তা নিয়ে আসতাম বাইরে থেকে । দুপুরের আগে তানিন রান্না ঘরে যেত রান্না করতে । আমি হতাম তর এসিস্ট্যান্ট । এরপর দুপুরে এক সাথে খাওয়া বিকালে কফি । সন্ধ্যায় ছাদে এক সাথে বসে গল্প । রাতে খাওয়া এক সাথে । এই সময়ের ভেতরে আমি যেন ওকে আরও ভাল করে চিনতে আর জানতে পারলাম । ঠিক একই ভাবে ওকে নিজের কথা গুলো বেশ ভাল ভাবে বলতে পারছিলাম । এতো কথা যে আমি বলতে পারি সেটা জানতামই না ।
ফিরে যাওয়ার দিন তানিন বলল, আমার শরীর কবে খারাপ হবে ভাবছি ।
আমি খানিকটা অবাক হয়ে বললাম, মানে কি?
-না মানে তাহলে এতো চমৎকার ভাবে সময় কাটতো !
এই কথাটার অর্থ প্রথমে আমি ঠিক বুঝতে পারি নি । কিন্তু বুঝতে পারলাম একটু পরেই । এবং বুঝতে পারার সাথে সাথে মনের ভেতরে একটা আনন্দ অনুভব করলাম ।

দুই
করোনার পরে আবার যখন অফিসে যোগ দিলাম আমরা দুইজন তখন দুইটা ঘটনা ঘটলো । যেহেতু আমাদের দুইজনেরই কারোনা হয়ে গেছে, সামনের দুই চার মাস আর আমাদের করোনার হওয়ার সম্ভবনা কম তাই বাইরের সব কাজ সামলানোর দায়িত্ব পড়লো আমাদের । বাইরের যত কাজ কর্ম ছিল তাতে আমাদের দুইজনকে পাঠানো শুরু হল । ব্যাপারটা শুনতে খারাপ লাগলেও আসলে অতটা খারাপ লাগছিলো না মোটেও । ঢাকায় বাইরে বের হওয়াটা প্রধানত ঝামেলার কারন ঢাকাতে জ্যাম প্রচুর । কিন্তু করোনার কারণে বলতে গেলে মানুষ শহরে নেইই । রাস্তাঘাটা ফাঁকা । যাওয়া আসায় কোন সমস্যা নেই । তারপর আমরা যাওয়া আসা শুরু করলাম অফিসের গাড়িতে । চাইলেও কাজ শেষ করে আমরা এদিক ওদিক ঘুরে আসতাম । সময়টা বলতে গেলে খারাপ যাচ্ছিলো না মোটেও ।
আর দ্বিতীয় ঘটনাটা হল তানিনের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা দিনদিন বাড়তে লাগলো । এবং সেটা অফিসের সবার চোখে পড়তে লাগলো খুব প্রকট ভাবেই । যদিও এটা নিয়ে আমাদের কারোই খুব একটা সমস্যা ছিল না । এমন কি অফিসেরও কারো সমস্যা ছিল না । কেবল মাত্র একজন বাদে। সেই একজনটা হচ্ছে সায়েম । আমি কয়েকদিন লক্ষ্য করেছি সায়েম তানিনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে । তানিন ওকে এড়িয়ে গেছে । কথা বললেও অফিসের কথা বার্তা বাদ দিয়ে অন্য কিছু বলে নি ।

তানিনের সাথে কিছু করতে না পেরে সায়েম এবার এল আমার কাছে । ঘুরিয়ে ফিরিয়ে জানার চেষ্টা করলো আমার সাথে তানিনের কিছু চলছে কি না । আমি মনে মনে হাসলাম কেবল । আর এমন ভাবে উত্তরটা দিলাম যেন সায়েম একেবারে নিশ্চিত হয়ে যায় যে আমার সাথে কিছু যেন চলছেই । আমি ওকে নিজে কি বলবো আমি এখন নিজেই জানি না কিছু চলছে কিনা !

অবশ্য সেটার জন্য খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হল না । দুইদিন পর শুক্রবার ছিল । ছুটির দিনে আমি বেলা করেই ঘুমাই । ঘুমিয়েই ছিলাম । এমন সময় সকালে কলিং বেল বেজে উঠলো । ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলেই খানিকটা অবাক হয়ে গেলাম । তাকিয়ে দেখি হাতে বাজারের ব্যাগ নিয়ে তানিন দাড়িয়ে রয়েছে । আমি চোখ বড় বড় করার সময় পেলাম না তানিন ঘরের ভেতরে ঢুকে গেল । নিজেই রান্না ঘরের দিকে হাটা দিল । এমন একটা ব্যাপার যেন এটা আসলে ওরই বাড়ি । ও থাকে এখানে । সকালে গিয়েছিলো বাজার করতে । বাজার নিয়ে এসেছে ।

বাজারের ব্যাগের পাশে দেখলাম অন্য আরেকটা প্যাকেট রয়েছে । সেটা আলাদা করে ডাইনিং টেবিলে রেখে ব্যাগটা রান্না ঘরের দিকে নিয়ে গেল । আমি প্যাকেট খুলে দেখলাম সেখানে সকালের নাস্তা রয়েছে । রান্না ঘর থেকে বের হতে হতে তানিন বলল, যাও মুক ধুয়ে আসো । আগে নাস্তা করি । আজকে অনেক রান্নাবান্না রয়েছে ।

আমি মুখ ধুয়ে ফিরে আসতে আসতে দেখলাম তানিন প্লেটে নাস্তা রেডি করে ফেলেছে । আমি আসলে কিছু বুঝতে পারছিলাম না । তবে খুব বেশি কিছু বুঝতেও চাচ্ছিলাম না । যা হচ্ছে সব ভালই হচ্ছে ।

নাস্তা খেতে খেতে তানিন বলল, আমি বাড়িওয়ালাকে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়ে দিয়েছি ।
-তাই নাকি? কোন দিকে বাসা নিবে ?
-তোমার এলাকাতে ।
-গ্রেইট ।
-আসলে আমি অন্য কিছু ভাবছিলাম ।
-কি ভাবছিলে?
-তারপর আগে তোমার কিছু জানা দরকার ।
-বল।
-গতদিন দেখলাম সায়েম তোমার সাথে কথা বলছিলো !
-হুম ।
-আমার ব্যাপারে কি!
-খানিকটা । বলছিলো যে আমার তোমার ভেতরে কিছু চলছে কি না । তার সাথে তোমার একটা ভাল গুড রিলেশন আছে এই সব !

তানিন কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল, আসলে সায়েমের প্রতি এক সময়ে ইন্টারেস্টেড ছিলাম । তোমাকে আমি মিথ্যা বলব না । আমি ভেবেছিলাম যে ওকে হয়তো বিয়ে করা যায় ।
-তারপর?
-তারপর সেই সিদ্ধান্ত পাল্টেছি । কারণটা তুমি হয়তো গেস করতে পারো ।
-খানিকটা ।
-হ্যা এই পর্যন্তই সব কিছু । ওর সাথে মিশতাম । অন্য সবার সাথে যেমন মিশতাম এর বেশি কিছু না ।
-ওকে । এসব আমার বলার দরকার নেই । তুমি কার সাথে মিশবে এটা একান্তই তোমার ব্যাপার ।
-না । দরকার রয়েছে । আমি চাই তুমি এখন থেকে এসব ব্যাপারেও ইন্টারফিয়ার কর !
-মানে ?
তানিন একটু থাকলো । তারপর বলল, আমি ঠিক করেছি সামনের মাসে আমি তোমার এখানে মুভ ইন করবো ।
-কি?

আী পরোটা খাচ্ছিলাম । কিছু যেন গলায় আটকে গেল । তানিনই পানি এগিয়ে দিল । আমি সত্যিই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম । তানিন বলল, আমি বাবাকে তোমার কথা বলেছি এবং সে তোমাকে পছন্দ করেছে । আমি চাই আগে ছোট করে আমাদের বিয়ে হোক । তারপর আমাদের দুজনের চাকরিটা আরও ভাল পর্যায়ে গেলে অনুষ্ঠান করা যাবে ! কি বল তুমি?

আমি তখনও তাকিয়েি রয়েছে তানিনের দিকে । কি বলবো খুজে পাচ্ছি না । তানিন বলল, কিছু তো বল !
আমি বললাম, বিয়ে করতে পারি তবে একটা শর্ত আছে ।
-কী শর্ত?
-বাজার তুমি করবে । কেমন !
-ইস ! ঢং । বাজার ফাজার করতে পারবো না । আজকে করেছি বলে বিয়ের পরেও করবো নাকি !

দুই সপ্তাহ পরেই বিয়ে করে ফেলি আমরা । বাসায় অবশ্য বলছিলো একেবারে অনুষ্ঠান করতে । আমরা দুজনেই বলেছি যে আগে সময় হোক । তারপর অবশ্য তারা আর আপত্তি করে নি ।

করোনার দিন গুলোতে প্রেম শেষ পর্যন্ত পরিসমাপ্তির দিকে এগিয়েই গেল ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 46

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

One Comment on “করোনার দিন গুলোতে প্রেম”

  1. খুব খুব খুব পছন্দ হইছে। এত্তত্তত্তত্তত্তত্তত্তগুলা থ্যাংকিউ💛💛💛💛💛💛

Comments are closed.