মাই ডিয়ার হোম মিনিস্টার (পর্ব ০৬)

4.9
(9)

আমি সারা জীবন সহজ সরল ঝামেলাহীন সময় কাটিয়ে এসেছি । যে মানুষ গুলো আমার জীবনে ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করেছে তাদের কাছ থেকে আমি সব সময় দুরে থেকেছি । কিন্তু এই সময়ে এসে আমার জীবনে এমন এক ঝামেলা তৈরি হবে সেটা আমি কোন ভাবতেও পারি নি ।

নিকিতা আর রিদি এই দুই মেয়ে আমার জীবনে এমন ভাবে আসন নিয়ে বসতে শুরু করলো যে আমি কোন দিকে যাবো বুঝতে পারছিলাম না । আমি সত্যিই কোনদিন ভাবি নি যে রিদি আমার প্রতি এমন আগ্রহবোধ করবে । বিশেষ করে আমাদের বাসায় আসার পর থেকে সে এমন একটা ভাব করতে শুরু করলো যেন আমি তার সত্যিকারের প্রেমিক । তবে একটা কথা বলতেই হবে রিদির ভেতরে আমি কোন ছলনার ভাব দেখতে পেলাম না । সে যে সত্যিই আমার প্রতি আগ্রহী হয়েছে সেটাও আমার বুঝতে বাকি রইলো না । আমি যে তাকে কিছু বলবো সেটাও পারছিলাম না কারন রিদি আমার মায়ের সাথে যুক্ত ছিল । মা ওকে খুব বেশি পছন্দ করা শুরু করে দিয়েছে । আমি সত্যিই এই কারনে কিছু বলতেও পারছিলাম না ।

কয়েক দিনের মাঝে রিদিদের পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারের ভাব হয়ে গেল খুব বেশি । নিয়মিত দেখা সাক্ষাত দাওয়াত চলতে থাকলো । আমাদের মাঝেও দেখা হতে লাগলো । ক্যাম্পাস থেকে আমরা এক সাথেই আসতে লাগলাম বাসার দিকে । ওর যদি আগে ক্লাস শেষ হয়ে যেত আমার জন্য অপেক্ষা করতো ।

একদিন আমি জানতে পারলাম যে প্রতি সোমবারে ওর কোন ক্লাস থাকে না । তবুও ক্যাম্পাসে আসে । এক সাথে আমরা লাঞ্চ করি তারপর এক সাথে ফেরৎ যাই বাসার দিকে । আমার বাসাটা ওর থেকে খানিকটা দুরে । ওকে মাঝপথে নামিয়ে দিয়ে আমি বাসার পথে যাই । এই ঘটনা জানার পরে আমার আরও খারাপ লাগতে শুরু করলো । আমি কিভাবে ওকে নিকিতার কথা বলবো !

আজকে ক্যাম্পাস থেকে একটু আগে আগে বের হয়ে পড়লাম । রিদি আমার সাথেই ছিল । সিএনজিটা বসুন্ধরার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ করেই রিদি সিএনজি থামাতে বলল । আমি বললাম

-কেন ? এখানে কেন ?

-আরে চল তো ! আজকে বাসায় গিয়ে কোন কাজ নেই । চল মুভি দেখা যাক !

রিদি আমার কোন কথা শুনলো না । এক প্রকার জোর করেই আমাকে নিয়ে আট তলায় । আমরা মুভির টিকিট কেটে ঢুকে পড়লাম হলে । রিদি মুভি দেখছিলো আর টুকটাক কথা বলেই যাচ্ছিলো । আমি তাই করছিলাম । এমন সময় আমার ফোন কেঁপে উঠলো । ফোন নাম্বারটা দেখেই খানিকটা অস্বস্থি শুরু হল । নিকিতা ফোন দিয়েছে ।

একবার মনে হোল ফোনটা না ধরি । তারপর মনে হল না ধরতেই হবে । রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আওয়াজ পেলাম নিকিতার ।

-বাহ মুভি দেখা হচ্ছে ! চমৎকার !

অবাক হওয়ার কথা তবে অবাক হলাম না । আমি যে এই সময়ে এখানে আছি সেটা ও ঠিকই জানে । আমি কিছু বললাম না । চুপ করে রইলাম । নিকিতা বলল

-মুভি দেখছো দেখো কিছু বলছি না । তবে পপকর্ন নেওয়ার সময় ওর হাতের সাথে যেন হাত না লাগে ! আগে দুইবার স্পর্শ লেগেছে !

আমি এবার একটু চমকে গেলাম । তার মানে আমার উপর নিকিতার তীব্র চোখ রাখছে । আমি কি করি না করি সব । অবশ্য এটা হতেই পারে । পুরো পুলিশ যখন তার হাতে আমার পেছনে স্পাই লাগানো তার পক্ষে অসম্ভব কিছু না । আমি কোন মতে বললাম

-তুমি জানো এসব অনিচ্ছাকৃত ।

-হ্যা হ্যা বুঝেছি । তুমি তো সাধু পুরুষ ! এখন মুভি দেখো !

আমি ফোন রেখে দিলাম কিন্তু আর শান্তি পেলাম না । এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম । রিদি বলল

-কি ব্যাপার এদিক ওদিক কি দেখছো ?

-না কিছু না !

রিদি বলল

-তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে আমরা লুকিয়ে মুভিয়ে দেখতে এসেছি । কেউ দেখে ফেলবে এই ভয় পাচ্ছি !

আমি খানিকটা শুকনো হাসি হাসলাম । সত্যিই আমরা লুকিয়েই মুভি দেখতে এসেছি এমন একটা অনুভূতি হচ্ছে । তবে কেবল এটা জানি যে যতই লুকাই সে ঠিকই জেনে যাবে !

এই সমস্যা যখন তীব্র হতে যাচ্ছিলো তখনই হঠাৎ করেই সমাধান হয়ে গেল । হঠাৎ করেই লক্ষ্য করলাম যে রিদি আর আমার সাথে যোগাযোগ করছে না । ওর ফেসবুকে গিয়ে দেখি সেটা ডিএকটিভেট । মানে কিছুই বুঝতে পারলাম না । একদিন কৌতুহল নিয়ে ওর ডিপার্টমেন্টে গিয়ে খোজ নিলাম । অবাক হতে হল । সেখান থেকে আমাকে জানানো হল যে রিদি নাকি অস্ট্রেলিয়া চলে গেছে স্কলারশীপ নিয়ে ।

সেটা যেতেই পারে । ওর বাইরে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল সেটা জানতাম কিন্তু এই ভাবে আমাকে কিছু না জানিয়ে কিভাবে চলে গেল । বাসায় এসে মাকে বলতে মা যেন আকাশ থেকে পড়লো । ওদের বাসায় যোগাযোগ করলো । শেষে যা জানা গেল যে হুট করেই চলে যেতে হয়েছে । মা একটু একটু রেগে গিয়েছিলো । তার কথা হচ্ছে যাবে না কেন ? অবশ্যই যাবে । কিন্তু কদিনের ভেতরে যেখানে আমাদের বিয়ের কথা বার্তা চলছিলো তখন সেটা না শেষ করেই যেত । তখন ওদের বাসা থেকে জানালো যে রিদি এখন বিয়ের কথা ভাবছে না !

আমি খানিকটা স্বস্তি পেলাম তবে মা খুব চেঁচামিচি করলো । আমি মাকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম কিন্তু কাজ হল না । কিভাবে শান্ত করাবো সেটাও বুঝতে পারছিলাম না । এমন সময় বাসার কলিংবেল বেজে উঠলো । আমি মাকে রেখে দরজা খুলতে গেলাম । দরজা খুলতেই আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । নিকিতা দাড়িয়ে আছে । হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-কি খবর ?

-তুমি এখানে ?

-হ্যা ! আসলাম । অনেক দিন দেখা সাক্ষাত হয় না । আর তোমাকে একটা ঝামেলা থেকে মুক্ত করেছি । একটা পুরস্কার তো পেতেই পারি । তাই তোমার পরিবারের সাথে পরিচিত হতে এলাম !

আমি কেবল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলাম । এটা তো আমার মাথায় আসে নি । রিদির হঠাৎ করে স্কলারশীপ নিয়ে দেশের বাইরে চলে যাওয়ার পেছনে যে নিকিতার হাত থাকতে পারে সেটা তো আমার মাথায় আসে নি । কিন্তু এখন মাকে কি বলে পরিচয় করিয়ে দিবো ? অবশ্য মা নিকিতাকে চিনে কি না সেই বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে ।

দেখা যাক কি হয় ! আমি নিকিতাকে ঘরের ভেতরে নিয়ে এলাম !

পরের পর্ব

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.9 / 5. Vote count: 9

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

Comments are closed.