আমি সারা জীবন সহজ সরল ঝামেলাহীন সময় কাটিয়ে এসেছি । যে মানুষ গুলো আমার জীবনে ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করেছে তাদের কাছ থেকে আমি সব সময় দুরে থেকেছি । কিন্তু এই সময়ে এসে আমার জীবনে এমন এক ঝামেলা তৈরি হবে সেটা আমি কোন ভাবতেও পারি নি ।
নিকিতা আর রিদি এই দুই মেয়ে আমার জীবনে এমন ভাবে আসন নিয়ে বসতে শুরু করলো যে আমি কোন দিকে যাবো বুঝতে পারছিলাম না । আমি সত্যিই কোনদিন ভাবি নি যে রিদি আমার প্রতি এমন আগ্রহবোধ করবে । বিশেষ করে আমাদের বাসায় আসার পর থেকে সে এমন একটা ভাব করতে শুরু করলো যেন আমি তার সত্যিকারের প্রেমিক । তবে একটা কথা বলতেই হবে রিদির ভেতরে আমি কোন ছলনার ভাব দেখতে পেলাম না । সে যে সত্যিই আমার প্রতি আগ্রহী হয়েছে সেটাও আমার বুঝতে বাকি রইলো না । আমি যে তাকে কিছু বলবো সেটাও পারছিলাম না কারন রিদি আমার মায়ের সাথে যুক্ত ছিল । মা ওকে খুব বেশি পছন্দ করা শুরু করে দিয়েছে । আমি সত্যিই এই কারনে কিছু বলতেও পারছিলাম না ।
কয়েক দিনের মাঝে রিদিদের পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারের ভাব হয়ে গেল খুব বেশি । নিয়মিত দেখা সাক্ষাত দাওয়াত চলতে থাকলো । আমাদের মাঝেও দেখা হতে লাগলো । ক্যাম্পাস থেকে আমরা এক সাথেই আসতে লাগলাম বাসার দিকে । ওর যদি আগে ক্লাস শেষ হয়ে যেত আমার জন্য অপেক্ষা করতো ।
একদিন আমি জানতে পারলাম যে প্রতি সোমবারে ওর কোন ক্লাস থাকে না । তবুও ক্যাম্পাসে আসে । এক সাথে আমরা লাঞ্চ করি তারপর এক সাথে ফেরৎ যাই বাসার দিকে । আমার বাসাটা ওর থেকে খানিকটা দুরে । ওকে মাঝপথে নামিয়ে দিয়ে আমি বাসার পথে যাই । এই ঘটনা জানার পরে আমার আরও খারাপ লাগতে শুরু করলো । আমি কিভাবে ওকে নিকিতার কথা বলবো !
আজকে ক্যাম্পাস থেকে একটু আগে আগে বের হয়ে পড়লাম । রিদি আমার সাথেই ছিল । সিএনজিটা বসুন্ধরার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ করেই রিদি সিএনজি থামাতে বলল । আমি বললাম
-কেন ? এখানে কেন ?
-আরে চল তো ! আজকে বাসায় গিয়ে কোন কাজ নেই । চল মুভি দেখা যাক !
রিদি আমার কোন কথা শুনলো না । এক প্রকার জোর করেই আমাকে নিয়ে আট তলায় । আমরা মুভির টিকিট কেটে ঢুকে পড়লাম হলে । রিদি মুভি দেখছিলো আর টুকটাক কথা বলেই যাচ্ছিলো । আমি তাই করছিলাম । এমন সময় আমার ফোন কেঁপে উঠলো । ফোন নাম্বারটা দেখেই খানিকটা অস্বস্থি শুরু হল । নিকিতা ফোন দিয়েছে ।
একবার মনে হোল ফোনটা না ধরি । তারপর মনে হল না ধরতেই হবে । রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আওয়াজ পেলাম নিকিতার ।
-বাহ মুভি দেখা হচ্ছে ! চমৎকার !
অবাক হওয়ার কথা তবে অবাক হলাম না । আমি যে এই সময়ে এখানে আছি সেটা ও ঠিকই জানে । আমি কিছু বললাম না । চুপ করে রইলাম । নিকিতা বলল
-মুভি দেখছো দেখো কিছু বলছি না । তবে পপকর্ন নেওয়ার সময় ওর হাতের সাথে যেন হাত না লাগে ! আগে দুইবার স্পর্শ লেগেছে !
আমি এবার একটু চমকে গেলাম । তার মানে আমার উপর নিকিতার তীব্র চোখ রাখছে । আমি কি করি না করি সব । অবশ্য এটা হতেই পারে । পুরো পুলিশ যখন তার হাতে আমার পেছনে স্পাই লাগানো তার পক্ষে অসম্ভব কিছু না । আমি কোন মতে বললাম
-তুমি জানো এসব অনিচ্ছাকৃত ।
-হ্যা হ্যা বুঝেছি । তুমি তো সাধু পুরুষ ! এখন মুভি দেখো !
আমি ফোন রেখে দিলাম কিন্তু আর শান্তি পেলাম না । এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম । রিদি বলল
-কি ব্যাপার এদিক ওদিক কি দেখছো ?
-না কিছু না !
রিদি বলল
-তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে আমরা লুকিয়ে মুভিয়ে দেখতে এসেছি । কেউ দেখে ফেলবে এই ভয় পাচ্ছি !
আমি খানিকটা শুকনো হাসি হাসলাম । সত্যিই আমরা লুকিয়েই মুভি দেখতে এসেছি এমন একটা অনুভূতি হচ্ছে । তবে কেবল এটা জানি যে যতই লুকাই সে ঠিকই জেনে যাবে !
এই সমস্যা যখন তীব্র হতে যাচ্ছিলো তখনই হঠাৎ করেই সমাধান হয়ে গেল । হঠাৎ করেই লক্ষ্য করলাম যে রিদি আর আমার সাথে যোগাযোগ করছে না । ওর ফেসবুকে গিয়ে দেখি সেটা ডিএকটিভেট । মানে কিছুই বুঝতে পারলাম না । একদিন কৌতুহল নিয়ে ওর ডিপার্টমেন্টে গিয়ে খোজ নিলাম । অবাক হতে হল । সেখান থেকে আমাকে জানানো হল যে রিদি নাকি অস্ট্রেলিয়া চলে গেছে স্কলারশীপ নিয়ে ।
সেটা যেতেই পারে । ওর বাইরে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল সেটা জানতাম কিন্তু এই ভাবে আমাকে কিছু না জানিয়ে কিভাবে চলে গেল । বাসায় এসে মাকে বলতে মা যেন আকাশ থেকে পড়লো । ওদের বাসায় যোগাযোগ করলো । শেষে যা জানা গেল যে হুট করেই চলে যেতে হয়েছে । মা একটু একটু রেগে গিয়েছিলো । তার কথা হচ্ছে যাবে না কেন ? অবশ্যই যাবে । কিন্তু কদিনের ভেতরে যেখানে আমাদের বিয়ের কথা বার্তা চলছিলো তখন সেটা না শেষ করেই যেত । তখন ওদের বাসা থেকে জানালো যে রিদি এখন বিয়ের কথা ভাবছে না !
আমি খানিকটা স্বস্তি পেলাম তবে মা খুব চেঁচামিচি করলো । আমি মাকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম কিন্তু কাজ হল না । কিভাবে শান্ত করাবো সেটাও বুঝতে পারছিলাম না । এমন সময় বাসার কলিংবেল বেজে উঠলো । আমি মাকে রেখে দরজা খুলতে গেলাম । দরজা খুলতেই আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । নিকিতা দাড়িয়ে আছে । হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কি খবর ?
-তুমি এখানে ?
-হ্যা ! আসলাম । অনেক দিন দেখা সাক্ষাত হয় না । আর তোমাকে একটা ঝামেলা থেকে মুক্ত করেছি । একটা পুরস্কার তো পেতেই পারি । তাই তোমার পরিবারের সাথে পরিচিত হতে এলাম !
আমি কেবল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলাম । এটা তো আমার মাথায় আসে নি । রিদির হঠাৎ করে স্কলারশীপ নিয়ে দেশের বাইরে চলে যাওয়ার পেছনে যে নিকিতার হাত থাকতে পারে সেটা তো আমার মাথায় আসে নি । কিন্তু এখন মাকে কি বলে পরিচয় করিয়ে দিবো ? অবশ্য মা নিকিতাকে চিনে কি না সেই বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে ।
দেখা যাক কি হয় ! আমি নিকিতাকে ঘরের ভেতরে নিয়ে এলাম !
Discover more from অপু তানভীর
Subscribe to get the latest posts sent to your email.
Comments are closed.