মাই ডিয়ার হোম মিনিস্টার (পর্ব ০৫)

5
(8)

ক্যাম্পাস থেকে বাসায় যাওয়ার সময়ে আমি কেবল নিকিতার কথা ভাবছিলাম । কদিনের ভেতরে আমার সাথে কি হয়ে গেল । গত কয়েক দিন আগেও প্রবল ক্ষমতাধর ছাত্র নেতা কিভাবে আজকে আমার সামনে কাচুমুচু হয়ে দাড়িয়ে ছিল । ক্ষমতার বুঝি এই দাপট ! আমি নিজেও এখন সেটা টের পাচ্ছি । নিজেকে অন্য রকম লাগছে ।

বাসার কলিংবের চাপতে যাবো তখনই মনে হল ভেতরে পরিবেশ ঠিক স্বাভাবিক না । আমাদের বাসার মানুষ বলতে তিনজন । আমি বাবা আর মা । বাবা সব সময় বই নিয়েই সময় কাটান । আর মা নিজের কাজ বাদ দিয়ে টিভি দেখেন, নামাজ পড়েন । কথা বার্তা হলেও এতো জোরে আড্ডা টাইপের কথা বার্তা হয় না । তাহলে বাসায় কে এল ?

আগে থেকে কেউ আসলে হয়তো আমি জানতাম । আমাকে না জানিয়ে চলে এসেছে ?

এই রকম আত্মীয় কিংবা বন্ধুবান্ধব খুব একটা নেই আমাদের এখানে ?

আমি দ্বিধা নিয়েই কলিংবের চাপলাম । প্রায় সাথে সাথেই দরজা খুলে গেল । দরজার সামনে যাকে দেখতে পেলাম তাকে আমি এই সময়ে মোটেই আশা করি নি । এই মেয়ে এখানে কি করছে ?

আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের লেকচারার রিদি হক !

মেয়েটাকে আমি খুব ভাল করে চিনি । আমরা একই সাথে এবং একই দিনে ক্যাম্পাসে জয়েন করেছিলাম । সত্যি বলতে কি নিকিতার সাথে পরিচয় হওয়ার আগে মেয়েটার সাথে আমি টুকটাক কথা বলতাম । ক্যাম্পাসের ক্যান্টিনে কয়েকবার আমরা এক সাথে চাও খেয়েছি । তাকে খানিকটা বোঝানোর চেষ্টাও করেছি যে আমি তার প্রতি আগ্রহী । সে যদি সবুজ বাতি দেয় তাহলে তার বাসায় আমি কথা বলতে পারি ।

অবশ্য মুখ ফুটে আমি কিছু বলি নি । লজ্জার কারনে বলতেও পারি নি ।

আমি রিদিকে দেখে বললাম

-আপনি ?

রিদি হাসলো । তারপর বলল

-হ্যা । এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম ভাবলাম আপনার সাথে একটু দেখা করে যাই । আসুন আমার বাবা মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই ।

আমি খানিকটা দ্বিধান্বিত দাড়িয়ে রইলাম । রিদির কথা আমি মাকে বলেছিলাম । মা যখন আমার বিয়ের জন্য পাগল হয়ে পরেছিলো আমি তাকে বলেছিলাম যে আমাদের ক্যাম্পাসের একটা লেকচারারকে আমি পছন্দ করি । সে যদি রাজি হয় তাহলে তুমি কথা বলতে বলতে পারো ।

রিদি খুব স্বাভাবিক ভাবে ওর বাবা মায়ের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিল । সবার দিকে তাকিয়ে মনে হল এই ঘরের ভেতরে কেবল আমিই অস্বাভবিক । ঠিক যেন মেনে নিতে পারছি না কিংবা খাপ খাওয়াতে পারছি না নিজেকে ।

আমি কোন মতে বললাম

-আমি ফ্রেস হয়ে আসি !

বাবা বলল

-হ্যা যা । আজকে সবাই মিলে ভাল করে আড্ডা দেওয়া যাবে । তোর সাথে এখানে চলে আসার পরে তো মন খুলে কারো সাথে ঠিক মত কথা বলতে পারি না ।

তারপর রিদির বাবার সাতে গল্প জুড়ে দিলেন । দেখলাম রিদির মা মায়ের সাথে রান্না ঘরের দিকে চলে গেল । আমি নিজের ঘরের দিকে দ্রুত রওয়ানা দিলাম । আসলে কি হচ্ছে বুঝতে পারছিলাম না । এই মেয়ে ঠিক মত আমার দিকে তখন আগ্রহ দেখায় নি । আমার কাছে তখন কেবল মনে হয়েছে ভদ্রতার খাতিরে আমাকে তখন না বলে নি । কিন্তু আজকে একেবারে নিজের বাবা মাকে নিয়ে হাজির হয়েছে আমার বাসাতে !

ওয়াশরুমে বসে আমি নিকিতার কথা ভাবতে লাগলাম । এই ব্যাপারটা আমি নিকিতাকে কিভাবে বলবো ?

ঐদিন অবশ্য বিয়ের কথা বার্তা হল না । তবে রিদির বাবা মায়ের আচরনে এটা পরিস্কার হয়ে গেল যে আমাকে তাদের পছন্দ হয়েছে । এমন ছিমছাপ পরিবারে তারা তাদের মেয়ের বিয়ে দিতে ইচ্ছুক । অন্য দিকে আমার মায়ের ভাব ভঙ্গি দেখে মনে হল যে সে রিদিকে নিজের পুত্রবধু হিসাবে একেবারে বরন করেই নিয়েছেন ।

পরদিন ক্যাম্পাসে রিদি আমার অফিস রুমে এসে হাজির হল । এমন ভঙ্গিতে কথা বলতে লাগলো যেন আমরা কতদিনের প্রেমিক প্রেমিকা । আমি চুপচাপ ভাবতে লাগলাম এখন আমি কি করবো ? এই ব্যাপারটা নিকিতাকে কিভাবে জানাবো ? আর আমি যদি না জানাই তাহলে ও ঠিক ঠিক কোন না কোন ভাবে জেনেই যাবে । আর অন্য কারো কাছ থেকে জানতে কি হবে সেটা আমার বুঝতে বাকি রইলো না ।

আমার মনের কথা মনেই রয়ে গেল । পিয়ন এসে বসে বলল যে একজন মেয়ে আমার সাথে দেখা করতে চায় । আমি বললাম

-নাম কি ?

পিয়ন বলল

-নাম বলছে নিকিতা । আর বলেছে নাম বললেই হবে ।

আমার চোখ কপালে উঠলো । নিকিতা যদি এই ক্যাম্পাসে আসে তাহলে চারিদিকে হুলস্হুল পড়ে যাবে । কিন্তু সে রকম তো কিছু হয় নি । তাহলে কি অন্য কোন নিকিতা ?

এমনিতেও এক নিকিতা নিয়ে আমি ঠিক শান্তিতে নেই, এ আবার কোন নিকিতা ?

আমি বললাম আচ্ছা পাঠাও ভেতরে ।

রিদি আমর সামনেই বসেছিল । ঠিক সেই সময়ে আমি দরজাতে একটা মেয়েকে দেখলাম । সে যে নিকিতা আহমেদই সেটা বুঝতে আমার মোটেই কষ্ট হল না । নিকিতা একটা সেলোয়ার কামিজের পরে এসেছে । তবে ওড়না দিয়ে নিজের চেহারা খুব করে ঢেকে এসেছে । কেবল চোখ ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না । নিশ্চয়ই কোন কিসিউরিটি নিয়ে আসে নি । কেউ জানেও না । আর কেউ ভাবতেও পারবে না হোম মিনিস্টার এই ভাবে কারো সাথে দেখা করতে আসতে পারে ।

আমার থেকে রিদিকে বসে থাকতে দেখে ও খানিকটা সরু চোখ তাকালো । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-আপনি ব্যস্ত থাকলে আমি পরে আসি ?

আমি কোন মতে বললাম,

-না না ঠিক আছে । আমি ঠিক ব্যস্ত না । রিদি ম্যাডান আমার পরিচিত । এমনি কথা বলছিলাম ।

রিদির দিকে তাকিয়ে বললাম

-আমি খুবই দুঃখিত । আসলে ওনার সাথে এপোয়েন্টমেন্ট ছিল আমার । আমি ভুলে গিয়েছিলাম ।

রিদি হাসলো তারপর আবার কবে দেখা হবে সেটা বলে বেরিয়ে গেল । যাওয়ার আগে বলে গেল যে আবারো সে এবং তারপর পরিবার বাসায় আসবে আমাদের ।

রিদি চলে যেতেই নিকিতা এসে বসলো আমার সামনে ! তারপর বলল

-এই মেয়ে কি বলে গেল ?

-আসলে ….

-কি আসলে ? বল বল বল !

আমার কাছে মনে হল সব স্বীকার করে নেওয়াই ভাল । আমি শুরু থেকে সব বললাম । নিকিতা গম্ভীর হয়ে শুনলো । তারপর বলল

-এই কথা আমাকে কাল বলা যাই নি ?

-আসলে আমি বলতে সাহস হয় নি । দেখ আমি ভাবতেই পারি নি । ওকেও দোষ দেওয়া যায় না । তোমার সাথে পরিচয় হওয়ার আগে আমি রিদির প্রতি খানিকটা আগ্রহী ছিলাম । ঠিক প্রেম ভালবাসা না । মা বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলো তাই …

-ও আমিই আসলে উড়ে এসে জুড়ে বসেছি । থাক আর কি আমি চলে যাই । ঝামেলা চলে যাক !

এই বলেই নিকিতা উঠে দাড়ালো । তারপর ঘুরে হাটা দিল । আমার কি করা দরকার ঠিক বুঝলাম না । আমি নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালাম । তারপর এক প্রকার দৌড়েই ওর কাছে চলে গেলাম । ততক্ষনে ও প্রায় দরজার কাছে চলে গেছে । আমি খুব সাহস করে ওর হাত চেপে ধরলাম । তারপর ওকে টান দিয়ে রুমে ঢুকালাম ।

দেখলাম নিকিতা এবার জোর করলো না ।

নিকিতা বলল

-কাল কেন তোমার বাবা মা কে বলতে পারো নি এ কথা ?

-প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা কর !

-আমি তোমার জন্য আামর পুরো রাজনৈতিক ক্যারিয়ার রিস্কের ভেতরে ফেলতে পারছি এমন কি আজকে এভাবে এসেছি জানলে কি হবে বুঝতে পারছো ? আর তুমি সামান্য এই কথাটা বলতে পারো নি ?

-আই এম সরি ! প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা কর !

নিকিতাকে আবারও চেহারে বসালাম । তারপর ওর পাশে বসে ওকে বোঝাতে লাগলাম । একে মেয়ে তার উপর হোম মিনিস্টার, এই মেয়েকে কি সহজে কিছু বুঝানো যায় ! তবে একটা পর্যায়ে সে বুঝলো খানিকটা । তারপর বলল

-ঠিক আছে বুঝলাম এই পরিস্থিতির জন্য তুমি দায়ী না । তবুও এটা সমাধান করার দায়িত্ব তোমার । আমি কিছু জানি না । বাসায় জানাবা তুমি ! ঠিক আছে ?

-আচ্ছা !

যদিও বললাম আচ্ছা ঠিক বুঝতে পারলাম না আসলে আমি কিভাবে জানাবো এই কথা ? মাকে গিয়ে বলবো যে শুনো এখন আর ঐ লেডি লেকচারারকে পছন্দ না । আমি এখন দেশের হোম মিনিস্টার কে বিয়ে করতে চাই । আমার মা শুরু থেকে রাজনীতি একদম পছন্দ করে না । তার ধারনা এর সাথে যুক্ত সবাই খারাপ । এদের থেকে দুরে থাকতে হবে । কোন রাজনৈতিকের মেয়ে হলেও মা রাজি হবে কি না সন্দেহ আছে । সেখানে স্বয়ং হোম মিনিস্টার শুনলে মায়ের মনভাব কেমন হবে আমি বলতে পারছি না !

আমি নিকিতাকে বললাম

-সে সব না হয় বুঝলাম কিন্তু তুমি এভাবে কেন এসেছো ? যদি কেউ দেখে ফেলতো ?

নিকিতা এবার হাসলো । এতো সময়ে পরে তার মুখের গাম্ভীর্য ভাব চলে গিয়ে হাসতে দেখলাম । বলল

-কি করবো তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো । তাই খানিকটা রিস্ক নিয়ে চলে এলাম । কেউ টের পায় নি । কেউ আসলে ভাবতেও পারে নি আমি এভবে বের হতে পারি !

-তাই তো দেখছি ।

-আচ্ছা আমাকে এখন যেতে হবে । রাতে কথা হবে । তুমি কি করলে আমাকে জানাবে !

-আচ্ছা !

নিকিতা আমার হাত ছেড়ে দিলো । এতো সময়ে ধরে আমি ওর হাত ধরে বসে ছিলাম সেটা আমি নিজেও টের পায় নি । ওকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম । হাটার সময় আবারও সেই ছাত্রনেতাকে দেখতে পেলাম । আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি মনে মনে হাসলাম । এই ছেলে যদি জানতে পারতো আমার পাশের মেয়েটা কে তাহলে এখন কি করতো কে জানে ! যাক সেটা এখন চিন্তার ব্যাপার না । চিন্তার ব্যাপার হচ্ছে বাসায় কিভাবে জানাবো এই কথা !

পরের পর্ব

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 5 / 5. Vote count: 8

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

Comments are closed.