মাই ডিয়ার হোম মিনিস্টার (পর্ব ০৫)

5
(9)

ক্যাম্পাস থেকে বাসায় যাওয়ার সময়ে আমি কেবল নিকিতার কথা ভাবছিলাম । কদিনের ভেতরে আমার সাথে কি হয়ে গেল । গত কয়েক দিন আগেও প্রবল ক্ষমতাধর ছাত্র নেতা কিভাবে আজকে আমার সামনে কাচুমুচু হয়ে দাড়িয়ে ছিল । ক্ষমতার বুঝি এই দাপট ! আমি নিজেও এখন সেটা টের পাচ্ছি । নিজেকে অন্য রকম লাগছে ।

বাসার কলিংবের চাপতে যাবো তখনই মনে হল ভেতরে পরিবেশ ঠিক স্বাভাবিক না । আমাদের বাসার মানুষ বলতে তিনজন । আমি বাবা আর মা । বাবা সব সময় বই নিয়েই সময় কাটান । আর মা নিজের কাজ বাদ দিয়ে টিভি দেখেন, নামাজ পড়েন । কথা বার্তা হলেও এতো জোরে আড্ডা টাইপের কথা বার্তা হয় না । তাহলে বাসায় কে এল ?

আগে থেকে কেউ আসলে হয়তো আমি জানতাম । আমাকে না জানিয়ে চলে এসেছে ?

এই রকম আত্মীয় কিংবা বন্ধুবান্ধব খুব একটা নেই আমাদের এখানে ?

আমি দ্বিধা নিয়েই কলিংবের চাপলাম । প্রায় সাথে সাথেই দরজা খুলে গেল । দরজার সামনে যাকে দেখতে পেলাম তাকে আমি এই সময়ে মোটেই আশা করি নি । এই মেয়ে এখানে কি করছে ?

আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের লেকচারার রিদি হক !

মেয়েটাকে আমি খুব ভাল করে চিনি । আমরা একই সাথে এবং একই দিনে ক্যাম্পাসে জয়েন করেছিলাম । সত্যি বলতে কি নিকিতার সাথে পরিচয় হওয়ার আগে মেয়েটার সাথে আমি টুকটাক কথা বলতাম । ক্যাম্পাসের ক্যান্টিনে কয়েকবার আমরা এক সাথে চাও খেয়েছি । তাকে খানিকটা বোঝানোর চেষ্টাও করেছি যে আমি তার প্রতি আগ্রহী । সে যদি সবুজ বাতি দেয় তাহলে তার বাসায় আমি কথা বলতে পারি ।

অবশ্য মুখ ফুটে আমি কিছু বলি নি । লজ্জার কারনে বলতেও পারি নি ।

আমি রিদিকে দেখে বললাম

-আপনি ?

রিদি হাসলো । তারপর বলল

-হ্যা । এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম ভাবলাম আপনার সাথে একটু দেখা করে যাই । আসুন আমার বাবা মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই ।

আমি খানিকটা দ্বিধান্বিত দাড়িয়ে রইলাম । রিদির কথা আমি মাকে বলেছিলাম । মা যখন আমার বিয়ের জন্য পাগল হয়ে পরেছিলো আমি তাকে বলেছিলাম যে আমাদের ক্যাম্পাসের একটা লেকচারারকে আমি পছন্দ করি । সে যদি রাজি হয় তাহলে তুমি কথা বলতে বলতে পারো ।

রিদি খুব স্বাভাবিক ভাবে ওর বাবা মায়ের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিল । সবার দিকে তাকিয়ে মনে হল এই ঘরের ভেতরে কেবল আমিই অস্বাভবিক । ঠিক যেন মেনে নিতে পারছি না কিংবা খাপ খাওয়াতে পারছি না নিজেকে ।

আমি কোন মতে বললাম

-আমি ফ্রেস হয়ে আসি !

বাবা বলল

-হ্যা যা । আজকে সবাই মিলে ভাল করে আড্ডা দেওয়া যাবে । তোর সাথে এখানে চলে আসার পরে তো মন খুলে কারো সাথে ঠিক মত কথা বলতে পারি না ।

তারপর রিদির বাবার সাতে গল্প জুড়ে দিলেন । দেখলাম রিদির মা মায়ের সাথে রান্না ঘরের দিকে চলে গেল । আমি নিজের ঘরের দিকে দ্রুত রওয়ানা দিলাম । আসলে কি হচ্ছে বুঝতে পারছিলাম না । এই মেয়ে ঠিক মত আমার দিকে তখন আগ্রহ দেখায় নি । আমার কাছে তখন কেবল মনে হয়েছে ভদ্রতার খাতিরে আমাকে তখন না বলে নি । কিন্তু আজকে একেবারে নিজের বাবা মাকে নিয়ে হাজির হয়েছে আমার বাসাতে !

ওয়াশরুমে বসে আমি নিকিতার কথা ভাবতে লাগলাম । এই ব্যাপারটা আমি নিকিতাকে কিভাবে বলবো ?

ঐদিন অবশ্য বিয়ের কথা বার্তা হল না । তবে রিদির বাবা মায়ের আচরনে এটা পরিস্কার হয়ে গেল যে আমাকে তাদের পছন্দ হয়েছে । এমন ছিমছাপ পরিবারে তারা তাদের মেয়ের বিয়ে দিতে ইচ্ছুক । অন্য দিকে আমার মায়ের ভাব ভঙ্গি দেখে মনে হল যে সে রিদিকে নিজের পুত্রবধু হিসাবে একেবারে বরন করেই নিয়েছেন ।

পরদিন ক্যাম্পাসে রিদি আমার অফিস রুমে এসে হাজির হল । এমন ভঙ্গিতে কথা বলতে লাগলো যেন আমরা কতদিনের প্রেমিক প্রেমিকা । আমি চুপচাপ ভাবতে লাগলাম এখন আমি কি করবো ? এই ব্যাপারটা নিকিতাকে কিভাবে জানাবো ? আর আমি যদি না জানাই তাহলে ও ঠিক ঠিক কোন না কোন ভাবে জেনেই যাবে । আর অন্য কারো কাছ থেকে জানতে কি হবে সেটা আমার বুঝতে বাকি রইলো না ।

আমার মনের কথা মনেই রয়ে গেল । পিয়ন এসে বসে বলল যে একজন মেয়ে আমার সাথে দেখা করতে চায় । আমি বললাম

-নাম কি ?

পিয়ন বলল

-নাম বলছে নিকিতা । আর বলেছে নাম বললেই হবে ।

আমার চোখ কপালে উঠলো । নিকিতা যদি এই ক্যাম্পাসে আসে তাহলে চারিদিকে হুলস্হুল পড়ে যাবে । কিন্তু সে রকম তো কিছু হয় নি । তাহলে কি অন্য কোন নিকিতা ?

এমনিতেও এক নিকিতা নিয়ে আমি ঠিক শান্তিতে নেই, এ আবার কোন নিকিতা ?

আমি বললাম আচ্ছা পাঠাও ভেতরে ।

রিদি আমর সামনেই বসেছিল । ঠিক সেই সময়ে আমি দরজাতে একটা মেয়েকে দেখলাম । সে যে নিকিতা আহমেদই সেটা বুঝতে আমার মোটেই কষ্ট হল না । নিকিতা একটা সেলোয়ার কামিজের পরে এসেছে । তবে ওড়না দিয়ে নিজের চেহারা খুব করে ঢেকে এসেছে । কেবল চোখ ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না । নিশ্চয়ই কোন কিসিউরিটি নিয়ে আসে নি । কেউ জানেও না । আর কেউ ভাবতেও পারবে না হোম মিনিস্টার এই ভাবে কারো সাথে দেখা করতে আসতে পারে ।

আমার থেকে রিদিকে বসে থাকতে দেখে ও খানিকটা সরু চোখ তাকালো । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-আপনি ব্যস্ত থাকলে আমি পরে আসি ?

আমি কোন মতে বললাম,

-না না ঠিক আছে । আমি ঠিক ব্যস্ত না । রিদি ম্যাডান আমার পরিচিত । এমনি কথা বলছিলাম ।

রিদির দিকে তাকিয়ে বললাম

-আমি খুবই দুঃখিত । আসলে ওনার সাথে এপোয়েন্টমেন্ট ছিল আমার । আমি ভুলে গিয়েছিলাম ।

রিদি হাসলো তারপর আবার কবে দেখা হবে সেটা বলে বেরিয়ে গেল । যাওয়ার আগে বলে গেল যে আবারো সে এবং তারপর পরিবার বাসায় আসবে আমাদের ।

রিদি চলে যেতেই নিকিতা এসে বসলো আমার সামনে ! তারপর বলল

-এই মেয়ে কি বলে গেল ?

-আসলে ….

-কি আসলে ? বল বল বল !

আমার কাছে মনে হল সব স্বীকার করে নেওয়াই ভাল । আমি শুরু থেকে সব বললাম । নিকিতা গম্ভীর হয়ে শুনলো । তারপর বলল

-এই কথা আমাকে কাল বলা যাই নি ?

-আসলে আমি বলতে সাহস হয় নি । দেখ আমি ভাবতেই পারি নি । ওকেও দোষ দেওয়া যায় না । তোমার সাথে পরিচয় হওয়ার আগে আমি রিদির প্রতি খানিকটা আগ্রহী ছিলাম । ঠিক প্রেম ভালবাসা না । মা বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলো তাই …

-ও আমিই আসলে উড়ে এসে জুড়ে বসেছি । থাক আর কি আমি চলে যাই । ঝামেলা চলে যাক !

এই বলেই নিকিতা উঠে দাড়ালো । তারপর ঘুরে হাটা দিল । আমার কি করা দরকার ঠিক বুঝলাম না । আমি নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালাম । তারপর এক প্রকার দৌড়েই ওর কাছে চলে গেলাম । ততক্ষনে ও প্রায় দরজার কাছে চলে গেছে । আমি খুব সাহস করে ওর হাত চেপে ধরলাম । তারপর ওকে টান দিয়ে রুমে ঢুকালাম ।

দেখলাম নিকিতা এবার জোর করলো না ।

নিকিতা বলল

-কাল কেন তোমার বাবা মা কে বলতে পারো নি এ কথা ?

-প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা কর !

-আমি তোমার জন্য আামর পুরো রাজনৈতিক ক্যারিয়ার রিস্কের ভেতরে ফেলতে পারছি এমন কি আজকে এভাবে এসেছি জানলে কি হবে বুঝতে পারছো ? আর তুমি সামান্য এই কথাটা বলতে পারো নি ?

-আই এম সরি ! প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা কর !

নিকিতাকে আবারও চেহারে বসালাম । তারপর ওর পাশে বসে ওকে বোঝাতে লাগলাম । একে মেয়ে তার উপর হোম মিনিস্টার, এই মেয়েকে কি সহজে কিছু বুঝানো যায় ! তবে একটা পর্যায়ে সে বুঝলো খানিকটা । তারপর বলল

-ঠিক আছে বুঝলাম এই পরিস্থিতির জন্য তুমি দায়ী না । তবুও এটা সমাধান করার দায়িত্ব তোমার । আমি কিছু জানি না । বাসায় জানাবা তুমি ! ঠিক আছে ?

-আচ্ছা !

যদিও বললাম আচ্ছা ঠিক বুঝতে পারলাম না আসলে আমি কিভাবে জানাবো এই কথা ? মাকে গিয়ে বলবো যে শুনো এখন আর ঐ লেডি লেকচারারকে পছন্দ না । আমি এখন দেশের হোম মিনিস্টার কে বিয়ে করতে চাই । আমার মা শুরু থেকে রাজনীতি একদম পছন্দ করে না । তার ধারনা এর সাথে যুক্ত সবাই খারাপ । এদের থেকে দুরে থাকতে হবে । কোন রাজনৈতিকের মেয়ে হলেও মা রাজি হবে কি না সন্দেহ আছে । সেখানে স্বয়ং হোম মিনিস্টার শুনলে মায়ের মনভাব কেমন হবে আমি বলতে পারছি না !

আমি নিকিতাকে বললাম

-সে সব না হয় বুঝলাম কিন্তু তুমি এভাবে কেন এসেছো ? যদি কেউ দেখে ফেলতো ?

নিকিতা এবার হাসলো । এতো সময়ে পরে তার মুখের গাম্ভীর্য ভাব চলে গিয়ে হাসতে দেখলাম । বলল

-কি করবো তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো । তাই খানিকটা রিস্ক নিয়ে চলে এলাম । কেউ টের পায় নি । কেউ আসলে ভাবতেও পারে নি আমি এভবে বের হতে পারি !

-তাই তো দেখছি ।

-আচ্ছা আমাকে এখন যেতে হবে । রাতে কথা হবে । তুমি কি করলে আমাকে জানাবে !

-আচ্ছা !

নিকিতা আমার হাত ছেড়ে দিলো । এতো সময়ে ধরে আমি ওর হাত ধরে বসে ছিলাম সেটা আমি নিজেও টের পায় নি । ওকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম । হাটার সময় আবারও সেই ছাত্রনেতাকে দেখতে পেলাম । আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি মনে মনে হাসলাম । এই ছেলে যদি জানতে পারতো আমার পাশের মেয়েটা কে তাহলে এখন কি করতো কে জানে ! যাক সেটা এখন চিন্তার ব্যাপার না । চিন্তার ব্যাপার হচ্ছে বাসায় কিভাবে জানাবো এই কথা !

পরের পর্ব

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 5 / 5. Vote count: 9

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

Comments are closed.