সাত
মিয়ারা কিছু সময় দাড়িয়ে রইলো দরজাটার কাছে । এখনও ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সে ভেতরে ঢুকবে কিনা । একবার মনে হচ্ছে ফিরে যায় আবার মনে হচ্ছে তার সাথে কয়েকটা কথা বলে । বিশেষ করে গতকাল তার মায়ের মুখের কথা গুলো কানে বাজছে খুব করে । বন্ধুর মেয়ে সব থেকে গুরুত্বপূর্ন । এর অর্থ হচ্ছে সে নিজে ফায়সাল নামের মানুষটার কাছে সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ।
মিয়ারার বয়স যখন ৫ বছর তখন মিয়ারার বাবা মারা যায় । তারপর থেকে মাঝে মাঝে সে ফয়সালকে দেখতে পেত তাদের বাসায় । তার মায়ের সাথে কথা বলতে । কিন্তু কেন জানি সে নিজের বাবার স্থলে কখনই ফয়সালকে ভাবতে পারত না । তার মা ফয়সালের সাথে মিশে এটাও তার পছন্দ ছিল না । যখন সে হাই স্কুলে উঠে তখন ব্যাপারটা এতোটাই তীব্র হয়ে ওঠে যে মায়ের সাথে এটা নিয়ে বেশ কয়েকবার ঝগড়াও হয় । শেষে ফরসাল ওদের বাসায় আসা একেবারে কমিয়ে দেয় । খুব দরকার ছাড়া আসত না ।
মিয়ারা নিজের মনকে শান্ত করে দরজায় কড়া নাড়লো । দুইবার নক হতেই দরজা খুলে গেল । সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটা মিয়ারাকে দেখে খানিকটা অবাক হল বটে । তবে সেই সাথে খানিকটা খুশিও হল যেন । বলল, ভেতরে এসো।
মিয়ারা কোন কথা না বলে ভেতরে ঢুকল। এর আগে এখানে সে আসে নি যদিও বাসাটা ওদের বাসা থেকে খুব বেশি দুরে নয় । মিয়ারাকে সোফার উপর বসতে দিয়েই ফয়সাল ভেতরে চলে গেল । প্রায় সাথে সাথেই ফিরে এল । হাতে দুইকাপ কাপ ।
মিয়ারা মুখে কৌতুহল দেখেই ফয়সাল আহমেদ বলল, আমি আসলে নিজের জন্য বানিয়েছিলাম । কাপে ঢালতে যাবো তখনই তুমি নক দিলে । চিনি কম দিয়েছি । লাগলে বলবে !
কাপটা হাতে নিয়ে মিয়ারা নাকের কাছে নিয়ে এল । সেখান থেকে চমৎকার একটা গন্ধ আসছে । ব্রাজিলিয়ান কফি ।
চুমুক দিতেই বুঝতে পারলো একেবারে পার্ফেক্ট কফি হয়েছে । নাইরা ঠিক ঠাক মত কফি বানাতে পারে না । প্রতিবারই কিছু না কিছু গড়বড় হয়ে যায় । আজকে অনেক দিন পরে মিয়ারা চমৎকার কফিতে চুমুক দিয়েছে ।
অন্য সোফাতে বসতে বসতে ফয়সাল বলল, তো বল, এখানে হঠাৎ?
মিয়ারা কাপটা টেবিলে নামিয়ে রেখে কী যেন ভাবলো । তারপর বলল, আমি আসলে কালকের জন্য ধন্যবাদ দিতে এসেছি।
-আরে ওটা আমার কাজ । জানো না আমি পুলিশ অফিসার !
মিয়ারা বলল, আপনি সব সময় আমাদের প্রটেক্ট করে এসেছেন । তাই না? গত ১৫ বছর!
ফয়সাল কিছু বলতে গিয়েও বলল না । মিয়ারা আবার বলল, আম্মুকে কখন আমার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হতে দেখি নি । ইভেন আমি যখন মাঝে মাঝে রাত করে বাড়ি ফিরি তখনও না ।
-এমনটা না । সে ঠিক ই চিন্তিত । কেবল হয়তো প্রকাশ করে না ।
-আম্মু আসলে চিন্তিত না । সে আসলে নিশ্চিত যে একজন ঠিক ঠিক নজর রাখছে ।
ফয়সাল এবার একটু অপ্রস্তুত বোধ করলো । এবারও চুপ করেই রইলো । মিয়ারা আবার বলল, একটা সময় হলে আমি হয়তো রাগ করতাম । কিন্তু কাল রাতে এই চিন্তাটা আসতে কেন জানি মন খারাপ হল না । বরং আনন্দ লাগলো। আমার বাবা বেঁচে থাকলেও হয়তো এমন করেই আমাকে দেখে রাখতেন !
-হ্যা রাখতেন । কোন সন্দেহ নেই ।
-কিন্তু আমি আপনাকে কোন দিন পছন্দ করি নি ।
-তাতে কী যায় আসে বল ! আমি তোমাকে খুব পছন্দ করি । গতকাল যেমন করে তোমার আম্মু বলল তোমার কিংবা তোমার আম্মুর থেকে জরূরী কিছু আমার জীবনে নেই ।
-এভাবে আপনি আমার আব্বুকে ভালোবাসতেন?
ফয়সাল কথাটার চট করেই জবাব দিল না । কিছু সময় চুপ করে রইলো । তারপর বলল, তোমার বাবা আমার একমাত্র বন্ধু ছিল । স্কুল কলেজ জীবনে । আমার কেন জানি সব সময় মনে হত জগতের সবাই আমার থেকে দুরে দুরে থাকত। আমি খানিকটা এরোগেন্ট টাইপের মানুষ । আমার মনে হত যে কেউ আমাকে ঠিক বোঝে না । তোমার আব্বু ছাড়া কারো সাথেই আমি ঠিক কমিউনিকেট করতে পারতাম না ঠিক মত । ও ঠিক ঠিক বুঝে যেত কিভাবে আমার রাগ দমন করতে হয় আমাকে কিভাবে ঠান্ডা করতে হয় !
-আর আমার আম্মু?
ফয়সাল একটু হাসলো । তারপর বলল, হ্যা সেও বুঝতো । তোমার আম্মুর সাথে আমাদের পরিচয় হয় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে । একটা সময়ে আমি যখন টের পাই যে ওর প্রেমে পড়েছি তখন আবিস্কার করি যে কেবল আমিই না তোমার আব্বুও প্রেমে পড়েছে এবং নাইরা ওকে চুজ করেছে । এই কারণে কখনোই জানতে দেই নি নিজের মনের কথা । তোমার আম্মুকে আমি ভালোবাসতাম ঠিকই তবে তার থেকে তোমার আব্বুর জন্য আমার ভালোবাসা ছিল অনেক বেশি । আর তাকে …..
মিয়ারা দেখলো ফয়সালের মুখটা শক্ত হয়ে উঠলো মুহুর্তেই । তবে সেটা আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠলো একটু পরে । মিয়ারার দিকে তাকিয়ে হাসলো । তারপর বলল, তা আজকে হঠাৎ এখানে?
-আমি আসলে জানতে চাই যে আরবাজ চৌধুরী কোথায়?
ফয়সাল হেসে ফেলল আবার । তারপর হাসি থামিয়ে বলল, জানতে চাও?
-হ্যা । যে মানুষটা আমার বাবাকে দুরে নিয়ে গেছে সেই মানুষটাকে আমি দেখতে চাই ।
ফয়সাল কিছু যেন ভাবলো । তারপর বলল, কফি শেষ কর, তারপর।
আট
গাড়িটা ছুটে চলেছে একভাবে । বসিলা ব্রিজ পার হয়ে আরও বেশ খানিকটা ভেতরে চলে এসেছে । মিয়ারার মনে হচ্ছে যেন ও যেন ঢাকার বাইরে কোন গ্রামে চলে এসেছে । ঢাকার এতো কাছে এই রকম নির্জন জায়গা আছে সেটা মিয়ারার ধারণাই ছিল না । ওরা একটা গ্যারেজের সামনে থামলো । মিায়ারা মনের ভেতরে একটা অদ্ভুত চিন্তা কাজ করছে । ভাবছে এখন সে সেই মানুষটাকে দেখতে পাবে যে মানুষটা ওর বাবাকে ওর কাছ থেকে দুরে নিয়ে গেছে ।
মিয়ারাকে নিয়ে ফয়সাল যখন পুরানো গ্যারেজের ভেতরে প্রবেশ করলো তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে । মিয়ারার কেমন যেন মনে হতে লাগলো । একটা রাগ এসে জড় হল মনের ভেতরে । আরবাজ নামের মানুষটার সাথে দেখা হলে কী করবে সেটা ভাবতে চেষ্টা করলো ।
কিন্তু মিয়ারাকে অবাক করে দিয়ে ফরসাল কিছু সময় সেখানে থেকে আবারও মিয়ারাকে নিয়ে গ্যারেজের বাইরে চলে এল । গাড়ি যখন আবার শহরের দিকে চলতে শুরু করলো তখন মিয়ারা অবাক হয়ে বলল, কী ব্যাপার?
-তেমন কিছু না ।
-তাহলে ?
-এখন না পরে বলছি ।
গাড়িটা আবারও ওদের বাসার সামনে এসে থামলো । গাড়িটা ভেতরে প্রবেশ করাতেই নাইরাকে দেখা গেল দরজায় । ওদের দুজনকে এক সাথে দেখে খানিকটা অবাকই হল । ফয়সাল নাইরাকে উদ্দেশ্য করে বলল, রাতের খাবার কী আজকে?
-এখনও কিছু ঠিক করি নি ।
-আজকে দেশী মুরগি রান্না কর দেখি । আমি আর মিয়ারা বাড়ির পেছনের লেক থেকে ঘুরে আসি !
নাইরা সত্যিই অবাক হল ওদের আচরণ দেখে অবাক হচ্ছে । তবে সেই সাথে খুশিও হল খুব । বলল,ওকে আমি খাবার রেডি করছি । তোমরা ঘুরে এসো ।
গাড়িটা রেখে ফয়সাল মিয়ারার দিকে তাকিয়ে বলল, চল হেটে আসি ।
মিয়ারা তখনও বুঝতে পারছে না ঠিক মত । তার মাথায় আসলে এটা ঢুকছে না যে ফরসাল আসলে কেন এই রকম আচরণ করছে। প্রথমে ওকে গাড়িতে করে শহরের দুরে নিয়ে গেল । তারপর আবার ওকে নিয়ে এল এখানে । মিয়ারার মাথায় আসলে কিছুই আসছে না । তবে সে কোন প্রশ্ন করলো না । ফয়সালের সাথে হাটতে বের হল ।
মিয়ারাদের বাসার ঠিক পেছনেই লেকটা । মিয়ারা প্রায়ই এই রাস্তায় হাটতে আসে । তবে এই রাস্তায় মানুষজন কম আসে । ঠিক নিজেদের বাসার পেছনে চলে এল । এখানে একটা দরজা রয়েছে । তবে সেটা সব সময়ই বন্ধ থাকে । দেওয়ালের পাশে এই দরজার ঠিক পেছনে একটা ঘর রয়েছে । মিয়ারা কয়েকবার ওর মাকে জিজ্ঞেস করেছিলো বটে তবে ওর মা বলেছে ঘরটা আগে নাকি গ্যারাজ হিসাবে ব্যবহার হত । এখন আর হয় না । পেছনের ঐ দরজা দিয়ে বের হওয়ার রাস্তা ছিল আগে । ওর বাবা নাকি এটা ব্যবহার করতো ।
মিয়ারাকে অবাক করে দিয়ে ফয়সাল দরজাটার সামনে দাড়ালো । তারপর পকেট থেকে চাবি বের করলো এবং দরজাটা খুজে মিয়ারাকে ভেতরে প্রবেশ করতে বলল। মিয়ারা বিস্মিত ভাবে তাকিয়ে দেখলো দরজার একটু সামনে দিয়ে একটা সিড়ি নেমে গেছে নিচে । নিচে বেজমেন্টের দিকে গেছে কিংবা কোন পাতাল ঘর রয়েছে ওদের বাসার নিচে । মিয়ারা অবাক হয়ে ফয়সালের দিকে তাকালো ।
ফরসাল বলল, ভেতরে ঢোকো । বলছি ।
মিয়ারা সিড়ি দিয়ে নেমে একেবারে সিড়ির গোড়ায় এসে হাজির হল । সেখানে একটা দরজা দেখা যাচ্ছে । দরজাটা লোহার । বেশ মজবুত । একটা কোড লক দেখা যাচ্ছে । পেছন দিয়ে ফয়সাল এগিয়ে এল । এবং একটা কোড বসালো সেখানে । মিয়ারা দেখলো কোডটা ওর জন্ম তারিখ । দরজা খুট করে খুলে গেল ।
ভেতরে প্রবেশ করলো ওরা । সামনে একটা ছোট ঘর । সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানান জিনিসপত্র । এর পরে আরেকটা দরজার সামনে এসে দাড়ালো । এটাও বেশ আধুনিক দরজা ।
ফয়সাল সেখানেও একই কোড প্রবেশ করালো । আবারও দরজা খুলে গেল । মিয়ারাকে ভেতরে প্রবেশ করতে বলল।
মিয়ারা যখন ভেতরে প্রবেশ করলো তখন অবাক হয়ে দেখতে পেল একটা মানুষকে শিকল দিয়ে দেওয়ালের সাথে আটকে রাখা হয়েছে । তার হাত দুটো বাধা শিকল দিয়ে । তবে শেকলটা একটু বড় । ঘরের এক কোনে একটা টয়লেট দেখা যাচ্ছে । মানুষটার পরনে কেবল হাফপ্যান্ট পরা । পুরো শরীরে আর কিছু নেই ।
ওদের ভেতরে আসতে দেখেই মানুষটা এবার করুন চোখ তাকালো মিয়ারার দিকে । পেছনে ফয়সালকে দেখেই মুখ শুকিয়ে গেল । বেশ স্বাস্থ্যবান মানুষ তবে এই কয়দিনে সে খাওয়া দাওয়া করতে পারে নি ঠিক মত দেখেই বোঝা যাচ্ছে । এই মানুষটাই যে আরবাজ চৌধুরী সেটা বুঝতে মিয়ারার কষ্ট হল না মোটেও ।
ফরসালকে দেখে সে কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই ফরসাল মুখে হাত দিয়ে তাকে চুপ করতে ইশারা করলো ।
মিয়ারা অবাক হয়ে বলল, পুরো সময় সে এখানেই ছিল?
-হ্যা ।
-মাই গড !
-ভয় পেও না, এটা পুরো সাউন্ডপ্রুফ । কেউ শুনতে পাবে না এর আওয়াজ । এই আমি আর তোমার বাবা মিলে বানিয়েছিলাম আমাদের কাজে!
-আপনাদের কী কাজে শুনি?
-এই যে এমন কাজে । যাদের সরাসরি ধরা যায় না তাদের আমরা এখানে নিয়ে আসতাম ।
মিয়ারা সত্যিই বিশ্বাস করতে পারছে না । কেবল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো !
অনেকটা সময় পড়ে মিয়ারা বলল, এর সাথে কী করবেন?
-তুমি ঠিক কর । যা বলবে তাই করা হবে ।
মিয়ারা একভাবে তাকালো লোকটার দিকে । লোকটার মুখের দিকে তাকালো । মিয়ারা ভেবেছিলো যে হয়তো আরবাজকে দেখে খুব রাগ হবে । খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করবে কিন্তু তার বদলে কেমন যেন করুণা হল । একভাবে তাকিয়ে রইলো কেবল আরবারের চোখের দিকে । সেই চোখে কেবল করুণা ভিক্ষা চাইছে ।
মিয়ারা বলল, ছেড়ে দিন।
-ছেড়ে দিবো ?
-হ্যা ছেড়ে দিন ।
ফয়সাল হাসলো একটু । যেন জানতোই মিয়ারা এমনটাই বলবে । তারপর আরবাজের দিকে তাকিয়ে বলল, দেখলে তো যাকে খুন করে পালিয়েছিলে তার মেয়ে তোমাকে কেমন মাফ করে দিল । কেবল করুণা করলো । জীবনে বাকি যত সময় বেঁচে থাকবে এটা সব সময় মনে রাখবে যে এই পিচ্চু মেয়েটার দয়া নিয়ে বেঁচে আছো ।
মিয়ারা আরো কিছু সময় সেখানে দাড়িয়ে রইলো । তারপর ফয়সালের কথা মত দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে এল । তার কিছু সময়ে ফয়সালও বের হয়ে গেল । ওরা আবার পেছনের রাস্তা দিয়ে হাটতে শুরু করলো ।
-সত্যিই ছেড়ে দিবেন?
-তুমিই না বললে?
-কিন্তু ও যদি পুলিশের কাছে যায় । বলে যে আপনিই ওকে আটকে রেখেছিলেন!
-ভয় নেই বলবে না ।
-কেন বলবে না ?
-ওর পুরো স্বীকারোক্তির ভিডিও আমার কাছে । এছাড়া ….
-এছাড়া?
-এছাড়া ওর শরীরের ভেতরে ছোট একটা বোম্ব ঢুকিয়ে দেওয়া আছে । এক ক্লিকেই সেটা ফেটে যাবে ।
মিয়ারা চোখ বড় বড় করে বলল, সত্যিই ?
-আরে না । আমি ওকে বিশ্বাস করিয়েছি । এটাই যথেষ্ঠ । ও ছাড়া পেয়েই দেশ ছেড়ে পালাবে !
মিয়ারা হেসে ফেলল । তারপর বলল, আপনি তো ভারি দুষ্ট আছেন !
-গতকাল ওর ভাইয়ের সাথে যা হয়েছে সেটা গতকালকেই ওকে জানিয়েছি । ওর বাবার সাথে আজকে যা হবে !
-ওর বাবার সাথে আজকে কী হবে?
এই প্রশ্নের জবাব ফয়সাল দিল না । কেবল রহস্যময় ভাবে হাসলো ।
ফয়সাল খুব ভাল করেই জানতো যে ফয়সাল যেখানেই যাক না কেন সেইখবর ঠিকই পৌছে যাবে আজিজুর রহমানের কাছে । বড় ছেলেকে এখনও সে খুজছে । তাই ফয়সাল যখন গাড়ি নিয়ে বসিলার কোন নির্জন স্থানে যাবে স্বাভাবিক ভাবেই মনে করবে সে তার ছেলে সেখানেই আছে । তাকে উদ্ধার করতে সেই গ্যারাজে গিয়ে হাজির হবেই । আর এই তথ্যটাই ফয়সাল কেবল আজিজুর রহমানের প্রধান রাইভাল এহসান শিকদারের কাছে পৌছে দিয়েছে । ব্যাস বাকি যা হওয়ার সেখানেই হবে ।
গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে করতে ওরা দুজনের দেশী মুরগির রান্নার সুবাস পেল । আজকে রাতের খাবার বেশ ভাল হবে বোঝা যাচ্ছে ।
পরিশিষ্টঃ
আজিজুর রহমান গাড়িতে বসে আছেন । তার হাতে একটা পিস্তল রয়েছে । আজকে অনেক দিন পরে সে নিজে হাতে পিস্তল হাতে নিয়েছেন । তিনি নিজে না আসলেও পারতেন তবে খোজ পাওয়ার পরে আর তিনি স্থির থাকতে পারেন নি । ছোট ছেলে হাসপাতালে রয়েছে । ওকে পলিশের লোকজন ভেতরে ঢুকতে পর্যন্ত দেয় নি । ফয়সাল নামের ঐ অফিসারকে সে দেখে নেবে । কেবল একবার আরবাজকে মুক্ত করে নিক।
-স্যার এটাই সেই জায়গা !
-ভেতরে কেউ আছে ?
-বাইরে কেউ নেই তবে ভেতরে লোক আছে সেটা নিঃসন্দেহ ।
-ওকে যে কোন ভাবেই আমার ছেলেকে অক্ষত অবস্থায় চাই। পথে আসবে উড়িয়ে দিবে । কারো পরোয়া করতে হবে না ।
-ওকে স্যার ।
আজিজুর রহমান গাড়ি থেকে নামলেন । হাতের পিস্তলটা আরেকবার চেক করে নিলেন । সামনে সাতজনের একটা দল চলে গেল । সামনেই গ্যারেজ । এর ভেতরেই তার ছেলে আছে এমনটা খবর আছে !
যখন প্রথমদলটা গ্যারাজের ভেতরে প্রবেশ করলো তখনই আজিজুর রহমানের মনে হল কী যেন ঠিক নেই । ফরসাল যে কিনা এতো কঠিন ভাবে তার ছেলেকে লুকিয়ে রেখেছিলো সে এতো সহজে ধরা দিবে !
অথবা সে চেয়েছে যেন আজিজুর রহমানের কাছে খবর পৌছায় ! তিনি আসলে ছেলের প্রতি আবেগ প্রকাশ করতে গিয়ে ব্যাপারটা এতো গভীর ভাবে চিন্তা করেন নি ।
ঠিক সেই সময়ে প্রথম গুলির আওয়াজটা শোনা গেল । তবে সেটা গ্যারেজের ভেতর থেকে নয় । পেছন থেকে !
আজিজুর রহমান ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলেন না তবে এছাড়া আর কোন উপায়ও নেই । একবার যদি গ্যারেজের ভেতরে প্রবেশ করে ফেলেন তাহলে হয়তো ফাঁদে পা দিবেন ! এটা ছাড়া আর কোন উপায় এখন নেই।
পেছন থেকে আরো এক ঝাক গুলির আওয়াজ শোনা গেল । দুজনের শরীরে গুলিও লাগলো । আজিজুর রহমান ভেতরে প্রবেশ করলেন । তারপরই বুঝতে পারলেন যে এখানেই হয়তো তার সমাপ্তি রয়েছে পুরো গ্যারাজে সে গ্যাসোলিনের গন্ধ পাচ্ছেন ।