ঠান্ডা প্রতিশোধ (শেষ পর্ব)

oputanvir
4.9
(37)

সাত
মিয়ারা কিছু সময় দাড়িয়ে রইলো দরজাটার কাছে । এখনও ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সে ভেতরে ঢুকবে কিনা । একবার মনে হচ্ছে ফিরে যায় আবার মনে হচ্ছে তার সাথে কয়েকটা কথা বলে । বিশেষ করে গতকাল তার মায়ের মুখের কথা গুলো কানে বাজছে খুব করে । বন্ধুর মেয়ে সব থেকে গুরুত্বপূর্ন । এর অর্থ হচ্ছে সে নিজে ফায়সাল নামের মানুষটার কাছে সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ।

মিয়ারার বয়স যখন ৫ বছর তখন মিয়ারার বাবা মারা যায় । তারপর থেকে মাঝে মাঝে সে ফয়সালকে দেখতে পেত তাদের বাসায় । তার মায়ের সাথে কথা বলতে । কিন্তু কেন জানি সে নিজের বাবার স্থলে কখনই ফয়সালকে ভাবতে পারত না । তার মা ফয়সালের সাথে মিশে এটাও তার পছন্দ ছিল না । যখন সে হাই স্কুলে উঠে তখন ব্যাপারটা এতোটাই তীব্র হয়ে ওঠে যে মায়ের সাথে এটা নিয়ে বেশ কয়েকবার ঝগড়াও হয় । শেষে ফরসাল ওদের বাসায় আসা একেবারে কমিয়ে দেয় । খুব দরকার ছাড়া আসত না ।

মিয়ারা নিজের মনকে শান্ত করে দরজায় কড়া নাড়লো । দুইবার নক হতেই দরজা খুলে গেল । সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটা মিয়ারাকে দেখে খানিকটা অবাক হল বটে । তবে সেই সাথে খানিকটা খুশিও হল যেন । বলল, ভেতরে এসো।

মিয়ারা কোন কথা না বলে ভেতরে ঢুকল। এর আগে এখানে সে আসে নি যদিও বাসাটা ওদের বাসা থেকে খুব বেশি দুরে নয় । মিয়ারাকে সোফার উপর বসতে দিয়েই ফয়সাল ভেতরে চলে গেল । প্রায় সাথে সাথেই ফিরে এল । হাতে দুইকাপ কাপ ।
মিয়ারা মুখে কৌতুহল দেখেই ফয়সাল আহমেদ বলল, আমি আসলে নিজের জন্য বানিয়েছিলাম । কাপে ঢালতে যাবো তখনই তুমি নক দিলে । চিনি কম দিয়েছি । লাগলে বলবে !

কাপটা হাতে নিয়ে মিয়ারা নাকের কাছে নিয়ে এল । সেখান থেকে চমৎকার একটা গন্ধ আসছে । ব্রাজিলিয়ান কফি ।
চুমুক দিতেই বুঝতে পারলো একেবারে পার্ফেক্ট কফি হয়েছে । নাইরা ঠিক ঠাক মত কফি বানাতে পারে না । প্রতিবারই কিছু না কিছু গড়বড় হয়ে যায় । আজকে অনেক দিন পরে মিয়ারা চমৎকার কফিতে চুমুক দিয়েছে ।

অন্য সোফাতে বসতে বসতে ফয়সাল বলল, তো বল, এখানে হঠাৎ?
মিয়ারা কাপটা টেবিলে নামিয়ে রেখে কী যেন ভাবলো । তারপর বলল, আমি আসলে কালকের জন্য ধন্যবাদ দিতে এসেছি।
-আরে ওটা আমার কাজ । জানো না আমি পুলিশ অফিসার !
মিয়ারা বলল, আপনি সব সময় আমাদের প্রটেক্ট করে এসেছেন । তাই না? গত ১৫ বছর!
ফয়সাল কিছু বলতে গিয়েও বলল না । মিয়ারা আবার বলল, আম্মুকে কখন আমার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হতে দেখি নি । ইভেন আমি যখন মাঝে মাঝে রাত করে বাড়ি ফিরি তখনও না ।
-এমনটা না । সে ঠিক ই চিন্তিত । কেবল হয়তো প্রকাশ করে না ।
-আম্মু আসলে চিন্তিত না । সে আসলে নিশ্চিত যে একজন ঠিক ঠিক নজর রাখছে ।

ফয়সাল এবার একটু অপ্রস্তুত বোধ করলো । এবারও চুপ করেই রইলো । মিয়ারা আবার বলল, একটা সময় হলে আমি হয়তো রাগ করতাম । কিন্তু কাল রাতে এই চিন্তাটা আসতে কেন জানি মন খারাপ হল না । বরং আনন্দ লাগলো। আমার বাবা বেঁচে থাকলেও হয়তো এমন করেই আমাকে দেখে রাখতেন !
-হ্যা রাখতেন । কোন সন্দেহ নেই ।
-কিন্তু আমি আপনাকে কোন দিন পছন্দ করি নি ।
-তাতে কী যায় আসে বল ! আমি তোমাকে খুব পছন্দ করি । গতকাল যেমন করে তোমার আম্মু বলল তোমার কিংবা তোমার আম্মুর থেকে জরূরী কিছু আমার জীবনে নেই ।
-এভাবে আপনি আমার আব্বুকে ভালোবাসতেন?

ফয়সাল কথাটার চট করেই জবাব দিল না । কিছু সময় চুপ করে রইলো । তারপর বলল, তোমার বাবা আমার একমাত্র বন্ধু ছিল । স্কুল কলেজ জীবনে । আমার কেন জানি সব সময় মনে হত জগতের সবাই আমার থেকে দুরে দুরে থাকত। আমি খানিকটা এরোগেন্ট টাইপের মানুষ । আমার মনে হত যে কেউ আমাকে ঠিক বোঝে না । তোমার আব্বু ছাড়া কারো সাথেই আমি ঠিক কমিউনিকেট করতে পারতাম না ঠিক মত । ও ঠিক ঠিক বুঝে যেত কিভাবে আমার রাগ দমন করতে হয় আমাকে কিভাবে ঠান্ডা করতে হয় !

-আর আমার আম্মু?
ফয়সাল একটু হাসলো । তারপর বলল, হ্যা সেও বুঝতো । তোমার আম্মুর সাথে আমাদের পরিচয় হয় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে । একটা সময়ে আমি যখন টের পাই যে ওর প্রেমে পড়েছি তখন আবিস্কার করি যে কেবল আমিই না তোমার আব্বুও প্রেমে পড়েছে এবং নাইরা ওকে চুজ করেছে । এই কারণে কখনোই জানতে দেই নি নিজের মনের কথা । তোমার আম্মুকে আমি ভালোবাসতাম ঠিকই তবে তার থেকে তোমার আব্বুর জন্য আমার ভালোবাসা ছিল অনেক বেশি । আর তাকে …..

মিয়ারা দেখলো ফয়সালের মুখটা শক্ত হয়ে উঠলো মুহুর্তেই । তবে সেটা আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠলো একটু পরে । মিয়ারার দিকে তাকিয়ে হাসলো । তারপর বলল, তা আজকে হঠাৎ এখানে?
-আমি আসলে জানতে চাই যে আরবাজ চৌধুরী কোথায়?
ফয়সাল হেসে ফেলল আবার । তারপর হাসি থামিয়ে বলল, জানতে চাও?
-হ্যা । যে মানুষটা আমার বাবাকে দুরে নিয়ে গেছে সেই মানুষটাকে আমি দেখতে চাই ।

ফয়সাল কিছু যেন ভাবলো । তারপর বলল, কফি শেষ কর, তারপর।

আট
গাড়িটা ছুটে চলেছে একভাবে । বসিলা ব্রিজ পার হয়ে আরও বেশ খানিকটা ভেতরে চলে এসেছে । মিয়ারার মনে হচ্ছে যেন ও যেন ঢাকার বাইরে কোন গ্রামে চলে এসেছে । ঢাকার এতো কাছে এই রকম নির্জন জায়গা আছে সেটা মিয়ারার ধারণাই ছিল না । ওরা একটা গ্যারেজের সামনে থামলো । মিায়ারা মনের ভেতরে একটা অদ্ভুত চিন্তা কাজ করছে । ভাবছে এখন সে সেই মানুষটাকে দেখতে পাবে যে মানুষটা ওর বাবাকে ওর কাছ থেকে দুরে নিয়ে গেছে ।

মিয়ারাকে নিয়ে ফয়সাল যখন পুরানো গ্যারেজের ভেতরে প্রবেশ করলো তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে । মিয়ারার কেমন যেন মনে হতে লাগলো । একটা রাগ এসে জড় হল মনের ভেতরে । আরবাজ নামের মানুষটার সাথে দেখা হলে কী করবে সেটা ভাবতে চেষ্টা করলো ।

কিন্তু মিয়ারাকে অবাক করে দিয়ে ফরসাল কিছু সময় সেখানে থেকে আবারও মিয়ারাকে নিয়ে গ্যারেজের বাইরে চলে এল । গাড়ি যখন আবার শহরের দিকে চলতে শুরু করলো তখন মিয়ারা অবাক হয়ে বলল, কী ব্যাপার?
-তেমন কিছু না ।
-তাহলে ?
-এখন না পরে বলছি ।

গাড়িটা আবারও ওদের বাসার সামনে এসে থামলো । গাড়িটা ভেতরে প্রবেশ করাতেই নাইরাকে দেখা গেল দরজায় । ওদের দুজনকে এক সাথে দেখে খানিকটা অবাকই হল । ফয়সাল নাইরাকে উদ্দেশ্য করে বলল, রাতের খাবার কী আজকে?
-এখনও কিছু ঠিক করি নি ।
-আজকে দেশী মুরগি রান্না কর দেখি । আমি আর মিয়ারা বাড়ির পেছনের লেক থেকে ঘুরে আসি !

নাইরা সত্যিই অবাক হল ওদের আচরণ দেখে অবাক হচ্ছে । তবে সেই সাথে খুশিও হল খুব । বলল,ওকে আমি খাবার রেডি করছি । তোমরা ঘুরে এসো ।

গাড়িটা রেখে ফয়সাল মিয়ারার দিকে তাকিয়ে বলল, চল হেটে আসি ।
মিয়ারা তখনও বুঝতে পারছে না ঠিক মত । তার মাথায় আসলে এটা ঢুকছে না যে ফরসাল আসলে কেন এই রকম আচরণ করছে। প্রথমে ওকে গাড়িতে করে শহরের দুরে নিয়ে গেল । তারপর আবার ওকে নিয়ে এল এখানে । মিয়ারার মাথায় আসলে কিছুই আসছে না । তবে সে কোন প্রশ্ন করলো না । ফয়সালের সাথে হাটতে বের হল ।

মিয়ারাদের বাসার ঠিক পেছনেই লেকটা । মিয়ারা প্রায়ই এই রাস্তায় হাটতে আসে । তবে এই রাস্তায় মানুষজন কম আসে । ঠিক নিজেদের বাসার পেছনে চলে এল । এখানে একটা দরজা রয়েছে । তবে সেটা সব সময়ই বন্ধ থাকে । দেওয়ালের পাশে এই দরজার ঠিক পেছনে একটা ঘর রয়েছে । মিয়ারা কয়েকবার ওর মাকে জিজ্ঞেস করেছিলো বটে তবে ওর মা বলেছে ঘরটা আগে নাকি গ্যারাজ হিসাবে ব্যবহার হত । এখন আর হয় না । পেছনের ঐ দরজা দিয়ে বের হওয়ার রাস্তা ছিল আগে । ওর বাবা নাকি এটা ব্যবহার করতো ।

মিয়ারাকে অবাক করে দিয়ে ফয়সাল দরজাটার সামনে দাড়ালো । তারপর পকেট থেকে চাবি বের করলো এবং দরজাটা খুজে মিয়ারাকে ভেতরে প্রবেশ করতে বলল। মিয়ারা বিস্মিত ভাবে তাকিয়ে দেখলো দরজার একটু সামনে দিয়ে একটা সিড়ি নেমে গেছে নিচে । নিচে বেজমেন্টের দিকে গেছে কিংবা কোন পাতাল ঘর রয়েছে ওদের বাসার নিচে । মিয়ারা অবাক হয়ে ফয়সালের দিকে তাকালো ।
ফরসাল বলল, ভেতরে ঢোকো । বলছি ।

মিয়ারা সিড়ি দিয়ে নেমে একেবারে সিড়ির গোড়ায় এসে হাজির হল । সেখানে একটা দরজা দেখা যাচ্ছে । দরজাটা লোহার । বেশ মজবুত । একটা কোড লক দেখা যাচ্ছে । পেছন দিয়ে ফয়সাল এগিয়ে এল । এবং একটা কোড বসালো সেখানে । মিয়ারা দেখলো কোডটা ওর জন্ম তারিখ । দরজা খুট করে খুলে গেল ।

ভেতরে প্রবেশ করলো ওরা । সামনে একটা ছোট ঘর । সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানান জিনিসপত্র । এর পরে আরেকটা দরজার সামনে এসে দাড়ালো । এটাও বেশ আধুনিক দরজা ।
ফয়সাল সেখানেও একই কোড প্রবেশ করালো । আবারও দরজা খুলে গেল । মিয়ারাকে ভেতরে প্রবেশ করতে বলল।

মিয়ারা যখন ভেতরে প্রবেশ করলো তখন অবাক হয়ে দেখতে পেল একটা মানুষকে শিকল দিয়ে দেওয়ালের সাথে আটকে রাখা হয়েছে । তার হাত দুটো বাধা শিকল দিয়ে । তবে শেকলটা একটু বড় । ঘরের এক কোনে একটা টয়লেট দেখা যাচ্ছে । মানুষটার পরনে কেবল হাফপ্যান্ট পরা । পুরো শরীরে আর কিছু নেই ।

ওদের ভেতরে আসতে দেখেই মানুষটা এবার করুন চোখ তাকালো মিয়ারার দিকে । পেছনে ফয়সালকে দেখেই মুখ শুকিয়ে গেল । বেশ স্বাস্থ্যবান মানুষ তবে এই কয়দিনে সে খাওয়া দাওয়া করতে পারে নি ঠিক মত দেখেই বোঝা যাচ্ছে । এই মানুষটাই যে আরবাজ চৌধুরী সেটা বুঝতে মিয়ারার কষ্ট হল না মোটেও ।
ফরসালকে দেখে সে কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই ফরসাল মুখে হাত দিয়ে তাকে চুপ করতে ইশারা করলো ।
মিয়ারা অবাক হয়ে বলল, পুরো সময় সে এখানেই ছিল?
-হ্যা ।
-মাই গড !
-ভয় পেও না, এটা পুরো সাউন্ডপ্রুফ । কেউ শুনতে পাবে না এর আওয়াজ । এই আমি আর তোমার বাবা মিলে বানিয়েছিলাম আমাদের কাজে!
-আপনাদের কী কাজে শুনি?
-এই যে এমন কাজে । যাদের সরাসরি ধরা যায় না তাদের আমরা এখানে নিয়ে আসতাম ।

মিয়ারা সত্যিই বিশ্বাস করতে পারছে না । কেবল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো !

অনেকটা সময় পড়ে মিয়ারা বলল, এর সাথে কী করবেন?
-তুমি ঠিক কর । যা বলবে তাই করা হবে ।

মিয়ারা একভাবে তাকালো লোকটার দিকে । লোকটার মুখের দিকে তাকালো । মিয়ারা ভেবেছিলো যে হয়তো আরবাজকে দেখে খুব রাগ হবে । খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করবে কিন্তু তার বদলে কেমন যেন করুণা হল । একভাবে তাকিয়ে রইলো কেবল আরবারের চোখের দিকে । সেই চোখে কেবল করুণা ভিক্ষা চাইছে ।

মিয়ারা বলল, ছেড়ে দিন।
-ছেড়ে দিবো ?
-হ্যা ছেড়ে দিন ।

ফয়সাল হাসলো একটু । যেন জানতোই মিয়ারা এমনটাই বলবে । তারপর আরবাজের দিকে তাকিয়ে বলল, দেখলে তো যাকে খুন করে পালিয়েছিলে তার মেয়ে তোমাকে কেমন মাফ করে দিল । কেবল করুণা করলো । জীবনে বাকি যত সময় বেঁচে থাকবে এটা সব সময় মনে রাখবে যে এই পিচ্চু মেয়েটার দয়া নিয়ে বেঁচে আছো ।

মিয়ারা আরো কিছু সময় সেখানে দাড়িয়ে রইলো । তারপর ফয়সালের কথা মত দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে এল । তার কিছু সময়ে ফয়সালও বের হয়ে গেল । ওরা আবার পেছনের রাস্তা দিয়ে হাটতে শুরু করলো ।
-সত্যিই ছেড়ে দিবেন?
-তুমিই না বললে?
-কিন্তু ও যদি পুলিশের কাছে যায় । বলে যে আপনিই ওকে আটকে রেখেছিলেন!
-ভয় নেই বলবে না ।
-কেন বলবে না ?
-ওর পুরো স্বীকারোক্তির ভিডিও আমার কাছে । এছাড়া ….
-এছাড়া?
-এছাড়া ওর শরীরের ভেতরে ছোট একটা বোম্ব ঢুকিয়ে দেওয়া আছে । এক ক্লিকেই সেটা ফেটে যাবে ।
মিয়ারা চোখ বড় বড় করে বলল, সত্যিই ?
-আরে না । আমি ওকে বিশ্বাস করিয়েছি । এটাই যথেষ্ঠ । ও ছাড়া পেয়েই দেশ ছেড়ে পালাবে !
মিয়ারা হেসে ফেলল । তারপর বলল, আপনি তো ভারি দুষ্ট আছেন !
-গতকাল ওর ভাইয়ের সাথে যা হয়েছে সেটা গতকালকেই ওকে জানিয়েছি । ওর বাবার সাথে আজকে যা হবে !
-ওর বাবার সাথে আজকে কী হবে?

এই প্রশ্নের জবাব ফয়সাল দিল না । কেবল রহস্যময় ভাবে হাসলো ।

ফয়সাল খুব ভাল করেই জানতো যে ফয়সাল যেখানেই যাক না কেন সেইখবর ঠিকই পৌছে যাবে আজিজুর রহমানের কাছে । বড় ছেলেকে এখনও সে খুজছে । তাই ফয়সাল যখন গাড়ি নিয়ে বসিলার কোন নির্জন স্থানে যাবে স্বাভাবিক ভাবেই মনে করবে সে তার ছেলে সেখানেই আছে । তাকে উদ্ধার করতে সেই গ্যারাজে গিয়ে হাজির হবেই । আর এই তথ্যটাই ফয়সাল কেবল আজিজুর রহমানের প্রধান রাইভাল এহসান শিকদারের কাছে পৌছে দিয়েছে । ব্যাস বাকি যা হওয়ার সেখানেই হবে ।

গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে করতে ওরা দুজনের দেশী মুরগির রান্নার সুবাস পেল । আজকে রাতের খাবার বেশ ভাল হবে বোঝা যাচ্ছে ।

পরিশিষ্টঃ

আজিজুর রহমান গাড়িতে বসে আছেন । তার হাতে একটা পিস্তল রয়েছে । আজকে অনেক দিন পরে সে নিজে হাতে পিস্তল হাতে নিয়েছেন । তিনি নিজে না আসলেও পারতেন তবে খোজ পাওয়ার পরে আর তিনি স্থির থাকতে পারেন নি । ছোট ছেলে হাসপাতালে রয়েছে । ওকে পলিশের লোকজন ভেতরে ঢুকতে পর্যন্ত দেয় নি । ফয়সাল নামের ঐ অফিসারকে সে দেখে নেবে । কেবল একবার আরবাজকে মুক্ত করে নিক।

-স্যার এটাই সেই জায়গা !
-ভেতরে কেউ আছে ?
-বাইরে কেউ নেই তবে ভেতরে লোক আছে সেটা নিঃসন্দেহ ।
-ওকে যে কোন ভাবেই আমার ছেলেকে অক্ষত অবস্থায় চাই। পথে আসবে উড়িয়ে দিবে । কারো পরোয়া করতে হবে না ।
-ওকে স্যার ।

আজিজুর রহমান গাড়ি থেকে নামলেন । হাতের পিস্তলটা আরেকবার চেক করে নিলেন । সামনে সাতজনের একটা দল চলে গেল । সামনেই গ্যারেজ । এর ভেতরেই তার ছেলে আছে এমনটা খবর আছে !

যখন প্রথমদলটা গ্যারাজের ভেতরে প্রবেশ করলো তখনই আজিজুর রহমানের মনে হল কী যেন ঠিক নেই । ফরসাল যে কিনা এতো কঠিন ভাবে তার ছেলেকে লুকিয়ে রেখেছিলো সে এতো সহজে ধরা দিবে !
অথবা সে চেয়েছে যেন আজিজুর রহমানের কাছে খবর পৌছায় ! তিনি আসলে ছেলের প্রতি আবেগ প্রকাশ করতে গিয়ে ব্যাপারটা এতো গভীর ভাবে চিন্তা করেন নি ।
ঠিক সেই সময়ে প্রথম গুলির আওয়াজটা শোনা গেল । তবে সেটা গ্যারেজের ভেতর থেকে নয় । পেছন থেকে !

আজিজুর রহমান ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলেন না তবে এছাড়া আর কোন উপায়ও নেই । একবার যদি গ্যারেজের ভেতরে প্রবেশ করে ফেলেন তাহলে হয়তো ফাঁদে পা দিবেন ! এটা ছাড়া আর কোন উপায় এখন নেই।

পেছন থেকে আরো এক ঝাক গুলির আওয়াজ শোনা গেল । দুজনের শরীরে গুলিও লাগলো । আজিজুর রহমান ভেতরে প্রবেশ করলেন । তারপরই বুঝতে পারলেন যে এখানেই হয়তো তার সমাপ্তি রয়েছে পুরো গ্যারাজে সে গ্যাসোলিনের গন্ধ পাচ্ছেন ।

আগের পর্ব

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.9 / 5. Vote count: 37

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →