ঠান্ডা প্রতিশোধ (পর্ব দুই)

oputanvir
4.8
(43)

চার
আরমান কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে । সে আর পুলিশ কিংবা তার বাবার আশাতে বসে থাকবে না ঠিক করেছে । এইকদিনে বেশ ভাল খোজ নিয়েছে যদিও ফয়সাল আহমেদ সম্পর্কে সে অনেক কিছুই জানে । এই লোকটার কারণে তার বড় ভাই দীর্ঘদিন দেশে বাইরে ছিল । যদিও আরবাজ আহমেদের নামে কোন অভিযোগ ছিল না, কোন প্রমাণ ছিল না তারপরেও তাদের বাবা একজন পুলিশ অফিসারকে শত্রু বানিয়ে রাখতে চান নি । আর এই পুলিশ অফিসারের ব্যকআপ খুবই শক্তিশালী তাই নিজেকে ছেলেকে তিনি নিরাপদে দুরে রেখেছেন । এইবারও তার দেশের আসার পক্ষে আজিজুর চৌধুরীর সম্মতি ছিল না । তার জন্মদিনটা আরবাজ চেয়েছিলো সবাই মিলে একসাথে পালন করবে । ছেলের জোড়াজুড়িতে রাজি হয়েছিলেন । কোন দিন ভাবেনও নি যে এতো গুলো বছর পরেও এমন কিছু হতে পারে ।

আরমান ঠিক ঠিক জানে ফরসাল আহমেদকে কিভাবে লাইনে আনতে হয় । সে একেবারে শতভাগ নিশ্চিত যে তার ভাইকে ফরসাল আহমেদই গায়েব করেছে । কোন সন্ত্রাসী পক্ষে যে এর পেছনে নেই সেই ব্যাপারে আরমান নিশ্চিত । এটা তার বাবাও জানে । এবং এটাও জানে এটা ফয়সাল আহমেদই করেছে । কিন্তু ফরসাল আহমেদের কাছে শক্ত এলিবাই এবং সে যা করেছে খুব চতুরতার সাথেই করেছে । কোন ফাঁক নেই । তবে আরমান একটা ফাঁক ঠিকই খুজে পেয়েছে । সেটা হচ্ছে মৃত সেই অফিসারের পরিবার । ঐদুজনকে সে তুলে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছে । এদের নিয়ে এসে চাপ দিলেই ফরসাল আহমেদ ঠিকই তার ভাইকে বের করে দিবে ।

গাড়িটা যখন ধানমণ্ডিতে এসে থামলো তখন রাত প্রায় একটা । চারিদিকে সব প্রায় সব নিস্তব্ধ হয়ে আছে । কাজটা তাদের জন্য একেবারেই কঠিন হবে না । মৃত সেই অফিসার ধানমণ্ডির একটা বাড়িটে থাকে । মা আর মেয়ে । বাড়িটা মুল রাস্তা থেকে একটু ভেতরের দিকে । তবে এটা আধুনিক বাড়ির মত না । পুরানো আমলের বাড়ি । বাড়ির সামনে বড় লন রয়েছে । রয়েছে গাছপালা । এই বাড়িটা এখনও এপার্টমেন্ট করে কেন ফেলা হয় নি সেটা আরমান বুঝতে পারছে না । তবে ওদের জন্য ভাল হয়েছে । কাজটা সুবিধা হবে । এপার্টমেন্ট হলে কঠিন হত ।

মোট পাঁচজন এসেছে । গাড়িতে একজন রেখে চারজন নিঃশব্দে ভেতরে ঢুকে গেল । গেটে কোন দারোয়ান নেই । ব্যাপারটা আরমানের কাছে একটু অস্বাভাবিক মনে হলেও বাড়তি কিছু ভাবলো না । দেওয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে পড়লো । ভাল করে রেকি করে দেখলো বাসার ভেতরে আসলে কেউ নেই । মাস্টার কি দিয়ে মুল দরজাটা খুলে ফেলতে খুব বেশি সময় লাগলো না ।

দুজনকে বাড়ির সামনে পাহারায় রেখে বাকি দুজন মুল বাড়ির দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়লো । ঘরের ভেতরে ঢুকেশোবার ঘর থেকে এক প্রকার টেনে হিচড়েই মা আর মেয়ে বসার ঘরে নিয়ে আসা হল । তবে আরমান একটা ব্যাপার অবাক হয়ে খেয়াল করলো যে মা কিংবা মেয়ে কাউকেই ঠিক প্যানিক হতে দেখলো না সে । এটা সত্যিই তাকে অবাক করছে ।

-আরমান সাহেব

নাইরার মুখে নিজের নাম শুনে আরমান আরো অবাক হল । একভাবে তাকিয়ে রইলো নাইরার দিকে । তবে কিছু বলল না । নাইরাই বলল, আপনার কি একবারও মনে হল না এতো সহজে আপনারা এই বাড়িতে কিভাবে প্রবেশ করলেন?
-মানে ? কী বলতে চাও?
-আপনিই বলুন ! ধানমণ্ডির মত একটা বাড়িতে এতো সহজে প্রবেশ করা যায় ? আমি তো আপনাকে বুদ্ধিমান ভেবেছিলাম । এতো বুদ্ধিমান আর ক্ষমতাবান বাবার ছেলে । একটু তো বুদ্ধি থাকবে !

পিস্তলটা নাইরার দিকে তাক করলো আরমান । তারপর বলল, বেশি কথা না । তুমি জানো এখন তোমাদের সাথে কী হবে?
-জানি। কিছুই হবে না ।
-তাই ?
-হ্যা । তবে তার আগে ছোট একটা কথা বলি । ফয়সালের জন্যই তো আমাদের এখানে এসেছেন তাই না । ফয়সালের জীবনে তার বন্ধুর থেকে বড় আর কিছু ছিল না । সেই বন্ধুর কারণে সে নিজের ভালোবাসা পর্যন্ত বিসর্জন দিয়েছে হাসিমুখে । কোন দিন একটা টু শব্দও করে নি । তার বন্ধুর মৃত্যুর পরে তার কাছে এখন সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কে জানেন?

প্রশ্নটা যদিও আরমানের দিকে তাকিয়ে করা হয়েছে নাইরা সেই প্রশ্নের উত্তরের আশা করে নি । সে নিজেই তার উত্তর দিয়ে দিল । বলল, তার জীবনে এখন সব থেকে জরুরী হচ্ছে তার বন্ধুর মেয়ে । আর আপনি আজকে তাকে তুলে নিয়ে যেতে এসেছেন । আপনার কি মনে হয় সে এটার ব্যাপারে জানে না?

আরমান সরু চোখে তাকালো নাইরার দিকে ।

পাঁচ

আজিজুর রহমান তাকিয়ে রইলাম ফোনের দিকে । ঘড়িতে সময় দেখলো । বেশ রাত হয়েছে । বয়স হয়েছে এখন । আগে আগেই ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস । ডাক্তারের নির্দেশ তবে আরবাজের কিডন্যাপের পরে তিনি শান্তিমত ঘুমাতে পারছেন না । বিছানাতে শুয়ে পড়েন ঠিকই তবে ঘুম আসে না । আজকেও শুয়ে পড়েছিলেন । তন্দ্রার মত এসেছিলো তবে ঘুম আসে নি । এমন সময়ে ফোনটা এল ।
তার এই নম্বরটা খুবই গোপনীয় । খুব কাছের মানুষ ছাড়া এটা আর কারো কাছে নেই । কাজের জন্য যে ফোনটা ব্যবহার করেন সেটা রাত দশটার পরেই স্টাডি রুমে রেখে আসেন ।

-হ্যালো ।
-কেমন আছেন ?
কন্ঠটা চিনতে আজিজুর রহমানের একটুও সময় লাগলো না । কিছু সময় সে ফ্রিজ হয়ে রইলো নিজের ভেতরে । ওপাশ থেকে কন্ঠটা আবার ভেসে এল ।
সে বলল, এভাবে শান্তিমত ঘুমালে চলবে!
-কী বলতে চাও?
-বড় ছেলে তো গায়েব হয়েছে ছোট ছেলেও যদি মারা পড়ে তাহলে কেমন হবে বলুন । এই বুড়ো বয়সে কী হবে আপনার ! কে দেখবে?
রাগের একটা স্রোত বয়ে গেল আজিজুর রহমানের শরীর জুড়ে । একই সাথে একটা ভয়ের স্রোট বয়ে গেল ।
আরমান কোথায় ?
ওকে কিছু না করতে বলেছিলেন তিনি !
তাহলে কি কিছু করেছে সে ?
কোথায় গিয়েছে !
-আমার ছেলের যদি কিছু হয় !

ফোনের ওপাশ থেকে হাসির আওয়াজ পাওয়া গেল ! তারপরই ফোন কেটে গেল !

আজিজুর রহমান দ্রুত বিছানাকে থেকে উঠে গেলেন । পুরো বাড়ি খোজ করে বুঝতে পারলেন যে আরমান বাসায় নেই । সাথে সাথে ফোন দিলেন আরমানকে !

ছয়
আরমান একভাবে তাকিয়ে রয়েছে নাইরার দিকে । মেয়েটার এতো শান্তভাব তাকে একটু চিন্তিত করছে । এখানে এসে কি তাহলে ভুল করলো? এতো কিছু চিন্তা করার সময় নেই । তবে দুইজনকে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা বাদ দিলো সে । কেবল মেয়েটাকে নিয়ে যাবে । তাতেই কাজ হবে আশা করি।

আরও কিছু ভাবতে যাবে তার আগেই ফোনটা বেজে উঠলো । ফোনটা সামনে নিতেই অবাক হয়ে গেল । তার বাবার ফোন । কোন ভাবে কি তাহলে তার বাবা জেনে গিয়েছে ! সে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো ! তার ঘুমানোর পরেই আরমান বের হয়েছে ।
ফোনটা সে ধরবে না ভাবলো । কিন্তু তারপরেই মনে হল ফোন না ধরলে তার বাবা রেগে যাবে । বাবার রাগের কারণ হতে চায় না ।

-হ্যালো বাবা !
-কোথায় তুই?
-এইতো বাবা একটু বাইরে !
-শুয়েরের বাচ্চা সত্যি কথা বল !

বাবার রাগের ধরণ দেখেই আরমানের মনে হল যে তার বাবা ঠিক ঠিক জানে সে কোথায় আছে !
-বাবা আপনি ভাববেন না আমি …..

কথাটা শেষ করতে পারলো না তার আগেই ভোতা একটা আওয়াজ তার কানে এল । আরমান দেখতে পেল তার সাথে যে লোকটা ভেতরে ঢুকেছিলো সে মেঝেতে পড়ে যাচ্ছে । গুলিটা এসেছে ঠিক তার বাম দিক থেকে । সে ফোনটা নিয়ে ঘুরতে যাবে তার আগে আরও একটা ভোঁতা আওয়াজ হল । এবং সাথে সাথেই নিজের ডান হাতে একটা তীব্র ব্যাথা অনুভব করলো সে ।
হাত থেকে পিস্তল খসে পড়েছে । আরমান অবাক হয়ে দেখলো সেখান থেকে দুইটা আঙ্গুলও খসে গিয়েছে গুলির আঘাতে । সামনে বসা ছোট মেয়েটা একটা চিৎকার দিয়ে মায়ের কোলে মুখ লুকিয়েছে । সে এসব দেখতে চায় না ।

ফোনটাও হাত থেকে ছুটে গেল । আরমান তখন তাকে দেখতে পেল ।
পিস্তল হাতে ঘরে ঢুকেছে সে ।
নাইরার দিকে তাকিয়ে বলল, ঠিক আছো তোমরা?
-হ্যা । আমাদের কিছু হয় নি ।
-ভেতরে যাও ।
-না আমি থাকি ।
-মিয়ারাকে পাঠাও । ওর ভাল লাগবে না এসব !

মিয়ারাকে নিয়ে ভেতরে চলে গেল নাইরা ! ফয়সাল এগিয়ে এল আরমানের কাছে ! তারপর বলল, কী ভেবেছিলে সব কিছু এতো সোজা ! আসবে আর ধরে নিয়ে যাবে ?

আরমান ব্যাথার কারণে কোন কথা বলতে পারছে না । ফয়সাল মেঝেতে পড়ে থাকা ফোনটা তুলে নিল । তারপর সেটার দিকে তাকিয়ে দেখলো এখনও লাইনটা কেটে যায় নি । সেটা চালুই রাখলো । তারপর আরমানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আরমানের পায়ে গুলি চালালো । গুনে গুনে ছয়টা গুলি । আরমান তীব্র চিৎকার করে উঠলো । এমন সেটা চলতেই লাগলো ।

তারপর ফয়সাল নিজেই ফোন করে পুলিশ ডাক দিল । পুলিশ আসতেই ফরসাল তাদের জানালো যে একজন সন্ত্রাসী এই বাড়িতে ঢুকেছিলো । ভাগ্রক্রমে সে আজকে এদের বাসায় অতিথি ছিল । নিজেদের জীবন বাঁচাতে গুলি চালাতে হয়েছে । একজন গুরুতর আহত হয়েছে । তাকে হাতকড়া পরা অবস্থাতেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল ।

পুলিশ চলে গেলে নাইরা মেঝেতে পড়ে থাকা রক্ত পরিস্কার করছিলো । ফয়সাল বলল, আমি তাহলে আসি !
-চলে যাবে?
-হুম । তোমরা ঘুম দাও । পুলিশ রেখে যাচ্ছি । ওরা পাহারা দিবে ।
-আমার মনে হয় না যে ওরা আর আসবে !
-তবুও বলা যায় না । রিস্ক নেওয়া যাবে না ।
-তুমি কিভাবে জানতে ওরা আসবেই ।
-এটা একটা সাধারণ ব্যাপার । ওদের আসতেই হত !
-আরবাজ কি তোমার কাছে?

ফয়সাল এই প্রশ্নের উত্তর দিলো না । কেবল হাসলো । নাইরা আবার বলল, বেঁচে আছে?
ফয়সাল এই প্রশ্নের জবাবও দিল না । কেবল হাসলো । তারপর ঘর ছেড়ে বের হয়ে গেল ।

আগের পর্ব পরের পর্ব

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 43

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →