ঠান্ডা প্রতিশোধ (পর্ব দুই)

oputanvir
4.8
(42)

চার
আরমান কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে । সে আর পুলিশ কিংবা তার বাবার আশাতে বসে থাকবে না ঠিক করেছে । এইকদিনে বেশ ভাল খোজ নিয়েছে যদিও ফয়সাল আহমেদ সম্পর্কে সে অনেক কিছুই জানে । এই লোকটার কারণে তার বড় ভাই দীর্ঘদিন দেশে বাইরে ছিল । যদিও আরবাজ আহমেদের নামে কোন অভিযোগ ছিল না, কোন প্রমাণ ছিল না তারপরেও তাদের বাবা একজন পুলিশ অফিসারকে শত্রু বানিয়ে রাখতে চান নি । আর এই পুলিশ অফিসারের ব্যকআপ খুবই শক্তিশালী তাই নিজেকে ছেলেকে তিনি নিরাপদে দুরে রেখেছেন । এইবারও তার দেশের আসার পক্ষে আজিজুর চৌধুরীর সম্মতি ছিল না । তার জন্মদিনটা আরবাজ চেয়েছিলো সবাই মিলে একসাথে পালন করবে । ছেলের জোড়াজুড়িতে রাজি হয়েছিলেন । কোন দিন ভাবেনও নি যে এতো গুলো বছর পরেও এমন কিছু হতে পারে ।

আরমান ঠিক ঠিক জানে ফরসাল আহমেদকে কিভাবে লাইনে আনতে হয় । সে একেবারে শতভাগ নিশ্চিত যে তার ভাইকে ফরসাল আহমেদই গায়েব করেছে । কোন সন্ত্রাসী পক্ষে যে এর পেছনে নেই সেই ব্যাপারে আরমান নিশ্চিত । এটা তার বাবাও জানে । এবং এটাও জানে এটা ফয়সাল আহমেদই করেছে । কিন্তু ফরসাল আহমেদের কাছে শক্ত এলিবাই এবং সে যা করেছে খুব চতুরতার সাথেই করেছে । কোন ফাঁক নেই । তবে আরমান একটা ফাঁক ঠিকই খুজে পেয়েছে । সেটা হচ্ছে মৃত সেই অফিসারের পরিবার । ঐদুজনকে সে তুলে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছে । এদের নিয়ে এসে চাপ দিলেই ফরসাল আহমেদ ঠিকই তার ভাইকে বের করে দিবে ।

গাড়িটা যখন ধানমণ্ডিতে এসে থামলো তখন রাত প্রায় একটা । চারিদিকে সব প্রায় সব নিস্তব্ধ হয়ে আছে । কাজটা তাদের জন্য একেবারেই কঠিন হবে না । মৃত সেই অফিসার ধানমণ্ডির একটা বাড়িটে থাকে । মা আর মেয়ে । বাড়িটা মুল রাস্তা থেকে একটু ভেতরের দিকে । তবে এটা আধুনিক বাড়ির মত না । পুরানো আমলের বাড়ি । বাড়ির সামনে বড় লন রয়েছে । রয়েছে গাছপালা । এই বাড়িটা এখনও এপার্টমেন্ট করে কেন ফেলা হয় নি সেটা আরমান বুঝতে পারছে না । তবে ওদের জন্য ভাল হয়েছে । কাজটা সুবিধা হবে । এপার্টমেন্ট হলে কঠিন হত ।

মোট পাঁচজন এসেছে । গাড়িতে একজন রেখে চারজন নিঃশব্দে ভেতরে ঢুকে গেল । গেটে কোন দারোয়ান নেই । ব্যাপারটা আরমানের কাছে একটু অস্বাভাবিক মনে হলেও বাড়তি কিছু ভাবলো না । দেওয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে পড়লো । ভাল করে রেকি করে দেখলো বাসার ভেতরে আসলে কেউ নেই । মাস্টার কি দিয়ে মুল দরজাটা খুলে ফেলতে খুব বেশি সময় লাগলো না ।

দুজনকে বাড়ির সামনে পাহারায় রেখে বাকি দুজন মুল বাড়ির দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়লো । ঘরের ভেতরে ঢুকেশোবার ঘর থেকে এক প্রকার টেনে হিচড়েই মা আর মেয়ে বসার ঘরে নিয়ে আসা হল । তবে আরমান একটা ব্যাপার অবাক হয়ে খেয়াল করলো যে মা কিংবা মেয়ে কাউকেই ঠিক প্যানিক হতে দেখলো না সে । এটা সত্যিই তাকে অবাক করছে ।

-আরমান সাহেব

নাইরার মুখে নিজের নাম শুনে আরমান আরো অবাক হল । একভাবে তাকিয়ে রইলো নাইরার দিকে । তবে কিছু বলল না । নাইরাই বলল, আপনার কি একবারও মনে হল না এতো সহজে আপনারা এই বাড়িতে কিভাবে প্রবেশ করলেন?
-মানে ? কী বলতে চাও?
-আপনিই বলুন ! ধানমণ্ডির মত একটা বাড়িতে এতো সহজে প্রবেশ করা যায় ? আমি তো আপনাকে বুদ্ধিমান ভেবেছিলাম । এতো বুদ্ধিমান আর ক্ষমতাবান বাবার ছেলে । একটু তো বুদ্ধি থাকবে !

পিস্তলটা নাইরার দিকে তাক করলো আরমান । তারপর বলল, বেশি কথা না । তুমি জানো এখন তোমাদের সাথে কী হবে?
-জানি। কিছুই হবে না ।
-তাই ?
-হ্যা । তবে তার আগে ছোট একটা কথা বলি । ফয়সালের জন্যই তো আমাদের এখানে এসেছেন তাই না । ফয়সালের জীবনে তার বন্ধুর থেকে বড় আর কিছু ছিল না । সেই বন্ধুর কারণে সে নিজের ভালোবাসা পর্যন্ত বিসর্জন দিয়েছে হাসিমুখে । কোন দিন একটা টু শব্দও করে নি । তার বন্ধুর মৃত্যুর পরে তার কাছে এখন সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কে জানেন?

প্রশ্নটা যদিও আরমানের দিকে তাকিয়ে করা হয়েছে নাইরা সেই প্রশ্নের উত্তরের আশা করে নি । সে নিজেই তার উত্তর দিয়ে দিল । বলল, তার জীবনে এখন সব থেকে জরুরী হচ্ছে তার বন্ধুর মেয়ে । আর আপনি আজকে তাকে তুলে নিয়ে যেতে এসেছেন । আপনার কি মনে হয় সে এটার ব্যাপারে জানে না?

আরমান সরু চোখে তাকালো নাইরার দিকে ।

পাঁচ

আজিজুর রহমান তাকিয়ে রইলাম ফোনের দিকে । ঘড়িতে সময় দেখলো । বেশ রাত হয়েছে । বয়স হয়েছে এখন । আগে আগেই ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস । ডাক্তারের নির্দেশ তবে আরবাজের কিডন্যাপের পরে তিনি শান্তিমত ঘুমাতে পারছেন না । বিছানাতে শুয়ে পড়েন ঠিকই তবে ঘুম আসে না । আজকেও শুয়ে পড়েছিলেন । তন্দ্রার মত এসেছিলো তবে ঘুম আসে নি । এমন সময়ে ফোনটা এল ।
তার এই নম্বরটা খুবই গোপনীয় । খুব কাছের মানুষ ছাড়া এটা আর কারো কাছে নেই । কাজের জন্য যে ফোনটা ব্যবহার করেন সেটা রাত দশটার পরেই স্টাডি রুমে রেখে আসেন ।

-হ্যালো ।
-কেমন আছেন ?
কন্ঠটা চিনতে আজিজুর রহমানের একটুও সময় লাগলো না । কিছু সময় সে ফ্রিজ হয়ে রইলো নিজের ভেতরে । ওপাশ থেকে কন্ঠটা আবার ভেসে এল ।
সে বলল, এভাবে শান্তিমত ঘুমালে চলবে!
-কী বলতে চাও?
-বড় ছেলে তো গায়েব হয়েছে ছোট ছেলেও যদি মারা পড়ে তাহলে কেমন হবে বলুন । এই বুড়ো বয়সে কী হবে আপনার ! কে দেখবে?
রাগের একটা স্রোত বয়ে গেল আজিজুর রহমানের শরীর জুড়ে । একই সাথে একটা ভয়ের স্রোট বয়ে গেল ।
আরমান কোথায় ?
ওকে কিছু না করতে বলেছিলেন তিনি !
তাহলে কি কিছু করেছে সে ?
কোথায় গিয়েছে !
-আমার ছেলের যদি কিছু হয় !

ফোনের ওপাশ থেকে হাসির আওয়াজ পাওয়া গেল ! তারপরই ফোন কেটে গেল !

আজিজুর রহমান দ্রুত বিছানাকে থেকে উঠে গেলেন । পুরো বাড়ি খোজ করে বুঝতে পারলেন যে আরমান বাসায় নেই । সাথে সাথে ফোন দিলেন আরমানকে !

ছয়
আরমান একভাবে তাকিয়ে রয়েছে নাইরার দিকে । মেয়েটার এতো শান্তভাব তাকে একটু চিন্তিত করছে । এখানে এসে কি তাহলে ভুল করলো? এতো কিছু চিন্তা করার সময় নেই । তবে দুইজনকে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা বাদ দিলো সে । কেবল মেয়েটাকে নিয়ে যাবে । তাতেই কাজ হবে আশা করি।

আরও কিছু ভাবতে যাবে তার আগেই ফোনটা বেজে উঠলো । ফোনটা সামনে নিতেই অবাক হয়ে গেল । তার বাবার ফোন । কোন ভাবে কি তাহলে তার বাবা জেনে গিয়েছে ! সে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো ! তার ঘুমানোর পরেই আরমান বের হয়েছে ।
ফোনটা সে ধরবে না ভাবলো । কিন্তু তারপরেই মনে হল ফোন না ধরলে তার বাবা রেগে যাবে । বাবার রাগের কারণ হতে চায় না ।

-হ্যালো বাবা !
-কোথায় তুই?
-এইতো বাবা একটু বাইরে !
-শুয়েরের বাচ্চা সত্যি কথা বল !

বাবার রাগের ধরণ দেখেই আরমানের মনে হল যে তার বাবা ঠিক ঠিক জানে সে কোথায় আছে !
-বাবা আপনি ভাববেন না আমি …..

কথাটা শেষ করতে পারলো না তার আগেই ভোতা একটা আওয়াজ তার কানে এল । আরমান দেখতে পেল তার সাথে যে লোকটা ভেতরে ঢুকেছিলো সে মেঝেতে পড়ে যাচ্ছে । গুলিটা এসেছে ঠিক তার বাম দিক থেকে । সে ফোনটা নিয়ে ঘুরতে যাবে তার আগে আরও একটা ভোঁতা আওয়াজ হল । এবং সাথে সাথেই নিজের ডান হাতে একটা তীব্র ব্যাথা অনুভব করলো সে ।
হাত থেকে পিস্তল খসে পড়েছে । আরমান অবাক হয়ে দেখলো সেখান থেকে দুইটা আঙ্গুলও খসে গিয়েছে গুলির আঘাতে । সামনে বসা ছোট মেয়েটা একটা চিৎকার দিয়ে মায়ের কোলে মুখ লুকিয়েছে । সে এসব দেখতে চায় না ।

ফোনটাও হাত থেকে ছুটে গেল । আরমান তখন তাকে দেখতে পেল ।
পিস্তল হাতে ঘরে ঢুকেছে সে ।
নাইরার দিকে তাকিয়ে বলল, ঠিক আছো তোমরা?
-হ্যা । আমাদের কিছু হয় নি ।
-ভেতরে যাও ।
-না আমি থাকি ।
-মিয়ারাকে পাঠাও । ওর ভাল লাগবে না এসব !

মিয়ারাকে নিয়ে ভেতরে চলে গেল নাইরা ! ফয়সাল এগিয়ে এল আরমানের কাছে ! তারপর বলল, কী ভেবেছিলে সব কিছু এতো সোজা ! আসবে আর ধরে নিয়ে যাবে ?

আরমান ব্যাথার কারণে কোন কথা বলতে পারছে না । ফয়সাল মেঝেতে পড়ে থাকা ফোনটা তুলে নিল । তারপর সেটার দিকে তাকিয়ে দেখলো এখনও লাইনটা কেটে যায় নি । সেটা চালুই রাখলো । তারপর আরমানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আরমানের পায়ে গুলি চালালো । গুনে গুনে ছয়টা গুলি । আরমান তীব্র চিৎকার করে উঠলো । এমন সেটা চলতেই লাগলো ।

তারপর ফয়সাল নিজেই ফোন করে পুলিশ ডাক দিল । পুলিশ আসতেই ফরসাল তাদের জানালো যে একজন সন্ত্রাসী এই বাড়িতে ঢুকেছিলো । ভাগ্রক্রমে সে আজকে এদের বাসায় অতিথি ছিল । নিজেদের জীবন বাঁচাতে গুলি চালাতে হয়েছে । একজন গুরুতর আহত হয়েছে । তাকে হাতকড়া পরা অবস্থাতেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল ।

পুলিশ চলে গেলে নাইরা মেঝেতে পড়ে থাকা রক্ত পরিস্কার করছিলো । ফয়সাল বলল, আমি তাহলে আসি !
-চলে যাবে?
-হুম । তোমরা ঘুম দাও । পুলিশ রেখে যাচ্ছি । ওরা পাহারা দিবে ।
-আমার মনে হয় না যে ওরা আর আসবে !
-তবুও বলা যায় না । রিস্ক নেওয়া যাবে না ।
-তুমি কিভাবে জানতে ওরা আসবেই ।
-এটা একটা সাধারণ ব্যাপার । ওদের আসতেই হত !
-আরবাজ কি তোমার কাছে?

ফয়সাল এই প্রশ্নের উত্তর দিলো না । কেবল হাসলো । নাইরা আবার বলল, বেঁচে আছে?
ফয়সাল এই প্রশ্নের জবাবও দিল না । কেবল হাসলো । তারপর ঘর ছেড়ে বের হয়ে গেল ।

আগের পর্ব পরের পর্ব

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 42

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →