অভিযোগ পত্রের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইল এএসপি জাহিদ অনিক । খানিকটা বিরক্ত । তার বিরক্তির কারণ অভিযোগ পত্র নয়, যে অভিযোগটা করেছে সেই মেয়েটি। সে সাধারণত এমন কেস হ্যান্ডেল করে না। এর জন্য আরও নিচের পদের লোক রয়েছে। তবে এখন থানাতে আর কেউ নেই। তাই অনিক খানিকটা বাধ্য হয়েই কথা বলছে মেয়েটির সাথে।
মেয়েটিকে অনিক আগে থেকেই চেনে । মেয়েটির কাছে ওদের পুলিশ ডিপার্টমেন্ট আগেই বেশ কয়েকবার অপদস্ত হয়েছে । এমন সব কেস মেয়েটি এক নিমিষেই সমাধান বলে দিয়েছে যে মিডিয়ার সামনে ওদের নাক কাঁটা গেছে । মেয়েটি যা যা যেভাবে বলে দিয়েছে শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে ব্যাপারটা ঠিক সেই রকমই ঘটেছে। মেয়েটি কিভাবে এমন ভাবে বলতে পেরেছে এটা জানতে চাইলে মেয়েটি অদ্ভুত এক গল্প তাদের শুনিয়েছে।
গল্পটা এতোটাই অবিশ্বাস্য যে অনিকের সেটা মোটেই বিশ্বাস হয় নি । হওয়ার কথাও নয় । মেয়েটি নাকি মৃত মানুষদের সাথে কথা বলেছে। যাদের কে খুন করা হয়েছে তারা নিজেরাই নাকি এমনটা বলেছে। এমন কথা যদিও সে মিডিয়ার সামনে বলে নি ।
অনিক শান্ত কন্ঠে বলল, আপনাকে কে মারতে চাইবে ?
-আমি জানি না । তবে পরপর দুইবার এমন হয়েছে। আমি রাস্তায় নেমেছি দুইবার দুটো গাড়ি আমাকে চাপা দিতে গেছে !
-সম্ভবত আপনার মনের ভুল । জানেনই তো ঢাকা শহরের গাড়ি গুলো একটু বেপরোয়া ভাবেই চালায় ।
-আমি জানি সেটা । আমার জন্মই এই ঢাকাতে । কিন্তু যত বেপরোয়াই চালান এরা সামনে মানুষ দেখলে ব্রেক করে কিংবা করার চেষ্টা করে । কিন্তু আমার ক্ষেত্রে এমন কিছু হয় নি । আমি যদি না সরতাম শেষ মুহুর্তে গাড়ি আমাকে চাপা দিয়ে চলে যেত। কোন সন্দেহ নেই।
অনিক কিছু সময় কোন কথা না বলে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে একভাবে । বোঝার চেষ্টা করছে মেয়েটি সত্য নাকি মিথ্যা বলছে। এই সব ক্ষেত্রে মিথ্যা বলে মেয়েটির কোন লাভ নেই । অনিক এটা নিশ্চিত হল যে মেয়েটি অন্তত মিথ্যা বলছে না । কেউ যদি মেয়েটিকে খুন নাও করতে চায় তবে মেয়েটি যে ভয় পেয়েছে সেটা অনিকের বুঝতে কষ্ট হল না।
একটু নরম হয়ে এল অনিকের মনভাব । তারপর বলল, মিস সোনিয়া । আমি বুঝতে পারছি । তবে ভয় পাবেন না। আমি ব্যবস্থা করছি। আপনি কোন চিন্তা করবেন না ।
তবে অনিক রক্ষা করতে পারল না সোনিয়াকে । অনিকের সাথে দেখা করতে আসার ঠিক চারদিন পরে সোনিয়ার উপরে আবারও হামলা হল । এবার আর গাড়িতে করে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে নি ঘাতক । এবার সোজাসুজি গুলি করেছে।
সোনিয়া দুপুর বেলা নিজের ক্যাম্পাস থেকে বাসায় ফিরছিল। ওদের বাসার ঠিক কাছকাছি একটা নির্জন গলি রয়েছে । দুই মুখ খোলা । সেই গলির অন্য মুখে বাইকে একজন অপেক্ষা করছিল ওর জন্য। ওর দেখেই এগিয়ে এল বাইক এগিয়ে এল । এবং ওর কাছাকাছি আসতেই একটা পিস্তল বের করে সরাসরি ওকে গুলি করল । এই পুরো ঘটনা জানলায় বসে থাকা একজন বৃদ্ধ দেখতে পেয়েছিলেন । তিনি বাইকারকে দেখেছিলেন আগেই । ওখানে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার মনে একটা সন্দেহ জেগেছিল। তাই চোখ রেখেছিল সেদিকে । যদিও সে বাইকারের চেহারা দেখতে পায় নি ।
অনিক পুরো স্টেটমেন্টরা গাড়িতে বসেই পড়ল । গাড়িটাছুটে চলছে হাসপাতালের দিকে ।
দুই
খবরের কাগজের দিকে তাকিয়ে লোকটার মুখে একটু হাসি ফুটল। মেয়েটিকে সে মেয়ে ফেলতে চায় নি একদমই । তবে সে বেঁচে থাকলে তার পরিকল্পনা কাজে দিতো না কোন ভাবেই । কাজ সে হইয়তো করেই ফেলত তবে শেষ পর্যন্ত তাকে ধরেই ফেলত পুলিশ । তবে এখন আর সেটা হবে না । মেয়েটা যদি মারা যেত তবে ব্যাপারটা ওর জন্য আরও নিশ্চিত হত তবে আইসিইউয়ের ভেতরে থাকলেও তার চলবে ।
নিজের পরিকল্পনাটা আরেকবার ঝালাই করে নিল মনে মনে । আজকে রাতেই তার কাজটা করতে হবে ।
তিন
খবরটা চাপা থাকল না । মুহুর্তের ভেতরেই ছড়িয়ে পড়লো পুরো ইন্টারনেট জুড়ে। বিখ্যাত নায়িকা নিরানা চৌধুরী তার নিজ বাসায় খুন হয়েছেন। পুলিশের কাছে খবর পৌছানোর আগেই খবর ছড়িয়ে গেছে ইন্টানেটে । তার বাড়ির সামনে ভীড় লেগে গেছে এর ভেতরেই। অনিকের কাছে যখন খবর পৌছালো তখন পুরো দেশের মানুষ খবরটা জেনে গেছে।
নিরানা চৌধুরীর মৃত্যুর সংবাদ কানে যাওয়া মাত্র অনিকের প্রথম সোনিয়ার কথা মনে হল । মনে হল যে এই খুনটা করার জন্যই সোনিয়াকে রাস্তা থেকে সরানো হয়েছে । এমন কী হতে পারে?
চিন্তাটা অনিককে মোটেই শান্তি দিল না । গাড়িতে বসে অনিকের বারবার এই চিন্তাটা আসতে লাগল । নিজের ফোন বের করে একটা নম্বরে অনিক ফোন দিল । তাকে নির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা দিয়ে সে ফোনটা আবার পকেটে ভরে ফেলল।
হাই প্রোফাইল কেস ! নায়িকার মৃত্যু !
নিরারা চৌধুরীর বাড়ির সামনে প্রচুর মানুষের ভীড় । পুলিশের গাড়ি নিয়ে ভেতরে ঢুকতেও খানিকটা বেগ পেতে হল । ভেতরে ঢুকতেই অবশ্যই বাকি কাজ একদম সহজ হয়ে উঠল। এস আই জামিল সব কাজ শেষ করে এনেছে এর ভেতরেই । লাশ ময়না তদন্তে পাঠানোর ব্যবস্থাও প্রায় শেষ !
-কী মনে হচ্ছে?
অনিক জামিলকে প্রশ্ন করল। জামিল বলল, স্যার সহজ কেস ! নিরানা ম্যাডামের বেশি রাত জাগার অভ্যাস ছিল না। উনি প্রতিদিন রাত এগারোটার ভেতরেই ঘুমিয়ে যেতেন। বিশেষ করে অভিনয় জগত থেকে নিজেকে সরিয়ে আনার পরপরই এই রুটিন ফলো করছিলেন। বাড়ির কাজের মানুষদের ভাষ্য অনুসারে আজকে রাত সাড়ে দশটার ভেতরেই রাতের খাবার শেষ করে নিজের ঘরে চলে যান। তারপর আর কারো সাথে দেখা হয় নি। কাজের লোকদের জন্য বাড়ির পেছনে সার্ভেন্ট কোয়াটার রয়েছে । রাত এগারোটার ভেতরেই তারা কাজ শেষ করে নিজেদের ঘরে চলে যায়। রাতে কাজের লোকরা আর এই বাড়িতে ঢোকে না । সকালে আটটায় নাস্তা খাওয়ার অভ্যাস তার। আজকে যখন আটটা বাজতেও তিনি নিচে নেমে আসছিলেন না তখন একজন উপরে ওঠে । দরজায় কয়েকবার নক করেও যখন কেউ দরজা খুলছিল না তখন কাজের লোকেদের একজন দরজা খুলে ভেতরে ঢোকে। তখনই দেখতে পায় যে নিরারা চৌধুরীর রক্তাক্ত দেহ মেঝেতে পড়ে আছে । পাশেই পিস্তলটা পরে আছে ।
-ওনার স্বামী ? সে কোথায় ছিল?
ওনার স্বামী পরিচালক ওমর রাহয়ান । স্যুটিংয়ের কাজে গাজীপুর ছিলেন। আজকে সকালেই ফিরেছেন । আমরা এখানেই ছিলাম তখন ! উনি এখন পাশের ঘরে শুয়ে আছেন । নিজের স্ত্রীর এই অবস্থা দেখে খানিকটা অসুস্থ হয়ে গেছে ।
এমন অবস্থায় প্রথম সন্দেহ জাগে স্বামীর উপরেই। তবে এই ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে স্বামীর অবস্থা বেশ পরিস্কার । তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে কে আর কেন নিরানাকে খুন করল ? নাকি নিরানা আত্মহত্যা করেছে ! অবশ্য আত্মহত্যার হওয়ার কারণ নেই খুব একটা । কারণ যেভাবে বুকের কাছে গুলি লেগেছে আত্মহত্যা করলে গুলি স্বাধারনত এভাবে লাগে না । নিজেকে এভাবে গুলি করাটা একটু ঝামেলার !
-রাতে কেউ এসেছিল?
জামিল বলল, মেইন গেটে সব সময় দারোয়ান থাকে । প্রথমে সে বলেছিল যে কেউ আসে নি । সে সারা রাত জেগেই ছিল । তবে একটু চাপ দিতেই জানাল যে রাতে কদিন থেকে ঘুমিয়ে পড়ছে সে । শরীরটা একটু খারাপ । রাত করে যখন সাহেব বাসায় আসেন তখন গেটের কাছে এসে হর্ন দিতেই তার ঘুম ভাঙ্গে । গতকাল তার ঘুম ভাঙ্গে নি । তবে কেউ যদি এসেও থাকে সেটা সে টের পায় নি।
অনিক বলল, বাড়ির দেয়াল কিন্তু খুব বেশি উচু না । চাইলেই যে কেউ টপকে আসতে পারে !
-জ্বী স্যার। চাইলেই খুব সহজেই যে কেউ দেয়াল টপকাতে পারে। তবে বাড়ির ভেতরে কোন প্রকার ফোর্স এন্ট্রি নেই। হয় কেউ দরজা খুলে দিয়েছে নয়তো তার কাছে চাবি ছিল ।
অনিক আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল ঠিক এই সময়ে ওর মোবাইলটা বেজে উঠল । নম্বরটা দেখেই মুখে একটা হাসি আসল ।
-চলে এসেছেন?
-জ্বী
-আপনাকে নিতে লোক যাচ্ছে ।
ঠিক কয়েক মিনিট পরেই সোনিয়া ঘরে ঢুকল । একজন অফিসার সোনিয়ার হুইল চেয়ারটা ঠেলে ঘরের ভেতরে নিয়ে এল ।
চার
সেদিন সোনিয়ার উপরে হামলা হয়েছিল ঠিকই তবে গুলিটা ঠিক জায়গাতে লাগে নি । কোন প্রফেশনালের কাজ নয় এটা । এই কারণেই সম্ভবত বাইক চালানোর সময়ে ঠিক মত গুলি লাগাতে পারে নি । সঠিক স্থানে গুলিটা তাই লাগে নি ।
সেদিন অনিক যখন কেবিনের ভেতরে প্রবেশ করল তখন সোনিয়ার চোখ মেলে তাকিয়েছে । ঘরের ভেতরে আরও কয়েকজন বসে ছিল। অনিককে ভেতরে ঢুকতে দেখে সবাই একটু নড়েচড়ে বসল । তারপর একজন উঠে গিয়ে অনিককে বসার জায়গা করে দিল । সাথে আসা গার্ড দুজন কেবিনের বাইরেই অপেক্ষা করল । ওরা ভেতরে ঢুকল না।
অনিক সোনিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি খুবই দুঃখিত । ব্যাপারটা যে এতো দ্রুত ঘটে যাবে আমরা কেউ বুঝতে পারি নি ।
একেবারে কোনার দিকে বসে থাকা একজন বলল, আপনারা কোন ব্যাপারটাই বা বুঝতে পারেন? সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে কোন চিন্তা আছে আপনাদের?
অনিক কিছু বলতে গেল, দেখুন …
সোনিয়া মৃদু স্বরে বলল, মামা এখন এসব বাদ দাও তো । তোমরা একটু বাইরে যাও । আমি ওনার সাথে একটু কথা বলি !
অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও একে একে সবাই ঘরের বাইরে চলে গেল । অনিক সোনিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি আসলে খুবই দুঃখিত । আপনার মামার অভিযোগ মিথ্যা নয় । যদি সত্যি আপনার কিছু হয়ে যেত আমি নিজেকে কোনদিন মাফ করতে পারতাম না। আমার ব্যাপারটা আরও সিরিয়ালসি নেওয়া দরকার ছিল ।
-যা হবার হয়েছে । এখন তো বুঝতে পারছেন যে কেউ একজন সত্যিই আমাকে মারতে চাইছে?
-হ্যা । আমি জানি আপনার উপরে অনেকের রাগ রয়েছে । আপনার কারণেই অনেকেই ধরা পড়েছে । তাদের সবাই জেলে হলেও হয়তো তাদের সঙ্গী সাথীদের এই কাজটা করেছে।
সোনিয়া চোখ বন্ধ রইল কিছু সময় । তারপর বলল, না আমার মনে হচ্ছে কোন পুরানো অপরাধের সাথে এই হামলা যুক্ত নয় । বরং আমার মনে হচ্ছে যে সামনের মানে ভবিষ্যতের কোন অপরাধের সাথে এটা যুক্ত !
অনিক বলল, মানে আমি ঠিক বুঝলাম না ।
-মানে হচ্ছে, সামনে কেউ মারা যাবে অথবা কাউকে খুন করার পরিকলনা করা হয়েছে এবং খুনীকে যাতে কেউ ধরতে না পারে সেই জন্য আমাকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একবার ভাবুন আপনার কাছে কাউকে খুন করার একটা ফুলপ্রুফ পরিকল্পনা করেছে কেবল একজন রয়েছে যে কিনা চাইলে আপনার জারিজুড়ি । আপনি তাহলে কী করবেন?
অনিক কিছুটা সময় ভাবার চেষ্টা করল । সোনিয়া আবার বলল, দেখুন আপনি সত্যিই বিশ্বাস করেন বা না করেন তাতে কিছু যায় আসে না কিন্তু অনেকেই আমার এই ব্যাপারটা বিশ্বাস করে । এবং তারা এটা মানে যে আমি আসলেই তাদের দেখতে পাই। আমার কারণে তাদের অপরাধ ধরা পড়তে পারে । বিশেষ করে যারা অপরাধ করে তাদের মনে সব সময় ধরার একটা ভয় থাকে । তারা সম্ভব্য সকল হুমকি সরিয়ে ফেলতে চায় ।
-আর যে অপরাধটা করতে যাচ্ছে সে আপনাকেও সরিয়ে ফেলতে চাইছে?
-জ্বী !
দুজনের কেউ কিছু সময় কথা বলল না কোন ।
-কোন ভাবে তো উপায় নেই কোন অপরাধ হতে যাচ্ছে সেটা বের করা?
-জ্বী না । এটা কোন ভাবেই তো সম্ভব না । কে কাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করছে এটা জানা আসলে কোন ভাবেই সম্ভব না । আপনারা কী সেই বাইকারের কোন খোজ বের করতে পেরেছেন?
-নাহ পারি নি । বাইকের কোন নম্বর প্লেট ছিল না । আর বাইকার ছিল হেল্মেট পরে । তাই যতগুলো সিসিটিভিতে তাকে দেখা গেছে তার চেহারা বা বাইকের নম্বর আমরা দেখতে পারি নি ।
-তাহলে এখন আর কিছু করা সম্ভব না । বসে বসে অপেক্ষা করা ছাড়া !
-সে তো আবারও আপনার উপরে হামলা করবে । আমি আপনার এই বেঁচে যাওয়ার খবরটা আপাতত আটকে রেখেছি । বাইরের কেউ জানে না । তাদের জানানো হয়েছে যে আপনার অবস্থা সংকটাপন্ন ।
সোনিয়া খানিকটা অবাক হয়েই বলল, এতে ভয়ংকর একটা কান্ড হতে পারে ! যখনই সে বুঝে যাবে আমি নেই বা আসতে পারব না তখনই সে তার কাজ করে ফেলবে । সেই মানুষটা মারা যাবে!
আর যত সময় আপনি ঠিক আছেন এটা সে জানবে ততক্ষণ তো আপনি নিজে নিরাপদ না । এটা বুঝতে পারছেন না? এইবার আপনার ভাগ্য ভাল তাই অল্পের উপর দিয়ে গিয়েছেন । সামনের বার যে এতো ভাগ্য ভাল হবে এটার নিশ্চয়তা কী? দেখুন আমি বুঝতে পারছি আপনার পয়েন্ট ! কিন্তু যাকে আমি চিনি না তাকে রক্ষা করার কোন উপায় আমার জানা নেই । যাকে চিনি তাকে আমি রক্ষা করতে চাই । আর আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি যে ঐ বাইকারকে খুজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছি ।
সোনিয়া আরও বার কয়েক চেষ্টা চালাল তবে অনিক কিছুতেই সোনিয়ার কথা শুনল না । তার একই কথা যে আপাতত এই সংবাদই বাইরে প্রকাশ করা হবে ।
পরের দিনই সোনিয়া দেখতে পেল সংবাদটা । ওর উপরে হামলা এবং তার অবস্থা যে ভাল না সেটাও প্রকাশ করা হল ।
সোনিয়ার মাথা থেকে তিন্তাটা কিছুতেই গেল না । বারবার কেবল মনে হতে লাগল যে ওর কারণেই হয়তো একজনের উপর চরম বিপদ নেমে আসবে । ওর কারণেই একজন মারা পড়বেন।
পাঁচ
অনিক দেখতে পেল সোনিয়া এরই ভেতরে বেশ সুস্থ হয়ে উঠেছে । ওর দিকে তাকাতেই একটু হাসল । তারপর সোনিয়া খুব ধীর পায়ে এগিয়ে গেল লাশের কাছে। কিছু সময় সেদিকেই তাকিয়ে রইল । তারপর অনিকের দিকে ফিরে তাকাল । বলল, খুনটা ওমর রাহয়ান করেছে । সে গতকাল রাতেই বাসায় ফিরে আসে । কিভাবে এসেছে সেটা জানি না তবে খুন করেছে ওমর রায়হান।
রায়হান প্রথমে অস্বীকার করল বটে তবে তাকে যখন থানায় নিয়ে গিয়ে ভাল করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হল। তখন ওমর রায়হান সব স্বীকার করে নিল । বিশেষ করে গাজিপুর গোলচত্তরে একটা সিসিটিভি ফুটেজে রায়হানকে বাইকে করে আসতে দেখা গেল তখন রায়হানের সব স্বীকার করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না । সে জানাল যে খুন করার পরিকল্পনা নিয়েই সে এসেছিল । ইউনিটের একটা বাইক নিয়েছিল । এক নায়িকার সাথে তার প্রেম চলছিল।
অনিক এবার ওমরের দিকে তাকিয়ে বলল, এই জন্যই আপনি সোনিয়াকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন ?
এই প্রশ্নের উত্তর শুনে ওমর একটু অবাকই ছিল । বলল, সোনিয়াকে ?
-আপনি চিনেন না?
-না । এই নামের আমি কাউকে চিনি না । ফিল্মের কেউ ?
অনিক কিছুটা সময় তাকিয়েই রইল ওমরের দিকে। তার অভিজ্ঞ চোখ দেখেই মনে হচ্ছে যে ওমন মিথ্যা কথা বলছে না । অথবা ওমন খুব বেশি দক্ষ অভিনেতা ! সোনিয়াকে যদি এই লোক না চিনে থাকে তাহলে সোনিয়াকে কে খুন করতে চেয়েছিল?
এর কোন উত্তর পাওয়া গেল না ।
পরিশিষ্টঃ
সোনিয়াকে আজকে আজকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে দেওয়া হয়েছে । প্রায় একটা সপ্তাহ ওকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল যদিও মাঝে একদিন ওকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ।
এই পুরোটা সময় সোনিয়া নিজের কাছে কেমন নির্জিব হয়ে থেকেছে । কয়েকবার মনে হয়েছে যদি অনিক ওর স্বাস্থ্যের ব্যাপারে মিথ্যা খবর না ছড়িয়ে দিত তাহলে হয়তো ঐ নায়িকা মারা যেত না । কিন্তু অনিকের কাছ থেকে যখন জানতে পারল যে ওমর রায়হান তাকে ঠিক চেনেই না তখন মাথার ভেতরে নতুন আরেক চিন্তা এসে উদয় হল । তাহলে কী অন্য কেউ রয়েছে ?
বাসায় নিজের বিছানাতে শুয়ে শুয়ে এইসবই ভাবল সারাটা দিন । বিকেল বেলা সোনিয়ার মা এসে বলল, জানিস তুই যেদিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলি সেদিন রাতে আমাদের ছয় তলার মেয়েটা আত্মহত্যা করেছে।
সোনিয়া চমকে উঠে বলল, কী বললে?
-হ্যা ! ঘুমের ঔষধ খেয়ে মারা গেছে ।
-আমাকে আগে বল নি কেন? আর লাশ কোথায়?
-তুই নিজেই তো হাসপাতালে তাই জানাই নি । আর লাশ তো দাফন হয়ে গেছে । আত্মহত্যা বলে মনে হয়েছে পুলিশের কাছে ।
সোনিয়া হতাশ বোধ করল। ওর কেন জানি মনে হল যে ছয় তলার ভাড়াটেকে খুনই ছিল আসল পরিকল্পনা । সোনিয়ার ব্যাপারে ওরা জানত ভাল করেই। এই এলাকার সবাই জানে ওর ব্যাপারে!
মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল । আসল খুনিকে সে বের করবেই!