শোভনের দিকে তাকিয়ে নওরিন হাসলো । চোখের ইশারায় একটা কথা বুঝিয়ে দিল । গতকাল রাতে শোভনের সাথে একটা ব্যাপার নিয়ে সে বাজি ধরেছিলো । সেটাই সে জিতে গিয়েছে ।
শোভন তবুও হার মানবে না এতো সহজে । সজিবের দিকে তাকিয়ে বলল, এই রেহানের কী খবর বল তো ?
সজিব রোস্টে কামড় দিতে দিতে বলল, তোর তো ভাল জানার কথা । আমি তো ভেবেছিলাম ওকে এখানে দেখতে পাবো ।
-ওর সাথে যোগাযোগ হয় ?
-হ্যা কেন হবে না । গত সপ্তাহেও দেখলাম ক্যাম্পাসে এসেছিলো । আরিফের সাথে বসে গল্প করছিলো !
শোভন আর কিছু জানতে চাইলো না । ওর মন একটু খারাপ হল । এভাবে রেহান ওকে এড়িয়ে কেন চলছে সেটা ও কোন ভাবেই বুঝতে পারছে না । আজকে ভেবেছিলো রেহান আসলে ওকে চেপে ধরে সব কথা জানতে চাইবে । কেন ও এমন আচরন করছে সেটা জানতে চাইবে কিন্তু আজকে এল না ।
অবশ্য নওরিন ওকে গতকাল রাতেই বলেছিলো যে রেহান কিছুতেই আসবে না । এটা নিয়ে ওদের মাঝে এক হাজার টাকার বাজিও ধরা হয়েছিলো । দেখা গেল নওরিন জিতে গেল ।
আজকে শোভন আর নওরিন ওদের বিয়ে উপলক্ষে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের দাওয়াত দিয়েছিলো । শোভনের আশা করেছিলো আজকে অন্তত আসবে । এমন কি রেহান মেসেজের জবাবে বলেছিও যে ও আসছে । তবে একেবারে শেষ সময়ে জানালো যে ওর একটা বিশেষ কাজ পড়ে গেছে । সেখানেই যেতে হবে. সরি বলল অনেক বার ।
রাতের বেলা সব কাজর কর্ম শেষ করে শোভন টিভির ঘরে বসে টিভি ছেড়ে দিলো । যদিও সে টিভিতে কিছুই দেখছে না । কিছু যেন ভাবার চেষ্টা করছে কিন্তু মাথার ভেতর থেকে রেহানের চিন্তাটা কিছুতেই চলে যাচ্ছে না । সেই কলেজ জীবন থেকে রেহানের সাথে ওর বন্ধুত্ব । একই হলে একই রুমে থাকতো ওরা । পড়াশোনা শেষ করেও তাদের সব সময় যোগাযোগ হত কথা হত । চাকরি পাওয়ার পরে তাদের এই যোগাযোগ কমে যায় নি । কিন্তু শোভনের বিয়ের পরে হঠাৎ করেই একেবারে যোগাযোগ কমে গেল । বিয়ে করলে বন্ধুদের মাঝে যোগাযোগ করে যাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার কিন্তু সেটা যদি শোভনের দিক থেকে হত সেটাও মেনে নেওয়া যেত । যোগাযোগ কমেছে রেহানের দিক থেকে । তাও একেবারে ঝট করে । এটা শোভনের মন খারাপের কারণ ।
নওরিন একটু পরেই এসে বসলো ওর পাশে । ওর দিকে তাকিয়ে বলল, টাকা কই ?
-আরে বাবা নিও । তোমারই তো টাকা । তার আগে একটা প্রশ্নের জবাব দাও যে তুমি কিভাবে জানলে যে রেহান আসবে না?
-আমি জানি । এরপর সে তোমার সাথে আরও যোগাযোগ কমিয়ে দিবে । এবং আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে তাহলে সে সম্ভবত পোস্টিং দিয়ে ঢাকা ছেড়েই চলে যাবে । পারলে দেশে ছেড়ে চলে যাবে।
-কী বলছো এসব ? আর তুমি এসব কিভাবে জানো ?
নওরিন একটু চিন্তা করলো । একবার মনে করলো যে যা বলতে চায় সেটা বলবে কিনা । শোভন কিভাবে নেবে সেটাও সে জানেও না । ভাল খারাপ দুইভাবেই নিতে পারে । তবে রেহানের ব্যাপারটা যদি মাথায় রাখে তবে বলে দেওয়াই ভাল । শোভন এই ব্যাপারটা নিয়ে একটু কষ্টে আছে । বিশেষ করে রেহানের এমন আচরণের কোন কারণ সে বুঝতে পারছে না । এটাই ওর কষ্ট পাওয়ার বড় কারণ । সত্যটা জানতে পারলে হয়তো একটু কষ্ট কমবে ।
নওরিন একটা লম্বা দম নিয়ে বলল, তোমার বন্ধু আমার প্রেমে পড়েছে ।
শোভন একটা বড় ধাক্কা খেল । চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । তারপর বলল, তুমি কিভাবে জানো শুনি?
-আমরা মেয়েরা বুঝতে পারি । আমাদের ভেতরে এই ব্যাপারটা আছে । তুমি জানো এই ব্যাপারটা ।
শোভন এই ব্যাপারে আর কথা বাড়ালো না । সে এই ব্যাপারটা জানে । মেয়েরা ঠিক ঠিক বুঝতে পারে যে কোন পুরুষ তাদেরকে কোন চোখে দেখে ।
নওরিন বলল, বিয়ের সময় যখন রেহান আমাকে দেখলো তখনই আমার মনে হয়েছিলো সে আমাকে ওর ভয়ংকর পছন্দ হয়েছে । কিন্তু বিয়ের পরে মনে আছে আমাদের বাসায় ও এসেছিলো একদিন ! সেইদিন যখন ও আমাকে দেখে সেদিন আমি নিশ্চিত হয়ে যাই আমার প্রেমে পড়ে গেছে ও ।
আমি ভেবেছিলাম যে হয়তো অন্য পুরুষের মত করে ও এবার আমার পেছনে ছোকছোক করবে । জানোই তো পুরুষদের যা স্বভাব !
-রেহান মোটেই এমন না !
-হ্যা আমি জানি । সেটাই আমাকে অবাক করেছে । রেহান আসলেই এমন না । এমন যদি হত তাহললে তোমার সাথে আরও বেশি যোগাযোগ করতো । এই বাড়িতে ঘনঘন আসতো ! কিন্তু আমার প্রতি ওর ভালোবাসা থেকে ও তোমার বন্ধুত্বকে বেশি মর্জাদা দিয়েছে । পাছে যোগাযোগ রাখলে ওর দ্বারা কোন অন্যায় হয়ে যেতে পারে, জানোই তো মানুষের মন কত খানি অনিয়ন্ত্রিত ! তাই সে একেবারে দুরে সরে গেছে । ফেসবুক থেকে আমার আইডি ও ব্লগ করে দিয়েছে । এবং আমি নিশ্চিত যে তোমাকে ব্লক না করলেও ওর আইডি সে আনফলো করে রেখেছে । বিয়ের পরে সে তোমার ছবি স্টাটাসে একদম লাইখ দেয় না তাই না?
শোভন একটু চিন্তা করে বলল, হ্যা সত্যই তাই
-এটাই হচ্ছে কারণ !
-ছাগলটা এমন করবে ভাবি নি কোন দিন !
-আসলে ওকে দোষ দিয়েও লাভ নেই । এমন হতেই পারে । জানো প্রতিটি মানুষের কিছু পছন্দের ব্যাপার থাকে । রেহান সম্ভব ছোট থেকে এমন কোন মেয়েকে কল্পনা করতো নিজের জীবন সঙ্গী হিসাবে যার চেহারা অনেকটাই আমার মত । এইজন্য এভাবে আমার প্রেমে পড়েছে ।
এরপর নওরিনের কথাই সত্য হল । সত্যি সত্যি রেহান নিজের কাজের পোস্টিং নিয়ে চলে গেলে ঢাকার বাইরে । এবং তারও মাস ছয়েক পরে সে জার্মান চলে গেল সব কিছু ছেড়ে ।
জীবনের গল্প গুলো বড় অদ্ভুত । মানুষ কখন কার প্রেমে পড়বে সেটার কোন নিশ্চয়তা নেই । আর এই এক প্রেমে পড়া মানুষের পুরো জীবন বদলে দিতে পারে ।
এই গল্পের ব্যাপারে একটা মজার তথ্য শেয়ার করি । আমার যখন কোন গল্পের থিম মনে আসে তখন সেটা আমি আামর মোবাইলে নোট প্যাডে লিখে রাখি প্রায় যাতে পরে সেটা নিয়ে গল্প লেখা যায়। এই গল্পের থিমটা আমার কয়েক মাস আগে মনে এসেছিলো । থিমটা এমন ছিল যে ঘনিষ্ঠ বন্ধ থাকবে দুজন । একজন বিয়ে করবে এবং পরে সেই বন্ধুর বউয়ের প্রেমে পড়বে । পরে বন্ধুত্বের কারণে সে একেবারে দুরে চলে যাবে পাছে কোন অনৈতিক কাজ করে ফেলে । কয়েকদিন এমন একটা গল্প পড়লাম। সেখানেও বন্ধুর বউয়ের প্রেমে পড়ে ।যদিও সেটা অন্য ধরনের গল্প । সেই হিসাবে এটা মৌলিক গল্প নয় ।