রাবার গার্ল (শেষ পর্ব)

oputanvir
4.7
(23)

প্রথম পর্ব

চোখ মেলে তাকালাম । চোখের সামনে পরিচিত সিলিং চোখ পড়লো । মুখ খুলতে গিয়ে টের পেলাম সেটা আটকে আছে । তারপরেই মনে পড়লো আমি রাবার লেটাক্সের ড্রেসটা পরে আছি । আমার মুখেও মাস্ক পরা রয়েছে । মাস্কটা এতো এটে ভাবে মুখের সাথে এটে থাকে যে আমি আমার ঠোঁট নাড়িয়ে কথা বলতে পারি না কিংবা মুখ হা করতে পারি না ।

এ কদিনে আমার এই লেটাক্সের ড্রেসটার উপরে অদ্ভুত একটা আকর্ষণ সৃষ্টি হয়েছে । আমি এটা ছাড়া যেন একটু সময়ও থাকতে পারছি না । সব সময় এটা পরে থাকতে মন চাচ্ছে । যত সময় সম্ভব তাই থাকছি । এ ছাড়াও এই ড্রেসটার ভেতরে একটা অদ্ভুত ব্যাপার রয়েছে যা আমি কোন ভাবেই বুঝতে পারছি না । সময়ে সময়ে এই ড্রেসটা আমার সাথে এমন আচরন করে যা আমাকে অবাক করে তোলে । এতোটা অবাক যে আমি সত্যিই বুঝতে পারি না । মনে হয় যেন এই ড্রেসটার একটা প্রাণ আছে । এই ড্রেসটার ভেতরে ঢুকলেই আমি যেন এর হাতে বন্দি হয়ে যাই । অবশ্য ইচ্ছে করেই আমি এই ড্রেসটার কাছে নিজেকে সমর্ন করি । আমার নিজের ভেতরে যে একটা কিছু তৈরি হয়েছে এই ড্রেসটার জন্য সেটা আমি নিজেও বুঝতে পারছি ।

আমি বিছানা থেকে উঠে দাড়ালাম । নিজেকে আয়নাতে দেখলাম আবার । ড্রেসটা যেন আরও তীব্র ভাবে আমার শরীরের সাথে এটে রয়েছে । এমন এমনি আমার নিপলটা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে । পেছনে দিকেও কোমরের নিচের ভাজ গুলো এতো পরিস্কার ভাবে ফুটে উঠেছে যে এটাকে আমার স্কিনই মনে হবে সবার ।

আমি আস্তে আস্তে নিচে নেমে এলাম । আমি জানি বাবা এতো সময়ে কাজে চলে গেছে । প্রথম প্রথম আমার বেশ লজ্জা আর সংকোচ লাগতো এই ড্রেস পরে নিজের ঘর থেকে বের হতে কিন্তু এখন আর সেই ভয় নেই । সংকোচটা কেটে গেছে । আমি এখন এই ড্রেসটা পরেই পুরো বাড়ি ঘুরে বেড়াি । বাড়ির বাইরেও বের হই । আমাদের বাড়িটা এলাকার একদম একপাশে । এখানে কেউ সাধারনত আসে না । তাই সংকোচটা চলে গেছে ।

সকালের নাস্তার টেবিলে বসলাম আমি । আমার মুখে এখনও মুছে মাস্ক রয়েছে । এটা পরে কোন ভাবে খাওয়া সম্ভব না । আমি জানি আমি এখন মাস্কে হাত দিতেই এটা খুলে যাবে । আমি পেছনে হাত দিলাম । চেইনটা খুজেও পেলাম । মাস্কটা খুলেও এল সাথে সাথে । নাস্তা শেষ করতেই কলিংবেল বেজে উঠলো ।
আমি একটু চমকে উঠলাম । কারণ ডাইনিং টেবিল থেকে দরজাটা দেখা যায় । দরজাটার উপরের অর্ধেকটা কাঁচের তৈরি । আমি সেদিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম কে এসেছে । আমার বুকের ভেতরে আবার সেই অস্বস্তি এসে জমা হল । আমি এই বারার লেটাক্সের ড্রেসটা সব সময় পরে থাকলেও কারো সামনে যাওয়া হয় নি ।
আমি কি করবো ঠিক বুঝলাম না । মেয়েটা আমাকে ভাল ভাবেই দেখতে পাচ্ছে যে আমি টেবিলে বসে খাওয়া দাওয়া করছি । এখন আমি কি ভেতরে গিয়ে অন্য পোশাক পরে আসবো আবার? এই ড্রেসটা আমি খুলতে পারবো কিনা সেটার কোন নিশ্চয়তা নেই । মেয়েটা আমাকে দেখেই ফেলেছে । তাই আর লুকিয়ে লাভ নেই ।

আমি দরজা খুলে মেয়েটার সামনে দাড়ালাম । মেয়েটা চোখে একটা বিস্ময় দেখতে পেলাম । তবে সেটা সে সামলে নিয়ে বলল, তোমরা এখানে নতুন এসেছো?
মেয়েটা আমার সমানই হবে । গায়ের রং আমার মত না । একটু তামাটে । আমার মত চুল ছোট করে কাটা । আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললাম, এসো ভেতরে এসো।
মেয়েটা ভেতরে এল । বসার ঘরে একটা শোফায় বসতে বসতে বলল, আমরা ঐ ডান দিকে থাকি । বাবা আর মায়ের সাথে । আমার নাম আরিয়ানা । তোমার নাম কী?
-আমি জেসিকা । জেসি বলতে পারো ।
-নাইস টু মিট ইউ জেসি । তোমাকে দেখলাল কয়েকবার এই ড্রেসটা পরে বাইরে বের হয়েছো । বেশ চমৎকার লাগে কিন্তু তোমাকে ।
আমি একটু লজ্জা পেলাম । তবে খুশিও হলাম বটে । মেয়েটা যে এই ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছে এটাই সব চেয়ে বড় কথা ।
আরিয়ানা বলল, মাস্ক আছে না ?
-হুম আছে ।
-পর দেখি । দেখি সামনে থেকে দেখতে কেমন লাগে?

আমি টেবিলের উপর থেকে মাস্কটা নিয়ে এলাম । বললাম, আসলে এটা পরলে ঠিক কথা বলা যায় না । মুখের সাথে এটে থাকে । আরও একটা সমস্যা আছে ।
আরিয়ানা বলল, কি সমস্যা ?
-আসলে মাঝে মাঝে এমন হয় যে মাস্কটা পরলে এমন হয় যে আমি এটা আর খুলতে পারছি না । আটকে থাকে।
-তাই নাকি?
-হ্যা ।
-তারপরেও তুমি পর এটা ?
আরিয়ানাকে ব্যাপারটা বলা হবে কিনা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না । মেয়েটাকে মাত্র আমি দেখলাম । এই দেখা মাত্র মেয়েটাকে সব খুলে বললে মেয়েটা নিশ্চিত ভাবে আমাকে পাগল ভাবনে । তবে মেয়েটাকে কেন জানি আমার ভাল লেগে গেছে । একটা ব্যাপার আছে না যে প্রথম দেখাতেই কাউকে আপন মনে হয়, আরিয়ানার ব্যাপারটাও তাই । আমি বললাম, আসলে এই ড্রেসটার প্রতি কেমন যেন একটা তীব্র আকর্ষন অনুভব করি । কেন করি জানি না । কেবল করি ।
-রিয়্যালি?
-হ্যা।
-ওয়েল আমারও রাবার ড্রেস পরতে বেশ ভাল লাগে ।
-সত্যি?
-আমারও আছে একটা । তোমারটার মতই । এই জন্যই তোমার কাছে এলাম । কই পর পর দেখি একটু ।

আমি একটু ইতস্তর করে পরে ফেললাম মাস্কটা । চেইনটা আটকানোর পরপরই টের পেলাম যে আটকে গেছে সেটা । খুব জলদি সেটা আর খুলবে না । আরিয়ানাকে দেখলাম আমার দিকে একভাবে তাকিয়ে রয়েছে । ওর চোখে আমি মুগ্ধতা দেখতে পেলাম । আমার ড্রেসটা আর আমাকে ওর পছন্দ হয়েছে সেটা বুঝতে পারছি । আরিয়ানা মোবাইল বের করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কয়েকটা ছবি তুলতে পারি কি?
আমি মুখ কথা বলতে চাইলাম বটে কিন্তু টের পেলাম ঠোঁট দুটো আটকে আছে আছে বেশ শক্ত ভাবেই । কোন কথা বলার কোন উপায় নেই বুঝতে পারছি । আমার অবশ্য অভ্যাস হয়ে গেছে এই কদিনেই । আমি কেবল মাথা ঝাকালাম । দেখলাম আরিয়ানা অনেক গুলো ছবি তুলল আমার । তারপর আরও কিছু সময় থাকলো । টুকটাক কথা বলল । তারপর আমাকে রেখে চলে গেল ।

আরিয়ানা চলে যাওয়ার পরে অনুভব করলাম যে আমার বেশ ভাল লাগছে । কেন যে লাগছে সেটা আমি নিজেও জানি না । কিন্তু রাতের বেলা ঘটলো আরেক টা ঘটনা । ড্রেস পরে ঘুমানোর পর থেকেই আমি অদ্ভুদ একটা স্বপ্ন দেখতে পেতাম । স্বপ্নে দেখতাম যে একটা মেয়ে যে কিনা আমার মতই লেটাক্সের ড্রেস পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে আরও ভাল বললে পালাচ্ছে । কেউ যেন মেয়েটাকে তাড়া করছে । তবে আজকে আমি স্বপ্নে দেখলাম অন্য রকম একটা । স্বপ্নে দেখলাম একটা ছেলেকে । এমন একটা ছেলেকে যাকে আমি আগে কোন দিন দেখি নি । এটা আমাকে খানিকটা অবাক করলো । কারণ আমরা যা বাস্তবে দেখি কিংবা যা জীবনে দেখেছি স্বাধারনত সেই সমস্ত জিনিস কিংবা ব্যক্তিকেই স্বপ্নে দেখি । যাদের সাথে কোন দিন দেখি কিংবা কল্পনা করি নি এমন মানুষকে আমরা স্বপ্নে দেখি না । তাহলে এই ছেলেটাকে আমি কিভাবে দেখলাম ? এবং স্বপ্নটাও বেশ ভয়ংকর । এতোদিন আমি কেবল স্বপ্নে দেখেছি যে লেটাক্স পরা মেয়েটা পালাচ্ছে কিন্তু আজকের স্বপ্নের ঘটনা টা আলাদা । আজকে সেই লেটাক্স পরা মেয়েটা একটা বড় ছুরি নিয়ে এই ছেলেটার পেছনে দৌড়াচ্ছে । এবং এক সময়ে ছেলেটাকে সে ধরেও ফেলে । ছেলেটার বুকের ভেতরে ছুরিটা ঢুকিয়ে দেয় । এতো বাস্তব মনে হল দৃশ্যটা । ঘুম ভাঙ্গার পরেও অনেকটা সময় বুকের মাঝে কেমন যেন ধকধক করতে লাগলো ।

পরদিন বাবা কাজে চলে যাওয়ার পরে আবারও আরিয়ানা এসে হাজির হল । আজকে ওকে নিয়ে আমি বাড়ির বাইরে বের হলাম । মাস্কটা যদিও পরলাম না । কেবল ড্রেসটা পরেই বের হলাম । অনেকটা দুরে চলে গেলাম দুজন মিলে । আরিয়ানা নিজের ব্যাপারে অনেক কথা বলল । ওর কথা ওর বাবা মায়ের কথা । ওরা কিভাবে থাকে না থাকে এই সব । আমিও আমার কথা বললাম । কেন জানি মনের কথা সব আস্তে আস্তে বের হতে লাগলো । আমার মায়ের কথা স্বাধারনত আমি কাউকে খুব একটা বলি না । আমি ছোট বেলা থেকে মানুষের কাছ থেকে সব সময় নিজেকে গুটিয়ে রেখেছি তার অন্যতম কারণ হচ্ছে আমার মায়ের চলে যাওয়া । এই ঘটনাটা আমাকে সব সময় লজ্জিত করতো সবার সামনে । এই কারণে আমি ছোট বেলা থেকে একা একাই থেকে এসেছি ।

রাতের বেলা আমারও ঠিক একই ঘটনা ঘটলো । একই ভাবে আমি আরেকটা অপরিচিত ছেলেকে খুন হতে দেখলাম । সেই একই ভাবে । এই ছেলেটাকেও আমি আগে দেখি নি কোন দিন । আমি সত্যিই ব্যাপারটা কিছু বুঝতে পারছিলাম না । তবে কেন জানি মনে হচ্ছিলো যে কিছু একটা সমস্যা আছে । কোন একটা অস্বাভাবিক একটা ব্যাপার আছে । এতো জীবন্ত ভাবে মনে হল যেন ছেলেটা মারা গেল । একদম মনে হচ্ছিলো যেন আমি চোখের সামনে ঘটনাটা ঘটতে দেখলাম ।

সব থেকে ভয়ংকর ঘটনা ঘটলো পরের দিন । বাবা তখন চলে গিয়েছিলো কাজে । আম যথারীতি নিজের কাজে ব্যস্ত । আরিয়ানা হয়তো এসে পরবে এখনই । এই সময়েই সে আসে । কলিংবেল বেজে উঠলো । আমি দ্রুত নেমে এলাম । কিন্তু আমাকে একটু অবাক হতে হল । দরজাতে দুজন অপরিচিত মানুষ দাড়িয়ে । আমাকে দরজার কাঁচ থেকেই ওরা দেখতে পেল । আমি দরজা খুলতেই একজন বলল, আমরা হোমিসাইড ডািপার্টমেন্ট থেকে আসছি ।
-দেখুন আমার বাবা কাজে গিয়েছে । আপনাদের কোন দরকার থাকলে তার কথা বলতে পারেন ।
-আমাদের আসলে তোমার সাথেই কথা ছিল ।
আমি একটু অবাক হলাম । তারপর বলল, আমার বয়স এখনও ১৮ হয় নি । আমার সাথে কথা বলতে হলেও আপনাদের বাবাকে নিয়ে আসতে হবে । এভাবে কথা বলা যাবে না ।
একজন অফিসার বলল, তোমার নাম জানতে পারি কি?
-জেসি !
-শোন জেসি । কয়েকটা কথা বলতে চাই । আর কিছু না । কোন অফিশিয়াল কথা না । বলবে কি?
আমি কি যেন ভাবলাম । তারপর বললাম, আসুন ।

আমি তাদের ভেতরে ঢুকতে দিলাম । তারা শোফাতে গিয়ে বসলো । আমি রান্না ঘরে গিয়ে তাদের দুইজনের জন্য দুই কাপ কফি নিয়ে এলাম । তারা আমাকে ধন্যবাদ দিল । আমি তাদের সামনে বসলাম । আমার পরনে তখনও সেই লেটাক্সের ড্রেস পরা । একবার মনে হয়েছিলো যে উপরে গিয়ে অন্য কিছু পরে আসি কিন্তু পরে আর সেটা করি নি । আমি বললাম, বলুন।

আমার দিকে একজন তাদের মোবাইলটা বের করে দিল । একটা সিসি টিভির ফুটেজ। অন্ধকারে একটা অন্ধকার অয়বয়কে দেখা যাচ্ছে । তবে কোন পরিস্কার কিছু না । এটা কি চিনতে পারছো?
-অন্ধকার । কিছু দেখা যাচ্ছে না ।
-আসলে গত দুইদিনে এলাকাতে দুটো খুন হয়েছে ।
-তাই নাকি?
-হুম । দুজন কলেজ স্টুডেন্ট । স্যাম আর ডিয়ান । ওদেরকে কেু ছুরি মেয়ে খুন করেছে ।
-আচ্ছা । কিন্তু এর সাথে আমার কি সম্পর্ক?
-আসলে একজন উইটনেস দেখেছে যে স্যামের বাসা থেকে একজনকে বের হতে । মেয়েই সম্ভবত । সে ঠিক তোমার মত লেটাক্স রাবারের ড্রেস পরে ছিল । মুখে মাস্ক পরা ।
-আপনাদের মনে হচ্ছে আমি মেরেছি?
আমি একটু হাসলাম । বললাম, আমরা এখানে ১৫ দিন হল এসেছি । এখনও পর্যন্ত আমি বাইরে যাই নি একবারও । একটা মেয়েকে কেবল চিনি এই এলাকার । আর কাউকে চিনিও না । আমি কেন কাউকে মারবো!
-না না । আমরা সেটা বলছি না ।
-তাহলে কি বলছেন? দেখুন আমি এটা পরি নিজের পছন্দের জন্য । অন্য কোন কারণে নই । আর আমার মত মানুষের পক্ষে কাউকে খুন করা সম্ভব বলে মনে করেন? বললেন তারা কলেজ স্টুডেন্ট । তার মানে আমার থেকেও অন্তত ৪/৫ বছরের বড় । আমি তাদেরকে গিয়ে খুন করে ফেললাম । বাহ । বড় চমৎকার আপনাদের চিন্তাভাবনা । আর সব থেকে বড় কথা মোটিভটা কি? যাদেরকে চিনি না তাদের বাসায় গিয়ে খুন করে আসবো?
দেখলাম দুজন একে অন্যের দিকে তাকালো । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে একজন বলল, আসলে আমরা এসব জানি । কেবল রুটিন চেক । আর কিছু না । প্লিজ কিছু মনে কর না। আমরা এবার আসি ।

তারা চলে গেল । আমার মনের ভেতরে কেমন যেন একটা অনুভূতি হল । বিশেষ করে স্বপ্নের কারণে । আমি পরপর দুটো স্বপ্ন দেখলাম । তার পরে দুজন মারা গেল । সত্যই কি এমন কিছু হয়েছে ?
আমি আমার মোবাইল বের করলাম । তারপর গুগলে সার্চ দিলাম শহরের নাম দিয়ে । খবরটা খুজে পেতে খুব একটা সমস্যা হল না । কিন্তু খবরের ভেতরে ঢুকে আমি বড় সড় রকমের একটা ধাক্কা খেলাম । সত্যিই খেলাম । কারণ স্যাম আর ডিলান নামের যে দুজনের খুনের কথা বলা হচ্ছে, এই দুজনকেই আমি দেখেছি স্বপ্নে । এটা কিভাবে সম্ভব হল? আমি দুজনকে স্বপ্নে দেখলাম খুন হতে আর দুজনেই মারা গেল?
কিভাবে? না হতে পারে না । নিশ্চয়ই কোন ভুল হচ্ছে । কোথাও না কোথাও কিছু একটা সমস্যা আছে । থাকতে বাধ্য ।

রাতের বেলা আমি আর লেটাক্সের ড্রেসটা পরলাম না । কোন কারণ হয়তো নেই । তবে মনে হল যে ড্রেসটা না পরাই ভাল । যদিও মনের ভেতরে তীব্র একটা আকাঙ্খা জাগছিলো যেন আমি ড্রেসটা পরি । নিজেকে সামলে রাখা কষ্টকর হল । কিন্তু রাতে ঘুমানোর পরে ঠিকই সেই স্বপ্নটা দেখলাম । এবার আরেকটা ছেলেকে ঠিক একই ভাবে খুন হতে দেখলাম । সেই রাবার গার্লের দ্বারাই । যখন ঘুম ভাঙ্গলো আমার আমি তীব্র অবাক হয়ে দেখলাম যে আমার পরনে রয়েছে লেটাক্সের ড্রেসটা । মুখে মাস্কটা এটে রয়েছে আগের মতই । বিছানা থেকে উঠে বসলাম কেবল । কিছুই যেন মাথায় ঢুকছিলো না । আমি কিভাবে ড্রেসটা পরলাম । আর আমি জানি সেই ছেলেটা সত্যি সত্যিই মারা গেছে । আচ্ছা এমনটা কি হচ্ছে যে এই খুন গুলো আমি নিজেই করছি? ঘুমের ভেতরেই এই খুন করেছি। আমার আসলে এখন মনে নেই? এমন কি হতে পারে? হ্যা হতে পারে?

কিন্তু কেন করবো এমন?

সকালে বাবা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমাকে এমন কেন দেখাচ্ছে ? আমি ঠিক আছি কিনা । আমি সব কিছু এড়িয়ে গেলাম । বাবা যাওয়ার আগে আমাকে সাবধান করে দিয়ে গেল । বলল যেন অপরিচিত কারো জন্য যেন দরজা না খুলি । এলাকাতে নাকি খু ন হচ্ছে। বাবাকে পুলিশ অফিসার আসার কথা বলি নি । এও বলি নি যে এমন হতে পারে আমি নিজেও খুন গুলো করতে পারি !

বাবা চলে যাওয়ার কিছু সময় পরে কলিংবেল বেজে উঠলো । নিচে নেমে এসে দরজায় চোখ পড়তেই চমকে উঠলাম । দরজায় কালো লেটাক্স ড্রেস পরা মেয়ে দাড়িয়ে । মুখে কালো মাস্ক । কেবল চোখ দেখা যাচ্ছে । আমার বুকের ভেতরে ধক করে উঠলো । আমি চিৎকার দিতে যাবো তখনই দেখলাম মেয়েটা নিজের মাস্কটা খুলে ফেলল । আমি পরিচিত মুখ দেখতে পেলাম ।
আরিয়ানা ।
আমার জানে যেন প্রাণ ফিরে এল । আমি দরজা খুলতেই আরিয়ানা বলল, ভয় পেয়েছিলে?
-কিছুটা ।
-যাও ড্রেস পরে এসো । আজকে আমরা ট্রেকে যাবো ।
-এই ভাবে?
-হ্যা । যাও যাও । দেরি কর না ।

আমি আর দেরি করলাম না । তৈরি হয়ে বের হয়ে এলাম বাসা থেকে । আমরা বনের ভেতরে ঢুকলাম । তারপর হাটতে লাগলা বেশ কিছুটা সময় । দুর থেকে আমাদের যে কেউ দেখলেই অবাক হবে । তবে আমার বেশ মজাই লাগছিলো হাটতে । এক সময়ে হঠাৎ আরিয়ানা থামলো । আমি দেখলাম আমরা একটা ছোট লেগের কাছে চলে এসেছি । কাছেই একটা কেবিন রয়েছে । তবে সেটা সম্ভবত পরিত্যাক্ত । কত সময়ে এই সময়ে এখানে কেউ আসে নি কে জানে ।
হঠাৎ আরিয়ানা বলল, জানো এখানে অনেক দিন আগে একটা অপরাধ হয়েছিলো ।
আমি একটু নড়ে চড়ে বসলাম । বললাম, অপরাধ বলত?
আরিয়ানা সেই লেকের দিকে তাকিয়ে রইলো বেশ কিছু সময় । তারপর বলল, অনেক দিন আগে একটা মেয়েকে তার কয়েকজন বন্ধু মিলে রেপ করে । তারপর মেরে ফেলে পেটে ছুরি মেরে ।
-কি সর্বনাশ । তারপর?
-তারপর মেয়েটার পেট চিরে দিয়ে তাকে ফেলে দেয় এই লেগের পানিতে ।
-সত্যি বলছো?
-হুম ।
-তারপর?
-তারপর আর কিছু না । কেউ জানে না ।

আমি তীব্র বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলাম আরিয়ানার দিকে । এবং সাথে সাথেই একটা ভয় আমাকে পেয়ে বসলো । আমি আরিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম ভীত চোখে । আরিয়ানা যেন ব্যাপারটা বুঝতে পারলো । এবং বলল, ভয় পেও না জেসি । ইউ আর মাই ফ্রেন্ড । আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না । বরং আমি তোমার কাছে ঋণি । তোমার কারণে আমি আমার প্রতিশোধ নিতে পেরেছি ।
-আমার কারণে?
-হ্যা । এই যে লেটাক্সের ড্রেসটা তুমি পরে আছো । এটা আমার । ওরা যখন আমার রেপ করে তখন এটা আমার পরনে ছিল । তারপর আমাকে লেকের জলে ফেলার আগে আমার শরীর থেকে খুলে নেয় ।
আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম, আমি কি ওদের মেরেছি?
-না না। তুমি মারো নি । তবে তুমি যখন প্রথম ড্রেসটা পরেছিলো আমি এই কিভাবে জানি আবার ফিরে এলাম । এই ড্রেসটার মাধ্যমে । আর দুইজন বাকি । ঐটাকেও মেরে ফেলবো আমি । তুমি আমার যে উপকার করেছো তা আর কেউ করতে পারে নি । তোমার কোন ক্ষতি আমি কোন দিন করবো না ।

আমার মনে একটা মিশ্র অনুভূতি হল । আমি কি করবো ঠিক বুঝতে পারলাম না । আমার সামনে যে জন দাড়িয়ে রয়েছে সে কোন জীবিত মানুষ নয় এটা ভাবতেই মনের ভেতরে কেমন যেন একটা শিরশিরে অনুভূতি হচ্ছে । তবে কেন জানি আর ভয় লাগছে না ওকে । আরিয়ানা আমার কোন ক্ষতি করবে না । এটা কেন জানি আমার বিশ্বাস জন্মে গেছে । আরও কিছু সময় রইলাম । তারপর ফিরে এলাম । আরিয়ানা অবশ্য জঙ্গল থেকে বের হল না । আমাকে হাত নেড়ে বিদায় দিল ।

রাতে বাবা বাসায় এসে আমাকে অদ্ভুত ঘটনা শোনালো । বাবা এই বাড়িটা যার কাছ থেকে কিনেছিলো তার ছেলে পল আজকে নাকি পুলিশের কাছে গিয়ে আত্ম সমর্পন করেছে । গতকাল রাতে এই এলাকাতে আরও একজন ছেলে খুন হয়েছে। একই ভাবে । পল জানায় যে এই তিনজন আর সে মিলে তাদের এক সহপাঠিকে রেপ করে মেরেছিলো । তারপর তার লাশকে ফেলে দিয়েছিলো বনের ভেতরের একটা লেকে । পল নাকি দেখেছে তাদের সেই মৃত সহপাঠিকে । তার বিশ্বাস যে ঐ তিনজনকে সেই মেরেছে । ওকেও মেরে ফেলবে ।
আমি চুপ করে শুনছি কেবল । আমি এই ঘটনা আগেই জানি ।
আমি বললাম, মেয়েটির নাম কী বাবা?
-নাম যেন কী বলল ? দাড়া …।
-আরিয়ানা?
-হ্যা হ্যা আরিয়ান । তুই কিভাবে জানলি ?
আমি কোন কথা বললাম না । চুপচাপ খেয়ে গেলাম কেবল । বাবা বলেই গেল । আজকে বিকেলে নাকি পুলিশ সেই লেকে কাছে গিয়ে একটা কঙ্কাল আবিস্কার করেছে । আর পলকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে ।

রাতের বেলা আমি কিছু সময় শুয়ে রইলাম । আরিয়ার প্রতিশোধ তাহলে শেষ হয়েছে । এখন সম্ভবত ওর আত্মা শান্তি পাবে । এখন আর লেটাক্সের ড্রেসটা পরার কোন দরকার নেই । কিন্তু আমি ড্রেস পরার ব্যাপারে একটা আগ্রহবোধ করলাম । সেই আকর্ষণটা আমার রয়েই গেল । আমি উঠে দাড়ালাম । তারপর আস্তে আস্তে রাবার লেটাক্সের ড্রেস পরতে শুরু করলাম । তারপর পা টিপে টিপে বের হয়ে এলাম ঘর থেকে ।

পরিশিষ্টঃ

-ছাড়ো আমাকে ছেড়ে দাও, ভালো হবে না বলছি ।
-আরে একটু । বেশি না তো । তোমাকে আমি চিনি না? চুপ করে থাকো । নয়তো মেরে ফেলবো।
-না প্লিজ ছেড়ে দাও ।
-চুপ । টাকা দেব । চুপ থাক ।

মেয়েটা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো । কিন্তু কোন লাভ হল না । লোকটার সাথে শক্তিতে পারছে না সে । কান্না চলে এল মেয়েটার । তখনই দেখতে পেল তাকে । অন্ধকারে দাড়িয়ে রয়েছে সে । আবছাটা আলোতে মেয়েটা দেখতে পেল তাকে । কালো রাবার লেটাক্সের ড্রেস পরে আছে । মুখে মাস্ক পরা । পুরো মাথাটা ঢাকা । কেবল চোখ দেখা যাচ্ছে ।
লোকটাও দেখতে পেয়েছে তাকে । মেয়েটাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাড়ালো ।
-কে রে তুই ?
লোকটা আর কিছু বলার সুযোগ পেল না । রাবার গার্ল সরাসরি এসে লোকটার মুখের ভেতরে এক ফুট লম্বা ছুরিটা ঢুকিয়ে দিল । আর কোন আওয়াজ বের হল না লোকটার মুখ দিয়ে ।
তারপর কিছুই হয় নি এমন একটা ভাব করে রাবার গার্ল ঘুরে হাটা দিল ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 23

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →