দ্য পার্ফেক্ট হাজব্যান্ড 2.0

4.9
(99)

তৃষাকে দেখে আরনিন যেন একেবারে চিনতেই পারলো না । একেবার অন্য রকম হয়ে গেছে মেয়েটা । ওর দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল, তৃষা তোকে তো চেনাই যাচ্ছে না ।
তৃষা একটু হাসলো কেবল । কোন উত্তর দিলো না । কারণ প্রায় সবাই তার ব্যাপারে এই একই কথা বলে । তাকে নাকি একদম চেনাই যাচ্ছে না । সময়ের সাথে মানুষ বদলায় । কিন্তু তৃষা যেন একটু বেশিই বদলেছে । অবশ্য এটা নিয়ে তৃষার কোন আক্ষেপ নেই বরং তৃপ্তি আছে । আরনিনের দিকে তাকিয়ে তৃষা দেখলো মেয়েটা এখনও অনেকটা আগের মতই আছে । আগের থেকে মনে হল চেহারাতে আরও একটু তীক্ষতা বেড়েছে । আগে তো কাটাকাটা সুন্দরী ছিল এখন সেটা আরও বেড়েছে ।

স্কুল আর কলেজে থাকতে তৃষা আর আরনিনের সুনাম সবার কাছে পৌছে গিয়েছিলো । চেহারা স্টাইল পোশাক চাল চলন সব কিছুতেই দুজনকে এক নামে চিনতো সবাই । পোশাক থেকে শুরু করে নখের কালার পর্যন্ত দুজনেরই একদম টিপটপ হওয়া চাই। যদিও এই প্রতিযোগিতাতে তৃষা সব সময়ই এগিয়ে ছিল । তৃষার ভেতরে যা ছিল সবই ছিল ন্যাচারাল । ওর পরিবার ওকে এই ভাবেই বড় করেছে অন্য দিকে আরনিনকে সব কিছু শিখতে হয়েছে । তৃষা এই ব্যাপারটা সব সময়ই খেয়াল করতো যে আরনিন ওকে একটু ঈর্ষা করতোই । যদিও আরনিন মুখে সেটা কোন স্বীকার করে নি আর তৃষাও এসব ব্যাপার নিয়ে খুব একটা গা করে নি কোন দিন ।

আরনিন পড়তে বাইরে চলে গিয়েছিলো । এর ফাঁকে একবার বিয়েও করেছিলো এক বিদেশীকে তবে সে সংসার টিকে নি । আরনিন আবার দেশে ফিরে এসেছে। পুরানো বন্ধুর সাথে দেখা করতে তার অফিসে এসে হাজির হয়েছে । অফিসের ক্যাফেটরিয়াতে বসতে বসতে আরনিন বলল, কী অবস্থা হয়েছে তো ? তুই হাতে নেইম পালিশ দেওয়ার বদলে মেহেদী দিয়েছিস? চোখে কাজল? রিয়ালি? আর নখ এতো ছোট করে ফেলেছিস ? কী সুন্দর নখ ছিল তোর !
তৃষা হাসলো । তারপর বলল, অপুর এসব পছন্দ না । তাই নখ রাখি নি । তখন টিনএজার ছিল সেই সময়কার স্টাইল কি আর এখন ভালো লাগে !
-তোর জামাই এতো পজেসিভ ? আমার বাবা এসব চলবে না । এই জন্য জামাইকে ছেড়ে দিয়েছি । আমার উপর কোন খবরদারী চলবে !
তৃষা হাসলো । তারপর বলল, পজেসিভ আর অপু ! বরং উল্টো ।
-তাহলে?
-আসলে জীবনের সব স্থানে আমি কারো কথা শুনবো না, এমনটা চলে না । অপুর কথাই যদি ধরি, সে কোন দিন আমাকে বলবে না তৃষা তুমি এই কাজটা কর না । আমি যদি আমার পছন্দমত পোশাক পরি, সাজি তার কোন সে নেই । কিন্তু আমি জানি অপু কী পছন্দ করে । এই যেমন হাতে মেহেদী দেওয়ার ব্যাপারটা । আমি যেদিন হাতে মেহেদী দেই ও যখন প্রথম হাতটা দেখে ওর চোখে সে তীব্র আনন্দটা আমি দেখতে পাই এটার কোন তুলনা নেই । এই আনন্দ দেখার জন্য আমি সব কিছু ছেড়ে দিতে পারি !
আরনিন বলল, বাহ ! তুমি মামা সেই প্রেমে পড়েছো !
তৃষা এবার খানিকটা গর্বের সুরেই বলল, অপুর মত কেউ হলে পরাই যায় ! দাড়া লাঞ্চ আওয়ার শুরু হবে এখনই । ওর অফিস কাছেই চল যাই এক সাথে লাঞ্চ করা যাবে । তোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া যাবে ।

আরনিন নিজ চোখেই ব্যাপারটা দেখলো । সম্ভবত সকালে তৃষা যখন বের হয়েছিলো তখন তৃষার হাতে মেহেদী ছিল না । অফিসের কোন ফাঁকে দিয়েছে । তৃষার হাসব্যান্ড যখন তৃষার হাতের দিকে তাকালো তখন আনন্দে যেন ওর চোখ ঝিলিক দিয়ে উঠলো । তৃষা এই আনন্দটা বেশ উপভোগ করলো । আরনিনকে এক প্রকার উপেক্ষা করেই তৃষার দিকে তাকিয়ে রইলো ছেলেটা ।

এই ব্যাপারটা সব থেকে ধাক্কা দিল আরনিনের চোখ । এমনটা কোন দিন হয় না । পুরুষকে খুব ভাল করে চেনে । তারা কী চায় সেটাও তার অজানা নেই । কোন ছেলে ওকে উপেক্ষা করবে সেটা হতেই পারে না । এমন কত বিবাহিত পুরুষ ওকে একবার দেখার পরে ওর পেছনে কুকুরের মত ঘুরে বেড়িয়েছে আর এই ছেলে কিনা একবার ওর দিকে ফিরে তাকাচ্ছেও না । প্রথমে কেবল একবার হ্যালো বলে ওর চোখের দিকে তাকিয়েছিলো । ব্যাস আর না । চোখ তৃষার দিকেই নিবব্ধ। বুকের মাঝে একটা সুক্ষ জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হল ।

দুই
দুইদিন পরের ঘটনা । তৃষা নিজের কাজ ব্যস্ত । এমন সময়ে অপুর মেসেজ এসে হাজির ।
-তোমার ঐ বন্ধু আমাদের ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে এসেছে ।
তৃষা মেসেজটা দেখে কিছু সময় হাসলো খুব । তারপর লিখে পাঠালো । ভালো তো তোমার একজন গ্রাহক বাড়লো ।
অপু সাথে সাথে লিখে পাঠলো, আরে একাউন্ট তো আমি খুলি না । তবুও সে আমার সাহায্য নিয়েই খুলতে চায় ! কী এক ঝামেলা বল তো !
তৃষা লিখলো, আরে বাবা একটু হেল্প করই না । আমার বন্ধু তো !
-আচ্ছা ।
-আর শুনো !
-বল
-আরনিন সম্ভবত তোমার সাথে লাঞ্চ করতে চাইবে । মানা করো না কিন্তু !
-মানে কি? তার সাথে লাঞ্চ কেন করতে হবে ? আর সে যে আমার সাথে লাঞ্চ করতে চাইবে এটা তুমি কিভাবে জানো ? তোমাকে বলেছে?
তৃষা আরও কিছু সময়হাসলো মনে মনে । তারপর লিখে পাঠালো, অপু তুমি এখনও বাচ্চাই রয়ে গেলে । লাঞ্চ করো । রাতে কথা হবে ।

ফোনটা রেখে আরও কিছু সময় সে হাসলো মনে মনে । কিছু মানুষের স্বভাব কোন দিন বদলায় না । আরনিনের বেলাতেও তাই। কিন্তু আরনিন বারবার কেবল ভুল স্থানে প্রতিযোগীতা করতে আসে ।

একটু পরে অপু আবার মেসেজ । এই মেয়ে সত্যি আমার সাথে লাঞ্চ করতে চাচ্ছে । আমি বললাম যে একটু দেরি হবে হাতের কাজটা শেষ করে উঠবো সে বলে কিনা অপেক্ষা করতে তার সমস্যা নেই ।
তৃষা প্রথমে কেবল হাসির ইমো পাঠালো । তারপর বলল, বেচারীর একটু লাঞ্চ করই না ! আর ওকে বলবে না যে আমাকে তুমি জানিয়েছো !
-কেন?
-এতো কেন কেন কর না । যা বলছি কর । রাতে কথা হবে ! ইনজয় দ্য লাঞ্চ !

রাতে যখন ওদের দেখা হল দেখলো অপু কেমন গম্ভীর মুখে বসে রয়েছে । টিভি চালু রয়েছে তবে সেটা দেখছে বলে মনে হয় না । তৃষা ফ্রেশ হয়ে এসে বসলো ওর পাশে । সামনে ফ্লাক্সে গরম পানি করেই রেখেছে অপু । রাতে ফিরে এসে প্রথমে দুজন মিলে কফি খায় । তারপর একটু রাত করে রাতের খাবার খায় !
-কী শোনা পাখি, মুখ কেন গম্ভীর ?
-তুমি কিভাবে জানো যে আরনিন আমার সাথে লাঞ্চ করতে চাইবে ? আর ঐ মেয়ে যাওয়ার সময় কী বলে জানো
-কী?
-বলে সে যে ওখানে গিয়েছে এটা নাকি তোমাকে বলার দরকার নেই । মানে কি এসবের?
-আরে বোকা জামাই ও তোমার সাথে একটু ইটিস পিটিস করতে চাইছে ।
-ইটিস পিটিস?
-হুম ! শুনো ওর সাথে আমি স্কুল কলেজে পড়েছি । ওকে খুব ভাল করে চিনি । আমার সাথে ওর একটা প্রতিযোগিতা ছিল সব সময় । সব সময় আমার মত আমার থেকে সেরা হতে চাইতো । আমি কেমন পোশাক পরি, কেমন স্টাইল নেই সব ! কিন্তু তুমি তো জানো আমার জীবন কেমন ছিল । আমি কেমন পরিবেশে বড় হয়েছি । তো আরনিন সব সময় আমার জীবন পেতে চাইতো । আমি একটা ড্রেস পরলাম তারও সেই রকম ড্রেস চাই । আমি এক ভাবে চুল বাঁধলাম তারও তেমন করে বাঁধা চাই আমার একরম জামাই আছে এখন তারও সেটা চাই …..।

অপু কফিতে চুমু দিয়েছিল সেটা মুখ দিয়ে বের হয়ে গেল । চিৎকার করে বলল, মানে?
-মানে মাই ডিয়ার হাসব্যান্ড ও এখন চেষ্টা করবে তোমাকে পটাতে !
-তুমি এটা জানো? আর জেনেও আমাকে তার কথা বলতে বলছো?
তৃষা হাসলো । তারপর বলল, আরনিন যতই আমার মত হতে চাক, কোন দিন সে আমার মত হতে পারে নি । আমি কিছু না করেও ওর থেকে এগিয়ে থেকেছি সব সময় । ও হাজার চেষ্টা করুক, আমার মত বর সে কোন দিন পাবে না । ইউ আর দ্য পার্ফেক্ট ওয়ান ফর মি !

তারপর কফির কাপটা নিচে রেখে একটা টিস্যুর হাতে নিল । কফির অপুর মুখেও একটু ছিটিয়ে পড়েছিলো । তৃষা দুই পা দুই দিকে দিয়ে অপুর ঠিক কোলের উপরে উঠে বসলো । দুজনের শরীরটা একেবারে কাছাকাছি চলে এসেছে । তৃষা এরপর যত্ন নিয়ে টিস্যু দিয়ে অপুর মুখের কফি টুকু মুছে দিল । তারপর নিজের মুখটা একেবারে ওর কাছে এনে বলল, শুনো মাই ডিয়ার হাসব্যান্ড ওকে চেষ্টা করতে দাও । আমি জানি যা আমার তা কোন দিন কেউ নিতে পারবে না ।
এই বলে অপুর ঠোঁটে একটা দীর্ঘ চুমু খেল । তারপর …. থাকুক তারপর কি হল সেটা জানার দরকার নেই ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.9 / 5. Vote count: 99

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →