সত্যি কথা কি তৃষা কে কিছু বলতে হয় না । আমার চেহারার দিকে তাকিয়েই ও সব কিছু বুঝে ফেলে । রাতের বেলা আমার চেহারা দেখে তার বুঝতে আর বাকি রইলো না আমার মনে আসলে কি চলছে । তবে তখনই সে কিছু বলল না । বলবে না জানতাম । এখন তৃষা খানিক সময় চিন্তা করবে । মনে মনে সাজিয়ে নিবে যে আমার সাথে সে কিভাবে কথা শুরু করবে ।
আমার এই কথা স্বীকার কতে কোন অসুবিধা নেই যে তৃষা গুণে মানে সব দিক দিয়ে আমার থেকে সেরা । এই দেশে পুরুষদের মাঝে এই ব্যাপারটা খুব বড় একটা ব্যাপার । কোন পুরুষ যদি তার স্ত্রীর থেকে একটু কম গুন সম্পন্ন হয় তাহলে সারা জীবন নিজের কাছেই সে খানিকটা হীনমন্নতায় ভুগে । আমিও এর বাইরে না । বারবার কেবল মনে হয় যে তৃষা ডিজার্ভ বেটার । কিন্তু ওকে এতোটাই ভালোবাসি যে ও অন্য কারো হবে এটাও ভাবতে পারি না । সব কিছু যেমনই হোক আমি আসলে তৃষার সাথেই থাকতে চাই ।
আজকে তৃষার এক বন্ধুর বাসায় পার্টি ছিল । এই সব পার্টি আমি স্বাধারনত এড়িয়ে যাই । তৃষা খুব ভাল করে জানে যে আমার এই ভীড় ভাল লাগে না । তাই ও আমাকে খুব একটা চাপও দেয় না । তবে মাঝে মধ্য তৃষার সাথে যেতেই হয় । আজকে ওর সব বন্ধুদের পার্টনাররা আসবে পার্টিতে । তাই আমাকেও যেতে হবে । তৃষাকে না করার মত উপায় নেই । একবার যদি বলে যে যেতে হবে এর মানে হচ্ছে আমাকে যেতেই হবে ।
ওখানে গিয়েই আমার সেই কথাটা আবার মনে হল । ওর সব বন্ধু বান্ধব এবং তাদের স্বামী বউয়েরা কি স্মার্ট । আমি তার তুলনাতে একেবারে যাচ্ছেতাই । মন খানিকটা খারাপই হল ।
রাতের বেলা ঘুমানোর আগে তৃষা আমার মুখোমুখি এসে বসলো । আমি জানি এখনই ও কথা শুরু করবে । আমাকে বিছানার উপরে বসিয়ে সে নিজেও আমার সামনে বসলো । তারপর বলল, মন খারাপ?
-উহু !
-তুমি জানো আমার সামনে তুমি কিছু লুকাতে পারো না । তাহলে কেন মিথ্যা বল ? আর তুমি এও জানো যে আমি তোমাকে এমন সব প্রশ্ন করি বেশি ভাগ ক্ষেত্রেই যার উত্তর আমি জানি । তাই না ?
-হুম ।
-তাহলে?
আমি একটু হাসি । কিছু বলি না । কিছু বলার নেই ।
তৃষা নিজের মোবাইল বের করে আমার সামনে ধরলো । একটা গ্রুপ ছবি । আজকে তোলা । সব বন্ধু এবং তাদের হাজব্যান্ড নয়তো ওয়াইফদের নিয়ে । আমাকে ছবিটা দেখাচ্ছে কেন সেটা আমি বুঝতে পারলাম না । তৃষা হাতের ইশারাতে দেখালো একজনকে ।
-একে চেনো ?
-রিফার হাসব্যান্ড নিলয় ।
-একে?
-এটা আকাশ।
এভাবে একে একে সবাইকে দেখালো । আমি কয়েকজনকে চিনি কয়েকজন তৃষা আমাকে চিনিয়ে দিল । এরপর বলল, এই যে নিলয় দেখতে খুব সুন্দর, ভাল চাকরি করে। তুমি জানো এর রিফার ছাড়াও আরও একটা বউ আছে?
-কি?
-হ্যা । রিফা ওর দ্বিতীয় স্ত্রী ।
-এই যে আকাশ, প্রায়ই ও ওর বউয়ের গায়ে হাত তোলে । আকিব, দুইদিন জনের সাথে এফেয়ার । এই যে সজিব, ওর নিজের বউকে ভাল লাগে না। অন্য সবার বউয়ের দিকে নজর । এই রাফি, কাজের মেয়েকে প্রেগনেন্ট বানিয়ে ফেলেছিলো, পরে টাকা দিয়ে ঝামেলা মিটিয়েছে ।
আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না যে আমাকে কেন এসব বলছে । তৃষা আরও কি কি বলল। তারপর হঠাৎ বলল, তোমার ভেতরে এসব কিছু আছে?
-মানে?
-মানে তুমি আরেকটা বিয়ে করেছো? বউয়ের গায়ে হাত দাও? বউয়ের সাথে খারাপ ব্যবহার কর? এফেয়ার আছে দুইতিনটা? কাজের মেয়েকে প্রেগনেন্ট বানিয়েছো?
-কি বলছো এসব? না মোটেই না।
তৃষা বলল, এসব কিন্তু এমন না যে তোমার কাছে সুযোগ নেই বলে করছো না । গত বছর আমি প্রায় বিশ দিনের জন্য আমেরিকাতে গিয়েছিলাম । চাইলে যে কোন কিছু করা যেত । তুমি অফিস থেকে বাসায় আসো বিকেল বেলা অন্য দিকে আমার আসতে আসতে রাত দশটা মাঝে । তুমি ….।
-হোয়াট ইজ দ্য পয়েন্ট?
-দ্য পয়েন্ট ইজ, মাই ডিয়ার হাজব্যান্ড তুমি সুযোগ পাওয়া স্বত্ত্বেও এসব কিছু কর না । কার তুমি আমাকে ভালোবাসো । তুমি নিজে খেয়াল করে দেখেছো যে আমি এখনও যখন তোমার হাত ধরি, তোমার হাত কেঁপে ওঠে ? তুমি এখনও আমার দিকে যে চোখে তাকাও যে দৃষ্টিতে অন্য যে কোন মেয়ের দিকে তাকালে তারা তোমার জন্য সব কিছু ছেড়ে দিবে ….
আমি আসলেই বুঝতে পারছি না তৃষা এসব কেন বলছে। তৃষা তখনও বলেই চলেছে, একজন মেয়ের কাছে তার স্বামী কতখানি হ্যান্ডসাম, কতখানি স্মার্ট এটার থেকেও বড় ব্যাপার হচ্ছে তার হাজব্যান্ড তার প্রতি কতখানি লয়াল, সব চেয়ে কঠিন মুহুর্তেও তার স্বামী তার পাশে থাকবে কিনা, এখনও সে তীব্র অনুভূতি তার প্রতি অনুভব করে কিনা ! বুঝেছো?
-হুম।
-তোমার থেকে বেটার কেউ আমার জীবনে আসবে না । বুঝতে পেরেছো? এটা আমি জানি । তুমি কার থেকে বেশী স্মার্ট নাকি কম স্মার্ট এটা আমার দেখার বিষয় না । আমার দেখার বিষয় হচ্ছে আমি যখন তোমাকে জড়িয়ে ধরি তখন আমি এই অনুভূতি পাই যে এই মানুষটা আমার জন্য সব ত্যাগ স্বীকার করতে পারে । আমার চোখে আর কিছু পড়ে না । আর কিছু না ।
আমার কেন জানি তৃষাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে । এবং এটা ওকে বলতেও হল না । দেখলাম ও নিজ থেকেই এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো । জড়িয়ে ধরেই বলল, ইউ আর দ্য পার্ফেক্ট হাজব্যান্ড ফর মি । নয়তো আমাকে সহ্য করে কেউ টিকে থাকতে পারতো না । বুঝেছো ! তোমার ভেতরে এই যা আছে দুনিয়ার আর কারোর ভেতরে সেসব নেই ।
আমি জানি তৃষা আমাকে ছেলেভুলানোর জন্য কথা গুলো বলে নি । এটা ওর ভেতরে নেই । ও যা বিশ্বাস করে না সেটা কোন দিন বলে না । সামনের মানুষটা কষ্ট পেলেও না । সরাসরি যা ওর ভাল লাগে সেটাই বলে । আমার মনটা আনন্ডে ভরে ওঠে । প্রিয় মানুষের চোখে সেরা হওয়ার আনন্দের চেয়ে আর আনন্দ আর কিছুতে নেই ।
Discover more from অপু তানভীর
Subscribe to get the latest posts sent to your email.