কুয়া রহস্য

oputanvir
4.3
(8)

তৃষা আমার দিকে তাকিয়ে আরেকবার বলল
-তো তুমি যাবা না ? সিওর ?
-আরে আমি ওখানে গিয়ে কি করবো শুনি ? তুমি থাকবা নিজের কাজে ব্যস্ত । এমন না যে আমি ওখানে তোমার সাথে ঘুরতে যাচ্ছি ! আমি এখানে নিজের কাজ ফেলে যাবো ?

তৃষার মুখে একটা দুষ্টামীর হাসি দেখতে পেলাম । তারপরই সে বলল
-আচ্ছা না গেলে আর কি ! তবে ধর যে আমি একা যাচ্ছি । ঐদিনে ভদ্রলোক আবার দেখতে বেশ চমৎকার তার উপর স্ত্রী তাকে ছেড়ে গেছে । তোমাদের পুরুষ মানুষদের তো বিশ্বাস নেই । ধর….।

তৃষা খুব ভাল করেই জানে আমাকে ঠিক কোন জায়গাতে ধাক্কা দিতে হয় । আমি ওকে থামিয়ে দিয়ে বললাম
-থাক থাক । ধরাধরি বাদ দাও । আগে দাড়াও ছুটি ম্যানেজ করে নিই । একদিন হলে চলবে তো !
-আরে একদিন হলেই চলবে । যাবো । কাজ করবো তারপর চলে আসবো ।
-তোমার মত আর আমার না । চাইলেই ছুটি পাওয়া যায় না ।

তৃষা কেবলই হাসলো । কারণ সে খুব ভাল করেই জানে সেখানে সে যতদিনই থাকুক না কেন আমিও তার সাথে সেখানে ততদিনই থাকবো । তাকে ছেড়ে নড়বো না ।

এবার বায়ারের সাথে ঢাকাতেই ডিলটা হওয়ার কথা ছিল । কিন্তু মাঝখান দিয়ে একটা ঝামেলা বেঁধে গেল । তার নাকি শরীর খারাপ হয়ে গেছে । বিছানায় পড়ে আছেন । এদিক দিয়ে সব কিছুই তৈরি কেবল মুখোমুখিএকটা সাক্ষাত হলেই বাকি কাজ হয়ে যাবে । কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে না ভদ্রলোকের হঠাৎ শরীর খারাপ হওয়ার কারণে । তিনি এখন ঢাকা নেই । তার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে থাকছেন একটু শান্তির জন্য । তাই তৃষা ঠিক করেছে সেখানে গিয়েই সব কিছু ঠিক করে আনবে । আর তার সাথে তাই আমাকেও যেতে হবে ।

কি আর করা ! বউ বলে কথা !

ভদ্রলোকের নাম আহমেদ শরীফ । গাজিপুরে তার বিশাল বড় কাপড়ের ফ্যাক্টারি আছে । তার বাসাটা গাজিপুরের আরও ভেতরে । ঘন্টা দুয়েকের পথ । দুপুরের মধ্যেই আমরা সেখানে পৌছে গেলাম । বাড়িট নাম আন্দরমহল । আহমেদ শরীফের গ্রামের এই বাড়িটাকে ঠিক বাসা বলা চলে না । এটা একটা বিশাল রাজ প্রাসাদ । গাড়ি থেকে নেমে কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম সেই বাড়িটার দিকে । দুইতলা বিশাল অট্টালিকা । ডান দিকে সান বাঁধানো বিশাল পুকুর । তারপরেই বেশ কিছুটা বন । প্রকৃতিক কোন জঙ্গল না । মানুষের বানানো জঙ্গল । আর বাড়ির বাঁ দিকে একটা ছোট্ট ও্য়্যার হাউজের মত দেখতে পেলাম । তার তার পাশেই একটা কুয়া । তবে কুয়ার মুখটা কাঠ দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে । সব মিলিয়ে চমৎকার একটা বাগান বাড়ি । বাড়ির সব থেকে বেশি যে জিনিসটা ভাল লাগছে সেটা হচ্ছে নির্জনতা । এতো নির্জন পরিবেশে অনেক দিন আসা হয় নি ।

একজন খানসামা আমাদের দেখেই এগিয়ে এলেন । আমাদেরকে তার পেছন পেছন আসতে বলল । আমরা খানসামার পেছন পেছন সেই প্রাসাদে প্রবেশ করলাম । খানসামার কাছ থেকেই জানতে পারলাম এতো বড় বাড়ি সব সময় খালিই পড়ে থাকে । মাঝে মাঝে আহমেদ শরীর আর তার স্ত্রী এসে থাকেন এখানে । তবে কদিন আগে তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পরপরই আহমেদ শরীফ এখানেই আছেন । কাজ কর্ম ঠিক মত দেখছেন না । দুই ছেলে আর এক মেয়ে আছে তাদের । তারা সবাই দেশের বাইরে থাকেন । বলতে গেলে এই মাঝ বয়সে এসেই তিনি একেবারে একা হয়ে গেছেন ।

ঘরের ভেতরে ঢুকতেই আমার কাছে কেমন যেন একটা গুমট অনুভূতি হতে লাগলো । একটা অদ্ভুত অনুভুতি হল তবে সেটা কি আমি জানি না । বাইরের পরিবেশটা চমৎকার ছিল কিন্তু ভেতরের পরিবেশটা আমার কাছে ভাল লাগলো না । এমন কি বাইরে থেকে প্রসাদ দেখতে যতখানি বড় মনে হয়েছিলো ভেতরে ততখানি মনে হল না । আমরা খানসামার পেছন পেছন হাটতে হাটতে একটা বড় প্যাসেজের মধ্যে এসে পড়লাম । সেটারই দেওয়ালে একটা বড় ছবি টাঙ্গানো । দেখলাম তৃষা সেখানেই দাড়িয়ে গেছে । ওর দেখা দেখি আমি নিজেও দাড়িয়ে গেলাম ।
বিশাল ওয়েলপেইন্টিং । একজন সম্ভ্রান্ত চেহারার পুরুষ দাড়িয়ে আছে । ঠিক তার সামনে চেহারে বসে আছে একজন সুন্দরী মহিলা । এরা যে সেটা বুঝতে আমাদের মোটেই কষ্ট হল না ।

আমাদেরকে দাড়িয়ে পড়তেই খানসামা আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলল
-বড় সাহেব । আর তার মেম সাহেব ।

আমরা ছবিটার দিকে আরও কিছুটা সময় তাকিয়ে থেকে আবারও হাটতে লাগলাম । তবে আমার মনে সেই গুমট ভাবটা কিছুতেই গেল না । বারবার মনে হতে লাগলো কিছু একটা যেন ঠিক নেই । কিন্তু সেটা যে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারলাম না । তবে মনে মনে এটা ভেবে শান্তি পাচ্ছিলাম যে আমি তৃষার সাথে আছি । ওকে একা এখানে আসতে দেই নি ।

আমাদেরকে রুমে রেখে খানসামা চলে গেল । আর বলে যে স্যারের শরীরটা সকাল থেকে ভাল নেই । উনি বলেছেন বিকেল বেলা আমাদের সাথে কথা বলবেন । তখনই সব কাজ কর্মের কথা শেষ হবে ! আমি কিছু বলতে গিয়েও বললাম না । সাথে করে একটা ছোট্ট ব্যাগ নিয়ে এসেছি। যদিও আমাদের রাতে এখানে থাকার কোন ইচ্ছে নেই । বিকেলে কাজ শেষ হলে ফিরতে ফিরতে রাত হবে । তবে সেটা খুব একটা সমস্যা হবে না আশা করি ।

আমি কিছুটা সময় ঘরের মধ্যে পায়চারি করে তৃষাকে নিয়ে পুকুর পাড়ে চলে এলাম। সেখানে গিয়ে বসলাম । পুকুর পাড়ে বসতেই সব গুমট ভাবটা কেটে গেল । আমি শান্ত নিটল পুকুরের পানির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বললাম
-এই পানিতে গোসল করে খুব আরাম পাওয়া যাবে !
তৃষা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আরাম ?
-হুম ! একেবারে প্রাকৃতিক পানি । জানো ছোট বেলাতে এমন পুকুরে কত ঝাপাঝাপি করেছি । ঘন্টার পর ঘন্টা ! এখন আর সেই পুকুর নেই ।
তৃষা বলল
-এখানে নামো ।
-এখানে ? না বাবা দরকার নেই । যে পানির চেহারা, মনে হচ্ছে খুব ঠান্ডা হবে । আর এই পুকুরে ডুব দিলে ঠান্ডা লেগে যাবে নিশ্চিত । আর জানোই তো যদি ঠান্ডা লাগে আমার বউ আমাকে আস্ত চিবিয়ে খাবে ।

কিছু কিছু বলতে গিয়েও বলল না । কেবল আমার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে রইলো । যেন আমার কথা শুনে ও খুব মজা পেয়েছে । সান বাঁধানো পুকুর পাড়েই বসে রইলাম ওর হাত ধরে । সকাল বেলা যে আসতে চাইছিলাম না, এখন মনে হচ্ছে না আসলে খুব বড় মিস হয়ে যেত ।

বিকেল বেলা সব কাজ কর্ম শেষ হয়ে গেল । পুকুর পাড়েই আমাদের মিটিংটা হল । আহমেদ শরীফ খুবই অমায়িক মানুষ । আমাদের জন্য সব কিছুই সহজ করে দিলেন । তারপর খুব করে অনুরোধ করতে লাগলেন যেন আমরা তার এখানে আরও দুটোদিন থেকে যাই । কিন্তু আমার ইচ্ছে করলো না । এই পুকুর পাড়ে বসে বসে থাকার পরে আমরা যখনই ঢাকার দিকে রওনা দিতে যাবো তখনই বিপত্তি বাঁধলো । আকাশ ভেঙ্গে ঝড় শুরু হল । শরীফ সাহেব আমাদের আমাদেরকে আর বাইরে যেতে দিল না ।

তৃষার অবশ্য এখানে থাকতে কোন সমস্যা ছিল না । আমারও ছিল না । তবে একটা ব্যাপার নিয়ে একটু যেন খুঁতখুতে ভাব কাজ করছিলো । বাড়িটার ভেতরে ঢুকতে আমার যেন ভাল লাগছিলো না । কেমন একটা অশুভ অনুভূতি হচ্ছিলো । সেটা অবশ্য তৃষাকে বলতে পারলাম না । বললে ও হয়তো হাসাহাসি করবে । তৃষা অস্বাভাবিক কোন কিছুতেই ভয় পায় না ওর বক্তব্য হচ্ছে সব কিছুরই একটা ব্যাখ্যা আছে । আমি শুক্রবার ভুত এফএম শুনি বলে ও আমাকে নিয়ে বেশ হাসাহাসি করে । তাই ওকে কিছু বললাম না ।

রাতের বেলা ঘুম ভেঙ্গে গেল তৃষার ডাকে । আমি ঘুম থেকে উঠে কিছু সময় বুঝার চেষ্টা করলাম আমি কোথায় আছি । তারপরই সব মনে পড়লো । পুরো ঘর জুড়ে অন্ধকার । বাইরে তখনও ঝড় হচ্ছে । আমরা যখন রাতে ঘুমাতে যাই তার আগেই বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিলো । বাড়ির নিজেস্ব জেনারেটরে আলো জ্বলছিলো । তবে এখন সেটাও কোন কারনে বন্ধ । আমি তৃষার দিকে তাকিয়ে বললাম
-কি হয়েছে ?
-তুমি কিছু শুনতে পাচ্ছো ?
আমি কান পেতে শোনার চেষ্টা করলাম । আসলেই একটা আওয়াজ হচ্ছে । কেউ যেন কোথাও ধাক্কা দিচ্ছে । আমি বললাম
-বাইরে ঝড় হচ্ছে তো । সম্ভবত গাছের কোন ডাল কিছুর সাথে ধাক্কা লাগছে ।
তৃষার আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আমার সেটা মনে হচ্ছে না । আরেকটু ভাল করে শুনো । আওয়াজটা বাইরে থেকে নয় ভেতর থেকেই আসছে ।
আসলে আমার সেটাই মনে হচ্ছে যে আওয়াজটা বাইরে থেকে নয় বরং বাড়ির ভেতর থেকেই আসছে । তৃষা বলল
-আমার বাড়ির ভেতরে ঢুকার প্রথম থেকেই কেমন যেন লাগছিলো ।

এবার আমি খানিকটা অবাক হলাম । আমারও ঠিক এই অনুভূতি হয়েছিলো । দুজনের যখন একই অনুভুতি হয়েছিলো তখন মনে হল যে এখানে কিছু একটা সমস্যা ঠিকই হয়েছে । আমরা দুজনেই বাইরে বেরিয়ে এলাম ।

পুরো বাসাটা একদম যেন নিস্তব্ধ হয়ে আছে । আমি আর তৃষা একে অন্যের হাত ধরে হল ওয়েতে বেরিয়ে এলাম । আমাদের হাতে মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট টা জ্বালানো । আমরা আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছি । আমাদের হাতের ফ্ল্যাশের আলোতে বলতে গেলে কিছুই দেখা যাচ্ছে না । ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে আর সেই আলোর কিছুটা অংশ ঘরের ভেতরে আসছে । আমরা যতই এগিয়ে যেতে শুরু করলাম ততই আমাদের কানে সেই আওয়াজটা বাড়তে লাগলো । বাইরের ঝড়ের আওয়াজ ছাড়াও সেই আওয়াজটা আমরা দুজনেই স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম ।

আমরা দুজনেই সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলাম । দুজনেই আস্তে আস্তে এগোচ্ছি । আমার একটু একটু অস্বস্তি লাগা শুরু করেছে । ঠিক জানি না কারনটা কি । তবে সব থেকে বেশি চিন্তা হচ্ছে তৃষা কে নিয়ে । বিপদ যদি আসে সেটা আমার উপর দিয়ে আসুক । ওর কিছু হলে সেটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারবো না । আমার হাতটাকে ও শক্ত করেই ধরে রেখেছিলো । আমার হাতের উপর উপর ওর হাতের চাপের ধরণ থেকেই আমি বুঝতে পারছিলাম যে ও নিজেও বেশ ভয় পাচ্ছে ।

যদিও ভয় পাওয়ার কোন কারন নেই । আমাদের দুজনেরই উচিৎ নিজেদের বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়া । কিন্তু কিছু একটা আছে যেটা আমাদের দুজনকেই ঘুমাতে দিচ্ছে না । এই বাড়িতে প্রবেশের সাথে সাথেই আমাদের দুজনেরই একই কথা মনে হয়েছে যে এই বাসায় কিছু একটা ঠিক নেই । এখন আমাদের দুজনেরই মনে হচ্ছে এই আওয়াজটা সাথে সেই কিছু একটা ঠিক না থাকার একটা সম্পর্ক আছে । লম্বা প্যাসেজের সামনে আসতেই আমরা দুজনেই যেন জমে গেলাম । কারন তখনই একবার বিদ্যুৎ চমকে উঠলো । আর আমরা দুজনই সেটা দেখতে পেলাম । তৃষাও ব্যাপারটা দেখতে পেয়েছে বলে আমার বিশ্বাস কারন সেই সময়ে ও আমার হাতটা আরও শক্ত করে চেপে ধরেছে । আমরা দুজনেই তাকিয়ে দেখি আমাদের থেকে কিছুটা একজন দাড়িয়ে আছে । কেবল দাড়িয়েই নেই, দেওয়ার সাথে নিজের মাথা ঠুকছে । আওয়াজটা সেখান থেকেই আসছে !
একজন মহিলা !

সকাল থেকে আসার পর একটা ব্যাপার আমরা দুজনেই জানতে পেরেছি যে এই বাসাতে কোন মহিলা নেই । আরও ভাল করে বলতে গেলে এই বাসাতে কেবল দুজন মানুষ থাকে । আহমেদ শরীফ আর তার কাজের মানুষটা । এখন আমরা দুজন আছি । এই চারজনই এখন বাসায় আছি ।
তাহলে এই মহিলা কে ?

মহিলা বড় সেই ওয়েল পেইন্টিংটার ঠিক উল্টোদিকে দাড়িয়ে থেকে দেওয়ালের সাথে মাথা ঠুকছে । আমি কি করবো বুঝতে পারলাম না । কিছুটা সময় কেটে গেল । তৃষা তখনই একটা কাজ করলো । সে মহিলার উদ্দেশ্যে চিৎকারে উঠলো । বলল
-হ্যালো
এমন একটা পরিস্থিতিতে তৃষা যে হ্যালো বলে উঠতে পারে আমি সেটা ভাবতেই পারি নি । ওর হ্যালো শুনে আমি নিজেই চমকে উঠলাম । ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ও মহিলার দিকেই তাকিয়ে আছে । আমি আবারও সামনে দাঁড়ানো মহিলার দিকে তাকালাম । মহিলা ততক্ষণে আমাদের দিকে তাকিয়েছে । বিদ্যুৎ চমকানোর আলোতে আমি মহিলার চেহারাটা দেখতে পেলাম ।

মহিলাকে আমার চিনতে কষ্ট হল না । ওয়েল পেইন্টিং আহমেদ শরীফের পাশে এই মহিলাই দাঁড়িয়ে ছিল ।
ইনি আহমেদ শরীফের স্ত্রী !

তার মানে কি ?
এই মহিলাকে আমরা দুজেনই দেখছি কেন ?
আহমেদ শরীফ বলেছিলো তার স্ত্রী নাকি তাকে ছেড়ে গেছে । কিন্তু তাহলে আমরা তাকে কেন দেখছি ?
তার মানে হচ্ছে তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে যায় নি । তার স্ত্রী মারা গেছে । আর সম্ভবত তার স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে ।
তৃষার আমার দিকে ঝট করে তাকালো । অন্ধকারের মাঝেও আমি ওর চোখের দুত্যি দেখতে পেলাম । আমার মোটেই বুঝতে কষ্ট হল না যে আমার মনে ঠিক যে চিন্তাটা এসেছে ওর মনেও ঠিক একই চিন্তা এসেছে ।
খুনি কে ?

আহমেদ শরীফই !

সামনের মহিলা হাটতে শুরু করলো । কিছু দুরে হেটে একটু দাড়ালো । আমাদের দিকে তাকালো । আমরা বুঝতে পারলাম যে সে আমাদের হাতের ইশারায় তার পেছন পেছন আসতে বলছে । তারপর আবারও হাটতে শুরু করলো ।
আমরা আবারও দুজন দুজনের দিকে তাকালাম । তারপর হাটতে শুরু করলাম সেই মহিলার পেছনে । ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়েই আমরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম । বাড়ি থেকে বেরিয়ে মহিলা বাঁ দিকে গেল । আমার বুঝতে কষ্ট হল না মহিলা কোন দিকে যাচ্ছে । বাঁ দিকের ওয়্যার হাউজের সামনে যে কুয়াটা দেখেছিলাম সেখানেই গিয়ে থামবে সে । হলও তাই । সেখানেই থামলো । কিছুটা সময় তাকিয়ে রইলো সেদিকে ।

আমি যদি এই বাড়িতে কাউকে মেরে ফেলতে চাইতাম তাহলে তার বডিটা আমি ঠিক ঐ কুয়াটার ভেতরেই ফেলতাম । আহমেদ শরীফও ঠিক একই ভাবে তার স্ত্রীর মৃতদেহটাকে এখানে লুকিয়ে ফেলেছে । তারপর গল্প ফেঁদেছে যে তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গেছে ।

-আপনারা বাইরে কি করছেন ?

আমরা দুজনেই চমকে উঠলাম । তাকিয়ে দেখি দোতলার একটা বারান্দা থেকে একটা মুখ ভেসে উঠেছে । তবে অন্ধকারে তার চেহারা দেখা যাচ্ছে না । আওয়াজ শুনে বুঝতে পারলাম যে সেটা আহমেদ শরীফ । এতো রাতে আমরা দুজন এখানে কি করছি সেটার কোন ব্যাখ্যা আমার মাথায় এল না । তৃষা তখন চিৎকার করে বলল
-আমরা একটু ভেজার চেষ্টা করছি । ঢাকাতে তো এমন বৃষ্টি পাওয়াই যায় না ।
আহমেদ শরীফ যেন একটু হাসলো । তারপর বলল
-বেশি ভিজবেন না । ঠান্ডা লেগে যেতে পারে !
-আচ্ছা !

আমি তৃষার দিকে ফিরে তাকালাম । তৃষার রাত বিরাতে বৃষ্টিতে ভেজার অভ্যাস আজকের নয় । রাতে বৃষ্টি হলেই তার বেজা চাই ই চাই !
আমি তাকিয়ে দেখি সেই মহিলাও কোথায় যেন গায়েব হয়ে গেছে । আমরা কেবল একে অন্যের দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুটা সময় । এতো সময় ধরে আমরা কার পেছনে হাটলাম সেটা আমরা কেউ ই বলতে পারবো না । তবে যদি চোখের ভুল হয় তাহলে এক জনের হবে । দুইজনই একই সাথে যখন একই জিনিসকে দেখলাম তখন আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে আমরা ভুল দেখি নি ।

তারপরের ঘটনা অতি সংক্ষিপ্ত । সকালবেলাই তৃষা পুলিশকে খবর দেয় । কুয়ার মুখ খুলতেই একটা তীব্র দুর্ঘন্ধ নাকে এসে লাগে । সেখান থেকেই মিসেস শরীফের পচা গলা লাশটা বের করে আনা হয় ।

একটু ভয় ছিল যে আহমেদ শরীফ একজন টাকাওয়ালা মানুষ । ভেবেছিলাম তিনি অনেক হম্ভিতম্ভি করবে কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম তেমন কিছুই করলেন না । বরং ওনার মুখ দেখেই মনে হল ব্যাপারটাতে তিনি যেন একটু খুশিই হয়েছেন । স্ত্রী যে কোন কারনে তার হাতে খুন হয়েছিল। তারপর তিনি সেটা ধামা চাপাও দিয়েছিলেন কিন্তু একটা অপরাধবোধ তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো । এই জন্যই হয়তো আমরা যখন পুলিশ ডেকেছিলাম তিনি আমাদের উপর রাগ করেন নি ।

গাড়িতে করে ফিরে আসার সময় আমি তৃষাকে বললাম
-রাতে আমরা দুজনে যা দেখেছি তার ব্যাখ্যা কি ?
তৃষা আমার দিকে তাকালো না । অনেকটা সময় চুপ করে থেকে বলল
-হয়তো আমাদের হ্যালুসিনেশন হয়েছিলো ।
-দুজনের এক সাথে ?
-হ্যা । ঐ কুয়া তারপর কুয়ার মুখ আটকানো সেই সাথে শরীফ সাহেবের স্ত্রী চলে যাওয়া সব মিলিয়ে আমাদের ব্রেনের নিউরন গুলোকে বেশি উত্তেজিত করেছে আমাদের অজান্তেরই । হয়তো কোন ক্যামিকেল রিএকশন হয়েছে . সেখান থেকেই এই গল্প সাজিয়েছি । আর তুমি তো জানো তোমার গল্প পড়ে পড়ে আমিও বুঝতে পারি যে তুমি এরপর কি ভাবতে পারো । সেই জন্য দুজনে হয়তো একই জিনিস দেখেছি ।
আমি বললাম
-বুঝলাম ! তুমি আমার বউ না হয়ে মিসির আলীর বউ হলেই ভাল করতে ।
তৃষা হেসে বলল
-নাহ । মিসির আলী আমাকে সামলাতে পারতো না । দুদিনেই ঘর ছেড়ে পালিয়ে যেত !
-সত্য !

দুজনেই হেসে উঠলাম ।

গল্পটা পুরানো । তৃষার গল্পে প্রকাশিত হয়েছিল।

ফেসবুকের অর্গানিক রিচ কমে যাওয়ার কারনে অনেক পোস্ট সবার হোম পেইজে যাচ্ছে না। সরাসরি গল্পের লিংক পেতে আমার হোয়াটসএপ বা টেলিগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। এছাড়া যাদের এসব নেই তারা ফেসবুক ব্রডকাস্ট চ্যানেলেও জয়েন হতে পারেন।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.3 / 5. Vote count: 8

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →