-এই অপু দাড়াও ।
অপু হাটছিলো আর কথা বলছিলো । কখন যে তৃষা থেমে গেছে সে সেটা খেয়াল করে নি । তৃষার ডাকে আবার ফিরে তাকালো । দেখতে পেল তৃষা এক শাস বিক্রেতার সামনে দাড়িয়ে রয়েছে । শসা দেখছে । অপু আবার ফিরে গেল ওর দিকে । বলল, কি ব্যাপার ?
-আরে দেখো শসা একেবারে ফ্রেশ !
-তো?
-তো মানে কি ? নিয়ে নিই ।
-তৃষা, ডিএসএসে সশা আছে । এখনও অনেকটা পথ বাকি।
-আমি এখান থেকেই নিবো ।
-নাও । আমি কিন্তু টানতে পারবো না । তোমাকে টানতে হবে !
-আচ্ছা যাও । টানতে হবে না তোমাকে ! আমার টা আমিই নিবো । টাকা দাও আমি টাকা আনি নি ।
অপু নিজের পকেট থেকে টাকা বের করে দিল । তৃষা মোট তিন কেজি শসা কিনলো । আরো কিনতো তবে এখন এতো টেনে নিয়ে যেতে পারবে না। ওদের বাসা থেকে পথ টুকু ভিআইপি রোড । এখানে রিক্সা চলে না । আর এতো সকালে কোন সিএনজি কিংবা ট্যাক্সি পাওয়া যাবে না । পাওয়া গেলেও এই টুকু দুরত্বে তারা যেতে চাইবে কিনা সন্দেহ । সুতরাং তাদের হাটা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই ।
এই সময় টুকু ওরা হাটতেই আসে ।
তৃষা যখন ব্যাগটা হাতে নিল তখন বুঝতে পারলো এতো নেওয়া ঠিক হয় নি ! আরও একটু কম নিলে ভাল হত । অপু সামনে দাড়িয়ে আছে বিরক্ত চোখে । তৃষা এমন একটা ভাব করে হাটতে শুরু করলো যে এই ওজন নিয়ে ওর জন্য হাটা কোন ব্যাপারই না । কয়েকটা পা গিয়েছে তখনই অনুভব করলো অপু ওর হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে নিচ্ছে ।
-এই কী?
-কিছু না ।
-শুনো তুমি আমাকে কি ভাবো যে আমি এই সামান্য ওজন নিতে পারব না? আমি এতো বড় কোম্পানী চালাই আর এই সামান্য….
তৃষার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়েই নিল অপু । তারপর হাটতে শুরু করলো ।
তৃষা মনে মনে হাসলো । ও খুব ভাল করেই জানতো অপু ওকে কিছুতেই এতো ব্যাগটা নিতে দিতো না । কেবল এই ব্যাপারই না অন্য সব ব্যাপারে অপু এই পাগলামোটা তৃষা খুব উপভোগ করে । অপুর সব সময়ে এই চেষ্টা থাকে যে ওকে কিভাবে আরও একটু বেশি আরাম দেওয়া যায় । প্রতি মাসের শেষের কয়টা দিনে তৃষার কাজের চাপ অনেক বেশি থাকে । তখন অন্য কোন দিনে তাকানোর সময় থাকে না । অফিস থেকে বাসায় যেতে অনেক দেরি হয় । যাওয়ার সময় তৃষার এতো ঘুম আসে । ক্লান্তিতে সব পুরো শরীর যেন ছেড়ে দিতে চায় । এই সময়টা অপু প্রতিটা সময় ওর অফিসে গিয়ে হাজির হয় । তৃষা যেন এই যাওয়ার পথ টুকু ঘুমাতে পারে সেই ব্যবস্থা করে । অপু গাড়ি চালিয়ে নেয় তৃষা তখন গাড়িতেই ঘুম দেয় । এই ঘুম টুকু এতো শান্তি লাগে ওর বলার মত না । এরকম আরও ছোট ছোট আরামের ব্যবস্থাটা যে অপু করেছে ওর জন্য সেটা তৃষা বলতে পারবে না ।
বাসায় এসে অপু ব্যাগটা টেবিলের উপরে রাখলো । তৃৃষার হঠাৎ কি মনে হল ও অপুর হাতটা দেখলো । পলিথিনের ব্যাগে ছিল শসা গুলো । হাতের স্থানটা চিকন মত ছিল তাই একটা দাগ হয়ে গিয়েছে । তৃষা জানে ও যদি ধরে আনতো ব্যাগটা ওর হাতেও এমন দাগ পড়লো । দাগটার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, সরি !
-হয়েছে ! অফিসে যাবা না?
-আজকে যাবো না ঠিক করেছি । হাসান আছে । ও সামলে নিবে ।
-কি করবে সারাদিন ?
-কেন তোমার সাথে সময় কাটাবো । আর শসা খাবো । জানো তো শসা খেলে ত্বক মসৃণ হয় ।
-তোমার ত্বক এখনই যথেষ্ঠ মসৃণ ।
-আরও হবে । তোমার সমস্যা আছে !
-নাহ । আমার বরং আরও ভাল । যত মসৃণ হবে তত চুমু খেয়ে মজা !
-ইস ! ঢং কত । শুনো আজকে থেকে কোন চুমুটুমু হবে না ।
-কী ! আগেই বলেছি সব কিছু শুনবো কিন্তু না ।
-আমার গাল আমি চুমু খেতে দিবো না । কী করবা শুনি ?
-দেখবা কি করবো?
এই বলে অপু খুব দ্রুত তৃষার কাছে চলে এল । কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রথমে তৃষার গালে তারপর নাকের উপর টুপ করে দুটো চুমু খেয়ে ফেলল । এরপর তৃষা কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু তার আগেই ঠোঁট দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরলো ।
-শুনো আজকে আমার মুড ভাল । তাই কিছু বললাম না । কিন্তু এরপর থেকে এসব হবে না । আমার ঠোঁট মানে আমার আয়ত্ব !
অপু হাসালো । তারপর বলল, দেখা যাবে ।
-দেখে নিও । হুহ !
এই বলে তৃষা রান্না ঘরের দিকে হাটা দিল । আজকে কি রান্না করা যায় ভাবছে । আজকে সত্যিই ওর মন ভাল । অপুকে কিভাবে খুশি করা যায় ভাবছে । অবশ্য অপু এই অল্পতেই খুশি হয় । এই যেমন মর্নিং কিস পেয়েই ও খুশি ।
এভাবে ওদের প্রতিদিনের গল্প এগিয়ে যায় । ছোট ছোট এমন কত ভালোবাসার গল্প এসে জমা হয় ওদের জীবনে ।
Discover more from অপু তানভীর
Subscribe to get the latest posts sent to your email.