টুকরো জীবন দৃশ্য – ৩

4.9
(68)

-এই অপু দাড়াও ।

অপু হাটছিলো আর কথা বলছিলো । কখন যে তৃষা থেমে গেছে সে সেটা খেয়াল করে নি । তৃষার ডাকে আবার ফিরে তাকালো । দেখতে পেল তৃষা এক শাস বিক্রেতার সামনে দাড়িয়ে রয়েছে । শসা দেখছে । অপু আবার ফিরে গেল ওর দিকে । বলল, কি ব্যাপার ?
-আরে দেখো শসা একেবারে ফ্রেশ !
-তো?
-তো মানে কি ? নিয়ে নিই ।
-তৃষা, ডিএসএসে সশা আছে । এখনও অনেকটা পথ বাকি।
-আমি এখান থেকেই নিবো ।
-নাও । আমি কিন্তু টানতে পারবো না । তোমাকে টানতে হবে !
-আচ্ছা যাও । টানতে হবে না তোমাকে ! আমার টা আমিই নিবো । টাকা দাও আমি টাকা আনি নি ।

অপু নিজের পকেট থেকে টাকা বের করে দিল । তৃষা মোট তিন কেজি শসা কিনলো । আরো কিনতো তবে এখন এতো টেনে নিয়ে যেতে পারবে না। ওদের বাসা থেকে পথ টুকু ভিআইপি রোড । এখানে রিক্সা চলে না । আর এতো সকালে কোন সিএনজি কিংবা ট্যাক্সি পাওয়া যাবে না । পাওয়া গেলেও এই টুকু দুরত্বে তারা যেতে চাইবে কিনা সন্দেহ । সুতরাং তাদের হাটা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই ।
এই সময় টুকু ওরা হাটতেই আসে ।

তৃষা যখন ব্যাগটা হাতে নিল তখন বুঝতে পারলো এতো নেওয়া ঠিক হয় নি ! আরও একটু কম নিলে ভাল হত । অপু সামনে দাড়িয়ে আছে বিরক্ত চোখে । তৃষা এমন একটা ভাব করে হাটতে শুরু করলো যে এই ওজন নিয়ে ওর জন্য হাটা কোন ব্যাপারই না । কয়েকটা পা গিয়েছে তখনই অনুভব করলো অপু ওর হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে নিচ্ছে ।
-এই কী?
-কিছু না ।
-শুনো তুমি আমাকে কি ভাবো যে আমি এই সামান্য ওজন নিতে পারব না? আমি এতো বড় কোম্পানী চালাই আর এই সামান্য….

তৃষার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়েই নিল অপু । তারপর হাটতে শুরু করলো ।

তৃষা মনে মনে হাসলো । ও খুব ভাল করেই জানতো অপু ওকে কিছুতেই এতো ব্যাগটা নিতে দিতো না । কেবল এই ব্যাপারই না অন্য সব ব্যাপারে অপু এই পাগলামোটা তৃষা খুব উপভোগ করে । অপুর সব সময়ে এই চেষ্টা থাকে যে ওকে কিভাবে আরও একটু বেশি আরাম দেওয়া যায় । প্রতি মাসের শেষের কয়টা দিনে তৃষার কাজের চাপ অনেক বেশি থাকে । তখন অন্য কোন দিনে তাকানোর সময় থাকে না । অফিস থেকে বাসায় যেতে অনেক দেরি হয় । যাওয়ার সময় তৃষার এতো ঘুম আসে । ক্লান্তিতে সব পুরো শরীর যেন ছেড়ে দিতে চায় । এই সময়টা অপু প্রতিটা সময় ওর অফিসে গিয়ে হাজির হয় । তৃষা যেন এই যাওয়ার পথ টুকু ঘুমাতে পারে সেই ব্যবস্থা করে । অপু গাড়ি চালিয়ে নেয় তৃষা তখন গাড়িতেই ঘুম দেয় । এই ঘুম টুকু এতো শান্তি লাগে ওর বলার মত না । এরকম আরও ছোট ছোট আরামের ব্যবস্থাটা যে অপু করেছে ওর জন্য সেটা তৃষা বলতে পারবে না ।

বাসায় এসে অপু ব্যাগটা টেবিলের উপরে রাখলো । তৃৃষার হঠাৎ কি মনে হল ও অপুর হাতটা দেখলো । পলিথিনের ব্যাগে ছিল শসা গুলো । হাতের স্থানটা চিকন মত ছিল তাই একটা দাগ হয়ে গিয়েছে । তৃষা জানে ও যদি ধরে আনতো ব্যাগটা ওর হাতেও এমন দাগ পড়লো । দাগটার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, সরি !
-হয়েছে ! অফিসে যাবা না?
-আজকে যাবো না ঠিক করেছি । হাসান আছে । ও সামলে নিবে ।
-কি করবে সারাদিন ?
-কেন তোমার সাথে সময় কাটাবো । আর শসা খাবো । জানো তো শসা খেলে ত্বক মসৃণ হয় ।
-তোমার ত্বক এখনই যথেষ্ঠ মসৃণ ।
-আরও হবে । তোমার সমস্যা আছে !
-নাহ । আমার বরং আরও ভাল । যত মসৃণ হবে তত চুমু খেয়ে মজা !
-ইস ! ঢং কত । শুনো আজকে থেকে কোন চুমুটুমু হবে না ।
-কী ! আগেই বলেছি সব কিছু শুনবো কিন্তু না ।
-আমার গাল আমি চুমু খেতে দিবো না । কী করবা শুনি ?
-দেখবা কি করবো?

এই বলে অপু খুব দ্রুত তৃষার কাছে চলে এল । কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রথমে তৃষার গালে তারপর নাকের উপর টুপ করে দুটো চুমু খেয়ে ফেলল । এরপর তৃষা কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু তার আগেই ঠোঁট দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরলো ।

-শুনো আজকে আমার মুড ভাল । তাই কিছু বললাম না । কিন্তু এরপর থেকে এসব হবে না । আমার ঠোঁট মানে আমার আয়ত্ব !
অপু হাসালো । তারপর বলল, দেখা যাবে ।
-দেখে নিও । হুহ !

এই বলে তৃষা রান্না ঘরের দিকে হাটা দিল । আজকে কি রান্না করা যায় ভাবছে । আজকে সত্যিই ওর মন ভাল । অপুকে কিভাবে খুশি করা যায় ভাবছে । অবশ্য অপু এই অল্পতেই খুশি হয় । এই যেমন মর্নিং কিস পেয়েই ও খুশি ।

এভাবে ওদের প্রতিদিনের গল্প এগিয়ে যায় । ছোট ছোট এমন কত ভালোবাসার গল্প এসে জমা হয় ওদের জীবনে ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.9 / 5. Vote count: 68

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →