এই সব মিথ্যা গল্প

oputanvir
4.6
(66)

সাদিয়া নওরিনের পালস চেক করলো । নওরিন কেমন যেন করছে । রিয়াদ নওরিনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে ভয়ে ভয়ে । সাদিয়া এবার ফিরলো রিয়াদের দিকে । তীব্র চোখে রিয়াদের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বলল, তোমার কাছ থেকে এটা আমি আশা করিনি রিয়াদ।
রিয়াদ মাথা নিচু করে রইলো । সাদিয়া আবার বলল, তোমার বয়স কত শুনি? আর এই মেয়েরই বা বয়স কত? এই বয়সে ওর দেহ কি যৌন মিলনের জন্য ম্যাচুউর হয়েছে? আশ্চর্য হয়ে গেলাম আমি । তোমার মা বাবা তোমাকে বিশ্বাস করে বাসায় একা রেখে গেছে আর তুমি এই কাজ করছো?
রিয়াদ মাথা নিচু করেই রইলো । চোখ তুলে সাদিয়া আপুর দিকে তাকাতে পারছে না । কোন মতে বলল, ও ঠিক যাবে তো আপু?
-আমার ক্ষতটা আরও ভাল করে দেখতে হবে । এখানে না হলে হাসপাতালে নিতে হবে । তুমি তার আগে এই ইঞ্জেকশন টা নিয়ে এসো !

সাদিয়া কাগজে খসখস করে কিছু একটা লিখে দিলো । রিয়াদ আর কিছু না বলে দৌড়ে বের হয়ে গেল কাগজটা নিয়ে । সাদিয়ার আপুর সামনে থাকতে লজ্জা লাগছে । সে সব কিছু জেনে গেছে । কি ভাবছে ওর আর নওরিনের নামে । আপাতত যা ভাবছে ভাবুক । নওরিনের যেন কিছু না হয় । ওর কিছু হলে সে নিজেকে কোন দিন ক্ষমা করতে পারবে না । সব দোষ ওর নিজের । ভাগ্য ভাল যে সাদিয়া আপু আজকে বাসায় ছিল । যদি হাসপাতালে ডিউটিতে যেত তাহলে রিয়াদ কি করতো !

রিয়াদ যখন ফিরে তখন নওরিন চোখ মেলে তাকিয়েছে । ওকে আগের থেকে ভাল দেখাচ্ছে । রিয়াদের হাত থেকে ইঞ্জেকশনটা নিয়ে সাদিয়া নওরিনের হাতে পুশ করলো । তারপর রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল, আপাতত ওকে হাসপাতালে নেওয়া লাগবে না । তবে বিশ্রামের দরকার । ইঞ্জেকশনটা দেওয়াতে ও ধীরে ধীরে ভাল হয়ে উঠবে, শরীরে শক্তি পাবে ।
-থ্যাঙ্কিউ আপু !
-আমাকে ধন্যবাদ দিতে হবে না । তোমার আম্মুর সাথে আমি এই ব্যাপারে কথা বলল ।
-আপনি যেটা ভাল বুঝেন ।
-ওর খেয়াল রাখো । অন্তত দুই ঘন্টা যেন ও শুয়ে থাকে । একটু নড়াচড়া যেন না করে । ঠিক আছে !
-জি !

সাদিয়া আপু চলে গেল । রিয়াদ নওরিনের পাশে গিয়ে বসলো । নওরিন ওর দিকে দুর্বল চোখে তাকিয়ে একটু হাসলো । বলল, খুব চিন্তায় ফেলে দিলাম কি?
-না না । মোটেই না । আই এম সরি নওরিন । ভেরি সরি । আমি আসলে বুঝতেই পারি নি এমন হবে । তোমাকে কীভাবে ফোর্স করছিলাম । আমার কারণেই এসব হল ।
নওরিন রিয়াদের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলো সেখানে পানি চিকচিক করছে । ছেলেটা যেন এখনই কেঁদে ফেলবে । একটু ওঠার চেষ্টা করলো সে । সাথে সাথেই রিয়াদ এগিয়ে এসে ওকে ধরলো । বলল, শুয়ে থাকো । একটুও নড় না ।

নওরিন উঠলো না । তবে রিয়াদের হাত ধরলো । হাতটা এবার ওর মুখের কাছে নিয়ে ঠোঁটের উপরে ঘষলো । একটু আগে কী এক উদ্দোম খেলায় মেতে উঠেছিলো ওরা দুজন । রিয়াদের সাথে ওর সম্পর্ক প্রায় ছয় মাসের । ওদের ক্লাসেই পড়ে । প্রথমে চেনা জানা তারপর এক সময় প্রেম । প্রেম ভালই চলছিলো ওদের । এরপর ওরা অনুভব করলো কেবল প্রেম বাদ দিয়েও তাদের যেন আরও কিছু চাই । নিষিদ্ধ কিছু । রিয়াদের পক্ষ থেকেই প্রথম প্রস্তাবটা আসে । নওরিন একটু নিম রাজি ছিল । একবার ইচ্ছে করছিলো আরেকবার ভয়ও পাচ্ছিলো তবে মনের ভেতরে যে উত্তেজত ছিল সেটা সে অস্বীকার করতে পারবে না কোন ভাবেই । তার উপরে ওপ কয়েকজন বান্ধবী তাদের বয়ফ্রেন্ডদের সাথে ইতিমধ্যে এই কাজ করে ফেলেছে । নওরিন নিজে সেই সব ছবি দেখেছে ।
সময় সুযোগ মত আজকে এসেছে রিয়াদের বাসায় । ওর বাবা মা দুজনেই অফিসে এই সময়ে । বাসা একদম ফাঁকা । প্রথমে চুমু তারপর শরীর থেকে পোশাক খোলা এরপর যখন দুজনই তীব্র ভাবে উত্তেজিত হয়ে আদিম খেলা শুরু করলো নওরিন অনুভব করলো তীব্র একটা বয়াথা অনুভব করছে । সেই সাথে তরন জাতীয় কিছু যেন ওর দেহের ভেতর থেকে বের হয়ে এল । ওর চিৎকারেই এমন কিছু ছিল যে রিয়াদ থেমে গেল । তাকিয়ে থেকে রক্তা বের হচ্ছে । ঠিক এই সময়েই নওরিনের মাথা ঘুরে ওঠে । ওর ঠিকঠাক কিছুই মনে নেই ।
যখন নওরিনের জ্ঞান ফিরলো দেখলো একটা আপু ওকে পরীক্ষা করছে । একটু পরে ওকে একটা ইঞ্জেকশন দিল । এখন একটু সুস্থ বোধ করছে । ব্লিডিংও বন্ধ হয়েছে ।

রিয়াদ বলল, তুমি শুয়ে থাকো আমি তোমার জন্য খাওয়ার কিছু নিয়ে আসি । নওরিন চুপচাপ শুয়ে রইলো । সে শুনেছে মেয়েদের প্রথমবারে নাকি একটু ব্যাথা লাগে । তবে সেটা যে এমন হবে নওরিন কল্পনাও করতে পারে নি । অন্য দিকে ছেলেরা নাকি এই সময়ে এতোই উত্তেজিত হয়ে পড়ে তখন তাদের কোন ভাবেই থামানোর উপায় নেই । রিয়াদ না থামতো ?
কথাটা ভাবতেই একটা শিরশিরে অনুভূতি বয়ে গেল ওর পুরো শরীর জুরে । সত্যিই যদি রিয়াদ না থামতো তাহলে ওর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যেত । কিন্তু ও থেমেছে । কেবল থামেই নি নিজের কথা না ভেবে একজন ডাক্তারও ডেকে এনেছে । নওরিন নিশ্চিত ভাবেই জানে এই খবর রিয়াদের বাবা মায়ের কাছে পৌছে যাবে । তখন কি হবে কে জানে!
নওরিন দেখলো রিয়াদ একটা বাতিতে করে গরম দুধ করে নিয়ে এসেছে । সেটা বিছানার পাশের রেখে নিজেই যত্ন করে ওকে খাইয়ে দিতে লাগলো । রিয়াদ যে এতো কেয়ারিং হবে নওরিন ভাবতে পারে নি । একটু রাফনেস ছিল ওর ভেতরে । নওরিনের উপরে কর্তৃত্ব ফলিয়ে চলেছে সম্পর্কের শুরু থেকেই । নওরিন এটা মেনেও নিয়েছে । কিন্তু এখন রিয়াদকে দেখে ওর একেবারে অচেনা লাগছে । সেই সাথে ভালোও লাগছে ।

রিয়াদের বাসায় সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকলো । ওর শরীরের অবস্থা বেশ ভাল হয়ে গেল এর ভেতরেই । মাঝে একটা ওয়াশ রুমে যেতে হয়েছিলো । রিয়াদ ওকে হাটতে দেয় নি । কোলে করে নিয়ে গেছে । বলেছে যেন দরজা বন্ধ না করে । সন্ধ্যার সময় নিজে ওকে বাসায় পৌছে দিল । আর কতবার যে ওর কাছে ক্ষমা চাইলো সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না ।

পরের দুইদিন ক্যাম্পাসে রিয়াদের সাথে আবার দেখা হল নওরিনে। নওরিন যদিও আসতে চেয়েছিলো পরদিনই তবে রিয়াদ কোন ভাবেই রাজি হয় নি । ক্লাস শেষ করে দুজনে আবারও এক সাথে হল । রিয়াদ এই দুই দিনে ওর শীরের খবর কতবার যে নিয়েছে সেটা নওরিন গুনে শেষ করতে পারে নি । ছেলেটা এমন অপরাধবোধে ভুগছে সেটা বলার মত না ।
নওরিন হঠাৎ বলল, সাদিয়া আপুর কি খবর? তোমার বাসায় কি বলে দিয়েছে?
-এখনও বলে নি । তবে বলবে?
-তাহলে?
-তাহলে আর কি? একটা ভুল হয়ে গিয়েছে ! কাজটা করা আমাদের ঠিক হয় নি ।
নওরিন কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল, তুমি তো আর একা করো নি কাজটা, তাই না? আমিও ছিলাম । আমারও শাস্তি হওয়া দরকার ।
-উহু ! আমি এগিয়েছি । দোষটা আমারই । যা হয় আমার হবে । আমি তোমার নাম সামনে আনবোই না।

নওরিন রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল, আরেকটা কাজ করা যায় ।
-কি কাজ?
-চল সাদিয়া আপুর কাছে যাই।
-গিয়ে?
-আগে চল তো । দেখা যাক কি করা যায় !

রিক্সায় উঠলো ওরা । ওদের ক্যাম্পাস থেকে সাদিয়া আপু যে হাসপাতালে চাকরি করে সেটা একটু দুরে। যেতে আধা ঘন্টার মত সময় লাগে । নওরিন রিক্সার ভেতরেই রিয়াককে বেশ কয়েকটা চুমু খেল । হুড তোলা ছিল ।
রিয়াদ কৌতুহলী চোখে নওরিনের দিকে তাকালো । নওরিন বলল, এটা ঐদিন আমার টেক কেয়ার করার জন্য ।
-দায়ীও তো আমিই ছিলাম।
-হয়েছে বাবা । নিজেকে দোষ দেওয়া বন্ধ কর তো !

সাদিয়া আপুকে পাওয়া গেলে চেম্বারে । রিয়াদকে বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে নওরিন একন্তে কিছু কথা বলতে চাইলো সাদিয়া আপুর সাথে ।
সাদিয়াই প্রথম প্রশ্ন টা করলো, তোমার শরীর ভাল এখন?
-জি আপু ।
-কোন অসুবিধা ?
-পরদিন সকাল থেকেই সব ঠীক হয়ে গেছে ।
-আমি মোটেই বুঝি না তোমরা এই অপরিপক্ক বয়সে এমন কাজ করার সাহস কিভাবে পাও !
-আপু আমাদের দুজনের ভুল হয়েছে । বিশ্বাস করুন এমন কাজ আর কখনও করবো না । কখনও না । আপনি প্লিজ রিয়াদের বাবা মাকে কিছু বলবেন না । দেখুন আমি জানি আমরা ভুল করেছি । একটা সুযোগ অন্তত আমাদের দিন । রিয়াদ যে কী পরিমান অনুতপ্ত সেটা আমার থেকে ভাল আর কেউ উপলব্ধি করতে পারছে না । এই কাজটা আমরা ঠিক করি । আর কোন দিন করবো না ।

কথা গুলো এক ভাবে বলে নওরিন কিছু সময়ে চুপ করে রইলো । সাদিয়া এক ভাবে নওরিনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে । বুঝার চেষ্টা করছে নওরিন কি নিজ থেকে এই কথা গুলো বলছে নাকি রিয়াদ ওকে দিয়ে বলাচ্ছে । নওরিন আবার বলল, আপু একটা কথা কি শেয়ার করতে পারি আপনার সাথে ?
-বল ।
-ঐদিনের ঘটনা । আপনি নিশ্চয়ই জানে এই ইন্টারকোর্সের ছেলেরা কী পরিমান উত্তেজিত থাকে ।
-হ্যা ।
-মেয়েরা বাঁধা দিতে চাইলেও আমি শুনেছি খানিকটা জোর জবরদস্তি করে । করে না?
-হ্যা । করে । এই জন্যই তো দুর্ঘটনা ঘটে ।
-ঐদিন আমরা এমন পর্যায়েই ছিলাম । আমি যখন ব্যাথায় চিৎকারে উঠলাম তখন রিয়াদ চাইলেই নাও থামতে পারতো। আমার মনে হয়েছিলো বুঝি থামবে না কিন্তু ও থেমে গিয়েছিলো । যখনই আমি চিৎকার করি তখন। এই জন্য আমার কিছু হয় নি । অল্পের উপর দিয়ে গিয়েছে । আপনি যখন চলে গেলেন পুরোটা সময় ও আমার যেভাবে টেক কেয়ার করেছে আমার চোখে ভেসে রয়েছে । আমি ওকে কিছুতেই হারাতে চাই না । কিছুতেই না।

শেষ লাইনটা বলার সময় নওরিনের কলা কেমন যে কেঁপে উঠলো । সাদিয়া সেটা লক্ষ্য করলো ঠিকঠাক । বলল ওকে ডেকে নিয়ে আসো !
একটু পরে রিয়াদও ঘরে ঢুকলো । সাদিয়া ওদের দুজনকে উদ্দেশ্য করে বলল, তোমরা একটা অন্যায় করেছ। স্বীকার করছো?
দুজনেই এক সাথে বলল, জি আপু । শরীর পরিপক্ক হওয়ার আগে এসব কাজ করা মোটেও ভাল না নিরাপদ না । বুঝতে পেরেছো কি?
-জি আপু । আর এরকম হবে না ।
-ওকে আমি এক শর্তে আমি সব কিছু ভুলে যাবো । সেটা হচ্ছে যদি কথা দাও এরকম কাজ আর করবে না কোন দিন ।
নওরিন বলল, বিয়ের পরেও না ।

কথাটা এমন ভাবে বলল যে সাদিয়া হেসে ফেলল । তারপর বলল, যদি ধর সামনের মাসে তোমাদের বিয়ে হয়ে গেল তখনও না । ওকে ?
রিয়াদ বলল, জি আমি কথা দিচ্ছি ! এরকম টা আর কোন দিন হবে না ।
-ওকে যাও । এই ব্যাপারটা আমার আর তোমাদের ভেতরেই থাকবে । কিন্তু যদি ….
রিয়াদ বলল, আপু কথা দিয়েছি আর হবে না । আমি ঐদিন ওর এমন অবস্থা দেখে কেমন যে ফিল করছিলাম আপনাকে বলে বোঝাতে পারবো না । আমার কারণে ওর যদি কোন ক্ষতি হয়ে যায় আমি তাহলে নিজেকে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারবো না ।

নওরিন তো অবশ্যই সাদিয়াও বুঝতে পারলো যে রিয়াদের কন্ঠটা অন্য রকম শোনাচ্ছে । একটা তীব্র আবেগ ওরা দুজনেই অনুভব করতে পারলো ।

The end

এই গল্প গুলো কখনই এমন হয় না । অল্প বয়সের প্রেমে এতো আবেগ থাকে যে কোনটা সঠিক আর কোনটা বেঠিক কিছুই মাথায় আসে না । এই জন্য এই ব্যাপার গুলো নিয়ে আলোচনা করা দরকার । সচেতন করা দরকার ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.6 / 5. Vote count: 66

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

3 Comments on “এই সব মিথ্যা গল্প”

  1. সত্যিই এই গল্পের মতো হয় না বাস্তবে। আপনার মতো করে ছেলেরা ভাবে না।ভাবতেই পারে নাহ।

Comments are closed.