অবাঞ্চিত সম্পর্ক

oputanvir
4.3
(68)

মেয়েটাকে এদিকে আসতে দেখেই নওরিনের মেজাজটা হঠাৎ করে খারাপ হয়ে গেল । একবার ভাবলো মেয়েটাকে সে দেখবে না । না দেখার ভান করে থাকবে । এমন কী মেয়েটা ওর সামনে আসলেও কোন কথা বলবে না । এই মেয়েটার নাম শুনলেই এখন নওরি্রনে রাগে পুরো শরীর জ্বলতে থাকে ।

-হাই নওরিন ।

নওরিনের একদম সামনে এসে থাকলো প্রভা । তারপর নওরিনের দিকে তাকিয়ে বলল, কেমন আছো নওরিন?

নওরিন মুখ শক্ত করে বলল, ভাল ।

-আমি কেমন আছি জানতে চাইবে না?

নওরিন কঠিন স্বরে বলল, তুমি কেমন আছো সেটা আমার জানার কোন ইচ্ছে নেই ।

 নওরিন ভেবেছিল ওর কাছ থেকে এমন কথা শুনে হয়রো প্রভা মুখ গোমড়া করবে কিংবা ওর সামনে থেকে চলে যাবে । কিন্তু প্রভা বিন্দু মাত্র রাগ করলো না । বরং একটু হেসে বলল, আমার উপরে এতো রাগ কেন শুনি? আমি কী তোমার কোন ক্ষতি করেছি কখনও?

-কর নি কিন্তু চেষ্টা করছ তো?

-চেষ্টা ? কিভাবে শুনি?

নওরিন এবার একটু অবাক না হয়ে পারলো না । বিশেষ করে প্রভা এমন ভাবে ওর সাথে কথা বলছে যেন সে কিছু করেই নি । অথচ আশে পাশের সবাই জানে এই মেয়ে কী করতে চায় কিংবা চাচ্ছে। নওরিনের জীবনের ভালবাসাকে সে ছিনিয়ে নিতে যাচ্ছে । কেবল এই অপুকেই নয়, এই মেয়ের আরও বদনাম আছে । নওরিন শুনেছে এই মেয়ে অনেকের প্রেমিক আর স্বামীর সাথে রংঢং করে । এমন কি কয়েকজন স্যারের সাথেও নাকি এই মেয়ের সম্পর্ক আছে । যদিও সবই রটনা । নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারে না । তবে যা রটে তার কিছুটা তো বটেই ।

প্রভার বাবার অনেক বেশি টাকা । প্রভা দেখতেও অনেক সুন্দর যা ছেলেদের গায়েল করতে সাহায্য করে । কদিন থেকেই এই কথা বার্তা সে শুনতে পাচ্ছে যে প্রভার চোখ নাকি এবার অপুর দিকে । এই কারণেই সম্ভবত এসেছে নওরিনের সাথে কথা বলতে । নওরিনের সাথে ভাব করে তারপর অপুর দিকে যাবে। নওরিনের ইচ্ছে হল কষে একটা চড় মারে কিন্তু উপায় নেই । মেয়েটা ওর সাথে যেন একটু বেশিই ভাল ব্যবহার করছে ।

নওরিন বেশ কিছু দিন প্রভাকে এড়িয়ে চলল বটে কিন্তু মেয়েটা যেন ওর সাথে আঠার মত লেগে রইলো । একটু বেশিই ভাল ব্যবহার করলো । নওরিনের অনেক উপকার করলো। ক্লাসের ভেতরে একদিন একটা ছোট্ট দুর্ঘটনা ঘটলো নওরিনের সাথে । ওর হাত খানিকটা কেটে গিয়েছিল। কোথা থেকে খবর পেয়ে প্রভা এসে হাজির । তারপর ওকে নিয়ে সোজা হাসপাতালে নিয়ে গেল । ওর চিকিৎসা করা । প্রভার এই আচরন দেখে নওরিন একটু অবাক হল ।

এভাবে বেশ কিছু কেটে গেল । এরই মাঝে এমন সময়ও এসেছে যে অপু আর নওরিনকে এক সাথে প্রভা ট্রিট দিয়েছে । অপুর ব্যাপারে আসলে নওরিনর কোন সন্দেহ নেই । অপু ওর অগোচরে কিছু কখনই করবে না সেটা নওরিন খুব ভাল করে জানে । কিন্তু প্রভা মেয়েটার আচরণ নওরিনের কাছে কেমন যেন লাগছে । তবে একটা কথা স্বীকার করতেই হবে যে অপুর সাথে প্রভার যে কিছু চলছে না সেটা নওরিন বুঝতে পেরেছে । এবং প্রভা অপুর দিকে বদ নজর দেয় নি । এই ব্যাপার গুলো মেয়েরা ভাল করেই বুঝতে পারে । কোন মেয়ে তার স্বামী কিংবা প্রেমিকের দিকে কেমন দৃষ্টিতে থাকায় সেটা মেয়েদের থেকে ভাল আর কেউ বুঝতে পারে না ! এই ব্যাপারটা বুঝতে পাওয়ার পর নওরিনের মনভাব কিছুটা নমনীয় হয়েছে । বুঝতে পেরেছে প্রভা ওর বন্ধুত্ব চায় । বড় লোকের মেয়ে গুলো খানিকটা একাকী হয় । এই কারণেই কি ওদের সাথে বন্ধুত্ব করতে এসেছে । নওরিন তারপর থেকে আস্তে আস্তে প্রভার সাথে মিশতে শুরু করলো । তবে মনের মাঝে একটা সুক্ষ অস্বস্তি সব সময়ই রয়ে গেল । প্রভার আচরনে যেন কিছু একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার আছে । তবে নওরিন সেটাতে কিছু মনে করলো না । মেয়েটার ওর সাথে মিশতে চাইছে, মিশুক ! 

দুজনের গল্প বেশ ভালই জমে উঠলো । অপুও ওদের সাথে থাকতো মাঝে মাঝে । কিন্তু একদিন ঘটলো এমন এক ঘটনা যা নওরিন কোন দিন আশা করে নি । ভাবতেও পারে নি । একদিনে ওরা বিকেলেটা কাটিয়েছিল এক সাথে । ফেরার পথে অপু একটা কাজে আগেই বের হল । শেষে নওরিন আর প্রভা এক রিক্সাতে রওয়ানা দিল । অন্য সময় হলে প্রভার গাড়িই নিত তবে আজকে কেন জানি ওরা রিক্সা নিল । গাড়ি ছেড়ে দিল । আজকে আকাশ মেঘলা । প্রভার ইচ্ছে আজকে সে বৃষ্টিতে রিক্সায় চড়বে । নওরিন অবশ্য পাগলামী মেনে নিল। রিক্সা করে যেতে যেতেই প্রবল বৃষ্টি শুরুও হয়ে গেল । পলিব্যাগ নিয়ে হুড তুলে ওরা দুজন কোন মতে বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো । কিন্তু খুব একটা লাভ হল না । রিক্সার দুজন প্রায় ভিজে গেছে ।নওরিন বলল, এসবের কোন মানে হয়? এই বৃষ্টিতে ভেজার কোন মানে ছিল না !

-কেন? ভাল লাগছে না?

-না সেটা না । আমার অপুর সাথে এই রকম ভাবে বৃষ্টিতে ভিজতে ভাল লাগে ।

-কেন আমার সাথে ভালো লাগছে না?

প্রভার কন্ঠে এমন কিছু ছিল যে নওরিন ফিরে তাকালো প্রভার দিকে। নওরিন প্রভার দিকে তাকাতেই দেখলো প্রভা কেমন চোখে ওর দিকে তাইয়ে রয়েছে । বৃষ্টির পানি বেশ ঠান্ডা তাই নওরিন একটু একটু যেন কাঁপছিল । সেই কাঁপন ধরা ঠোঁটের দিকে প্রভা তাকিয়ে ছিল একভাবে । তখনই নওরিনকে অবাক করে দিয়ে প্রভার নিজের ঠোঁটটা এগিয়ে নিয়ে আসতে লাগলো নওরিনর দিকে । নওরিন যেন একেবারে কাঠ হয়ে গেল । কিছু সময় কেটে গেল এমন ভাবেই ।

তারপর প্রভাবে এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে থামিয়ে দিল । কঠিন স্বরে বলল, হোয়াট দ্য ফাক আর ইউ ডুয়িং?

-নওরিন, আই……

-ডোন্ট সে ইট। 

-একটু বুঝতে চেষ্টা কর !

-কোন কিছু বুঝতে চেষ্টা করার দরকার নেই আমার । এই জন্য তুমি আমার সাথে মিশেছো না?

নওরিন এবার রিক্সাওয়ালাকে চিৎকার করে বলল, মামা রিক্সা থামান । এখনই থামান ! 

রিক্সা থেমে যেতেই নওরিন রিক্সা থেকে নেমে গেল । তারপর হন হন করে হাটতে লাগলো অন্য দিকে । রাগে ওর শরীর জ্বলতে লাগলো । মেয়েটার মাথা খারাপ নাকি ! 

অপুকে বলতেই অপু হাসতে হাসতে শেষ । নওরিনের রাগে শরীর জ্বলতে লাগলো । গতদিনের পর যতদিন ঐ দৃশ্যের কথা ভাবছিল ততবারই ও গা গুলিয়ে আসছিল । এমন কিছু সে কোন দিন ভাবতেও পারে না । এখন সে বুঝতে পারছে যে প্রভার ঐ আচরন কেন ওর কাছে অস্বস্তি লাগছিল । আর কেন মেয়েটার কোন বন্ধু নেই । আসলে যা কিছু রটেছিল তার ভেতরে সত্য তো কিছু ছিলই । তবে সেটা ওরা ভেবেছে উল্টো ভাবে । আর প্রভার ধারে কাছেও সে যাবে না । কানে ধরছে । না জেনে শুনে কারো সাথে আগ বন্ধুত্ব নয় । আর যাদের আচরন অস্বস্তির অনুভূতি যোগাবে তাদের কাছ থেকে দূরে থাকবে হবে একদম ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.3 / 5. Vote count: 68

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →