অবাঞ্চিত সম্পর্ক

oputanvir
4.4
(70)

মেয়েটাকে এদিকে আসতে দেখেই নওরিনের মেজাজটা হঠাৎ করে খারাপ হয়ে গেল । একবার ভাবলো মেয়েটাকে সে দেখবে না । না দেখার ভান করে থাকবে । এমন কী মেয়েটা ওর সামনে আসলেও কোন কথা বলবে না । এই মেয়েটার নাম শুনলেই এখন নওরি্রনে রাগে পুরো শরীর জ্বলতে থাকে ।

-হাই নওরিন ।

নওরিনের একদম সামনে এসে থাকলো প্রভা । তারপর নওরিনের দিকে তাকিয়ে বলল, কেমন আছো নওরিন?

নওরিন মুখ শক্ত করে বলল, ভাল ।

-আমি কেমন আছি জানতে চাইবে না?

নওরিন কঠিন স্বরে বলল, তুমি কেমন আছো সেটা আমার জানার কোন ইচ্ছে নেই ।

 নওরিন ভেবেছিল ওর কাছ থেকে এমন কথা শুনে হয়রো প্রভা মুখ গোমড়া করবে কিংবা ওর সামনে থেকে চলে যাবে । কিন্তু প্রভা বিন্দু মাত্র রাগ করলো না । বরং একটু হেসে বলল, আমার উপরে এতো রাগ কেন শুনি? আমি কী তোমার কোন ক্ষতি করেছি কখনও?

-কর নি কিন্তু চেষ্টা করছ তো?

-চেষ্টা ? কিভাবে শুনি?

নওরিন এবার একটু অবাক না হয়ে পারলো না । বিশেষ করে প্রভা এমন ভাবে ওর সাথে কথা বলছে যেন সে কিছু করেই নি । অথচ আশে পাশের সবাই জানে এই মেয়ে কী করতে চায় কিংবা চাচ্ছে। নওরিনের জীবনের ভালবাসাকে সে ছিনিয়ে নিতে যাচ্ছে । কেবল এই অপুকেই নয়, এই মেয়ের আরও বদনাম আছে । নওরিন শুনেছে এই মেয়ে অনেকের প্রেমিক আর স্বামীর সাথে রংঢং করে । এমন কি কয়েকজন স্যারের সাথেও নাকি এই মেয়ের সম্পর্ক আছে । যদিও সবই রটনা । নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারে না । তবে যা রটে তার কিছুটা তো বটেই ।

প্রভার বাবার অনেক বেশি টাকা । প্রভা দেখতেও অনেক সুন্দর যা ছেলেদের গায়েল করতে সাহায্য করে । কদিন থেকেই এই কথা বার্তা সে শুনতে পাচ্ছে যে প্রভার চোখ নাকি এবার অপুর দিকে । এই কারণেই সম্ভবত এসেছে নওরিনের সাথে কথা বলতে । নওরিনের সাথে ভাব করে তারপর অপুর দিকে যাবে। নওরিনের ইচ্ছে হল কষে একটা চড় মারে কিন্তু উপায় নেই । মেয়েটা ওর সাথে যেন একটু বেশিই ভাল ব্যবহার করছে ।

নওরিন বেশ কিছু দিন প্রভাকে এড়িয়ে চলল বটে কিন্তু মেয়েটা যেন ওর সাথে আঠার মত লেগে রইলো । একটু বেশিই ভাল ব্যবহার করলো । নওরিনের অনেক উপকার করলো। ক্লাসের ভেতরে একদিন একটা ছোট্ট দুর্ঘটনা ঘটলো নওরিনের সাথে । ওর হাত খানিকটা কেটে গিয়েছিল। কোথা থেকে খবর পেয়ে প্রভা এসে হাজির । তারপর ওকে নিয়ে সোজা হাসপাতালে নিয়ে গেল । ওর চিকিৎসা করা । প্রভার এই আচরন দেখে নওরিন একটু অবাক হল ।

এভাবে বেশ কিছু কেটে গেল । এরই মাঝে এমন সময়ও এসেছে যে অপু আর নওরিনকে এক সাথে প্রভা ট্রিট দিয়েছে । অপুর ব্যাপারে আসলে নওরিনর কোন সন্দেহ নেই । অপু ওর অগোচরে কিছু কখনই করবে না সেটা নওরিন খুব ভাল করে জানে । কিন্তু প্রভা মেয়েটার আচরণ নওরিনের কাছে কেমন যেন লাগছে । তবে একটা কথা স্বীকার করতেই হবে যে অপুর সাথে প্রভার যে কিছু চলছে না সেটা নওরিন বুঝতে পেরেছে । এবং প্রভা অপুর দিকে বদ নজর দেয় নি । এই ব্যাপার গুলো মেয়েরা ভাল করেই বুঝতে পারে । কোন মেয়ে তার স্বামী কিংবা প্রেমিকের দিকে কেমন দৃষ্টিতে থাকায় সেটা মেয়েদের থেকে ভাল আর কেউ বুঝতে পারে না ! এই ব্যাপারটা বুঝতে পাওয়ার পর নওরিনের মনভাব কিছুটা নমনীয় হয়েছে । বুঝতে পেরেছে প্রভা ওর বন্ধুত্ব চায় । বড় লোকের মেয়ে গুলো খানিকটা একাকী হয় । এই কারণেই কি ওদের সাথে বন্ধুত্ব করতে এসেছে । নওরিন তারপর থেকে আস্তে আস্তে প্রভার সাথে মিশতে শুরু করলো । তবে মনের মাঝে একটা সুক্ষ অস্বস্তি সব সময়ই রয়ে গেল । প্রভার আচরনে যেন কিছু একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার আছে । তবে নওরিন সেটাতে কিছু মনে করলো না । মেয়েটার ওর সাথে মিশতে চাইছে, মিশুক ! 

দুজনের গল্প বেশ ভালই জমে উঠলো । অপুও ওদের সাথে থাকতো মাঝে মাঝে । কিন্তু একদিন ঘটলো এমন এক ঘটনা যা নওরিন কোন দিন আশা করে নি । ভাবতেও পারে নি । একদিনে ওরা বিকেলেটা কাটিয়েছিল এক সাথে । ফেরার পথে অপু একটা কাজে আগেই বের হল । শেষে নওরিন আর প্রভা এক রিক্সাতে রওয়ানা দিল । অন্য সময় হলে প্রভার গাড়িই নিত তবে আজকে কেন জানি ওরা রিক্সা নিল । গাড়ি ছেড়ে দিল । আজকে আকাশ মেঘলা । প্রভার ইচ্ছে আজকে সে বৃষ্টিতে রিক্সায় চড়বে । নওরিন অবশ্য পাগলামী মেনে নিল। রিক্সা করে যেতে যেতেই প্রবল বৃষ্টি শুরুও হয়ে গেল । পলিব্যাগ নিয়ে হুড তুলে ওরা দুজন কোন মতে বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো । কিন্তু খুব একটা লাভ হল না । রিক্সার দুজন প্রায় ভিজে গেছে ।নওরিন বলল, এসবের কোন মানে হয়? এই বৃষ্টিতে ভেজার কোন মানে ছিল না !

-কেন? ভাল লাগছে না?

-না সেটা না । আমার অপুর সাথে এই রকম ভাবে বৃষ্টিতে ভিজতে ভাল লাগে ।

-কেন আমার সাথে ভালো লাগছে না?

প্রভার কন্ঠে এমন কিছু ছিল যে নওরিন ফিরে তাকালো প্রভার দিকে। নওরিন প্রভার দিকে তাকাতেই দেখলো প্রভা কেমন চোখে ওর দিকে তাইয়ে রয়েছে । বৃষ্টির পানি বেশ ঠান্ডা তাই নওরিন একটু একটু যেন কাঁপছিল । সেই কাঁপন ধরা ঠোঁটের দিকে প্রভা তাকিয়ে ছিল একভাবে । তখনই নওরিনকে অবাক করে দিয়ে প্রভার নিজের ঠোঁটটা এগিয়ে নিয়ে আসতে লাগলো নওরিনর দিকে । নওরিন যেন একেবারে কাঠ হয়ে গেল । কিছু সময় কেটে গেল এমন ভাবেই ।

তারপর প্রভাবে এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে থামিয়ে দিল । কঠিন স্বরে বলল, হোয়াট দ্য ফাক আর ইউ ডুয়িং?

-নওরিন, আই……

-ডোন্ট সে ইট। 

-একটু বুঝতে চেষ্টা কর !

-কোন কিছু বুঝতে চেষ্টা করার দরকার নেই আমার । এই জন্য তুমি আমার সাথে মিশেছো না?

নওরিন এবার রিক্সাওয়ালাকে চিৎকার করে বলল, মামা রিক্সা থামান । এখনই থামান ! 

রিক্সা থেমে যেতেই নওরিন রিক্সা থেকে নেমে গেল । তারপর হন হন করে হাটতে লাগলো অন্য দিকে । রাগে ওর শরীর জ্বলতে লাগলো । মেয়েটার মাথা খারাপ নাকি ! 

অপুকে বলতেই অপু হাসতে হাসতে শেষ । নওরিনের রাগে শরীর জ্বলতে লাগলো । গতদিনের পর যতদিন ঐ দৃশ্যের কথা ভাবছিল ততবারই ও গা গুলিয়ে আসছিল । এমন কিছু সে কোন দিন ভাবতেও পারে না । এখন সে বুঝতে পারছে যে প্রভার ঐ আচরন কেন ওর কাছে অস্বস্তি লাগছিল । আর কেন মেয়েটার কোন বন্ধু নেই । আসলে যা কিছু রটেছিল তার ভেতরে সত্য তো কিছু ছিলই । তবে সেটা ওরা ভেবেছে উল্টো ভাবে । আর প্রভার ধারে কাছেও সে যাবে না । কানে ধরছে । না জেনে শুনে কারো সাথে আগ বন্ধুত্ব নয় । আর যাদের আচরন অস্বস্তির অনুভূতি যোগাবে তাদের কাছ থেকে দূরে থাকবে হবে একদম ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.4 / 5. Vote count: 70

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →